অর্থবছর শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পনিগুলোর। এর মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানি তাদের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে আসতে থাকবে এ খাতের কোম্পানিগুলোর চূড়ান্ত আর্থিক প্রতিবেদন; পাশাপাশি লভ্যাংশ ঘোষণার সিদ্ধান্ত।
এমন অবস্থায় সোমবার বস্ত্র খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী ছিল সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের শেয়ারের দরও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
গত বছরের জুলাই থেকে এক দফা আর ৫ এপ্রিল লকডাউনের শুরু থেকে আরেক দফা উত্থানে সাধারণ বিমা খাতের শেয়ারগুলো দৌড়াতে থাকে পাগলা ঘোড়ার মতো। যাচাই-বাছাই ছাড়াই দাম বাড়তে থাকে।
গত এক বছরে বিমা খাতের কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬ গুণ, কোনোটির ৭ গুণ, কোনোটির আবার ১০ গুণ হয়েছে। অস্বাভাবিক উত্থান নিয়ে বারবার আলোচনা হচ্ছিল।
অন্যদিকে বাজেটে অর্থমন্ত্রী করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করার পর থেকে বস্ত্র খাতে আগ্রহ দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আবারও গত বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন, যা পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন হিসেবে। এই শাটডাউনের মধ্যে সোমবার প্রথম লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গত বুধবার দেয়া এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীদের মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে ব্রোকারেজ হাউসে যেতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
সোমবার লেনদেনে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দিনের কার্যক্রম। বেড়েছে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শাটডাউন নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল, সেটি নেই বললেই চলে। যদিও শাটডাউনের আগে সূচকের বড় পতন হয়েছিল।
চলমান শাটডাউনে লেনদেন সময়সীমাও কমিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংকের কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এর আগের গত ৫ এপ্রিল লকডাউনে ব্যাংকের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিয়ে আনা হয় পুঁজিবাজারের লেনদেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শাটডাউনের পর সোমবার লেনদেনেও লেনদেন সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে।
সোমবার থেকে বুধবার পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে দুপুর একটা পর্যন্ত। আগের স্বাভাবিক লেনদেন হতো বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। বিপরীত অবস্থায় ব্যাংকের লেনদেন চলবে দেড়টা পর্যন্ত।
সোমবার বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫৯ কোটি টাকা। এ খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। বাকি ৫৭টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে তাদের শেয়ারধারীদেরর সর্বশেষ অর্থবছরের লভ্যাংশ ঘোষণা শেষ করেছে। ফলে লভ্যাংশ প্রাপ্তির বিপরীতে শেয়ার লেনদেন মুনাফার প্রত্যাশায় সোমবারও এ খাতের শেয়ার দর বেড়েছে।
লেনদেন হওয়া ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে আটটি ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে। পাঁচটির দর পাল্টায়নি। বাকি ১৮টি ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে। সোমবার এ খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের শেয়ার। ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১০টির। দর পাল্টায়নি দুটির। বাকি ৩৯টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।
আগ্রহে উড়ছে বস্ত্র
শতকরা হিসেবে দর বৃদ্ধির শীর্ষ পর্যায়ে ছিল বস্ত্র খাতের জাহিন স্পিনিং, তাল্লু স্পিনিং লিমিটেডের। এদিন কোম্পানি দুটির শেয়ার দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
জাহিন স্পিনিং লিমিটেডের শেয়ার দর ৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সা। আর তাল্লু স্পিনিং লিমিটেডের শেয়ার দর ৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ৭০ পয়সা।
এ ছাড়া, সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত দর বৃদ্ধি পাওয়া ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টি ছিল বস্ত্র খাতের।
এমএল ডাইং লিমিটেডের শেয়ার দর ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। শেয়ার দর ২৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২ টাকা।
ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের শেয়ার দর ১৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ।
প্যাসিফিক ডেনিম লিমিটেডের শেয়ার দর ১৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৮৪ শতাংশ।
অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৭৫ শতাংশ। শেয়ার দর ১২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা।
ডেল্টা স্পিনিং লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৭০ শতাংশ। শেয়ার দর ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সা।
এ ছাড়া, দর বৃদ্ধির তালিকায় ছিল ইভেন্স টেক্সটাইল, ম্যাকসন স্পিনিং মিলস, আরএন স্পিনিং, সাফকো স্পিনিং, মতিন স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং লিমিটেড।
ব্যাংকের চিত্র
শাটডাউনের মধ্যে পুঁজিবাজারের প্রথম লেনদেনে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। সোমবার লেনদেন সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ব্যাংক খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৭.৩১ শতাংশ। শেয়ার দর ৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৪০ পয়সা।
ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.৪৬ শতাংশ। শেয়ার দর ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫২ টাকা ৭০ পয়সা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৩.১৭ শতাংশ। ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৩.১৬ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২.৭৪ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২.৫৮ শতাংশ। শেয়ার দর ১১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৮০ পয়সা।
সিটি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২.২৭ শতাংশ। এ ছাড়া, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ শতাংশের বেশি।
প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে দশমিক ৪৩ শতাংশ। ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে দশমিক ৮৯ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ০১ শতাংশ। পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
পড়তি সময় বিমার
৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকে কেবল বিমা খাতে ভর করেই এগিয়েছে পুঁজিবাজার। শেয়ারের দাম দেড় থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে এক মাসে।
সবচেয়ে বেশি দর পতন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
শতকরা হিসাবে ৬.৩১ শতাংশ শেয়ার দর হারিয়ে সর্বোচ্চ দর পতন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে তৃতীয়স্থানে ছিল অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬৮ টাকা ১০ পয়সা থেকে কম হয়েছে ৬৩ টাকা ৮০ পয়সা।
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৫.৪৮ শতাংশ। শেয়ার দর ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬৩ টাকা ৮০ পয়সা।
সোমবার দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষ ৩৬টি কোম্পানির মধ্যে ২২টি ছিল বিমা খাতের।
এ ছাড়া, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৫.০৫ শতাংশ। কর্নফুলী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.৮৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৪.৭১ শতাংশ। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.১৬ শতাংশ। প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.১৫ শতাংশ। ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.১৪ শতাংশ।
অন্যান্য খাতে যে প্রবণতা
লকডাউনের পর থেকে প্রথমে বিমা, পরে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এরপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আর শেষে বস্ত্র খাতে উত্থানের পরও আরও বেশ কিছু খাত ছিল ঘুমিয়েই।
প্রকৌশলের কোম্পানিগুলোর প্রতিও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেল সোমবার। এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির। এদিন সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় ছিল ইয়াকিন পলিমার, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৪৪ শতাংশ।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১২টির। এই খাতে শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এ্যামারেল্ড অয়েল লিমিটেডের। শেয়ার প্রতি দুই টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৯৮ শতাংশ বেড়েছে এই কোম্পানির দর।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে দশটির। সবচেয়ে বেশি ছয় টাকা ৯০ পয়সা বেড়েছে জেনেক্স ইনফ্লোয়েন্সের দর।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। কমেছে দশটির। আর পাল্টায়নি একদিন দর।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টির। কমেছে দশটির। আর পাল্টায়নি বাকি তিনটির দর।
এক দিনে বাড়ল সব ফান্ডের দর
৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে একটির লেনদেন হচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরেই। বাকি ৩৬টি ফান্ডের সব কটির দাম এক দিনে বাড়ল আবার।
এই ফান্ডগুলোর মধ্যে ৩০টির অর্থবছর শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এগুলো হিসাবনিকাশ শেষ করে লভ্যাংশ ঘোষণা করবে।
পুঁজিবাজারের সামগ্রিক চিত্রের মতোই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অবস্থা। গত এক দশক ধরে সামগ্রিক যে হতাশা, তা ছিল এই খাতেও। তবে চলতি বছর ফান্ডগুলো ব্যাপক মুনাফা করেছে বলে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে মার্চের পর জানানো হয়েছে। আর চতুর্থ প্রান্তিকে সূচক বেড়েছে ৮৮০ পয়েন্ট। আর এর সুফল অবশ্যই পাবে ফান্ডগুলো।
এ কারণে এবার এই খাতে মুনাফায় চমকের আশাও করা হচ্ছে। আর গত কয়েক দিন ধরেই ফান্ডের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির প্রমাণ মিলছে। এক দিনে সব ফান্ডের দাম বাড়ার ঘটনা আগেও দেখেছে পুঁজিবাজার।
এই দাম বৃদ্ধির হার খুব একটা বেশি নয়। বেশির ভাগ ফান্ডের দামই বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ পয়সা। তবে বেশির ভাগ ফান্ডই অভিহিত মূল্যের অনেক নিচে থাকায় ধীরে ধীরে দাম বাড়তে থাকায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে বিনিয়োগকারীরা।
গত ৪ এপ্রিল থেকে বহু ফান্ডের দাম ৫০ শতাংশের মতো বেড়েছে।
তিন বছর পর ৬ হাজার ২০০ সূচকে
সোমবার লেনদেন শেষে সূচকের দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১৯ পয়েন্টে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি সূচক উঠেছিল ৬ হাজার ২১৮ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস বেড়েছে ১১ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ১৬ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৫ পয়েন্টে।
ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৪০ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২১৫ টির, কমেছে ৭১টির। পাল্টায়নি ১৮টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৫২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ও মরক্কোর নেতৃত্বমূলক ভূমিকা জোরদারে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা বলা হয়েছে।
পোস্টে আরও বলা হয়েছে, 'মরক্কো সফররত বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মরক্কোর জাতীয় শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ সাদ বেরাদা-র মধ্যে গতকাল মরক্কোর রাজধানী রাবাতে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।'
'বৈঠকের শুরুতে মরক্কোর মন্ত্রী মোহাম্মদ সাদ বেরাদা দেশটির সমন্বিত শিক্ষা ও ক্রীড়া কাঠামো তুলে ধরেন।
তিনি বিশেষভাবে মরক্কোর "স্টাডি অ্যান্ড স্পোর্টস" মডেলের উল্লেখ করেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারে নেওয়া নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন।'
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা মরক্কোর বাদশাহ মোহাম্মেদ ষষ্ঠ-এর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং মরক্কোর শিক্ষা ও ক্রীড়াক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতির জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, “মরক্কোর শিক্ষা ও ক্রীড়ার সমন্বিত মডেল একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”
উপদেষ্টা প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ভিত্তিক ক্রীড়া সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন এবং মুসলিম বিশ্বের মধ্যে দুই দেশের নেতৃত্বমূলক ভূমিকা জোরদারে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশ ও মরক্কোর জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তাব করেন এবং ২০২৫ সালে অনুষ্ঠেয় "গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট"-এ মোহাম্মদ সাদ বেরাদাকে আমন্ত্রণ জানান।
মরক্কোর মন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে সাম্প্রতিক অর্জনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মরক্কো প্রি-স্কুল কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ক্লাসরুমকে আরও আনন্দদায়ক ও শিক্ষণ উপযোগী করে তুলতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক তথ্য একটি ডেটাবেইজে সংরক্ষিত হচ্ছে, যা দেশটির নীতিনির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
উভয়পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই বৈঠক শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-মরক্কো সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর ও ফলপ্রসূ হবে।
বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতেই ঢাকার বায়ুমানে উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েকদিনের মতো আজও ঢাকার বাতাস যেকোনো প্রকার অস্বাস্থ্যকর শ্রেণি থেকে বেশ দূরে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল দশটার দিকে ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৭৯, একিউআই সূচকে যা ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ।
সাধারণত বায়ুদূষণের সূচক (এইকিআই) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে ১০০ পর্যন্ত একিউআই স্কোর ‘মাঝারি’।
এই সময়ে ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ুমানও ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে ছিল, তবে তা ঢাকার চেয়ে কিছুটা খারাপ ছিল। দিল্লির বাতাসের সূচক ছিল তখন ৯০ এবং দূষণে শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় অবস্থান ছিল ১৭তম।
তবে অবশেষে আজ দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকার শীর্ষ পাঁচ থেকে বের হতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। একই সময়ে ১২৪ স্কোর নিয়ে তালিকার অষ্টম স্থানে অবস্থান করছিল শহরটি। বেশ কিছুদিন পর আজ সকালে লাহোরের বায়ুমানে এত উন্নতি হয়েছে। সাধারণত ১৫০-এর নিচে নামে না লাহোরের একিউআই স্কোর।
আজ সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল চিলির সান্তিয়াগো। শহরটির সূচক ছিল ১৬২। ১৬০, ১৫৬ ও ১৫৪ স্কোর নিয়ে তার পরের তিন শহর ছিল উগান্ডার কাম্পালা, বাহরাইনের মানামা ও কঙ্গোর কিনশাসা। শীর্ষ চার শহরের বায়ুমানই ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’। পঞ্চম স্থানে থাকা মিসরের কায়রোর বাতাসের স্কোর ছিল এই সময় ১৩২, অর্থাৎ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’।
কণা দূষণের এই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণের প্রায় ২৭১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও আলোচিত পিকে হালদারসহ ১৫ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে বলে এতে জানানো হয়।
দুদক জানায়, প্রতিটি মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলায় মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও আলোচিত পিকে হালদারসহ অধিকাংশকে কমন আসামি করা হয়েছে।
প্রথম মামলায় ৯৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড (বর্তমানে আভিভা ফাইন্যান্স) থেকে জাল কাগজপত্রের ভিত্তিতে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড কোম্পানির নামে ৩২.৫০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়। পরে সেই টাকা কয়েক ধাপে স্থানান্তর হয়ে এস আলম গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডে চলে যায়।
এই মামলার আসামিরা হলেন—এস আলম গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এম আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, পরিচালক শাহানা ফেরদৌস, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ইভিপি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান রাশেদুল হক, একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ প্রধান নাহিদা রুনাই, এসভিপি ও মেম্বার, ক্রেডিট কমিটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স কাজী আহমেদ জামাল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার, জুমারাতুল বান্না এবং মারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান, মো. ইসহাক ও মেসার্স মোস্তফা অ্যান্ড কোম্পানির মালিক মো. গোলাম মোস্তাফা।
দ্বিতীয় মামলায় নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ এম ট্রেডিংয়ের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ১০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ ও ৩৪ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণপ্রস্তাব প্রস্তুত এবং ঋণ অনুমোদন, ঋণ প্রদান এবং ঋণের নামে ১০৪ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৮ টাকা আত্মসাৎ ও ৩৪ কোটি টাকা এস আলম সুপার এডিবল অয়েল নামে প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর/রূপান্তর/হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই মামলার আসামিরা হলেন—এস আলম গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এম আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, পরিচালক শাহানা ফেরদৌস, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ইভিপি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান রাশেদুল হক, একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ প্রধান নাহিদা রুনাই, এসভিপি ও মেম্বার, ক্রেডিট কমিটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স কাজী আহমেদ জামাল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার, জুমারাতুল বান্না এবং মারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান, মো. ইসহাক ও মেসার্স মেসার্স এ এম ট্রেডিংয়ের মালিক আলহাজ্ব কবির আহম্মদ।
এদিকে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানির নামে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ৭১ কোটি ৫১ লাখ টাকার ঋণ ও ২৪ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
ওই মামলার এজাহার বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের কর্মকর্তা এবং মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানির মালিক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর তারিখে মেয়াদি ঋণ মঞ্জুর করা হয়। ঋণের ২৪ কোটি টাকা ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, দিলকুশা শাখা থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, খাতুনগঞ্জ শাখার মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে একই দিনে মারিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড হয়ে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর হয়। প্রতিটি ধাপেই জালিয়াতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনা সংঘটিত হয় বলে দুদক মনে করে।
এই মামলার আসামিরা হলেন—এস আলম গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এম আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, আব্দুস সামাদ, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান, পরিচালক শাহানা ফেরদৌস, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ইভিপি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রধান রাশেদুল হক, একই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ প্রধান নাহিদা রুনাই, এসভিপি ও মেম্বার, ক্রেডিট কমিটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স কাজী আহমেদ জামাল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার, জুমারাতুল বান্না এবং মারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, পরিচালক টিপু সুলতান, মো. ইসহাক ও মেসার্স সাইফুল অ্যান্ড কোম্পানির মালিক সাইফুল ইসলাম।
ফেসবুকে অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেওয়ায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক সহকারী কমিশনার (বর্তমানে ওএসডি সহকারী সচিব, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া) তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বিভাগীয় মামলায় তাকে ‘চাকরি হতে বরখাস্তকরণ’ গুরুদণ্ড দিয়ে বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগে, গত বছরের ৬ অক্টোবর তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। পরের দিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তাপসী তাবাসসুমকে চাকরিচ্যুতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৬ অক্টোবর তিনি নিজ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) মোতাবেক ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি নিরাপত্তার কারণে ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ না নিয়ে লিখিতভাবে জবাব দেন। তার জবাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী তাকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর তাকে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন, দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব, পারিপার্শ্বিকতা এবং বিভাগীয় মামলার নথি পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বিধিমালা অনুযায়ী ‘চাকরি হতে বরখাস্তকরণ’ সূচক গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনও গুরুদণ্ড দিতে কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে পরামর্শ দেয়। রাষ্ট্রপতিও তাকে চাকরিচ্যুতির গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) কমান্ডারসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ভোরে এ ঘটনা ঘটেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, অভিযানে তিনটি এসএমজি, একটি রাইফেলসহ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান এখনও চলছে।
অভিযানের বিষয়ে আজ দুপরে রুমা জোনে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে একটি পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর মরা মুরগির বাচ্চা ও পঁচা ডিম। পুকুরের মাছকে সস্তা খাবার দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব উপায়। এতে দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। দিনের পর দিন ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য যা মারাত্মক হুমকি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পশ্চিম দূর্গাপুর গ্রামের এমদাদুল হক তার পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করেছেন। সেই পুকুরটি পরিচালনা করেন তার ছেলে আবু সালেক। সেই পুকুরের মাছকে সাধারণ খাবারের বদলে খাওয়ানো হচ্ছে জীবন্ত, মরা মুরগির বাচ্চা ও নষ্ট-পঁচা ডিম। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব সংগ্রহ করে পুকুর পাড়ে নিয়ে এসে রাখা হয়। এরপর সেগুলো একটি ব্রেন্ডার মেশিনে সেদ্ধ করে পুকুরে মাছকে খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। এতে পুকুরের আশেপাশে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই দৃশ্য যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী এই এলাকার মানুষ।
তাদের অভিযোগ, এ বিষয়ে পুকুরের মালিককে বারবার বলেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয় তাদের। এদিকে পঁচা ডিম ও মুরগির বাচ্চার অভিযোগ পুকুরের কর্মচারিরা স্বীকার করলেও অস্বীকার করছেন পুকুর মালিক।
পশ্চিম দূর্গাপুর গ্রামের মোহন কুমার বলেন, হ্যাচারী থেকে নষ্ট ও পঁচা ডিম নিয়ে এসে মাছকে খাওয়ায়। এতে করে পুকুরের পানি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গোসল করা যায়না। প্রচুর দুর্গন্ধ হয়। নিষেধ করলে উল্টো হুমকি দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, পঁচা ডিম ও মুরগির বাচ্চা নিয়ে এসে পুকুরের পাড়ে রাখা হয়। তখন দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া এরপর যখন আগুনে জ্বাল দেওয়া হয় তখন প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায়। বাড়িতে থাকায় মুশকিল হয়ে পড়ে। আমরা অনেক বার নিষেধ করেছি, কিন্তু আমাদের কথা শোনেনা।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রিফাত ইসলাম বলেন, দিনের পর দিন আমরা এই দুর্গন্ধে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এই পঁচা ডিম আমাদের এখানকার পরিবেশ দূষণ করছে। এর থেকে আমরা মুক্তি চাই। এজন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
পুকুরের কর্মচারী বিশ্বনাথ চন্দ্র বলেন, আমরা জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার হ্যাচারী থেকে পঁচা ডিম নিয়ে আসি। সেই ডিমের সাথে কিছু বাচ্চাও থাকে। তারপর সেগুলো ব্রেন্ডারে সেদ্ধ করে মাছকে খাওয়াই।
পুকুরের মালিক আবু সালেক বলেন, এই পুকুরটি আমি পরিচালনা করি। এখানে রুই, কাতলা, পাঙাসসহ বিভিন্ন মাছ চাষ করেছি। গ্রামবাসীরা যে মরা মুরগি বা পঁচা ডিমের অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আল মামুন বলেন, আমাদের পুষ্টির বিশাল একটা অংশ পূরণ করে মাছ। যদি মাছকে অস্বাস্থ্যকর কোন খাবার দেওয়া হয় তাহলে সেই মাছ খেলে মানবদেহে জীবাণু ও বিষাক্ত উপাদান প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। এটা মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এছাড়া দুর্গন্ধে মানুষের বিভিন্ন রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, কোথাও পরিবেশ দূষণ সংস্ক্রান্ত অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, মাছ চাষের ক্ষেত্রে কোন চাষী যদি সরকারি বিধি বিধান অনুসরণ না করে বা অপদ্রব্য ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড অথবা ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। কোন মাছ চাষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য