বেশ কিছুদিন ধরেই ক্রিকেটকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্পোর্টিং ইভেন্ট অলিম্পিকসে যুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি), কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি এখনও।
২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস আসরের জন্য নতুন ২৮টি ইভেন্টের একটি প্রাথমিক তালিকা জমা পড়েছে অলিম্পিকস কমিটির কাছে। সেখানে স্কেটবোর্ডিং, স্পোর্টস ক্লাইম্বিংয়ের মতো ইভেন্ট থাকলেও জায়গা হয়নি ক্রিকেটের।
তবে বিষয়টি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় আইসিসি। কেননা আইসিসি এখনও তাকিয়ে রয়েছে আয়োজক লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষের সুপারিশের দিকে।
আইসিসির আশা, আয়োজকের সুপারিশে বিশ্ব ক্রীড়ার এই মহাযজ্ঞে অন্তর্ভুক্ত হবে ক্রিকেট।
সংস্থাটির এক পরিচালক সম্প্রতি ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেই পরিচালক বলেন, ‘এই তালিকা সেসব ইভেন্টের, যেগুলো অলিম্পিকের নিয়মিত ইভেন্ট ও আগেও খেলা হয়েছে। আয়োজক শহরের কিছু সুপারিশ থাকে নতুন ইভেন্ট যোগ করার, যার প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী বছর। আমরা সেটার অংশ হব বলে আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অলিম্পিকসে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তির জন্য অনেক সময় আছে। আমাদের খেলার লক্ষ্যটা বদলে যায়নি। আমরা আমাদের লক্ষ্যেই আছি।’
এদিকে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক পর্যবেক্ষকের দাবি, আইসিসি অলিম্পিকসে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তির কাজটা শুরু করতে ঢিলেমি করেছে।
দেরিতে শুরু করায় তারা ক্রিকেটকে যোগ করাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করছেন তিনি।
আইসিসির সেই পর্যবেক্ষক বলেন, ‘২০২০ সালে একটা উপকমিটি করার পরও অলিম্পিকসে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির কাজটা আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে মাত্র চার মাস আগে। হ্যাঁ, ২০২৩ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের সুপারিশের আশা আইসিসি করতেই পারে, কিন্তু এটা মোটেও আশা করবেন না যে, আইসিসিকে জায়গা করে দিতে বাকিরা নিজেদের জায়গা থেকে সরে দাঁড়াবে।’
মূলত যুক্তরাষ্ট্র চাইছে দেশটির জনপ্রিয় খেলা বেসবল, সফটবলকে অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত করতে। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে আইসিসি।
এ লক্ষ্যে চলতি বছরের আগস্ট থেকে কাজ শুরু করে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ক্রিকেটে চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহে অধ্যায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও শ্রীলঙ্কান এই কোচকে তার আগেই বিদায় জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্সের নাম। তার সঙ্গে চুক্তিটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত।
মঙ্গলবার হঠাৎ করেই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেখানেই তিনি হাথুরুসিংহেকে ছাঁটাইয়ের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। সে সঙ্গে তাকে শো-কজও করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পায় যে, লঙ্কান হেড কোচকে ছাঁটাই করতে যাচ্ছে বিসিবি। তার পরপরই সংবাদ সম্মেলনে সার্বিক বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন বিসিবি সভাপতি।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে অসদাচরণ ও আচরণবিধি ভঙ্গের দায়েই মূলত হাতুরুকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।
ফারুক আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, আইনগত কিছু বিষয় থাকায় শুরুতে তাকে শো-কজ ও সাসপেন্ডের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তার পরই চুক্তি বাতিলের বিষয়টি আসবে। সব মিলিয়ে তাকে ছাঁটাইয়ের বিষয়টি পাকা করে ফেলেছেন তারা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান কোচের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছিলাম মানিয়ে নিতে। দুই-তিনটা ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছেমতো ছুটি কাটানো, জাতীয় দলের খেলোয়াড়ে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনা কোনোভাবেই দলের জন্য ভালো উদাহরণ ছিল না। তাই তাকে ৪৮ ঘণ্টার শো-কজ ও সাসপেনশন দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা স্থায়ী হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:বিপিএল ২০২৫- প্লেয়ার ড্রাফট শেষ হলো। পুরনো ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে ধরে রাখা, ড্রাফটের আগে সরাসরি চুক্তিতে আবদ্ধ করার পর ড্রাফট থেকে বাকি ক্রিকেটারদের নিয়ে দল সাজিয়েছে বিপিএলের সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। আসর শুরু হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে।
সোমবার রাজধানীর এক পাঁচতারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় আগামী বিপিএলের প্লোয়ার্স ড্রাফট।
পুরো অনুষ্ঠানে ছিল বেশ কিছু বিষ্ময়। দেশের তারকা খেলোয়াড় রিশাদ হোসেন দল পাননি অনেকটা সময় ধরে। আবার সাব্বির রহমান, শফিউল ইসলাম, মার্শাল আইয়ুবদের মতো অনেকে দীর্ঘদিন পর এসেও বিপিএলে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন।
ফরচুন বরিশালে জাতীয় দলের চার অধিনায়কের দেখা মিলবে। জাতীয় দলের একাধিক মুখ আর শক্তিশালী বিদেশি খেলোয়াড় দলে টেনেছেন তামিম ইকবালরা। নতুন করে বিপিএলে আসা দুর্বার রাজশাহী খুব বড় কোনো চমক দেখাতে পারেনি। কিছুটা চমক আছে ঢাকায়। লিটন দাস আর সাইম আইয়ুব আছে তাদের দলে।
আবার ড্রাফটের আগে একের পর এক চমক দেখানো চিটাগং কিংস ভক্তদের কিছুটা হতাশ করেছে ড্রাফটে এসে। কোনো বড় নামের পেছনে যায়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সিলেটে গিয়েছেন মাশরাফি মর্তুজা, আরাফাত সানি আর আল-আমিনের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। খুলনা নজরে রেখেছে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলের দিকে।
ফরচুন বরিশাল
দেশি: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তানভীর ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত, রিপন মন্ডল, ইবাদত হোসেন, নাঈম হাসান, রিশাদ হোসেন, তাইজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম।
বিদেশি: জেমস ফুলার, পাথুম নিশাঙ্কা, নান্দ্রে বার্গার।
ড্রাফটের আগে: তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, তাওহীদ হৃদয়, ফাহিম আশরাফ, ডেভিড মালান, কাইল মায়ার্স, মোহাম্মদ নবী।
দুর্বার রাজশাহী
দেশি: তাসকিন আহমেদ, জিশান আলম, ইয়াসির আলী, সাব্বির হোসেন, সানজামুল ইসলাম, এসএম মেহরাব হোসেন, আকবর আলী, হাসান মুরাদ, শফিউল ইসলাম, মোহর শেখ।
বিদেশি: সাদ নাসিম, লাহিরু সামারাকুন।
ড্রাফটের আগে: এনামুল হক বিজয়।
ঢাকা ক্যাপিটাল
দেশি: লিটন দাস, হাবিবুর রহমান, মুকিদুল ইসলাম, আবু জায়েদ, সাব্বির রহমান, মুনিম শাহরিয়ার, আসিফ হাসান, শাহাদাত হোসেন।
বিদেশি: সাইম আইয়ুব, আমির হামজা।
ড্রাফটের আগে: মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিদ হাসান তামিম, স্টিফেন স্কিনাজি, থিসারা পেরেরা, জনসন চার্লস, আমির হামজা, শাহনেওয়াজ দাহানি।
চিটাগং কিংস
দেশি: শামীম হোসেন, পারভেজ হোসেন, খালেদ আহমেদ, আলিস আল ইসলাম, মোহাম্মদ মিঠুন, নাঈম ইসলাম, মারুফ মৃধা, রাহাতুল ফেরদৌস, শেখ পারভেজ, মার্শাল আইয়ুব।
বিদেশি: গ্রাহাম ক্লার্ক, থমাস ও’কনেল।
ড্রাফটের আগে: সাকিব আল হাসান, শরিফুল ইসলাম, মইন আলি, উসমান খান, হায়দার আলি, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র ও বিনুরা ফার্নান্দো।
রংপুর রাইডার্স
দেশি: নাহিদ রানা, সাইফ হাসান, সৌম্য সরকার, রাকিবুল হাসান, রেজাউর রহমান, ইরফান শুক্কুর, কামরুল ইসলাম, তৌফিক খান।
বিদেশি: আকিফ জাভেদ, কার্টিস ক্যাম্ফার।
ড্রাফটের আগে: নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, অ্যালেক্স হেলস, ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহ।
সিলেট স্ট্রাইকার্স
দেশি: রনি তালুকদার, মাশরাফি বিন মুর্তজা, আল আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, রুয়েল মিয়া, আরিফুল হক, নিহাদুজ্জামান, নাহিদুল ইসলাম।
বিদেশি: রাহকিম কর্নওয়াল, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, রিস টপলি।
ড্রাফটের আগে: তানজিম হাসান সাকিব, জাকির হাসান, জর্জ মুনসি, পল স্টার্লিং।
খুলনা টাইগার্স
দেশি: হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ নাঈম, ইমরুল কায়েস, মাহিদুল ইসলাম, আবু হায়দার, জিয়াউর রহমান, মাহফুজুর রহমান, মাহমুদুল হাসান।
বিদেশি: মোহাম্মদ হাসনাইন, লুইস গ্রেগরি।
ড্রাফটের আগে: নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ।
আরও পড়ুন:তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে ২১ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া শেষ টেস্ট খেলতে দেশে ফিরবেন তিনি।
তবে গত আগস্টে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে সাকিবের সম্পৃক্ততার জন্য তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
সম্প্রতি একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারী জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনের সময় সাকিবের কর্মকাণ্ডের জন্য তার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রাফিতি প্রদর্শন করেছে। মিরপুরের ক্রিকেট স্টেডিয়াম এলাকায় সাকিবের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে দেয়াল লিখনও করেছেন তারা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, আন্দোলনের সময় দেড় হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। তারা বলছেন, আমরা চাই না সাকিব আবার বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ান। কারণ, তার সঙ্গে ফ্যাসিবাদী সরকারের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এদিকে সাকিবের দেশে ফিরে আসা কিংবা টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণে কোনো বাধা দেখছেন না ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া। রোববার গণমাধ্যেমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন অভিমত জানান।
সাকিবের উল্লেখ করে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি একজন ক্রিকেটার, তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে কোনো বাধা দেখছি না। ক্রিকেট দলসহ প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা সেটা নিশ্চিত করব।’
মিরপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাকিব ও বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার জার্সি পোড়ানোর বিষয়ে আসিফ মাহমুদ এই ক্ষোভকে আবেগের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই দুই ক্রিকেটার শেখ হাসিনা সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন।
সাকিব ফ্যাসিবাদী সরকারের সদস্য ছিলেন উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'আমরা অনেক বড় আন্দোলনের পর এখানে এসেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তবে এখনও কিছু আবেগ জড়িত রয়েছে।’
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে সাকিব আন্দোলনের সময় নিশ্চুপ থাকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নিজ শহর মাগুরার অগ্রগতির জন্য আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং কেবল অল্প সময়ের জন্য সংসদ সদস্য ছিলাম।’
আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে এবং সাকিবসহ তার দল আওয়ামী লীগের আরও অনেকের বিরুদ্ধে বেশকিছু হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
তবে ক্রীড়া উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সাকিব জড়িত না থাকলে মামলার ফাইল থেকে তার নাম বাদ দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:চলমান ভারত-বাংলাদেশ সিরিজে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। এই সময়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে অবকাঠামোগত ঘাটতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। বাংলাদেশে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হওয়ার মতো কেউ নেই- এমন অভিমত তার।
ভারতীয় ক্রীড়া পত্রিকা স্পোর্টস্টারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের ক্রিকেট বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তামিম। সূত্র: ইউএনবি
নিজের অবসর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা, সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার সম্পর্ক, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের চলমান সংকট এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে এমন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেন।
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তামিম কোনো বাংলাদেশি কোচের জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেয়ার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজারের বেশি রান এবং ২৫টি সেঞ্চুরির অধিকারী এই সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘ঢাকায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধীর উন্নয়নের একটি বড় কারণ।
‘২০০৬-২০০৭ সালে আমার অভিষেক হয় এবং ২০২৪ সালে এসে গত ১৭ বছরে ঢাকায় একটিও নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয় উচিত সে প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তামিম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু দিক ঠিক আছে। তবে বেশিরভাগেরই পরিবর্তন প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আর্থিক ব্যবস্থাপনারও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
বিসিবির আর্থিক ক্ষমতা দেখানোর জন্য পূর্ববর্তী বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান প্রায়ই ব্যাংকে শত শত কোটি টাকা থাকার কথা বলে গর্ব করতেন। তবে তামিম মনে করেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করার বদলে বোর্ডের উচিত অবকাঠামোগত উন্নয়নে তা বিনিয়োগ করা।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যখন বিসিবি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা থাকার দাবি করে, তখন এটা মুখে চড় মারার মতো মনে হয়। এই টাকা অলস পড়ে থাকা উচিত নয়। অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা থাকলেই চলবে। বাকি এক হাজার কোটি টাকা অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত উন্নতির জন্য তাদের আয় পুনর্বিনিয়োগ করে, যা বিসিবি করে না।’
ঢাকায় মিরপুরের মতো আরেকটি সুযোগ-সুবিধার অভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি সারা দেশে ভালো মানের উইকেটের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মিরপুরের মতো সুবিধা-সম্বলিত আরও স্টেডিয়াম অবশ্যই প্রয়োজন। নির্দিষ্ট কিছু উইকেটে নিজেদের শক্তির দিকে মনোযোগ দিয়ে খেলা ঠিক আছে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটেও মানসম্মত উইকেট তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
‘এভাবে আপনি আপনার ক্রিকেটারদের পরীক্ষা করে তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে তামিম বলেন, ‘প্রত্যাবর্তন বিবেচনা করার জন্য একটি সুস্পষ্ট পথ ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে।’
তবে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি তামিম স্পষ্ট না করলেও সেই সম্ভাবনাকে নাকচও করেননি।
সাকিবের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে তামিম কিছুটা অস্পষ্ট কথা বলেছেন এবং তাদের সম্পর্কের অবনতির কারণও স্পষ্ট করেননি।
তামিম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হওয়ার মতো কেউ নেই।’
তিনি প্রস্তাব দেন- বোর্ডের উচিত জাতীয় দলের জন্য কোচিং স্টাফ ৩০:৭০ অনুপাতে নিয়োগ করা, যেখানে ৩০ শতাংশ বিদেশি কোচ উচ্চ পদে থাকবেন এবং বাকি ৭০ শতাংশ স্থানীয় কোচ থাকবেন। এতে স্থানীয়রা ভবিষ্যতে আরও ভালো করার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন:টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ২০২১ সালের জুলাই মাসে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দিল্লিতে মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন, এই সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলার মধ্য দিয়ে তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি ঘটবে। আগামী শনিবার হায়দরাবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলে এই সংস্করণ থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি।
ক্যারিয়ারে পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘না, আমার কোনো আক্ষেপ নেই।’
কেনিয়ার বিপক্ষে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। এই সংস্করণে তিনি খেলেছেন ১৩৯টি ম্যাচ, করেছেন ৮ ফিফটি। স্ট্রাইক রেট ১১৭.৭৪।
ক্যারিয়ারজুড়ে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহকে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে ২০১৮ সালের মার্চে কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসটি দিয়ে, যেটিতে বাংলাদেশ পেয়েছিল শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়। আর ফিনিশিং ভূমিকায় নিজেকে সবচেয়ে সফলভাবে তিনি চিনিয়েছিলেন ২০১৬ এশিয়া কাপে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে আইসিসি এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দিলে এই সংস্করণে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বভার চাপে মাহমুদউল্লাহর কাঁধে।
অধিনায়কত্বের শুরুটা তার জয় দিয়ে, এই দিল্লিতেই ভারতের বিপক্ষে। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ খেলেছে তার নেতৃত্বে। তবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না- এই যুক্তিতে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এমনকি তিনি দল থেকেও বাদ পড়েন।
প্রায় দু’বছরের লম্বা বিরতি দিয়ে মাহমুদউল্লাহ গত মার্চে শ্রীলঙ্কা সিরিজে দলে ফেরেন। খেলেছেন সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। আবারও তার পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত ৩৯ ছুঁইছুঁই মাহমুদউল্লাহ সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে গিয়ে তরুণদের দলে জায়গা করে দিতে বিদায় বলে দিলেন টি-টোয়েন্টি সংস্করণকে।
আরও পড়ুন:টি-টোয়েন্টিতে ১২৮ রানের লক্ষ্য যে একেবারেই মামুলি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি বাংলাদেশি বোলাররা কোনো প্রতিরোধ গড়তে না পারায় সহজ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
গোয়ালিয়রে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে রোববার বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিকরা।
প্রথমে ব্যাট করে ইনিংসের এক বল বাকি থাকতেই ১২৭ রান করে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ১২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ ওভার ১ বল হাতে রেখেই তা টপকে যায় ভারত।
টি-টোয়েন্টিতে এটি ভারতের সর্বোচ্চসংখ্যক বল হাতে রেখে জয়ের রেকর্ড। এর আগে ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের দেয়া ১০০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪১ বল হাতে রেখে ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটিই ছিল তাদের সর্বোচ্চ বল হাতে রেখে জয়ের ঘটনা।
১২৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হন ভারতীয় ব্যাটাররা। মাঝে তিনটি উইকেট পড়লেও ভারতের রানের ফোয়ারা কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারেননি তাসকিন-মোস্তাফিজরা।
দলের হয়ে ১৬ বলে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন হার্দিক পান্ডিয়া। এছাড়া সূর্যকুমার যাদব ১৪ বলে ২৯ এবং ১৯ বলে ২৯ রান করেন ওপেনার সঞ্জু স্যামসন।
এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
আরও পড়ুন:নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শারজাহতে ১৬ রানে তারা হারিয়ে দিয়েছে স্কটল্যান্ডকে। টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং নেয় বাঘিনীরা। ব্যাটার ও বোলারদের সম্মিলিত অবদানে এসেছে এই জয়।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে গত চার আসরের হতাশা ঘোচানোর প্রত্যয় ঝরেছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠে। প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে সেই আশার বাতি আরও একটু জ্বেলে দিল দেশের মেয়েরা। সে সঙ্গে ঘুচল টানা ১৬ ম্যাচ হারার কলঙ্কও।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে দুটি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন সোবহানা মোস্তারি। এছাড়া ওপেনার সাথী রানী ২৯ ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা করেন ১৮ রান।
স্কটিশদের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন সাস্কিয়া হর্লি। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন অধিনায়ক ক্যাথরিন ব্রাইস, অলিভিয়া বেল ও ক্যাথরিন ফ্র্যাজার।
১২০ রানে জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৩ রান তুলতে সমর্থ হয় স্কটল্যান্ডের মেয়েরা।
স্কটল্যান্ডের হয়ে অপরাজিত থেকে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন ওপেনার সারাহ ব্রাইস। তিনি ছাড়া আর মাত্র দুজন ব্যাটার ১১ রান করে করতে পেরেছেন।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট নিয়েছেন রিতু মনি। এছাড়া একটি করে উইকেট পান মারুফা আক্তার, নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন ও রাবেয়া খান।
বিশ্বকাপের শুরুতেই জিতে নিশ্চিতভাবেই খানিকটা আত্মবিশ্বাস বাড়বে নিগার সুলতানার দলের। আগামী শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে তারা।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অপর প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগামী ১০ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ১২ অক্টোবর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাঠে নামবেন নিগার সুলতানারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১১৯/৭ (নিগার ৩৬, সাথী ২৯; হর্লি ৩/১৩)।
স্কটল্যান্ড: ১০৩/৭ (সারাহ ব্রাইস ৪৯*, ক্যাথরিন ১১, আইলসা লিস্টার ১১; রিতু ২/১৫, মারুফা ১/১৭, নাহিদা ১/১৯)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রিতু মনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য