এক দশকের হতাশা কাটিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ব্যাপক মুনাফার আভাস, সম্পদমূল্য বৃদ্ধি আর সম্পদের তুলনায় বেশিরভাগের দাম কম থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়ে উঠেছেন।
ঈদের ছুটির আগে যে দুই দিন বাজারে লেনদেন চলতে তার প্রথম দিন এই খাতেই দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি চাঙাভাব। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে যেসব খাতে, তার মধ্যে একটি ছিল এই খাত।
চাঙাভাব দেখা গেছে ঘুমিয়ে থাকা জ্বালানি খাতেও। শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনেও দেখা গেছে গতি।
তবে সবচেয়ে বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে লভ্যাংশের অপেক্ষায় থাকা প্রকৌশল খাতে। বিপরীতে আগ্রহ হারিয়ে দামও হারাচ্ছে বিমা খাত, ব্যাংক নিয়ে হতাশা দূর হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই, মাটিতে নেমেছে উড়তে থাকা বস্ত্র খাতও।
এর বিপরীতে সবচেয়ে বড় খবর হলো, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি চালুর পর সাড়ে সাত বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছাল ডিএসইএক্স সূচক।
২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। নানা সময় চাঙাভাব দেখা দিলেও সেই সূচক কখনও অতিক্রম করতে পারেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে গত মে মাসে ছয় হাজার পয়েন্টে উঠার পর সেখানে টিকে থাকতে এক মাস ধরে যে মনস্তাত্তিক লড়াই, সেটিতে জয় আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
বেলা ২ টা ২৬ মিনিটে ৬ হাজার ৩৩৭ পয়েন্ট অতিক্রম করার পর লেনদেনের শেষ সময়ে তা বাড়ে আরও। দিন শেষ হয় ৬ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে।
২৮ পয়েন্ট বাড়লেই ইতিহাস হবে, এমন অপেক্ষায় থাকা পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে আগের দিনের চেয়ে ৫৭ পয়েন্ট। এর মধ্য দিয়ে ডিএসইএক্স সূচক ইতিহাসের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছল।
এখন ডিএসইএক্স চালুর আগে ২০১১ সালের ৩ আগস্ট ডিএসই সূচক ৬ হাজার ৩৮৯ পয়েন্ট পরবর্তী সর্বোচ্চ ধাপ।
ডিএসইএক্স সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান
সূচক আর ২৮ পয়েন্ট বাড়লে রেকর্ড হবে, এমন বাস্তবতায় রোববারের লেনদেন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ ছিল। তবে সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর ১১টা ৯ মিনিটে তাদের মধ্যে বিরক্তি ধরে লেনদেনে জটিলতায়।
ডিএসইর সার্ভার জটিলতায় লেনদেন বন্ধ থাকে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট। পরে লেনদেন নির্ধারিত সময় বেলা আড়াইটার পর আরও এক ঘণ্টা চলে।
সোয়া এক ঘণ্টা বিরতির পর লেনদেন আবার শুরু হলে সূচক বাড়তে থাকে। বেলা একটা ৩ মিনিটে ৬ হাজার ৩২২ পয়েন্ট থেকে বেড়ে এক পর্যায়ে ৬ হাজার ৩৭১ পয়েন্ট গিয়ে পৌঁছে। শেষ ৫ মিনিটে কিছু কমলেও সেটিতে উৎফুল্ল হয় বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজারের এই ছুটে চলা শুরু ২০২০ সালের জুলাই থেকে। করোনার কারণে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর ৫ জুলাই বাজার শুরুর দিন সূচক ছিল ৩৯৮১ পয়েন্ট। সেখান থেকে প্রায় দুই হাজার পয়েন্ট বাড়ে এক টাকা।
গত ১৪ জানুয়ারি সূচক উঠে ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে। তবে এর পর দুই মাসের অস্থিরতায় সূচক গত ৪ এপ্রিল এক পর্যায়ে নেমে আসে ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্টে।
৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর দিন পুঁজিবাজারে শুরু হয় দ্বিতীয় উত্থান। এক পর্যায়ে ৩৯ মাসের মধ্যে সূচক প্রথমবারের মতো ৬ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে গত ৩০ মে। এরপর এক মাস উঠানামা করতে থাকে। প্রায়ই ৬ হাজার থেকে নিচে নেমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় পুঁজিবাজারে।
তবে ৩০ জুন ৬ হাজার ১৫০ পয়েন্টে উঠার পর নিশ্চিত হয় যে, ছয় হাজার পয়েন্ট নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে মনস্তাত্তিক লড়াই তৈরি হয়েছিল, তাতে জয় হয়েছে। এরপর থেকে আবার বাড়তে থাকে সূচক।
গত বৃহস্পতিবার ৬ হাজার ৩০৭ পয়েন্ট হওয়ার পর ডিএসইএক্স এর রেকর্ড হয় কি না, তা নিয়ে তৈরি হয় আগ্রহ।
ডিএসইএক্স চালুর আগে যে সূচক ছিল, সেই ডিএসই সূচক কিন্তু এখনকার অবস্থানের চেয়ে অনেক বেশি ছিল এক পর্যায়ে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর সেই সূচক ছিল ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্ট। পরদিন থেকেই শুরু হয় এক দশক ধরে চলমান ধস।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ব্যাপক আগ্রহ
তালিকাভুক্ত সব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা এর আগেও দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। তবে রোববার যেটি হয়েছে, সেটি এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
এই খাতে আগের দিন ১৪০ কোটি টাকা লেনদেনই অনেককে অবাক করেছিল। তবে এটি আরও বেড়ে এবার ছাড়িয়েছে দুইশ কোটির ঘর। দিন শেষে লেনদেন দাঁড়িয়েছে ২০৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এরচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে কেবল প্রকৌশল খাতে।
ফান্ডের মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোর দাম বেড়েছে। তবে কমেনি একটিও।
সর্বাধিক দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড না থাকলেও ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে অনেকগুলোর দাম বেড়েছে দিনে যত বাড়া সম্ভব তার কাছাকাছি।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৭.৩১ শতাংশ, এরপর পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৭.২৪ শতাংশ।
দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইসের ফান্ডগুলো ছিল বেশ এগিয়ে। এই দুইটার পাশাপাশি এই কোম্পানির অন্য ফান্ডগুলোর মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৬.৫৭ শতাংশ, ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৬.৫২ শতাংশ, এফবিএফআইএফের ৫.৭৯ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫.৩৩ শতাংশ, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫.৩৩ শতাংশ, এবি ব্যাংক ফার্মাট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫.১৯ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ২.১৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
অন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর ফান্ডের মধ্যে দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে দম।
মাস কয়েক আগে হতাশা থাকলেও
১০টি ফান্ড এখন অভিহিত মূল্য ১০ টাকার বেশি ১০টি কাছাকাছি চলে এসেছে। একটি ভালো দিনেই তা ছাড়িয়ে যেতে পারে ১০ টাকা। আর সবচেয়ে কম দাম এখন এফবিএফআইএফের ৭ টাকা ৩০ পয়সা।
ফান্ড নিয়ে এই আগ্রহের কারণ, এগুলোর আকর্ষণীয় লভ্যাংশের সম্ভাবনা।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর থেকে এই খাতটিও ছিল ঘুমিয়ে। তবে এবার ৯ মাসে আকর্ষণীয় মুনাফা আর অতালিকাভুক্ত বিভিন্ন ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণার পর পুঁজিবাজারেরগুলোও ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করবে বলে আভাস মিলেছে। এই অবস্থায় এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। আর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দাম।
বিদ্যুৎ-জ্বালানির জাগার আভাস
পুঁজিবাজারে উত্থানের প্রভাব পড়েনি একেবারেই পড়েনি এই খাতে। তবে রোববারের লেনদেন আশাবাদী করেছে এই খাতের শেয়ারধারীদেরকে। অথচ লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম চলে এসেছে আর বেশিরভাগ কোম্পানিই গত বছরের চেয়ে বেশি আয় করেছে বলেই তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে দেখা যায়। করোনাকালেও কোম্পানিগুলোর ব্যবসার খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে, এমন নয়।
এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে কেবল দুটির, বেড়েছে বাকি সবগুলোর।
কেবল দাম বেড়েছে এমন নয়, এই খাতের লেনদেনও জাগাচ্ছে আশা। ১০৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে এই একটি খাতে।
এই খাতে সবচেয়ে বেশি ৯.৭২ শতাংশ বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের দাম। তবে হাতবদলের সংখ্যা নগণ্য। এই দামে মাত্রা ৪ হাজার ৪১০টি শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ ছাড়া ৮.৫৩ শতাংশ দাম বেড়েছে সরকারি কোম্পানি পদ্মা অয়েলের। বাকিগুলোর দাম বৃদ্ধির হার শতকরা হিসেবে খুব একটা বেশি নয়।
অন্যান্য খাতের কী চিত্র
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া প্রকৌশল খাতে ১৫টি কোম্পানির দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে ২৭টির। হাতবদল হয়েছে ২৩৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
গত মাসের শেষ দিকে উড়তে থাকা বস্ত্র খাত আরও খানিকটা দর হারিয়েছে। ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৪২টি। দর ধরে রাখতে পেরেছে কেবল একটি। বেড়েছে বাকি ১৫টির দাম। সবচেয়ে বেশি দর হারানো ৫টি কোম্পানির সবগুলো এই একটি খাতের।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ১৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগেও পাঁচশ কোটি টাকার আশেপাশে ছিল।
আরও হতাশ করেছে বিমা খাত। এক মাস ধরেই পতনের মধ্যে থাকা এই খাতটি সূচকের রেকর্ড করার দিন দাম বেড়েছে কেবল ৯টির। একটির লেনদেন ছিল স্থগিত, কমেছে বাকি ৪১টির দর।
হাতবদল হয়েছে মোট ১২৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা মাস দুয়েক আগে সাতশ কোটি টাকারও বেশি ছিল, এক দিন তা নয়শ কোটির ঘরও পেরিয়ে যায়।
চাঙাভাব দেখা গেছে ওষুধ ও রসায়ন খাতেও। ৩১টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত দীর্ঘদিন ধরেই। বাকিগুলোর মধ্যে ১০টির দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে ২০টির। হাতবদল হয়েছে মোট ১৭৪ কোটি ৯ লাখ টাকা।
আর হতাশার বৃত্তে থাকা ব্যাংক খাত কোনো আশা দেখাতে পারেনি। যদিও দিনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই খাতে দাম বাড়ার সংখ্যা ছিল খুবই কম, তবু শেষ বেলায় কিছুটা হলেও বেড়েছে।
৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ৮টির, একটির লেনদেন ছিল স্থগিত, বাকি ৬টির দাম ছিল অপরিবর্তিত।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ৯১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে কমগুলোর একটি।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৭.৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২০ দশমিক ০২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজা ৩৭৯ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩১ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২১০টির, দর কমেছে ১৫০টি, দর পাল্টায়নি ১৩টির। মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৬০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৭১ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদাকে আটকের সময় যেভাবে মব জাস্টিজ করা হয়েছে তা কাম্য নয় বলে জানিয়েয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে হর্টিকালচার সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘গত রোববার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তারের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়; তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার হয়েছেন নুরুল হুদা।’
‘তবে তাকে গ্রেপ্তারের সময় যেভাবে মব জাস্টিজ করা হয়েছে তা কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। এ ঘটনার তদন্ত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষি জমি দখল রোধে কৃষি জমি সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বিদেশি ফলের পাশাপাশি দেশীয় ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেন এসব ফল হারিয়ে না যায়।’
পরিদর্শনের সময় গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী যাবের সাদেক, কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ, হর্টিকালচার সেন্টারের এনামুল হকসহ পুলিশ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপদেষ্টা হর্টিকালচার সেন্টারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নানা দিক নির্দেশনা দেন।
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তির জন্য নির্বাচিত নেত্রকোনার চারজন শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা শেষে তাদের হাতে এই অর্থ তোলে দেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
এই চারজন মেধাবী শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগে মো. সাজ্জাদ আলী, অর্থনীতি বিভাগে মানব তালুকদার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে রেশমা আক্তার এবং বাংলা বিভাগে বন্যা রানী সরকার।
জানা যায়, এই চারজন মেধাবী শিক্ষার্থী নিজেদের প্রচেষ্টা ও প্রতিভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মনোনীত হন। তবে তাদের প্রত্যেকেই আর্থিক সংকটে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়লে খবর পেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এলে জেলা পরিষদের মাধ্যমে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়, যাতে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, ‘চারজন শিক্ষার্থী ভর্তি সহায়তার জন্য আবেদন করেছিলেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কলেজের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায়, তারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিঃসন্দেহে আমাদের জেলার সম্পদ। ভবিষ্যতে যেন কেউ আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যেই জেলা প্রশাসনের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন, যাতে মেধার বিকাশে অর্থ কখনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।” এছাড়াও স্থানীয়ভাবে এই পদক্ষেপকে শিক্ষাবান্ধব প্রশাসনের একটি মানবিক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পরিবার ও অভিভাবকরাও এ সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম প্রতিদিন তৈরি করছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে রয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। নগরজুড়ে উৎপন্ন এই প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের অভাবে সরাসরি নদী, খাল ও নালায় গিয়ে মিশছে। যা পরিবেশের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), জার্মান সরকার এবং বাউস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে ১৪০ টন সরাসরি খাল ও নালার মাধ্যমে গিয়ে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। নদীতে জমা হওয়া এই প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি হচ্ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের আস্তর। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক গভীরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে জাহাজ ও নৌযান চলাচল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নদীর গভীরতা বাড়াতে সম্প্রতি প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হয়েছে। এই ব্যয় অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্য প্লাস্টিকের পাশাপাশি ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, প্লাস্টিক মূলত তৈরি হয় পেট্রোলিয়াম থেকে। সুতরাং পরিবেশের ওপর এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যায়। এছাড়া প্লাস্টিক পলিথিনের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যেগুলোর প্রায় প্রতিটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন হয়। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পরিবেশের উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
চুয়েটের পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যদি শহরের বর্জ্য ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারতাম তাহলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ড্রেজিংয়ে খরচ হতো না। একইসঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’ এক গবেষণায় দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন গড়ে ৭৮৫ টন বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া ওয়ান টাইম প্লাস্টিক, যা পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। গবেষকরা জানান, বন্দরে যেসব জাহাজ আসে সেগুলোও কম-বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে। এসব বর্জ্য যথাযথভাবে নিষ্কাশন না হলে তা শুধু নদী নয়, সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য এবং সামুদ্রিক পরিবেশেও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
এসসিআইপি প্লাস্টিক প্রজেক্টের পরিচালক ড. ফারজানা রহমান জুথি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে হবে। আর এটি করতে না পারলে নদী ও সমুদ্র উভয়ের পরিবেশই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি। নদীতে প্লাস্টিক দূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা। কারণ, এটি শুধু পরিবেশ নয়, জনস্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক সমীক্ষায় কর্ণফুলী নদীর ৭৯টি স্থানে দূষণের চিত্র ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৭টি স্থানে দূষণকে ভয়াবহ বলা হয়েছে। শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালি, রাসায়নিক, কঠিন ও তরল বর্জ্য, পয়োঃবর্জ্য ও পলিথিন সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের ২৩টি স্থানে এবং ১৯টি খালের মাধ্যমে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য কর্ণফুলীতে যাচ্ছে। শুধু নগরী নয়, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা থেকেও নদীতে ব্যাপক দূষণ হচ্ছে।
বিশেষভাবে কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় সিমেন্ট, চিনি, তেল পরিশোধন, ফিশিং কমপ্লেক্স ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান নদীতে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা তেলের দোকান, খোলা টয়লেট, ডায়িং মিল, সার কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ড্রেন ও খালের মাধ্যমে গিয়ে মিশছে কর্ণফুলীতে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারও খালের মাধ্যমে নদীতে পৌঁছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ জানান, দেশে বছরে প্রায় ৯, ৭৭,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সবচেয়ে ক্ষতিকর। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক মূলত পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি হয়। এটি পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এসব প্লাস্টিকের মান উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলোও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
গড়াইয়ের পানি প্রবাহের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ জেলার মানুষের ভালোমন্দ। তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয় গড়াইয়ের ওপর। একটু বলে রাখা দরকার, ১৯৫৪ সালে কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে সেচ সুবিধা ও বন্যা থেকে ফসল ও জনপদ রক্ষার জন্য গঙ্গা কপোতাক্ষ পরিকল্পনা (জিকে) সেচ প্রকল্প নামে কার্যক্রম চালু হয়। জাতিসংঘের সহযোগিতায় চালু হওয়া সে প্রকল্পের আওতায় ফসল উৎপাদন বেড়ে যায় প্রায় তিনগুণ। এ প্রকল্পের মূল উৎস ছিল গড়াই। গড়াই নাব্য সংকটে থাকায় উৎসমুখের কাছে ভেড়ামারাতে পাম্প হাউস স্থাপন করে এ প্রকল্প টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাও রক্ষা হয়নি। গড়াই শুকিয়ে যাওয়ার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
আর নানা কারণে কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদীর তীরবর্তী দুই পাড় দখলের কবলে পড়ছে। অবৈধ স্থাপনা ও বাধের দুইপাড় দখলের কারণে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে গড়াই নদীর শহর রক্ষা বাঁধ। স্বেচ্চাচারিভাবে নদী তীরে দোকান পাঠ, খামার, প্রতিষ্ঠান, এমনকি ঘর বাড়িও নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীর কিছু কিছু জায়গায় ইতোমধ্যেই দখলদাররা বালু মহাল তৈরি করে পুরো চর দখল করে নিয়েছে। এমনকি নদীর তীরে মোটা বালি চিকন বালির বিশাল বিশাল বড় বড় গাদি করে ট্রলি ও ডাম ট্রাক এর মাধ্যমে এসব বালি বিক্রয় করছে। যা নদী রক্ষা বাঁধ ও তীর হুমকির মধ্যে পড়েছে। এছাড়াও নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ক্ষমতাসীনদের ছত্র ছায়ায় বিভিন্ন মানুষকে টাকার বিনিময়ে জায়গা বিক্রয় করে তাদেরকে বসবাস করার অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি এই দখলদাররা এলাকার উচ্চ পদের লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে যার ফলে এদের কিছুই হচ্ছে না।
সরজমিনে দেখা যায়, অবৈধ দখলদারদের হাতে বেদখল হয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়া গড়াই নদীর চর ও তীরবর্তী অঞ্চল গুলো। কিছু অসাধু চক্র ক্ষমতার বড়াই দেখিয়ে একের পর এক দখল করে নিচ্ছে গড়াই নদীর পাড়। কুষ্টিয়া থানাপাড়া থেকে শশ্নান ঘাট পর্যন্ত ক্ষমতা দেখিয়ে নদী তীরে দোকান পাঠ, খামার এমনকি ঘর বাড়ি ও নির্মাণ করেছে ওইসব ভূমিদস্যুরা। কোথাও কোথাও পাকা দোতলা পর্যন্ত বাড়ি করা হয়েছে। শুধু তাই নয় কুষ্টিয়া হরিপুর ব্রিজের দুই পাশে দোকানপাট করেছে । এমনকি ব্রিজের পিলার দখল করে দোকান তৈরি করা হয়েছে। এতে হুমকিতে রয়েছে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ। এছাড়াও এইসব দখলবাজদের জন্য সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে কুষ্টিয়া গড়াই নদীর তীর। নষ্ট হচ্ছে নদীর পরিবেশ ও প্রকৃতি। নদী দখল হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া শহরসংলগ্ন জুগিয়ার নদী তীরবর্তী অঞ্চল, মঙ্গলবাড়িয়া বাঁধ সংলগ্ন, রেইনউক বাঁধ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা, হরিপুর সংযোগ ব্রিজ এলাকা, হরিপুরের বিভিন্ন নদীর তীরসংলগ্ন এলাকা, বড়বাজার ঘোড়ার ঘাট এলাকা, শ্বশ্নান ঘাট, সৈয়দ মাসউদ রুমী সেতুসংলগ্ন এলাকা, কয়া বাজার ও কুমারখালী শহররক্ষা বাঁধ। খোকসা উপজেলাতেও চলছে নদী দখলের মহোৎসব। স্থানীয়দের অভিযোগ এই দখলদারিকে কেন্দ্র করে নদী তীরে বেশ কয়েকবার রক্তা রক্তির ঘটনাও ঘটেছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, এসব অবৈধ স্থাপনা নিয়ে কাজ করছে তারা। অতি দ্রুতই এগুলো ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরায় গরমের তীব্রতায় নাভিশ্বাস উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষের। আষাঢ়ের শুরু থেকে গরমের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দুপুরের আগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। অসহনীয় কষ্ট বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের। ভিড় বেড়েছে ডাব, শরবত আর আখের রসের দোকানে। গরমের তীব্রতা কাটাতে শহরের পৌরদিঘীতে দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করছেন অনেকেই।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সাতক্ষীরার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আদ্রতা শতকরা ৫৪ ভাগ। অপরদিকে শনিবার সাতক্ষীরায় এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজমান ছিল। ওইদিন তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাতক্ষীরায় গরমের তীব্রতায় নাকাল হয়ে পড়েছে মানুষ। গরমে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট পাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির দেখা দিলেও ভ্যাপসা গরম আরো অসহনীয় লাগছে জনসাধারণের ।
ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। রাস্তায় বের হলে মুখ পুড়ে যাচ্ছে গরমে। এছাড়া বাইরে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে ভাড়াও সেভাবে পাচ্ছিনা।’
শহীদ রাজ্জাক পার্কের শরবত বিক্রেতা ইনতাজ আলী জানান, অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় শরবত বিক্রি বেড়েছে। আগে যেখানে ৪০ থেকে ৫০ গ্লাস শরবত বিক্রি করতাম, এখন সেখানে ১০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, ‘সাতক্ষীরায় কখনো মৃদু আবার কখনো মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ধারা জুন মাসের পুরোটা সময় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মা ও ফুফার নামে নামকরণ করা বরিশাল বিভাগের পাঁচটি কলেজের নতুন নামকরণ করা হয়েছে।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, সম্প্রতি নাম পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ।
নাম পরিবর্তন করা পাঁচ কলেজ হচ্ছে; বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় স্থাপিত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘কাউনিয়া সরকারি কলেজ’। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের’ নাম পরিবর্তন করে ‘আলিমাবাদ সরকারি মহাবিদ্যালয়’, আগৈলঝাড়ার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি ডিগ্রি কলেজের নামের পরিবর্তে ‘আগৈলঝাড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ’, নাজিরপুর উপজেলার ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়ের নতুন নাম হয়েছে ‘নাজিরপুর সরকারি মহিলা কলেজ’। ভোলার সরকারি ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা’ মহিলা কলেজের পরিবর্তে ‘ভোলা সরকারি মহিলা কলেজ’ নামকরণ করা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়েছিলো। তালিকা পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করেছে। বিষয়টি নোটিশ আকারে স্ব স্ব কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে নতুন নামের সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন।
কেরানীগঞ্জে গভীর রাতে বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি পাঁচ তলা ভবনের নিচতলার দেয়াল ধসে পড়েছে এবং শিশুসহ তিনজন আহত হয়েছেন। গত রোববার গভীর রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার শুভাড্যা খেজুরবাগ মন্দির এলাকার পাকিজা নামক ভবনের নিচতলায় এ বিস্ফোরণ ঘটে।
কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার এসআই তুষার জানান, আহতরা হলেন আল সামির (৮), তার বাবা ফারুক হোসেন (৪০) এবং মা শিউলি (৩০)। বিস্ফোরণের পর তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।
আহত ফারুক হোসেন জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে দেখি আমার স্ত্রীর হাত ও শিশুপুত্র সামিরের শরীর আগুনে পুড়ে গেছে। আমারও মুখের বাম পাশে ঝলসে যায়। তিনি আরও জানান, মাসখানেক ধরেই রুমের ফ্লোর অতিরিক্ত গরম হচ্ছিল। বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানানো হলেও তখন তা মেরামত করা হয়নি। ভবনের মালিক সহিদ বলেন, ভবনের ফ্লোর গরম হওয়ার বিষয়টি জানার পর আমি দ্রুত দেশে ফিরে আসি। বিস্ফোরণের সময় পাশের রুমেই ছিলাম। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে দেখি ভবনের নিচ তলার দেয়াল ভেঙে গেছে। ভবনটি রাজউকের অনুমোদন না থাকলেও তিনি ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নিয়ে নির্মাণ করেছেন বলে দাবি করেন। ভবনটিতে মোট ১০টি পরিবার বসবাস করছে।
পরিদর্শন শেষে পোস্তগোলা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু মুহাম্মদ সাজেদুল কবির জোয়ার্দার জানান, ভবনটি অনিয়মিত ও অপরিকল্পিভাবে ডোবা ভরাট করে তৈরি হওয়ার কারণে ধসে পড়তে পারে। অথবা গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকেও বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরও জানান, ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং এ বিষয়ে মালিকপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য