হেলিকপ্টারের পাখার শব্দে কান ঝাঁঝা করে। তবু গ্রামের নানাবয়সী মানুষ ভিড় করেছে হেলিপ্যাডে। ফাঁকা মাঠে হেলিপ্যাড। সেটিকে ঘিরে একটা জটলা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ফেরিওয়ালার দল। বাদাম, চানাচুরসহ মনোহারি সব খাবার বিক্রি হচ্ছে। খোলা মাঠে যেন মেলা বসে গেছে।
হেলিকপ্টারের পাখার ঘুর্ণি বাতাসে উড়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের ছাতা। উড়ছে মাথার চুল।
বরিশালের একটি মাঠে নামছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) সিকোরস্কি এস-সিক্সওয়ান এন এস মডেলের একটি ঢাউস হেলিকপ্টার। আরোহী নানা ধরনের পেশাজীবী। তারা এ হেলিকপ্টারের নিয়মিত যাত্রী।
ষাটের দশকে দেশের জেলা-মহকুমা শহরের এটি একটি নিয়মিত দৃশ্য। এখন এটা শুনতে বিস্ময়করই লাগবে - ষাট বছর আগে তখনকার পূর্ব-পাকিস্তান, অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে নিয়মিত বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করত হেলিকপ্টার। যাত্রী নিয়ে ছুটত ঢাকা থেকে অন্তত ২০টি গন্তব্যে, নিয়মিত।
যে সময় এমনকি সড়ক যোগাযোগও তেমন একটা ছিল না, রেলপথ ছিল ব্রিটিশ আমলের, তাতে লক্কর-ঝক্কর রেলগাড়ি ছুটতো, দেশ জুড়ে বিমানবন্দরই ছিল সাকুল্যে চারটি – সে সময় হেলিকপ্টারের এমন রমরমা অবাক হওয়ার মতো।
১৯৬২ সালে পিআইএ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনে আনে তিনটি ব্র্যান্ড নিউ সিকোরস্কি এস-সিক্সওয়ান হেলিকপ্টার। মাত্র এক বছর আগে হেলিকপ্টারের এই মডেলটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি পায়। বড় আকৃতির এ হেলিকপ্টারে আসন সংখ্যা ছিলো ২৫টি। দুই পাইলট সহ ক্রু ছিলেন চারজন।
এই সিডিউল হেলিকপ্টার সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯৬৩ সালে। শুরুর দিকে বরিশাল, খুলনা ও ফরিদপুরে চলাচল শুরু করে এ সেবা। ধীরে ধীরে গন্তব্য বেড়ে হয় ২০টি।
বর্তমানে দেশের সরকারি এভিয়েশন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম সে সময় ছিলেন কিশোর বয়সী। বাবার কর্মসূত্রে তখন তিনি ছিলেন বরিশালে। বরিশাল জিলা স্কুলের ছাত্র তিনি তখন। ওয়াহেদুল আলমের সুযোগ হয়েছিল এই সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তখন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম খুব খারাপ ছিল। আমরা বিশেষ করে খুলনা বরিশাল বা সন্দ্বীপ এসব জায়গায় যেতে হলে অনেকগুলো ফেরি পার হতে হতো। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতেও তিন চারটা ফেরি পার হতে হতো। অনেক সময় লাগতো। সারা দিনেও পৌছানো যেতো না। সে সময় এই সার্ভিসটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো। আমার খুব ভালো করেই মনে আছে এটার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হলো, সেই ১৯৬৩ সালের কথা বলছি। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে আব্বা দাওয়াত পেয়েছিলেন, তার সাথে আমিও সেখানে ছিলাম। এটা এখনো স্মৃতিতে রয়েছে।
‘এরপর বরিশাল থেকে ৬৪ সালে আব্বা খুলনায় বদলী হয়ে আসলেন। সেখানে দেখা গেল যে আমরা যে বাসাটা ভাড়া নিলাম, সেটা হেলিপ্যাডের পাশেই ছিলো, ফায়ার ব্রিগেড রোডে। আমরা ওখান থেকে দেখতে পেতাম যে হেলিকপ্টার উঠা-নামা করছে নিয়মিতভাবে। সে সময় প্রচুর মানুষ এই হেলিকপ্টার দেখতে গ্রামগঞ্জ থেকে খুলনায় আসত। যাত্রীও কিন্তু সে সময় অনেক হতো। তখনকার দিনে পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।’
ঢাকা থেকে চাঁদপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, চালনা বরিশাল, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, রংপুর, পার্বতীপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, শমশেরনগর, হবিগঞ্জ, ভৈরব, কুমিল্লা, যশোর, ভোলা, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজারেও চলতো হেলিকপ্টার। বলতে কী এটিকে বলা হতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সেবা। অন্তত তখনকার এভিয়েশন বিষয়ক ম্যাগাজিনগুলোর বিজ্ঞাপনে সেরকমই দাবি করতে দেখা যায়। এ দাবি কতটা সঠিক ছিল, নিশ্চিত করা কঠিন। তবে উপমহাদেশে আর কোথাও এরকম হেলিকপ্টার সেবা ছিল না। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানে এ সেবা চালু করা হলেও এরকম কোনো সেবা পশ্চিম পাকিস্তানে চলেনি।
হেলিকপ্টার সেবাটি জনপ্রিয় হওয়ার একটি বড় কারণ এর টিকেটের দাম ছিল কম। টিকেটের গড় দাম ছিল ২৫ টাকা। কায়সার হোসেন নামে একজন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, সে সময় ঢাকা থেকে কুমিল্লা হেলিকপ্টার ভাড়া ছিল ১২ টাকা, চাঁদপুর ছিল ১৫ টাকা, বরিশাল ছিল ৩৫ টাকা।
মাহবুবুল হক নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তার বাবার কাছে শোনা একটি অভিজ্ঞতা ফেসবুকে বর্ণনা করেছেন এভাবে :
আমার আব্বা ও মেজ মামা এই হেলিকপ্টার সার্ভিস ব্যবহার করতেন। আব্বা ও মামা ঢাকা, বরিশাল, ভোলা, ফরিদপুরের ভিতর যাতায়াত করতেন। ভাড়া ছিলো ১০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। উনারা এবং অন্যরা হেলিকপ্টারে মুরগী, হাঁস, ইলিশ মাছ, মহিষের দই নিয়ে উঠতেন। আমার আব্বা আমাকে এই গল্প বলেছেন।
ছোটবেলায় এই হেলিকপ্টারে ওঠার বর্ণনা পাওয়া যায় নবী এন মাহমুদ নামে একজনের লেখায়। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন:
এই ভ্রমণ খুবই উপভোগ্য ছিল। হেলিকপ্টারগুলো খুব নিচে দিয়ে উড়ে যেত। জানালা দিয়ে নিচে গাছ-পালা ঘর-বাড়ী এমনকি মানুষ পশু-পাখি পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যেত। পথ-ঘাট মাঠ নদী সব দৃশ্য অতুলনীয় মনে হতো। ভ্রমণের সময় ইচ্ছামতো চকলেট নেয়া যেতো।
প্রশ্ন হলো, যে সেবার এতো রমরমা, সেটা কোথায় হারিয়ে গেল? কেন? কী করে সেটা সবার স্মৃতি থেকে মুছে গেল?
কারও স্মৃতিতে এটা না থাকার কারণ এ সেবা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র তিন বছর। যেভাবে হুট করে সেটা শুরু হয়েছিল, হুট করেই সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। রাতারাতি। আর এর জন্য দায়ী একটি দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনা ছিল ভয়াবহ।
১৯৬৬ সালের দোসরা ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে উড়াল দেয় সেই তিন হেলিকপ্টারের একটি। তিন ক্রুসহ ২৪ আরোহী ছিল তাতে। গন্তব্য থেকে মাত্র দুই মিনিটের দূরত্বে সেটি বিধ্বস্ত হয়।
এতে থাকা ২৪ আরোহীর ২৩ জনেরই মৃত্যু হয়, ঘটনাস্থলে। বেঁচে যান মাত্র একজন।
কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল হেলিকপ্টারটি? তখনকার পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন বা পিআইএ-এর প্রেসিডেন্ট এয়ার মার্শাল আসগর খান বলেছিলেন, হেলিকপ্টারটির পেছনের অংশ এবং মূল পাখায় শকুনের ধাক্কা লেগেছিল। পরদিন তেসরা ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকের আট কলাম জুড়ে প্রধান সংবাদ ছিল এই দুর্ঘটনাটি। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
ফরিদপুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার অব্যহিত পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ইত্তেফাকের নিজস্ব সংবাদদাতা টেলিফোনযোগে জানান যে, একটি উড়ন্ত শকুনের সহিত সংঘর্ষই যে ফরিদপুরের অদূরে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ, সে সম্পর্কে কাহারও মনে আর সংশয় থাকিতে পারে না। হেলিপোর্টের তিন মাইল দক্ষিণ-পূর্বের তুলাগ্রামে যখন অগ্নি প্রজ্বলিত অবস্থায় হেলিকপ্টারটি মাটিতে পড়িয়া বিধ্বস্ত হইতেছে, তাহার কয়েক সেকেন্ড পূর্বে বায়তুল আমানের টেকনিক্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে ক্রীড়ারত ছাত্র আবদুর রাজ্জাক ও তাহার সঙ্গীরা আকাশ হইতে একরাশ পাখীর পালক ঝরিয়া পড়িতে দেখে ও পরক্ষণেই একটি দ্বিখণ্ডিত শকুন আসিয়া ধপাস করিয়া তাহাদের সামনে পড়ে। এ ঘটনা হইতে কাহারও আর বুঝিতে বাকী থাকে না যে, শকুনের সহিত সংঘর্ষের ফলেই হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
এই ঘটনায় যে একজন মাত্র যাত্রী বেঁচে যান, বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনিও ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার হয়ে কর্মসূত্রে তিনি সেদিন ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেলিকপ্টারটা দুপুর ২টায় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ছাড়ল। আমি টিকিট কিনে উঠলাম। আমি যখন উঠলাম, তখন সামনের দিকে বসার চেষ্টা করলাম হেলিকপ্টারের। তখন কম বয়স, দেখতে চাই পাইলটের কাজ কারবার। কিন্তু ওরা আমাকে সামনে বসতে দিলো না। যে স্টুয়ার্ট ছিল, সে আমাকে বলল, আপনি পেছনে যান। সবার পেছনে নিয়ে আমাকে বসিয়ে দিলো। ফ্লাইটে সব মিলিয়ে ২৪ জন মানুষ ছিলো। আমি একটু বিরক্ত হলাম, মন খারাপ যে সামনে বসতে পারলাম না। হেলিকপ্টার উড়াল দিলো।
‘এর ২০ মিনিটের মাথায় বলল যে, আমরা ফরিদপুরের কাছাকাছি এসে গেছি, নামব এখন। সে সময় শুরু হলো একটা কড়্-কড়্ আওয়াজ, ইঞ্জিনের আওয়াজ, মাথার উপরে ব্লেড যেখানে ঘোড়ে। এরপর দেখি ফ্লাইটটা মাথা ঘুড়ছে, এদিক সেদিক যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা কান্না মনে হচ্ছে, কী জানি হচ্ছে। তাকিয়ে দেখি মাটি দেখা যাচ্ছে আর হেলিকপ্টারটা চক্কর খাচ্ছে। মিনিট খানেকের মধ্যে এটা ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল। আমি তখন সিটে বসা, কেন জানি না বেল্টটা খুলে ফেললাম। মাটিতে পড়েই আগুন জ্বলে উঠলো, সেটা আমি দেখলাম। সঙ্গে সঙ্গে হুশও চলে গেল আমার। বেহুশ হয়ে গেলাম। মিনিট খানেক পরেই হুশ আসলো। দেখি যে মাটিতে পড়ে আছে সবাই। কোনো আওয়াজ নেই নিস্তব্ধ, সামনে আগুন দেখা যাচ্ছে। আমি তখন সচেতন হয়ে গেছি। দেখি যে আমার বাঁ দিকে জানালা নাই। তখন আমি সেদিকে পা বাড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম।’
স্থানীয়দের সহায়তায় এম এ মান্নানকে প্রথমে গ্রামেই একটি বাড়িতে নেয়া হয়। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। সেই সময় ফরিদপুরের ডিসি ছিলেন এম কে আনোয়ার, যিনি পরে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। এই দুর্ঘটনাটি এম এ মান্নানের মনে এমন দাগ কেটেছিল, যেটাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ট্রমা।
এই দুর্ঘটনা ১০ মাস পর আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর অদূরে রূপপুর এলাকায় বিধ্বস্ত হয় দ্বিতীয় একটি হেলিকপ্টার। প্রাণ হারান পাইলট সৈয়দ হাবিবুল হাসান। আরেক পাইলট আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। হাবিবুল হাসান একই সাথে এই হেলিকপ্টার সার্ভিসের চিফ পাইলট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদির প্রধান খবর ছিল এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণে প্রকাশ যে, রূপপুর গ্রামের আকাশে উড্ডীয়নকালে অকস্মাৎ বিকট শব্দ করিয়া হেলিকপ্টারের পেছনের চাকা পড়িয়া যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ ঘুরিয়া যায়। এই সময় বিমানটির একটি ব্লেড ভাঙ্গিয়া নিকটবর্তী একটি বাড়ির রান্নাঘরের উপর গিয়া পড়ে, ফলে রান্নাঘরটি বিধ্বস্ত হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারটি অসমতল ভূমির উপর নিক্ষিপ্ত হয় এবং ভূতলে পড়িবার সঙ্গে সঙ্গেই হেলিকপ্টারটির মাঝখানে আগুন ধরিয়া যায়। প্রকাশ পায়, হেলিকপ্টার চালকের উপস্থিত বুদ্ধির ফলে উহা দিক পরিবর্তন করিয়া উল্লিখিত গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাঠে বিধ্বস্ত হয়। অন্যথায় লোকালয়ের উপর বিধ্বস্ত হইলে নিহতের সংখ্যা আরও অধিক হইতে পারিত। বিধ্বস্তের পর ক্যাপ্টেন হাসানের মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। প্রচন্ড আঘাতে তাহার মুখমন্ডল বিকৃত হইয়া যায় এবং আগুনে পুড়িয়া দেহ শনাক্তের বাহিরে চলিয়া যায়।
আগেই বলা হয়েছে, সে সময় পিআইয়ের কাছে এ ধরনের হেলিকপ্টার ছিল মাত্র তিনটি। যার একটি ফেব্রুয়ারিতে, আরেকটি বিধ্বস্ত হয় ডিসেম্বরে। ফলে তাদের বহরে অবশিষ্ট থাকে আর মাত্র একটি হেলিকপ্টার। এ ঘটনার পর সাময়িকভাবে এই হেলিকপ্টার সেবা বন্ধ করে দেয় পিআইএ। পরে আর কখনই সেটি চালু করা যায় নি।
এভাবেই বন্ধ হয়ে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সার্ভিস। অক্ষত থাকা শেষ হেলিকপ্টারটি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কাছে বিক্রি করে দেয় পিআইএ।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে আকাশপথে যাত্রী বেড়েছে কয়েক গুণ। এক সময় যেখানে শুধু রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহন করত, সেখানে এখন যুক্ত হয়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনসও। এক সময় যে আকাশপথে চলাচল করাকে বিলাস হিসেবে দেখা হতো, সেটি এখন পরিণত হয়েছে প্রয়োজনে।
শুধু যাত্রী পরিবহনই নয়, ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে এই আকাশপথ। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা বিনিয়োগকারীরা সড়ক বা রেলে ভোগান্তি কমাতে আরামে চলাচল করছেন এই আকাশপথে। কিন্তু সমস্যা হলো দেশের সব জেলায় তো আর বিমানবন্দর নেই। দেশের ভেতরে বিমানবন্দর মাত্র সাতটি।
খুব সহসাই বিমানবন্দরের সংখ্যা যে বাড়বে, তা ভাবারও কোনো কারণ নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ যে কোনো এলাকায় ভ্রমণের জন্য বিত্তশালীরা এখন বেছে নিচ্ছেন ভাড়ার হেলিকপ্টার সেবা। কিন্তু তা ঠিক সাধারণের বাহন আর হয়ে উঠতে পারেনি। কেন তা হয়নি তা ব্যাখ্যা করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘হেলিকপ্টার সার্ভিস সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে যে এটা একটু এক্সপেনসিভ। এখানে যে ফুয়েলটা ব্যবহার হয় এটার দাম বেশি, এটার মেইনটেন্যান্স কস্ট বেশি। এ কারণে এখন অনেকে এটাতে উৎসাহ দিতে চায় না বা কেউ হয়তো এভাবে চিন্তাও করে নি।
‘এটা কমার্শিয়ালি অপারেশনের জন্য যে ধরনের উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ নেয়া দরকার সেটা হয় নি। যার ফলে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা হেলিকপ্টার সার্ভিসটা প্রচলন করতে পারি নি।’
ষাটের দশকের সাধারণের সেই হেলিকপ্টার সেবা আর ফিরে না এলেও দেশে এখন ভাড়ায় হেলিকপ্টার সেবা নেয়া যায়। শুরুতে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এই হেলিকপ্টারগুলোর অনুমোদন দেয়া হলেও এগুলো দিয়ে বাণিজ্যিক সেবাও মিলছে। এখন দেশে প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০টি হেলিকপ্টার বাণিজ্যিক সেবা দিচ্ছে। এগুলো সাধারণত চার্টার্ড সেবা দিয়ে থাকে।
এর মধ্যে স্কয়ার লিমিটেডের তিনটি, মেঘনা এভিয়েশনের চারটি, আর অ্যান্ড আর এভিয়েশনের সাতটি, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনসের চারটি, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজের চারটি, ইমপ্রেস এভিয়েশনের একটি, বিআরবি এয়ার লিমিটেডের দুটি, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি, পারটেক্স এভিয়েশন ও বিসিএলে দুটি করে হেলিকপ্টার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এগুলো আকারে অনেক ছোট। আসন সংখ্যা ৪ থেকে ৮টি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) হিসেবে কয়েক বছর আগেও মাসে হেলিকপ্টারের ফ্লাইটসংখ্যা ছিল ১ হাজারের মতো। এখন প্রতি মাসে হেলিকপ্টারের ফ্লাইট রয়েছে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি। সাধারণত করপোরেট প্রয়োজন কিংবা মেডিকেল ইমারজেন্সিতে ব্যবহার হয় এই হেলিকপ্টারগুলো। প্রতি ঘণ্টায় খরচ হয় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা।
সেই ষাটের দশকে যদি সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়মিত হেলিকপ্টার সেবা থেকে থাকে এবং সেটা আর্থিকভাবে লাভজনক হয়, তাহলে এ যুগে সেটি আবার চালু হচ্ছে না কেন? জানতে চাওয়া হয়েছিল দেশি এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এ টি এম নজরুল ইসলামের কাছে।
তিনি বলেন, ‘আগে যেমন ছিল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল আগে যেটা ছিলো সেটার চেয়ে কিন্তু এখন অনেক নিয়ম বদল হয়ে গেছে। আগের এয়ার স্পেসগুলো ছিল জাস্ট ইনফরমেশন সার্ভিস। একটা এয়ারক্রাফট যে টেকঅফ করে যাবে, যেখানে ল্যান্ড করবে সেটা কিন্তু জানানো হতো না। সেই দায়বদ্ধতা কে নেবে?
‘যতক্ষণ পর্যন্ত না হেলিপ্যাড নির্মাণ হবে আর সিভিল এভিয়েশন সেখানে একটা শ্রেণী বা নিয়ম তৈরি করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সূচি হিসেবে যাওয়াটা কঠিন। আর যদি এয়ারপোর্ট টু এয়ারপোর্ট যায় তাহলে মানুষ হয়তো শখের বসে যাবে, কিন্তু কমার্সিয়ালি এটা ভায়াবেল হবে না। হেলিকপ্টারের ভাড়াটা কিন্তু অনেক বেশি হবে।’
আবার এ ধরনের সেবা চালাতে গিয়ে যদি কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে দায় কার হবে, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। যেমন ধরা যাক যদি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় কেউ নিহত বা আহত হন, তাহলে ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে নিহতের আইনসিদ্ধ উত্তরাধিকারী বা আহত ব্যক্তি নির্দিষ্ট হারে ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বা আইকাও-এর নিয়ম এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কড়া। এটির ব্যতয় ঘটানোর সুযোগ নেই। কিন্তু হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রে এমনটা করা বেশ জটিল। পাশাপাশি নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টিও রয়েছে।
এভিয়েশন অপারেটরস এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পিআইএ যখন এটা করেছিল, তারা নিজেদের অ্যারেঞ্জমেন্টে করেছিল। সেখানে সিভিল এভিয়েশনের নিয়মগুলো কতটা ফলো করা হয়েছে, আমার জানা নেই। তখন হয়ত এমন একটি এয়ারস্পেসের কথা চিন্তা করা হয়েছে, যেখানে দায়ভার সম্পূর্ণভাবে পাইলট বা অপারেটরের উপরে থাকবে।
‘ওই অবস্থান এখন নেই। এখানে নিরাপত্তার একটি বিষয়ও আছে। এয়ারপোর্ট থেকে যদি একটা আননোন প্লেসে যায়, আবার সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে আসে বিমানবন্দরে, সেখানে যদি সিকিউরিটি চেকগুলো না হয়, তাহলে সেটা অন্যদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।’
আশার কথা হচ্ছে, রাজধানীর অদূরে কাওলা এলাকায় দেশের প্রথম হেলিপোর্ট নির্মাণ করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু হেলিপোর্ট নামের এই হেলিপোর্টে অন্তত ৮০টি হেলিকপ্টার রাখার ব্যবস্থা থাকবে। একই সময়ে একাধিক হেলিকপ্টার ওঠানামার প্রযুক্তিও সংযুক্ত থাকবে এতে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আবারও ষাটের দশকের সেই হেলিকপ্টার সার্ভিসের মতো কোনো সেবার দেখা মিলতে পারে।
আরও পড়ুন:
গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড SRO No-404-Law/2025 এর মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রণীত আয়কর আইন, ২০২৩ এর Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ বাতিল করে ২০২৩ সালে বাংলা আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করার পর হতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আয়কর আইনের Authentic English Text প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকতেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text সরকারী গেজেটে প্রকাশ হবার ফলে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ আয়কর আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাবেন বিধায় করদাতাগণের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কাস্টমস আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর Authentic English Text সরকারি গেজেটে প্রকাশের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই এই দুটি আইনের Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীগনের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন পদ্মা সেতুতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাশলেস, টোল কালেক্টর ব্যতীত ননস্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ETC) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের টোল পরিশোধ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় এসেছে।
বর্তমানে বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের অ্যাপ এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা বিকাশ অ্যাপে গিয়ে “টোল” অপশনের অধীনে “মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করুন” এ প্রবেশ করে গাড়ির নম্বর ও চেসিস নম্বরের শেষ ৪ (চার) ডিজিট প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। সফল রেজিস্ট্রেশনের পর ফিরতি এসএমএসে একটি Ekpass ID প্রেরণ করা হবে।
এই Ekpass ID ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাপের “Pay Bill” অপশনের “D-Toll Top-Up” সেবার মাধ্যমে রিচার্জ করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার নিকটস্থ রেজিস্ট্রেশন বুথে বিআরটিএ অনুমোদিত RFID ট্যাগ প্রথমবারের মতো যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, যানবাহন কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ETC লেন ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।
১৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ পদ্মা সেতুর ইটিসি বুথ পরিদর্শন করেন এবং ইটিসি সেবা ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পারাপার করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ETC সিস্টেমের লাইভ পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই সেবার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ETC সিস্টেমের মাধ্যমে মোট ১,৮১৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং মোট ৩৪,৯১,৭০০ টাকা টোল আদায় সম্পন্ন হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয়ের বিশেষ নির্দেশনা ও দিকনির্দেশনায় পদ্মা সেতুতে এই ETC সিস্টেম বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি দেশের টোল ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সময়, জ্বালানি ও মানবসম্পদের অপচয় হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ এই সেবার আওতায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর a2i (এটুআই) কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং নতুন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে সংযুক্তির কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এই টোল কালেক্টর ব্যতীত নন স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীরা দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে টোল পরিশোধ করতে পারবেন—যা বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহিদ ৫৮ টি পরিবার এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ ১৯টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে, মোট ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। ঐতিহাসিক শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আজকের এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।" শহীদ পরিবারদেরকে স্বীকৃতি দিতে পেরে সরকার গর্বিত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন ইতিহাস থেকে যেনো কেউ ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরের শহীদদের নাম মুছতে না পারে, এজন্য শাপলা চত্বরেই খোদাই করে লেখা হবে শহীদদের নাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন,"শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আর্থিক সহায়তা প্রদান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ।" এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মোদি বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, "স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এই মহতী উদ্যোগে সারা বাংলার আলেম সমাজ সম্মানিত হয়েছে। "
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান জনাব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া।
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ। সূত্র: বাসস
ইতালির রোমে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব খাদ্য ফোরাম ২০২৫-এ যোগ দিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ও অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি উইং) ড. মো. মাহমুদুর রহমান।
উপদেষ্টার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ফোরামে দেশের কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সদস্য দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করবে। সফরকালে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা ইতালির ইন্টেরিয়র মিনিস্টার এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতালির রোমস্থ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য এ ফোরাম ১০ অক্টোবর শুরু হয়ে চলবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সূত্র: বাসস
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করে মোট ১২ টি নতুন কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক গতকাল একটি সরকারি আদেশ জারী করা হয়েছে। কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগ দু’টির বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে জনবল বৃদ্ধি এবং নতুন ১২টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস এবং বিশেষায়িত ইউনিটসমূহে ৩৭৩টি ক্যাডার পদ এবং ৩,২২৪ টি নন-ক্যাডার পদসহ মোট ৩,৫৯৭টি পদ নতুনভাবে সৃজন করা হয়েছে।
কর জাল সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে স্বনির্ভরতা অর্জন, সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি পরোক্ষ কর ব্যাবস্থাকে অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং মন্ত্রি পরিষদ বিভাগসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রশাসনিক অনুমোদন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক উক্ত আদেশ জারী করা হয়। উক্ত আদেশ অনুযায়ী ৩ পর্যায়ে ৫টি নতুন মূল্য সংযোজন কর কমিশনারেট, ৪টি নতুন কাস্টমস হাউস এবং ৩ টি বিশেষায়িত দপ্তর সৃজন করা হলো।
নতুন ১২ টি কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিট সৃজন ছাড়াও উক্ত সরকারি আদেশের মাধ্যমে বিদ্যমান কমিশনারেট, কাস্টমস হাউস ও বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের সম্প্রসারণ, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাস্টমস কার্যক্রম এবং কাস্টমস ও ভ্যাট গোয়েন্দা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ফলে পরোক্ষ কর আহরণ কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
-জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি লাগবে।
তিনি বলেন, যোগ্য হয়েই সুযোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সংসদের আয়োজনে ১ম এমডিসি জাতীয় স্কুল, কলেজ ও আন্তঃমাদ্রাসা বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফিনালে ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা একটি স্থানে আসতে পেরেছি। এখানেই শেষ নয়, আরো বহুদূর যেতে হবে। এই পথ পাড়ি দিতে কোনো বাঁধা আসলে আমাদেরকে থেমে গেলে চলবে না। সকল বাঁধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, সকল ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে সুযোগ এসেছে সেটাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদেরকে বহুবছর সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি সকলকে কালেমা তায়্যেবার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য, তিন মাসব্যাপী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৫৪টি প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
স্কুল ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানারআপ হয়েছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
কলেজ ও উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে নটর ডেম কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং মনিপুর স্কুল ও কলেজ রানারআপ হয়েছে।
মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা চ্যাম্পিয়ন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সাঈদ, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য