পুরান ঢাকার চকবাজার থানার সামনে অবৈধভাবে রাখা সারি সারি লেগুনা। তার পেছনে মোটরসাইকেল রাখেন ঢাকা ট্রিবিউনের ফটো সাংবাদিক মাহমুদ হোসেন অপু। মোটরসাইকেল রাখা নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করতে থাকেন লেগুনা চালক ও সহকারীরা। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে সিভিল পোশাকে হাজির হন চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জায়েন উদ্দীন মুহাম্মদ যিয়াদ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা তখন লেগুনা চালকদের সুরে বলেন, ‘বাইক সরাতে হবে। লেগুনার বিষয়টা আমি দেখবো।’ এ পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্য সাংবাদিক অপুর মোটরসাইকেলটি টেনেহিঁচড়ে সরানোর চেষ্টা করেন। তখন অপু কমিউনিটি পুলিশের হাত ধরে থামান। এতেই ক্ষুব্ধ হন সহকারী কমিশনার যায়েদ। তিনি ঘুষি মারেন অপুর মুখ বরাবর।
শুক্রবার দুপুরে চকবাজার থানার সামনে ঘটেছে এই ঘটনা। মারধরের শিকার সাংবাদিক অপু ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে ঘটনার বিষয়ে সহকারী কমিশনার জায়েন উদ্দীন মুহাম্মদ যিয়াদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কাউকে গাড়ি রাখতে দিচ্ছিলাম না। কারণ এই সময়ে যানজট তৈরি হয়। তখন একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আর উনি যে সাংবাদিক, সেটা উনি বলেননি বা গাড়ির সামনে প্রেস লেখা কোনো স্টিকারও ছিল না। আমি উনার গাড়ি সরাতে বলেছি। লেগুনাগুলোর বিরুদ্ধেও মামলা দেয়া হচ্ছিল।’
ভুক্তভোগী ফটো সাংবাবিদক অপু বলেন, ‘আমি নিজের পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু তারা যখন কিছুতেই রাখতে দেবে না, তখন আমি গাড়ি সরাতে গেছি। আমি গাড়ি সরাতে সরাতে কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্য বড় কর্মকর্তাদের দেখে হাম্বিতাম্বি শুরু করেন। আমার গাড়ি টানা-হেঁচড়া শুরু করেন। এই দেখে আমি কমিউনিটি পুলিশের হাত ধরি। সঙ্গে সঙ্গে সিভিলে থাকা এসি যায়েদ আমার মুখ বরাবর ঘুষি মারেন। পরে পুলিশের অন্য সদস্যরা তাকে টেনে নিয়ে যান।’
সাংবাদিককে ঘুষি মারার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন একটা ঘটনা আমিও শুনেছি। ওখানে নাকি একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমি জানার পর সাংবাদিক ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। ততক্ষণে তিনি চকবাজার থেকে চলে গেছেন। আমার এসি ও এডিসিকে সাংবাদিক অপু ভাইয়ের কাছে পাঠিয়েছি বিষয়টি সমাধানের জন্য।’
জরুরি বিভাগ আছে, অপারেশন থিয়েটারও আছে। তবে লাইসেন্স নেই। ডাক্তার এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও নেই। পাওয়া গেছে অপরিচ্ছন্ন নোংরা কক্ষ ও মেয়াদ উর্ত্তীণ রক্ত।
অসততা আর অব্যবস্থার এমন চিত্র মিলেছে কুমিল্লা শহরের ‘সততা স্পেশালাইজড হসপিটালে’। আর এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালটি সিলগালা করে দিয়েছে। একইসঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থিত সততা স্পেশালাইজড হসপিটালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন কুমিল্লা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কানিজ ফাতেমা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার আবদুল কাইয়ুমসহ পুলিশের একটি টিম।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘গত বছরও এই সততা হসপিটালের যারা মালিক তাদেরকে বলা হয়েছিল লাইসেন্স করার জন্য। তারা তা করেনি।
‘এই হসপিটালে অনেক অনিয়ম। পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। যন্ত্রপাতি নেই। লাইসেন্স নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত পাওয়া গেছে। অপরিচ্ছন্ন কক্ষ। এসব কারণে হসপিটালটি সিলগালা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই অভিযানে পুলিশ লাইন্স এলাকায় একজন ভুয়া ডাক্তারকে ধরতে ন্যাশনাল ডিজিটাল স্পেশালাইজড ডায়গনস্টিক সেন্টারে যাই। সেখানে গিয়ে ওই ভুয়া ডাক্তারকে পাইনি। তবে ডায়গনস্টিক সেন্টারটিতে কোনো কার্যক্রম দেখতে পাইনি। তারা দালালের মাধ্যমে এখানে রোগী আনে। তারপর বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনে।
‘তবে এরা অনেক ডাক্তারের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। যাদের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তারা কেউ এখানে রোগী দেখেন না। এসব অপরাধের কারণে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারটিও সিলগালা করা হয়েছে।’
কুমিল্লা জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ১৩৮ জন ভুয়া ডাক্তারের তালিকা তৈরি করেছি। অনিয়ম করা হসপিটাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারেরও তালিকা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত রেখেছি।’
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জ শহরতলির মঙ্গলকাটা বাজারের ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া সাড়ে ৯ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের একজন স্টাফসহ দু’জনকে শনিবার রাতে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে ওই চুরির ঘটনা ঘটে।
ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের মঙ্গলকাটা শাখার পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার অফিসের একজন স্টাফ ছুটিতে ছিলেন। দিন শেষে রাতে অন্য স্টাফ সুহেল মিয়া ক্যাশ বুঝিয়ে দেয়ার সময় কৌশলে সাড়ে ৯ লাখ টাকা আরেক ড্রয়ারে সরিয়ে রাখেন।
রাতে আলী আজগর নামের আরেক চোরকে সঙ্গে নিয়ে তার (সুহেল) কাছে থাকা চাবি দিয়ে অফিস খুলে সাড়ে ৯ লাখ টাকা, একটি ল্যাপটপ ও সিসি ক্যামেরার ডিবিআর নিয়ে যায়। শনিবার সকালে এ বিষয়ে থানায় জিডি করি আমরা।’
সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন জানান, থানায় জিডি হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ। শনিবার রাত ১২টায় সুহেলকে তার নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে এবং একই গ্রামের অন্য চোর আলী আজগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
লালমনিরহাটে চালের বস্তা থেকে ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কের তিস্তা সেতুর টোল প্লাজায় নাবিল পরিবহনের বাস থামিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় ওই টাকা পাওয়া যায়। আটক করা হয় এক যাত্রীকে।
ওই যাত্রীর নাম মমিনুল ইসলাম। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার কিশামত তবকপুর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, বাসটি কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। বস্তাটি বাসের ব্যাগ রাখার বাক্সে ছিল।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, ‘এটি আমাদের নিয়মিত তল্লাশির অংশ ছিল। মমিনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, তার মামার ভবন নির্মাণকাজের লেনদেনের জন্য টাকাগুলো ঢাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন।’
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় মেহেরপুরের রয়েছেন ছয়জন শিক্ষক।
তাদের মধ্যে তিনজন গাংনী উপজেলার বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের শিক্ষক।
প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা বলছেন, তাদের কাছে এখনও সরকারিভাবে নির্দেশনা আসেনি। প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অভিযুক্ত মেহেরপুরের শিক্ষকরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি এআরবি কলেজের যুক্তিবিদ্যার প্রভাষক ফাতেমা মহতাসিমা, মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মুজিবুর রহমান, গাংনী উপজেলার বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের কম্পিউটার শিক্ষক আরেফিন ইসলাম, তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষার শিক্ষক প্রভাষক মাহমুদ হাসান, প্রদর্শক (কম্পিউটার) জাহাঙ্গীর আলম ও সাহেবনগর বহুমুখী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক কাফুর উদ্দীন।
অভিভাবকরা বলছেন, জাল সনদে চাকরি পাওয়া শিক্ষকরা প্রতারণা করেছেন। তাই তাদের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো কিছু শেখার আশা করা যায় না।
বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের এক ছাত্রের বাবা সেলিম রেজা বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে আমার বড় ছেলে লেখাপড়া করে। শুনছি, এখানে সনদ জাল করে অনেকেই চাকরি করছেন। জাল সনদে চাকরি পাওয়া শিক্ষকরা তথ্য চুরি করে চাকরি করছেন, তাই তাদের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ভালো কোনো শিক্ষা পাওয়ার আশা নেই।’
তবে জাল সনদের অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্তরা।
গাংনী উপজেলার সাহেবনহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক কাফুর উদ্দীন বলেন, ‘আমি নট্রামস কর্তৃক কম্পিউটার সনদ নিয়েছি। আমাকে ২০১৩ সালে একবার ধরেছিল, সেখানে আমার ওই সনদ দেখিয়ে রেহাই পাই। এবার আমার সনদকে জাল বললে, আমি আইনের আশ্রয় নেব। কারণ, এর সঙ্গে আমাদের সম্মান জড়িয়ে আছে।’
বামন্দী নিশিপুর স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে এ খবরটি জেনেছি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য ও কষ্টের বিষয়, আমাদের প্রতিষ্ঠানের তিন শিক্ষক রয়েছেন এ তালিকায়। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো চিঠিপত্র আসেনি। সরকারিভাবে বা বোর্ডের কোনো চিঠি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
একই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাসুম রেজা বলেন, ‘জাল সনদধারীদের তালিকা করে সরকার খুব ভালো কাজ করেছে। যদিও আমার প্রতিষ্ঠানেরই তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। তারপরও বলব, যারাই জাল সনদে চাকরি করছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘যে ছয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে, আমরা তাদের বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে বলেছি। পরে ওপরের কর্মকর্তারা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেবেন, তাদের বিরুদ্ধে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশে অভিযুক্তদের এমপিও বন্ধ এবং অবৈধভাবে এমপিও বাবদ ভোগ করা টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ ছাড়া জাল সনদধারী যেসব শিক্ষক অবসরে গেছেন, তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। যারা অবসরে গেছেন বা চাকরি ছেড়েছেন তাদের টাকা অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করতে বলা হয়।
আরও পড়ুন:ভোটে জিতে কাউন্সিলর হওয়ার একদিন পর ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাতে বের হয়ে হেরে যাওয়া প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে গাজীপুরের টঙ্গীর এক কাউন্সিলরের সমর্থকরা। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড় দেওড়া পুরোনো মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে টঙ্গীর পশ্চিম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) শাহ আলম।
ভোটে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিম হোসেনের আহত সমর্থকরা হলেন ৩৩ বছর বয়সী আলমাস, ১৯ বছরের শাহজালাল মোল্লা, ২৬ বছর বয়সী আজাহার, ৩২ বছর বয়সী হেলাল উদ্দিন, ২৫ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম সাগর, ২৪ বছরের নিয়ামত, ২১ বছরের তানভীর ও ৩১ বছর বয়সী মর্জিনা আক্তার।
বিজয়ী কাউন্সিলর সোলেমান হায়দারের আহত সমর্থকরা হলেন ৩২ বছর বয়সী রাজিব হায়দার সাদিম, ৩৫ বছর বয়সী আজিম হায়দার আদিম, ৩০ বছর বয়সী ঝলক হায়দার, ২৮ বছরের বিজয় হায়দার ও আরিফ মণ্ডল।
আহতদের স্বজন ও স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতীকে সেলিম হোসেন ও লাটিম প্রতীকে সোলেমান হায়দার কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে সেলিম হোসেনকে পরাজিত করে সোলেমান হায়দার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে জয়ের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ভোটার ও সমর্থকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিতে বের হন কাউন্সিলর সোলেমান হায়দার। এ সময় বড় দেওড়া আদর্শপাড়া এলাকায় পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিম হোসেনের সমর্থক আলমাসের সঙ্গে সোলেমান হায়দারের সমর্থকদের ঝগড়া হয়। পরে তা সংঘাতে রূপ নেয়।
এক পর্যায়ে সেলিম হোসেনের ভাই মামুন ও তাদের সমর্থক হারুন, অনিক ও মানিকসহ বেশ কয়েকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে ওই এলাকার পুরোনো মসজিদের সামনে সোলেমান হায়দারের সমর্থকদের ওপর পাল্টা হামলা চালান। এ সময় সাদিম, আদিম, ঝলক, বিজয় ও আরিফ আহত হন।
এ নিয়ে জানতে চাইলে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিম হোসেন বলেন, ‘আমার লোকেদের মারধর করে আহত করা হয়েছে। আমি এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করব।’
এ বিষয়ে কাউন্সিলর সোলেমান হায়দার বলেন, ‘ভোটে হেরে সেলিমের লোকজন এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি। আহতরা সুস্থ হয়ে ফিরলেই সালিশের মাধ্যমে এর সমাধান করা হবে।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের জমির হোসেন রুবেল তিনটি বিয়ে করেও সংসার টেকাতে পারেননি। চতুর্থ বিয়ের জন্য উদগ্রীব রুবেল সন্ধান পান এক রোহিঙ্গা নারীর। তাকে দেখতে দুই বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন।
কিন্তু রোহিঙ্গা নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার শখ পূরণ হয়নি রুবেলের। তিন বন্ধু ২৫ দিন নিখোঁজের পর বুধবার রাতে টেকনাফের দমদমিয়া এলাকার পাহাড় থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।
এদিকে ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই রোহিঙ্গা নারীর নাম কোহিনুর আক্তার, মামলা সুরাহা করতে যাকে খুঁজছে পুলিশ। এ ছাড়া মিনা নামে আরেক রোহিঙ্গা নারীর নামও বলছেন পরিবারের সদস্যরা।
২৮ এপ্রিল নিখোঁজ হন তিন বন্ধু জমির হোসেন রুবেল, শেখ ইমরান সরকার ও মোহাম্মদ ইউছুপ। পরদিন রুবেলের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করে পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিসহ অপহৃতদের ওপর নিযার্তনের ভিডিও পাঠানো হয়।
ইউসুফের ভাই মো. ইউনুছ জানান, তার ভাই গত ২৮ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। এর তিন দিন পর একটি নম্বর থেকে একের পর এক কল করে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে করা হয়।
সর্বশেষ গত ১৫ মে পাঁচ লাখ টাকা পাঠাতে বলে তার ভাই জানান, ‘টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে অপহরণকারীরা।’ এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
রুবেলের ভাগনি রূপা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘রুবেল মামা এর আগে তিনটি বিয়ে করেন, তবে সব বিয়ে ভেঙে যায়। তাই বিয়ের জন্য তিনি নতুন পাত্রী খুঁজছিলেন। এর মধ্যে মামা কোহিনুর নামে এক রোহিঙ্গা নারীর ফাঁদে পড়েন। ওই নারীই কৌশলে মামা ও তার বন্ধুদের টেকনাফ নিয়ে অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেন।’
পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ
এদিকে ইমরানের বাবা মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘২৮ এপ্রিল থেকে ইমরানের খোঁজ নেই। সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে আমাদের গুরুত্ব দেয়নি দুই থানার ওসি ও অফিসাররা। আমার ছেলেসহ তিনজনকে অপহরণের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপহরণকারীরা নির্যাতন করছে, এমন ফুটেজ দেখিয়ে জিডি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। রহস্যজনক আচরণ করছে কক্সবাজার সদর থানা ও টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ। ওই দুই থানায় ঘুরতে ঘুরতে আমাদের পাঁচদিন সময় চলে গেছে। অভিযোগ এবং এর সপক্ষে কোনো প্রমাণকেই পাত্তা দিল না থানা। যদি তারা দ্রুত জিডি নিয়ে অভিযান চালাত ছেলেকে ফিরিয়ে পেতাম। এদের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা।’
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন বন্ধুর স্বজনরা মামলা ও জিডি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনজন তো এখান থেকে নিখোঁজ হননি। তারা যেখান থেকে নিখোঁজ হয়েছেন, সেখানের থানায় মামলা করতে বলেছি। সর্বশেষ আমার থানায় জিডি এন্ট্রি করেছি। আমার থানায় তাদেরকে কোন হয়রানি করা হয়নি।’
নিহত ইমরানের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল অপহরণকারীরা ইমরানের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমরা ধার করে ইমরান ও রুবেলের নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ এক হাজার টাকা দেই। বাকি টাকা দিতে না পারায় তাদের খুন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টেকনাফ থানায় আমার স্বামী ইব্রাহিম অন্তত সাতবার গিয়েছেন। কোনোবারই পুলিশ জিডি বা মামলা নেয়নি। কক্সবাজার সদর থানা কর্তৃপক্ষও জিডি বা মামলা রেকর্ড করেনি। এটাই কষ্ট আমাদের।’
অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমার একবার দেখা হয়। তারা সদর থানায় জিডি করায় আমরা জিডি না নিয়ে স্বজনদের অভিযোগের পরপরই অপহৃত তিনজনকে উদ্ধারে কাজ শুরু করি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই স্বজনদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।’
আরও পড়ুন:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু ‘অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা’ বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। তবে পরিবার বলছে, তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই ও ছায়া তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ধারণা থেকে কথাগুলো বলছে। পুলিশের এই ধারণা ঘিরে অসংখ্য প্রশ্ন সামনে এসেছে, যেগুলোর উত্তর পাওয়া দরকার। এটি হত্যাকাণ্ড।
মামলার তদন্তে অসঙ্গতি ও অমীমাংসিত প্রশ্নের উল্লেখ করে সেগুলো সামনে রেখে একটি বই সংকলন করেছেন দুরন্ত বিপ্লবের বোন শাশ্বতী বিপ্লব। শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ নামে সংকলনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুরন্ত বিপ্লবের মা রোকেয়া আক্তার খাতুন। তিনি বলেন, ‘বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই, ছোট ভাই সবাই দুরন্তকে চেনেন। আমি মা হিসেবে তাকে যতটা চিনেছি তা বর্ণনাতীত। এটা সত্য, সে পানিতে ডুবে মরে নাই। দুরন্তর সার্কেলের লোকজন, যাদের সঙ্গে সে চলাফেরা করতো, তাদের মধ্যেই কারও স্বার্থে আঘাত লাগায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব গত বছরের ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। ওইদিনই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এর ৫ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। ওইদিন রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় ১৪ নভেম্বর হত্যা মামলা করা হয়।
মামলাটির তদন্ত শুরু করে ঢাকা জেলা পুলিশ। পরবর্তীতে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে থানা থেকে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা জেলার পিবিআই-এর পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করে ডিবি লালবাগ বিভাগ।
দুই সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি। তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার। ৭ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ নামে একটি লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় দুরন্ত বিপ্লব পানিতে তলিয়ে যান।
তবে তদন্তকারীদের এই বক্তব্য মানতে নারাজ দুরন্ত বিপ্লবের বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘পিবিআই ও ডিবি পুলিশ কথাগুলো বলছে ধারণা থেকে। বলছে- হতে পারে, হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে তো অকাট্যভাবে প্রমাণ হয় না যে দুরন্ত বিপ্লব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
‘পুলিশের তদন্ত ও বক্তব্য নিয়ে আমাদের মনে অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্যগুলো বলছে, দুরন্ত বিপ্লব দুর্ঘটনা নয়, হত্যার শিকার হয়েছেন। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আবেদন করে মামলাটি পিবিআইকে দেয়ার জন্য আদালতে অনুরোধ করেছিলাম। পিবিআইয়ের তদন্তে আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু তারপরও আমাদের কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যেগুলো তাদের তদন্তের সঙ্গে মিলছে না। আমরা এসব প্রশ্নের জবাব চাই।’
‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ বইটির সম্পাদক শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, ‘বইটিতে দুরন্ত বিপ্লব নিখোঁজ হওয়ার দিন গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬২ দিনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। সংকলনটি আমাদের দিক থেকে একটি প্রপোজিশন বা প্রস্তাবনা। যেটা এই মামলার তদন্তে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই প্রশ্নগুলো ধরে তদন্ত এগিয়ে নিলে মৃত্যু রহস্যের সুরাহা করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই বইয়ে য তথ্য-উপাত্ত আছে, তার বাইরে আরও কিছু তথ্য-উপাত্ত ও সূত্র আমরা পিবিআইকে দিয়েছি। সংগত কারণেই আমরা এই বিষয়গুলো এই বইয়ে আনতে পারিনি। মামলাটি তদন্তানাধীন। সে কারণে সব কিছু প্রকাশ করা যায় না।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার উপ-পরিদর্শক সালেহ ইমরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত তদন্তে যা পেয়েছি সেগুলো দুরন্ত বিপ্লবের পরিবারকে জানানো হয়েছে। মামলাটির তদন্ত এখনও চলছে। যদি নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই যাচাই-বাচাই করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য