ফুটবলপ্রেমীদের বহুল প্রতীক্ষিত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩১ আগস্ট। মোনাকোতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় (বাংলাদেশ সময় রাত দশটায়) ২০২৩-২৪ আসরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
আসন্ন ২০২৩-২৪ মৌসুমের জন্য হওয়া ড্রয়ে শক্তি ও সামর্থ্যের বিচারে সব ধরনের দল নিয়ে হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। এবার শক্তিশালী দলের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে তুলনামূলক কম শক্তিধর দল। আবার শুধু শক্তিধর দলগুলোকে নিয়ে যেমন হয়েছে গ্রুপ, তেমনই তুলনামূলক দুর্বল দলগুলো নিয়েও রয়েছে গ্রুপ।
ধারাবাহিকভাবে আমরা প্রতিটি গ্রুপ নিয়ে আলোচনা করব। আজ চলুন জেনে নেই গ্রুপ ‘এ’ সম্পর্কে।
গ্রুপ ‘এ’র দল চারটি হচ্ছে- সেভিয়া, আর্সেনাল, পিএসভি আইন্ডহোভেন ও লঁস।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের মৌসুমে সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ গ্রুপগুলোর একটি হচ্ছে গ্রুপ ‘বি’। গ্রুপটিতে গত কয়েক মৌসুম ধরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দাপট দেখানো কোনো দল নেই। আবার শক্তিমত্তায় দলগুলোর বিশাল পার্থক্যও নেই। একটি ভারসাম্যপূর্ণ গ্রুপ এটি। এই গ্রুপে রয়েছে মিকেল আর্তেতার হাত ধরে নতুন যুগে প্রবেশ করা আর্সেনাল, আর্সেন ওয়েঙ্গার যুগের পর যারা ফের ঘরোয়া ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ‘বি’ গ্রুপের আরেক দল সেভিয়ার বিষয়টি একটু জটিল। প্রতিবছর ইউরোপের মঞ্চে খেলা আন্দালুসিয়ার এ দলটির অবস্থা গত মৌসুমে লা-লিগায় ছিল যাচ্ছেতাই। তবে ইউরোপের মঞ্চে খেলার প্রবল ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সরাসরি এসেছে গ্রুপপর্বে। ফলে দলটিকে নিয়ে বেশি আশা করা যেমন অনুচিত, তেমনই হতাশ হওয়ারও কিছু নেই।
নেদারল্যান্ডসের লিগ এরিডিভিজি’র এ ক্লাবটি এবার প্রায় প্রতিবার চ্যাম্পেয়ন্স লিগ খেলা আয়াক্সকে ইউরোপা লিগে পাঠিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসেছে। দলবদলের মৌসুমেও তাদের দল গোছাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা প্রতিপক্ষকে ভালো চ্যালেঞ্জ দেবে। তবে ফরাসি লিগের ক্লাব লসেঁর পরিস্থিতি ভিন্ন। গত মৌসুমে মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যাবধানে লিগে দ্বিতীয় হয়েছে দলটি। তবে ফরাসি লিগ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো প্রতিযোগিতায় এসে কতটা নিজেদের মেলে ধরতে পারবে সেটি তাদের মনোবল ও খেলোয়াড়ি কৌশলই বলে দেবে।
চলুন জেনে নেই দলের খবর-
আর্সেনাল
আর্সেন ওয়েঙ্গারের বিদায়ের পর আর্সেনালের অবস্থা যে খানিকটা এলামেলো হয়ে যাবে, তা সবাই অনুমান করেছিল। তবে দেড় বছরের ঝড়ের পর আবারও ক্লাবটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করে চলেছেন ম্যানেজার মিকেল আর্তেতা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আর্সেনালের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ফুটবলের মূল ধারায় ফিরতে শুরু করেছে ক্লাবটি। কোভিড পরবর্তী সময় থেকেই দল গোছাতে ব্যস্ত স্প্যানিশ এ ম্যানেজার। এক্ষেত্রে আর্সেনালের অ্যাকাডেমির তরুণদের সুযোগ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর দল গঠন করেও যে ভালো প্রতিযোগিতা করা যায়, তা প্রমাণ করে চারদিক থেকে প্রসংশা কুড়িয়েছেন তিনি। গত মৌসুমে ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে হতেও শেষে এসে তরী ডোবে আর্সেনালের। ফলে সদ্য শেষ হওয়া দলবদলের মৌসুমে তাদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।
ওয়েস্ট হ্যাম থেকে ক্লাব রেকর্ড ১১৬ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইংল্যান্ডের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ডেকলান রাইসকে কিনে নেয় আর্সেনাল। এরপর ৭৫ মিলিয়ন ইউরোতে চেলসি থেকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কাম উইংগার কাই হাভার্টসকে কেনে তারা। এছাড়া আয়াক্স থেকে ৪০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সেন্টার ব্যাক ইউরোন টিম্বার ও ব্রেন্টফোর্ডের স্প্যানিশ গোলকিপার ডাভিদ রায়াকে ধারে দলে টেনেছেন আর্তেতা। এদের বয়স যথাক্রমে ২৪, ২৪, ২২ ও ২৭ বছর। এদের সঙ্গে বুকায়ো সাকা, এডি এনকিয়েতা, মার্টিন ওডেগার্ডরা তো আগে থেকে আছে। আবার গ্যাব্রিয়েল জেসুস, জর্গিনিয়ো, ওলেকসেন্ডার জিনচেঙ্কো, থমাস পার্টি, নিকোলাস পেপে, লেয়ান্দ্রো ত্রোসার মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারও রয়েছে। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের শক্তিতে নির্ভর করে আর্সেনাল যে এবার লম্বা রেসের ঘোড়া, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সেভিয়া
ইউরোপিয়ান ফুটবলের মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সামর্থ্যের তেমন প্রমাণ দিতে না পারলেও ইউরোপা লিগের একচ্ছত্র অধিপতি সেভিয়া। রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের আন্দালুসিয়ার এ ক্লাবটি। ইউরোপা লিগের জোরেই এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসেছে সেভিয়া। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার গ্রুপপর্বে দলটির ভালো করার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর সৌদি প্রো লিগে চলে যাওয়াটা সেভিয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা। তবে লিগে নতুন মৌসুম ভালোই সামলাচ্ছেন সার্বিয়ান গোলরক্ষক মার্কো দিমিত্রোভিচ। তবে বরাবরের মতো অভিজ্ঞতার ওপরই ভরসা রেখেছেন দলটির ম্যানেজার হোসে লুইস মেন্দিলিবার। ইভান রাকিতিচ, ইউসুফ এন-নেসিরি, পাপু গোমেজ, হেসুস নাভাস, মার্কোস আকুনিয়া ও রাফা মিয়ারদের সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত দলবদলের মৌসুমে যুক্ত হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড মারিয়ানো দিয়াস, রেনের সেন্টার ব্যাক লুইস বাদে, ফ্রাঙ্কফুর্টের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ডাইব্রিল সো, হার্থা বার্লিনের দোদি লুকেবাকিও। নতুন এ নামগুলো সেভিয়ার অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দলে কতটা ভারসাম্য আনতে পারে, তার ওপর নির্ভর করছে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাদের সাফল্যযাত্রা।
পিএসভি আইন্ডহোভেন
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জেতা পিএসভি আইন্ডহোভেন একবিংশ শতাব্দীতে এ প্রতিযোগিতায় তেমন কোনো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেনি। এ সময়ে তাদের সবচেয়ে সেরা পারফরম্যান্স ছিল ২০০৪-০৫ সালে সেমি ফাইনাল ও ২০০৬-০৭ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা।
সদ্যসমাপ্ত দলবদলের মৌসুমে আক্রমণে শক্তি বাড়িয়েছে আইন্ডহোভেন। নাপোলি থেকে ১৫ মিলিয়নে উইঙ্গার হার্ভিং লোসানোকে দলে টেনেছে তারা। এছাড়া ক্লাব ব্রুজের উইঙ্গার নোয়া লাং, আউগসবুর্গের আমেরিকান ফরোয়ার্ড রিকার্ডো পেপি, বায়ার্ন মিউনিখের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মালিক টিলমানকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। এছাড়া বার্সেলোনার উইং ব্যাক সার্জিনিও দেস্ত, সাউদহ্যাম্পটনের সেন্টার ব্যাক আরমেলা বেল্লা-কটচাপরাও দলটির রক্ষণের ভিত মজবুত করবে।
নতুনদের সঙ্গে বিদ্যমান খেলোয়াড়দের মিশেলে একটি শক্তিশালী দল গঠনের চেষ্টা করেছেন দলটির ম্যানেজার পিটার বশ। ফলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বাকি দলগুলোকে পিএসভি যে এবার সমান টক্কর দেবে, সেটি মাথায় নিয়েই তাদের বিপক্ষে খেলতে নামবে প্রতিপক্ষরা।
লসঁ
ফ্রান্সের এ ক্লাবটি যেন লুকোচুরি খেলতে ব্যস্ত। ঘরোয়া লিগ হোক, কিংবা ইউরোপের আসর, একবার ভালো পারফরম করল, তো পরেরবার হাওয়া। ফলে কোন কৌশল অবলম্বন করে খেলবে দলটি বা এবার তারা ঠিক কতটা শক্তি প্রদর্শন করতে পারবে, সেই হিসাব কষতে ঘাম ছুটবে প্রতিপক্ষ দলগুলোর।
৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে মতঁপেলিয়ে’র ফরোয়ার্ড এলিয়ে ওয়াহিকে দলে টেনেছে লসঁ। এছাড়া অ্যাঞ্জেলো ফুলগিনি ও ওস্কার কর্তেস নামের দুই উইঙ্গারও কিনেছে ক্লাবটি। তাছাড়া মাঝমাঠ ও রক্ষণেও শক্তি বাড়িয়েছে তারা। অবশ্য সাড়ে ৩৮ মিলিয়ন ইউরোরর বিনিময়ে সেন্টার ফরোয়ার্ড লইস ওপেন্দাকে লাইপসিগের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে লসঁ। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সেসকো ফোফানাও সৌদির উদ্দেশে ইউরোপ ছেড়েছেন। ফলে দলের ভারসাম্য কতটা রয়েছে, তা বুঝতে লিগের কয়েকটি ম্যাচ দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ট্যাকটিকাল বিশ্লেষণ
এই গ্রুপটি থেকে আর্সেনালই একমাত্র দল যারা সবগুলো ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে যেতে চাইবে। অন্তত মিকেল আর্তেতার সাম্প্রতিক সময়ের আক্রমণাত্মক ফুটবল সে কথাই বলে। প্রীতি ম্যাচেও বার্সেলোনার সঙ্গে তারা যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে, তাতে মূল পর্বের খেলায় তাদের সে মনোভাব আরও দৃঢ় হবে বলে ধরে নেয়া যায়। তাদের দলবদলের পরিস্থিতিও সেই বিষয়টিকে সমর্থন দেয়।
এক্ষেত্রে রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করতে পারে সেভিয়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পরের রাউন্ডে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই থাকবে তাদের। তবে পরের রাউন্ডে বেশি ভালো করতে না পারলে পয়েন্ট টেবিলের তিনে থাকার চেষ্টা করতে পারেন হোসে লুইস মেন্দিলিবার। কারণ তিনে থেকে গ্রুপ শেষ করতে পারলেই ইউরোপা লিগে অবনমন। আর ইউরোপা লিগ জিততে পারলে সম্মানের পাশাপাশি আয়ও হবে বেশি। তাছাড়া ইউরোপা লিগ নিয়ে সেভিয়ার একটি অন্যরকেম অনুভূতি তো থাকেই সবসময়।
তবে আক্রমণাত্ম ফুটবল খেলতে পারে পিএসভি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের যতটা সম্ভব উচ্চতায় ওঠানোর চেষ্টা থাকবে দলটির। সেভাবেই সব বিভাগে শক্তি বাড়িয়েছে তারা। এক্ষেত্রে সেভিয়ার রক্ষণাত্মক কৌশলকে কাজে লাগাতে পারে তারা। আর্সেনালের সঙ্গে অন্তত ড্র করে সেভিয়া ও লসঁকে নিজেদের মাঠে হারাতে চাইবে পিএসভি। আর ওই দুই মাঠে ড্র করে ফিরতে পারলেও পরের রাউন্ডে চলে যেতে পারে তারা। না হলেও অন্তত তিনে থেকে ইউরোপা লিগ খেলার সুযোগ পাবে পিটার বশের শিষ্যরা।
লসঁ-এর শক্তিমত্তার বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। তবে পরের রাউন্ডে যাওয়ার চেষ্টা তাদেরও থাকবে। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে চাইবে ফরাসি এ দলটি। আর নিজেদের দর্শকের সামনে সবগুলো ম্যাচ জেতার চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে অন্য যেকোনো এক বা দুই দলকে টার্গেট করে তাদের বিপক্ষে ৬ পয়েন্ট করে অর্জনের কৌশলও আঁটতে পারেন দলটির ম্যানেজার ফঙ্ক হেইজ। সফল হলে তাদের শেষ ষোলোতে ওঠা আটকায় কে!
প্রেডিকশন
ক্রমিক | দল | ম্যাচ | জয় | ড্র | হার | পয়েন্ট |
১ | আর্সেনাল | ৬ | ৩ | ২ | ১ | ১১ |
২ | সেভিয়া | ৬ | ২ | ৩ | ১ | ৯ |
৩ | পিএসভি আইন্ডহোভেন | ৬ | ২ | ১ | ৩ | ৭ |
৪ | লসঁ | ৬ | ১ | ৩ | ২ | ৬ |
২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত একটায় প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে আর্সেনাল-পিএসভি ও সেভিয়া-লসঁ। গ্রুপ পর্বের খেলা চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে নকআউট পর্বের খেলা। এ মৌসুমের ফাইনাল ম্যাচটি হবে আগামী বছরের ১ জুন। এবারের ফাইনালের জন্য লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামকে নির্ধারণ করেছে উয়েফা।
বর্তমান ফরম্যাটে ৩২ দল নিয়ে প্রতিযোগিতার এটিই শেষ আসর। আগামী মৌসুম থেকে নতুন ফরম্যাটে ভিন্ন আঙ্গিকে চ্যাম্পিয়ান্স লিগের আয়োজন করবে উয়েফা। ৩২ থেকে বেড়ে হবে ৩৬টি দল নিয়ে হবে আগামী মৌসুমের আসর।
সন্তান হওয়ার এক মাসের মধ্যেই ব্রাজিলের ফুটবল তারকা নেইমারের সঙ্গে সম্পর্কের পাট চুকিয়ে দিলেন তার বান্ধবী ব্রুনা বিয়ানকার্ডি।
এক মডেলের সঙ্গে ফোনের চ্যাট ফাঁস হওয়ার পর দিনই তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বলে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত মাসেই বান্ধবী ব্রুনার গর্ভে আসে নেইমারের কন্যা সন্তান। তবে সম্প্রতি ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকারের সঙ্গে বিয়ানকার্ডির সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিয়ানকার্ডি লিখেছেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত ব্যক্তিগত। আমি তোমাকে পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছি, আর কোনো সম্পর্কের মধ্যে আমি নেই। আমরা মাভির (তাদের মেয়ের নাম) বাবা-মা। এটাই আমাদের সম্পর্কের কারণ। আশা করি তুমি আমাকে আর বিব্রত করবে না।’
ইংল্যান্ডের একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ৩১ বছরের ফুটবলার বিয়ানকার্ডিকে একাধিক বার বিভিন্ন কারণে প্রতারণা করেছেন। যার শেষটি হলো ব্রাজিলের অনলিফ্যান (প্রাপ্তবয়স্কদের সাইট) মডেল অ্যালাইন ফারিয়াসের সঙ্গে কথোপকথন। যেখানে নেইমার ওই মডেলকে বেশ কিছু অশ্লীল এবং আপত্তিকর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও বছরের শুরুর দিকে একটি নাইটক্লাবে দুই নারীর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল নেইমারকে। এসব মিলিয়ে ক্রমশ দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছিল বিয়ানকার্ডি এবং নেইমারের মধ্যে।
ফারিয়াসের সঙ্গে নেমারের কী কথা হয়েছিল, তা প্রকাশ্যে এসেছে মঙ্গলবার। তার পরই নেমারের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার কথা জানিয়ে দিলেন বিয়ানকার্ডি।
চোটের জন্য গত অক্টোবর মাস থেকে মাঠের বাইরে নেইমার। সম্প্রতি তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে অন্তত ১০ মাস সময় লাগতে পারে। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালও এই চোটের জন্য নেইমারের সঙ্গে চুক্তি স্থগিত রেখেছে।
আরও পড়ুন:হাঙ্গার ম্যাচে সম্প্রতি জয়ের পর আবারও ব্রাজিলের বিপক্ষে জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা।
শুক্রবার ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়েছে তারা।
আর্জেন্টিনার হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন অধিনায়ক ক্লাউদিও এচেভেরি। এই জয় দিয়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনার যুবারা।
এর মাধ্যমে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিল ব্রাজিল। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন তারা।
আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেল প্রথম শিরোপা জয়ের দিকে। আগামী ২৮ নভেম্বর সেমিতে তারা লড়বে জার্মানির বিপক্ষে।
আরেকটু হলেই পণ্ড হতে বসেছিল সুপার ক্লাসিকোর ম্যাচ। এ লক্ষ্যে সব আয়োজনই যেন সম্পন্ন হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত খেলা মাঠে গড়িয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল ম্যাচ। এর কয়েক মিনিট আগেই গ্যালারিতে শুরু হয় উত্তেজনা। একপর্যায়ে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। লিওনেল মেসিসহ আর্জেন্টিনা দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যায়। ম্যাচ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধা ঘণ্টা পর।
ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামের এ খেলায় শেষ পর্যন্ত নিকোলাস ওতামেন্দির গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা। উরুগুয়ের কাছে আগের ম্যাচে ২-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। আর ব্রাজিল হারল টানা তিন ম্যাচ। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের মাঠে এই প্রথম হারল তারা।
ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা জাতীয় সঙ্গীতের সময় যখন লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন দেখা যায়, দু দলের সমর্থকদের একটি অংশ হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন। ঝামেলা থামাতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জের আশ্রয় নেয়। এতে পুরো বিষয়টি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
স্থানীয় পুলিশকে আবার মাঠের এক প্রান্তে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। পরে ক্ষুব্ধ মেসি সতীর্থদের নিয়ে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যান। ব্রাজিলের প্লেয়াররা এবং ম্যাচ অফিশিয়ালরা সেই সময় মাঠেই দাঁড়িয়েছিলেন।
তবে সব কিছু সামাল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর আর্জেন্টিনার প্লেয়াররা ফের মাঠে নামেন। ম্যাচ শুরুর আগে গ্যালারির উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে মাঠেও। ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিট পার হওয়ার আগেই হলুদ কার্ড দেখে বসেন দুই ব্রাজিলিয়ান গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও রাফিনিয়া। প্রথমার্ধে তিনটি হলুদ কার্ড হয়। আর দ্বিতীয়ার্ধে লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলের জোয়েলিনটন। ম্যাচের ৮১ মিনিটে তার লালকার্ডে ব্রাজিল ১০ জনের দল হয়ে যায়।
ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও, দ্বিতীয়ার্ধের ৬৩ মিনিটে একটি মাত্র গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এর পর আর গোল শোধ করতে পারেনি ব্রাজিল। ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে পা রেখে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে ফুটবল ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী রোনালদিনহো।
বাংলাদেশি ব্রাজিল ফ্যানদের ভালোবাসায় সিক্ত করতে ক্রিয়েশন ওয়ার্ল্ড-এর এই আয়োজনে অ্যাসোসিয়েশন স্পন্সর ছিল দেশের প্রথম সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্যানফেয়ার’।
অনুষ্ঠিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের দুই অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া এবং সাবিনা খাতুন।
ম্যাজিক্যাল নাইটে রোনালদিনহোর হাতে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন ফ্যানফেয়ার বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজীব হোসেন এবং চিফ স্ট্রাটেজি অফিসার শওকত আহমেদ সিদ্দিকী।
ভিডিও শেয়ারিং এই প্ল্যাটফর্মে আছে প্রায় ১ মিলিয়ন ব্যাবহারকারী, যারা প্রতিনিয়ত ভিডিও কন্টেন্ট শেয়ার করছেন এবং বিভিন্ন কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করে পুরস্কার জিতছেন।
অগণিত ফুটবলপ্রেমীদের উচ্ছ্বসিত করে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত চালু হলো ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বার্সা একাডেমি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো বেনিতেজ রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি)’তে বার্সা একাডেমির উদ্বোধন করেন।
রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো বেনিতেজ বলেন, এমন চমৎকার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আইএসডির প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। খেলাধুলা হচ্ছে সঙ্গীতের মতোই এক সর্বজনীন ভাষা, যা সবাই বুঝতে পারে।
চলতি বছরের ২২-২৬ অক্টোবর অটাম ট্রেনিং ক্যাম্প-এর মধ্য দিয়ে বার্সা একাডেমির কার্যক্রম চালু হয়। ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা এই ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে, এক্ষেত্রে আইএসডির শিক্ষার্থী হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। প্রশিক্ষণের সফল সমাপ্তিতে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।
অটাম ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারীরা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও ক্লাবটির মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা অর্জন করবেন। অতীতে বার্সা একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমেই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, সার্জিও বুসকেটস, লিওনেল মেসি ও জেরার্ড পিকের মতো খেলোয়াড়রা বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন।
ট্রেনিং সেশনটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন খেলোয়াড়রা (শিক্ষার্থীরা) সঠিকভাবে, ম্যাচের গতি ধরে রেখে, ধারাবাহিকতার সাথে ফুটবল খেলার কৌশলগুলো রপ্ত করার সুযোগ পান। খেলার মাঠে নিজ নিজ পজিশন অনুযায়ী দায়িত্ব বোঝার পাশাপাশি তারা পূর্ণাঙ্গভাবে কৌশলী হয়ে ওঠার সুযোগ পাবেন। বার্সা মেথডলজি’র আওতায় বল দখলে রাখা, স্বল্প জায়গার মধ্যে খেলা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেখার সাথে সাথে তারা বিনয়ী, সচেষ্ট ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠবেন এবং সকলের প্রতি সম্মান রেখে দলগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা অর্জন করবেন।
এসটিএস গ্রুপের সিইও মানাস সিং বলেন, এসটিএস গ্রুপের আওতাধীন আইএসডি’র মাধ্যমে বাংলাদেশে বার্সা একাডেমি চালু করতে পেরে, এবং এই খাতে সবচেয়ে সেরা প্রশিক্ষকদের অধীনে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই একাডেমির মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রচেষ্টা, দলগত কাজ, সহনশীলতা, সম্মান, সংহতি, ঐক্য, বন্ধুত্ব ও ফেয়ার প্লে’র মতো বার্সার মূল্যবোধগুলো শেখার সুযোগ পাবে। পরবর্তীতে একজন ভালো মানুষ হতে, এবং খেলার মাঠে ও বাস্তব জীবনে সমৃদ্ধ হতে এই মূল্যবোধগুলো কাজে লাগবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য বার্সেলোনার মতোই মানসম্মত, পেশাদার ও অনন্য প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পুরো সেশন পরিচালনা করছেন বার্সা একাডেমির টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর জোয়েল লিনাস ও হেড কোচ গোর্কা পুজল।
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী ফুটবলার রোনালদিনহোর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হলো বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া ও বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের।
‘ব্রুভানা প্রেজেন্টস ম্যাজিকাল নাইট উইথ দ্য লিজেন্ড রোনালদিনহো’ ইভেন্টে তাদের এই সাক্ষাৎ ঘটে।
মূল ইভেন্টে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে রোনালদিনোহর হাতে ব্রুভানা বেভারেজ লিমিটেডের স্পোর্টস প্লাস ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস-এর নতুন লেমন ফ্লেভার-এর উন্মোচন করা হয়।
ইভেন্টের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ব্রুভানা বেভারেজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে এতে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফাইয়াজ হাসান চৌধুরী, ডিরেক্টর অব অপারেশনস অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাসুম আহমেদ, সিইও নাবিদ ইয়াকুব, ডিরেক্টর জনাব শন হাকিম ও চেয়ারম্যান এ কে এম আফজাল উল মুনির।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকা সফররত ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক রোনালদিনহো।
বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ ফুটবলার বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। রোনালদিনহো এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে একটি জার্সি উপহার দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং নিউজবাংলাকে জানায়, স্বাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোনালদিনহোকে বলেন, ‘আপনার আগমন বাংলাদেশের ফুটবলকে অনুপ্রাণিত করবে।’
রোনালদিনহো ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য উন্নয়নের জন্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীদের ফুটবলে এগিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ঢাকায় তার সংক্ষিপ্ত সফরে তার বাসস্থল হোটেল রেডিসনে গিয়ে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন রোনালদিনহো। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও ব্রাজিল ভক্ত তামিমের সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে তার।
এর আগে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে সরাসরি বিশ্রামের জন্য রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসনে যান রোনালদিনহো।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য