চট্টগ্রাম টেস্টের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর নিজের ছন্দ ধরে রেখেছেন মুশফিকুর রহিম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। তার ও লিটন দাসের শতরানে বিপর্যয় থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বাংলাদেশ।
ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন সকালে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা এ ব্যাটারের। দিনের তৃতীয় সেশনে সেঞ্চুরি পান লিটন ও মুশফিক।
লিটনের সেঞ্চুরির পর বলে মুশিও তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক শতক।
সেঞ্চুরি বাগিয়ে নিতে এবারও বেশ ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে দেখা গেছে মুশিকে। টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম শতক তুলে নিতে মুশফিক খেলেন ২১৭ বল। অনবদ্য সেই ইনিংসে ছিল ১১টি চারের মার। কোনো ছক্কা হাঁকাননি তিনি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই নিয়ে তিনবার সেঞ্চুরি হাঁকালেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। এর ভেতর একটি রয়েছে ডাবল সেঞ্চুরি। প্রথম টেস্টের চেয়ে কিছুটা দ্রুতগতির ছিল মুশফিকের দ্বিতীয় ম্যাচের এই সেঞ্চুরিটি।
দুই ব্যাটার সেঞ্চুরির সঙ্গে পূর্ণ করেছেন দুই শ রানের জুটিও। ৩৬৮ বলে এসেছে তাদের দ্বিশত রানের জুটি।
চার দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ টাইগার্সের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকেই শেষ দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে হাই পারফরম্যান্স ইউনিট (এইচপি)।
এইচপির দেয়া ২২৭ রানের জবাবে দিন শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান তোলে টাইগার্স।
প্রথম ইনিংসে এখনও এইচপি এগিয়ে ৩৩ রানে। দিন শেষে ৩৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। তৃতীয় দিনের শুরু থেকে তাকে সঙ্গ দেবেন নাঈম ইসলাম।
৬ উইকেটে ১৭৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে অল আউটের আগ পর্যন্ত মাত্র ১৯ দশমিক ১ ওভার খেলে এইচপি দল। ৭২ দশমিক ১ ওভারে ২২৭ এ গুটিয়ে যায় তারা।
দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান আসে অধিনায়ক আকবর আলির ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন মৃত্যুঞ্জয়।
বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে নাইম হাসান নেন ৫ উইকেট। ৩ উইকেট ঝুলিতে পুরেন হাসান মাহমুদ। আর একটি করে উইকেট নেন আবু জায়েদ রাহী ও তানভীর ইসলাম।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মৃত্যঞ্জয় চৌধুরী ফেরান নাঈম শেখকে। রিশাদ হাসানের তালুবন্দি হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৯ রান।
এরপর ইমরুল কায়েসকে ৪২ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ টাইগার্সকে ম্যাচে ফেরানোর কারিগর এই জুটি ভাঙ্গে ২৪ রান করা ইমরুল কায়েসের বিদায়ের মধ্য দিয়ে। তাকে সাজঘরের পথ দেখি ব্রেক থ্রু আনেন মুশফিক হাসান।
অল্পতেই ফিরতে হয় জাকির হাসানকে। মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর শিকার বনে মাঠ ছাড়ার আগে তিনি করেন ১৪ রান।
এরপর আরও একবার ফজলে মাহমুদ রাব্বিকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের মিশনে নামেন সৌম্য। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেট জুটি ৫০ পার করেন। পথিমধ্যে অর্ধশতক তুলে নেন সৌম্য।
হাফ সেঞ্চুরি বাগিয়ে নিয়েই তিনি ব্যাট চালানো শুরু করেন শতকের দিকে। কিন্তু শেষতক শতক বাগিয়ে নেয়া হয়নি তার। মুকিদুলের দ্বিতীয় শিকার বনে ৮১ রানে সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে।
এরপর রিপন মন্ডলের জোড়া শিকারে জাকের আলি ও নাঈম হাসান ফিরলে ফের ব্যাকফুটে পরে যায় বাংলাদেশ টাইগার্স। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রানের পুঁজি নিয়ে দিন শেষ করে তারা।
আরও পড়ুন:২০২২ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে চলছে মিউজিক্যাল চেয়ার। ১৫ জানুয়ারি সাউথ আফ্রিকা সফর শেষে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়েন ভিরাট কোহলি। এরপরের ৬ মাসে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ভারতের অধিনায়কের দায়িত্বে দেখা গেছে ৬ জন আলাদা স্কিপারকে।
সাউথ আফ্রিকা সফরে দলের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব বর্তেছিল রোহিত শর্মার কাঁধে। কিন্তু চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে গেলে অধিনায়কের দায়িত্ব পান কেএল রাহুল। এরপর শ্রীলঙ্কা সফরে নিজের ক্যাপ্টেন্সি ফিরে পান রোহিত।
উইন্ডিজের ভারত সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দলের দায়িত্বে ছিলেন এ অভিজ্ঞ ওপেনার।
সাউথ আফ্রিকার ভারত সফরের সময় রোহিত বিশ্রামে থাকায় অধিনায়কের দায়িত্ব আবার ফিরিয়ে দেয়া হয় রাহুলকে। কিন্তু এবার অধিনায়কত্ব করা হয়নি তার। কুঁচকির চোটের কারণে দলের বাইরে চলে যান তিনি। টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার ভার পড়ে রিশাভ পান্টের কাঁধে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্ট খেলার জন্য এরপর যুক্তরাজ্যে যায় কোহলি-পুজারারা। সেখানে টেস্ট দলের প্রস্তুতির পাশাপাশি আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে টিম ইন্ডিয়া।
ওই সিরিজে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেন হার্দিক পান্ডিয়া।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত খেলা শুরুর আগে আগে শনিবার কোভিড পজিটিভ হলে তিনি ছিটকে যান ম্যাচ থেকে। দলের অধিনায়কত্ব দেয়া হয় পেইসার জাসপ্রিত বুমরাহকে।
দলে সিনিয়র খেলোয়াড় কোহলি ও চেতেশ্বর পুজারা ছিলেন। কিন্তু তারা অধিনায়কত্বে আগ্রহী নন দেখে বুমরাহর কাঁধে দায়িত্ব চাপে। যে কারণে বার্মিংহামে শুক্রবার বেন স্টোকসের সঙ্গে টস করতে নামেন ২৯ টেস্ট খেলা এ পেইসার।
এতে করে ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত ৬ জন অধিনায়ক দেখল ভারতীয় ক্রিকেট দল। এমনটা এর আগে ১৯৫৯ সালে দেখেছিল ভারত।
ওই বছরে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেয়া ৬ জন ছিলেন গুলাম আহমেদ, ডিকে গায়কোয়াড়, গুলাবরাই রামচন্দ, হেমচন্দ্র অধিকারী, ভিনু মানকড ও পঙ্কজ রায়।
আরও পড়ুন:টেস্ট সিরিজের বাজে পারফরম্যান্সের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের গলায় একই সুর, ফরম্যাট বদল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টের পর যে সিরিজ খেলতে নামছে টাইগাররা সেটাতেও রেকর্ডটা বলার মতো না।
ওয়ানডেতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দল হয়ে ওঠা বাংলাদেশকে বেশ বেগ পেতে হয় টেস্টে। একই অবস্থা টি-টোয়েন্টিতেও। ওয়ানডেতে সাফল্যের ফরমুলা হাতের মুঠোয় আনলেও, সংক্ষিপ্ততম আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নজরকাড়ার মতো নয় মোটেও।
টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ১০ ম্যাচে মাত্র ১টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সে জয় এসেছে নিজ মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তার আগে পাকিস্তান সফরে তিন ম্যাচ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হার ও ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের ৫ ম্যাচের সবগুলোতে হেরেছে মাহমুদুল্লাহর দল।
এরই মধ্যে, জয়ের ধারায় ফিরতে মারিয়া বাংলাদশ উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টদের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারটায় শুরু হবে ম্যাচটি।
টি-টোয়েন্টি রেকর্ড খারাপ হলেও স্বাগতিক উইন্ডিজের বিপক্ষে রেকর্ডের দিকে তাকালে বাংলাদেশ আশাবাদী হতে হবে। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে ক্লিন সুইপ হওযার পরও টি-টোয়েন্টিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
সবমিলিয়ে উইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জয় পেয়েছে ৫টিতে। হেরেছে ৭টিতে আর ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত।
উইন্ডিজের বিপক্ষে ১০০তম টেস্ট হারের স্বাদ পাওয়া বাংলাদেশ এ পর্যন্ত মোট ১২৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ৪৪টিতে জয় পেয়েছে। হেরেছে ৭৯টিতে। ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে নামছে বাংলাদেশ। শেষ মুহুর্তে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মেহেদী মিরাজ ও তাসকিন আহমেদকে। এ দুইজন সরাসরি সুযোগ পেতে পারেন সেরা একাদশে।
দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজও দলে ব্যপক পরিবর্তন এনেছে। কাইরন পোলার্ড, ডোয়েইন ব্রাভো ও আন্ড্রে রাসেলদের মতো টি-টোয়েন্টির সুপারস্টাররা নেই। তাদের জায়গায় আছেন নির্ভরযোগ্য নিকোলাস পুরান ও হার্ড হিটা রভম্যান পাওয়েল ও ডেভন টমাসরা। বিশ্বকাপের আগে স্বাগতিক দলও খুঁজছে তাদের সঠিক কম্বিনেশন।
বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য): মাহমুদুল্লাহ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, এনামুল হক বিজয়, মুনিম শাহরিয়ার, নুরুল হাসান (উইকেটকিপার), আফিফ হোসেন, মেহেদী মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল (সম্ভাব্য): নিকোলাস পুরান (অধিনায়ক), ব্র্যান্ডন কিং, কাইল মায়ার্র্স, ডেভন টমাস (উইকেটকিপার), রভম্যান পাওয়েল, কিমো পল, রোমারিও শেফার্ড, আকিল হোসেন, আলজারি জোসেফ, ওডেন স্মিথ ও ওবেদ ম্যাকয়।
গল টেস্টে তৃতীয় দিন অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করতে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ২ উইকেট। সে কাজটা খুব সহজেই করেছেন লঙ্কান বোলাররা। আগের দিনের ৩১৩ রানের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া আর ৮ রান যোগ করতে লঙ্কান বোলাররা তুলে নেন প্যাট কামিন্স ও মিচেল সোয়েপসনের উইকেট ২টি।
১০৯ রানে পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা অস্ট্রেলিয়ার স্পিন তোপে ১১৩ রানে গুটিয়ে যায়। দুই অজি স্পিনার নেইথান লায়ন ও ট্র্যাভিস হেডের বোলিং তোপে লঙ্কান ব্যাটাররা টিকতে পারে ২২.৫ ওভার।
শ্রীলঙ্কায় গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুক্রবার স্বাগতিকদের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ের ফলে জয়ের জন্য মাত্র ৫ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে ১০ উইকেটের বড় জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। এ জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেলো প্যাট কামিন্সের দল।
অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ৪ বল খেলে ১ ছক্কা ও ১ চারের মারে ১০ রান করে তুলে নেন। ওরার্নারকে সঙ্গ দিতে নামা উসমান খোয়াজার কোনো বল খেলতে হয়নি।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার শুরুটা খারাপ ছিল না। দিমুথ করুনারত্নে আর পাথুম নিশাঙ্কা উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৩৭ রান। করুনারত্নেকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন লায়ন। ২০ বলে ২৩ রান করে আউট হন তিনি।
পরে ১৯ বলে ১৪ রান করে সোয়েপসনের শিকারে পরিণত হন নিশাঙ্কা। তারপর থেকেই লঙ্কানদের ব্যাটিং নামে ধস।
৮ রান করা কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন লায়ন। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস করোনা পজিটিভ হওয়ায় বদলি হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন ওসাদা ফার্নান্দো। তিনিও সুবিধা করতে পারেননি। ১২ রান করে সোয়েপসনকে উইকেট দেন তিনি।
ট্র্যাভিস হেডের স্পিন ঘুর্নিতে দিনেশ চান্দিমালকে বোল্ড করেন। পরের তিন ব্যাটার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, জেফরি ভ্যান্ডারসেকে, লাসিথ এমবুলদেনিয়াকেও শিকারে পরিণত করেন পার্টটাইমার এ অফস্পিনার।
আগের ২৬ টেস্টে কোনো উইকেট না পাওয়া হেড ১০ রানে তুলে নেন ৪টি উইকেট। অন্যদিকে ৩১ রানে ৪ উইকেট নেন লিয়ন।
১৮ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে দিশেহারায় শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা শেষ হয় তৃতীয় দিনের লাঞ্চের আগে।
আরও পড়ুন:দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট লুসিয়ার ক্যাস্ট্রিস ফেরি টার্মিনাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় মার্টিনেকের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল পার্লে এক্সপ্রেসের ফেরি। সে ফেরিতে করেই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল যাত্রা শুরু করে ডমিনিকার উদ্দেশে।
সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেক হয়ে ডমিনিকা যাত্রায় সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যেতে সাগর পার হতে হয় ফেরিতে করে।
সে যাত্রার শুরুতে ক্রিকেটাররা উপভোগ করেন। তবে বিপত্তি শুরু হয় মাঝসাগরে যাওয়ার পর।
সময় যত গড়াতে থাকে, ফেরিতে থাকা ক্রিকেটাররা অনুভব করতে থাকেন ঢেউ আর ফেরির দুলোনি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ভয়।
ফেরিতে ভ্রমণের এক পর্যায়ে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, বাঁহাতি পেইসার শরিফুল ইসলাম, উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান, ম্যানেজার নাফিস ইকবাল এবং সাপোর্ট স্টাফের এক সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ওই ক্রিকেটারদের অনেকে যাত্রার আগে ওষুধ খেয়ে নিয়েছিলেন। এরপরও তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন বমি করেন। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়েন ফেরির মেঝেতে।
ঘণ্টা দেড়েক ভয়ানক এ অভিজ্ঞতার পর মার্টিনেক নামক দ্বীপে দেয়া হয় যাত্রাবিরতি। সে সময় কয়েকজন ক্রিকেটার অনুরোধ করেন, তাদের যেন ভ্রমণের বাকি পথটুকু বিমানে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
যাত্রায় এ দ্বীপে বিরতি দিলেও বিমানের টিকিট জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। এতে করে বাকি পথ যেতে হয় ফেরিতে করেই। তবে বিরতির পরের যাত্রায় সাগর কিছুটা শান্ত থাকায় ক্রিকেটাররাও স্বস্তি পান। মনের ভয় দূর না হলেও বিকল্প উপায় না থাকায় বিষয়টি মেনে নিতে হয় তাদের।
দলের এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ ভ্রমণটা উপভোগ করেছেন। সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া ইবাদত হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন ও এনামুল হক উপভোগই করেছেন যাত্রাটা।
স্বস্তির খবর হচ্ছে এমন ভয়াবহ যাত্রা শেষে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডোমিনিকায় পৌঁছেছেন দলের সদস্যরা। তারা এখন বিশ্রামে আছেন।
সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিক। সবাই সুস্থ আছেন। পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ওরা ফেরিতে ভ্রমণ করার প্রস্তাব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে আমরা রাজি হয়েছি, তা নয়। ওরা যখন জানাল আর বিকল্প নেই, তখন তাদের ওপর নির্ভর করতে হবে। এই ফেরিতে প্রায় ২৫০ জনের বহর গেছে।’
ডোমিনিকায় ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে রোববার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ভয়ংকর যাত্রার পর বড় বিরতি না নিয়েই শুরু হচ্ছে মাঠের লড়াই।
আরও পড়ুন:রাজশাহীতে হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের বিপক্ষের একমাত্র চারদিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিন সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে শেষ করেছে বাংলাদেশ টাইগার্স। প্রথম দিন শেষে তারা এইচপি দলের ৬টি উইকেট তুলে নিয়েছে। বিপরীতে এইচপি দল স্কোরবোর্ডে তুলেছে ১৭৬ রান।
দিনশেষে ৩০ রানে অপরাজিত রয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তাকে ১৪ রানে সঙ্গ দিচ্ছেন অধিনায়ক আকবর আলি।
দিনের শুরুতে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের শুরুটা বেশ ভালো ছিল এইচপির। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও মাহফিজুল ইসলাম রবিনের ব্যাটে ভর করে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৬ রান তোলে এইচপি।
দলীয় ৪৬ রানে তামিম ও অমিত হাসানকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে ব্রেক থ্রু আনেন হাসান মাহমুদ। দ্রুত দুই উইকেট পতনের ধাক্কা সামলে নিয়ে শাহাদাত হোসেন দীপুকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন রবিন।
কিন্তু দলীয় ৭৩ রানে তাদের পথচলা থামিয়ে দেন নাঈম হাসান। ২১ রান করা দীপুকে মাঠছাড়া করেন মোহাম্মদ নাঈমের তালুবন্দি করে। অল্পতে ফিরতে হয় তৌহিদ হৃদয়কেও।
তবে উইকেটের একপ্রান্ত আগলে ধরে লড়াই চালিয়ে যান রবিন। কিন্তু হাসান মাহমুদের তৃতীয় শিকার বনে ৪৭ রানে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
শেষদিকে মৃতুঞ্জয় ও আকবর আলি জুটি গড়ে প্রথম দিনেই গুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষ করেন দলকে। এই দুইজনের ব্যাটে ভর করে দিনশেষে ১৭৬ রানের পূঁজি পায় এইচপি।
বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে তিনটি উইকেট নেন হাসান মাহমুদ। দুটি উইকেট নেন নাঈম হাসান ও রকটি উইকেট যায় আবু জায়েদ রাহীর ঝুলিতে।
আরও পড়ুন:জেমস অ্যান্ডারসনকে রেখে ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টের একদিন আগে একাদশ ঘোষনা করেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।
সদ্য শেষ হওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের বাইরে ছিলেন অ্যান্ডারসন। লিডসের ঐ টেস্টে তার জায়গায় অভিষেক ম্যাচ খেলেন পেইসার জেমি ওভারটন। বল হাতে ২ উইকেট নেন ওভারটন।
ইংল্যান্ডের হয়ে এ পর্যন্ত ১৭১ টেস্টে ৬৫১ উইকেট আছে অ্যান্ডারসনের। তার বোলিং পার্টনার স্টুয়ার্ট ব্রড ৫৫০ উইকেট থেকে একটি শিকার দূরে।
এদিকে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লিডস টেস্ট চলাকালীন করোনায় আক্রান্ত হন ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার বেন ফোকস। তার বদলে দ্বিতীয় ইনিংস থেকে মাঠে নামেন স্যাম বিলিংস। ভারতের বিপক্ষে টেস্টের একাদশেও জায়গা ধরে রেখেছেন তিনি।
তিন ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে ক্লিনসুইপ করে আকাশে উড়ছে ইংল্যান্ড। তবে ভারতের কাছে সিরিজ হার এড়াতে জয় ছাড়া অন্য কোন পথ নেই ইংলিশদের। কারণ প্রথম চার ম্যাচ শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে করোনার কারনে ম্যানচেস্টারে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার ৫ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের পঞ্চম ও শেষটি স্থগিত হয়।
ইংল্যান্ড একাদশ : বেন স্টোকস (অধিনায়ক), অ্যালেক্স লিস, জ্যাক ক্রলি, ওলি পোপ, জো রুট, জনি বেয়ারস্টো, স্যাম বিলিংস (উইকেটরক্ষক), ম্যাথিউ পটস, স্টুয়ার্ট ব্রড, জ্যাক লিচ ও জেমস অ্যান্ডারসন।
মন্তব্য