একটি দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষ করল বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে যে ফল করেছে বাংলাদেশ- এটি প্রত্যাশায় ছিল না। যেখানে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ছিল, অন্তত চার-পাঁচটি জয় পাওয়ার আশা ছিল- সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। টুর্নামেন্টে একের পর এক ম্যাচ হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। লিগ পর্বে ৯টি ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে টাইগাররা। শুধুমাত্র আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পেরেছে তারা।
নেদারল্যান্ডসসহ বাকি সাতটি দলের কাছেই হারের হতাশায় পুড়েছে বাংলাদেশ। যেখানে বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা নেদারল্যান্ডসও দুটি জয় পেয়েছে। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকলেও ১২ বছর পর বিশ্বকাপে খেলতে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশকে হারানোর গৌরব অর্জন করেছে ডাচরা।
বলা যায়, নেদারল্যান্ডসের চেয়ে বেশি ভালো কিন্তু করতে পারেনি বাংলাদেশ। আবার যদি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে এ দলটির ভরাডুবি হলেও দুটি জয় পেয়েছে তারাও। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো পারফরম্যান্স করেছে আফগানিস্তান দল। তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন- ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে তারা। অপর তাদের জয়টি ছিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।
ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে এসেই সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে আফগান-যোদ্ধারা। তারা যে ক্রিকেটে দিন দিন উন্নতি করছে- সেটি দেখাল বিশ্বকাপে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বকাপে খেলা বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা কিন্তু নিম্নমুখী। এ নিয়ে সপ্তম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলল বাংলাদেশ। শতকরা হিসেবে এবারের বিশ্বকাপে তাদের সাফল্যের হার (ম্যাচ জয়ের ভিত্তিতে) ২২.২২ শতাংশ।
এর আগে যে ছয়টি বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ- এর মধ্যে ২০০৩ সালের আসর বাদ দিলে এবারের মতো বাজে বিশ্বকাপ আগে কাটেনি টাইগারদের। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশের সাফল্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০০৭ সালে ৩৩.৩৩ শতাংশ, ২০১১ সালে ৫০ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৫০ শতাংশ ও ২০১৯ সালে ছিল ৩৭.৫০ শতাংশ। এতেই পরিষ্কার যে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে যে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ- এরপর থেকে তাদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিচের দিকেই নামছে।
এবারের বিশ্বকাপের শুরুর আগে দল থেকে তামিম ইকবালের বাদ পড়ার ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়। কোনো ‘ব্যাকআপ’ ওপেনার ছাড়াই বিশ্বকাপে খেলতে যায় বাংলাদেশ। ধর্মশালায় আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শুরুটা ভালো হয়েছিল টাইগারদের। কিন্তু পরের ম্যাচ থেকেই ছন্দপতন ঘটে তাদের। টানা ছয় ম্যাচ হারের বৃত্ত পূরণের পর শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে আবার জয়ে ফেরে বাংলাদেশ। কিন্তু এই দুই জয়ের মাঝখানে সব হারিয়ে ফেলে দলটি। সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। কোনো ম্যাচেই সেই অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমিয়ে তুলতে পারেনি। বিশ্বকাপের মাঝে নতুন করে আইসিসির দেয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জনের চ্যালেঞ্জও সামনে এসে দাঁড়ায়। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয় বাংলাদেশের।
ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেনি। ব্যাটিংয়ে সেভাবে কেউই আস্থা অর্জন করতে পারেননি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই টপ অর্ডারে রদবদলের বিষয়টি বেশ আলোচিত ছিল। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে টপ অর্ডারে অতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু ব্যাপার। এতে অস্বস্তিতে পড়ে যান ব্যাটাররাও। কেউই নিজেদের সেরাটা খেলতে পারেননি। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। খুবই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করেছেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩২৮ রান করেন তিনি। অথচ বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই তার শঙ্কা ছিল।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেললেও ইংল্যান্ড ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ পড়ে যান এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। সেই রিয়াদই বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং উপহার দিলেন। সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন। বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতার যে মূল্য আছে, সেটি বুঝিয়ে দিলেন রিয়াদ। তার সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করতে দেখা গেছে মেহেদী হাসান মিরাজকে। কিন্তু উদ্বোধনী জুটি খুবই হতাশ করেছে। ৯ ম্যাচে লিটন দাস করেন ২৮৪ রান। তানজিদ তামিম সম্ভাবনা জাগিয়েও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। ৯টি ম্যাচের মধ্যে উদ্বোধনী জুটি থেকে মাত্র দুটি ম্যাচে কিছুটা স্বস্তিদায়ক ব্যাটিং দেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাকি ম্যাচগুলোয় হতাশার ছবিই এঁকেছেন দুই ওপেনার লিটন ও তানজিদ।
ব্যাটিং অর্ডারের রদবদলে বেশি ভুক্তভোগী তাওহিদ হৃদয় ব্যাট হাতে সম্ভাবনার বার্তা দিয়েছেন। দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানও ব্যাটিংয়ে জ্বলে উঠতে পারেননি। বিশ্বকাপের মাঝেই ব্যাটিংয়ে ভালো করার জন্য ঢাকায় উড়ে এসে শৈশবের কোচের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে দেখা যায় সাকিবকে। ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টের শেষ দিকে স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও আঙুলের চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি খেলা হয়নি তার। এর আগে ইনজুরির কারণে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচও মিস হয়েছে সাকিবের। অথচ এই সাকিব গত বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে ছিলেন অনন্য।
বোলিংয়েও বাংলাদেশের দুর্দশা দেখা গেছে। পেস ইউনিট প্রত্যাশা অনুযায়ী বোলিং করতে পারেনি। হতাশ হয়েছেন স্পিনাররাও। পেসার শরিফুল ইসলাম ও স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০টি করে উইকেট শিকার করেন। সাকিব পান ৯টি উইকেট। ফিল্ডিংয়েও দুর্বল ছিল বাংলাদেশ। ক্যাচ মিস হয়েছে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ভালো হয়নি। সর্বোচ্চ ৫টি ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এসব মিলিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার গল্প রচিত হয়েছে। টাইগারদের সান্ত্বনার বিষয় হলো যে- অন্তত পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করতে হলো না তাদের।
এই বিশ্বকাপ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে কীভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয়, কীভাবে স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে হয়, ব্যাটিংয়ে দক্ষতা দেখাতে হয়, ইনিংস লম্বা করতে হয়, বোলিংয়ে নতুনত্ব এনে সফল হতে হয়- এই বিষয়গুলো শিক্ষা নেবে টাইগাররা। তরুণরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করল, তা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এবার হয়তো নিজেদের শেষ বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই সিনিয়র তিন ক্রিকেটারকে হয়তো সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপে আর দেখা যাবে না। আশা করা যায়, বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নতুন করে সবকিছু ঢেলে সাজাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং এই ব্যর্থতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজবে।
আরও পড়ুন:জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও তাকে বিশ্রামে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর।
তিনি বলেন, ‘তবে তার স্বাভাবিক কাজকর্মে—অর্থাৎ খেলাধুলায়—ফিরতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।’
সাভারের কেপিজি হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে তামিমকে দেখে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘তামিম ইকবালকে নরমাল কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য অন্তত তিন মাস সময় দিতে হবে। মানে খেলাধুলায়। এ ছাড়া তিনি বাসায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ও হাঁটাচলা করবেন সপ্তাহখানেক। তাকে বিশ্রামেই থাকতে হবে। যদিও সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সব রোগ সবসময় ধরা পড়ে না।
‘প্রথমিক ইসিজিতে কোনো চেঞ্জ আসেনি। আজ সকালে ইকো (ইকোকার্ডিওগ্রাম) করা হয়েছে। সবকিছুই ভালো। কিন্তু তারপরও যেকোনো সময় যেকোনো জিনিস ঘটে যেতে পারে। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তার পরিবারের সাথে আলাপ করেছি। এখন তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের সিদ্ধান্ত।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সম্পদ তামিম ইকবালের শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করেন গতকাল সাড়ে ১০টায়। তিনি এখানে আসার পর ডাক্তাররা তাকে কার্ডিয়াক প্রবলেম হিসেবে সন্দেহ করেছেন। প্রাথমিকভাবে কিছু চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তাকে এখন মুভ (নিয়ে যাওয়া) করানো ঠিক হবে না বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
‘তিনি একজন জাতীয় সেলিব্রেটি। নিজের অবস্থান বিবেচনা করে তিনি তাড়াতাড়ি ঢাকায় শিফট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হেলিকপ্টারের ব্যবস্থাও হয়েছিল। আমাদের এখানকার দুজন ও ওখানকার দুজন মিলে চারজন চিকিৎসক মিলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তখন তার হার্ট অ্যাটাক হয়, তার নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায়নি। তারপর ডাক্তারররা সিপিআর দিয়েছেন। হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে চালু করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’
অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, ‘আপনাদের সবার দোয়ায় আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেট তারকা তামিম ইকবাল এখন সুস্থ। তার সার্বিক অবস্থা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু কখনও কখনও যে প্রাইমারি পিসিআই হয়েছে, এটা একটা ফরেন বডি, এটা রিঅ্যাকশন হতে পারে, হার্ট নানাভাবে এটার ওপর অ্যাকশন ও রিঅ্যাকশন হতে পারে।
‘রে রিংটা লাগানো হয়েছে, সেটা সামায়িকভাবে, কোনোভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি রয়েছে। যদিও সেই পরিসংখ্যান খুবই কম।’
তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের সদস্যদের সেটা বলেছি। চিকিৎসক যারা ছিলেন, ডা. মারুফ, তাদের পরিশ্রমে, আল্লাহর বিশেষ রহমতে তাকে আমরা একটি নবজীবন দিতে পেরেছি। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা যেখানে সম্ভব, সেখানে মানুষ যেতে চাইবে। কিন্তু তার যাওয়াটা কতটা নিরাপদ, সে বিষয়ে আমরা তার পরিবারের সঙ্গে আলাপ করেছি। তার এই মুহূর্তে শিফট করায় ঝুঁকি আছে।’
এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ঝুঁকিটা কম, এক শতাংশ। যদি ঘটে যায়, তখন ঝুঁকিটা শতভাগ। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তার এখানে থাকা উচিত। তার পর তিনি অন্য কোথাও যেতে পারবেন।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘তামিমের যেটা হয়েছিল, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সেটা কিন্তু হয়। আমরা দেখেছি, অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাক হলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগী কখনও হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তার হার্ট অ্যারেস্ট হয়। এখানেও তাই হয়েছে। কিন্তু তার সাথে চিকিৎসকরা ছিলেন, সাথে সাথে কার্ডিয়াক ম্যাসেজ শুরু হয়েছিল। হার্ট নিজে পাম্প করছে না, জোর করে কিছুটা পাম্প করিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
‘তার বন্ধ আর্টারি খুলে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, অ্যাকিউট এপিসোডটা গেছে। ৩২ মিনিটের মতো তাকে কার্ডিয়াক প্লেসে দিতে হয়েছে। সেখান থেকে উঠে আসার সৌভাগ্য সবার হয় না। যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার কারণেই তামিমকে আমরা ফিরে পেয়েছি। কতটা ফেরত পেয়েছি, আজ সকালবেলায় ইকোকার্ডিয়াক করে হার্টের ফাংশন দেখা হচ্ছিল, দেখে মনে হয়, কোনো সমস্যা নেই, একেবারে তরতাজা। মনে রাখতে হবে, এটিই একটি ছদ্মবেশ। হার্ট আবার অ্যাবনরমাল হতে পারে। তবে শঙ্কা অবশ্যই কমে গেছে।’
এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তবে ওটা হয়েছিল, কারণ একটা বড় আর্টারি বন্ধ ছিল। খাবার নেই, অক্সিজেন নেই, ওই টিস্যুটা ইরিটেটেড, সে জন্যই এটা হয়েছিল। এখন সেটা খুলে গেছে। স্লাইট শঙ্কা আছে। সে জন্য আমরা তাকে বলেছি, ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটি ক্রিটিক্যাল টাইম, যাতে আর কোনো প্রবলেম না হয়।
‘কথাবার্তা একটু কম বলা উচিত, বিশ্রামে থাকা উচিত। এখানে থেকে স্থিতিশীল হয়ে আরও ভালো কোনো জায়গায় যদি যেতে চান, তাহলে যেতে পারবেন।’
আরও পড়ুন:বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের হৃৎপিণ্ডে রিং পরানো হয়েছে।
বর্তমানে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।
ইউএনবিকে সোমবার এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘তাকে রিং পরানো হয়েছে নিশ্চিত। প্রথমে মাঠে খেলার সময় তার বুকে ব্যথা ওঠে। আমরা তাকে হাসপাতালে পাঠাই। তাকে যখন হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছিল, তখন আবার বুকে ব্যথা শুরু হয়।
‘হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যথা ওঠে। এরপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকসহ তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসা বিভাগের প্রধান দেবাশীষ চৌধুরী সাংবাদমাধ্যমকে জানান, তামিমের দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। এ মুহূর্তে তিনি সেখানেই ভর্তি।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এ ক্রিকেটারকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:চেক ডিজঅনার মামলায় ক্রিকেটার ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতের পেশকার রিপন মিয়া বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর তিনজন হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী শাহাগীর হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
আদালত ১৫ ডিসেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৯ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি পরে এ মামলায় জামিন নেন।
আজ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, সাকিবের মালিকানাধীন অ্যাগ্রো ফার্ম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। তার বিপরীতে দুটি চেক ইস্যু করে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। দুই চেকে টাকার পরিমাণ প্রায় চার কোটি ১৫ লাখ।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তামিম ইকবাল।
তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ইউএনবিকে সোমবার দুপুরে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে বিকেএসপির পাশে ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিকেএসপি থেকে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক সবকিছুসহ তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। আমাদের কর্মকর্তা ও ক্রিকেটের প্রশিক্ষকরা ওখানে আছেন।
‘ঢাকা থেকেও টিম আসছে। আমাদের কর্মকর্তা-চিকিৎসক সেখানে আছে। বিকেএসপির মাঠে হেলিকপ্টার অপেক্ষা করছে। দেখি কী করা যায়।’
টাইগারদের সাবেক এ ক্যাপ্টেনের শরীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে মুনীরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্ভবত একটা এনজিওগ্রাম হয়েছে। এরপর তিনি স্থিতিশীল আছেন।’
মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘তামিম ইকবাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আমরা সবাই তার সুস্থতা কামনা করছি।’
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। তিনি সেখানে ভর্তি রয়েছেন।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
তামিমকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে রবিবার সফলভাবে আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ টুর্নামেন্টে সিইউবির বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগী দলগুলো অংশগ্রহণ করে। ব্যতিক্রমী ক্রিকেটিং দক্ষতা ও দলগত কাজ খেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলে।
গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজনে ব্ল্যাকআউটস এবং সিইউবি অলস্টারদের মধ্যে দুর্দান্ত ম্যাচ হয়।
সিইউবি ব্ল্যাকআউটস দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা অর্জন করে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফিন।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক এবং উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. গিয়াস উ আহসান।
সিইউবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত ইভেন্টটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল।
সোমবার মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিপিএলের এবারের আসর শুরু হয়েছে।
আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ফাহিম আশরাফের ৮৮ রানের জুটি বরিশালের জয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে।
১৯৮ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে পৌঁছতে মাঠে নেমে বরিশাল তাদের ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায়। জিসান আলমের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি।
পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই আরও দুই উইকেট হারিয়ে তিন উইকেটে ৩০ রান তুলতে সক্ষম হন তারা।
এরপর তৌহিদ হৃদয় ২৩ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে শুরুর ধাক্কা সামলে নেয়। কিন্তু কাইল মেয়ার্স (৫) ও মুশফিকুর রহিম (১৩) দ্রুত আউট হওয়ায় বরিশাল আরও বিপদে পড়ে যায়।
অর্ধেক ওভার মাঠে গড়ানোর আগেই বরিশাল অর্ধেক উইকেট হারিয়ে বসে। ১৩তম ওভারে নিজেদের ষষ্ঠ উইকেট হারায় তারা।
ম্যাচের এই পর্যায়ে মাহমুদউল্লাহ ও আশরাফি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জয়ের শক্তিশালী জুটি গড়েন। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ বল হাতে রেখে চার উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা।
এর আগে ইয়াসিরের ৪৭ বলে অপরাজিত ৯৪ ও এনামুলের ৫১ বলে ৬৫ রানের ওপর ভর করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ১৯৭ রানের বড় স্কোর করে দুর্বার রাজশাহী।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে আসা দুর্বার রাজশাহী ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জিসান আলমকে শূন্য রানে আউট করেন কাইল মায়ার্স। স্কোর বোর্ডে ২৫ রান উঠতেই রাজশাহী দ্বিতীয় উইকেট হারায়।
বরিশাল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪০ রানের জুটি গড়েন এনামুল ও ইয়াসির। ১৮তম ওভারে পতনের আগে এনামুল ৫১ বলে ৪টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ৬৫ রান করে দলকে এগিয়ে নেন। তবে উইকেটের অপর প্রান্তে ছিলেন ইয়াসির। সাতটি ৪ ও আটটি ছক্কায় ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
বছরের পর বছর ধরে বিপিএল থেকে ছিটকে পড়া মায়ার্স প্রত্যাবর্তন করে রাজশাহীর হয়ে দুটি উইকেট নেন।
এদিকে টিকিট নিয়ে সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তারা স্টেডিয়ামের একটি গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জও করে।
আরও পড়ুন:জাকের আলির বিস্ফোরক ইনিংসের সুবাদে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে শুক্রবার ৮০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে আইসিসি পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিপক্ষে রান বিবেচনায় সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
আগেরটি ছিল চট্টগ্রামে গত বছর মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রানের।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ যথাক্রমে ৭ ও ২৭ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এই প্রথম তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
২০১২ সালে সর্বশেষ বিদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।
সেন্ট ভিনসেন্টে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে ৪৪ রানের সূচনা পায় টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ৪ ওভারে ১৫ বলে ২৯ রান তোলেন ইনজুরি আক্রান্ত সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া ইমন।
পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার রোমারিও শেফার্ডের বলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন ওপেনার ও অধিনায়ক লিটন দাস। তিনটি চারে ১৪ রান করেন লিটন।
দারুণ শুরুর পর পাওয়ার প্লের শেষ বলে বিদায় নেন ইমন। পেসার আলজারি জোসেফের বলে স্কয়ার লেগে জাস্টিন গ্রেভসকে ক্যাচ দেন চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ২১ বলে ৩৯ রান করা ইমন।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে এবারও ব্যর্থ হন তানজিদ হাসান। ৯ রান করে স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরানকে ক্যাচ দেন তানজিদ। এতে দলীয় ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
উইকেট পতন ঠেকিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৩১ বলে ৩৭ রান যোগ করে ১৩তম ওভারে দলের রান ১০০ পার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের।
উইকেটে সেট হয়ে ১৩তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। স্পিনার রোস্টন চেজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সীমানার কাছে গ্রেভসকে ক্যাচ দেন তিনটি বাউন্ডারিতে ২৩ বলে ২৯ রান করা মিরাজ।
মিরাজ ফেরার পর ১৫তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শামীম হোসেন ২ ও মাহেদি হাসান শূন্যতে রান আউট হন। এর মধ্যে নাটকীয়ভাবে রান আউট হন শামীম।
দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা শামীমের দিকে চলে যান জাকের। ওই সময় বল নিয়ে নন স্ট্রাইকের উইকেট ভেঙে দেন চেজ। নিজেকে রান আউট ভেবে মাঠ ছাড়েন জাকের, কিন্তু টিভি আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লেতে জানান, স্ট্রাইক প্রান্তে শামীমের আগে ক্রিজে ব্যাট স্পর্শ করেন জাকের। তাই রান আউট হন শামীম। ১৬ বলে ১৭ রানে জীবন পান জাকের।
১১৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন জাকের ও তানজিম হাসান সাকিব। সপ্তম উইকেটে দুজনের ২৭ বলে ৫০ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথ পায় টাইগাররা।
১৯তম ওভারের শেষ বলে তানজিমকে আউট করে জুটি ভাঙেন শেফার্ড। একটি করে চার-ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান করেন তানজিম।
৩৪ বলে ৪৮ রান নিয়ে শেষ ওভার শুরু করেন জাকের। আলজারির দ্বিতীয় বলে চার মেরে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩৬ বল খেলা জাকের। এরপর ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে ছক্কা মারেন জাকের।
শেষ ওভার থেকে ২৫ রান আসায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-টোয়েন্টি এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের।
শেষ ১০ ওভারে ১১৩ ও শেষ ৫ ওভারে ৭৫ রান তুলে টাইগাররা। এর মধ্যে জাকেরের সংগ্রহ ছিল ৩৪ বলে ৬৭ রান।
শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৪১ বলে ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ৭২ রান করেন জাকের। ২২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
এ বছরের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪ বলে ৬৮ রান করেছিলেন জাকের।
বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেফার্ড দুটি, আলজারি-চেজ ও মোতি একটি করে উইকেট নেন।
জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে পেসার তাসকিন আহমেদের বলে লেগ বিফোর হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। পরের ওভারে গ্রেভসকে ৬ রানে ফেরত পাঠান স্পিনার মাহেদি।
৭ রানে ২ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশ বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন জনসন চালর্স ও নিকোলাস পুরান। মারমুখী ব্যাটিংয়ে বড় জুটির আভাস দিচ্ছিলেন তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পুরানকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মাহেদি। ১০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান করেন পুরান। গ্রেভস-পুরান জুটি ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন।
দলীয় ৪৫ রানে পুরান ফেরার পর ব্যাটিং ধস নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৬ দশমিক ৪ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাত নম্বরে নামা রোমারিও শেফার্ডের ২৭ বলে ৩৩ রানে কোনোমতে দলীয় ১০০ রান স্পর্শ করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চার ওভারে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলার রিশাদ। এ ছাড়া তাসকিন-মাহেদি দুটি করে এবং তানজিম-হাসান একটি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হন জাকের। ব্যাট হাতে ৩৭ রান ও বল হাতে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন মাহেদি।
এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে সাফল্য নিয়ে বছরটি শেষ করতে পারল লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দলটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮৯/৭ (জাকের ৭২*, ইমন ৩৯, শেফার্ড ২/৩০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৪ ওভারে ১০৯/১০ (শেফার্ড ৩৩, চালর্স ২৩, রিশাদ ৩/২১)।
ফল: বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য