দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। ঠিক এ সময় সংঘাতপ্রবণ দেশটিতে নতুন করে বিপুল শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে সশস্ত্র সংগঠন তালেবান।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে থাকার মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে দেশটির বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। সেখান থেকে পিছু হটেছে আফগান সেনা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রে একযোগে কয়েকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়, যাতে প্রাণ যায় প্রাণ তিন হাজার মানুষের। সে সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান। নাইন-ইলেভেন নামে পরিচিত ওই হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সে সময় আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবানদের।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন দেখা যাচ্ছে, আসলে গত দুই দশকে ধীরে ধীরে নতুন করে শক্তি অর্জন করেছে তালেবান। চালিয়েছে একের পর এক হামলা। বেসামরিক মানুষের পাশাপাশি আফগান, এমনকি বিদেশি সেনাদের ওপরেও হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি।
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি তালেবানের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তিতে সই করেন যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ওই চুক্তিতে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা নিশ্চিতের শর্তে তালেবানবিরোধী সেনা অভিযান বন্ধ ও সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেয় আন্তর্জাতিক জোট। চুক্তিটির মাধ্যমে সে সময় আন্তর্জাতিকভাবে কিছুটা বৈধতা অর্জন করতে সক্ষম হয় তালেবান।
ট্রাম্পের উত্তরসূরী জো বাইডেনও ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বদলাননি। তবে চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ১ মে’র মধ্যে বিদেশি সেনা পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা থাকলেও তারিখ কিছুটা পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর নেয় বাইডেন প্রশাসন। নাইন-ইলেভেন হামলার ২০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে তারিখটি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবে গত মাসে আবারও তারিখ পাল্টান বাইডেন। সময় কিছুটা এগিয়ে চূড়ান্ত সেনা প্রত্যাহারের নতুন তারিখ হিসেবে ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করেন তিনি।
এর মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের তারিখ পেছানো নিয়ে ক্ষুব্ধ তালেবান মে মাসেই আগ্রাসন শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অবকাঠামো লক্ষ্য করে কোনো ধরনের হামলা না চালালেও আফগান সেনাবাহিনী ও জনসাধারণের ওপর একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি।
ব্যাখ্যা হিসেবে তালেবান জানিয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে কোনো অবদান ছিল না পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত আফগান সরকারের।
অথচ যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তির মাধ্যমে আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনার পথ খুলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। মূলত আফগান ভূখণ্ডে দেশটির সেনাবাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সহিংসতা চলতে থাকার কারণেই দোহায় আলোচনা ভেস্তে যায়।
এরপরই মে মাসে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু করে তালেবান। দখলে নেয় প্রতিবেশী দেশ ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো।
আফগানিস্তানজুড়ে তালেবানের পূর্ণকালীন যোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। আরও রয়েছে অগুণতি সমর্থক ও সহযোগী।
আফগানিস্তানের ৪১৯টি জেলার অর্ধেকের বেশি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে ধর্মভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। তালেবানের এ দাবির সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা।
জোরালো হচ্ছে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মাইলি গত বুধবার সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ‘কৌশলগত বিজয়’ অর্জনের পথে আছে তালেবান।
প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অচিরেই আফগান জনতা, সেনাবাহিনী ও সরকারকে সদিচ্ছা আর নেতৃত্বের প্রমাণ দিতে হবে।’
সহিংসতায় কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে। গৃহহীনের সংখ্যা লাখের ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থা আফগানিস্তানকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে শংকা জোরালো হচ্ছে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে কট্টরপন্থি তালেবানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে স্থানীয় বেসামরিক আফগানরা। তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করছে আফগান সরকার।
তালেবানের মুখপাত্র সোহেল শাহীন শুক্রবার জানান, গৃহযুদ্ধ চায় না তার দল। দোহায় শান্তি আলোচনা ফের শুরু করতে হলে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে পদত্যাগ করতে হবে বলে শর্ত বেঁধে দেন তিনি।
বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শাহীন বলেন, ‘একচেটিয়া ক্ষমতায় তালেবান বিশ্বাসী নয় বলে আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। তালেবান যোদ্ধারা অস্ত্র নামিয়ে রাখবে।
‘কিন্তু এটা তখনই সম্ভব, যখন আলোচনার ভিত্তিতে সর্বসম্মত কোনো সরকার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসবে।’
তালেবানের প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা গত সপ্তাহে ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’র আহ্বান জানান। কিন্তু সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান অব্যাহত রাখতে নিজ দলের যোদ্ধাদের মধ্যেই চাপের মুখে তিনি।
তালেবানের জন্ম
আরবি ভাষায় তালেবান শব্দটির অর্থ হলো জ্ঞান অর্জনকারী বা শিক্ষার্থী।
সাবেক সোভিয়েত আমলে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছরের লড়াই করে আফগান স্বাধীনতাকামীরা। ‘মুজাহিদিন’ হিসেবে পরিচিত স্বাধীনতাকামীদের একটি অংশ ছিল তালেবানও।
মূলত ১৯৭৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে আফগানিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ দাউদ খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়া থেকে এ লড়াইয়ের শুরু। ওই অভ্যুত্থান ঘটাতে সমাজতান্ত্রিক নেতাদের মদদ দিয়েছিল তখনকার সোভিয়েত সরকার।
এরপরই, ১৯৭৯ সাল থেকে সোভিয়েত উপনিবেশের বিরুদ্ধ সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে মুজাহিদিনরা। আশির দশকজুড়ে এ বিপ্লবে মুজাহিদিনদের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোভিয়েতবিরোধী নীতির আওতায় ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী মুজাহিদিনদের সহযোগিতার দায়িত্ব নিয়েছিল ওয়াশিংটন। কারণ সে সময় স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ ছিল তখনকার সোভিয়েত সরকার বা ‘ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকস’, সংক্ষেপে ইউএসএসআর, অর্থাৎ বর্তমান রাশিয়া।
তুমুল গোলমেলে পরিস্থিতির মধ্যে ১৯৮৯ সালে আফগান ভূখণ্ড ছাড়ে সোভিয়েত সেনারা। নেতৃত্ব সংকটে সে সময় চরম অস্থিতিশীলতার মুখে পড়ে আফগানিস্তান। ১৯৯২ সালে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লড়াইয়ে জড়ায় খোদ মুজাহিদিন কমান্ডাররাই।
বিভক্ত হয় কাবুল। প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক শ রকেট এসে পড়ত রাজধানী নগরীটিতে।
তবে গৃহযুদ্ধে শক্তিশালী ভূমিকায় তালেবান অবতীর্ণ হয় মূলত ১৯৯৪ সালে। তৎকালীন তালেবান যোদ্ধাদের বেশিরভাগই শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের আফগান সীমান্ত এলাকার রক্ষণশীল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে।
কাবুলের পর আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বড় শহর কান্দাহার দখল থেকে নব্বইয়ের দশকে উত্থান শুরু তালেবানের।
পশতুন অধ্যুষিত কান্দাহারের পর একে একে দেশের অন্যান্য শহরেও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে গোষ্ঠীটি। জনসাধারণকে আশ্বাস দেয় নিরাপদ নাগরিক জীবনের।
বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধে অতীষ্ঠ আফগান জনতাও স্বাভাবিকভাবেই নতুন জীবনের আশায় স্বাগত জানায় তালেবান যোদ্ধাদের।
সে সময় ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় তালেবানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুজাহিদিন কমান্ডার ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
১৯৯৬ সালে রাজধানী কাবুল দখল করে তালেবান। কাবুল স্কয়ারে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলায় আফগানিস্তানের শেষ বামপন্থি প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহ আহমাদজাইকে।
এরপরই আফগানিস্তানকে ইসলামিক আমিরাত ঘোষণা করে তালেবান। শুরু হয় তালেবানের নিজস্ব ব্যাখ্যায় দাঁড় করানো কট্টর শরিয়াহ আইনের বাস্তবায়ন।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানসহ মোট তিনটি দেশ আফগানিস্তানের শাসক দল হিসেবে সে সময় তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়।
আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠায় তা সক্ষমও হয়েছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শুরুর দিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে গোষ্ঠীটি।
ছয় বছরের শাসন
শুরুর দিকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের যুক্তি হিসেবে গৃহযুদ্ধকালীন অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর কথা বলেছিল তালেবান। কিন্তু পরে সেসব বিধিনিষেধ আর প্রত্যাহার করেনি।
এসব বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল নারীদের শিক্ষাগ্রহণ ও চিকিৎসা বাদে অন্য সব ধরনের পেশায় তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি।
ধর্মীয় রীতির নামে নিষিদ্ধ ছিল গান শোনা, টেলিভিশন দেখাসহ বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর নির্দোষ নানা মাধ্যমের ব্যবহার। খেলাধুলাও নিয়ন্ত্রণ করা হতো কঠোরভাবে। শুধু পুরুষরাই খেলাধুলায় অংশ নিতে পারতো, কিন্তু তাদের রক্ষণশীল পোশাক পরে খেলতো হতো এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় বিরতি বাধ্যতামূলক ছিল।
তালেবানের শাসনামলে এসব কঠোর বিধিনিষেধ কেউ না মানলে তাকে প্রকাশ্যে পেটানো হতো বা কারাদণ্ড দেয়া হতো।
ছয় বছরের শাসনজুড়ে আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরেও চরম নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে।
২০০১ সালে বামিয়ান প্রদেশে গৌতম বুদ্ধের ঐতিহাসিক ভাস্কর্য ধ্বংসে তালেবানের সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয়েছিল বিশ্বজুড়ে।
যেভাবে তালেবানের বিরুদ্ধে তৎপর বিশ্ব সম্প্রদায়
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালোতালিকাভুক্ত আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৯৯৯ সালে তালেবানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় জাতিসংঘ।
নাইন-ইলেভেন হামলার পর আফগানিস্তানে লুকিয়ে থাকা হস্তান্তরে তালেবানকে অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্র।
সাবেক মুজাহিদিন কমান্ডার আব্দুল রব রসুল সায়াফের আমন্ত্রণে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন আল-কায়েদা নেতা সৌদি নাগরিক ওসামা বিন লাদেন। তখন থেকে সেখানেই আত্মগোপনে ছিলেন লাদেন।
লাদেনকে হস্তান্তরের অনুরোধটি প্রত্যাখ্যান করে তালেবান। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের কাছে নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলায় লাদেনের ভূমিকার প্রমাণ চায় গোষ্ঠীটি। পাশাপাশি, ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনারও প্রস্তাব দেয়।
দুটি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করে বুশ প্রশাসন। লাদেনকে হস্তান্তর না করায় ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে সেনা অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
এর ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের জোটবদ্ধ বিমান হামলার মুখে কয়েক মাসের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান।
তালেবানপরবর্তী আফগানিস্তান ও তালেবানের পুনরুত্থান
২০০১ সালের ডিসেম্বরে হামিদ কারজাইয়ের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে গঠিত হয় একটি নতুন অন্তর্বর্তী সরকার।
এর তিন বছর পর প্রণীত হয় নতুন সংবিধান। ষাটের দশকের সংশোধিত সংবিধানের আলোকে তৈরি নতুন সংবিধানে নারী ও আদিবাসী সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়।
১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ বছর আফগানিস্তান শাসন করেছিলেন বাদশাহ মোহাম্মদ জহির শাহ। দুররানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে দেশ শাসন করা জহির শাহ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রথমবার আফগান নারী ও আদিবাসী সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকারে অনুমোদন দিয়েছিলেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের শাসনামলেই ২০০৬ সাল নাগাদ আবারও সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে তালেবান। বিদেশি সেনা ও তাদের আফগান সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুরু হয় যোদ্ধাদের এক ছাদের নিচে আনা।
আফগান সরকার ও তালেবানের মুখোমুখি শান্তি আলোচনার উদ্যোগ
গত ২০ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের হামলায় প্রাণ গেছে ৪০ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষের। নিহত হয়েছে আফগান সেনা ও পুলিশের কমপক্ষে ৬৪ হাজার সদস্য আর আন্তর্জাতিক জোটের সাড়ে তিন হাজারের বেশি সেনা।
বিদেশি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম এই যুদ্ধ আর অবকাঠামো পুনঃনির্মাণে আমেরিকান সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু এখনও আফগানিস্তানে দারিদ্র প্রকট, ভঙ্গুর অবকাঠামো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সব খাতে।
যুদ্ধের খরচ বেড়ে চলায় আর রাজনৈতিক সমাধান না আসায় ২০১১ সালে কাতারের দোহায় তালেবানের একাংশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট কারজাইয়ের সরকারের সঙ্গে তালেবানকে মুখোমুখি আলোচনায় বসানোর লক্ষ্যে হয় ওই আলোচনা।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দোহায় তালেবানের একটি কার্যালয় স্থাপন চালু হয়। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নেতৃত্বে বর্তমান আফগান সরকারের সঙ্গে প্রথমবার আনুষ্ঠানিক ও সরাসরি আলোচনায় বসে তালেবান।
তালেবানের ‘সমান্তরাল সরকার’
ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান নামে একটি স্বঘোষিত সমান্তরাল রাষ্ট্র কায়েম করেছে তালেবান। নিজস্ব একটি সাদা পতাকাও আছে তাদের। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশে নিজেদের ছায়া সরকারের প্রশাসনকে নেতৃত্ব দিতে ছায়া গভর্নরও নিয়োগ দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
তালেবানপ্রধান একটি পরিষদে নেতৃত্ব দেন। পরিষদটি অর্থ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ ১২টির বেশি কমিশন দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। তাদের নিজস্ব আদালত ব্যবস্থাও আছে।
তালেবান সদস্য ও জাতিসংঘের একটি কমিটির তথ্য অনুযায়ী, তালেবানের এই ছায়া সরকারের বার্ষিক আয় প্রায় দেড় শ কোটি ডলার।
আঞ্চলিক মাদক ব্যবসায় জড়িত স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেও রাজস্ব পায় তালেবান। মেথামফেটামাইনধর্মী এক ধরনের মাদক উৎপাদনও করে গোষ্ঠীটি। গত বছর খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও বিক্রি থেকেও শত-কোটি ডলার আয় করেছে তারা।
তালেবানের নিজস্ব কর সংগ্রহ ব্যবস্থা আছে। বিদেশ থেকেও বিপুল অঙ্কের অনুদান পায় তারা। ধারণা করা হয়, ইরান ও পাকিস্তানে তালেবানের অনেক আর্থিক পৃষ্ঠপোষক আছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে গোষ্ঠীটি।
জনজীবনে শান্তির সম্ভাবনা
বিদেশি সেনা প্রত্যাহার পুরোদমে শুরুর আগেই এবং শান্তি আলোচনা চলাকালীনই চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সহিংসতায় হতাহত হয়েছে এক হাজার ৮০০ বেসামরিক আফগান। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
গুপ্তহত্যার শিকার অনেক সংবাদকর্মী ও অধিকারকর্মীর মৃত্যুর জন্যও তালেবানের দিকে সন্দেহের তীর। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে- যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জোটের সেনারা পূর্ণরূপে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পর কী ঘটবে? আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকার কি আদৌ টিকতে পারবে?
২০১৯ সালের উল্লেখযোগ্য একটি জনমত জরিপে উঠে এসেছে, বর্তমানে তালেবানের প্রতি কোনোরকম সহানুভূতি রাখেন না আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ মানুষ।
আফগানিস্তানে আবারও তালেবান পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে দেশটিতে জনজীবনের কী হাল হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত আফগানরা।
এমনকি সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা সংবিধানটি তালেবান ছুড়ে ফেলে দেবে কি না, ঘনিয়ে উঠছে সে শঙ্কাও।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি উপসম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে মোটামুটি স্বচ্ছ ধারণা দিয়ে রেখেছে তালেবান। তারা জানিয়েছে যে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা। সে ব্যবস্থায় শিক্ষা থেকে শুরু করে পেশাগত বিষয় পর্যন্ত সবকিছুতে নারীরা কেবল ততটুকু অধিকারই পাবেন, যতটুকু ইসলাম ধর্মে তাদের দেয়া হয়েছে।
যদিও তালেবান মুখপাত্র শাহীন চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হিজাব বা মাথা ঢাকা পোশাক পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া, এমনকি রাজনীতিতেও অংশ নিতে পারবেন নারীরা।’
বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আগে থেকেই এ চর্চা বিদ্যমান।
আরও পড়ুন:অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইরানের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ৩১ হাজার ভবন এবং ৪ হাজার যানবাহন ধ্বংসসহ ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইরানে হামলার জেরে মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলকে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে।
ইহুদিবাদী দেশটির এই ক্ষয়ক্ষতিই প্রমাণ করে যে, সংঘাতের সময় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইসরায়েলের কি বিশাল এবং অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। যদিও ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে আগে আগ্রাসন চালিয়েছিল এবং ১২ দিন ধরে ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকায় আঘাত করেছিল।
ইসরায়েলকে সাহায়তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২গত ২ জুন ইরানের নাতানজ, ফোরদো এবং ইস্পাহানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছিল। আগ্রাসনের পরপরই ইরানি সামরিক বাহিনী শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালিয়েছিল। ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্স অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩-এর অংশ হিসেবে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ২২টি প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার ফলে অধিকৃত অঞ্চল জুড়ে শহরগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও, মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায়, ইরানি সশস্ত্র বাহিনী কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম আমেরিকান সামরিক ঘাঁটি। ২৪ জুন কাতারের মধ্যস্থতায় কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গত রোববার একটি ধর্মীয় আদেশ বা ফতোয়া জারি করেছেন ইরানের শীর্ষ শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি। এই ফতোয়ায় তিনি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে ‘ঈশ্বরের শত্রু’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বা শাসক ইসলামের নেতা বা শীর্ষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হুমকি দেয়, সে ‘যুদ্ধপিপাসু’ বা ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
গ্র্যান্ড মুফতি আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি এই ফতোয়ায় বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে। কারণ তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বকে হুমকি দিয়েছে। ফতোয়ায় বলেন, যে ব্যক্তি বা শাসক ইসলামের নেতা বা শীর্ষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হুমকি দেয়, সে ‘যুদ্ধপিপাসু’ বা ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইরানি আইন অনুযায়ী, যারা সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাদের শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড, শূলবিদ্ধকরণ, অঙ্গচ্ছেদ অথবা নির্বাসন। ফতোয়ায় আরও বলা হয়েছে, এই শত্রুদের সঙ্গে মুসলিম বা কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে কোনও ধরনের সহযোগিতা বা সমর্থন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। সব মুসলমানের উচিত এই শত্রুদের কথাবার্তা ও কাজের জন্য তাদের অনুতপ্ত করা।
এছাড়াও এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো মুসলমান তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পথে ক্ষতি বা কষ্টের সম্মুখীন হয়, তাহলে সে সৃষ্টিকর্তার রাস্তায় সংগ্রামরত একজন যোদ্ধার পুরস্কার লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ। এই ফতোয়ার পেছনে ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনাকেই কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
ইরানি ধর্মীয় নেতারা এর আগেও ফতোয়া দিয়েছেন। ইরানের অন্যতম ভয়ংকর ফতোয়া জারি হয় ১৯৮৯ সালে। লেখক সালমান রুশদির ‘শয়তানের উক্তি’ বা দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করা হয়। অনেক মুসলমান মনে করেছিলেন যে বইটি তাদের ধর্মকে অবমাননা করেছে। সেই ফতোয়ার পর রুশদিকে আত্মগোপনে যেতে হয়।
‘৭ দিনের মধ্যে ইরানে ফের হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল’
ইরানে ফের যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তেহরানের একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের ওপর আবার হামলা হতে পারে। গতকাল সোমবার ইরান ইন্টারন্যাশনালের লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদের প্রধান ইব্রাহিম মোত্তাকি বলেন, বর্তমান যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল-আমেরিকার ‘সংঘবদ্ধ’ হওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত সময়কাল মাত্র, এবং তারা শিগগিরই ইরানের তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করবে। সাক্ষাৎকারে মোক্তাকি আরও বলেছেন, প্রাপ্ত প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন সহায়তায় ইসরায়েল সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের আকস্মিক ও ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করবে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধবিরতিকে তাদের নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠন এবং সর্বোত্তম করার একটি উপায় হিসেবে দেখে বলে সতর্ক করেছেন ইরানি এই বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরিতে সহায়তা করেছিলযুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরিতে সহায়তা করেছিল। মোক্তাকি ইরানের কর্মকর্তাদের এই যুদ্ধবিরতি গুরুতরভাবে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরানি কর্মকর্তারা এবার হামলার লক্ষ্যবস্তু হবেন।
আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে যে শর্ত দিল ইরান
ইরান বলেছে, কূটনৈতিক আলোচনা আবার শুরু করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ওপর নতুন করে হামলার চিন্তা বাতিল করতে হবে। দেশটির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানছি বিবিসিকে এ কথা বলেছেন। এক সাক্ষাৎকারে মাজিদ তাখত-রাভানছি বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে জানিয়েছে যে, তারা আলোচনায় ফিরতে চায়। কিন্তু আলোচনা চলাকালে নতুন করে হামলার মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।
ইরানে দখলদার ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিলো গত ১৩ জুন। ওমানের রাজধানী মাস্কটে তার দুদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার আলোচনায় বসার কথা ছিল।
উত্তর মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজের একটি বেসরকারি একটি শ্মশানে ৩৮১টি মৃতদেহ স্তূপীকৃত অবস্থায় সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। রোববার স্থানীয় প্রসিকিউটরের কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে ।
মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
চিহুয়াহুয়া রাজ্য প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের যোগাযোগ সমন্বয়কারী এলয় গার্সিয়া এএফপিকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ৩৮১টি মৃতদেহের সন্ধান পেয়েিেছ এবং সেগুলো আমাদের কাছে আছে। মৃতদেহগুলো অনিয়মিতভাবে শ্মশানে জমা করা হয়েছিল এবং সেগুলোকে দাহ করা হয়নি।’
গার্সিয়া বলেন, শ্মশানের ভবনে বিভিন্ন কক্ষে মৃতদেহগুলো ‘স্তূপীকৃত’ অবস্থায় ছিল।
তিনি বলেন, ‘মৃতদেহগুলোএকটির ওপরে আরেকটি মেঝেতে রাখা হয়েছিল। ‘সমস্ত মৃতদেহকে সুগন্ধিকরণ করা হয়েছিল। গার্সিয়া বলেন, ছাইয়ের পরিবর্তে আত্মীয়দের ‘অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ অনুমান করেছে, কিছু দেহাবশেষ দুই বছর পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারে। গার্সিয়া শ্মশান কতৃপক্ষের ‘অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতা কে দায়ী করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যতটা প্রক্রিয়া করতে পারেন তার চেয়ে বেশি নিতে পারবেন না।’শ্মশানের একজন প্রশাসক ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রসিকিউটরদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
তবে, কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট করেনি মৃতদেহগুলো অপরাধমূলক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের কিনা। সংগঠিত অপরাধের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ মেক্সিকো বছরের পর বছর ধরে ফরেনসিক ব্যবস্থার সংকটে ভুগছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য মৃতদেহের সংখ্যাধিক্য, কর্মীদের অভাব এবং অর্থের সীমাবদ্ধতা।
ফিলিস্তিনের গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় গত শুক্রবার জানিয়েছে, মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণ কেন্দ্রগুলো থেকে বিতরণ করা আটার ব্যাগে অক্সিকোডোন নামের মাদক বড়ি পাওয়া গেছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে ওই কার্যালয় বলেছে, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য পেয়েছি। তারা আটার ব্যাগের ভেতরে এই বড়িগুলো পেয়েছেন।’ কার্যালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘কিছু মাদক ইচ্ছাকৃতভাবে গুঁড়া বা দ্রবীভূত করে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
অক্সিকোডোন একটি শক্তিশালী মাদক, যা মূলত ক্যানসার রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ও তীব্র ব্যথা উপশমে ব্যবহার করা হয়। এ মাদক অত্যন্ত আসক্তিকর এবং এর জীবননাশক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, বিভ্রম ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে গাজায় বিতরণ করা আটার ব্যাগে বড়ি পাওয়া যাওয়ার ছবি প্রকাশ হয়েছে। পরে গাজা কর্তৃপক্ষ ওই বিবৃতি দেয়।
গাজার একজন ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে জঘন্য রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফেসবুকে গাজার চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা লিখেছেন, ‘এই মাদক ‘আমাদের সামাজিক চেতনা ধ্বংস করার একটি অস্ত্র’।’ এভাবে ‘মাদকাসক্তি ছড়ানো ও ফিলিস্তিনি সমাজের বন্ধন ভেঙে দেওয়ার জঘন্য অপরাধের’ জন্য পুরোপুরি ইসরায়েলকেই দায়ী করছে গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়।
কার্যালয় আরও বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অবরুদ্ধ অবস্থাকে ‘সাহায্য ও সহায়তার’ ছদ্মাবরণে মাদক পাচারের উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুকূপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তারা।
জিএইচএফের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) একটি বিতর্কিত মার্কিন-ইসরায়েলি সংস্থা। বর্তমানে গাজায় ত্রাণ বিতরণে যুক্ত রয়েছে সংস্থাটি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকার অভিযোগে জিএইচএফের তীব্র সমালোচনা করেছে।
গত বুধবার ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, এ সংস্থা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করছে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তুচ্যুতি’ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা গণহত্যার মতো অপরাধে সহায়তা করে থাকতে পারে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, জিএইচএফের কার্যক্রম চলাকালে গত এক মাসে সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫১৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, ইসরায়েলি সেনারা স্বীকার করেছেন যে তারা জিএইচএফ পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছেন। মিডল ইস্ট আই জিএইচএফের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়েছে।
গাজায় অপুষ্টিতে ৬৬ শিশুর মৃত্যু
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার প্রশাসনের অভিযোগ দুধ, পুষ্টিকর খাদ্য এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেয়াতেই এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এক বিবৃতিতে গাজার মিডিয়া প্রশাসন জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই অবরোধ একটি যুদ্ধাপরাধ। বেসামরিক লোকদের নির্মূল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে।
এদিকে গাজার তুফাহ, দেইর আল বালাহ, রাফা, খান ইউনিসসহ বেশ কয়েকটি এলাকাতেই চলছে ইসরায়েলি বিমান হামলা। গত শনিবার একদিনে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন, তাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।
আল জাজিরা বলছে, গত শনিবার ভোরে গাজা সিটির আল তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় কেঁপে ওঠে চারপাশ। বিস্ফোরণের সময় গাজাবাসী আশ্রয় নিচ্ছিল জাফা স্কুলের পাশে একটি বহুতল ভবনে। ভবনটির তিনটি তলা একসঙ্গে ধসে পড়ে। এ ঘটনায় শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। পরিবারের আহাজারি আর ক্লান্তিমাখা চেহারায় শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়ে উপত্যকাজুড়ে।
ফিলিস্তিনের স্টেডিয়ামের পাশে আরও একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ইসরায়েলি বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হন। হামলায় আহতদের অনেকেই শিফা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান।
তবে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলেও চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কেননা হাসপাতালের অর্ধেক কর্মী এরমধ্যেই নিহত বা গুম হয়েছেন। এছাড়া দেইর আল বালাহতে দুপুরের দিকে একটি রাস্তায় বোমার আঘাতে একসঙ্গে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার প্রায় চার শতাংশ। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পরোক্ষ প্রভাব যেমন: ক্ষুধা, ঠান্ডা এবং রোগ-ব্যাধির কারণেও অনেক মানুষ মারা গেছে।
‘হামাসের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ায় আছেন নেতানিয়াহু’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একটি দীর্ঘ পোস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে যুদ্ধের নায়ক হিসেবে উল্লেখ করে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ট্রাম্প। দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলার নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। শনিবার রাতের ওই পোস্টে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, ইরানের বিপজ্জনক পারমাণবিক হুমকি থেকে মুক্তি পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুর্দান্ত কাজ করেছেন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প বলেন, তিনি (নেতানিয়াহু) এখন হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, যার মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর নিজের দেশে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিষয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গত মার্চে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এমন একটি যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন যেটি সুফল বয়ে আনছিল। তার এই সিদ্ধান্তকে ওই সময় ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। এটি ছিল গাজা যুদ্ধবিরতি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী রোববার উত্তর গাজা উপত্যকার এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরে যেতে সতর্কতা জারি করেছে। এরমধ্যে গাজা শহরের কিছু অংশ এবং আশেপাশের এলাকার কিছু অংশও রয়েছে। হামাসের সাথে যুদ্ধের ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরাই উত্তর গাজার মানচিত্রের সাথে এক্স-এ এক পোস্ট করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য ‘অবিলম্বে দক্ষিণে আল-মাওয়াসির দিকে নাগরিকদের সরে যেতে’। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সক্ষমতা ধ্বংস এবং তাদের প্রতিহত করার জন্য ইসরাইলি বাহিনী এই এলাকাগুলোতে তীব্র শক্তি প্রয়োগ করবে এবং সামরিক অভিযানগুলো তীব্র এবং প্রসারিত হবে’।
শনিবার মার্কিন সিনেটররা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল’ ব্যয় বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছেন। বিলটি একটি বিশাল বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রস্তাব যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভ্যন্তরীণ এজেন্ডার মূল অংশগুলো অর্জন করবে এবং একই সাথে সমাজকল্যাণ কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করবে।
ওয়াশিংট থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ দিয়ে তার উত্তরাধিকার সিলমোহর করার আশা করছেন, যা তার মেয়াদ শেষ হওয়া প্রথম-মেয়াদী কর কর্তনকে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রসারিত করবে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করবে।
তবে, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনের দিকে নজর রাখা রিপাবলিকানরা এই প্যাকেজ নিয়ে বিভক্ত, যা লাখ লাখ দরিদ্র আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবা কেড়ে নেবে এবং দেশের ঋণে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি যোগ করবে।
শনিবার গভীর রাতে রিপাবলিকান সমর্থকরা প্রক্রিয়াগত ভোট বিলম্বিত করার পর সিনেট আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটির ওপর বিতর্ক শুরু করে। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভোটাভুটির প্রথম আহ্বানের কয়েক ঘন্টা পরেই সিনেটররা ৫১-৪৯ ভোটে বিতর্ক শুরু করার প্রস্তাবটি পাস করেন, যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তার নিজের দলের হোল্ডআউটদের সাথে আলোচনায় যোগ দেন।
অবশেষে, দুই রিপাবলিকান সিনেটর উদ্বোধনী বিতর্কে ‘না’ ভোট দিয়ে ৪৭ জন ডেমোক্র্যাটের সাথে যোগ দেন।
ট্রাম্প তার দলকে ৪ জুলাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের মধ্যে বিলটি পাস করার জন্য এবং স্বাক্ষর করার জন্য তার ডেস্কে রাখার জন্য চাপ দিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটরা আইনটির এবং ট্রাম্পের এজেন্ডার তীব্র বিরোধিতা করছেন এবং বিতর্ক চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে বিলটির সম্পূর্ণ অংশ চেম্বারে জোর দিয়ে শোনানোর মাধ্যমে শুরু করেছিলেন।
বিলটি প্রায় ১ হাজার পৃষ্ঠা দীর্ঘ এবং এটি পড়তে আনুমানিক ১৫ ঘন্টা সময় লাগবে।
সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, ‘বিলে কী আছে, রিপাবলিকানরা আমেরিকাকে তা জানাবে না, ‘তাই ডেমোক্র্যাটরা এটিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য করছে। এটি পড়ার জন্য প্রয়োজনে আমরা সারা রাত এখানে থাকব।’
এই সপ্তাহের শুরুতে তেহরানের এভিন কারাগারে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৭১ জন নিহত হয়েছে বলে রোববার ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, দুই চিরশত্রুর মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ বিরতি শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছে তেহরান।
বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই হামলায় এভিন কারাগারে ৭১ জন নিহত হয়েছে।’
১৩ জুন ইসরাইলের বোমা হামলা শুরু করলে সোমবার তেহরানের উত্তরে অবস্থিত ভারী সুরক্ষিত কমপ্লেক্সে ৭১ জন নিহত হয়।
ইসরাইলি বাহিনী শনিবার ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের বিধ্বস্ত অঞ্চলে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে নয়জন শিশুসহ ৩৭ জনকে হত্যা করেছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানায়। গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে জানান, বিভিন্ন স্থানে সাতটি ইসরাইলি ড্রোন ও বিমান হামলায় ৩৫ জন এবং গাজার মধ্যাঞ্চলীয় নেটজারিম জোনে খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরাইলের গুলিতে আরও দুজন নিহত হয়েছে।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়ায় একটি বাড়িতে বিমান হামলায় তিনজন শিশু নিহত হয়।
বাসাল বলেন, গাজা নগরীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি পাড়ায় কমপক্ষে ছয় শিশু নিহত হয়েছে, একটি স্কুলের কাছে আশ্রয় নেওয়া কিছু বাস্তুচ্যুত মানুষও বিমান হামলায় নিহত হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরাইলি সেনাবাহিনী মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
গাজায় বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট শনিবার বলেছেন ‘তার দেশ ও ইউরোপ গাজায় খাদ্য বিতরণের নিরাপত্তায় অবদান রাখতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ হামাসের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাহায্য পাওয়ার ইসরাইলি উদ্বেগেরও সমাধান করবে।
গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য বিতরণে ফ্রান্স কীভাবে সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে ব্যারোট কোনও বিবরণ দেননি।
গাজায় গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ এবং অনেক এলাকায় প্রবেশের অসুবিধার কারণে এএফপি স্বাধীনভাবে মৃতের সংখ্যা এবং উদ্ধারকারীদের দেওয়া বিবরণ যাচাই করতে পারছে না।
এএফপির ছবিতে দেখা গেছে গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতালে সাদা কাফন ও কম্বলে মোড়ানো কমপক্ষে দুই শিশু সহ সাতজনের মৃতদেহ ঘিরে শোকাহতরা কাঁদছেন।
গাজা নগরী থেকে ধারণ করা অন্যান্য এএফপির ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার পর ভবনগুলো থেকে ধোঁয়ার মেঘ উঠছে।
জাবালিয়ায়, একজন এএফপির আলোকচিত্রী বেসামরিক প্রতিরক্ষা উদ্ধারকারীদের পিঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে দেখেছেন।
মন্তব্য