ন্যাশনাল র্যাংকিং ওপেন আর্চারি টুর্নামেন্ট থ্রিতে রিকার্ভ পুরুষ এককে সেরা হয়েছে রোমান সানা। একই ইভেন্টে নারীদের বিভাগের সেরা হয়েছেন বিউটি রায়। বৃহস্পতিবার টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ্মাস্টার স্টেডিয়ামে দিনব্যাপি এ টুর্নামেন্টে রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড বিভাগে ৬১জন পুরুষ ও মহিলা আর্চার র্যাংকিংয়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
পুরুষদের রিকার্ভ এককে পুরুষ দ্বিতীয় হয়েয়ছেন মোহাম্মদ ফয়সাল। রিকার্ভ নারী এককে দ্বিতীয় হয়েছেন দিয়া সিদ্দিকী। কম্পাউন্ড পুরুষ এককে মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান প্রথম ও সোহেল রানা দ্বিতীয় হন। কম্পাউন্ড নারী এককে শ্যামলী রায় প্রথম ও সুমা বিশ্বাস দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
রিকার্ভ পুরুষ এককের ফাইনালে বাংলাদেশ আনসারের রোমান সানা ৬-০ সেটে আর্মি আর্চারি ক্লাবের ফয়সালকে হারান। একই ইভেন্টের নারী এককে বাংলাদেশ পুলিশ আর্চারি ক্লাবের বিউটি রায় ৬-০ সেটে বিকেএসপির দিয়া সিদ্দিকীকে হারিয়েছে।
কম্পাউন্ড পুরুষ এককে পুলিশ আর্চারি ক্লাবের মোহাম্মদ আশিকুজ্জামানকে ১৪৪-১৪২ স্কোরে আর্মি আর্চারি ক্লাবের সোহেল রানাকে আর কম্পাউন্ড নারী এককে পুলিশ আর্চারি ক্লাবের শ্যামলী রায় ১৪৩-১৩৯ স্কোরে বাংলাদেশ আনসারের সুমা বিশ্বাসকে হারিয়েছেন।
৩১৭ রানে সিলেট টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ করে নিউজিল্যান্ডের লিড ৭ রানের লিড। মুমিনুল হক ৩ উইকেট নেন, যার মধ্যে ২টি তৃতীয় দিনের সকালের সেশনে নেয়া হয়।
দ্বিতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৮ উইকেটে ২৬৬ রান। খবর ইউএনবির
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৩১০ রানের জবাবে সেঞ্চুরি করে ব্যাটিংয়ে নেতৃত্ব দেন কেন উইলিয়ামসন। ড্যারিল মিচেল ৪১ ও গ্লেন ফিলিপস ৪২ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে তাইজুল ইসলাম ৪ উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে মাহমুদুল হাসান জয় বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান যিনি পঞ্চাশ রান অতিক্রম করেন।
বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা আশাব্যঞ্জক শুরু করলেও তাদের ইনিংসকে কাজে লাগাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ফিলিপস বল হাতে অপ্রত্যাশিত নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন এবং তার দ্বিতীয় টেস্টে চার উইকেট নেন।
এই সিরিজটি আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ, যা টাইগারদের জন্য এই ইভেন্টের প্রথম হোম সিরিজ।
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম-এর আয়োজনে চট্টগ্রামে কেএসআরএম নবম গলফ টুর্নামেন্ট সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাটিয়ারি গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার (জিওসি) মেজর জেনারেল শাহেনুল হক। এছাড়া কেএসআরএমের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. জসিম উদ্দিন, পরিচালক (করপোরেট) শামসুল হক, সিইও মেহেরুল করিম, বিজনেস রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের মহাব্যবস্থাপক কর্নেল (অব.) মো. আশফাকুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) সৈয়দ নজরুল আলম, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত থেকে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল শাহেনুল হক বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা কেএসআরএমের সহযোগিতায় এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকি, যা অত্যন্ত আনন্দের ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা। এজন্য কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা আশা করছি, কেএসআরএমের সঙ্গে আমাদের ধারাবাহিক এ সম্পর্ক আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’
আঞ্চলিক পর্যায়ের এসব গলফ টুর্নামেন্ট জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন জিওসি শাহেনুল হক।
কেএসআরএম-এর বিজনেস রিচার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের মহাব্যবস্থাপক কর্নেল (অব.) মো. আশফাকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি দেশে ১০টি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নে গর্বিত নির্মাণ অংশীদার ছিল কেএসআরএম। কেএসআরএম প্রতিটি প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রড সরবরাহ করেছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। আমরা সবসময় চেষ্টা করি গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করতে। আগামীতেও আমাদের সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএমের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক তাজ উদ্দিন, উপ-ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান রিয়াদ, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিজান উল হক, মিথুন বড়ুয়া, মিজানুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
শেষে গলফ টুর্নামেন্টে ১৯৬ জন গলফারের মধ্যে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ ও র্যাফেল ড্রয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিটি সদস্য ও বিশ্বজুড়ে লাখো ভক্তের মতোই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া বিজয়ী হওয়ার পরে বিরাট কোহলিও ভেঙে পড়েছিলেন।
ব্যাট হাতে দুর্দান্ত রানের জন্য টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া কোহলি টপ-স্কোরিং ব্যাটার হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করলেন, কিন্তু ট্রফি হাতে নেয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার।
বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলের অর্ধশত রানকে ছাপিয়ে শতরান করে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে দিলেন ট্রাভিস হেড।
এরপরেই চোখ ছলছল রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের। আবেগঘন ছিলেন বিরাটের স্ত্রী আনুশকা শর্মাও। ম্যাচ শেষে স্বামীকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে যান তিনি। বিরাট-আনুশকার একে অপরকে জড়িয়ে ধরার সেই মুহূর্ত এরই মধ্যেই ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভক্তরা বলছেন, ভারতের জয়ের সময় যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন আনুশকা, তেমন কঠিন সময়ে স্বামীর সব থেকে বড় সাপোর্ট সিস্টেম ছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপের পুরো আসরজুড়ে অপরাজিত শুধু নয়, বল-ব্যাটে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে ভারত। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে নিজেদের মাটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব থেকে বঞ্চিত হলো ভারত।
আরও পড়ুন:ভারতের কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা অস্ট্রেলিয়া নিল মধুর প্রতিশোধ। ফাইনালে সেই ভারতকে পেয়ে তাদের হারিয়েই ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল অজিরা। আর পুরো আসরে মাত্র এক ম্যাচ হেরেই হৃদয় চূর্ণ হলো ভারতের।
বিশ্বকাপের পুরো আসর জুড়ে অপরাজিত শুধু নয়, বল-ব্যাটে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ভারত অবশেষে হারল। হারল ঠিকই, কিন্তু তাই বলে ফাইনাল ম্যাচেই হারতে হলো! এক ম্যাচ হেরেই নিজেদের মাটিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব থেকে বঞ্চিত হলো ভারত। আর তাদেরই মাঠে, তাদের দর্শকের সামনে থেকে শিরোপা নিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনাল ম্যাচে টসভাগ্য সঙ্গী হয়নি ভারতের। টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামে রোহিত শর্মা অ্যান্ড কোং। অজি বোলিং তাণ্ডবে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪০ রানে থামে তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বিপদে পড়লেও চতুর্থ উইকেট জুটির অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৪২ বল বাকি থাকতে জয়ের দ্বীপে নোঙর করে অস্ট্রেলিয়া। আর সেইসঙ্গে পেয়ে যায় বহুল আকাঙ্ক্ষিত ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ট্রফির দেখা।
ব্যাট হতে ১২০ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলে বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য ফাইনাল হয়েছেন ট্র্যাভিস হেড। মারনাস লেবুশেন ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দেন ভারতের বোলাররাও। প্রথম পাওয়ার প্লের মধ্যে টপাটপ প্রথম সারির তিন উইকেট তুলে নিয়ে দুর্দান্ত প্রতাপ দেখান বুমরাহ-শামিরা। সে সময় মনে হচ্ছিল দুই শ’ পেরোনোই অস্ট্রেলিয়ার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। কিন্তু না; একপাশে যখন উইকেট পড়ে চলেছে, অন্যপাশে তখন মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলেন ট্র্যাভিস হেড।
মাত্র ৪৭ রানে তিন উইকেট হারানোর পর মারনাস লেবুশেনকে নিয়ে উইকেটে ধৈর্যশীলতার পরিচয় দেন হেড। এ সময় লেবুশেন টেস্ট ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হন, অন্যপ্রান্তে হেড রানের চাকায় মরিচা না ধরতে দিতে ব্রতী হন।
এই দুই ব্যাটারের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফলতা পায় টিম ক্যাঙ্গারু। ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে প্রথমে দলীয় পঞ্চাশ, এক শ’, দেড় শ করতে করতে দুই শ’ পার করে জয়ের দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকে হেড-লেবুশেন জুটি। এর মাঝে নিজের হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি পূর্ণ করে জয়ের দুই রান আগে থামেন হেড। থামার আগে তার ১২০ বলে ১৩৭ রানের স্মরণীয় ইনিংসটি ১৫টি চার ও চারটি ছক্কায় সাজান তিনি।
অন্যপ্রান্তে ১১০ বল মোকাবিলা করে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন মারনাস লেবুশেন। ব্যাট হাতে এসে প্রথম বলেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দুই রান নিয়ে নিলে ছয় উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।
এর আগে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত শর্মা। মাঝে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্কের শর্ট অফ লেংথ ডেলিভারিটি সামনের পায়ের ওপর ভর করে পুল করতে গিয়ে অ্যাডাম জাম্পার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শুভমান গিল।
তিনি মাত্র চার রান করে ফিরে গেলেও রোহিতের ব্যাটিং ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে ৮০ রান তোলে ভারত। তবে এরপরই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতকে চেপে ধরে অস্ট্রেলিয়া। দশম ওভারের চতুর্থ বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমান্তে ক্যাচ হয়ে ফেরেন রোহিত। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৩১ বলে ৪৭ রান করেন ভারতীয় অধিনায়ক।
আসলে পাওয়ার প্লেতে রানের লাগাম টানতে অষ্টম ওভারেই ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে আসেন কামিন্স। প্রথম ওভারে সফলতা না পেলেও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই রোহিতকে পকেটে ভরেন তিনি। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের পরের ওভারে টানা দুই বলে ছক্কা এবং চার মারেন রোহিত। পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে আবারও উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় ফিরে যেতে হয় হেডের দুর্দান্ত ক্যাচে।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আর গতি পায়নি ভারতের রানের চাকা। পরের ৪০ ওভারে তারা তোলে মোটে ১৬০ রান। প্রথম ইনিংসে রোহিত ছাড়া আর কেউ ছক্কা মারতে পারেননি। পুরো ইনিংসে চার হয়েছে মাত্র ১৩টি।
রোহিতের পর ৩ বলে একটি চার মেরে ফিরে যান শ্রেয়াস আইয়ার। কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা জস ইংলিসের গ্লাভসে উইকেট বিলিয়েছেন শ্রেয়াস। এরপর রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে জুটি বড় করতে মনোযোগী হন কোহলি। খানিকটা সফলও হন তারা। এ জুটি থেকে আসে ৬৭ রান। এর মধ্যে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন কোহলি।
তবে হাফ সেঞ্চুরির পর তাকে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেননি কামিন্স। ৬৩ বলে ৫৪ রান করা কোহলিকে বোল্ড করে দেন তিনি। এরপর রাহুলকে সঙ্গ দিতে ব্যাটিং লাইন আপে পরিবর্তন করে সুর্যকুমারের পরিবর্তে রবীন্দ্র জাদেজাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান রোহিত। কিন্তু এই জুটিও বেশি বড় হতে দেননি হেজলউড।
হেজলউডের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ বলে ৯ রান করা জাদেজা।
এরপর ধীরগতির ইনিংস খেলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ৬৬ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রাহুলও। স্টার্কের গুড লেংথের ডেলিভারিতে রিভার্স শট খেলতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে তিনিও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।
এরপর মোহাম্মদ শামিকেও আউট করেন স্টার্ক। খানিক বাদে অ্যাডাম জ্যাম্পার শিকার হয়ে জসপ্রিত বুমরাহ এলবিডব্লিউ হলে ভারতের ইনিংস আর বেশিদূর এগোতে পারেনি।
ভারতের শেষ ভরসা সূর্যকুমার যাদব আউট হন মাত্র ১৮ রান করে। ইনিংসের শেষ বলে উইকেট পড়লে ২৪০ রানে শেষ হয় ভারতের ইনিংস।
এদিন উইকেটের পেছনে পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে বিরল এক কীর্তি গড়েন ইংলিস। বিশ্বকাপ ফাইনালে পাঁচ ক্যাচ নেয়া প্রথম ক্রিকেটার তিনি। আগের ১২ আসরের ফাইনালে সর্বোচ্চ ৩টি করে নেয়া কীর্তি রয়েছে রডনি মার্শ (১৯৭৫), মইন খান (১৯৯৯) ও টম ল্যাথামের (২০১৯)।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন লোকেশ রাহুল। এ রান করতে তিনি মোকাবিলা করেন ১০৭ বল। এ ছাড়া বিরাট কোহলি ৫৪ ও অধিনায়ক রোহিত করেন ৪৭ রান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। প্যাট কামিন্স ও জশ হেজলউড পান দুটি করে উইকেটের দেখা।
এ জয়ের ফলে বিশ্ব ক্রিকেটের লম্বা ইনিংসের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো আবার। এ বছরের জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও জেতে তারা। ফলে এই দুই বিভাগেই ক্রিকেটর সেরার মুকুট এখন অস্ট্রেলিয়ার মাথায়।
এখানে বিশেষভাবে আলোচনায় চলে আসেন ট্র্যাভিস হেড। টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপের ফাইনালে এই ভারতের বিপক্ষেই ১৭৪ বলে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলে ফাইনালের রাজা হয়েছিলেন তিনি। আজ ওয়ানডে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেই ১২০ বলে ১৩৭ রান করে ফাইনালের রাজা তিনি।
আরও একটি বিশেষ ব্যাপার না বললেই নয়। সেটি প্যাট কামিন্সের অধিনায়কত্ব। টস জিতে পিচের আচরণ টের পেয়ে আগে বোলিং করার যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। পরে পাওয়ার প্লের মধ্যেও রোহিতকে ফেরাতে ম্যাক্সওয়েলকে বাজি ধরেন তিনি। সে যাত্রায়ও সফল হয়েছেন। আবার কোহলি ও রাহুল যখন হাতখুলে খেলা শুরু করবেন, তখনই উপযুক্ত বোলার দিয়ে কাঁৎ করেছেন তাদের। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার যোগ্য ব্যক্তি তিনি।
তবে বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও এবারের বিশ্ব আসরে বিরাট কোহলির অবদান কিছু কম নয়। ব্যাট হাতে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন কোহলি। ১১ ম্যাচে ৯৫.৬৩ গড়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৬৫ রান। এর মধ্যে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি ও তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
বিশ্বকাপের মঞ্চেই শচীনের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছুঁয়ে তা ভেঙেছেন তিনি। সেমি ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ বলে ১১৭ রানের ওই ইনিংসটি ভারতকে ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা রাখে। ফাইনালেও ৬৩ বলে ৫৪ রান করেছেন তিনি।
এমন অসাধারণ পারফরম্যান্সের পুরস্কারও পেয়েছেন কোহলি। হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। কিন্তু এত করেও দলকে, ভক্তদের বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে না পেরে মাথা নিচু করে ভাঙা হৃদয়ে পুরস্কার নিয়ে পোডিয়াম ছাড়েন তিনি।
সবশেষে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের জয় দেখতে গ্যালারিতে এসে শেষমেস অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা তুলে দিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।
আরও পড়ুন:গুজরাটের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের যে পিচে আজ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি হচ্ছে, তাতে ব্যাটার ও বোলার- দুপক্ষের জন্যই ভালো করার সমান সুযোগ রয়েছে। তবে প্রথমে বোলিং করে পূর্ণ ফায়দা তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা।
রোববার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামে রোহিত শর্মার ভারত। তবে অজি বোলারদের তাণ্ডবে ২৪০ রানে গুটিয়ে গেছে তাদের ইনিংস। এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে হলে বল হাতে ২৪০-এর আগেই অস্ট্রেলিয়াকে আটকাতে হবে ভারতীয় বোলারদের।
এদিন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেছেন লোকেশ রাহুল। এ রান করতে তিনি মোকাবিলা করেছেন ১০৭ বল। এ ছাড়া বিরাট কোহলি ৫৪ ও অধিনায়ক রোহিত করেছেন ৪৭ রান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। প্যাট কামিন্স ও জশ হেজলউড পেয়েছেন দুটি করে উইকেটের দেখা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস হারের পর ফাইনালেও টস ভাগ্য তাদের সঙ্গ দেয়নি। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন রোহিত। মাঝে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্কের শর্ট অফ লেংথ ডেলিভারিটি সামনের পায়ের ওপর ভর করে পুল করতে গিয়ে অ্যাডাম জাম্পার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শুভমান গিল।
তিনি মাত্র চার রান করে ফিরে গেলেও রোহিতের ব্যাটিং ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে ৮০ রান তোলে ভারত। তবে এরপরই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতকে চেপে ধরে অস্ট্রেলিয়া। দশম ওভারের চতুর্থ বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমান্তে ক্যাচ হয়ে ফেরেন রোহিত। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ৩১ বলে ৪৭ রান করেন ভারতীয় অধিনায়ক।
আসলে পাওয়ার প্লেতে রানের লাগাম টানতে অষ্টম ওভারেই ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে আসেন কামিন্স। প্রথম ওভারে সফলতা না পেলেও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই রোহিতকে পকেটে ভরেন তিনি। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের পরের ওভারে টানা দুই বলে ছক্কা এবং চার মারেন রোহিত। পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে আবারও উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় ফিরে যেতে হয় হেডের দুর্দান্ত ক্যাচে।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আর গতি পায়নি ভারতের রানের চাকা। পরের ৪০ ওভারে তারা তুলেছে মোটে ১৬০ রান। এ ইনিংসে রোহিত ছাড়া আর কেউ ছক্কা মারতে পারেননি। পুরো ইনিংসে চার হয়েছে মাত্র ১৩টি।
রোহিতের পর ৩ বলে একটি চার মেরে ফিরে যান শ্রেয়াস আইয়ার। কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে জস ইংলিস উইকেটের পেছনে উইকেট বিলিয়েছেন শ্রেয়াস। এরপর রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে জুটি বড় করতে মনোযোগী হন কোহলি। খানিকটা সফলও হন তারা। এ জুটি থেকে আসে ৬৭ রান। এর মধ্যে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন কোহলি।
তবে হাফ সেঞ্চুরির পর তাকে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেননি কামিন্স। ৬৩ বলে ৫৪ রান করা কোহলিকে বোল্ড করে দেন তিনি। এরপর রাহুলকে সঙ্গ দিতে ব্যাটিং লাইন আপে পরিবর্তন করে সুর্যকুমারের পরিবর্তে রবীন্দ্র জাদেজাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান রোহিত। কিন্তু এই জুটিও বেশি বড় হতে দেননি হেজলউড।
হেজলউডের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২২ বলে ৯ রান করা জাদেজা।
এরপর ধীরগতির ইনিংস খেলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ৬৬ রান করে ফেরেন রাহুল। স্টার্কের গুড লেংথের ডেলিভারিতে রিভার্স শট খেলতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনিও।
এরপর মোহাম্মদ শামিকেও আউট করেন স্টার্ক। খানিক বাদে অ্যাডাম জ্যাম্পার শিকার হয়ে জসপ্রিত বুমরাহ এলবিডব্লিউ হলে ভারতের ইনিংস আর বেশিদূর এগোতে পারেনি।
ভারতের শেষ ভরসা সূর্যকুমার যাদব আউট হন মাত্র ১৮ রান করে। ফলে আড়াইশ রানের কোটা পার হতে পারেনি ভারত।
এদিন উইকেটের পেছনে পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে বিরল এক কীর্তি গড়েছেন ইংলিস। বিশ্বকাপ ফাইনালে পাঁচ ক্যাচ নেয়া প্রথম ক্রিকেটার তিনি। আগের ১২ আসরের ফাইনালে সর্বোচ্চ ৩টি করে নেয়া কীর্তি রয়েছে রডনি মার্শ (১৯৭৫), মইন খান (১৯৯৯) ও টম ল্যাথামের (২০১৯)।
আরও পড়ুন:অনুমিতভাবেই ক্রিকেট বিশ্বের দুই শক্তিমান দল- ভারত ও অস্ট্রেলিয়া খুবই দাপুটে ক্রিকেট খেলে ফাইনালের মঞ্চে এসেছে। টুর্নামেন্টে স্বাগতিক ভারতকে হারাতে পারেনি কেউই। টানা ১০ ম্যাচ জিতেছে তারা। অন্যদিকে জোড়া হারে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হলেও টানা ৮টি ম্যাচে অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া। আজ দুর্ধর্ষ ও তুখোড় দুটি দল শিরোপা জয়ের মঞ্চে অবতীর্ণ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ফাইনাল ম্যাচটিকে ঘিরে বাড়তি উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সবার মধ্যে।
বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ সব সময় আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তবে এই দুদলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শক্তি ও সামর্থ্য বিবেচনায় আজ আমরা রুদ্ধশ্বাস শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চকর ক্রিকেট মহাযুদ্ধের একটি বারুদ ছড়ানো ম্যাচ দেখতে পারব বলে আশা করি।
অনেক সময় দেখা যায়, একটি দল প্রাথমিক পর্বে খুবই ভালো খেলে। কিন্তু নকআউট পর্বে এসে তাদের চরিত্র বদলে যায়। এ পর্যন্ত এসব ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে ভারত দলটি। যতই সামনের দিকে এগিয়েছে টুর্নামেন্ট- ততই যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দলটি। আমরা দেখেছি, সেমিফাইনালে কিছুটা চাপে পড়লেও কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। টুর্নামেন্টজুড়ে যে দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখাল টিম ইন্ডিয়া, তাদের সেই প্রতিচ্ছবিটা ফাইনালের মঞ্চেও দেখতে চাইবে ভারতবাসী। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রোহিত শর্মার দলকে বড় পরীক্ষা দিতে হবে। এই পরীক্ষায় পাস করলেই তাদের অপরাজিত থাকাটা পরিপূর্ণ রূপ পাবে।
অপরদিকে, লিগ পর্বে ভারত ও সাউথ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য এরপর আর কোনো ম্যাচেই তাদের কেউ হারাতে পারেনি। ফেভারিট দলের মতো খেলে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে হাজির হয়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ভারতের মতো টুর্নামেন্টব্যাপী জয় অব্যাহত না থাকলেও বড় ম্যাচের জন্য খুবই ভয়ংকর দল অস্ট্রেলিয়া। কীভাবে ফাইনালের মতো মঞ্চে পারফর্ম করতে হয়, সেটি তাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।
আমি মনে করি, বড় ম্যাচের জন্য সবচেয়ে দক্ষ দল অস্ট্রেলিয়া। এখান থেকে তারা কোনোভাবেই খালি হাতে ফেরত যেতে চাইবে না।
তবে ফাইনালের মহারণে ভারতকেই ফেভারিট বলতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার জন্য তাদের আটকানো কঠিন হবে। ব্যাটিং বলেন, বোলিং বলেন কিংবা ফিল্ডিং- সব দিক থেকেই ভারত দলটি দুরন্ত। তাদের দলে ফাঁকফোকর নেই।
ভারতীয় ব্যাটিং রাজত্বের মধ্যমণি বিরাট কোহলি সেরা পারফর্মার। ফাইনাল ম্যাচটিও স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন এই তারকা ব্যাটার। এ ছাড়া ভারতের প্রত্যেক ব্যাটার প্রত্যেকের যার যার জায়গায় দুর্দান্ত ফর্মে আছেন।
বোলিংয়েও বিধ্বংসী দলটি। ভারতের মূল অস্ত্র এখন মোহাম্মদ শামি। তার সঙ্গে বুমরাহ ও সিরাজও বিপজ্জনক। তাদের বল খেলা কঠিন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হতে পারে ভারতীয় বিষাক্ত স্পিন। কুলদীপ, জাদেজার সঙ্গে অশ্বিন যদি খেলেন, তাহলে তো মহাবিপদে পড়তে পারে অজি ব্যাটাররা। তাদের স্পিন খেলার দুর্বলতা সবার জানা। স্পিন শক্তিতেই এগিয়ে যেতে পারে ভারত। আমি মনে করি, ফাইনালে দুই দলের শক্তির পার্থক্যটা হলো মূল স্পিন বোলিংয়ে। স্পিনেই ম্যাচে বড় পার্থক্য তৈরি হতে পারে।
ফাইনালে ভারত অনেক এগিয়ে থাকলেও আমি মনে করি, তাদের হারানোর সক্ষমতা আছে অস্ট্রেলিয়ার। ফাইনাল ম্যাচে বেশি চাপে থাকবে ভারত। টুর্নামেন্টজুড়ে যে ক্রিকেট খেলল দলটি, ফাইনালেও দাপুটে জয় দেখতে চাইবে দর্শক-সমর্থকরা। এই যে প্রত্যাশার চাপ- সেটি ভারতের খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে। স্নায়ু চাপে ভুগলেও ভারতের মতো অতটা চাপে থাকবে না অস্ট্রেলিয়া দল। শুধু তাই নয়, আরও বেশ কিছু জায়গায় ভারতের চেয়ে ফাইনাল ম্যাচে এগিয়ে যেতে পারে তারা।
শুরুতেই ব্যাটিংয়ের কথা বলব। ভারতের ব্যাটাররা ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও তাদের লোয়ার মিডল অর্ডার কিন্তু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। কোনো ম্যাচে চাপ নিয়ে ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি সুর্যকুমার, অশ্বিনদের। যদি ফাইনালে এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের হাল ধরতে হবে, তাহলে সেখানে অস্ট্রেলিয়ানরা এগিয়ে থাকবে।
এরপর বোলিংয়ের কথা যদি বলি, অস্ট্রেলিয়ার পেস ইউনিট ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। সেমিফাইনালে তাদের আরও বিধ্বংসী রূপ আমরা দেখেছি। ভারতের পেস বোলিং ইউনিট সেরা পারফরম্যান্স দেখালেও ফাইনালে যদি তাদের কোনো পেসার ভালো করতে না পারেন তাহলে বিপদ হতে পারে ভারতের।
ধারাবাহিকভাবে ভালো করা একজন যদি হঠাৎ অফ ফর্মে চলে যান তাহলে দলের শক্তি কমে যায় অনেকাংশে। আর এখানেই এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার। ভারতের তিন পেসার ও দুই স্পিনারের সঙ্গে ষষ্ঠ বোলারের অভাব রয়েছে। আর এ জায়গায়ও এগিয়ে যেতে পারে অজিরা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ফিল্ডিং। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যাচ মিস, ওভার থ্রোয়ে রান দিয়েছে ভারত। ফাইনালের মতো মঞ্চে যদি ফিল্ডিংয়ে কোনো দুর্বলতা থাকে, তাহলে বড় মাশুল গুনতে হবে তাদের। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে অনেক ভালো অস্ট্রেলিয়া দল।
এ ছাড়া বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্লান্তি গ্রাস করে কি না- সেটিই দেখার বিষয় থাকবে। দীর্ঘ টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া দলের চেয়ে বেশি ভ্রমণ-ক্লান্তি ভারত দলের। সেই ধকল কাটিয়ে ফাইনালে পারফর্ম করতে হবে স্বাগতিকদের।
ফাইনাল ম্যাচের উইকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের যে ১১টি উইকেট রয়েছে, এর মধ্যে ষষ্ঠ উইকেটে খেলার সম্ভাবনাই প্রবল। ঐতিহ্যগতভাবেই উইকেট ব্যাটিংবান্ধব হয়ে থাকে। পেসার ও স্পিনারদের জন্যও সহায়ক হয়। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ যেহেতু, উইকেটও ভালো হবে আশা করি।
আগে ব্যাটিং করলে বড় স্কোর দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে দুদলই। এ ক্ষেত্রে টসটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। টস জেতা দল বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। কেননা রাতের শিশিরও খেলায় প্রভাব ফেলতে পারে।
আমি মনে করি, কন্ডিশন বড় ফ্যাক্টর হলেও ভারতের মাটিতে অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে অস্ট্রেলিয়ার। কীভাবে সফল হতে হয়, সেই কৌশল বেশ ভালো করেই জানা তাদের। অন্যদিকে, ভারত হোম অ্যাডাভেন্টজ কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। ঘরের মাঠে লাখো দর্শকের সামনে খেলবে তারা। দর্শক-সমর্থন তাদের পক্ষে থাকবে।
সব মিলিয়ে পরিশেষে বলব, ফাইনাল ম্যাচের যে স্নায়ু চাপ থাকবে, সেটি কাটিয়ে যারা মাঠের যুদ্ধে এগিয়ে যাবে, তারাই আগামী চার বছর বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার গৌরব অর্জন করতে পারে।
ইডেন গার্ডেনসের ব্যাটিংবান্ধব পিচে আজ দেখা গেল উল্টোচিত্র। দুই ইনিংসেই বোলারদের দাপট। স্বল্প রানের লক্ষ্য দিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে রোমাঞ্চের পর রোমাঞ্চ ছড়িয়েও সেমিফাইনাল থেকে এবারও বিদায় নিতে হলো তাদের। এর ফলে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল চূড়ান্ত হলো।
বারবার সেমিফাইনালে এসে খেই হারানোর কারণে প্রোটিয়াদের ‘চোকার্স’ তকমা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২১২ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে খেলতে নেমে ১৬ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
লক্ষ্য মাত্র ২১৩ হলেও অস্ট্রেলিয়াকে ছেড়ে কথা বলেনি প্রোটিয়ারা। তাদের অদম্য মনোবলের কারণে দ্বিতীয় ইনিংস হয়ে উঠেছে উপভোগ্য। ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টেছে বারবার।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্র্যাভিস হেড। তবে সপ্তম ওভারে বল হাতে এসে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান আউডেন মার্করাম। ১৮ বলে ২৯ রান করা ডেভিড ওয়ার্নারকে মার্করাম বোল্ড করে ফেরালে দলীয় ৬০ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের দেখা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এক রানের ব্যবধানে তৃতীয় ব্যাটার মিচেল মার্শকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। ফলে জমে ওঠে ম্যাচ।
এ সময় পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ক্রিকেটে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। আর মাঠ ছোট করে ফিল্ডার সাজিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের আরও চেপে ধরেন টেম্বা বাভুমা। এ সময় ক্রিজে এসে উইকেটের সামনে দেয়াল তুলে দেন স্টিভেন স্মিথ। হেড তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলে ধীরে ধীরে চাপ থেকে বের হয়ে আসে অস্ট্রেলিয়া। এর মাঝে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হেড।
কিন্তু এর কিছু পরই দৃশ্যপটে আবার পবির্তন। ট্র্যাভিস হেডকে বোল্ড করে দেন কেশব মহারাজ। ফলে নতুন ব্যটার মারনাস লেবুশেনকে আবার স্থির মস্তিষ্কে ব্যাট করতে পরামর্শ দেন স্মিথ। ফলে ফের বোলিং-ফিল্ডিং দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপর আম্পায়ার সিদ্ধান্তে বেঁচে যান লেবুশেন। আর ক্যাচ দিয়েও জীবন পান স্মিথ।
তাবরাইজ শামসির অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন লাবুশেন। বল তার পেছনের প্যাডে আঘাত করলে প্রোটিয়াদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। অথচ রিভিউয়ের সময় রিপ্লেতে দেখা যায় বলের ‘পিচিং’ ও ‘উইকেটস’ ঠিক, কিন্তু ইমপ্যাক্টের ক্ষেত্রে আম্পায়ার্স কলের সম্মান জানানো হয় বলে বেঁচে যান লাবুশেন। এক্ষেত্রে আম্পায়ার আউট দিয়ে দিলে রিভিউ নিয়েও কাজ হতো না তার।
১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে এজ হয়ে যান স্মিথ, কিন্তু ডি কক ক্যাচটি লুফে নিতে না পারায় সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।
এর কিছু পর আবার আসে নাটকীয় মোড়। দলীয় ১৩৩ রানের মাথায় সেই শামসির বলেই লেপ বিফোর হয়ে ফিরতে হয় লেবুশেনকে। নিজের পরের ওভারে নতুন ব্যাটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান শামসি। ফলে ১৩৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদেই পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
জস ইংলিসকে নিয়ে আবার ক্রিজে শেকড় নামাতে থাকেন স্মিথ। এতে কিছুটা স্বস্তিও আসে অজি শিবিরে। প্রোটিয়া স্পিনারদের পরের দশ ওভার সামাল দেন এ দুজন, তোলেন ৩৭ রান। কিন্তু এরপর পেসার গেরাল্ড কোয়েটজি এসেই তাদের প্রতিরোধ ভেঙে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন।
স্টিভেন স্মিথ যখন কোয়েটজির বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরছেন, তখন তার সংগ্রহ ৬২ বলে ৩০; মেরেছেন মাত্র দুটি চারের মার।
স্মিথের ফেরার পর আবার কোমর বেঁধে নামের প্রোটিয়ারা। অন্যদিকে মিচেল স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে ‘টেস্ট ম্যাচের পঞ্চম দিনের শেষ বিকেলের ইনিংস’ খেলতে থাকেন ইংলিস। দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে তিনি যখন বিদায় নিচ্ছেন, তখন তার ব্যক্তিগত স্কোর ৪৯ বলে ২৮। দলের দরকার ৬১ বলে ২০ রান।
তবে এ অবস্থায়ও হাল ছাড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ রানের আগেই অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বাভুমা, ডি কক। একের পর এক ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্র প্রয়োগ করতে থাকেন তারা। আর ব্যাট দিয়ে ইস্পাত কঠিন বর্ম বানিয়ে একের পর এক গোলার মতো বল প্রতিহত করতে থাকেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। এর মধ্যে শেষ মুহূর্তে আরও এক নাটকীয়তার দেখা হয়তো পাওয়া যেত। হয়তো ম্যাচটি জিতেও নিতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা, কিন্তু কামিন্সের ক্যাচ গ্লাভসে রাখতে না পারায় সে সম্ভাবনা আর আলোর মুখ দেখেনি।
শেষ পর্যন্ত এ দুই পেসারের ব্যাটেই ৪৭.২তম ওভারে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টিম ক্যাঙ্গারু। আর আরও একটি বিষাদের গল্পে নিয়ে ঘরে ফিরতে হয় ‘চোকার্স’ প্রোটিয়াদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন তাবরাইজ শামসি ও গেরাল্ড কোয়েটজি। একটি করে উইকেটের দেখা পেয়েছেন কাগিসো রাবাদা, আইডেন মার্করাম ও কেশব মহারাজ।
এর আগে শুরুতে ব্যাট করে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২১২ রান তুলতে সমর্থ হন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ডেভিড মিলার ১০১ এবং হাইনরিখ ক্লাসেন ৪৭ রান করেন। বাকি ব্যাটারদের মোট সংগ্রহ ছিল ৫৩।
সেমিফাইনালের ম্যাচে এসেই প্রোটিয়া ব্যাটারদের সবার যেন মাথা গুলিয়ে যায়। ইডেনের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও দলকে একের পর এক ব্যর্থতা উপহার দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ব্যাটাররা।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। এ ছাড়া জশ হেজলউড ও ট্র্যাভিস হেড পেয়েছেন দুটি করে উইকেটের দেখা।
ব্যাট হাতে ৬২ রান ও বল হাতে দুই উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের নায়ক ট্র্যাভিস হেড।
এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সেমিতেই থামল দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ যাত্রা। অন্যদিকে অষ্টমবারের মতো গেল ফাইনালে উঠল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
আগামী সোমবার তৃতীয় ট্রফির খোঁজে ভারত ও নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার মিশনে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া। এতে করে ২০০৩ সালের ঠিক বিশ বছর পর আবারও ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব।
মন্তব্য