এক বছর ধরে পুঁজিবাজারে যে চাঙাভাব, তা থেকে যেন বাইরে জ্বালানি খাত। দাম একেবারে যে বাড়েনি, এমন নয়, তবে বৃদ্ধির হার খুবই কম।
গত বছরের ৫ জুলাই থেকে এক বছরে পুঁজিবাজারের সূচকে যোগ হয়েছে ২ হাজার ১৯৬ পয়েন্ট। শতকরা হিসেবে সূচক বেড়েছে ৫৫ পয়েন্ট। কিন্তু জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে বলার মতো দাম বেড়েছে চারটি কোম্পানির।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মোট কোম্পানির সংখ্যা ২২টি। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে এক বছরেরও কম সময়ে। বাকি ১৯টি কোম্পানির মধ্যে এক বছর আগের যে দাম, তার চেয়ে কমেছে তিনটির। একটির দাম রয়েছে প্রায় সমান।
বাকিগুলোর মধ্যে দুটির দাম বেড়েছে ১০ শতাংশেরও কম, চারটির দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। চারটির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে। ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে বাকি ৫টি কোম্পানির দাম, যার মধ্যে একটির দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৭০ শতাংশ।
এই খাত নিয়ে এই হতাশাজনক চিত্রের পেছনে খুলনা পাওয়ার বা কেপিসিএলের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন নিয়ে বিলম্বকে দায়ী করা হচ্ছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে বক্তব্য এসেছে যে, বিশেষ শর্তে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়বে। অনুমোদনের চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবও। তবে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমোদনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো সেক্টরের একটি খবর পুরো সেক্টরকে প্রভাবিত করতে পারে। বিমা খাতের উত্থান বিমার এজেন্ট কমিশন বাতিল, পরিচালকদের শেয়ার ধারণের ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু বেড়েছে। এখন এমন কোনো খবর নেই, তাই বিমা নিয়ে হইচইও নেই।’
তিনি বলেন, ‘কেপিসিএল নিয়ে জটিলতা হয়েছে সেটি এ ধরনের অন্য কোম্পানির ক্ষেত্রেও হবে না, সেটি বলা যাবে না। কারণ, কোন কোম্পানির কী সমস্যা, সেটি বিনিয়োগকারীরা কখনও খোঁজ নেয় না। তারা শুধু দেখে কোন শেয়ারের দাম বাড়ছে।’
গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণের পর আতঙ্কে পুঁজিবাজারে শেয়ার দরে ধস নামে। ৯ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ক্রমাগত পতনের মধ্যে ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকে লেনদেন। ফলে ৬ জুলাই লেনদেন শুরু হলে যে দরে লেনদেন হচ্ছিল, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সে সময় শেয়ারের সর্মনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইসে ছিল।
এরপর গত এক বছরে আলোচনায় না থাকলেও কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ার ছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানির দর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় সব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দরও বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। বিমার শেয়ার ৩ থেকে ৫ গুণ হয়েছে।
বড় অন্য খাতের মধ্যে বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন খাতেরও বেশ দর বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পাঁচটি কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলোর অবস্থা হতাশার মধ্যেই।
এই সময়ে কোম্পানির ব্যবসা খারাপ হয়েছে এমন নয়। ১০ শতাংশের বেশি দর হারানো সিভিও পেট্রোক্যামিকেলের আয় কেবল আগের চেয়ে কমেছে। তবে সবচেয়ে বেশি দর হারানো খুলনা পাওয়ার বা কেপিসিএলের আয় কিন্তু গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেড়েছে।
কেপিসিএল নিয়ে কী হচ্ছে?
এর তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আগেই। আর দুটি কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে মে মাসে। এখন কেবল একটি সহযোগী কোম্পানির ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৫ শতাংশের মালিকানার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
যদিও খুলনায় ১১০ ও ৪০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। আর সেগুলো অনুমোদনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত ঘোষণা আসছে না। আর এ কারণেই বিনিয়োগকারীরা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন।
আর কেপিসিলের এই অভিজ্ঞতার পর মেয়াদি আরও কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার নিয়েও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। আর এ কারণে লেনদেনে খুব একটি গতি নেই খাতটিতে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনাও করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে ভিত্তিতে দুই বছরের জন্য অনুমোদনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ না কিলেও আগে কেন্দ্র বসিয়ে সরকার যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিত, সেটি আর দেবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তাও সরকারের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কেপিসিএল ছাড়াও সামিট এবং ওরিয়ন ইনফিউশনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদও বাড়ানো হবে একই নীতিমালায়। তবে ৩০ জুন অর্থবছর শেষ হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনও কোনো জবাব পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। সেটা মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কেপিসিএলের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা সোহরাব আলী খান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কিছু জানানো হয়নি। আর এ বিষয়ে নতুন কোনো আপডেট থাকলে তা পাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন (পিএসআই) হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জানানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পর্যায় থেকে আলোচনা হচ্ছে প্লান্ট দুটি নবায়নের বিষয়ে। বিএসইসি ও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছে। কিন্তু কোনো চিঠি না পেলে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’
সাত বিদ্যুৎকেন্দ্রের কী চিত্র
খুলনা পাওয়ার বা কেপিসিএলের দাম এক বছর আগে ছিল ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। বুধবার দাম দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ১০ পয়সা। এই সময়ে দাম কমেছে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ্
শাহজিবাজার পাওয়ারের দাম এক বছর আগে ছিল ৭২ টাকা ৪০ পয়সা। বুধবার দাম দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকা ৬০ পয়সা। দাম বেড়েছে মাত্র ০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১৯ সালের জুলাইয়ের শুরুতে সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৮৩ টাকা ৬০ পয়সা।
এক বছর আগে ডরিন পাওয়ারের সর্বনিম্ন ছিল ৫৭ টাকা ১০ পয়সা। বুধবার দাম দাঁড়িয়েছে ৬৬ টাকা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা ৫৮ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৭৭ টাকা ২০ পয়সা।
সামিট পাওয়ারের দাম এক বছর আগে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল ৩৫ টাকা ৭০ পয়সা। বুধবার দাম দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। দুই বছর আগে জুলাইয়ের শুরুতে দাম ছিল ৪০ টাকা ৯০ পয়সা।
ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ারের দাম গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে ছিল ২২০ টাকা ২০ পয়সা। সেটি বেড়ে হয়েছে ২৭৩ টাকা ১০ পয়সা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক ০২ শতাংশ। তবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ের শুরুতে দাম ছিল অনেক বেশি, ৩৭৩ টাকা ৯০ পয়সা।
সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া জিবিবি পাওয়ার ছাড়া নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বারাকা পাওয়ারের দামই বলার মতো বেড়েছে।
গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে এই কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ২০ টাকা ৬০ পয়সা। আর বুধবার দাম ছিল ২৮ টাকা ৭০ পয়সা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ের তুলনায় দাম এখনও কম। সে সময় দাম ছিল ২৯ টাকা।
তবে জিবিবি পাওয়ারের শেয়ারধারীরা সবচেয়ে ভীষণ খুশি। প্রায় ৩ গুণ দাম হয়ে গেছে কোম্পানিটির। গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে দাম ছিল ১২ টাকা ৪০ পয়সা। বুধবার দাম বেড়ে হয়েছে ৩৩ টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে ১৭০ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দাম ছিল আরও কম। ১১ টাকা।
জ্বালানি খাতের অন্য কোম্পানিগুলোর কী অবস্থা।
বিদ্যুৎ বিতরণে সরকার সংস্থা ডেসকোর শেয়ারদর পুঁজিবাজারের উল্লম্ফনের বছরে কমেছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি কমেছে সিভিও পেট্রোক্যামিকেলের দর। ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ দর হারিয়েছে এই কোম্পানিটি।
করোনার বছরে অক্সিজেন উৎপাদনকারী বহুজাতিক কোম্পানি লিনডে বাংলাদেশও টানতে পারেনি বিনিয়োগকারীদের। এই এক বছরে কেবল ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ দাম বেড়েছে কোম্পানিটির।
করোনাকালে সরকারি যেসব কোম্পানির ব্যবসায় খুব একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, তার মধ্যে আছে জ্বালানি তেল সরবরাহ সংস্থাগুলো। কিন্তু মেঘনা পেট্রোলিয়াম করোনা সংক্রমণের পর যে দর হারিয়েছিল, সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে কমই। এক বছরে শেয়ারদর বেড়েছে কেবল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। পদ্মা ওয়েলের দাম এই সময়ে বেড়েছে ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ আর যমুনা অয়েলের ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
বেসরকারি ইঞ্জিন অয়েল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মোবিল যমুনার দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ।
গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা তিতাস গ্যাসের শেয়ারদর এই সময়ে বেড়েছে ১৯ দশমিক ৭৯ আর বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পাওয়ার গ্রিডের ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
শক্তিশালী আর্থিক ও মৌল ভিত্তির এসব কোম্পানির তুলনায় বন্ধ থাকা বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে আরও বেশি, ২৮ শতাংশ। আর ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের ৭১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট গত বছর করোনা সংক্রমণের সময় যে দর হারিয়েছিল, সেটি ফিরে পেয়েছে। গত জুলাই থেকে এক বছরে ৫৪ দশমিক ০৫ শতাংশ দাম বেড়েছে কোম্পানিটির। বুধবারের দাম ১ হাজার ৩২৩ টাকা ৬০ পয়সা।
শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে চলতি সপ্তাহ মোটেই ভালো কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের পতনের পর নববর্ষের ছুটি শেষে দ্বিতীয় কার্যদিবসেও বড় পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম—দেশের উভয় পুঁজিবাজার। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৭ পয়েন্ট। মন্দাবস্থা চলছে বাকি দুই সূচকেও। শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১০ এবং বাছাইকৃত শেয়ারের ব্লু-চিপ সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি কোম্পানির মধ্যে সিংহভাগের দরপতন হয়েছে। আজ ৯৮টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসেবে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘জেড’—তিন ক্যাটাগরিতেই প্রধান্য পেয়েছে দর কমা কোম্পানির সংখ্যা। বিশেষ করে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১১টির এবং কমেছে ৬৭টির; আর লেনদেন অপরিবর্তিত ছিল ৫টি কোম্পানির।
লেনদেন হওয়া ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেশিরভাগেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। মাত্র ৭টি কোম্পানির ইউনিটের দাম বৃদ্ধি হয়েছে, কমেছে ২৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫টির।
ডিএসইর ব্লক মার্কেটে আজ ২৬টি কোম্পানির মোট ৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে মারিকো বাংলাদেশ।
ডিএসইতে সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। সারা দিনে মোট ৪৪৬ কোটি টাকার ওপর শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, গতদিন যার পরিমাণ ছিল ৪১৪ কোটি টাকা।
৯.৯৪ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ারের তালিকায় আছে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। ১৪২.৯০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়ে দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৭.১০ টাকা।
অন্যদিকে, ৯.৯৬ শতাংশ দর হারিয়ে আজ একেবারে তলানিতে ঠাঁই হয়েছে খান ব্রাদার্সের। প্রতিটি শেয়ার ১৩৪.৫০ টাকা দরে লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে দাম কমে ১২১.১০ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
চট্টগ্রামেও বড় পতন
.ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের বড় পতন হয়েছে। সারা দিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্ট।
লেনদেন অংশ নেওয়া ২১১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৪টির, বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৫টির এবং ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।
সূচকের পাশাপাশি সিএসইতি আজ লেনদেনও কমেছে। গত কার্যদিবসে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হলেও মঙ্গলবার তা কমে ৭ কোটি টাকায় নেমেছে।
এদিন ৯.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে আর্থিক মূল্যে শীর্ষ শেয়ার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস লিমিটেড। অপরদিকে ৯.৭৭ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে নেমেছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে আবারও সূচকের পতন ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে। দুই পুঁজিবাজারে সবকটি সূচক কমলেও বেড়েছে সামগ্রিক লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসএস ১ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ কমেছে আধা পয়েন্টের বেশি।
সূচক কমলেও গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন। ডিএসইতে মোট ৪৮২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিন ছিল ৪৫১ কোটি টাকা।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫০, বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬ কোম্পানির। সারাদিনের লেনদনে দাম অপরিবর্তিত ছিল ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ এবং জেড ক্যাটাগরির বেশিরভাগ শেয়ারেরই দাম ছিল নিম্নমুখী। বি ক্যাটাগরিতে দাম বেড়েছে অধিকাংশ শেয়ারের। মধ্যম মানের শেয়ারের এই ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ৮২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯, কমেছে ৩৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে তালিকাভুক্ত ৩৬ কোম্পানির ২৪টিরই দাম ছিল উর্ধ্বমুখী। দাম কমেছে ৪ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮ কোম্পানির।
ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া ২৬ কোম্পানির ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংক এশিয়া সর্বোচ্চ ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ব্লক মার্কেটে বিক্রি করেছে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষে আছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে তাল্লু স্পিনিং মিলস।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো পতন হয়েছে চট্টগ্রামের সূচকেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ পয়েন্টের বেশি।
তবে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে সিএসই'র বাজারে। সারাদিনে সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৩ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৬, কমেছে ৭৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে আছে পদ্মা ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দাম কমে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রধান সূচকের উত্থান হলেও সার্বিক সূচক কমেছে চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএস ১ ও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩১, কমেছে ৬৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ৭০ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০, কমেছে ১৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৭৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:টানা দুই দিন উত্থানের পর তৃতীয় দিন মঙ্গলবারও ঢাকার পুঁজিবাজারে বইছে সুবাতাস।
সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক ডিএসইএস এবং ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১০ পয়েন্ট করে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগেরই দাম বেড়েছে। ১০৯ কোম্পানির দরপতন এবং ৫৩ কোম্পানির দাম অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে দাম বেড়েছে ২৩০ কোম্পানির।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারেও বইছে চনমনে হাওয়া। লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১০২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫৭ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৭, কমেছে ৫১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথমার্ধে সিএসইতে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়।
আরও পড়ুন:সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারের লেনদেনে সূচকের উত্থান হয়েছে ঢাকার পুঁজিবাজারে; বেড়েছে সবকটি সূচক।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে পতন দিয়ে শুরু হয়েছে লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে এবং বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপ সূচকের উত্থান হয়েছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় দাম বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের। দরবৃদ্ধির ২৪৫ কোম্পানির বিপরীতে দর কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইতে দিনের শুরুতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ১৯০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট। সূচক কমলেও বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেন হওয়া ১০২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৫, কমেছে ২৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহের উত্থানের ধারা ধরে রেখে এ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শুরুতেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক সূচক ডিএসইএসের উত্থান দশমিকের নিচে থাকলেও বাছাইকৃত শেয়ার ব্লু-চিপের সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
লেনদেনে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৯, কমেছে ৮৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
শুরুর ৩০ মিনিটে ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি টাকা। ঢাকার মতোই চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২, কমেছে ৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথম আধা ঘণ্টায় মোট লেনদেন ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য