কোম্পানি বন্ধ, লোকসান, লভ্যাংশ না দেয়া, পুঁজিবাজারের আইন অমান্যের কারণে মূল বাজার থেকে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেট থেকে ফেরার পর শেয়ার দরে উল্লম্ফনের যে প্রবণতা, তা দেখা গেল আবার।
গত ১৩ জুন ওটিসি থেকে ফেরার পর চারটি কোম্পানির মধ্যে তিনটির দর বেড়েছে ব্যাপক হারে। এর মধ্যে একটির দর ছয় গুণ হয়ে গেছে।
এর আগেও এই প্রবণতা দেখা গেছে। আর দাম বাড়তে বাড়তে আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ার পর একপর্যায়ে যখন দাম কমে আসে, তখন শেয়ারধারীরা বিপুল লোকসান করেছেন।
যে চারটি কোম্পানি এবার মূল মার্কেটে এসেছে, তার মধ্যে একটি শেয়ারের দর সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়ে যাওয়ার পর আরও বাড়বে ভেবে কিনে ব্যাপক লোকসানে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
মুন্নু ফেব্রিক্স, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মনোস্পুল পেপার ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ওটিসি মার্কেট থেকে ফিরে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরুর পর বেশ কয়েক দিন প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় ১০ শতাংশ করে বেড়েছে।
কোম্পানিগুলোর সম্পদমূল্য বেশ ভালো থাকলেও তিনটির আয় একেবারেই নগণ্য। আর শেয়ার দরের সঙ্গে আয়ের তুলনা করে যে মূল্য আয় অনুপাত দেখানো হয়, সেটি অনেক বেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওটিসি থেকে যে কোম্পানি ফিরে আসে সেটি আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে ভালো করছে। কিন্তু সেটি কি মূল মার্কেটে আগে থেকে আছে, সেসব কোম্পানির চেয়ে ভালো?’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বিষয়টি দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘বিমার শেয়রের দাম যখন হু হু করে বেড়েছে, তখনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে সেখানে কোনো কারসাজি হয়নি। এখন কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারীর টাকা বিমা খাতের শেয়ারে আটকে গেছে। আর ওটিসি মার্কেট থেকে ফিরে ছয় গুণ দর বৃদ্ধি পাওয়ার পরও সেখানে যদি কারসাজির কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে সেটি হতাশাজনক।’
দুর্বল কোম্পানি, জেড ক্যাটাগরি থেকে ভালো ক্যাটাগরিতে যাচ্ছে, কিংবা ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে আসছে এমন কোম্পানির শেয়ার দরে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করেন পুঁজিবাজারের এই বিশ্লেষক।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তমিজউদ্দিনের দর
ওটিসিতে ফিরে দর বৃদ্ধির শীর্ষে আছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল। দেড় মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৬২৫ শতাংশ।
শেয়ার দর ১২ টাকা নিয়ে ফেরা তজিমউদ্দিনের শেয়ার প্রথম দিনই ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ টাকা ২০ পয়সা। ঈদের আগে তা দাঁড়ায় ৮৭ টাকায়। তবে এটিই সর্বোচ্চ দর নয়। ৯৪ টাকা ৭০ পয়সাও উঠেছিল দাম।
১৩ জুন থেকে টানা ২১ কর্মদিবস দিনের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। ২২তম কর্মদিবসেও আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ দাম বেড়ে গিয়েছিল। পরে কিছুটা কমে।
সম্প্রতি যে চারটি কোম্পানি ওটিসি থেকে ফিরেছে, তার মধ্যে তমিজউদ্দিনেরই শেয়ারপ্রতি আয় সবচেয়ে বেশি। গত জুন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৯৮ পয়সা।
তবে এই আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে তা ৬৬.৫৮। অর্থাৎ এই হারে আয় করে গেলে শেয়ার দর ৮৭ টাকা আয় করতে এত বছর লাগবে।
পুঁজিবাজারে ২৫ পর্যন্ত পিইকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। আর ৪০ পিইর বেশি কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনতে ঋণ সুবিধাও পাওয়া যায় না।
১৯৯২ সালে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি ২০০৯ সালে ওটিসিতে পাঠানোর পর সুশাসনে উন্নতি হয়। ২০১১ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ২০ শতাংশ, ২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ২৭ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ আর আর ২০২০ সালে ১০ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা নগদ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে তারা।
এই কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বেশ আকর্ষণীয়; ৮০ টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ার সম্পদমূল্যের দিক দিয়ে এরা এগিয়ে।
ছয় গুণ বাড়ল পেপার প্রসেসিংয়ের দরও
চারটি কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাগজ খাতের কোম্পানি পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের দাম। ১৩ জুন থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৬০৩.৭৫ শতাংশ।
টাকা ২২ কর্মদিবস এই কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। দেশের পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে এটি রেকর্ড। এর আগের রেকর্ড ছিল রবির, যেটি বাড়ে ১৩ কর্মদিবস।
১৬ টাকা দিয়ে মূল মার্কেটে ফেরা কোম্পানিটির শেয়ার প্রথম দিন ১০ শতাংশ বেড়ে হয় ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ কার্যদিবস সোমবার শেয়ারপ্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১১২ টাকা ৬০ পয়সা।
এর মধ্যে ১৩ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিনই দিনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে দাম দাঁড়ায় ১২৭ টাকা ৩০ পয়সা। পরে একপর্যায়ে ১৩৬ টাকা ৮০ পয়সাও হয়েছিল। এরপর দাম কিছুটা কমে হয় ১৩০ টাকা ২০ পয়সা।
১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার কেবল ১৩ গুণ নয়, এর চেয়ে বেশি দামও আছে। তবে এই শেয়ারটির আয়ের বিপরীতে দাম যে বেশি, সেটি মূল্য আয় অনুপাত বা পিই দিয়েই বোঝা যায়।
জুন ক্লোজিংয়ের এই কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় আছে ৪৪ পয়সা। এই হারে আয় করতে থাকলে বর্তমান শেয়ার দর ওঠাতে সময় লাগবে ২২১.৯৩ বছর।
পুঁজিবাজারে নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়, এমন কোম্পানিরও এই পিই আছে ৩-এর নিচে।
কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য অবশ্য আকর্ষণীয়; গত বছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী একেকটি শেয়ারের বিরপীতে সম্পদ আছে ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সা।
৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৬০০টি শেয়ারে বিভক্ত কোম্পানিটির রিজার্ভে আছে ২৪ কোটি টাকা।
মনোস্পুলের দর তিন গুণ
কাগজ খাতের বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডও তিন গুণের বেশি দামে লেনদেন হচ্ছে এখন।
শেয়ারপ্রতি ৫০ টাকা দর নিয়ে লেনদেন শুরুর করার প্রথম দিনই ১০ শতাংশ বেড়ে হয় ৫৫ টাকা। এরপর আরও ১২ কর্মদিবস শেয়ার দর বেড়েছে দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই, অর্থাৎ ১০ শতাংশের আশপাশে।
টানা ১৩ কর্মদিবস হলট্রেড হয়ে ২৯ জুন দাম হয় ১৭১ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর তা ১৮৯ জনে পৌঁছায় একপর্যায়ে। কিন্তু এরপর কমে যায়। ৩০ জুন থেকে ওঠানামা করে এখন দাম ১৬৯ টাকা ১০ পয়সা।
এই কয় দিনে দাম বেড়েছে ১১৯ টাকা ১০ পয়সা বা ২৩৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় মাত্র ২৯ পয়সা। আয় বাড়াতে না পারলে বর্তমান শেয়ারমূল্য তুলতে সময় লাগবে ৪৫২.৯৫ বছর।
৯২ হাজার ১৮৬টি শেয়ারে বিভক্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য বেশ ভালো; ১২৫ টাকা ৬১ পয়সা। তবে আর্থিক ভিত্তির অন্য সূচকগুলো খুব একটা ভালো নয়।
কোম্পানিটির রিজার্ভে আছে ৩৫ কোটি টাকা। গত বছর শেয়ারপ্রতি ৯০ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে তারা।
মুন্নু ফেব্রিক্সে এরই মধ্যে লোকসান
তিন প্রান্তিকে মাত্র ৪ পয়সা আয় নিয়ে মূল মার্কেটে লেনদেন শুরু করা মুন্নু ফেব্রিক্সও পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে ছুটতে এরই মধ্যে লোকসানে ফেলেছে বিনিয়োগকারীদের।
টানা ১৫ কর্মদিবস টানা প্রায় ১০ শতাংশ করে বেড়ে ১০ টাকার শেয়ার ৩০ জুন একপর্যায়ে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা উঠে যায়। তবে সেদিনই আবার ৩৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে সকালে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে আবার প্রায় ১০ শতাংশ কমে ৩০ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে আসে।
অর্থাৎ সেদিন যারা সর্বোচ্চ দামে শেয়ারটি কিনেছিলেন, এক দিনেই প্রায় ২০ শতাংশ লোকসানে পড়েন। এরপর এই লোকসান কেবল বেড়েছেই।
সেদিনের পর আরও টানা ছয় কর্মদিবস কমে ১৩ জুলাই দাম দাঁড়ায় ২৩ টাকা ৫০ পয়সায়। এরপর দুই দিন কিছুটা বেড়ে ২৬ টাকা ১০ পয়সায় উঠলেও ঈদের ছুটির আগে আবার দুই দিন কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ১৪৮ শতাংশ।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২৭ টাকা ৩০ পয়সা হলেও এর যে আয় সেটি বাড়াতে না পারলে বর্তমান শেয়ার দরের সমান আয় করতে সময় লাগবে ৪৬৫ বছর।
ওটিসি থেকে ফেরা কোম্পানির আগের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়
এর আগেও যেসব কোম্পানি ওটিসি থেকে ফিরেছে, তার প্রতিটির দর এবারের চারটির মতোই বেড়েছে। মুন্নু যেসব তার শেয়ারধারীদের বিপুল লোকসানে ফেলেছে, একইভাবে লোকসানে ফেলেছে আগের সবগুলো।
ইউসিবিএল
২০০৯ সালে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি থেকে ফেরার পর ব্যাংক খাতের এই কোম্পানিটি ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। শেয়ার দর একপর্যায়ে ছাড়ায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
সে সময় শেয়ারের ফেসভ্যালু ছিল ১০০ টাকা। এখন ১০ টাকা। এই হিসাবেও দাম ছাড়ায় ৩৫০ টাকা।
তখন ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল কম, শেয়ারসংখ্যা ছিল সীমিত। পরে বোনাস শেয়ার নিয়ে শেয়ার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
তবে সেই হিসাব ধরলেও এখন শেয়ার দর ৮ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। ঈদের ছুটির আগে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে হয়েছে ১৬ টাকা ১০ পয়সা।
ওয়াটা কেমিক্যালস
২০১৪ সালে ওটিসি থেকে মূল বাজারে আসে ওয়াটা কেমিক্যালস লিমিটেড। মূল মার্কেটে আসার আগে শেয়ার মূল্য ছিল ৫০ টাকার আশপাশে। মার্কেটে আসার পর ১২ কর্মদিবসে লেনদেন হয় কেবল দুই দিন। পরে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ মে কোনো মূল্যসীমা না থাকার সুযোগে সেদিন দাম বেড়ে হয় ৪৮৫ টাকা। এক দিনেই বাড়ে ৭৩৫ শতাংশ। আগের দিন দাম ছিল ৫৯ টাকা।
সেখানেই থেমে থাকেনি। একপর্যায়ে তা এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এর পরের বছর ২৫ শতাংশ, পরের বছর ১০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৫ শতাংশ, পরের বছর ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার দর এখন ২৯৯ টাকা ৭০ পয়সা। সব বোনাস শেয়ার হিসেবে নিলেও এখন দাম ৮২৫ টাকা দাঁড়ায়। অর্থাৎ সাত বছর রেখেও কোনো মুনাফা পাননি বিনিয়োগকারীরা।
ওটিসি থেকে ফেরা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর আকাশচুম্বী হয়ে পরে ধসের কারণে ব্যাপক লোকসান হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
কোম্পানিটি গত ৩১ জানুয়ারি তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৩১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ টাকা ১১ পয়সা।
গত দুই বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ওঠে ২০১৯ সালে ১০ অক্টোবর ৬৯১ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর এই সময়ে আর কখনও এই দরে লেনদেন হয়নি।
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ
২০১৮ সালে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে আসার পরই আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর ১৩০ টাকায় শুরু হয়ে ১৪৩ টাকায় লেনদেন হয়। এরপর আরও বেড়ে ১৮০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।
কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার দর ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা। তাও কিছুটা ভদ্রস্ত দেখাচ্ছে। এক মাসে সর্বনিম্ন দাম ছিল ২২ টাকা ৯০ পয়সা।
গত দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৬৩ টাকা ২০ পয়সা।
মূল মার্কেটে ফেরার পর একবার ১০ শতাংশ এবং একবার ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে আলিফ। অর্থাৎ বোনাস শেয়ার পেয়েও বিনিয়োগকারীরা তাদের লোকসান কাটাতে পারেননি।
সোনালী পেপার
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ডমিল ২০১৯ সালের ২ জুলাই থেকে মূল মার্কেটে লেনদেন হচ্ছে। মূল বাজারে ফিরিয়ে আনতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ধরা হয় ২৭৩ টাকা। পরে বাড়তে বাড়তে দাম দাঁড়ায় ৩৫০ টাকায়।
এক বছরের মধ্যে দাম কমে গত ২৭ জুন দাঁড়ায় ১৯৭ টাকা ৪০ পয়সায়। অবশ্য এর পরে তিন সপ্তাহে অবিশ্বাস্য উত্থান ঘটে শেয়ারটির। ঈদের ছুটির আগে দাম দাঁড়ায় ২৯৭ টাকা ১০ পয়সা। এই কয় দিনে দাম প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে।
আর মূল মার্কেটে আসার পর দুবারে ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিয়েছে তারা।
গত ২৫ এপ্রিল কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিকের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে শেয়ার দর যে অতিমূল্যায়িত, তা বোঝাই যায়।
বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ২৯ পয়সা।
এই হারে আয় করলে কোম্পানিটির বর্তমান মূল্য তুলতে সময় লাগবে ৬৮ বছর।
অবশ্য এটাও ঠিক যে, এর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য অনেক। সব শেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী ১০ টাকার শেয়ারে সম্পদমূল্য আছে ৩০৭ টাকা ৮৮ পয়সা।
কোম্পানিটি তাদের নতুন প্রোডাকশন লাইন চালুর ঘোষণা দিয়েছে। জানানো হয়েছে, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার বক্স তৈরির এই নতুন লাইনের উৎপাদনক্ষমতা প্রতিদিন এক লাখ পিস এবং তারা এও জানিয়েছে যে, নতুন উৎপাদন লাইনের যে উৎপাদনক্ষমতা তার পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন:আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় নামাজ শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও নামাজ আদায় করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ অনেকে।
নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। জামাতে অংশ নিতে সকাল ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টা ঈদগাহ মাঠে আসেন।
এর আগে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন আমরা পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের শিক্ষা ধারণ করি এবং জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
এ সময় পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে তাঁর দেশবাসী এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও দেশের জনগণের ধারাবাহিক সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তিনি।
আজ ৭ জুন শনিবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। আমাদের দেশে এটি কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে আসছে। আজ সকালে মুসল্লিরা কাছাকাছি ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।
ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে ঈদের জামাতে নামাজ পড়বেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।
এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ গতকাল ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে।
ঈদুল আজহা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হযরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবাই সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।
সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিধারণ করেই হযরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে ঈদুল আজহার ছুটি গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে শুরু হয়েছে। ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিন ছুটি কাটাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এর আগে গত ৬ মে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্বাহী আদেশে ১১ ও ১২ জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ঈদের আগে দুই শনিবার অফিস চালু রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী দুই শনিবার (১৭ ও ২৪ মে) অফিস খোলা ছিল। নির্বাহী আদেশে দু’দিন ছুটির ফলে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সবমিলিয়ে টানা ১০ দিনের ছুটিতে আছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
সংবাদ মাধ্যমেও ঈদ উপলক্ষে পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঈদুল আজহার যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। ঈদের ছুটিতে দেশের সব সিএনজি এবং ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাত্রী হয়রানিসহ যে কোন ভোগান্তির খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ভাষণের শুরুতে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে সালাম জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি সবাইকে হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান জানান।
পরে নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি জানি, আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে। আমি বারবার বলেছি, এই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।
তিনি বলেন, এখানে মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।
‘এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে করে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ছাত্র-জনতার সকল আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।’
‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সে বিবেচনায় আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—যা কিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়—সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব। এতে আমাদের ওপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব। সে বিবেচনায় ও ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। পাশাপাশি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’
তিনি বলেন, আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকুক।
বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই। আমি তাদের সুখ-সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করি। ঈদ মোবারক।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঈদুল আজহা সবার জীবনে শান্তি, আনন্দ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। তিনি লেখেন, ‘এই উৎসব যেন সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতি জাগিয়ে তোলে। আমি এই বিষয়ে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করি।’
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকের পক্ষেই এবারের ঈদ পুরোপুরি উপভোগ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, খাদ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট সাধারণ মানুষের জীবনকে গভীর দুর্ভোগে ফেলেছে। “সীমিত আয়ের মানুষ টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।’
তিনি ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ঈদের দিনে নিশ্চিত করতে হবে যেন কেউ না খেয়ে না থাকে। ঈদের আনন্দ হোক সমষ্টিগত, যেন সবাই একই কাতারে আসতে পারে।’
ঈদুল আজহার ত্যাগের আদর্শ তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঈদুল আজহা ত্যাগের উৎসব। এর মূল শিক্ষা হলো আত্মোৎসর্গ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—আল্লাহর কাছে পশুর মাংস বা রক্ত পৌঁছায় না, পৌঁছে কেবল তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’
তিনি বলেন, মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় পশু কোরবানি করে। ‘পবিত্র ঈদুল আজহা প্রতি বছর ফিরে আসে আত্মশুদ্ধি, আত্মতৃপ্তি ও আত্মত্যাগের মহাসন্দেশ নিয়ে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সামাজিক বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও দেশের মুসলিম জনগণের হৃদয়ে ঈদের অফুরন্ত আনন্দ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ দেড় দশক ধরে এক কঠিন ফ্যাসিবাদী সময় পার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট চক্রের পতনের পর এবার ঈদুল আজহা কিছুটা স্বস্তির পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে।’
তারেক রহমান জনগণকে সমাজ গঠনে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শান্তি, ঐক্য, সম্প্রীতি ও উচ্চ নৈতিকতার ভিত্তিতে নতুন করে সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। যাতে করে চরম বৈষম্য দূর হয় এবং দুনীতি, লুটপাট ও অর্থপাচারের মতো অপরাধ আর কোনোদিন না ঘটে।’
উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে তারেক রহমান তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন।
কোরবানিঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শসা ও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। শসার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা কমেছে। এছাড়া বেশিরভাগ সবজি ও মুরগির দাম অপরিবর্তত রয়েছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা শসা বিক্রি করছেন ৬০ থেকে ৯০ টাকা প্রতি কেজি। দুদিন আগেও ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে শসা। এছাড়া কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ আজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম কমে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা হয়েছে আজ।
‘কোরবানির ঈদের সময় শসার চাহিদা বেশি থাকে, তাই দামও বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। আড়তে গিয়ে তো আমরা শসা খুঁজেই পাচ্ছিলাম না’— শসার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে রামপুরার এক ব্যবসায়ী এমন মন্তব্য করেন।
রামপুরার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দুদিন আগেও আমরা শসার কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ আড়তেই দেশি শসার কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। হাইব্রিড শসার দাম একটু কম আছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি কিনে তো আর ৯০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। তাই ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’
একই বাজারের ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, ‘কোরবানির ঈদের সময় সব বাড়িতেই মাংস রান্না হয়। মাংসের সঙ্গে সালাদ সবার প্রিয়। তাই কোরবানির ঈদের সময় কাঁচা মরিচ, শসা, লেবু ও টমেটোর চাহিদা বেশি থাকে। চাহিদা বেশি থাকায় এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে লেবু ও টমেটোর সরবরাহ ভালো। তাই এ দুটি পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে কাঁচা মরিচ ও শসার সরবরাহ কম। তাই দামও বেড়েছে। গতকাল শসার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করেছি, আজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা কাঁচা মরিচ আজ ১২০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ, আমাদেরই কিনতে হয়েছে অনেক বেশি দামে।’
খিলগাঁওয়ে শসা কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার শসা কিনেছি ৪০ টাকা কেজি দরে, আজ এক লাফে ৯০ টাকা হয়ে গেছে। হুট করে এভাবে দাম বাড়া ঠিক না। যারা বাজার তদারকির দায়িত্বে আছেন তাদের বিষয়টা দেখা উচিত।’
এদিকে দুদিন আগে ১৩০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি হলেও আজ ১২০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আলু, রসুন, পেঁয়াজ, আদা আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দুদিনে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা কমেছে। ডিমের চাহিদা কম থকায় এই দাম কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিমের দাম আরও একটু কমতে পারে। কারণ শনিবার কোরবানি হওয়ার পর সবার ঘরে ঘরেই মাংস থাকবে। দুই-তিনদিন মানুষ মাংস খাবে বেশি। এ সময় অন্য খাবারের চাহিদা কম থাকবে। তবে ঈদের দুই-তিনদিন পর ডিম এবং কাঁচা সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। পটল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। কাঁকরোল, বরবটি, কচুর লতি, করলা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এছাড়া পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আগামীকাল শনিবার ‘পবিত্র ঈদুল আজহা’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জানাই শুভেচ্ছা এবং ঈদ মোবারক।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও চরম ত্যাগের অনুপম নিদর্শন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হন। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ ও আত্মদানের এই সুমহান দৃষ্টান্ত কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহা মানুষকে শান্তি, ত্যাগ ও সাম্য শেখায়। মুসলমানগণ কোরবানিকৃত পশুর গোস্ত গরিব আত্মীয়স্বজন ও দুঃস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে সবাইকে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক-এই হোক ঈদের চাওয়া।’
পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের শিক্ষা নিজেদের ভেতর ধারণ করার আহবান জানিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আসুন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি।’
ঈদুল আজহার এ দিনে প্রধান উপদেষ্টা মহান আল্লাহর কাছে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও উন্নতি প্রার্থনা করেন।
মন্তব্য