অনুমিতভাবেই ক্রিকেট বিশ্বের দুই শক্তিমান দল- ভারত ও অস্ট্রেলিয়া খুবই দাপুটে ক্রিকেট খেলে ফাইনালের মঞ্চে এসেছে। টুর্নামেন্টে স্বাগতিক ভারতকে হারাতে পারেনি কেউই। টানা ১০ ম্যাচ জিতেছে তারা। অন্যদিকে জোড়া হারে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হলেও টানা ৮টি ম্যাচে অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া। আজ দুর্ধর্ষ ও তুখোড় দুটি দল শিরোপা জয়ের মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ফাইনাল ম্যাচটিকে ঘিরে বাড়তি উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সবার মধ্যে।
বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ সব সময় আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তবে এই দুদলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শক্তি ও সামর্থ্য বিবেচনায় আজ আমরা রুদ্ধশ্বাস শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চকর ক্রিকেট মহাযুদ্ধের একটি বারুদ ছড়ানো ম্যাচ দেখতে পারব বলে আশা করি।
অনেক সময় দেখা যায়, একটি দল প্রাথমিক পর্বে খুবই ভালো খেলে। কিন্তু নকআউট পর্বে এসে তাদের চরিত্র বদলে যায়। এ পর্যন্ত এসব ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে ভারত দলটি। যতই সামনের দিকে এগিয়েছে টুর্নামেন্ট- ততই যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দলটি। আমরা দেখেছি, সেমিফাইনালে কিছুটা চাপে পড়লেও কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। টুর্নামেন্টজুড়ে যে দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখাল টিম ইন্ডিয়া, তাদের সেই প্রতিচ্ছবিটা ফাইনালের মঞ্চেও দেখতে চাইবে ভারতবাসী। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রোহিত শর্মার দলকে বড় পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষায় পাস করলেই তাদের অপরাজিত থাকাটা পরিপূর্ণ রূপ পাবে।
অপরদিকে, লিগ পর্বে ভারত ও সাউথ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য এরপর আর কোনো ম্যাচেই তাদের কেউ হারাতে পারেনি। ফেভারিট দলের মতো খেলে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে হাজির হয়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ভারতের মতো টুর্নামেন্টব্যাপী জয় অব্যাহত না থাকলেও বড় ম্যাচের জন্য খুবই ভয়ংকর দল অস্ট্রেলিয়া। কীভাবে ফাইনালের মতো মঞ্চে পারফর্ম করতে হয়, সেটি তাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।
আমি মনে করি, বড় ম্যাচের জন্য সবচেয়ে দক্ষ দল অস্ট্রেলিয়া। এখান থেকে তারা কোনোভাবেই খালি হাতে ফেরত যেতে চাইবে না।
তবে ফাইনালের মহারণে ভারতকেই ফেভারিট বলতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার জন্য তাদের আটকানো কঠিন হবে। ব্যাটিং বলেন, বোলিং বলেন কিংবা ফিল্ডিং- সব দিক থেকেই ভারত দলটি দুরন্ত। তাদের দলে ফাঁকফোকর নেই।
ভারতীয় ব্যাটিং রাজত্বের মধ্যমণি বিরাট কোহলি সেরা পারফর্মার। ফাইনাল ম্যাচটিও স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন এই তারকা ব্যাটার। এ ছাড়া ভারতের প্রত্যেক ব্যাটার প্রত্যেকের যার যার জায়গায় দুর্দান্ত ফর্মে আছেন।
বোলিংয়েও বিধ্বংসী দলটি। ভারতের মূল অস্ত্র এখন মোহাম্মদ শামি। তার সঙ্গে বুমরাহ ও সিরাজও বিপজ্জনক। তাদের বল খেলা কঠিন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হতে পারে ভারতীয় বিষাক্ত স্পিন। কুলদীপ, জাদেজার সঙ্গে অশ্বিন যদি খেলেন, তাহলে তো মহাবিপদে পড়তে পারে অজি ব্যাটাররা। তাদের স্পিন খেলার দুর্বলতা সবার জানা। স্পিন শক্তিতেই এগিয়ে যেতে পারে ভারত। আমি মনে করি, ফাইনালে দুই দলের শক্তির পার্থক্যটা হলো মূল স্পিন বোলিংয়ে। স্পিনেই ম্যাচে বড় পার্থক্য তৈরি হতে পারে।
ফাইনালে ভারত অনেক এগিয়ে থাকলেও আমি মনে করি, তাদের হারানোর সক্ষমতা আছে অস্ট্রেলিয়ার। ফাইনাল ম্যাচে বেশি চাপে থাকবে ভারত। টুর্নামেন্টজুড়ে যে ক্রিকেট খেলল দলটি, ফাইনালেও দাপুটে জয় দেখতে চাইবে দর্শক-সমর্থকরা। এই যে প্রত্যাশার চাপ- সেটি ভারতের খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে। স্নায়ু চাপে ভুগলেও ভারতের মতো অতটা চাপে থাকবে না অস্ট্রেলিয়া দল। শুধু তাই নয়, আরও বেশ কিছু জায়গায় ভারতের চেয়ে ফাইনাল ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারে তারা।
শুরুতেই ব্যাটিংয়ের কথা বলব। ভারতের ব্যাটাররা ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও তাদের লোয়ার মিডল অর্ডার কিন্তু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। কোনো ম্যাচে চাপ নিয়ে ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি সুর্যকুমার, অশ্বিনদের। যদি ফাইনালে এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের হাল ধরতে হবে, তাহলে সেখানে অস্ট্রেলিয়ানরা এগিয়ে থাকবে।
এরপর বোলিংয়ের কথা যদি বলি, অস্ট্রেলিয়ার পেস ইউনিট ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। সেমিফাইনালে তাদের আরও বিধ্বংসী রূপ আমরা দেখেছি। ভারতের পেস বোলিং ইউনিট সেরা পারফরম্যান্স দেখালেও ফাইনালে যদি তাদের কোনো পেসার ভালো করতে না পারেন তাহলে বিপদ হতে পারে ভারতের।
ধারাবাহিকভাবে ভালো করা একজন যদি হঠাৎ অফ ফর্মে চলে যান তাহলে দলের শক্তি কমে যায় অনেকাংশে। আর এখানেই এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার। ভারতের তিন পেসার ও দুই স্পিনারের সঙ্গে ষষ্ঠ বোলারের অভাব রয়েছে। আর এ জায়গায়ও এগিয়ে যেতে পারে অজিরা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ফিল্ডিং। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যাচ মিস, ওভার থ্রোয়ে রান দিয়েছে ভারত। ফাইনালের মতো মঞ্চে যদি ফিল্ডিংয়ে কোনো দুর্বলতা থাকে, তাহলে বড় মাশুল গুনতে হবে তাদের। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে অনেক ভালো অস্ট্রেলিয়া দল।
এ ছাড়া বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্লান্তি গ্রাস করে কি না- সেটিই দেখার বিষয় থাকবে। দীর্ঘ টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া দলের চেয়ে বেশি ভ্রমণ-ক্লান্তি ভারত দলের। সেই ধকল কাটিয়ে ফাইনালে পারফর্ম করতে হবে স্বাগতিকদের।
ফাইনাল ম্যাচের উইকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের যে ১১টি উইকেট রয়েছে, এর মধ্যে ষষ্ঠ উইকেটে খেলার সম্ভাবনাই প্রবল। ঐতিহ্যগতভাবেই উইকেট ব্যাটিংবান্ধব হয়ে থাকে। পেসার ও স্পিনারদের জন্যও সহায়ক হয়। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ যেহেতু, উইকেটও ভালো হবে আশা করি।
আগে ব্যাটিং করলে বড় স্কোর দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে দুদলই। এ ক্ষেত্রে টসটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। টস জেতা দল বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। কেননা রাতের শিশিরও খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে।
আমি মনে করি, কন্ডিশন বড় ফ্যাক্টর হলেও ভারতের মাটিতে অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে অস্ট্রেলিয়ার। কীভাবে সফল হতে হয়, সেই কৌশল বেশ ভালো করেই জানা তাদের। অন্যদিকে, ভারত হোম অ্যাডাভেন্টজ কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। ঘরের মাঠে লাখো দর্শকের সামনে খেলবে তারা। দর্শক-সমর্থন তাদের পক্ষে থাকবে।
সব মিলিয়ে পরিশেষে বলব, ফাইনাল ম্যাচের যে স্নায়ু চাপ থাকবে, সেটি কাটিয়ে যারা মাঠের যুদ্ধে এগিয়ে যাবে, তারাই আগামী চার বছর বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার গৌরব অর্জন করতে পারে।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শনিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) নবনিযুক্ত সভাপতি। পদাধিকারবলে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিওএ-র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সেনাবাহিনী প্রধান তার এই প্রথম সভায় উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সভায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিওএ-র কার্যনিবাহী কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন এবং সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পুলিশ সার্ভেইল্যান্সে (নজরদারিতে) রাখা হয়েছে।
রোববার পল্টনে আউটার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) আয়োজিত ‘ওয়ালটন-ক্র্যাব স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল ২০২৪’-এর ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এরকম (শীর্ষ সন্ত্রাসী) যারা ইতোমধ্যে মুক্তি পেয়েছে, তারা দীর্ঘ সময় জেল খেটে আদালতের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে। তারা আমাদের সার্ভেইল্যান্সে রয়েছে। নতুন করে অপরাধে যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুলিশে এখনও যোগদান না করা সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে মাইনুল হাসান বলেন, ‘এটা একেবারেই মিনিমাম নম্বর। যারা যোগদান করেননি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিএমপি মহানগরীর শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। তেমনই ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) বিভিন্নভাবে অপরাধ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করছে।
‘ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, যেটি বহুদিন থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সব সময় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করে থাকে।’
ডিএমপি কমিশনার পরে পল্টন আউটার স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ক্র্যাব সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্র্যাবের সভাপতি কামরুজ্জামান খান, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানসহ ক্র্যাবের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আসিয়ান ঢাকা কমিটির পক্ষ থেকে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শনিবার কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এ সময় আসিয়ান ঢাকা কমিটির প্রতিনিধি ঢাকায় নিযুক্ত ব্রুনাই দারুসসালামের হাইকমিশনার হারিস বিন ওথম্যান, ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত হিরু হারতানতো সুবোলো, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ হাশিম, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কেইও সোয়ে মোয়ে, ফিলিপাইনের জুনিয়র রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল আউসান, সিঙ্গাপুর প্রজাতন্ত্রের হাইকমিশনার মাইকেল লি, থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিটমোর, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত নগুয়েন মানহ কুওয়ংসহ কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ সিনিয়র সাংবাদিক অঘোর মণ্ডল আর নেই। বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আগস্টের শুরু থেকে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন অঘোর মণ্ডল। সঙ্গে হৃদরোগসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও ছিল। ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এরপর সাধারণ কেবিন থেকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত হন।
সপ্তাহ দুয়েক আগে আইসিইউতেই লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয় অঘোর মণ্ডলকে। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
অঘোর মণ্ডল তিন দশকেরও বেশি সময় সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে আজকের কাগজ দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু। এরপর দৈনিক ভোরের কাগজে ছিলেন। একসময় প্রিন্ট মিডিয়া ছেড়ে তিনি সম্প্রচার মাধ্যমে যোগ দেন।
চ্যানেল আই, দীপ্ত টিভি, এটিএন নিউজে কাজ করেছেন অনেকদিন। সবশেষ এটিএন নিউজে বার্তা সম্পাদকের (ডিজিটাল অ্যান্ড নিউ মিডিয়া) দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কলাম লিখতেন তিনি। কলামিস্ট হিসেবে লেখালেখি করেছেন ক্রিকেট, রাজনীতিসহ আরও অনেক বিষয়েই। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে দেশ-বিদেশে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইভেন্ট কাভার করেছেন অঘোর মণ্ডল।
এক সময় তিনি বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের (বিএসজেএ) সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালে কিছুদিনের জন্য হয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও। তার অকাল মৃত্যুতে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোক জানিয়েছে বিএসজেএ, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশন (বিএসপিএ) সহ আরও অনেক সংগঠন।
আরও পড়ুন:দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিদ্যমান ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন, বোর্ড ও সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে উপস্থাপনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
আগামী দুই মাসের মধ্যে কমিটিকে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন জোবায়েদুর রহমান রানাকে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সাবেক সচিব হকি খেলোয়াড় মেজর (অব.) ইমরোজ আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, ক্রীড়া সংগঠক মহিউদ্দিন আহমেদ বুলবুল ও সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক মন্টু কায়সার।
সার্চ কমিটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৮-এর আলোকে ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থাগুলোর চলমান কার্যক্রম সম্পর্কিত বিষয় পর্যালোচনা করে আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পেশ করবে বলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ডসহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা বিশদ পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।
এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ক্রীড়া-১) এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব।
আরও পড়ুন:রাজধানীর আদাবরে গার্মেন্টকর্মী রুবেলকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আদাবর থানায় এই দুই সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার হত্যা মামলাটি দায়ের করেন নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম।
আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম শুক্রবার মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে মামলার ২৮ নম্বর এবং চিত্রনায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌসকে ৫৫ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমসহ (এস আলম) ১৫৬ জনের। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে আরও ৪০০-৫০০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে নাম উল্লেখ করা অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনা, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক পিএমটি ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম ডপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান, ডিএমপির সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানির ছোট ভাই ও ডিএমপির সহকারী কমিশনার গোলাম রুহানী, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমের দুই ছেলে আহসানুল আলম মারুফ ও আশরাফুল আলমসহ ১৫৬ জন।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট রুবেল আদাবরের রিংরোডে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নেন। এ সময় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, সাহায্য-সহযোগিতা ও প্রত্যক্ষ মদদে মিছিলে গুলি ছোড়া হয়। বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রুবেলকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসারত অবস্থায় ৭ আগস্ট মারা যান।
আরও পড়ুন:পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ধূপখোলা খেলার মাঠটি ফিরে পেয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এখন থেকে মাঠটির নাম হবে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’।
রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে মাঠটি বুঝিয়ে দেন ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ জেলা প্রশাসন অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রথমে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের প্রখ্যাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর উদ্যোগকে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সরকারি খাস জমির এই মাঠ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করতে পারছিল না। পুনর্দখলের মাধ্যমে আজকে ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হলো। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব, এখানে একটি স্থায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সেঁটে দেয়ার জন্য।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘এখানে মোট ৫ দশমিক ৩২ একর জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪ দশমিক ৫০ একর জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হলো। বাকি যে জায়গাটা রয়েছে সেটা মূল মাঠের পাশে, যা ইস্টার্ন ক্লাব দখল করে রেখেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে সেটুকুর ব্যবস্থা নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, ‘মাঠটিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করত। কিন্তু কী কারণে সেটা বেহাত হয়ে গিয়েছিল সে কারণ আমি আজও খুঁজে পাই না। শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসককে মাঠটির বিষয়ে জানালে প্রশাসন আজ মাঠটি বুঝিয়ে দিল।
‘আজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মাঠটি ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ায় ঢাকার জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি যেসব শিক্ষার্থী এই উদ্যোগ নিয়েছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। আমরা দ্রুত এখানে একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করব।’
প্রসঙ্গত, গত ২০২১ সালের জুনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের শঙ্কায় ডিএসসিসিকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার আশ্বাস দেয়া হয়। সে সময় খেলার মাঠ থেকে খুঁটি সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু ২ অক্টোবর গভীর রাতে আবার পুরো মাঠ ঘিরে রাখা হয়। মাঠের গোলপোস্ট ও সীমানা প্রাচীরগুলো তুলে ফেলে সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর ধূপখোলা মাঠটি আধুনিকায়ন করে উদ্বোধন করেন ফজলে নূর তাপস।
১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার নিজস্ব কোনো মাঠ না থাকায় ধূপখোলা খেলার মাঠটি তিন ভাগ করেন। এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে ব্যবহারের জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেয়া হয়। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির খেলার মাঠ হিসেবে ধূপখোলা মাঠটি ব্যবহার করছে। এই মাঠেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মন্তব্য