জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে মাগুরায় আয়োজন করা হয়েছে ‘মিনি ম্যারাথান’। শনিবার বেলা ১১টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ম্যারাথনে বিভিন্ন বয়সীরা অংশ নেন।
পাঁচ কিলোমিটারের এই ম্যারাথনে অংশ নেন তিন শতাধিক শখের দৌড়বিদ। স্টেডিয়াম থেকে শুরু হয়ে মাগুরা-ঝিনাইদহ মহাসড়ক দিয়ে আবালপুর নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল হয়ে স্টেডিয়ামে এসেই শেষ হয় দৌড়।
ম্যারাথন জিতে গোল্ড মেডেল পান শাহিন হোসেন সুমন। সিলভার মেডেল জেতেন লাভলু মিয়া। তৃতীয় হন সাইমন হোসেন। পান ব্রোঞ্জ মেডেল।
মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পাওয়াদের হাতে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও প্রত্যয়নপত্র তুলে দেন।
জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান। সকল হতাশা আর আক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতল ম্যানচেস্টার সিটি। ২৩তম দল হিসেবে ইউরোপ সেরার খেতাব জিতল জোসেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
তুরস্কের ইস্তানবুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ চ্যাম্পিয়নরা।
বাংলাদেশ সময় রাত একটায় ম্যাচটি শুরু হয়। ম্যাচের শুরু থেকেই সতর্কতার সঙ্গে খেলতে থাকে দুই দল। ফলে মাঝমাঠে বল দখলের একটা তাড়না থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের মধ্যে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল দুই দলকেই।
ম্যাচের প্রথম সুযোগটি পায় ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচের ২৭তম মিনিটে জন স্টোনসের বাড়ানো বল পেয়ে ইন্টারের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি-বক্সের মধ্যে ঢুকে যান আর্লিং হলান্ড। কিন্তু প্রথম টাচটি জোরে লাগায় বল একটুখানি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তার। ফলে পরে বাঁ পা প্রসারিত করে গোলে শট নিলেও পা দিয়ে বল ঠেকিয়ে দেন ইন্টার মিলানের গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা। এর দুই মিনিট পর মাঝমাঠ থেকে কয়েকজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরে শট নেন ডি ব্রুইনে। কিন্তু শটটি গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
প্রথমার্ধে দুই দলের কেউ আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও বড় ধাক্কা খায় সিটি। খেলার ৩০তম মিনিটে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগে কেভিন ডি ব্রুইনের। তৎক্ষণাৎ মাঠের বাইরে নিয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার ফেরানো হয় মাঠে। কিন্তু খেলার ৩৬তম মিনিটে তিনি খেলতে না পারার ইঙ্গিত দিলে তাকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হন পেপ গার্দিওলা। এ সময় ডি ব্রুইনের পরিবর্তে ফিল ফোডেনকে নামান কোচ।
প্রথমার্ধে দুই দলের কেউই তেমন চমক জাগানো পারফর্ম্যান্স দেখাতে না পারলেও দুই ইন্টেরিয়রে ইন্টার মিলানের ডেনসেল ডুমফ্রিস ও ফেদেরিকো দিমারকোর পারফর্ম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। রাইট ব্যাক পজিশনে নেমে এসে একাই জ্যাক গ্রিলিশ ও আর্লিং হলান্ড আটকে রেখেছিলেন ডুমফ্রিস। অন্যপাশে বল উদ্ধার ও দারুণ কিছু পাস দিয়ে নিজের দক্ষতার জানান দেন দিমারকো।
তবে দুই দলের কেউই তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারায় গোলশূন্য অবস্থায় ড্রেসিং রুমে ফেরে খেলোয়াড়রা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দশ মিনিটেই ইনজুরি পড়েন ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকার এডিন জেকো। ফলে ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে তাকে উঠিয়ে চেলসি থেকে ধারে খেলা রোমেলু লুকাকুকে মাঠে নামান সিমোনে ইনজাগি।
এক মিনিট পরই ম্যাচের সবচেয়ে বড় সুযোগ পান ইন্টারের লাউতারো মার্তিনেস। বেরনার্দো সিলভার ব্যাকপাস টের না পেয়ে তা রিসিভ করতে ব্যর্থ হন মানুয়েল আকাঞ্জি। ভুলের সুযোগ নিয়ে বল ধরে বাঁ পাশ দিয়ে এগিয়ে যান লাউতারো মার্তিনেস। কিন্তু খানিকটা সামনে এগিয়ে এসে লাউতারোর স্পেস কমিয়ে দেন সিটির গোলরক্ষক এদেরসন মোরায়েস। ফলে এদেরসনের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে পাঠানোর চেষ্টা করলেও তা ঠেকিয়ে দেন তিনি।
এসময় বল রিসিভ করে দ্রুত পাস দিলে বল ধরে এগোতে থাকেন ফোডেন। বিপদের শঙ্কায় ডি-বক্সের বাইরে ফোডেনকে প্রফেশনাল ফাউল করে এসময় হলুদ কার্ড দেখেন নিকোলো বারেল্লা।
খেলার ৬৮তম মিনিটে আসে সেই আকাঙ্খিত মুহূর্ত। একটি মজবুত গেম ডেভেলপমেন্টের পর মানুয়েল আকাঞ্জি পাস দেন ডান পাশ দিয়ে ফাঁকা হয়ে যাওয়া সিলভাকে। ডি-বক্সে পাঠানো সিলভার পাস ইন্টারের একজন ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করলে তা গিয়ে পড়ে সিটির রদ্রির পায়ে। জোরালো সোজাসুজি শটে তিনি তা পাঠিয়ে দেন জালে। আর উল্লাসে ফেটে পড়ে সিটির সমর্থক, খেলোয়াড় ও কোচং স্টফরা। ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় সিটি।
এর কিছুক্ষণ পরেই ভাগ্যের ফেরে গোলবঞ্চিত হয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের ৭১তম মিনিটে উড়ন্ত বল পেয়ে এদেরসনের মাথার উপর দিয়ে হেড দেন দিমারকো। কিন্তু বল গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসলে আবারও মাথায় পেয়ে যান দিমারকো। এবার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হেড দিলেও বল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লুকাকুর শরীরে লেগে ফিরে আসে।
তার দুই মিনিট পর থ্রু বল পেয়ে দুইজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে রুবেন দিয়াসের দুই পায়ের মাঝ দিয়ে শট দেন লুকাকু। কিন্তু বল গোলপোস্টের মধ্যে রাখতে ব্যর্থ হন তিনি।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোল দেয়ার দুটি ভালো সম্ভাবনা তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত আর তার দেখা পায়নি ইন্টার। ফলে অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট শেষে বেজে ওঠে শেষের বাঁশি। আর মাঠে ভেঙে পড়ে সিটির আনন্দের বাঁধ।
নিজেদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে আনন্দ ধরে রাখতে পারেনি অনেক খেলোয়াড়ই। মাঠের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। কাঁদেন এই আনন্দ ভাগ করে নিতে ইংল্যান্ড থেকে তুরস্কে আসা অসংখ্য সিটি সমর্থকও।
ঘরোয়া লিগে প্রতি মৌসুমে লিগ ও বিভিন্ন ঘরোয়া ট্রফি জিতলেও ইউরোপের মঞ্চে বার বার হোঁচট খাচ্ছিল পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। ২০২১ সালে একবার ফাইনালে উঠেও লিগ প্রতিপক্ষ চেলসির কাছে হেরে সে বার স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। তাই এবারের জয়টি আসলেই সিটির খেলোয়াড় ও সমর্থকদের কাছে বিশেষ কিছু।
এদিকে বার্সেলোনার হয়ে সবশেষ ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পর বায়ার্ন মিউনিখ ও পরে ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হয়েও এতবছর ইউরোপ সেরার এই ট্রফিটি ছোঁয়া হয়নি পেপ গার্দিওলার। প্রতিবছর কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে শক্তিশালী স্কোয়াড তৈরি করেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। এ জয়ে ফলে ১১ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো তার।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে বিরল এক মৌসুম শেষ করল ম্যানচেস্টার সিটি। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় দল হিসেবে ট্রেবল জিতল পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি।
তাছাড়া দুইবার ট্রেবল জয়ের রেকর্ড এখন শুধুই স্প্যানিশ এ ম্যানেজারের। এর আগে ২০০৮-২০০৯ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
শুধু তাই নয়, সবশেষ তিন সপ্তাহ একেবারে স্বপ্নের মতো কাটলো স্কাই ব্লুজদের। এ সময় প্রতি সপ্তাহে একটি একটি করে ট্রফি জিতে স্বপ্নীল এক মৌসুম শেষ করলো ‘ম্যানচেস্টার ইজ ব্লু’ স্লোগানের দলটি।
ফের বার্সেলোনা সমর্থকদের স্বপ্নভঙ্গ। বার্সার জন্য আর অপেক্ষা করবেন না লিওনেল মেসি। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
প্যারিসে দুই বছর কাটানোর পর পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নয়বায়ন না করায় মেসির বার্সায় ফেরার সম্ভাবনা জেগেছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনের বিভিন্ন জটিলতা ও অনিশ্চয়তা শেষে সে সম্ভাবনার শেষ হয়ে গেছে।
ইতোমধ্যেই তার পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আর্জেন্টাইন মায়েস্ত্রো। যদিও ডেভিড বেকহ্যামের ক্লাবটির চুক্তিতে এখনও স্বাক্ষর করেননি, এমএলএসের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতেই খেলবেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন দ’র জয়ী ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
স্প্যানিশ ক্রিড়াজগতের একাধিক সাংবাদিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্প্যানিশ ক্রিড়াপত্রিকা মার্কা ও রেডিও মার্কার সমন্বয়কারী লুইস রোহো এ টুইটে জানিয়েছেন, মেসি আগামী নিশ্চিতভাবে মৌসুমে ইন্টার মায়ামিতে খেলবেন।
কাতালুনিয়ার বার্সেলোনা বিষয়ক প্রখ্যাত সাংবাদিক জেরার্দ রোমেরো তার টুইটে বলেন, (মেসি-বার্সা) কাহিনী সমাপ্ত।
স্প্যানিশ ক্রিড়া সাংবাদিক মিগেল রিগোর বরাতে বার্সেলোনার খবর প্রাপ্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব রিশাদ রহমান জানিয়েছেন, মেসি ইতোমধ্যে তার সিদ্ধান্ত বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তিনি ফিরছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে মুন্দো দেপর্তিভো ও স্পোর্তকে মেসির দেয়া স্বাক্ষাতকার আজ রাতেই প্রকাশ হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিশাদ।
মেসিকে বার্সেলোনায় ফেরাতে যথাসম্ভব চেষ্টা করেন ক্লাবটির সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা, ম্যানেজার শাভি এরনান্দেস ও পরিচালনা পর্ষদ। বার বারই সংবাদমাধ্যমে তারা বলে এসেছেন, বার্সায় ফেরার বিষয়টি মেসির ওপরই সম্পূর্ণ নির্ভর করছে।
আর্থিক জটিলতার কারণে তারা সময়মতো মেসিকে প্রস্তাবও পাঠাতে পারেনি। গতকাল লা লিগা বার্সেলোনার আর্থিক পরিকল্পনার (ভায়াবিলিটি প্ল্যান) অনুমোদন দিলেও অনেকগুলো জটিল সমীকরণ মেলানোর প্রয়োজন ছিল ক্লাবের। মেসিকে দলে ভেড়ানোর আগে ক্লাব থেকে অন্তত দুজন খেলোয়াড় বিক্রি ও ৪০ মিলিয়ন ইউরো আয় করতে হতো তাদের।
যদিও তারা আজ মেসিকে একটি অফিশিয়াল প্রস্তাব দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু মেসির ক্যাম্প বার্সেলোনার পক্ষ থেকে মেসিকে রেজিস্ট্রেশনের শতভাগ নিশ্চয়তা চায়। কিন্তু এ মুহূর্তে তা দেয়া ক্লাব কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। তার জন্য মেসিকে অন্তত আগস্ট মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানায় তারা। এরপর মেসি ও তার ক্যাম্প আর ঝুঁকি নিতে চাননি।
ক্লাবকে তাই জানিয়ে দেয়া হয় যে, খেলোয়াড় হিসেবে বার্সায় আর ফেরা হচ্ছে না মেসির। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন তিনি।
অবশ্য সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলাল থেকেও ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রস্তাব ছিল মেসির জন্য। কিন্তু মরুর দেশে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে চাননি তিনি। পরিবারেরও এ বিষয়ে অমত ছিল। তাই সে প্রস্তাব আর গ্রহণ করেননি তিনি।
অবশ্য তার বাবা ও এজেন্ট হোর্গে মেসি শুরুতে সৌদিতে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। তবে ছেলে ও তারা পরিবারের কথা মেনে নিয়ে পরে ডেভিড বেকহ্যামের ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেরার্দ রোমেরোর বক্তব্য, ‘এ ঘটনায় কোনো পক্ষকেই দোষ দেয়া যায় না। ২০২১ সালের ঘটনাটি অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মেসি কেন আরও কিছুদিন অপেক্ষা করল না, সে বিষয়ে কথা উঠতে পারে। আবার বার্সারও সময়মতো জটিলতা দূর করা উচিত ছিল, যা তারা করেনি। আসলে বিষয়টি যা হয়েছে, এভাবেই ভাবা উচিত।’
আরও পড়ুন:পিএসজিতে দুই বছরের অধ্যায় শেষ করে বার্সেলোনাতে ফিরতে চাইলে ফের আশায় বুক বেঁধেছিল বার্সা ও মেসি সমর্থকরা। কিন্তু লা লিগা বার্সেলোনার ভায়াবিলিটি প্ল্যান অনুমোদন দিতে দেরি করা ও সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় অঙ্কের প্রস্তাব আশায় মেসির কাতালুনিয়ায় ফেরা নিয়ে জেগেছে সংশয়।
মেসিকে দলে ভেড়াতে ৪০০ (সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি) মিলিয়ন ইউরোর বিরাট এক প্রস্তাব দিয়েছে সৌদির ক্লাব আল-হিলাল। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চান না মেসির বাবা ও এজেন্ট হোর্গে মেসি। আবার সৌদি আরবে যেতে চাননা মেসির স্ত্রী আন্তোনেলা। তবে বার্সেলোনায় ফেরার ইচ্ছা থাকলেও তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব না আসায় দারুণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এ ফুটবলার।
মেসির বার্সেলোনায় ফিরে আসার ইচ্ছা ফুটবল-সংশ্লিষ্ট সবারই কমবেশি জানা। বার্সায় ফিরবেন বলে ইতোমধ্যে ছেলেদের পুরনো স্কুলে অগ্রিম সিটও বুক করে রেখেছেন বলে বেশ আগেই স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে খবর হয়। বার্সেলোনাও চায় মেসিকে ফেরাতে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।
আগামী মৌসুমের জন্য নতুন খেলোয়াড় কিনতে হলে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হবে আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা বার্সেলোনাকে। তা না হলে জুনে চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বর্তমান খেলোয়াড়দেরও রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবে না ক্লাবটি। নিজেদের হিসাব মিলিয়ে নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে এপ্রিলে একটি ভারসাম্য পরিকল্পনা (ভায়াবিলিটি প্ল্যান) লা লিগা কর্তৃপক্ষকে দেয় হুয়ান লাপোর্তার পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু প্রস্তাবিত পরিকল্পনার বেশকিছু জায়গায় ভারসাম্য না থাকায় প্রথমে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় লিগ কর্তৃপক্ষ। পরে তা সংশোধন করে পাঠালে বিবেচনায় নেয় লিগ কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বার্সেলোনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে ও অফিশিয়াল প্রস্তাব পাঠাতে সময় বেঁধে দিয়েছেন হোর্গে মেসি। এ সপ্তাহের মধ্যে বার্সার পক্ষ থেকে সাড়া না পেলে অন্য প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেবেন তারা।
আসলে মেসিকে আল-হিলালের দেয়া প্রস্তাবে যে সময়সীমা ছিল, তা শেষ হতে চলেছে। এদিকে ডেভিড বেকহ্যামের ইন্টার মায়ামিও মেসির অবস্থা ধৈর্য্যের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ইন্টার মায়ামির মেসিকে দলে পাওয়ার ইচ্ছাও এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। তাই দ্রুত বার্সেলোনার সিদ্ধান্ত জানতে চান মেসির ক্যাম্প।
এদিকে সৌদি আরবে একদমই যাওয়ার ইচ্ছা নেই মেসির স্ত্রী আন্তোনেলার। স্পেনের প্রখ্যাত ক্রিড়া সাংবাদিক জেরার্দ রোমেরো সোমবার এক টুইটে জানিয়েছেন, মেসির স্ত্রী ও সন্তান মাতেও মেসি সৌদিতে যেতে চান না।
এমন অবস্থায় উভয়সংকটে পড়েছেন ফুটবলের বরপুত্র লিওনেল মেসি।
টিওয়াইসি স্পোর্টসের আর্জেন্টিনা বিষয়ক সাংবাদিক গাস্তোন এদুল এক টুইটে জানান, ‘মেসি কেন আর (সিদ্ধান্ত নিতে) দেরি করতে চান না, তা আমি (মেসির ক্যাম্প থেকে) জেনেছি। হুয়ান লাপোর্তার সঙ্গে মেসির ক্যাম্পের আলোচনা শুরু হয় মে মাসের শুরুতে। সে সময় লাপোর্তা জানিয়েছেলেন, ভায়াবিলিটি প্ল্যান নিয়ে লা লিগার সঙ্গে ঝামেলা মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মিটে যাবে। কিন্তু সে সময় চলে গিয়ে ৩-৪ সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও বার্সেলোনার সমস্যা মেটেনি। আবার লা লিগা (ভায়াবিলিটি) প্ল্যানে অনুমতি দিলেও খেলোয়াড় বিক্রি ও অন্যান্য বিষয়ে হিসাব মেলাতে ক্লাবটির আরও সময় প্রয়োজন।
‘মেসির ক্যাম্প আসলে ভয় পাচ্ছে, মেসিকে আদৌ বার্সেলোনা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে কোনো গ্যারান্টি নেই। বার্সেলোনার জন্য অপেক্ষা করবে কি না, সে বিষয়ে গ্যারান্টি চান মেসি। তিনি কোনোভাবেই ২০২১ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না।’
গতকাল দুপুরে বার্সেলোনার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে লা লিগা। এরপর ক্লাব সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন হোর্গে মেসি। বৈঠক শেষে তিনি সংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অবশ্যই লিওকে বার্সায় ফিরতে দেখতে চাই। কিন্তু বৈঠকে তেমন স্পষ্ট কোনোকিছু আলোচনা হয়নি।’
বৈঠকে মেসির জন্য কোনো অফিশিয়াল প্রস্তাব দিতে পারেননি লাপোর্তা। তবে দুপক্ষই আরও কিছু সময় ধৈর্য ধরতে রাজি হয়েছে।
হোর্গে মেসি বলেন, ‘লিও এখনই যে কোনো একটা সিদ্ধান্তে আসতে চায়। পুরো ঘটনাটি নিয়ে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।’
তবে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আরেকদফা বৈঠকে সম্মত হয়েছেন মেসির বাবা। আজ বা কালকের মধ্যেই তা হতে পারে বলে এক টুইটে জানিয়েছেন বার্সেলোনার খবর প্রাপ্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব রিশাদ রহমান। তিনি জানিয়েছেন, ওই বৈঠকেই সম্ভবত মেসিকে অফিশিয়াল প্রস্তাব দেয়া হতে পারে।
মেসির দলবদল ঠিক কোন দিকে মোড় নেবে, তা আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই জানা যাবে বলে জানিয়েছেন রিশাদ।
আরও পড়ুন:বিদেশি লিগ মানেই টাকার ছড়াছড়ি। ওই ধরনের লিগ খেলতে সবসময়ই মুখিয়ে থাকেন ক্রিকেটাররা। অনেক সময় জাতীয় দলের সিরিজ থেকেও ছুটি নিতে দেখা যায় অনেক তারকা ক্রিকেটারকে। তবে এক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম তাসকিন আহমেদ।
জাতীয় দলের হয়ে খেলতে বার বার বিদেশি লিগগুলোকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এবার ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে খেলার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের এই পেসার।
সম্প্রতি ইংলিশ কাউন্টির ক্রিকেট দল ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তাসকিন। বাংলাদেশের সাবেক পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন তাকে ওই প্রস্তাব পাঠান।
গিবসন এখন ইয়র্কশায়ারে কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। টাইগারদের দায়িত্ব পালনের সময় তাসকিনকে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তার সাম্প্রতিক ফর্ম সম্পর্কেও তিনি ভালোভাবেই অবগত। তাই কাউন্টিতে তার দলে তিনি তাসকিনকে চেয়েছিলেন।
তবে বিশ্বকাপের আগে চোটের ঝুঁকি এড়াতে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তাসকিন। বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করেই কাউন্টি ক্রিকেটকে না বলে দিয়েছেন তিনি।
চলতি বছর ক্রিকেটের বড় দুটি বড় আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এশিয়া কাপ নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, আগামী অক্টোবরে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে তাসকিনকেই টাইগারদের পেস বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিতে হতে পারে। তাই এ সময় তাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এ প্রসঙ্গে বিসিবির অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ক্রিকবাজকে বলেন, ‘হ্যাঁ, ইয়র্কশায়ার চেয়েছিল তাসকিন যেন তাদের হয়ে খেলে। কিন্তু আমরা তাদের না করে দিয়েছি। কারণ আমরা চাই না বিশ্বকাপের আগে কাউন্টিতে লাল বলের ক্রিকেট খেলে আবার চোটের ঝুঁকিতে পড়ুক। সে মাত্রই (চোট থেকে) ফিরেছে এবং আমাদের টেস্ট স্কোয়াডে আছে। বিশ্বকাপের আগে আমরা তাকে কিভাবে (ফিটনেস অনুযায়ী) চাই সে বিষয়ে আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে।’
চোটের কারণে সবশেষ আয়ারল্যান্ড সফরে খেলতে পারেননি তাসকিন। যদিও চোট কাটিয়ে তিনি অনুশীলনে ফিরেছেন, তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে তাকে না খেলানোর সম্ভাবনাই বেশি।
২০২২ সালেও কাউন্টিতে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তাসকিন। যদিও তখন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয়নি তাকে।
ইংলিশ কাউন্টি ছাড়াও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ও পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তাসকিন। ২০২২ মৌসুমে তাকে পেতে চেয়েছিল আইপিএলের দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। তবে তখন সাউথ আফ্রিকা সফর থাকায় সে প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন তিনি।
সবশেষ পিএসএলে তাকে পেতে চেয়েছিল মুলতান সুলতানস। মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাসকিন।
আরও পড়ুন:আয়রনম্যান প্রতিযোগিতা একদিনের স্পোর্টিং ইভেন্টগুলোর মধ্যে কঠিনতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৩। এবারের আয়োজনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন এডিসি মিশু বিশ্বাস।
বছর জুড়ে বিশ্বের ৬০টি দেশে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইভেন্টগুলোতে অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে সেরা অ্যাথলেট বাছাই করা হয়। পরে তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ।
আয়রনম্যান প্রতিযোগিতায় একজন প্রতিযোগীকে ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার শেষ করে ১৮০ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হয়। এরপর আবার অংশ নিতে হয় ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার ম্যারাথনে। এই তিনটি ডিসিপ্লিনে সর্বমোট ২২৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার দূরত্ব বিরতিহীনভাবে কেউ ১৭ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে পারলে তাকে ‘আয়রনম্যান মেডেল’ দেয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিশু বিশ্বাস অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা রমনা বিভাগে কর্মরত। তিনি রোববার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ‘আয়রনম্যান ব্রাজিলে’ বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ওই আয়োজনে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ২২৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার দূরত্ব মাত্র ১২ ঘণ্টা ১১ মিনিটে সম্পন্ন করেন। তিনি ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার শেষ করতে সময় নেন ১ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট। ১৮০ দশমিক ২ কিলোমিটার সাইকেল চালনা শেষ করেন ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিটে। আর ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার ম্যারাথন শেষ করেছেন মাত্র ৩ ঘণ্টা ৪৯ মিনিটে।
মিশু বিশ্বাস এর আগে গত বছর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘আয়রনম্যান মালয়েশিয়া’ ১৩ ঘণ্টা ১৯ মিনিটে এবং তুরস্কে অনুষ্ঠিত ‘আয়রম্যান তুরস্ক’ ৭০ দশমিক ৩ কিলোমিটার সফলভাবে শেষ করেন ৬ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে।
বাংলাদেশ পুলিশের এই কর্মকর্তা ২০২০ সালে প্রথম সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে বাংলা চ্যানেল অতিক্রম করেন। এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু ম্যারাথন, সিংগাপুর ও থাইল্যান্ড হাফ ম্যারাথনসহ অর্ধশতাধিক হাফ-ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছেন৷
বেশ কিছুদিন ধরে বর্ণবাদ ইস্যুতে উত্তপ্ত স্প্যানিশ ফুটবল। তবে সর্বশেষ ২১ মে ভিনিসিউস জুনিয়রের ওপর ভ্যালেন্সিয়ার খেলোয়াড় ও সমর্থকদের তীব্র বর্ণবাদী আচরণের পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব ফুটবলের ভক্ত থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারক ও সংবাদমাধ্যমগুলো।
বর্ণবাদী আচরণে ‘যথাযথ’ ব্যবস্থা না নেয়ায় পর্তুগাল ও মরক্কোর সঙ্গে যৌথ আয়োজক হতে চাওয়া স্পেনকে ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজকের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ সমস্যাটি সঠিকভাবে মোকাবেলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। আর এ বিষয়টিতে ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য স্পেন কতটা দায়িত্বশীল, ফিফা তা বিবেচনা করতে পারে।
দ্য টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘ইউরোপের অন্য দেশের মতো স্পেন লা লিগা সমর্থকদের শাস্তি দিতে পারে না। তারা কেবল পারে অভিযোগ দায়ের করে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বুঝিয়ে দিতে। তারা বলছে, লিগকে আরও ক্ষমতা প্রদানের জন্য তারা দেশটির সরকারকে আইন পরিবর্তন করতে বলবে।’
‘বিশ্বকাপ আয়োজনে এরপরও স্পেনকে দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবাই যায় না। ভিনিসিউসের মতো একজন তরুণ প্রতিভাকেই তারা যদি নিরাপত্তা দিতে না পারল, তাহলে বিশ্ব ফুটবলকে তারা আসলে কী বার্তা দেয়? ত্রিশ বছর আগে ব্রিটেনের মতো স্পেনকেও বিশ্বকাপ (আয়োজন) থেকে বহিষ্কার করা উচিৎ।’
কয়েক বছর ধরে ফুবলাররা বিভিন্ন সময়ে বর্ণবাদী আচরণের স্বীকার হয়ে আসলেও মাস কয়েক আগে থেকে স্পেনে বিষয়টি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
প্রতিপক্ষের মাঠে, এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বর্ণবাদী আচরণ ও ঘৃণার রোষানলে পড়তে হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ্রের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ভিনিসিউস জুনিয়রকে। বারবার এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়েও কোনো সুফল পাননি তিনি।
২১ মে ভ্যালেন্সিয়ার মেস্তায়া স্টেডিয়ামে খেলতে গিয়ে ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকদের তীব্র ঘৃণার শিকার হতে হয়েছে তাকে। ম্যাচ চলাকালিন প্রকাশ্যে ভিনিকে লক্ষ্য করে বর্ণবাদী গালিগালাজ করতে থাকেন স্টেডিয়ামের সমর্থকরা। কয়েকবার এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেও তিনি নিস্তার পাননি।
ম্যাচশেষের আগমুহূর্তে এ কারণে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে লালকার্ডও দেখেন ভিনি।
ম্যাচের পর ইনস্টাগ্রামে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এক পোস্টে ভিনিসিউস বলেন, ‘লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক বিষয়। কর্তৃপক্ষ এটাকে স্বাভাবিক বলেই ভাবে। এমনকি (স্প্যানিশ ফুটবল) ফেডারেশন এটিকে সমর্থন দেয়। আর প্রতিপক্ষরা এতে (বর্ণবাদ) উৎসাহ দেয়।
‘লা লিগা এক সময় রোনালদো, রোনালদিনিয়ো, মেসি ও ক্রিস্তিয়ানোদের থাকলেও বর্তমানে তা বর্ণবাদীদের দখলে।’
ওই পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘যথেষ্ট মনের জোর আছে আমার। বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে আমি লড়াই করে যাব। আমাকে যদি এখান (স্পেন) থেকে বহুদূরেও যেতে হয়, আমি বর্ণবাদ নির্মূলে কাজ করব।’
এক সংবাদ সম্মেলনে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, “মেস্তায়ায় যা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যখন স্টেডিয়ামের দর্শকরা একজন খেলোয়াড়কে ‘বানর’ বলতে থাকে, আর কোচের ওই খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হতে হয়, তখন বুঝতে হবে লিগে নিশ্চয়ই সমস্যা আছে।”
এ ঘটনায় ২৩ মে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে স্পেনের পুলিশ।
লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমার হাতে যদি ‘পর্যাপ্ত ক্ষমতা’ থাকত, তবে ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই লিগ থেকে বর্ণবাদ দূর করতে পারতাম।”
লিগের ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা না থাকায় আমরা শুধু এ বিষয়ে (ফেডারেশনে) অভিযোগই দাখিল করতে পারি।’
আরও পড়ুন:১৫ পয়েন্ট না হলেও ১০ পয়েন্ট ঠিকই কাটা গেল ইতালিয়ান ক্লাব ইউভেন্তুসের। এর ফলে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তো দুরের কথা, ইউরোপা লিগ এমনকি উয়েফা কনফারেন্স লিগে স্থান পাওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
দলবদলের চুক্তি সম্পর্কিত নানা অনিয়মের অভিযোগে নতুন একটি শুনানির পর সেরি আ’তে চলতি মৌসুমে দলটির ১০ পয়েন্ট কেটে নেয়ার রায় দিয়েছে ইতালির একটি ক্রীড়া আদালত।
সোমবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ৯টায় এমপোলির সঙ্গে খেলা চলছিল ইউভেন্তুসের। ম্যাচটিতে এমপোলির কাছে ৪-১ গোলে হারে মাস্সিমিলিয়ানো আলেগ্রির দল। খেলা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে এ রায়ের খবর আসে বলে গোল ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ মামলায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এক রায়ে প্রথমে ১৫ পয়েন্ট কেটে নেয়া হয় ‘তুরিনের বুড়ি’দের; সাথে করা হয় জরিমানা। সে সময় পয়েন্ট টেবিলের দশম অবস্থানে নেমে যায় তারা। তবে এপ্রিলে ইতালির শীর্ষ ক্রীড়া আদালত রায়টি পর্যালোচনা করতে বললে আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্পট ফিরে পায় তারা। পর্যালোচিত রায়ে জরিমানাও স্থগিত করা হয়। এরপর দারুণ খেলে তারা পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে।
কিন্তু মৌসুমের শেষ সময়ে ১০ পয়েন্ট কাটা এই শাস্তির ফলে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম অবস্থানে নেমে গিয়েছে ইউভেন্তুস। এতে আগামী মৌসুমে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে দলটি।
ইতালির লিগ ‘সেরি আ’ থেকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ ৪ দল পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। পঞ্চম দল ইউরোপা লিগ ও ষষ্ঠ দল উয়েফা কনফারেন্স লিগে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পায়। ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে ইউভেন্তুসের অবস্থান এখন সপ্তম।
তবে এতকিছুর পরও ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলার সম্ভাবনা একেবারে হাতছাড়া হয়ে যায়নি তাদের।
৬৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে এসি মিলান। ৬১ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে আতালান্তা ও ৬০ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে রোমা। একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, চতুর্থ অবস্থানে অর্থাৎ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ স্পটে থাকা এসি মিলানের চেয়ে ইউভেন্তুসের পয়েন্ট ব্যবধান ৫, আতালান্তা ও রোমার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র ২ ও ১।
ইউভেন্তুসের হাতে এখনও দুই ম্যাচ রয়েছে যার একটি এসি মিলান ও অপরটি উদিনিসের সঙ্গে। রোববার (২৮ মে) এসি মিলানের সঙ্গে যদি জিততে পারে, তাহলে তাদের সঙ্গে ইউভেন্তুসের ব্যবধান কমে আসবে দুইয়ে। সে সঙ্গে আতালান্তা ও রোমা যদি শেষ দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারায়, আর ইউভেন্তুস পরের দুই ম্যাচই জেতে, তাহলে হয়ত ইউরোপা লিগ বা কনফারেন্স লিগে আগামী মৌসুমে দেখা যেতে পারে ‘ওল্ড লেডি’দের।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য