বাংলাদেশ দল বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে গেলেই সরব হয়ে ওঠে দেশের সংবাদমাধ্যম। সরব হয়ে ওঠেন বিসিবি সভাপতি। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যতিক্রম হয়নি।
বিশ্বকাপ চলাকালীন সংবাদমাধ্যমের কাছে দল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সমালোচনা করেছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহসহ অন্য দুই সিনিয়র খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের। পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ম্যাচ শেষ করে টাইগার অধিনায়ক জবাব দেন কিছু সমালোচনার।
মাহমুদুল্লাহ দলের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান। বিসিবি সভাপতি পালটা বক্তব্য দেন অধিনায়কের। ইঙ্গিত দেন, বিশ্বকাপ শেষে দলের দায়িত্ব নাও থাকতে পারে তার কাঁধে।
গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট চলার সময়ে সংবাদমাধ্যমে আসা এসব চটকদার খবরে অবশ্য মাথা ঘামাচ্ছেন না বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। মূল পর্বে যাত্রা শুরুর আগের দিন সংবাদসম্মেলনে তিনি জানান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের রণকৌশল নিয়ে ব্যস্ত তিনি। অন্য কিছু নয়।
ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমি এখানে শুধু ক্রিকেটে ফোকাস করতে চাই। দলের বাইরে কী বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। দলকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কালকের (রোববার) চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তৈরি করা আমার লক্ষ্য।’
সমালোচনা কেনো হচ্ছে? কে করছে বা কোন উদ্দেশ্যে হচ্ছে সেসব প্রশ্নের ধার না ধেরে পেশাদার কোচের মতোই ডমিঙ্গো জানালেন দলের মনোযোগ এখন মাঠের খেলায়।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় যখন পারফরম্যান্স খারাপ হবে তখন সমালোচনা নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক স্পোর্টসের অংশই এটি। কোচিংয়ের অন্যতম দিক হচ্ছে যে বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে সেটা নিয়ে কাজ করা।
‘মানুষ কী বলছে বা লিখছে সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা নিজেদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে পারি। কোন জায়গায় উন্নতি দরকার সেটা নিয়ে চিন্তা করতে পারি। মাঠের বাইরে কী হচ্ছে সেটা নিয়ে চিন্তা করলে মাঠের আসল কাজ, ক্রিকেট খেলা, তা থেকে আমাদের ফোকাস সরে যাবে।’
কঠিন বাছাইপর্বের পর ডমিঙ্গো ও তার শিষ্যদের মূলপর্বের চ্যালেঞ্জ শুরু হচ্ছে রোববার থেকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিকেল চারটায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ।
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের হৃৎপিণ্ডে রিং পরানো হয়েছে।
বর্তমানে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।
ইউএনবিকে সোমবার এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘তাকে রিং পরানো হয়েছে নিশ্চিত। প্রথমে মাঠে খেলার সময় তার বুকে ব্যথা ওঠে। আমরা তাকে হাসপাতালে পাঠাই। তাকে যখন হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছিল, তখন আবার বুকে ব্যথা শুরু হয়।
‘হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যথা ওঠে। এরপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকসহ তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসা বিভাগের প্রধান দেবাশীষ চৌধুরী সাংবাদমাধ্যমকে জানান, তামিমের দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। এ মুহূর্তে তিনি সেখানেই ভর্তি।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এ ক্রিকেটারকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:চেক ডিজঅনার মামলায় ক্রিকেটার ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতের পেশকার রিপন মিয়া বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর তিনজন হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী শাহাগীর হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
আদালত ১৫ ডিসেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৯ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি পরে এ মামলায় জামিন নেন।
আজ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, সাকিবের মালিকানাধীন অ্যাগ্রো ফার্ম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। তার বিপরীতে দুটি চেক ইস্যু করে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। দুই চেকে টাকার পরিমাণ প্রায় চার কোটি ১৫ লাখ।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তামিম ইকবাল।
তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ইউএনবিকে সোমবার দুপুরে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনীরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে বিকেএসপির পাশে ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিকেএসপি থেকে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক সবকিছুসহ তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। আমাদের কর্মকর্তা ও ক্রিকেটের প্রশিক্ষকরা ওখানে আছেন।
‘ঢাকা থেকেও টিম আসছে। আমাদের কর্মকর্তা-চিকিৎসক সেখানে আছে। বিকেএসপির মাঠে হেলিকপ্টার অপেক্ষা করছে। দেখি কী করা যায়।’
টাইগারদের সাবেক এ ক্যাপ্টেনের শরীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে মুনীরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্ভবত একটা এনজিওগ্রাম হয়েছে। এরপর তিনি স্থিতিশীল আছেন।’
মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘তামিম ইকবাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন। আমরা সবাই তার সুস্থতা কামনা করছি।’
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন তামিম। অধিনায়ক হিসেবে টসেও অংশ নেন।
এরপর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করায় তামিমকে বিকেএসপিতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় বিকেএসপির পাশে সাভারের ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে। তিনি সেখানে ভর্তি রয়েছেন।
তামিমের অসুস্থতার খবরে বিসিবির বোর্ড সভা স্থগিত করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় ১৯তম বোর্ড সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল।
তামিমকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে রবিবার সফলভাবে আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ টুর্নামেন্টে সিইউবির বিভিন্ন বিভাগের প্রতিযোগী দলগুলো অংশগ্রহণ করে। ব্যতিক্রমী ক্রিকেটিং দক্ষতা ও দলগত কাজ খেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলে।
গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজনে ব্ল্যাকআউটস এবং সিইউবি অলস্টারদের মধ্যে দুর্দান্ত ম্যাচ হয়।
সিইউবি ব্ল্যাকআউটস দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা অর্জন করে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাফিন।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ ও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক এবং উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. গিয়াস উ আহসান।
সিইউবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত ইভেন্টটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল।
সোমবার মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিপিএলের এবারের আসর শুরু হয়েছে।
আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ফাহিম আশরাফের ৮৮ রানের জুটি বরিশালের জয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে।
১৯৮ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে পৌঁছতে মাঠে নেমে বরিশাল তাদের ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে হারায়। জিসান আলমের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি।
পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই আরও দুই উইকেট হারিয়ে তিন উইকেটে ৩০ রান তুলতে সক্ষম হন তারা।
এরপর তৌহিদ হৃদয় ২৩ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে শুরুর ধাক্কা সামলে নেয়। কিন্তু কাইল মেয়ার্স (৫) ও মুশফিকুর রহিম (১৩) দ্রুত আউট হওয়ায় বরিশাল আরও বিপদে পড়ে যায়।
অর্ধেক ওভার মাঠে গড়ানোর আগেই বরিশাল অর্ধেক উইকেট হারিয়ে বসে। ১৩তম ওভারে নিজেদের ষষ্ঠ উইকেট হারায় তারা।
ম্যাচের এই পর্যায়ে মাহমুদউল্লাহ ও আশরাফি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জয়ের শক্তিশালী জুটি গড়েন। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ বল হাতে রেখে চার উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা।
এর আগে ইয়াসিরের ৪৭ বলে অপরাজিত ৯৪ ও এনামুলের ৫১ বলে ৬৫ রানের ওপর ভর করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ১৯৭ রানের বড় স্কোর করে দুর্বার রাজশাহী।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে আসা দুর্বার রাজশাহী ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জিসান আলমকে শূন্য রানে আউট করেন কাইল মায়ার্স। স্কোর বোর্ডে ২৫ রান উঠতেই রাজশাহী দ্বিতীয় উইকেট হারায়।
বরিশাল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪০ রানের জুটি গড়েন এনামুল ও ইয়াসির। ১৮তম ওভারে পতনের আগে এনামুল ৫১ বলে ৪টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ৬৫ রান করে দলকে এগিয়ে নেন। তবে উইকেটের অপর প্রান্তে ছিলেন ইয়াসির। সাতটি ৪ ও আটটি ছক্কায় ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
বছরের পর বছর ধরে বিপিএল থেকে ছিটকে পড়া মায়ার্স প্রত্যাবর্তন করে রাজশাহীর হয়ে দুটি উইকেট নেন।
এদিকে টিকিট নিয়ে সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তারা স্টেডিয়ামের একটি গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জও করে।
আরও পড়ুন:জাকের আলির বিস্ফোরক ইনিংসের সুবাদে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে শুক্রবার ৮০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে আইসিসি পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিপক্ষে রান বিবেচনায় সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
আগেরটি ছিল চট্টগ্রামে গত বছর মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রানের।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ যথাক্রমে ৭ ও ২৭ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এই প্রথম তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
২০১২ সালে সর্বশেষ বিদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ।
সেন্ট ভিনসেন্টে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে ৪৪ রানের সূচনা পায় টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ৪ ওভারে ১৫ বলে ২৯ রান তোলেন ইনজুরি আক্রান্ত সৌম্য সরকারের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া ইমন।
পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার রোমারিও শেফার্ডের বলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন ওপেনার ও অধিনায়ক লিটন দাস। তিনটি চারে ১৪ রান করেন লিটন।
দারুণ শুরুর পর পাওয়ার প্লের শেষ বলে বিদায় নেন ইমন। পেসার আলজারি জোসেফের বলে স্কয়ার লেগে জাস্টিন গ্রেভসকে ক্যাচ দেন চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ২১ বলে ৩৯ রান করা ইমন।
তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে এবারও ব্যর্থ হন তানজিদ হাসান। ৯ রান করে স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরানকে ক্যাচ দেন তানজিদ। এতে দলীয় ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
উইকেট পতন ঠেকিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৩১ বলে ৩৭ রান যোগ করে ১৩তম ওভারে দলের রান ১০০ পার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকের।
উইকেটে সেট হয়ে ১৩তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন মিরাজ। স্পিনার রোস্টন চেজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সীমানার কাছে গ্রেভসকে ক্যাচ দেন তিনটি বাউন্ডারিতে ২৩ বলে ২৯ রান করা মিরাজ।
মিরাজ ফেরার পর ১৫তম ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শামীম হোসেন ২ ও মাহেদি হাসান শূন্যতে রান আউট হন। এর মধ্যে নাটকীয়ভাবে রান আউট হন শামীম।
দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা শামীমের দিকে চলে যান জাকের। ওই সময় বল নিয়ে নন স্ট্রাইকের উইকেট ভেঙে দেন চেজ। নিজেকে রান আউট ভেবে মাঠ ছাড়েন জাকের, কিন্তু টিভি আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লেতে জানান, স্ট্রাইক প্রান্তে শামীমের আগে ক্রিজে ব্যাট স্পর্শ করেন জাকের। তাই রান আউট হন শামীম। ১৬ বলে ১৭ রানে জীবন পান জাকের।
১১৪ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন জাকের ও তানজিম হাসান সাকিব। সপ্তম উইকেটে দুজনের ২৭ বলে ৫০ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথ পায় টাইগাররা।
১৯তম ওভারের শেষ বলে তানজিমকে আউট করে জুটি ভাঙেন শেফার্ড। একটি করে চার-ছক্কায় ১২ বলে ১৭ রান করেন তানজিম।
৩৪ বলে ৪৮ রান নিয়ে শেষ ওভার শুরু করেন জাকের। আলজারির দ্বিতীয় বলে চার মেরে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩৬ বল খেলা জাকের। এরপর ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে ছক্কা মারেন জাকের।
শেষ ওভার থেকে ২৫ রান আসায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-টোয়েন্টি এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের।
শেষ ১০ ওভারে ১১৩ ও শেষ ৫ ওভারে ৭৫ রান তুলে টাইগাররা। এর মধ্যে জাকেরের সংগ্রহ ছিল ৩৪ বলে ৬৭ রান।
শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৪১ বলে ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ৭২ রান করেন জাকের। ২২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
এ বছরের মার্চে সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪ বলে ৬৮ রান করেছিলেন জাকের।
বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেফার্ড দুটি, আলজারি-চেজ ও মোতি একটি করে উইকেট নেন।
জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে পেসার তাসকিন আহমেদের বলে লেগ বিফোর হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। পরের ওভারে গ্রেভসকে ৬ রানে ফেরত পাঠান স্পিনার মাহেদি।
৭ রানে ২ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশ বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন জনসন চালর্স ও নিকোলাস পুরান। মারমুখী ব্যাটিংয়ে বড় জুটির আভাস দিচ্ছিলেন তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পুরানকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মাহেদি। ১০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান করেন পুরান। গ্রেভস-পুরান জুটি ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন।
দলীয় ৪৫ রানে পুরান ফেরার পর ব্যাটিং ধস নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৬ দশমিক ৪ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাত নম্বরে নামা রোমারিও শেফার্ডের ২৭ বলে ৩৩ রানে কোনোমতে দলীয় ১০০ রান স্পর্শ করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চার ওভারে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলার রিশাদ। এ ছাড়া তাসকিন-মাহেদি দুটি করে এবং তানজিম-হাসান একটি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হন জাকের। ব্যাট হাতে ৩৭ রান ও বল হাতে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন মাহেদি।
এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে সাফল্য নিয়ে বছরটি শেষ করতে পারল লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দলটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৮৯/৭ (জাকের ৭২*, ইমন ৩৯, শেফার্ড ২/৩০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৪ ওভারে ১০৯/১০ (শেফার্ড ৩৩, চালর্স ২৩, রিশাদ ৩/২১)।
ফল: বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।
আরও পড়ুন:আর্নোস ভেল গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।
ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হতাশাজনক হারের পর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা টাইগাররা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ধীর ও স্যাঁতসেঁতে পিচে ছন্দ ধরে রাখতে হিমশিম খায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক লিটন দাস (১০ বলে ৩) আকিল হোসেনের বলে স্টাম্পড হয়ে বিদায় নিলে ৮ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারিয়ে শুরুতেই সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুশৃঙ্খল বোলিংয়ের মোকাবিলায় টপ অর্ডার তানজিদ হাসান (২), সৌম্য সরকার (১১) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২৬) হোঁচট খেয়ে শুরুটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১৪তম ওভারে ৬ উইকেটে ৭২ রান করে মনে হচ্ছিল হতাশাজনক স্কোরের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
শামীম হোসেনের একটি সতর্ক ইনিংস ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান ১৭ বলে দুটি চার ও দুটি ছক্কায় ৩৫ রান করে বাংলাদেশকে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৯ রান তুলে দেয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি উইকেট নেন গুদাকেশ মোতি।
১৩০ রানের সামান্য লক্ষ্য অর্জন করতে নেমে বাংলাদেশের সুশৃঙ্খল বোলিংয়ের চাপে শুরুতেই নড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
তাসকিন আহমেদ তার প্রথম ওভারেই ব্রেন্ডন কিং (৮) ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে (০) আউট করে স্বাগতিকদের ১৯ রানের মাথায় দুটি উইকেটের পতন ঘটান। এরপর মেহেদী হাসান ও রিশাদ হোসেন মিলে মিডল অর্ডারের নিকোলাস পুরান (৫) ও রোভম্যান পাওয়েলকে (৬) মাঠ ছাড়া করেন।
স্বাগতিকদের ভরসা ছিল রোস্টন চেজের ওপর। তিনি ৩৪ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে দারুণ লড়াই করেন। আকিল হোসেইন চূড়ান্ত পর্যায়ে ৩১ বলে ৩১ রানের লড়াকু স্কোর যোগ করলেও অপর প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকায় তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
হোসেইনকে আউট করে ১৮ ওভার ৩ বলে ১০২ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস গুটিয়ে দেন তাসকিন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য