ঢাকায় গত মাসে আয়োজিত পেশাদার আন্তর্জাতিক বক্সিং টুর্নামেন্ট ‘ফাইট নাইটে’ স্বর্ণ জিতে পরিচিতি পান সুরো কৃষ্ণ চাকমা। বাংলাদেশের এ বক্সার এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন জুলাইয়ের কমনওয়েলথ গেমসের।
বক্সিংয়ে নিজের পথযাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সুরো কৃষ্ণ কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। পাঠকদের জন্য সে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
ফাইটনাইটের মতো আন্তর্জাতিকমানের আসরে অংশ নিলেন। কেমন লাগল?
আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশে এমন একটা ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং টুর্নামেন্ট হবে। আগে থেকে এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। জেতার পর এত মানুষের উচ্ছ্বাস ও শুভকামনা অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। মনে করেছিলাম এত মানুষ দেখবে না। কিন্তু জেতার দুই-তিন দিন পর দেখেছি পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে বিষয়টি যা অনেক ভালো লেগেছে।
কতদিন ধরে বক্সিং করছেন?
২০০৭ থেকে ২০২২ সাল, প্রায় ১৫ বছর আমি বক্সিংয়ে আছি।
ক্রিকেট, ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলা রেখে বক্সিংয়ে কীভাবে আগ্রহী হলেন?
২০০৭ সালে আমি যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হই, তখন ফুটবলের জন্য চেষ্টা করেছিলাম। ছোটবেলা রাঙামাটিতে আমি ফুটবল খেলতাম। তখন ফুটবল খেলতেই বেশি ভালো লাগত। বড় হয়েছি ফুটবল নিয়ে। খেলাধুলা মানে বুঝতাম ফুটবল বা ক্রিকেট। এর বাইরে যে বক্সিংও আছে সেটা জানা ছিল না। অ্যাকশন মুভি দেখার কারণে আসলে আমি মার্শাল আর্টের ভক্ত ছিলাম। বিকেএসপিতে ফুটবলে চেষ্টা করে যখন সুযোগ পাইনি তখন বক্সিংয়ে আসলাম।
পরিবার থেকে কেমন সমর্থন পেয়েছেন? বক্সিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খেলা নিয়ে সবার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
আমার পরিবারের সবাই সব ধরনের খেলা পছন্দ করে। আমার বাবা খেলোয়াড় ছিলেন। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাসা থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি। বাসা থেকে আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করাতে চেয়েছে। ভালো পরিবেশে পড়াশোনার পাশাপাশি যেন ভালো খেলোয়াড় হতে পারি। বক্সিং বা অন্য যে খেলাই হোক। পরিবার থেকে এটা চাচ্ছিল। পরিবার আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
পরিবারে কে কে আছেন?
১১ বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। আমার ছোট ভাই চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে স্পোর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করছে। ও নিজেও বিকেএসপির ছাত্র। আমিই ওকে ভর্তি করিয়েছি। সে টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। জাতীয় দলেও খেলেছে।
খেলাধুলায় মনোযোগের পাশাপাশি পড়াশোনা কীভাবে চালাতেন?
ক্লাস সেভেন থেকে বক্সিং শুরু করি। সে সময় থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত বিকেএসপিতে ছিলাম। পড়াশোনা ও খেলাধুলা দুটোই ওখানে ছিল। ২০১৩ সালে যখন ওখান থেকে বের হয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারিনি। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর আমার মনে হলো অন্তত গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ করতে হবে। ২০১৪ সালের পর থেকে বক্সিংয়ে অনেক ন্যাশনাল ক্যাম্প থাকত। এখনও ক্যাম্প হয়। সেগুলোতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা অনেক সাহায্য করেছেন। অনেক সময় ক্লাস করতে পারতাম না। তখন ডিপার্টমেন্ট থেকে জাতীয় খেলোয়াড় বিবেচনা করে শুধু পরীক্ষা দেয়ার জন্য বলত। আমি কোনো পরীক্ষা মিস করতাম না। এভাবেই আমি অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করলাম।
বক্সিং যারা শুরু করতে চায় তাদের কী পরামর্শ দেবেন?
আমি মনে করি বাংলাদেশের সবাই কম-বেশি বক্সিং সম্পর্কে জানে। কিন্তু প্রচলিত বেশি রাজশাহী, যশোর ও বরিশালে। সব জেলায় এখনও বক্সিং পৌঁছেনি। সব জেলায় বক্সিংয়ের জন্য সঠিক কোচ ও পরিবেশ নেই। আমি মনে করি যারা করতে চায় তারা বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারে তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি বক্সিংও করতে পারবে। বাইরে থেকে বক্সিংয়ে থাকাটা একটু কঠিন কারণ পড়াশোনা আর খেলাধুলা তখন আলাদা হয়ে যায়। নিয়মিত অনুশীলন আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া কঠিন। যারা বিকেএসপির বাইরে থেকে বক্সিংয়ে আসতে চায় বিশেষ করে ঢাকাতে, তারা সে ক্ষেত্রে ভালো কোচের আন্ডারে গেলে ভালো করবেন।
সামনে কী কী টুর্নামেন্ট আছে?
প্রফেশনাল ও অ্যামেচার মিলিয়ে অনেকগুলো ম্যাচ আছে। জুলাইয়ে কমনওয়েলথ গেমস ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচ হবে। সেখান থেকে দেশে ফেরার পর র্যাঙ্কিং ফাইটে প্রফেশনাল আরও একটি ম্যাচ হতে পারে। আগামী বছর জাতীয়-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে আমার ৩-৪টা টুর্নামেন্ট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বক্সিং নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
বক্সার হিসেবে আমার লক্ষ্য র্যাঙ্কিং উন্নতি করা। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমার পরিকল্পনা আছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি। এশিয়া প্যাসিফিক চ্যাম্পিয়নশিপ টাইটেল আছে সেটা অর্জন করার চেষ্টা করছি। সে লক্ষ্যে এখন কাজ করছি। ওই টাইটেল জিততে পারলে তা হবে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।
বক্সিংয়ে আপনার অনুপ্রেরণার উৎস কে? প্রিয় বক্সার কে?
সবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাই। আশপাশের মানুষের ভালোবাসা, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এসব কিছু থেকেই অনুপ্রেরণা পাই। তাছাড়া পরিবার, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি, পার্বত্যাঞ্চলসহ সারা দেশের মানুষের কাছ থেকে উৎসাহ পাই। তবে যখন খেলি তখন মানুষের যে ভালোবাসা পাই তা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়। যখন বক্সিং প্রথম শুরু করি তখন মোহাম্মদ আলির নামই শুনেছিলাম প্রথম। পছন্দের বক্সারদের তালিকায় তিনি সবার ওপরে। বর্তমানে অনেক বক্সার আছে যাদের আমি পছন্দ করি। ম্যানি প্যাকিয়াও, ফ্লয়েড মেওয়েদারের মতো অনেকেই আছে যাদের আমি পছন্দ করি।
বক্সিংয়ে উন্নতির জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন?
বক্সিংয়ে উন্নতি করতে হলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকা উচিত ৬টার বেশি। যদি বাইরের দেশের অ্যামাচারদের কথা বলি তাহলে অন্তত ৩-৪টা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে হবে। এখন যেহেতু পেশাদার ম্যাচ শুরু হবে, সেটা বাংলাদেশে নিয়মিত হবে। আশা করছি বছরে ৪-৫টা ম্যাচ থাকবে আর উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। নিয়মিত দেশের বাইরে অনুশীলন ও খেলার ব্যবস্থা যত বাড়বে, বাংলাদেশের বক্সিং তত উন্নত হবে।
ফাইটনাইটে সারা পাওয়ার পর কেমন লাগছে?
যারা এখন আসছে আমার সঙ্গে কথা বলছে, এটা অবশ্যই ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি। এগুলো আমি উপভোগ করি। সবাই বক্সিং নিয়ে আগে তেমন জানত না বা আমরা ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি। হয়তো কোনো ত্রুটি ছিল বা খেলার উপস্থাপনায় হয়তো ভুল ছিল। বেশি করে খেলার আয়োজন ও বেশি প্রচার করা হলে হয়তো আরও আগে এ প্রতিক্রিয়াটা পেতাম।
বক্সিংয়ে প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে হয়, বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
আসলে স্পোর্টসের বিষয়টাই হচ্ছে শ্রদ্ধার। বিশেষ করে বক্সিংয়ের ক্ষেত্রে। আমরা যখন রিংয়ে নামি সে হয়তো আমার প্রতিপক্ষ কিন্তু রিংয়ের বাইরে মনে হয় তার চেয়ে কাছের বন্ধু কেউ নেই। মার্শাল আর্টসের খেলায় যে সম্মান প্রতিপক্ষের জন্য, সেটা আমি অন্য কোনো খেলায় দেখি না। আরেকজনকে মেরে রক্তাক্ত করলেও খেলা শেষ হওয়ামাত্র সে আমার ভাই। একদম আপন ভাইয়ের মতো।
১৫ বছরে বক্সিং করতে গিয়ে বড় কোনো চোটে পড়েছেন?
খেলাধুলায় চোটের ঝুঁকি থাকবেই। ফুটবল-ক্রিকেট সব জায়গাতেই চোট আছে। তবে বক্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় ব্যাপারটা আলাদা। এটা যে কেউ খেলতে পারবে না। বক্সিংয়ের জন্য সাহস দরকার। এখানে চোট বেশি দিন থাকে না। সর্বোচ্চ ৭ দিন। আর আপনার অর্জন সারা জীবন থাকবে। সাফল্যের সে আনন্দে আঘাতের যন্ত্রণা ভুলে যাই। তবে আমি অনেক ভাগ্যবান যে কখনও বড় চোটে পড়িনি।
আরও পড়ুন:সিলেটের বন্যার্তদের সাহায্যার্থে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। নিজের এক মাসের বেতনের পুরোটাই তিনি অনুদান হিসেবে দিয়েছেন বন্যার্তদের সাহায্যার্থে।
জানা গেছে, মুশফিকের এই অনুদান দিয়ে সিলেটের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করবে। আশা করা হচ্ছে, অন্তত দেড় হাজার পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হবে মুশির অনুদানের অর্থ দিয়ে।
বর্তমানে পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য ছুটিতে রয়েছেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। কিছুদিনের মধ্যেই হজ্ব পালনের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করবেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
এর আগে সিলেটের বন্যা কবলিত অঞ্চলের মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। পাঁচ হাজার মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করেছিল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এ ছাড়া তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারও হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বন্যার্তদের সাহায্যার্থে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হ্যাট্রিক জয় তুলে নিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল শ্রীলঙ্কা। সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে অজিদের ২৫৯ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৪ রানে জয় পেল স্বাগতিকরা।
এই জয়ের সুবাদে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে লঙ্কানরা।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাট করতে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ম্যাক্সওয়েলের শিকার হয়ে ১ রানে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার নিরোশান ডিকভেলা।
এরপর স্কোরবোর্ডে ৩৪ রান তুলতেই সাজঘরের পথ ধরেন কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কা। প্যাট কামিন্স ফেরান মেন্ডিসকে ১৪ রানে আর আর মিচেল মার্শের শিকার হয়ে ১৩ রানে ফেরেন নিশাঙ্কা।
দলের এই ব্যাটিং বিপর্যয়ে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের মিশনে নামেন চারিথ আশালাঙ্কা। দুজনে মিলে ১০১ রানের জুটি গড়ে দলকে ফেরান ট্র্যাকে। দলীয় ১৩৫ রানে ধনঞ্জয়া ৬০ রান করে মাঠ ছাড়লেও উইকেট কামড়ে ধরে রানের চাকা সচল রাখেন আশালাঙ্কা।
উইকেটের অপর প্রান্ত থেকে সাড়া না মিললেও ৯৯ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে শতক তুলে নেয়ার পাশাপাশি তিনি দলকে পার করান ২৫০ রানের কোঠা। দলীয় ২৫৬ রানে আশালাঙ্কা বিদায় নেয়ার পর দলের স্কোর আর বেশিদূর এগুতে পারেনি। ভেঙে পড়ে লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইন-আপ।
শেষতক ২৫৮ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানদের ইনিংস।
অজিদের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স, মিচেল মার্শ ও ম্যাথিউ কুনেম্যান। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নেন একটি উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অ্যারন ফিঞ্চকে হারায় অজিরা। এরপর একে একে সাজঘরে ফিরতে হয় মিচেল মার্শ (২৬), মার্নাস ল্যাবুশেইন (১৪), অ্যালেক্স ক্যারি (১৯), ট্রাভিস হেডকে (২৭)।
তবে উইকেটের এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন ডেভিড ওয়ার্নার। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে তিনি ব্যাট ছুটান সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু তারকা এই ব্যাটারকে মাঠ ছাড়তে হয় এক রানের হতাশা নিয়ে।
ব্যক্তিগত ৯৯ রানে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে পরাস্ত হন ওয়ার্নার। উইকেটের পেছনে থাকা ডিকিভেলার স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে একবুক হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
এরপরই বলতে গেলে জয়ের আশার প্রদীপ নিভু নিভু হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। শেষ দিকে প্যাট কামিন্সের ৩৫ ও ম্যাথিউ উ কুনেম্যানের ১৫ রানে ভর করে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। চার রানের হার সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। একইসঙ্গে সিরিজ ঘরে তোলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না ট্রান্সজেন্ডার। এ প্রশ্নে হওয়া ভোটের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাঁতারের বিশ্ব পরিচালন সংস্থা- ফিনা। তারা বলেছে, যেসব নারী পুরুষালি আচরণের যেকোনো শারীরিক অভিজ্ঞতা অনুভব করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ১৫২টি দেশের ফেডারেশন ভোটে অংশ নেয়। ৭১ শতাংশ ভোট পড়ে ট্রান্সজেন্ডারদের বাদ দেয়ার পক্ষে।
ফিনা বৈজ্ঞানিক প্যানেলের একটি প্রতিবেদন বলছে, ট্রান্স নারীরা ওষুধের মাধ্যমে তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমানোর পরও সিসজেন্ডার নারী সাঁতারুদের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পেয়ে থাকে।
ফিনার নতুন ৩৪ পৃষ্ঠার নীতিতে বলা হয়েছে, পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তর ক্রীড়াবিদরা কেবল তখনই নারী বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, যখন তারা এটা প্রমাণ করতে পারবে যে ট্যানার স্টেজ-টুর বাইরে পুরুষ বয়ঃসন্ধির কোনো কিছু অনুভব করেনি।
নতুন নীতি সম্পর্কে ফিনার প্রেসিডেন্ট হুসেন আল-মুসাল্লাম বলেন, ‘ক্রীড়াবিদদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার রক্ষা করতে হবে। আমাদের ইভেন্টগুলোতে, বিশেষ করে ফিনা প্রতিযোগিতায় নারী বিভাগে প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।’
এই জটিলতায় যারা পড়বেন তাদের আশাহত হওয়ার কারণ নেই। ফিনার নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, কিছু ইভেন্টে ট্রান্স নারীদের জন্য একটি ‘উন্মুক্ত’ বিভাগ খোলা হবে।
ফিনার সভাপতি মুসাল্লাম বলেন, ‘আমরা সব সময় ক্রীড়াবিদকে স্বাগত জানাই। একটি উন্মুক্ত বিভাগ তৈরির অর্থ হলো, প্রত্যেকেরই অভিজাত স্তরে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। এটি আগে করা হয়নি। তাই ফিনাকে পথ দেখাতে হবে।’
এর আগে ২০২০ সালে বিশ্ব রাগবি প্রতিযোগিতায় এমন সিদ্ধান্ত এসেছিল। তবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা দিয়ে বাছাই করাকে অনেকেই করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ। আরও অনেক প্রতিযোগিতায় এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় ট্রান্স নারীদের।
যুক্তরাষ্ট্রে লিয়া টমাস এক ট্রান্স নারী সাঁতারু, যিনি কলেজভিত্তিক একটি সাঁতার প্রতিযোগিতায় (পুরুষ বিভাগে) গেল মার্চে শিরোপা জেতেন। বিষয়টি তখন বেশ আলোচিত হয়। অনেকেই দাবি তুলেছিলেন, এ ধরনের সাফল্য অবশ্যই উদযাপন করা উচিত। ফিনার নতুন সিদ্ধান্তে প্যারিস অলিম্পিকে থমাস আর নারী বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
সাবেক ব্রিটিশ সাঁতারু শ্যারন ডেভিস অবশ্য এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমি আপনাকে বলতে পারব না যে আমি আমার খেলাধুলার জন্য কতটা গর্বিত। ফিনা এবং ফিনা প্রেসিডেন্ট বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এমন করছেন। সাঁতার সব সময় সবাইকে স্বাগত জানাবে, তবে ন্যায্যতা হলো খেলার ভিত্তি।’
I can’t tell you how proud I am of my sport @fina & @fina_president for doing the science, asking the athletes/coaches and standing up for fair sport for females. Swimming will always welcome everyone no matter how you identify but fairness is the cornerstone of sport https://t.co/1IaMkIFOkX
— Sharron Davies MBE (@sharrond62) June 19, 2022
আরেক সাবেক ব্রিটিশ সাঁতারু ক্যারেন পিকারিং বলেন, ‘উপস্থাপনা, আলোচনা এবং ভোটের জন্য ফিনা কংগ্রেসে ছিলাম। যেকোনো ক্রীড়াবিদ যারা এখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না তাদের জন্য সহানুভূতি জানাতে পারি। নারীদের বিভাগে প্রতিযোগিতামূলক ন্যায্যতা অবশ্যই রক্ষা করা উচিত।’
আরও পড়ুন:চার বছর পর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাস্কেটবল লিগ এনবিএর শিরোপা জিতেছে গোল্ডেন স্টেট ওয়ারিয়র্স। বেস্ট অফ সেভেন সিরিজের ফাইনালের ৬ষ্ঠ ম্যাচে ১০৩-৯০ পয়েন্টে বোস্টন সেল্টিকসকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে ওয়ারিয়র্স।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পায় ওয়ারিয়র্স। কিন্তু পরের দুই ম্যাচ জিতে দারুণ ভাবে সিরিজে ফেরে সেল্টিকস। তাদের সামনে সম্ভাবনা জাগে ২০০৮ সালের পর শিরোপা জয়ের।
কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে স্বরূপে ফেরেন ওয়ারিয়র্সের সেরা তারকা স্টেফ কারি। তার অনবদ্য পারফরম্যান্সে সিরিজে ২-২ সমতা ফেরায় ওয়ারিয়র্স। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।
টানা তিন ম্যাচ জিতে ৪-২ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নেয় ওয়ারিয়র্স। শেষ ম্যাচেও জ্বলে ওঠেন কারি।
তৃতীয় কোয়ার্টার শেষে ম্যাচে ৭৬-৬৬ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল ওয়ারিয়র্স। কিন্তু তৃতীয় কোয়ার্টারে ২৭-২২ পয়েন্টে তাদেরকে পেছনে ফেলে সেল্টিকস।
এরপরই ম্যাচ নিজের করে নেন স্টেফ কারি। আবারও প্রমাণ দেন কেন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড়। ফাইনালে ৩৪ পয়েন্ট স্কোর করেন কারি। রিবাউন্ড নেন ৭টি আর অ্যাসিস্ট করেন ৭টি।
ফাইনাল সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন ওয়ারিয়র্সের এ পয়েন্ট গার্ড। ফাইনালে তার ম্যাচ প্রতি গড় ছিল ৩১.২ পয়েন্ট। ৬টি রিবাউন্ড ও ৫টি অ্যাসিস্ট।
কারির নৈপূণ্যে গত ৮ বছরে ৪টি শিরোপা জিতেছে ওয়ারিয়র্স। গত দুই মৌসুম ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করেছেন কারি। সবশেষে এবারের মৌসুমে চাঙ্গা হয়ে দলকে জেতালেন শিরোপা।
ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়ার পর কারি সে স্মৃতিগুলোই রোমন্থন করেন। চোট কাটিয়ে আবারও সেরা ছন্দে ফিরতে পারবেন কিনা সেটা নিতে তার মনে ছিল শঙ্কা।
কারি বলেন, ‘গত ৩ বছর, প্লে-অফের শেষ দুই মাস আর সবশেষ ৪৮ ঘণ্টার প্রতিটা মুহূর্ত আমি খুব আবেগী হয়ে পড়েছি। মাঠ ও মাঠের বাইরে খুব কঠিন সময় পার করেছি। সবকিছুকে সঙ্গে নিয়েই স্বপ্নকে বাস্তবতায় পরিণত করার লড়াইয়ে আমরা সবাই নেমেছিলাম। যে কারণে আমার কাছে এ শিরোপাটা ভিন্নরকম।’
আরও পড়ুন:প্রায় ১ বছর বছর কোর্টের বাইরে আমেরিকান তারকা সেরিনা উইলিয়ামস। চলতি বছর উইম্বলডন দিয়ে আবারও টেনিস কোর্টে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে মঙ্গলবার রাতে এ ইঙ্গিত দেন ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী এ তারকা। ইনস্টাগ্রামে উইম্বলডনের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘দেখা হবে সেখানে।’
৭ বারের উইম্বলডন জয়ী সেরিনা এক বছর আগে উইম্বলডন খেলতে যেয়েই চোট পান। ব্যাথা পেয়ে প্রথম রাউন্ডে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যায় ৪০ বছর বয়সী এ তারকার।
দীর্ঘদিন না খেলার কারণে র্যাঙ্কিংয়েও পিছিয়ে পড়েছেন সেরিনা। ১৩ জুন প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে তিনি আছেন ১,২০৮ তম স্থানে। তাই উইম্বলডন খেলতে ওয়াইল্ড কার্ডের বিকল্প নেই তার।
সেরিনা সিঙ্গলস নাকি ডাবলসে খেলবেন তা এখনও নিশ্চিত করেননি। ২৭ জুন থেকে শুরু হচ্ছে উইম্বলডন।
গত মাসে ঢাকায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক বক্সিং টুর্নামেন্ট ‘ফাইট নাইটে’ নেপালের ভারত চাঁদের বিপক্ষে ম্যাচ জেতেন বাংলাদেশের আল আমিন। দেশের সর্ববৃহৎ ঘরোয়া ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে গেমসেও স্বর্ণ জিতেছিলেন রাজশাহীর এই বক্সার।
অভিজ্ঞ এ বক্সার খেলেছেন বাংলাদেশ আর্মি ও আনসার বাহিনীর হয়ে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ক্যাম্প অনুশীলন করছেন আল আমিন। স্বর্ণজয়ী এ বক্সার মনে করেন দেশের বক্সিংয়ে উন্নতির জন্য দরকার নিয়মিত জাতীয়-আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।
দেশের অন্যতম সেরা এ বক্সার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশের বক্সিংটাকে আরও উপরে নেয়ার। প্রো বক্সিংয়ে ভালো করার জন্য আমারা আমাদের শতভাগ দিয়ে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছি। কোন দেশে যখন প্রো বক্সিং চালু হয় তখন দেশের বক্সিংয়ের পরিবেশটাই পরিবর্তন হয়ে যায়।’
সাধারণত কোনো বক্সার অ্যামেচার থেকে পেশাদার জগতে ঢুকলে তাকে কোনো একটি প্রোমোশন কোম্পানিতে নাম লেখাতে হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি করার পর বক্সিং রিংয়ে নামতে পারেন ওই বক্সার।
দেশে ফাইটনাইটের মত প্রফেশনাল বক্সিং টুর্নামেন্টের প্রশংসা করে আল আমিন যোগ করেন, ‘প্রো বক্সিংয়ে টাকা আয়ের সুযোগ আছে। যা থেকে বক্সাররা স্বাবলম্বী হতে পারে। যেমনটা ক্রিকেট-ফুটবলে হয়ে থাকে। প্রো বক্সিং চালু হওয়াতে আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’
পেশাদার বক্সিংয়ে অভিষেক হলেও অ্যামেচার বক্সিংও চালিয়ে যেতে চান আল আমিন। তার স্বপ্ন বৈশ্বিক ও এশীয় আসরে বাংলাদেশের হয়ে পদক জেতা।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রো এবং অ্যামেচার দুটাই খেলতে চাই দেশের জন্য। সুযোগ পেলে বাংলাদেশের হয়ে মেডেল জেতার চেষ্টা করব। তাছাড়া এশিয়ান টাইটেল ও ওয়ার্ল্ড বক্সিং কাউন্সিল ফাইট করার জন্য আমি রেডি হচ্ছি। এটাই আমার স্বপ্ন।
আরও পড়ুন:ভারতে শেষ হল টাটা আলট্রা ম্যারাথনের পঞ্চম আসর। প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো অংশ নেন দুই বাংলাদেশী রানার শাহজাদা আব্দুল আউয়াল শাহ ও প্রশান্ত রায়।
মহারাষ্ট্র রাজ্যের লোনাভলার পাহাড়ী অঞ্চলে অনুষ্ঠিত টাটা আলট্রা ম্যারাথন ২০২২ আসরে দুই আল্ট্রা রানার শাহজাদা ও প্রশান্ত দৌড় শেষ করতে সক্ষম হন।
১৫ মে রাত ১টায় লোনাভলার সুনিলস ওয়্যাক্স মিউজিয়াম থেকে ৫০ কিলোমিটারের এই দৌড় শুরু হয়। পাঁচ শতাধিক দৌড়বিদ এতে অংশ নেন। দূর্গম পাহাড়ে অসংখ্য চড়াই-উৎরাই ও কঠিন বাঁক ছিল ৫০ কিলোমিটারের রুটে।
প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৫০ কিলোমিটার শেষ করতে শাহজাদা আব্দুল আউয়াল শাহ এর সময় লেগেছে ৭ ঘন্টা ৪৩ মিনিট এবং প্রশান্ত রায়ের সময় লেগেছে ৮ ঘন্টা ৩০ মিনিট। প্রতিযোগিতা শেষে মঞ্চে বাংলাদেশের দুই রানার জাতীয় পতাকা নিয়ে ছবিও তোলেন।
মন্তব্য