২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর স্টিভ রোডসকে বিদায় করে দুই বছরের চুক্তিতে টাইগারদের হেড কোচের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছিল রাসেল ডমিঙ্গোর হাতে। অক্টোবরের ২১ তারিখ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নেন জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব।
মূলত জাতীয় দলের হাই পারফরম্যান্স ইউনিট (এইচপি) দলের কোচ হিসেবে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু বিসিবি কর্তারা সাকিব-মুশফিকদের কোচিংয়ের দায়িত্ব সঁপে দিয়েছিলেন এই প্রোটিয়ার হাতে।
দায়িত্ব বুঝে নিয়েই ব্যর্থতার প্রমাণ দেয়া শুরু করেন এই প্রোটিয়া। ঘরের মাঠে নবাগত টেস্ট খেলুড়ে দল আফগানিস্তানের কাছে লাল বলের খেলায় হেরে বসে বাংলাদেশ দল। এরপর ভারত ও পাকিস্তান সফর থেকেও ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
এরপর করোনার প্রভাবে লম্বা সময় খেলা গড়ায়নি মাঠে। করোনার বিরতি কাটিয়ে মাঠে খেলা ফিরলেও ভাগ্য খুব একটা বদলায়নি টাইগারদের। হারতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও।
এরপর নতুন এক ‘থিওরি’ বের করেন প্রোটিয়া এই কোচ। ঘরের মাঠ শেরে বাংলায় নিজের ইচ্ছেমতো ক্রিকেটের অযোগ্য পিচ বানিয়ে শুরু করেন খেলা। আর তাতেই দেখতে পান সাফল্যের মুখ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় আর জিম্বাবুয়ে সফরের পারফরম্যান্সের পর কিছুটা স্বস্তি ফেরে।
সবশেষ মিরপুরের বধ্যভূমিতে দুই পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আকাশে উড়তে থাকেন ডমিঙ্গো। আর উড়তে উড়তেই দলকে নিয়ে যান বিশ্বকাপের মঞ্চে।
কিন্তু শেরে বাংলার বাজে উইকেটে খেলার পরিণামটা বিশ্বকাপে বেশ বাজেভাবেই দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আফ্রিকান কোচের ‘দুর্দান্ত ফর্মের’ সার্টিফিকেট নিয়ে বাছাইপর্বে টেনেটুনে পাস করলেও, বাংলাদেশ ফেল করেছে বিশ্বকাপের মূল পর্বে গিয়ে। একটি ম্যাচেও জয়ের মুখ দেখা হয়নি ডমিঙ্গো শিষ্যদের।
জাতীয় দলের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর কোচ হিসেবে তার অধীনে এখন পর্যন্ত তামিম-মাহমুদুল্লাহরা মাঠে নেমেছেন ৬০টি ম্যাচে। এই ৬০ ম্যাচের ভেতর মাত্র ২৯ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। শতকরার হিসাবে সেটি ৫০ শতাংশেরও কম।
১০ টেস্টে ৭টি, ১৫ ওয়ানডেতে ৪টি আর ৩৫ টি-টোয়েন্টির ১৮টিতেই হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
সবশেষ সদ্য বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে দেশে ফেরার আগে বাছাইপর্বের ম্যাচসহ মোট আট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে ব্যর্থতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ৬ ম্যাচেই হারতে হয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিদের।
জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে কোচ হিসেবে এক প্রকারে ব্যর্থই বলা চলে ডমিঙ্গোকে। ব্যর্থতার বেড়াজালে আটকে থাকার পরও কোনো এক অজানা কারণে ডমিঙ্গোকে ছাড়তে চাইছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা।
ব্যর্থতার পাশাপাশি অভিযোগের কমতি নেই ডমিঙ্গোর বিপক্ষেও। এর ভেতর বহুল আলোচিত অভিযোগটি ছিল দলের ভেতর সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি করার। একই সঙ্গে অভিযোগ রয়েছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের।
বিশ্বকাপের আগে থেকে বোর্ড সভাপতি চুক্তি বাড়ানোর কথা জানিয়ে দেয়ার পর বিশ্বকাপের মাঝপথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রোটিয়া এই কোচের সঙ্গে দুই বছর চুক্তি বাড়িয়েছে বোর্ড। তাও আবার সেই চুক্তিতে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ডমিঙ্গো।
চুক্তি অনুযায়ী আগামী এক বছর বিসিবি তাকে চাইলেই চাকরিচ্যুত করতে পারবেন না। যদি কোনো কারণে চুক্তি ভাঙতে হয় তাহলে প্রায় দুই কোটি টাকা তাকে বাধ্যতামূলকভাবে দিয়ে বিদায় জানাতে হবে।
আর এই বিষয়টিই পুরোপুরি অযৌক্তিক মনে করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন।
জামিল বলেন, ‘ডমিঙ্গোর সঙ্গে যেই ছয় মাসের ক্লজ রয়েছে, সেটা বিসিবি কেন করল সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। এই শর্তটাসহ বিসিবি কেন চুক্তিটা করল সেটাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এই শর্তটার কারণে ব্যর্থতার পরও তাকে বাদ দেয়া যাচ্ছে না। এটাই হচ্ছে মূল সমস্যা।’
বিশ্বকাপের মিশন শেষ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দেশে ফেরার দিন থেকেই গুঞ্জন উঠতে থাকে টিম ম্যানেজমেন্টে বড় পরিবর্তনের। গুঞ্জন ওঠে ডমিঙ্গোকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে বিসিবি, তার স্থলাভিষিক্ত করা হবে জনপ্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে।
সেই ঘটনার দিন দুয়েক পর সালাহউদ্দিনকে সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাবনা পাঠানো হয় বিসিবির পক্ষ থেকে। যদিও সালাহউদ্দিন আরও কয়েকটি দলের কোচ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ থাকায় নাকচ করে দেন বোর্ডের প্রস্তাব।
কেন নাকচ করেছেন সেটি না জানালেও সালাহউদ্দিনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জামিল জানান, এখনই দেশীয় কোচের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়াটা যুক্তিযুক্ত হবে না। তাদের আগে জাতীয় দলের পরিবেশটা বুঝতে হবে। শুরুতে সহকারী কোচের দায়িত্ব দিয়ে তারপর হেড কোচের পদে বসানোটাই উপযুক্ত হবে বলে মনে করছেন তিনি।
জামিল বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলাম, দেশীয় কোচদের আস্তে আস্তে তৈরি করতে হবে। অনেক আগে থেকেই তাদের জাতীয় দলে অ্যাসিসট্যান্ট কোচ হিসেবে রাখলেও তো কোনো সমস্যা ছিল না। এই প্রক্রিয়াটা তো আমরা অনুসরণ করছিলাম না। এখন হুট করে তাদের দায়িত্ব দিয়ে দিলে সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে সেখানে কিন্তু সন্দেহ থেকেই যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন ধরে তো বিদেশি স্টাফ দিয়ে চালানো হচ্ছিল, হঠাৎ করেই জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব একজন দেশি কোচকে দিলে ফলাফল কতটা পজিটিভ হবে সেটা বলা আসলেই মুশকিল। আমরা যেটা বলে আসছিলাম, সেই প্রক্রিয়াটা যদি বিসিবি অনুসরণ করত, তাহলে সহজেই কিন্তু সালাহউদ্দিনের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়া যেত।’
সাবেক এই বোর্ড পরিচালক মনে করেন দেশীয় কোচ দিয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের কোচিংয়ের সুযোগ এখনই শেষ হয়ে যায়নি। দেশীয় কোচদের ধীরে ধীরে জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করারও তাগিদ দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জামিল বলেন, ‘এখনও সুযোগ আছে। সুজন টিম ডিরেক্টর হয়েছে। এখন যদি ডমিঙ্গোকে রাখতেই হয়, সালাহউদ্দিনকে সহকারী কোচ হিসেবে রাখা যেতে পারে, যাতে সে আস্তে আস্তে দায়িত্ব বুঝে নিতে পারে। এ রকম একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গেলে সেটা আমি মনে করি ভালো হবে।’
নতুন চুক্তিমতে ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ হিসেবে থাকবেন ডমিঙ্গো। ফলে আরও দুটি বিশ্বকাপ তার অধীনে খেলা লাগবে টিম টাইগার্সের। এখন দেখার বিষয় ডোমিঙ্গো কি পারবেন জাতীয় দলের ভাগ্য ফেরাতে? পারবেন কি তার নামের অভিযোগগুলো মেটাতে? প্রশ্নটা তোলা থাকল।
আরও পড়ুন:প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিয়েছেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকত। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সৈকতের এ কীর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইসিসি।
বৃহস্পতিবার আইসিসি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইসিসির বার্ষিক পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সৈকতকে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেল থেকে এলিট প্যানেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আইসিসি আম্পায়ারদের ‘ইমার্জিং’ প্যানেলের ওপরের দিকে ছিলেন সৈকত। সেখান থেকে যে কয়জন আম্পায়ার এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন, তাদের চেয়ে এগিয়েই ছিলেন তিনি।
কিছুদিন আগে আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস অবসরে গেছেন। তার অবসরের পর জায়গাটি ফাঁকা পড়ে ছিল। সেই জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন সৈকত।
এক্ষেত্রে আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার-ক্রিকেট ওয়াসিম খান (চেয়ারম্যান), সাবেক খেলোয়াড় ও ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, নিউজিল্যান্ডের সাবেক আম্পায়ার টনি হিল এবং কনসালট্যান্ট অফিসিয়েটিং এক্সপার্ট মাইক রাইলি বড় ভূমিকা রেখেছেন।
কারণ তাদের পরামর্শেই আইসিসি এলিট প্যানেলের দরজা খুলে গেছে সৈকতের। তারা আইসিসির একটি নির্বাচক প্যানেলে আছেন। তাদের ওপরই দায়িত্ব ছিল এলিট প্যানেলের জন্য একজন আম্পায়ারকে নির্বাচিত করার।
এলিট প্যানেলে যোগ দিতে পেরে দারুণ আনন্দিত সৈকত।
আইসিসিকে দেয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার দেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এই প্যানেলে আসতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। আমার ওপর যে আস্থা রাখা হয়েছে তার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করব। কয়েক বছর ধরে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার মাধ্যমে সামনে দিনের চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত।’
২০১০ সালে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হয় সৈকতের। এরই মধ্যে পুরুষদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে ইতোমধ্যে একশর বেশি ম্যাচ পরিচালনা করে ফেলেছেন তিনি।
আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালনের মতো অভিজ্ঞতাও তার ঝুলিতে রয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট সিরিজে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের এই আম্পায়ার।
শুধু তা-ই নয়, গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
এক নজরে আইসিসির এলিট প্যানেল অফ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি
আম্পায়ার: কুমার ধর্মসেনা (শ্রীলঙ্কা), ক্রিস্টোফার গ্যাফানি (নিউজিল্যান্ড), মাইকেল গফ (ইংল্যান্ড), অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক (দক্ষিণ আফ্রিকা), রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড), রিচার্ড কেটলবরো (ইংল্যান্ড), নিতিন মেনন (ভারত), আহসান রাজা (পাকিস্তান), পল রাইফেল (অস্ট্রেলিয়া), শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ (বাংলাদেশ), রডনি টাকার (অস্ট্রেলিয়া) এবং জোয়েল উইলসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
ম্যাচ রেফারি: ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া), জেফ ক্রো (নিউজিল্যান্ড), রঞ্জন মাদুগালে (শ্রীলঙ্কা), অ্যান্ড্রু পাইক্রফট (জিম্বাবুয়ে), রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এবং জাভাগাল শ্রীনাথ (ভারত)।
আরও পড়ুন:অস্ট্রেলিয়ার কাছে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ নারী দল।
বুধবার সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে ১১৮ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছিল টাইগ্রেসরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষীক ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল নিগার সুলতানার দল। এই প্রথমবার ঘরের মাঠে প্রথম কোন ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা। তবে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে তিন ম্যাচের সিরিজে এই নিয়ে তৃতীয়বার হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। এর আগে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের কাছে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিলো টাইগ্রেসরা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে সিরিজে প্রথমবার টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে খালি হাতে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সুমাইয়া আকতার। পরের ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন আরেক ওপেনার ৫ রান করা ফারজানা হক।
৮ রানে ২ ওপেনারকে হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুরশিদা খাতুন ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। কিন্তু ২৮ বলে ১৬ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি দুজন। ২১ বলে ১টি চারে ৮ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন মুরশিদা।
১১তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে নামা রিতু মনি ১ ও ফাহিমা খাতুন খালি হাতে বিদায় নেন। এতে ৩২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন নিগার ও স্বর্ণা আকতার। সাবধানে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তারা।
কিন্তু দলীয় ৫৩ রানে বিচ্ছিন্ন নিগার ও স্বর্ণা। ২টি চারে ৩৯ বলে ১৬ রান করেন নিগার। জুটিতে ৩৯ বলে ২১ রান যোগ করেন নিগার ও স্বর্ণা।
এরপর ১০ রানের ব্যবধানে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যাবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৬৩ রানে নবম উইকেট পতন হয় তাদের। কিন্তু দশম উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের উপর চড়াও হন শেষ দুই ব্যাটার সুলতানা খাতুন ও মারুফা আকতার। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ১শর রানের এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সুলতানা আউট হলে ৮৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। শেষ উইকেটে ২২ বল খেলে ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৬ রানের জুটি গড়েন সুলতানা-মারুফা। ২টি চারে ১০ রানে সুলতানা আউট হলেও ১টি বাউন্ডারিতে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন মারুফা। অস্ট্রেলিয়ার কিম গ্যারেথ ১১ রানে ও অ্যাশলে গার্ডনার ২৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
৯০ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ বল বাকী রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া নারী দল। নবম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট শিকার করেন অফ-স্পিনার সুলতানা। ফোবি লিচফিল্ডকে ১২ রানে আউট করেন সুলতানা। ১৩তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলিকে ৩৩ রানে আউট করেন লেগ-স্পিনার রাবেয়া খান। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন এলিসা পেরি ও বেথ মুনি। পেরি ২৭ ও মুনি ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের সুলতানা ও রাবেয়া ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন গ্যারেথ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেন গার্ডনার।
সিরিজটি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ ছিলো। এখন অবধি ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া। সমানসংখ্যাক ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তমস্থানে আছে বাংলাদেশ। আগামী ৩১ মার্চ থেকে মিরপুরের ভেন্যুতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দলের সঙ্গে থাকছেন না হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ব্যক্তিগত কারণে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন তিনি।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দিয়ে বিসিবি জানায়, দ্বিতীয় টেস্টে হাথুরুসিংহের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কোচ নিক পোথাস।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতে বাংলাদেশ। এরপর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হারে টাইগাররা।
আগামী ৩০শে মার্চ চট্টগ্রামে মাঠে গড়াবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। এই টেস্টের জন্য দলে ডাক পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও হাসান মাহমুদ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই টেস্টে দলে ফিরছেন সাকিব আল হাসান, ফেরানো হয়েছে পেসার হাসান মাহমুদকেও।
সাকিব ফেরায় কপাল পুড়েছে তৌহিদ হৃদয়ের। ফলে লাল বলের ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষাটা তার আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আগামী ৩০ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। প্রথম ম্যাচে শোচনীয় হারের পর সাকিব দলে ফেরায় তাই দলের আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও বাড়বে।
গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট খেলেছেন সাকিব। এরপর বিশ্রাম ও চোটের কারণে প্রায় এক বছর সাদা পোশাকে মাঠে নামা হয়নি তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজেও বিশ্রামে ছিলেন এ অলরাউন্ডার।
লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে সাকিবের পরিসংখ্যানটা দারুণ। এই ফরম্যাটে ৯ টেস্ট ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে ৩৮.১৮ গড়ে ৬১১ রান করেছেন সাকিব। এছাড়া বল হাতে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট।
এ ছাড়াও দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে বাদ পড়েছেন পেসার মুশফিক হাসান। প্রথম ম্যাচে না খেললেও চট্টগ্রাম টেস্টের আগে চোটে পড়েছেন তিনি। গোড়ালির চোটের কারণে তিনি ছিটকে যাওয়ায় তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন হাসান মাহমুদ।
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ স্কোয়াড
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, লিটন দাস, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
আরও পড়ুন:সিলেটে শুক্রবার শুরু হওয়া টেস্টের এক দিন বাকি থাকতেই শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ৫১১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিন সোমবার পার না হতেই ৩২৮ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা।
সফরকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ শিবিরে ধস নামান কাসুন রাজিথা, যিনি ১৪ ওভার বল করে ৫৬ রান খরচায় তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। এ ছাড়া বিশ্ব ফার্নান্দো তিনটি ও লাহিরু কুমারা পান দুটি করে উইকেট।
টস হেরে প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা করেছিল ২৮০ রান। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ধনঞ্জয় ডি সিলভার ১০২ রানের পর দ্বিতীয়টিতে তার ব্যাট থেকে আসে ১০৮ রান। দলের টেস্ট অধিনায়কের জোড়া এ শতকের সুবাদে দুই ইনিংসেই রানের ভিত মজবুত করার সুযোগ পায় সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৮ করে পাঁচ শর বেশি রানের লিড নিয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে শ্রীলঙ্কা।
দলটির দেয়া বিশাল এ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ইনিংসের চেয়ে কম ১৮২ রান করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
প্রথম টেস্টে পরপর দুই সেঞ্চুরি করে দলের জয়ে মূল ভূমিকা রাখা ধনঞ্জয় ডি সিলভা হয়েছেন প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ।
আরও পড়ুন:সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বিশাল সংগ্রহ করতে না পারলেও এরই মধ্যে আড়াই শর বেশি রানের লিড নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
ম্যাচের তৃতীয় দিন রোববার এ প্রতিবেদন লেখার সময় ৫১ ওভার শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান করে সফরকারী দলটি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৮০ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের চাকা। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
দুই শর আগেই স্বাগতিকদের সব উইকেট তুলে নেয়া শ্রীলঙ্কা লিড পায় ৯২ রানের, তবে প্রায় ১০০ রানে এগিয়ে থাকা দলটি দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিংয়ে দাপট দেখাতে পারেনি।
দলীয় ১৯ রানে নিশান মাদুশকা আউট হওয়ার পর ৩২ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কুশল মেন্ডিস। এ ছাড়া ৬০ রানের মাথায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও ৬৪ রানের সময় প্যাভিলিয়নে ফেরেন দিনেশ চান্ডিমাল।
এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন দিমুথ করুণারত্নে। তার ৫২ রানের সুবাদে ধীরে ধীরে রান বাড়তে থাকে শ্রীলঙ্কার। এর সঙ্গে অপরাজিত দুই ব্যাটার ধনঞ্জয় ডি সিলভার ৫৪ ও কামিন্দু মেন্ডিসের ২৫ রান লিড বাড়াচ্ছে সফরকারীদের।
এর আগে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা।
আরও পড়ুন:সিলেট টেস্টে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার করা ২৮০ রানের জবাবে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান করেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের প্রথম দিন শুক্রবার ২৪৮ রানে পিছিয়ে থেকে শনিবার দ্বিতীয় দিন শুরু করে স্বাগতিকরা। মাঠে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ব্যাটাররা।
চতুর্থ উইকেটে দলীয় ৫৩ রানে মাহমুদুল হাসান জয়ের পতনের পর লিড নেয়ার মতো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ।
তাইজুল ইসলামের ৪৭ ছাড়া উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি কেউই। এর ফলে ৯২ রানে পিছিয়ে থেকেই প্রথম ইনিংসে থামতে হয় টাইগারদের।
শ্রীলঙ্কার হয়ে বিশ্ব ফার্নান্দো চারটি এবং কাসুন রাজিথা ও লাহিরু কুমারা তিনটি করে উইকেট পান।
মন্তব্য