গ্রামের মেয়ে ফুটবল খেলবে, কেমন দেখায় ভেবে রাজি ছিলেন না বাবা, বাধা দিয়েছিলেন মা, স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীও।
কিন্তু তিনি যে স্বপ্না, এসেছেন দেশবাসীর স্বপ্নকে সার্থক করতে। এসব বাধা কি তাকে ঠেকাতে পারে? ফুটবলে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যের একটি এসেছে যাদের ঘামে, তাদের মধ্যে ১০ নম্বর জার্সিধারী স্বপ্নাকে নিয়ে এখন ঝরছে প্রশংসার ফুলঝুরি।
নেপাল থেকে শিরোপা নিয়ে ফিরবেন, সেই শিরোপা দুই হাতে তুলে ধরতে দেখে দেশবাসী উদ্বেল হবেন, এই বিষয়টি ভেবেই এখন আনন্দে আত্মহারা এককালে তাকে খেলতে দেয়ার বিরোধীরাই।
নেপালের সঙ্গে ইতিহাস গড়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা দলে রংপুরের সদ্যপুস্কুরুনী পালিচড়ার মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্নার জন্য এখন হাসছে গোটা এলাকা।
সব 'মন্দ কথা' উড়িয়ে দিয়ে কিশোরীদের পায়ে এগিয়ে চলা ফুটবলে নতুন দিন এনে দিয়েছেন স্বপ্না। তাই, সারা দেশের উৎসবের রঙের সঙ্গে রঙিন হয়েছে রংপুরের নিভৃত এই পল্লীগ্রাম পালিচড়াও।
স্বপ্নার জন্য এখন গর্বিত রংপুরের মানুষ। তার পরিবার সিক্ত হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায়।
পালিচড়ার জয়রাম গ্রামে স্বপ্নার বাড়িতে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক মানুষের ভিড়। অনেকে মিষ্টি এনে বিলাচ্ছেন, হৈ-হুল্লোড় করে মেতেছেন গ্রামের মানুষজন। এ ছাড়া বাজার, দোকান, পাড়া-মহল্লা সবখানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বিশ্ব জয় করা স্বপ্না। স্থানীয়দের গর্বের অন্ত নেই তাকে নিয়ে।
এই উৎসব সেখানে শুরু হয় আগের রাতেই। চলে মিষ্টি খাওয়াখাওয়ি।
স্থানীয় যুবক গোলজার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তার জন্য খুশি। ২০১০ সালে এই গ্রামের মেয়েরা অনেক বাধা উপেক্ষা করে ফুটবল খেলা শুরু করে। আমরা স্বপ্ন দেখছিলাম বিশ্বজয়ের। সেটি পূরণ হয়েছে।
‘এই গ্রামের মেয়েদের জন্যই পালিচড়া এখন নতুন নাম পেয়েছে; সেটি হলো- নারী ফুটবলারদের গ্রাম। শিরোপা জয়ে আমরা এতটা খুশি, যা বলে প্রকাশ করা যাবে না।’
স্বপ্নার বাবা মোকছার আলী একজন কৃষক। মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দের সীমা নেই তারও। বলেন, ‘খুব আনন্দ লাগছে। আজকে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল জয়ী হয়েছে। এতে আমার মেয়ে খেলেছে। আমরা সবাই খুব খুশি। আমার মেয়ের জন্য সকলে দোয়া করবেন। সে যাতে দেশের জন্য আরও ভালো কিছু করতে পারে।’
ছোট থাকতে স্বপ্নার ফুটবলে আগ্রহ দেখে রাগ হয়েছিল মা লিপি বেগমের। পরে মামা এসে তাকে নিয়ে যায় খেলায়। সেই থেকে শুরু। এখন তাকে নিয়ে গর্ব করেন মা। চাওয়া মেয়ে আরও বড় হবে, আরও বড় স্বপ্ন ছুঁবে।
বলেন, ‘আমার মেয়ে যখন ক্লাস ফোরে পড়ে তখন স্কুল থাকি বাড়ি আসি বলে আমি ফুটবল খেলব। তখন রাগ হইসি পরে। তখন আমার ভাই আব্দুল লতিফ এসে তাকে নিয়ো যায়। সেই থেকে খেলে। মেয়েকে খব কষ্ট করি মানুষ করছি। আজ গর্ববোধ করতেছি।
‘আমি খেলা দেখছি। রাত ১২টায় খুশিতে ঘুমাইছি। সকাল থাকি মেলা মানুষ আসোছে। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার মেয়ে তিনটা। দুই মেয়েক বিয়ে দিছি। এই মেয়েকে খেলাধুলা করতেছে। আমার মেয়ে বড় হোক আমি এটা চাই।’
পরিবার রাজি না থাকলেও স্বপ্না ফুটবলের মাঠে আসতে পেরেছে মূলত তার মামার কারণে। মামা আব্দুল লতিফ কেমন খুশি আজ?
‘আমার বড় বোন স্বপ্নাকে খেলতে দিবেই না। আমি হাত ধরে ধরে তাকে মাঠে নিয়ে যেতাম। আজ আমার চেয়ে বেশি কেউ খুশি হয়নি। আমি চাই সে আরও বড় হোক।
‘তখন ইউএনও মোস্তাকিন বিল্লাহ ছিলেন। তার বড় অবদান আছে। তিনি অনেক কিছু করেছেন। বহু টাকা ব্যয় করেছেন’- এই কথা বলতে থাকা লতিফের মুখে তৃপ্তির আভা যে কেউ বুঝতে পারছিলেন।
স্বপানার বড় আব্বা (বড় চাচা) মকবুল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গমাতা খেলা হয়েছে ২০১১ সালে। সেখানে স্বপ্না খেলে আজ এত দূরে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি। আজ আমাদের গ্রামে যেন ঈদের আনন্দ।’
এই পালিচড়ায় মেয়েদের ফুটবলে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সাবেক কোচ হারুণকে অবদান অনস্বীকার্য বললেন মামা মিজানুর রহমান পাইলট।
‘সাবেক কোচ হারুণ ভাইয়ের চেষ্টায় আজ আমাদের মেয়েরা সফল। এই পালিচড়ায় এখন জাতীয় টিমে চার জন খেলতেছে। পুরো ২২ জনের একটি টিম ছাড়াও বহু মেয়ে এখন ফুটবল খেলতেছে। আজ কী যে আনন্দ হচ্ছে!’
সদ্যপুস্কুরুনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ মিলন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই গ্রাম নারী ফুটবলারদের গ্রাম। এর আগে কখনও সাফ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এটাই প্রথম। স্বপ্না দশ নস্বর জার্সি পরে খেলেছে। তার এই সফলতায় আমরা খুশি। আনন্দিত। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, তাকে বড় সংবর্ধনা দেয়ার।’
বাজারের বাসিন্দা বলেন আব্দুল মোাতালেব বলেন, ‘আবেদ আলী ক্যাশিয়ার ছিল বাচ্চাদের অভিভাবক। তিনি বাড়িতে মেয়েদের থাকা খাওয়া সবই করেছেন। তার বড় অবদান। তিনি আজ বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।’
রংপুর সদ্যপুষ্কুরনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা আজ গর্বিত। তার সফলতা আমাদের সফলতা। আরও কীভাবে এই পালিচড়াকে এগিয়ে নেয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ করব আমরা।’
রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আসিব আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্বপ্নাকে সংবর্ধনা দেবো। আমি ইউএনওকে বলেছি তার পরিবারের খোঁজখবর নিতে। তা ছাড়া আমরা সেখানে একটি স্টেডিয়াম করতেছি। সেখানকার নারী ফুটবলারদের জন্য যা যা করার আমরা সবই চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:ব্রাজিলের সাবেক আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলোয়াড় রবিনহোকে ধর্ষণের দায়ে গ্রেপ্তার করেছে ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ।
ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানে খেলাকালীন ২০১৩ সালে একটি নাইট ক্লাবে আলবেনিয়ান নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ইতালিতে রবিনহোকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল বলে জানায় বিবিসি।
ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৭ সালে রবিনহোকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় ইতালির আদালত। এরপর বৃহস্পতিবার নিজ শহর সান্তোসের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন ৪০ বছর বয়সী এ খেলোয়াড়।
ব্রাজিলের একটি আদালত বুধবার তাকে কারাগারের পাঠানোর আদেশ দেয়।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০২২ সালে ইতালির সর্বোচ্চ আদালত রবিনহোর শাস্তি বহাল রেখে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী, বিদেশে অপরাধ সংঘটিত করে কোনো নাগরিক দেশে ফিরলে বিদেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে অপরাধীকে হস্তান্তর করে না ব্রাজিল সরকার। রায়ের আগেই রবিনহো ইতালি ছাড়ায় ব্রাজিলেই শাস্তি কার্যকরের অনুরোধ জানায় দেশটির আদালত।
ব্রাজিলের বিচার ব্যবস্থার দ্বারা গৃহীত এ পদক্ষেপ স্থানীয় মিডিয়াতে অনেকের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, রবিনহো তার খ্যাতি এবং সম্পদের কারণে ন্যায়বিচার এড়িয়ে যাবেন।
তবে ম্যানচেস্টার সিটিতে দুই বছর কাটানো এ ফুটবলার বরাবরের মতো এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নাইট ক্লাবের ঘটনাটি ওই নারীর ‘সম্মতিতে’ হয়েছিল।
আরও পড়ুন:মাত্র ২৫ বছর বয়সেই চলে গেলেন জাতীয় নারী দলের ফুটবলার রাজিয়া। বৃহস্পতিবার পুত্র সন্তান জন্ম দেয়ার পর সাতক্ষীরায় মারা গেছেন এই রাইট উইঙ্গার।
রাজিয়া সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের নূর আলী সরদারের মেয়ে।
জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন রাজিয়া। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলেন তিনি। ভুটানে ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন রাজিয়া। এছাড়া ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে জাতীয় দলে সাবিনা খাতুনদের সঙ্গেও খেলেছেন তিনি।
নারী ফুটবল লিগে খেলেছেন নাসরিন স্পোর্টিং ও এএফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জার্সিতে।
তার স্বামী ইয়াম রহমান জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি গাজীপুরে চাকরি করি। ইফতারির সময় বাসায় গিয়ে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ফোনটা ওর ছোট ভাই রিসিভ করে বলে ব্যস্ত আছি। কেউ আমাকে জানায়নি যে ওর পেইন (প্রসব ব্যথা) উঠেছে। আসলে ওর প্রচুর রক্তক্ষরণে হয়েছে। অথচ কেউ বিষয়টাতে গুরুত্ব দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওরা আমাকে গত রাত ১১টার দিকে জানায়, ছেলে ও মা সুস্থ আছে। কিন্তু পরে ওর প্রচুর রক্ত ঝরেছে। অচেতন হয়ে ছিল অনেক সময়। ভোর বেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছে। আমি সিজার করাতে বলেছিলাম, কিন্তু ওরা শোনেনি।’
ইয়াম নিজেও ফুটবলার ছিলেন। খেলেছেন বসুন্ধরা কিংস অনূর্ধ্ব-১৮, সাইফ স্পোর্টিং যুব দলে। তৃতীয় বিভাগেও খেলেছেন। ভালোবেসে ৩ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন রাজিয়াকে।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে লিগ পর্বে টানা জয়ের পর শিরোপাও জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
রোববার কাঠমান্ডুর অদূরে ললিতপুরে আনফা একাডেমিতে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ১-১ সমতার পর টাইব্রেকারে ভারতকে ৩-২ গোলে হারান প্রীতিরা।
খেলার পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায়ং ভারত। দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে ম্যাচের ৭১ মিনিটে ফেরে সমতা। এরপর টাইব্রেকারে গোলকিপার ইয়ারজান বেগমের দক্ষতায় কাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয় বাংলাদেশের।
এর আগে ৮ মার্চ লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে দারুণ জয় পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপাল ও ভারতকে হারিয়ে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা দল সেদিন ভুটানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয়।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে লিগ পর্বে শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
নেপাল ও ভারতকে হারিয়ে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করা বাংলাদেশ শুক্রবার নেপালের কাঠমান্ডুর চেসাল স্টেডিয়ামে ভুটানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয়।
টানা তিন ম্যাচ জিতে শীর্ষে থেকে সাইফুল বারী টিটুর দল খেলার ১৩ মিনিটেই এগিয়ে যায়। এরপর একে একে ৬টি গোল। সুরভী আকন্দ পেয়েছেন জোড়া গোল। বাকি ৪টি গোল করেছেন ফাতেমা, ক্রানুচিং, সাথী মানদা ও থুইনুই মারমার।
আগামী রোববার কাঠমান্ডুর অদূরে ললিতপুরে আনফা একাডেমিতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। লিগ পর্বে তাদের ৩-১ গোলে হারিয়েছিলেন প্রীতিরা।
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়ে দারুণ সূচনা করেছে বাংলাদেশের নারীরা।
শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সংঘবদ্ধ এক আক্রমণের প্রদর্শনীতে প্রথমার্ধের ২৪ মিনিটে বাংলাদেশ গোল পায়। সাথী মুন্ডার দারুণ এক মুভে থ্রু বল ঠেলে দেন প্রতিপক্ষের গোল বক্সের ভেতর। নেপালের গোলরক্ষক গোল বাঁচাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সুরভী আকন্দ প্রীতি দ্রুতগতিতে বক্সে প্রবেশ করে প্লেসিংয়ে গোল করেন।
৫ মিনিট পর গোলের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন প্রীতি নিজেই। বক্সের বাম দিকে দিয়ে আক্রমণে ছিলেন বাংলাদেশের আরেক খেলোয়ার আলফি। গোলরক্ষক তাকে থামাতে গিয়ে গিয়ে ফেলে দেন মাটিতে। ফলে পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। স্পট কিক থেকে বাংলাদেশকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন প্রীতি। এভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
বিরতির পর স্বাগতিক নেপাল ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালালেও বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ভেদ করেতে পারেনি। বারবার তাদের আক্রমণ নস্যাৎ করে দিয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। খেলার ৬২ মিনিটের মাথায় আরিফার করা ক্রসে সুরভী প্রীতির প্লেসিং করা বল ফিরে আসে জালের পাশে লেগে। এরপর নির্ধারিত নব্বই মিনিটের খেলায় গোল পায়নি আর কোনো দল।
এবারের সাফ-১৬ টুর্নামেন্টে চারটি দল অংশ নিয়েছে। এক ম্যাচ শেষে সমান তিন পয়েন্ট করে অর্জন করেছে ভারত ও বাংলাদেশ। ৫ মার্চ বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে।
নব্বই দশকের ফুটবলে ফিরে যেতে চান উল্লেখ করে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘আমার যতটুকু সাধ্য, আমি মেম্বার অফ পার্লামেন্ট হিসেবে শুধু আমার এলাকার ফুটবল না, বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করব। যেভাবে কাজ করলে নব্বই দশকের ফুটবলে ফিরে যাওয়া যায়, যেখানে ফুটবল আমাদের ঐহিত্য ছিল। আমরা সেটাই করব।’
জামালপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুল হাকিম স্টেডিয়ামে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সুমন বলেন, ‘আমি ফুটবলের ব্যাপারে প্রতিবাদ করছি বহুদিন আগে থেকেই, প্রতিবাদ করতে করতেই আমি এখন মেম্বার অফ পার্লামেন্ট। আমি এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলতে পারি। আমার একটা বিশ্বাস ফুটবলের এখন গণজাগরণ শুরু হয়েছে।’
ভারতের ফুটবলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেখেন, ইন্ডিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে, এখন তারা মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর আমরা এখনও সাউথ এশিয়াতেই টিকতে পারি না।
‘যেহেতু আমাদের প্রথম প্রেম ফুটবল, এ ফুটবলের প্রেমটা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাই। আমরা সবাই আবার মাঠে আসতে চাই।’
আরও পড়ুন:গায়ে রঙ-বেরঙের টি-শার্ট, মুখে ভুভুজেলা বাঁশির সুর। শত শত ফুটবল সমর্থক গলা ফাটাচ্ছেন এক নাগাড়ে, সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে হাততালি আর ড্রাম বাজানো তো আছেই। আর যাদের ঘিরে এত এত আবেগের বিস্ফোরণ টার্ফের সবুজ গালিচায়, তারা লড়ছেন বুক চিতিয়ে। এর মাঝে এক ঘণ্টার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে জয় তুলে নেয় এশিয়ান গ্রুপ ফুটবল দল।
এশিয়ান গ্রুপ স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ফুটসাল টার্ফের বৃহস্পতিবার রাতের চিত্র এটি। এশিয়ান গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া ‘করপোরেট ফুটসাল কাপ’ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ছিল এদিন।
ফাইনালে ম্যাফ সুজ ফুটবল দলকে ৬-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে জয় পায় এশিয়ান গ্রুপ ফুটবল দল।
২৪ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় এই করপোরেট টুর্নামেন্ট। আট গ্রুপে ২৪ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ফুটবল দল অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার ফাইনাল ম্যাচের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামল এই টুর্নামেন্টের।
ফাইনাল ম্যাচ শেষে আয়োজন করা হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউর করিম চৌধুরী।
মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সুন্দর এই আয়োজনের জন্য এশিয়ান গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই খেলার মধ্যে দিয়ে এশিয়ান গ্রুপ প্রমাণ করেছে মাদক-মোবাইলের নেশা থেকে খেলার নেশায় ফিরিয়ে আনা যায়। এই প্রতিযোগিতা বারবার হোক, তরুণ সমাজও উদ্বুদ্ধ হোক। খেলায় যে উদ্দীপনা দেখছি যেন গণজোয়ার ফিরে আসছে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘এতদিন টেলিভিশনে ফুটবল দেখেছি। আজকে প্রথম সামনে সামনে দেখলাম। সত্যি আমি আনন্দিত। ছেলেমেয়েরা মোবাইল-মাদক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি ভালো সুযোগ পায় তাহলে তারা ভালোভাবে গড়ে উঠবে।
‘যে দেশ খেলাধুলায় উন্নত, সেই দেশ এগিয়েও। সেজন্য আমাদের খেলাধুলায় মনোনিবেশ করতে হবে। এশিয়ান গ্রুপকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম বলেন, ‘এশিয়ান গ্রুপ তরুণদের ভালো উদ্যোগের সঙ্গে, খেলাধুলার সঙ্গে সবসময় আছে। সামনের দিনগুলোতেও থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- এশিয়ান গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ সালাম, পরিচালক ওয়াসিফ সালাম, তরুণ উদ্যোক্তা বোরহানুল হাসান চৌধুরী, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু, কাউন্সিলর মোরশেদুল আলম প্রমুখ।
মন্তব্য