জিতলেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত এমন সমীকরণ নিয়ে মঙ্গলবার সুপার টুয়েলভে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামছে গতবারের রানার্স-আপ নিউজিল্যান্ড।
অন্যদিকে, সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে এ ম্যাচে জিততেই হবে ইংল্যান্ডকে। হেরে গেলে অন্য দলের হার-জিতের অপেক্ষায় থাকতে হবে ইংলিশদের। ব্রিসবেনে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি।
গ্রুপ-ওয়ানে ৩ খেলায় ২ জয় ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। সমান ম্যাচ ও সমান পয়েন্টে রানরেটে পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া আছে দুইয়ে। ৩ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে আছে ইংল্যান্ড।
মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে ৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে সেমিফাইনালের টিকিট পাবে নিউজিল্যান্ড। ইংলিশদের পয়েন্ট তখন ৩ থাকবে। ইংল্যান্ডের কাছে নিউজিল্যান্ড হেরে গেলে এই গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের সমীকরণ পাল্টে জমজমাট হয়ে যাবে।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ২২বার মুখোমুখি হয়েছে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। জয়ের পাল্লা ভারী ইংলিশদের। ১২ ম্যাচে জয় পেয়েছে তারা। ৮টিতে জয় নিউজিল্যান্ডের। ১টি করে ম্যাচ টাই ও পরিত্যক্ত হয়। টাই হওয়া ম্যাচে সুপার ওভারে জিতেছে ইংল্যান্ড।
সোমবার দিনের প্রথম ম্যাচে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে মাঠে নামছে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। সেমির লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে দুই দলকেই এ ম্যাচে জিততে হবে। ব্রিসবেনে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে ম্যাচ।
মূলপর্বে শ্রীলংকা ৩ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও বৃষ্টির কারণে আফগানিস্তানের সবশেষ দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
গ্রুপ ওয়ানে ৩ ম্যাচ শেষে শ্রীলংকা-আফগানিস্তানের পয়েন্ট সমান ২ করে। শ্রীলংকা ১টি ম্যাচ জিতলেও ২টিতে পরাজিত হয়েছে। আফগানিস্তান ১টিতে পরাজিত হয়েছে আর ২টি ম্যাচ তাদের বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়। টেবিলের সবশেষ দুটি স্থানে আছে এই দুই দল।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ৩বার দেখা হয়েছে শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানের। শ্রীলংকার জয় ২টিতে, আফগানদের ১টিতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে একবারের দেখায় জয় পেয়েছে শ্রীলংকা। ২০১৬ আসরের ম্যাচে ৬ উইকেটে জেতে শ্রীলংকা।
বিশ্বকাপের আগে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার ভারতের গুয়াহাটিতে বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ খেলায় এমন জয় পায় টাইগাররা।
টসে জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশকে নামতে হয় ফিল্ডিংয়ে।
মাঠে নেমে ৪৯.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা করে ২৬৩ রান। জবাবে ৪২ ওভারে মাত্র ৩ উইকেটে ২৬৪ করে জয় পায় বাংলাদেশ।
এই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
প্রথমে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ বলে ৬৪ রানের সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে কাঁধের ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ৩৪ রান করা পেরেরা।
কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে দলের রান ১০০ পার করেন নিশাঙ্কা। মেন্ডিসকে ২২ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার নাসুম আহমেদ।
এরপর দলীয় ১৬৪ রানের মধ্যে শ্রীলঙ্কার আরও ৩ উইকেট তুলে নেন স্পিনার মাহেদি হাসান। সাদিরা সামারাবিক্রমা ২, নিশাঙ্কা ৬৮ ও চারিথ আসালঙ্কা ১৮ রান করে মাহেদির শিকার হন।
দলীয় ১৭৭ রানে অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে ৩ রানে শিকার করে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলেন পেসার শরিফুল ইসলাম। এ অবস্থায় লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে ছোট ছোট জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
৫৫ রানের ইনিংস খেলে এ ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার হন ধনাঞ্জয়া। শেষ পর্যন্ত ২৬৩ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে মাহেদি হাসান ৩৬ রানে ৩টি, তানজিম হাসান সাকিব-শরিফুল-নাসুম ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
জবাবে ২৬৪ রানের টার্গেটে উড়ন্ত সূচনা করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। ১২৬ বলে ১৩১ রান যোগ করেন তারা। জুটিতে ১০টি চারে ৫৬ বলে ৬১ রান করে ফেরেন লিটন।
দ্বিতীয় উইকেটে তানজিদের সাথে রানের চাকা সচল রাখেন তিন নম্বরে নামা মিরাজ। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৮৪ রানে আউট হন তানজিদ। ৮৮ বল খেলে ১০টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
তানজিদের বিদায়ে ক্রিজে এসে প্রথম বলেই আউট হন তাওহিদ হৃদয় আউট হলে ১৮৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৪ বলে অনবদ্য ৬৭ রান করেন মিরাজ। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৩ বল খেলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।
আগামী ২ অক্টোবর একই ভেন্যুতে নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আর ৩ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে শ্রীলঙ্কা।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন।
চোটের কারণে আনফিট দেখিয়ে তামিম ইকবালকে বাদ দিয়ে দল ঘোষণার পর বুধবার সাকিবের নেতৃত্বে ভারতে পৌঁছায় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে শুক্রবার তার পায়ে চোটের খবর বাড়াল উদ্বেগ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন জানিয়েছে, গুয়াহাটিতে বৃহস্পতিবার অনুশীলনের আগে গা ঘামানোর জন্য ফুটবল খেলছিলেনে বাংলাদেশ তারকারা। আর তাতেই বিপত্তি। সূত্রের খবর, শাকিব বাঁ পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন। বিশ্রীভাবে ফুলে গিয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের গোড়ালি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে বাংলাদেশের দুটি ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে শাকিব থাকছেন না। এমনকি আগামী ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেও শাকিবকে পাওয়া যাবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বাংলাদে দলের বরাতে এতে বলা হয়, শাকিবের চোট কতটা গুরুতর সেটা বুঝতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। ফলে কবে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠবেন, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পর এবার ভিডিও বার্তায় নিয়ে মিডিয়ার সামনে এলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বার্তার শুরুতেই তিনি তামিম বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকা ও সে সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে বৃহস্পতিবার দেয়া ভিডিও বার্তায় মাশরাফি বলেন, ‘তামিম ইকবাল বাংলাদেশের সবচেয়ে এক্সপেরিয়েন্সড (অভিজ্ঞ) ওপেনার। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যানও তার পক্ষে। সবমিলিয়ে তামিম দলে থাকলে ভালো হতো। এটা নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই।’
ভিডিও বার্তায় মাশরাফি বলেন, ‘তামিমের উত্তেজিত হয়ে বিশ্বকাপে না রাখার মন্তব্যটি সঠিক ছিল না। বোর্ডের কেউ না কেউ তার সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলার পর তামিম কিছুটা উত্তেজিত হয়ে যায় এবং সে দলে থাকতে চায়নি। আমি মনে করি যে এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’
তাকে নিচে ব্যাটিং করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজি হয়নি। পরে এ নিয়ে মুখ খোলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
এ ব্যাপারে মাশরাফি বলেন, ‘সাকিব বলেছে, দলের স্বার্থে যে কাউকে যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং করতে হতে পারে। আমার কাছে মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে, সাকিব যেহেতু নেতৃত্ব নিয়েছেই। সাকিবই পারতো তামিমকে একটা মেসেজ দিতে বা এক মিনিট ফোনে কথা বলতে যে আমার এই পরিকল্পনা আছে, এটা আমি তোর সঙ্গে পরে আলোচনা করবো। পুরো জিনিসটা এখানে চাপা পড়ে যেত।’
গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা দেয়ার এক দিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন বাংলাদেশের তখনকার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সেই প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘যেটা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়ে গেল, সেই জিনিসটা নিয়ে আর তামিমকে বিরক্ত করার প্রয়োজন ছিল না যে কোথায় খেলবে, কয় নম্বরে খেলবে। বিশ্বকাপের দল ঘোষণা ওভাবেই হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’
বিশ্বকাপে না রাখার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে মাশরাফি বলেন, ‘তামিম হয়তো উত্তেজিত হয়ে তাকে না রাখতে বলেছে। কিন্তু তার ভিত্তিতে তাকে না রাখাটা আসলে কেমন হলো?’
তামিম কোথায় কত নম্বরে খেলবেন, সেই সিদ্ধান্ত শুধু ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার পরই নেয়ার ছিল বলে মনে করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘তামিমকে যেটা বলা হয়েছে যে প্রথম ম্যাচটা খেলো না বা খেললেও নিচে ব্যাটিং করো, এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডের কারও বলার বিষয় না। এটা বলবে কোচ, অধিনায়ক এবং দলের সঙ্গে যাওয়া নির্বাচক, মূলত টিম ম্যানেজমেন্ট।
‘টিম ম্যানেজমেন্ট বললে বাংলাদেশ থেকেও বলতে পারে, দল ঘোষণার পর ভারতে গিয়েও বলতে পারে। সেটা এত আগে করার কারণ কী আমি জানি না।’
তামিমকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর এমন প্রস্তাব দিলে সেটা যদি তিনি না মানতেন বা কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেন, তাহলে বোর্ড চাইলেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারত।’
তামিমকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার রাতে। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তামিম জানান, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ভালোভাবে জড়িত এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি যেন বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ম্যাচে না খেলেন। আর খেললেও ওপেনিংয়ের বদলে নিচের দিকে ব্যাট করেন। এমন প্রস্তাবে তামিম উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, তাকে যেন বিশ্বকাপে না রাখা হয়।
আরও পড়ুন:আগামী সপ্তাহে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩। বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ভারতসহ অংশ নেয়া সবগুলো দেশ ও ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে এ নিয়ে উত্তেজনা, পরিকল্পনার শেষ নেই। বিশ্বকাপ উপলক্ষে চারদিকে সাজ সাজ রব। এরই মাঝে উড়ে এলো ভারতে হামলার হুমকি।
কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা এবং কথিত খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামে ওই হামলা চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ভারতে নিষিদ্ধ শিখ সম্প্রদায়ের সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)।
আগামী ৫ অক্টোবর গুজরাটের আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকাপের এবারের আসরের পর্দা উঠবে। ওই ম্যাচের দিনই স্টেডিয়ামে হামলা চালানো হবে বলে এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন এসএফজে নেতা গুরপতবন্ত পান্নুন।
পান্নুনের ওই অডিও ক্লিপটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
ওই বার্তায় তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘৫ অক্টোবর থেকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ নয়, বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ কাপ শুরু হতে চলেছে।’
হরদীপ হত্যাকাণ্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি দায়ী করে তিনি বলেছেন, ‘দিল্লি খালিস্তান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার জন্য আপনি দায়ী এবং শিখ ফর জাস্টিস এই হত্যার প্রতিশোধ নেবে। আহমেদাবাদে ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আইসিসি বিশ্বকাপ আমাদের লক্ষ্য।
‘তোমাদের বুলেটের বদলে আমাদের ব্যালট চলবে। হিংসার জবাব আমরা ভোটের মাধ্যমে দেব।’
ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বী ও খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সহমর্মী জনগণকে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তান কায়েম হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ বর্জনের আহ্বানও জানিয়েছেন পান্নুন।
কানাডাভিত্তিক একজন আইনজীবী মনে করা হয় পান্নুনকে। ২০২০ সালে ভারত সরকার তাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়। এমনকি সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায়ও রাখা হয়েছিল।
শিখস ফর জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। এসএফজের কানাডা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন হত্যার শিকার হওয়া নিজ্জর। পান্নুনের দল ‘এসএফজে’র মতাদর্শ প্রচারের দায়িত্বে ছিল নিহত নিজ্জরের সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’। এই দুই সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ।
ভারতে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটি ‘খালিস্তান’ নামে শিখদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার।
ভারতে পান্নুনের বিরুদ্ধে ১৬টি ফৌজদারি মামলা চলছে। সম্প্রতি পাঞ্জাবে তার বেশ কিছু সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে এমনিতেই দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ভারত। বিশ্ব ক্রিকেটের মহা আয়োজন শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে এমন হুমকি বার্তা পেয়ে তাই নড়েচড়ে বসেছে দেশটির সরকার।
গুজরাটের যে স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে সেটির নামকরণ করা হয়েছে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে। আবার নরেন্দ্র মোদি নিজেও গুজরাটের বাসিন্দা। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আক্রোশ থেকে এমন হামলার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনীতিকরা।
ইতোমধ্যে গুজরাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সতর্কতা আরও জোরদার করা হয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাতে ভারতের গণমাধ্যমগুলো বলছে, এনআইএ ওই অডিও ক্লিপটির সত্যতা যাচাই করছে।
ওই বার্তায় এ-ও বলা হয়, ভারত নাকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অপমান করেছে। এসএফজে এর বদলা নেবে। ভারতকে ফল ভোগ করতে হবে।
‘আমরা পরামর্শ দিচ্ছি অটোয়াতে ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করে দিন, নয়ত রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিন।’
এ কথায় পান্নুনের সংগঠনের সঙ্গে কানাডা সরকারের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।
গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যাঙ্কুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর। দুই অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী ৪৬ বছরের নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করেন।
শুরু থেকেই কানাডা সরকারের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘হাত’ রয়েছে। পরে পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে প্রথম ভারতের এজেন্টদের জড়িত থাকার ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ তোলেন ট্রু়ডো। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কারও করে ট্রুডো সরকার।
তবে ভারত কানাডার এ অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘কানাডা যে অভিযোগ করেছে, কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, এ অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা মনে করি, তাদের অভিযোগ পক্ষপাতপূর্ণ।’
এমনকি কানাডা খালিস্তানপন্থী আন্দোলনকারীদের সমর্থন করে তাদের আশ্রয় দেয় বলেও অভিযোগ ভারতের। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং দুষ্কৃতি নেটওয়ার্কে জড়িত ৪৩ জনের তালিকা কানাডা সরকারকে পাঠিয়েছে ভারত। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা অনেকেই কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কানাডায় বহু ভারতীয় বাস করেন। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। তার মধ্যে অন্তত ১৪ লাখ ভারতীয় রয়েছেন। উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির সূত্রে ভারত থেকে তারা কানাডায় গেছেন।
কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়র সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ। কানাডায় প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে অনেকেই শিখ ধর্মাবলম্বী। সেখানে ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখ রয়েছেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ।
ভারতে শিখদের অনুপাত কানাডার চেয়েও কম। ভারতের মোট জনসংখ্যার বিচারে শিখদের সংখ্যা মাত্র ১.৭ শতাংশ।
কানাডার সরকার গঠনে তাই শিখদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। কানাডার রাজনীতিতেও তারা যথেষ্ট সক্রিয়। কানাডার হাউস অব কমন্সে ১৮ জন শিখ সাংসদ রয়েছেন, শতাংশের বিচারে যা ভারতের চেয়েও বেশি। তাই ট্রুডো বা কানাডার সব রাজনৈতিক দলই শিখদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
বেশি দিন আগের কথা নয়। জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। ধারণা করা হচ্ছিল, তার নেতৃত্বেই বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ, তবে কী থেকে যেন কী হয়ে গেল! তামিমকে ছাড়াই ঘোষণা করা হলো ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দল।
গত মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিশ্বকাপ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট নন তামিম, যে কারণে তাকে বাদ দিয়েই স্কোয়াড ঘোষণা করেন নির্বাচকরা।
এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও গতকাল সকালে নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা স্ট্যাটাসে তামিম জানান, একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে বিগত কয়েক দিনের ঘটনার ব্যাপারে কিছু কথা বলবেন। আর তামিম কথাগুলো বলবেন বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে খেলতে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার পর।
গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দেয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল। এর ঘণ্টাখানেক পর নিজের ফেসবুক পেজে একটি ১২ মিনিটের ভিডিওবার্তা দেন তামিম, যেখানে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা, তার না থাকা ইত্যাদি বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে হালকা চোট অনুভব করেছিলেন তামিম ইকবাল। তখন সে বিষয়টি টিম ম্যানেজমেন্টকে জানান এ ওপেনার। তিনি শুধুই চোটের কথা মাথায় রাখতে বলেছিলেন। অথচ টিম ম্যানেজমেন্ট সেটাকে ইস্যু বানিয়েছে, এমন অভিযোগ তার।
ভিডিওবার্তার শুরুতে তামিম বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। গলায় ইনফেকশন হয়েছে, সো ক্লিয়ারলি বলতে পারছি না। স্ট্যাটাস দেখেই বুঝতে পেরেছেন, শেষ কয়েক দিনে যা যা লেখা হয়েছে, আর আসলে যা ঘটেছে কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট। যা যা ঘটেছে, পুরো জিনিসটাই স্টেপ বাই স্টেপ জানাই। কারণ এটি আমার যারা ফ্যান এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট লাভার তাদের জানা উচিত।’
এরপর তামিম আরও বলেন, ‘বেসিক্যালি সবাই জানেন, আমি অবসরে যাই, অবসরে যাওয়ার কারণ ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এরপর যে দুই মাস আমি প্রচণ্ড পরিমাণ কষ্ট করি নিজেকে ফিট করার জন্য। আমি নিশ্চিত, যারা সম্পৃক্ত ছিল, ফিজিও থেকে শুরু করে, আমি নিশ্চিত সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন বা এক্সারসাইজ নেই, যেটি তারা চেয়েছেন কিন্তু আমি করি নাই।
‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর মানসিকভাবে আমি খুব খুশি ছিলাম। গত চার-পাঁচ ম্যাচের যত বিষয়, সব ভুলে গিয়েছিলাম। ম্যাচ শেষে আমার ইনজুরির অবস্থা ফিজিওকে জানাই। তখন ড্রেসিংরুমে নির্বাচকরা আসেন। আমি তাদের বলেছিলাম, আমার অবস্থা সামনে এমনই থাকবে। আমাকে দলে রাখলে বিষয়টি মাথায় রাখবেন। হোটেলে যাওয়ার পর আমাকে ফিজিও পর্যবেক্ষণ করেন। ফিজিওর রিপোর্টে ছিল প্রথম ম্যাচের পরে আমার ব্যথার অবস্থা কী, দ্বিতীয় ম্যাচের পর কী হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২৬ তারিখের (নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচ) ম্যাচের দিন অবস্থা কেমন হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, খেলার জন্য আমি ফিট, কোনো সমস্যা নেই, তবে আমাকে বলা হয়েছিল আমি রেস্ট নিতেও পারি।’
কিউইদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে রেস্ট নেয়ার বিষয়ে দেশসেরা ওপেনার বলেন, ‘শেষ ম্যাচটায় রেস্ট নিলে সে ক্ষেত্রে আমার প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য রিহ্যাব হয়ে যেত এবং বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচও আমি খেলতে পারব, এমনটা ছিল রিপোর্টে। আমি কোথাও বলিনি যে, পাঁচটা ম্যাচ খেলব বা পাঁচ ম্যাচ খেলতে পারব। এটা মিথ্যা। জানি না কীভাবে এটি মিডিয়াতে ছড়ানো হয়েছে। শুধু তিন নির্বাচককে জানিয়েছিলাম আমি পুরোপুরি ফিট না, দল ঘোষণার সময় যেন তারা এটি মাথায় রাখেন।
‘আমি নিশ্চিত কালকে নান্নু ভাইও কথাটা ক্লিয়ার করেছেন। আমি জানি না এ কথাটা মিডিয়াকে খাওয়ানো হলো কীভাবে বা কে করেছে এটি, কিন্তু এ জিনিস একদমই মিথ্যা। যে জিনিস আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম যে, আমার শরীর এ রকমই থাকবে। এখন যে রকম অবস্থায় আছে, আমার ব্যথা থাকবে। আপনারা যখন দলটা নির্বাচন করবেন, তখন এটা মাথায় রাখবেন।’
বিসিবির পক্ষ থেকে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাবও দেয়া হয় জানিয়ে তামিম বলেন, “বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করে আমাকে বললেন, ‘তুমি বিশ্বকাপে যাবা, কিন্তু তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। একটা কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলিও না।’ আমি বলেছি, ‘এখনও ১২/১৩ দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে তো আমি ভালো অবস্থায় থাকব। তো কী কারণে খেলব না?’ তখন বলল, ‘আচ্ছা তুমি যদি খেলো তাহলে আমরা পরিকল্পনা করছি, তুমি নিচের দিকে খেলবা।’”
তিনি বলেন, “তাদের প্রস্তাব শুনে আমি তো অবাক। জিজ্ঞেস করলাম এটা কোন ধরনের কথা। এরপর বলা হলো মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করানোর কথা। অথচ আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে খেলে আসছি। আমাকে জোর করে করে অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে, ইচ্ছে করে। তখন আমি বললাম, ‘দেখেন, আপনারা একটা কাজ করেন, যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে, তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না।’ তারপরও ফোনে উনার সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়। সেগুলো এই প্ল্যাটফর্মে না বলাই ভালো।
“এটা আমার আর উনার মধ্যেই থাক। তারপরও বলেছি, যদি এগুলো হয় আমাকে রাখিয়েন না। আমি এই নোংরামোর মধ্যে থাকতে পারব না। সো ওভারঅল আমি ব্যক্তিগতভাবে যে জিনিসটা ফিল করেছি, মিডিয়াকে আই ডোন্ট নো আমি ঠিক বলছি কি বলছি না। কারণ আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে বড় একটা জিনিসকে ঢাকার জন্য আরেকটা জিনিস ঠিক করা। সে পাঁচ ম্যাচ খেলবে তাকে ক্যামনে সিলেক্ট করব। অ্যাজ আই সেইড ইট ওয়াজ ফলস। এমন কোনো কথাই হয়নি। আমি নিশ্চিত সেদিন টিম সিলেক্টর ছিল, ফিজিও ছিল, ট্রেনার ছিল- সবাই ছিল। কী বলেছি সেটা আপনাদের সঙ্গেও ক্লিয়ার করেছি। বাট ওভারঅল আমার কাছে মনে হয়, ইফ ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট মি টু মেক মি মেন্টালি ফ্রি অ্যান্ড হ্যাপি। বিকজ আই অ্যাম কামিং আউট অব অ্যা ভেরি ব্যাড থ্রি-ফোর মান্থস। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল তিন-চার মাস।”
সবশেষে তামিম বলেন, ‘আমি উইশ করব যে ১৫ জন বিশ্বকাপে গিয়েছে, তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সাকসেস নিয়ে আসবে। আরও অনেক কিছুই ঘটেছে এটা আপনারা দেখেছেন আমি নিশ্চিত। একটা কাহিনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, দুটো কাহিনি ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, কিন্তু একজনের সঙ্গে তিন-চার মাসে যদি সাত-আটটা কাহিনি হয়, তাহলে সেটা ইচ্ছাকৃত হয়। আর একটা কথা, আমাকে সবাই মনে রাখিয়েন। ভুলে যাইয়েন না।’
আরও পড়ুন:ওপেনার তামিম ইকবাল বিশ্বকাপে পাঁচটির বেশি ম্যাচ খেলবেন না, এমন তথ্য যারা ছড়িয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার খালেদ মাসুদ পাইলট।
বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া তামিম ইকবালের বুধবার বিকেলের ভিডিওবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ফেসবুক লাইভে আসনে জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটার।
ওই ভিডিওবার্তায় তামিম বলেন, ‘আমি কোনো সময় কোনো মুহূর্তে বলি নাই যে, আমি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। এ কথা কোনো সময় হয় নাই। এটা মিথ্যা ও ভুল কথা। কে করছে এটা আমি জানি না। এটা মিথ্যা কথা।’
তামিম বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে দেখেন, আমার বডিটা এ রকমই থাকবে। এটা মাথায় রেখে সিলেক্ট করবেন।’
এমন বাস্তবতায় পাইলট বলেন, ‘তামিমের যেটা আমি দেখলাম একটা, সে বেসিক্যালি একটা ভিডিওবার্তা দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তো আমার মনে হয় যে, সে কিন্তু ক্লিয়ার করে দিয়েছে। সে কিন্তু বলে নাই যে, আমি পাঁচটা ম্যাচ খেলব না। তার মানে বাংলাদেশ টিম থেকে বোর্ড যদি চায়, ইচ্ছা করলে তদন্ত করে বের করে ফেলতে পারবে কারা এই নিউজটা বের করেছে। বিকজ ক্রিকেট বোর্ডের কিছু মানুষ আছে যারা সোশ্যাল মিডিয়াকে পোষে। তারা এই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে ইনফরমেশন দিয়েছে যে, বেসিক্যালি তামিমকে খারাপ করার জন্য…কিছু লোক আছে যারা…আমি সমস্ত ক্রিকেট বোর্ডের লোককে ঢালাওভাবে বলব না, একজন-দুইজন মানুষ আছেন যারা ক্রিকেট বোর্ডের ভাইরাস আমার কাছে মনে হয়; ক্রিকেট বোর্ডের ভাইরাস। তারাই এই জিনিসটা তৈরি করছে।
‘আমার মনে হয় অনেক ডিরেক্টর আছেন, তারা সবাই অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আছেন। তারা হয়তো ইনভলভডই (জড়িত) না এর সাথে, কিন্তু দুই-একজন মানুষ আছেন যারা পুরা এই নাটকটা বানাচ্ছেন। পুরা ইন্ডিয়ান সিরিয়ালগুলা যেমন নাটক হয়, এ রকম একটা নাটক বানাচ্ছেন। তো এই নাটকটা আসলে ক্রিকেটর জন্য ভালো না। এটা খুবই দুঃখজনক এবং আমি মনে করি যে, আমাদের কাছে এ রকম কালচার সাধারণ মানুষ আশা করে না।’
তামিম ও সাকিবের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে বলে মনে করেন তাদের অগ্রজ পাইলট।
তার ভাষ্য, ‘বিশেষ করে আপনি যেভাবে তামিমকে এক ধরনের পচানো হচ্ছে পাঁচটা ম্যাচ খেলার জন্য সে হয়তো বলেছে যে, পাঁচটা ম্যাচ পরে আর খেলবে না। আবার এদিক দিয়ে সাকিবকে এক ধরনের ভাবে পচানো হচ্ছে যে, সাকিব এই সমস্ত দায়িত্বে ছিলেন।
‘আসলে কি তাই হইছে? তো সাধারণ মানুষ কিন্তু আসলে বোকা সাজছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার ওজনে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সারাক্ষণ আপনার ফেসবুকের মধ্যে থাকছেই। সোশ্যাল মিডিয়াতে পজিটিভকে নেগেটিভ, নেগেটিভকে পজিটিভ বানিয়ে প্লেয়াররা এর মধ্যে কিন্তু দেখা গেল যে, প্লেয়ারদেরকে ভিলেন বানানো হচ্ছে।’
ভিডিওবার্তায় ব্যাটিংয়ের অর্ডার পরিবর্তন নিয়ে তামিমের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাইলট বলেন, ‘আপনারা যদি দেখেন, তামিম কিন্তু একটা কথা বলেছে। কোনো একজন তাকে বোর্ডের অফিশিয়াল নাকি টিমের ম্যানেজমেন্ট ফোন দিয়েছেন, যে কিনা বলেছেন যে, তুমি প্রথম ম্যাচ, আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচটা খেলবা না ওপেনিং করবা না, তুমি মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করবা। কোন কারণে তাকে বলতে পারে, বলেন তো আপনি যে, ওপেনিং ব্যাটিং করবা না তামিম? বিকজ একটা প্লেয়ার সারা জীবন ওপেন করে আসছে এবং তাকে জানেন যে, সে ওপেনার বাংলাদেশ টিমের। তাকে কী করে এ রকম একটা তাকে বলতে পারে? আমি জানি না কী প্ল্যান।
‘তার মানে বোঝাই যাচ্ছে যে, তামিমকে আপনি আউট করতে চাচ্ছেন। তামিমকে বাদ দিয়ে তুমি নিচে খেলো, ওপরে একটা ওপেনারকে আমি ট্রাই করব। ওখানে ও পারফর্ম করলে তুমি সাইজ। তো এ রকমই কথা। আমার কাছে মনে হয় খুবই দুঃখজনক।’
তামিম পাঁচটির বেশি ম্যাচ খেলতে পারবেন না, এ রকম তথ্য যারা ছড়িয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চেয়েছেন জাতীয় দলের আলোচিত উইকেটরক্ষক পাইলট।
তিনি বলেন, ‘টিম বাংলাদেশ অনেক ভালো করুক, আমরা সেই দোয়া করি। দিনশেষে কিন্তু আমাদেরই একটা ইমেজ, কিন্তু আমি বলব যে, এটার তদন্ত অবশ্যই করা উচিত। আমি জানি ক্রিকেট বোর্ড তদন্ত করবে না। বিকজ ক্রিকেট বোর্ডের বড় পাওয়ারফুল মানুষরা এর মধ্যে জড়িত, কিন্তু কারা কারা সোশ্যাল মিডিয়াতে এ ধরনের নেগেটিভ কথা বলেছে, সোশ্যাল মিডিয়াকেও ধরা উচিত, তদন্ত করা উচিত, কার কাছ থেকে এই ইনফরমেশনটা পেয়ে তারা এই নেগেটিভ নিউজগুলা দিয়েছে। এটা কোনো ঘটনাই না…মিথ্যাকে সত্যি বানিয়েছে। আমার মনে হয় ট্র্যাক করলেই ধরলেই কারা কারা ইনভলভ, কে কে নিউজটা পাস করেছে বেরিয়ে আসবে যদি ক্রিকেট বোর্ড ধরতে চায়। তাহলে বেরিয়ে আসবে আসলে এই ভিতরের গুটিচালকটা কে বা কারা।
‘আমি হয়তো জানি অনেক কিছুই। আমি বলব না। বিকজ হচ্ছে খুবই দুঃখজনক আমার কাছে মনে হয় যে, লজ্জাজনক ব্যাপার। আমরা ক্রিকেট খেলেছি। ক্রিকেটের সার্কেলেরই কিছু মানুষজনের মধ্যে অনেক জড়িত আছে, কিন্তু এই মানুষগুলোকে আমার কাছে খুবই ভাইরাস মনে হয় যে, এরা ভয়ানক। আপনি কখন কোন টিম বানাবে, কাউকে বুঝতে দিবে না কী বানাবে না বানাবে, এর মধ্যে অনেক কিছু ইন্টারেস্ট আছে। তো সেই ইন্টারেস্টটা যেন বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট করে যেন তার ইন্ডিভিজ্যুয়াল ইন্টারেস্টটা যেন না থাকে। সেটা আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করব ক্রিকেট বোর্ডকে এবং সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডের আশপাশে যারা আছেন অবশ্যই এটা তদন্ত করা উচিত কারা এই জিনিসটা লিক আউট করেছে যে, তামিম পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবে না অথবা সাকিব বলেছে, তামিমকে নিব না, এই করব না, এই করব না। এই যে কথাগুলো বলেছে, কারা বের করেছে বাইর করা উচিত এবং জেনুইন তদন্ত করা উচিত।’
আরও পড়ুন:মিডল অর্ডার বা লোয়ার অর্ডারে খেলা নিয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে এ ধরনের প্রস্তাবে দোষের কিছু আছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ক্রীড়াবিষয়ক চ্যানেল টি স্পোর্টসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব এ প্রশ্ন করেন। সাক্ষাৎকারটি টি স্পোর্টসের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয় বুধবার রাতে।
সাক্ষাৎকারগ্রহীতা সাকিবকে প্রশ্ন করেন, ‘এই মুহূর্তে পুরো বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে বিষয়টা চাউর হয়ে গেছে এবং পুরো বাংলাদেশের সমর্থকরা যেটি বিশ্বাস করে বসেছে, গত দুদিন ধরে এবং যে জায়গাতে সাকিব আল হাসান, এ নামটিও বিভিন্নভাবে সমালোচিত হচ্ছে, সেই একটি বিষয়ের শিরোনাম হচ্ছে তামিম ইকবালকে দল থেকে সরিয়ে দেয়ার পেছনের কারিগর বা কান্ডারি সাকিব আল হাসান। এ ব্যাপারে আপনি কীভাবে অ্যাড্রেস করছেন?’
জবাবে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে যে, আমি অন্তত যখন থেকে বাংলাদেশ আন্ডার ফিফটিন থেকে খেলা শুরু করছি, একটা জিনিস আমি খুব ভালোভাবে দেখে আসছি যে, যে প্লেয়ারটা ভালো করছে, যে প্লেয়ারটা দলের জন্য কন্ট্রিবিউট করছে, এই প্লেয়ারকে বাংলাদেশ কখনোই কোনোদিনও বাদ দেয় নাই; কোনোদিনও না। আমি যদি সিম্পল একটা উদাহরণ দিই, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাই, উনি ছিলেন না। হঠাৎ করে ওয়ার্ল্ড কাপ দলে আসলেন। একটা সিরিজ খেললেন। এখানে হয়তো ওইভাবে কন্ট্রিবিউট করতে পারেননি, যতটা করা উচিত ছিল।
‘আমি মনে করি, পারসোনালি আমি মনে করি যে, উনার আরও ক্যাপাবিলিটি আছে, আরও ভালো করা উচিত ছিল। যে দুইটা ম্যাচ খেলেছে, দুইটা ম্যাচেই। উনার ওই সুযোগটা ছিল এবং উনার জন্য পারফেক্ট স্টেজ ছিল যে অনেক ভালো কিছু করার। যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে, সেটা সে করতে পারেনি, বাট তার যে ডেডিকেশন ছিল, তার যে টিমের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা ছিল, তার যে দলের হয়ে খেলার একটা ইচ্ছা ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। সো আপনার ডিফরেন্স আছে। আর আমার তো দায়িত্ব না পুরা টিমটা সিলেক্ট করা। এটা যদি হতো তাহলে তো এশিয়া কাপের এক দিন আগে ক্যাপ্টেন অ্যানাউন্স (ঘোষণা) করেই টিম দিয়ে দিতে পারত।’
দলে খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে বাংলাদেশের দলপতি বলেন, ‘এটা অনেক প্রসেসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। অনেক জিনিস চিন্তা করতে হয়, অনেক ফ্যাক্ট চিন্তা করতে হয়। নট অনলি আপনার মাঠের পারফরম্যান্স; মাঠ, মাঠের বাইরে, ড্রেসিং রুম, টিম মিটিং, অ্যাটমোস্ফেয়ার (পরিবেশ), অনেক কিছু আসলে চিন্তা করে আসলে আপনার টিমটা করতে হয়। যদিও আমি বলতেছি না যে, সবকিছুতে আমি ইনভলভ (যুক্ত)। কারণ আমার কাছে মনে হয় এখন আমি খুবই কম ইনভলভ এগুলোতে।’
ওই বক্তব্যের পর সাক্ষাৎকারগ্রহীতা সাকিবের উদ্দেশে বলেন, ‘তামিম ইকবালকে নাকি বলা হয়েছিল প্রথম ম্যাচটা তিনি তিনি খেলতে পারবেন না এবং যদি খেলেন তাহলে তাকে মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলতে হতে পারে। এমন কোনো প্রস্তাবনা (প্রস্তাব) কি আপনার তরফ থেকে বা দলের তরফ থেকে তার প্রতি দেয়া হয়েছিল কি না?’
জবাবে সাকিব বলেন, ‘আমি যেটা বললাম যে, এটা নিয়ে আমার কোনো ডিসকাশনই হয় নাই। তো এই প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে, আমি জানি না। আর যদি এ রকম কেউ বলে থাকে, আমি শিউর, এ রকম কেউই বলছে যে হয়তো অথরাইজ মানুষ এবং এটা আগে থেকেই আলাপ করে নিয়ে রাখছিল যাতে করে সেটা জানা থাকলে দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়। এখন এ রকম বলাতে আমি খারাপ কিছু আছে আমি তো মনে করি না। এটা তো কেউ কারও খারাপের জন্য বলবে না আমি শিউর। আমি শিউর যে এই কথাটি বলে থাকে, সে টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে যে, এ রকম যদি আমরা কম্বিনেশন করি, এ রকম যদি আমরা চিন্তা করি…দেয়ার আর সো ম্যানি থিংস যে এগুলা ইনভলভড হয় একটা ম্যাচকে কেন্দ্র করে যে, আপনি এ রকম কম্বিনেশন বানালে কী হতো, এ রকম কম্বিনেশন বানালে কী হয়, এ রকমভাবে গেলে কী হয়।
‘সো ওই হিসেবে যদি কেউ চিন্তা করে আগে থেকেই ক্ল্যারিফাই করে রাখতে চায়, আমার তো মনে হয় না যে, আলোচনার কোনো দোষের আছে এবং এটা প্রস্তাব যদি কেউ দিয়ে থাকে, এটাতে কি কোনো দোষের কিছু আছে? নাকি এ রকম কোনো প্রস্তাবই দেয়া যাবে না যে, একজনকে আমি বলব যে, ওকে ইউ ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট (তোমার যা ইচ্ছা করো)। টিম আগে না কোনো ইন্ডিভিজ্যুয়াল আগে?’
এর আগে বুধবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে ভিডিওবার্তা দেন তামিম। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল থেকে তার বাদ পড়া নিয়ে আলোচনার মধ্যে ওই ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সময় কোনো মুহূর্তে বলি নাই যে, আমি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। এ কথা কোনো সময় হয় নাই। এটা মিথ্যা ও ভুল কথা। কে করছে এটা আমি জানি না। এটা মিথ্যা কথা।’
তামিম বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে দেখেন, আমার বডিটা এ রকমই থাকবে। এটা মাথায় রেখে সিলেক্ট করবেন।’
এই ক্রিকেটার বলেন, ‘ক’দিন ধরে যা ঘটছে, তা সবার জানা উচিত। সবাই জানেন আমি রিটায়ার করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফিরে আসি। এরপর আমি প্রচণ্ড কষ্ট করি।
‘আমি সব এক্সারসাইজই করেছি। আপনারা বুঝতে পারবেন এটা আসলে সহজ জিনিস না।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে আমাকে কোথাও বাধা দেয়া হচ্ছে। সাত-আটটা কাহিনি হয়েছে।’
দর্শকদের উদ্দেশে ভিডিওবার্তার শেষে তামিম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আপনারা আমাকে ভুলে যাবেন না, মনে রাইখেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য