× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
পেগাসাস বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের ভয়ঙ্কর অস্ত্র
google_news print-icon

পেগাসাস: বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের ভয়ঙ্কর অস্ত্র

পেগাসাস-বিশ্বজুড়ে-সাংবাদিক-নিয়ন্ত্রণের-ভয়ঙ্কর-অস্ত্র
এনএসওর ক্লায়েন্টদের নজরদারির জন্য নির্বাচিত ফোন নম্বরের ৫০ হাজার রেকর্ডের একটি ফাঁস হওয়া ডেটাবেস হাতে এসেছে ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের। ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর পার্টনারদের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে অন্তত ১০টি এনএসও ক্লায়েন্ট ২০ দেশের অন্তত ১৮০ জন সাংবাদিকের ফোনকে বাছাই করছে।

কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একসঙ্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যক্তিগত ফোনে এমন নজরদারি করছে, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই। ইসরায়েলের একটি কোম্পানির তৈরি করা স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে অসংখ্য সংবাদ কর্মীর ওপরের চলছে নজরদারি। ঘটেছে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনাও।

ফ্রান্সের অলাভজনক সংবাদমাধ্যম ফরবিডেন স্টোরিজ এ নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার

বাকুতে খাদিজা ইসমায়িলোভার বাড়ি যেন এক কারাগার। কাস্পিয়ান সাগরের পাশে আজারবাইজানের মতো তেল-সমৃদ্ধ দেশে ২০১৪ সাল থেকে বাক স্বাধীনতা ও ভিন্ন মতের ওপর চাপ বাড়ছে। ক্ষমতাসীন পরিবার নিয়ে অনুসন্ধানের কারণে ইসমায়িলোভা সরকারের অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।

আজারবাইজানের এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক জানতেন, তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তার বন্ধু ও পরিজনরাও একই কথা তাকে বলেছেন। বন্ধু ও পরিবারের লোকদেরকেও ইসমায়িলোভার ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ তার পেছনে ভালোভাবেই লেগেছে। তার বাড়িতে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে তার যৌনসম্পর্কের মুহূর্তের ছবি তুলেছে; তার বিরুদ্ধে এক সহকর্মীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে; শেষ পর্যন্ত ট্যাক্স ফাঁকির দায়ে সাত বছরের জন্য কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে।

১৮ মাস পর তাকে জামিনে ছাড়া হলেও পাঁচ বছরের জন্য তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

২০২১ সালের মে মাসে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর, যখন ইসমায়িলোভা সবকিছু গুছিয়ে তুরস্কের আঙ্কারা যাওয়ার বিমানে ওঠেন, তিনি ভেবেছিলেন সব ছেড়েছুড়ে চলে যেতে পারবেন।

তবে তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এক গুপ্তচর তার সঙ্গে যাচ্ছে।

প্রায় তিন বছর ইসমায়িলোভার ফোনে পেগাসাস (ফোন হ্যাক করার ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার) ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ফরবিডেন স্টোরিজের সঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবের পরীক্ষা অনুযায়ী, ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসওর তৈরি এই অত্যাধুনিক স্পাইওয়্যারটি যে কোনো ফোনের তথ্যের নিয়ন্ত্রণ দিতে পারে, এমনকি দূর থেকে ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের নিয়ন্ত্রণও নেয়াও সম্ভব।

নিজের ফোনের নিরাপত্তা হাতছাড়া হওয়ার বিষয়টি জানতে পারার পরদিন ইসমায়িলোভা আঙ্কারায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সারারাত ভেবেছি, আমার ফোন দিয়ে কী কী করেছি। যে মেসেজগুলো পাঠিয়েছি ওগুলোর জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। অন্য যারা আমার ফোনটিকে নিরাপদ ভেবে এনক্রিপ্টেড মেসেজ পাঠিয়েছে তাদের জন্যও নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যরাও এর শিকার। আমার সোর্স, যাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি, যারা আমাকে তাদের গোপন কথা জানিয়েছে তারাও এর শিকার হয়েছেন।’

দ্য পেগাসাস প্রজেক্ট

ফরবিডেন স্টোরিজের সঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবের সহযোগিতায় বিশ্বের ১০টি দেশের ১৭টি সংবাদমাধ্যমের ৮০ জন সাংবাদিক মিলে পেগাসাস প্রজেক্ট নামে যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসমায়িলোভার মতো বিশ্ব জুড়ে আরও অন্তত ২০০ সাংবাদিকের ফোনকে নিশানা করেছে এনএসওর ক্লায়েন্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ।

এনএসওর ক্লায়েন্টদের নজরদারির জন্য নির্বাচিত ফোন নম্বরের ৫০ হাজার রেকর্ডের একটি ফাঁস হওয়া ডেটাবেস হাতে এসেছে ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের। ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর পার্টনারদের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে অন্তত ১০টি এনএসও ক্লায়েন্ট ২০ দেশের অন্তত ১৮০ জন সাংবাদিকের ফোনকে বাছাই করছে।

এই ক্লায়েন্ট সরকারগুলোর মধ্যে যেমন স্বৈরাচারী সরকার (বাহরাইন, মরক্কো ও সৌদি আরব) রয়েছে তেমনি গণতান্ত্রিক সরকারও (ভারত ও মেক্সিকো) রয়েছে। এর বিস্তার ইউরোপের হাঙ্গেরি ও আজারবাইজান থেকে আফ্রিকার টোগো আর রুয়ান্ডার মতো বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তে। পেগাসাস প্রজেক্টে দেখা গেছে, এই সরকারগুলোর অনেকেই সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ব্যবসায়ী, এমনকি সরকার প্রধানের বিরুদ্ধেও এই মারাত্মক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে ভয় পায়নি।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর পার্টনারদেরকে লেখা এক চিঠিতে ‘চুক্তিভিত্তিক ও জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে’র বিষয়টি উল্লেখ করে এনএসও গ্রুপ জানায়, ‘আমরা আমাদের সরকারি গ্রাহকের নাম ও পরিচয় অস্বীকার বা নিশ্চিত করতে পারছি না’।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও মিডিয়া অংশীদাররা এই প্রকল্পে উদ্ধৃত সরকারি ক্লায়েন্টদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছেছে, যাদের প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে বা এনএসও গ্রুপের ক্লায়েন্ট হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

ফাঁস হওয়া তালিকায় পাওয়া কোনো নির্দিষ্ট ফোন নম্বরকে আক্রমণ করা হয়েছে কিনা সেটা ওই নম্বর ব্যবহারকারীর ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষা না করে বের করা সম্ভব নয়। তারপরও ফরবিডেন স্টোরিজের সঙ্গে মিলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাব এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিকের মোট ৬৭টি ফোন পরীক্ষা করে দেখেছে, আইফোনে গত মাস পর্যন্ত নিরাপত্তা ত্রুটির সুযোগ নিয়ে সফলভাবে আক্রমণ করা সম্ভব হয়েছে।

এনএসও গ্রুপ যদিও বারবার বলে এসেছে যে, তাদের সফটওয়্যার শুধু অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হচ্ছে, তারপরও বহুদিন ধরে ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর সঙ্গীরা মিলে ফোন নম্বরগুলো বিশ্লেষণ করে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হতবাক হওয়ার মতো নজরদারির মাত্রা পেয়েছে। এতে করে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ভয়টাই সত্য হল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল আগনেস কালামাদ বলেন, ‘এই নম্বরগুলো প্রমাণ করে, এর অপব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে সাংবাদিক, তাদের পরিবার ও তাদের সংশ্লিষ্টদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে ও সমালোচনামূলক মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

‘মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পাবলিক ন্যারেটিভকে নিয়ন্ত্রণ করা, সমালোচনাকে বাধা দেয়া ও ভিন্নমতকে চাপা দেয়া।’

এই রেকর্ডে নাম থাকা সাংবাদিকরা আইনি হুমকি পেয়েছেন, অনেককেই গ্রেপ্তার ও অপমান করা হয়েছে, জুলুমের কারণে অনেকে দেশ ছেড়ে পালানোর পরও তারা জানতে পারেননি যে, তারা তখনও নজরদারিতে রয়েছেন।

কিছু ক্ষেত্রে টার্গেটে থাকা সাংবাদিককে মেরে ফেলা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এটাই পরিষ্কার যে, দমনকারী সরকার ও তাদের সহযোগী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি প্রযুক্তিতে পরিণত হয়েছে।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এর প্রকল্প প্রধান কার্লোস মার্তিনেস দে লা সেরনা ফরবিডেন স্টোরিজকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের নজরদারিতে রাখার একটু ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটি খুবই বড় একটি সমস্যা। আর সবারই একে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। শুধু যেসব সাংবাদিক বিপজ্জনক পরিবেশ কাজ করছেন তাদের জন্যই নয়, বরং আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।’

ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর সঙ্গীদেরকে এক লিখিত জবাবে এনএসও গ্রুপ জানায় যে, তাদের প্রতিবেদনটি ‘ভুল অনুমান’ ও ‘অসমর্থিত তত্ত্বের উপর’ ভিত্তি করে তৈরি। তারা আবারও জোর দেয় যে, তাদের কোম্পানি ‘জীবন রক্ষার মিশনে’ নিয়োজিত।

তারা লিখেছে, ‘এনএসও গ্রুপ খুব শক্তভাবে আপনাদের প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে। আপনাদের প্রতিবেদনটি আসলে অনেকগুলো অসমর্থিত তত্ত্বনির্ভর, যেটি আপনাদের তথ্যসূত্র ও আপনাদের গল্পের ভিত্তি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

‘আপনাদের সূত্র যে তথ্য দিয়েছে তার কোনো সঠিক ভিত্তি নেই, যে কারণে আপনাদের দাবিগুলোকে সমর্থন করার মতো কোনো দলিল নেই।’

এতে আরও বলা হয়, “অভিযোগে উল্লেখিত ‘ফাঁস হওয়া ৫০ হাজার ফোন নম্বরের ডেটা’ পেগাসাস ব্যবহার করে, এতগুলো নম্বর কোনো সরকারের টার্গেটের তালিকা হতে পারে না।’

ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর পার্টনারদেরকে পাঠানো চিঠিতে এনএসও গ্রুপ আরও লিখেছে, ‘এনএসও তার গ্রাহকদের গোয়েন্দা তৎপরতার ভেতরের খবর জানে না। তারপরও গোয়েন্দা তৎপরতা সম্পর্কে একটি সাধারণ ও সামান্য জ্ঞান থেকে এটা সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নজরদারি চালানোর জন্য এই ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করা হয় না।’

সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীর মতোই বিপজ্জনক

হাঙ্গেরির ডিরেক্ট থার্টি সিক্সের অনুসন্ধানি সাংবাদিক এসজাবোলটস পানিউই যখন জানতে পারেন তার ফোন পেগাসাস স্পাইওয়্যারে আক্রান্ত, তখন রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন।

এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে তিনি ফরবিডেন স্টোরিজকে বলেন, ‘এই দেশে এমনও অনেক আছেন, যারা একজন সাধারণ সাংবাদিককে সন্ত্রাসীর মতো একই নজরে দেখেন।’

পানিউই মধ্য তিরিশের এক তরুণ। গোল ফ্রেমের চশমা পড়েন ও মুখে রুক্ষ দাড়ি। পুরস্কার বিজয়ী এই সাংবাদিক প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা দেশের হাজারো লোকের ফোন নম্বর তার রোলডেস্কে আছে। তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক বছর ছিলেন, যা তাকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আদর্শ নিশানায় পরিণত করেছে।

২০১৯ সালে যখন তার ফোন আক্রান্ত হয় সেসময় পানিউই দুটো গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে কাজ করছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনের সহযোগিতায় ফরবিডেন স্টোরিজ নিশ্চিত করতে পেরেছে, ওই বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর এই ৯ মাস তার ফোন আক্রান্ত ছিল। তার কাছে আসা আনুষ্ঠানিক মন্তব্য বা সূত্রের সঙ্গে জরুরি দেখা করার অনুরোধের ‘ছদ্মবেশে’ আসত এই আক্রমণগুলো।

২০১৯ সালে বুদাপেস্টে ব্যাংকের শাখা খুলতে চাওয়া রাশিয়ার মদদপুষ্ট ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ওপর প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ওই সাংবাদিকের ফিক্সার হিসেবে নিয়োজিত হাঙ্গেরিয়ান ফটো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করার সময় পানিউইয়ের ফোনে ডিজিটাল আক্রমণ হয়।

ফরবিডেন স্টোরিজ যেসব রেকর্ড পেয়েছে সেগুলো অনুযায়ী, একই সময়ে ওই ফটোসাংবাদিকও টার্গেট ছিলেন।

পানিউই বলেন, ‘রাশিয়ান ব্যাংকটি নিয়ে আমেরিকান ও হাঙ্গেরিয়ান সাংবাদিকরা কী লিখতে চাচ্ছেন সে বিষয়ে আগ্রহ থাকার সমূহ সম্ভাবনা আছে যারা ওই সিস্টেমটা চালাচ্ছিল।’

ইসরায়েলি কোম্পানি ব্ল্যাক কিউবের সাবকন্ট্র্যাকটর হিসেবে রোনান ফ্যারো, জোডি ক্যান্টর ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টার ব্র্যাডলি হোপের ওপর নজর রাখা প্রাইভেট গোয়েন্দা ইগর অস্ট্রভস্কি এখন নিজেই সাংবাদিকদের তথ্য নিরাপত্তার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তার মতে, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে পানিউইয়ের মতো সাংবাদিক তথ্য সূত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সাংবাদিকদের হাত দিয়ে প্রচুর তথ্য আদান-প্রদান হয়, যে কারণে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর আগ্রহ থাকতে পারে যে, কে সরকারের মধ্যে থেকে তথ্য ফাঁস করছে অথবা সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবসার ভেতরের খবর প্রকাশ করছে। তারা এই ফাঁস হওয়া তথ্যের সোর্স জানতে চেষ্টা করতে পারে।’

ভারতীয় ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে বেশ কিছু বই লেখা অনুসন্ধানী সাংবাদিক পরাঞ্জয় গুহ ঠাকুরতার ফোন হ্যাক করা হয় ২০১৮ সালে। ফরবিডেন স্টোরিজকে ঠাকুরতা জানান, সোর্সের নাম গোপন রাখার শর্তেই তিনি কাজ করতেন। তিনি বলেন, তাকে যখন টার্গেট করা হয় তখন তিনি ভারতের সাবেক শীর্ষ ধনী ধিরুভাই আম্বানির আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন।

ঠাকুরতা বলেন, ‘তারা জানে কারা আমাদের সোর্স। আমার ফোনে ঢুকে আমি কাদের সঙ্গে কথা বলছি সেটা দেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে বা আমার সহকর্মীদেরকে তথ্য কে দিচ্ছে সেটা বের করা।’

ঠাকুরতা অন্তত ৪০ জন ভারতীয় সাংবাদিকের একজন, যাকে এনএসওর একটি ক্লায়েন্টের টার্গেট হিসাবে বাছাই করা হয়েছে। ফরবিডেন স্টোরিজ এবং এর সহযোগীরা ফাঁস হওয়া ডেটা যাচাই করে মনে করছে, এই ক্লায়েন্ট ভারতীয় সরকার।

ভারত সরকার কখনও এনএসও গ্রুপের ক্লায়েন্ট হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি। ফরবিডেন স্টোরিজ এবং এর সহযোগীদের পাঠানো বিশদ প্রশ্নের জবাবে মিনিস্ট্রি অফ ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির এক মুখপাত্র লেখেন, ‘নির্দিষ্ট লোকের উপর সরকারি নজরদারির অভিযোগের কোনো সত্যতা বা শক্ত ভিত্তি নেই।’

২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১২১ পেগাসাস টার্গেটের চারজনের খবর প্রকাশিত হলেও, ফরবিডেন স্টোরিজের পাওয়া রেকর্ড যাচাই করে মনে হচ্ছে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।

দুই হাজারেরও বেশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি নম্বরকে ২০১৭ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, ট্রিবিউন ও পাইওনিয়ারের মতো প্রায় সব শীর্ষ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক রয়েছেন।

পাঞ্জাবি ভাষায় পাঞ্জাব থেকে প্রকাশিত একটি সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক জশপাল সিং হেরানের মতো স্থানীয় সাংবাদিকদেরও টার্গেট করা হয়।

স্বাধীন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম দ্য অয়্যারের তিন প্রতিষ্ঠাতার দুই জন সিদ্ধার্থ ভরদরাজন ও এমকে ভেনুর ফোনেও পেগাসাস আক্রমণ করে। এর মধ্যে ভেনুর ফোন হ্যাক করা হয় গত জুলাইয়ে।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর পার্টনার যার মধ্যে দ্য অয়্যারও রয়েছে তাদের হাতে আসা রেকর্ড ঘেঁটে দেখে গেছে, অয়্যারের অন্যান্য সাংবাদিক যারা এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বা কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করেন যেমন কলামনিস্ট প্রেম শংকর ঝা, অনুসন্ধানী রিপোর্টার রোহিনি সিং, কূটনৈতিক সম্পাদক দেভিরুপা মিত্র আর কন্ট্রিবিউটর স্বাতী চতুর্ভেদি সবাইকে টার্গেট করা হয়।

২০১৮ সালে ভরদরাজনের ফোন হ্যাক করা হয়। তিনি বলেন, ‘দ্য অয়্যারের সঙ্গে জড়িত এতগুলো নাম থাকাটা উদ্বেগজনক। অবশ্য অয়্যারের সঙ্গে জড়িত নন এমন সংখ্যাও অনেক। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের নজরদারিতে রাখার বিষয়টিকে সাধারণ প্রবণতা বলে মনে হচ্ছে।’

হ্যাক হওয়া ফোনের সাংবাদিকদের সঙ্গে ফরবিডেন স্টোরিজ ও অংশীদার সংবাদসংস্থাগুলো কথা বলেছে। তারা সবাই এনক্রিপ্টেড মেসেজ ব্যবহার ও নিয়মিত আপডেটের সতর্কতা অবলম্বনের পরও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত না থাকার বিষয়টি জানতে পেরে হতাশা প্রকাশ করেন।

ইসমায়িলোভা বলেন, ‘সরকারের চোখ থেকে লুকাতে আমরা একে অন্যকে ফোনে এই টুল ব্যবহার করা যায়, বা ওই টুলটা ভালো- এগুলো নিয়মিত বলতাম। আর গতকাল আমি বুঝতে পারলাম, কোনো লাভ নেই। নিজেকে লোহার তাবুতে আটকে রাখা ছাড়া আমার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ওদের বাধা ঠেকানোর প্রয়োজন নেই।’

পানিউই চিন্তিত যে, টার্গেট হওয়ার খবরটা প্রকাশ পেয়ে গেলে তার সোর্সরা ভবিষ্যতে যোগাযোগের জন্য আর আগ্রহী হবে না।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক সাংবাদিক যাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে তারা চিন্তায় আছেন, তাদের ওপর নজরদারির খবর যদি প্রকাশ পায় বা আমাদেরকে পাঠানো গোপন বার্তা যদি কেউ পড়ে ফেলে তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে আর কে কথা বলবে? সবাই ভাববে আমরা কলুষিত ও বোঝা হয়ে দাঁড়াব।’

পেছন থেকে লুকিয়ে দেখা’: শূন্য ক্লিকে কীভাবে সাংবাদিকদের ওপর নজর রেখেছে পেগাসাস

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবে সাংবাদিকদের যেসব সেল ফোনের ফরেনসিকস পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর ফলাফল অতীতের অন্য কয়েকটি পরীক্ষার ফলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মধ্যে আছেন গত বছরের ডিসেম্বরে সিটিজেন ল্যাব চিহ্নিত হ্যাকের শিকার হওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের কয়েক ডজন সাংবাদিক।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবের পরিচালক ক্লদিও গারনিয়েরি বলেন, ‘এগুলো একই ঘটনার কয়েকটি আলাদা অংশ যা সুন্দরভাবে জোড়া লেগে যাবে। আমার কোনো সন্দেহ নেই, আমরা যা দেখছি সেটা পেগাসাস। কারণ এর বৈশিষ্ট্য অন্যসব স্পাইওয়্যারের চেয়ে একদম আলাদা। আর আমরা যে বিষয়গুলো পেয়েছি সেগুলো একে অপরের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়।’

এর আগে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) ২০১১ সাল থেকে নয়টি দেশের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চারটি দেশের সফটওয়্যার কোম্পানির তৈরি করা স্পাইওয়্যারের ৩৮টি উদাহরণ নথিভুক্ত করেছিল।

ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের (ইএফএফ) সাইবার সিকিউরিটির পরিচালক ইভা গালপেরিন বলেন, ২০১০ এর দশকের গোড়ার দিকে বেশির ভাগ ম্যালওয়্যার আক্রমণ এখনকার মতো এত উন্নত ছিল না।

তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে আপনি একটি ইমেল পেতেন ও ইমেলটি আপনার কম্পিউটারে যেত। এর ম্যালওয়্যারটি এমনভাবে তৈরি যে এটি নিজে থেকেই আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল হতো।

“২০১৪ সালের দিকে সাংবাদিকদের ওপর নজরদারির জন্য ‘মোবাইল-ফার্স্ট’ পদ্ধতি জনপ্রিয়তা অর্জন করে, কারণ স্মার্টফোনগুলি সহজলভ্য হয়ে ওঠে। এনএসও, হ্যাকিং টিম ও ফিনফিশারের মতো কোম্পানির ক্লায়েন্টরা টার্গেটদের জন্য বিশেষায়িত মেসেজ পাঠাতো যেগুলোতে প্রায়ই তাদের পরিবার বা কোনো খবর সম্পর্কিত তথ্য থাকতো। ম্যালওয়ারগুলো তাদের ফোনে ইনস্টল হতে হলে টার্গেটদের একটি লিঙ্কে ক্লিক করতে হতো।”

অস্ট্রোভস্কি বলেন, ‘গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর টার্গেট প্রায়ই হন সাংবাদিকেরা, কারণ তারা সবসময়ই তথ্যের জন্য নতুন নতুন উৎস খুঁজতে থাকেন, যা তাদের ফিশিং প্রচেষ্টার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এছাড়া অনেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তার সেরা পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেন না।’

পেগাসাস আক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রথম মেক্সিকোতে চিহ্নিত করা হয় ২০১৫ ও ২০১৬ সালে।

আরিসতেহি নোতিসিয়াসের প্রতিষ্ঠাতা ও মেক্সিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিক কারমেন আরিসতেহি, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট এনিরিকে পেনা নিয়েতোর সম্পত্তি নিয়ে অনুসন্ধান প্রকাশ করার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সন্দেহজনক লিংকসহ মেসেজ পেতে থাকেন।

ডিজিটাল অধিকার সংস্থা সিটিজেন ল্যাব পরবর্তীতে ২০১৭ সালে গোবের্নো এসপিয়া (সরকারে গুপ্তচরবৃত্তি) রিপোর্টে প্রকাশ করে যে, আরিসতেহি ক্ষতিকর পেগাসাস লিঙ্কযুক্ত ২০টিরও বেশি টেক্সট মেসেজ পান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একই সময়ে তার বেশ কয়েকজন সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যের ফোনে ক্ষতিকর লিঙ্কযুক্ত টেক্সট পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিলেন তার সহকর্মী সেবাস্তিয়ান বারাগান ও রাফায়েল কাব্রেরা ও আরিসতেহির ছেলে এমিলিও, যার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর সহযোগীরা প্রথমবারের মতো এটা খুঁজে বের করে যে, ২০১৬ সালে আরিসতেহির কাছের আরও তিন জনের ওপর নজরদারি করা হয়। এরা হলেন তার বোন তেরেসা, তার সিএনএনের প্রযোজক কারিনা মারসিয়েল ও তার সাবেক সহকারী সান্দ্রা নোহালেস।

পেগাসাস প্রজেক্টের অংশ হিসেবে কাজ করা আরিসতেহি বলেন, ‘আমার কাছের মানুষদের ওই তালিকাতে দেখা চমকের মতো ছিল। আমার ছয় ভাই বোন আছে, এদের মধ্যে অন্তত একজন আমার বোন এই সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। আমার শিডিউল, যোগাযোগ, দৈনিক ও ঘণ্টার সূচি জানতেন যে ব্যক্তিগত সহকারী সান্দ্রা নোহালেস তিনিও ওই সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে যান।’

গারনিয়েরি বলেন, শুরুর দিনগুলোর চেয়ে স্মার্টফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ইনস্টলের প্রক্রিয়া আরও সূক্ষ্ম হয়ে উঠেছে। স্পাইওয়্যার ইনস্টল করার জন্য টার্গেটকে এখন কোনো লিঙ্কে ক্লিক করারও দরকার পড়ে না। শূন্য-ক্লিকের মাধ্যমে টার্গেটের কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছাড়াই ফোনের নিয়ন্ত্রণ ক্লায়েন্টের হাতে চলে যায়।

তিনি বলেন, ‘এই আক্রমণগুলো করার জটিল পদ্ধতি গাণিতিক হারে বেড়েছে।’

একবার ফোনে সফলভাবে ইনস্টল হয়ে গেলে পেগাসাস স্পাইওয়্যার এনএসও ক্লায়েন্টকে সম্পূর্ণ ডিভাইসের অ্যাক্সেস দেয়। এর ফলে সিগন্যাল, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপগুলিকে বাইপাস করার ক্ষমতাও পায় এটি। ডিভাইস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পেগাসাস ইচ্ছামত সক্রিয় করা যেতে পারে। ডিভাইস অন করার সঙ্গে সঙ্গে এটি আবার ফোনকে আক্রমণ করতে সক্ষম।

হার্ভার্ডের বার্কম্যান ক্লাইন সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির ক্রিপ্টোলজিস্ট ও ফেলো ব্রুস স্নাইয়ার বলেন, ‘যদি কেউ আপনার কাঁধের ওপর দিয়ে কিছু পড়েন তবে আপনি কোন ধরনের এনক্রিপশন ব্যবহার করছেন সেটা কোনো বিষয় নয়।’

গারনিয়েরির মতে, পেগাসাস অপারেটররা দূর থেকে অডিও ও ভিডিও রেকর্ড, মেসেজিং অ্যাপ থেকে ডেটা বের করা, অবস্থান জানার জন্য জিপিএস ব্যবহার ও পাসওয়ার্ড ও অথেনটিকেশন কি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম।
নজর রাখা সরকারগুলো সাম্প্রতিক বছরে শনাক্তকরণ এড়ানোর জন্য ‘হিট অ্যান্ড রান’ কৌশল গ্রহণ করেছে, বলেন গেলপারিন। তাদের লক্ষ্য, ফোনে আক্রমণ, ডেটা উদ্ধার ও দ্রুত বের হয়ে যাওয়া।

অস্ট্রোভস্কির ধারণা, এই ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তি দৈহিক নজরদারির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল অনুপ্রবেশ খুবই মূল্যবান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনার ক্যালেন্ডারটি যদি আমি জানি, যদি জানা যায় যে, আপনি একটি নির্দিষ্ট মিটিং করতে যাচ্ছেন বা আপনার ইমেইলটিতে নজর দিতে পারি, আপনার নোট বা বেশিরভাগের ফোনে যা থাকে সেগুলো যদি জানতে পারি তাহলে যে লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছি তাতে আরও বেশি সফল হতে পারব।’

স্পাইওয়্যারের জন্য নতুন বাজার

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাংবাদিকদের নজরদারিতে রাখা নতুন কিছু নয়। যা বদলেছে তা হলো স্পাইওয়্যারের জন্য বাজার।

গালপেরিনের মতে, আগের সরকারগুলো যেখানে নিজ ঘরে স্পাইওয়্যার বানাতো। এখন গোয়েন্দা কর্মসূচি বিকাশের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা না থাকা সরকারগুলোকে নিজেদের পণ্য বিক্রির বাজার হিসেবে দেখছে এনএসও গ্রুপ, ফিনফিশার ও হ্যাকিং টিমের মতো বেসরকারি স্পাইওয়্যার কোম্পানিগুলো।

তার মতে, এতে করে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নজরদারির ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’ তৈরি হচ্ছে।

ডিজিটাল রাইটস অর্গানাইজেশন সিটিজেন ল্যাবের ২০১৮ সালের ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ প্রতিবেদনে সৌদি আরব, মরক্কো এবং বাহরাইনসহ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের নির্বিচারে আটকের রেকর্ড থাকা বেশ কয়েকটি দেশে এনএসওর পেগাসাস অপারেটরদের চিহ্নিত করা হয়। সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রাপ্ত ফাঁস হওয়া ডেটাবেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বলা যায়, এই দেশের এনএসও ক্লায়েন্টরা কয়েক হাজার ফোন নম্বর নির্বাচন করেছে।

ফরবিডেন স্টোরিজ মরোক্কোর ফ্রি-ল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক ওমর রাদির মতো কয়েকজন সাংবাদিকের ফোনে সাইবার অনুপ্রবেশের ঘটনা ২০২০ সালে প্রকাশ করে। রাদি ও ভারতীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আনন্দ টেলটুম্বডের ফোনে আক্রমণের বিষয়টি অধিকার গোষ্ঠী ও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর তাদের কারাবন্দি করা হয়।

স্পাইওয়্যার নির্মাতা কোম্পানিগুলো তাদের স্পাইওয়্যার সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য তুলনামূলকভাবে খুবই কম আইনি বা আর্থিক জরিমানার মুখোমুখি হয়েছে। সাম্প্রতিক আইনি মামলাগুলো এই নির্মাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। ২০২১ সালের জুনে ফরাসি স্পাইওয়্যার নির্মাতা অ্যামেসিসকে ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে লিবিয়ায় স্পাইওয়্যার বিক্রির কারণে ‘নির্যাতনে জড়িত’ থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।

সেই মামলার বাদীদের মতে, ডিজিটাল নজরদারি দিয়ে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল তা ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরোধীদের চিহ্নিত ও খুঁজে বের করে কারাগারে নির্যাতনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

গালপেরিন বলেন, ‘আপনি যদি সঠিক সাংবাদিকতা করেন, আপনি যদি ক্ষমতায় থাকা লোককে সত্য কথা বলেন তাহলে ক্ষমতায় থাকাদের আপনি রাগিয়ে দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির কাহিনী প্রকাশ করতে যারা সাংবাদিকতা করছিলেন তাদেরকে প্রায়ই টার্গেট করা হতো। যে ব্যক্তিরা আবার অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করেছিলেন, তারা নজরদারির তালিকার শুরুর দিকে ছিলেন।’

এনএসও গ্রুপ বলছে, তাদের প্রযুক্তি অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের অনুসরণ করতে একমাত্র গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যবহার করে। ২০২১ সালের জুনে প্রকাশিত এনএসও গ্রুপের ট্র্যান্সপারেন্সি অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ৪০টি দেশে এর ৬০টি ক্লায়েন্ট রয়েছে।

প্রতিবেদনে এনএসও গ্রুপ লেখে, ‘পেগাসাস কোনো গণনজরদারি করার প্রযুক্তি নয়। এটা গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির মোবাইল ডিভাইস থেকে ডেটা সংগ্রহ করে।’

যদিও এনএসও বলছে, তাদের ৫৫টি দেশের একটি তালিকা রয়েছে, বাজে মানবাধিকার রেকর্ডের জন্য তাদের কাছে তারা পণ্য বিক্রি করবে না। তবে সেই দেশের নামগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএসও গ্রুপ ২০১৬ সাল থেকে মানবাধিকার শর্ত পূরণ না করা পাঁচ ক্লায়েন্টের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে ও অপব্যবহারের অভিযোগে পাঁচ ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর মিডিয়া সহযোগীদের কাছে পাঠানো এক লিখিত বিবৃতিতে এনএস গ্রুপ জানায়, ‘এনএসও গ্রুপ সব ধরনের অপব্যবহারের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের তদন্ত করবে ও তদন্তের ফলের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এর মধ্যে গ্রাহকদের সিস্টেম বন্ধ করে দেয়া অন্তর্ভুক্ত। এনএসও প্রমাণ করেছে এমনটা করতে তাদের দক্ষতা ও সদিচ্ছা রয়েছে। প্রমাণিত অপব্যবহারের কারণে এমনটা তারা আগেও একাধিকবার করেছে ও ভবিষ্যতেও পরিস্থিতি অনুযায়ী এমনটা করতে সংকোচ করবে না।’

তারপরও ফাঁস হওয়া ডেটায় দেখা গেছে, বাকস্বাধীনতা দমনকারী অনেক স্বৈরাচারী সরকার তাদের ক্লায়েন্টের তালিকায় রয়ে গেছে।

পেগাসাস প্রজেক্টের অংশ হিসাবে, ফরবিডেন স্টোরিজ আজারবাইজানে প্রথমবারের মতো পেগাসাসের ব্যবহার লক্ষ্য করেছে। দেশটির দুটি মুক্ত সংবাদমাধ্যম আজাদলিক ডটইনফো ও মেহদার টিভির সাংবাদিকসহ ৪০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে টার্গেট হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

আজারবাইজানে অধিকাংশ মুক্ত সংবাদমাধ্যম ব্লক করা এবং সেখানে কাজ করা সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যরা নিয়মিতভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিগৃহীত হন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, কয়েক দশক ধরে দেশটিতে শাসন করা প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার পরিবার সমালোচকদের কণ্ঠ ‘পরোক্ষভাবে রোধ’ করছে।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সেভিংক ভাকিফকিজির ফোন ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আক্রান্ত হয়।

মেহদার টিভির ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা ভাকিফকিজিকে বেশ কয়েকবার হুমকির শিকার হতে হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ কাভার করতে গিয়ে তিনি মারও খেয়েছেন।

৩০ বছর বয়সের আশেপাশে থাকা কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলের এই সাংবাদিক ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর সহযোগীদের জানান, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সরকার তার ব্যক্তিগত তথ্যে অনুপ্রবেশ করছে।

তিনি বলেন, ‘আমি বন্ধুদের সবসময় বলে এসেছি যে তারা আমাদেরকে শুনতে পায়। আমার সোর্স, যারা আমাকে বিশ্বাস করে ও হোয়্যাটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায় তাদের নিয়ে আমি চিন্তিত। তাদের যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে সেটা আমাদের জন্যও ভালো কিছু হবে না।’

তিনি তিন মাসের বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে আসার পরও নিজ দেশের সরকারের কাছ থেকে নিরাপদ বোধ করছেন না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য সংস্থাগুলো যাচাই করে দেখেছে, দেশ ছাড়ার পরও আজারবাইজানি অধিকার কর্মীদের শারীরিক ও ডিজিটাল হুমকির শিকার হতে হচ্ছে।

ভাকিফকিজি বলেন, ‘আপনার যদি একটা ফোন থাকে তাহলে তারা জার্মানিতেও আপনাকে টার্গেট করতে পারবে।’

চোখের আড়ালে, কিন্তু নাগালের বাইরে নয়

প্যারিসে হিশাম মানসুরির মেইসো দ্য জ্যনালিস্তেস (হাউজ অফ জার্নালিস্টস) এর অফিসের দেয়াল রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম অধিকার রক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোস্টারে ঢেকে গেছে। হিশাম ওই দালানেই থাকতেন, যেটি শরণার্থী সাংবাদিকদের আশ্রয় ও প্রদর্শনীর গ্যালারি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেখান থেকে তিনি চলে গেছেন, তবে নিচ তলায় এখনও তার ছোট একটা অফিস আছে যেখানে সপ্তাহে তিন দিন যান।

ফরবিডেন স্টোরিজের সঙ্গে কথা বলার আগে মানসুরি তার ফোন বন্ধ করে ব্যাকপ্যাকের ভেতরে রাখেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ল্যাবের ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে মানসুরির আগের আইফোনটিতে ২০ বার পেগাসাসের আক্রমণ হয়েছে।

মানসুরি একজন ফ্রি ল্যান্স সাংবাদিক ও মরোক্কান অ্যাসোসিয়েশন অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (ফরাসি অ্যাক্রোনিম এএমজেআই) সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি মরক্কোর কারাগারে অবৈধ মাদক ব্যবসা নিয়ে একটি বই লিখছেন। বহু সংখ্যক আইনি ও শারীরিক হুমকির পর ২০১৬ সালে তাকে মরক্কো ছাড়তে হয়।

মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে ২০১৪ সালে এক সভা শেষে তাকে ও ইতিহাসবিদ মাতি মনজিবকে অজ্ঞাত দুই সন্ত্রাসী মারধর করে। মনজিবও পরবর্তী সময়ে পেগাসাস আক্রান্ত হন। এক বছর পর গোয়েন্দা বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা তার বাসায় সকাল ৯টায় অভিযান চালায়। গোয়েন্দা সদস্যরা তাকে ও তার এক বান্ধবীকে তাদের বেডরুমে খুঁজে পায়। তাকে নগ্ন করে ফেলা হয় ও ‘ব্যাভিচারের’ অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্যাভিচার মরক্কোতে অপরাধ।

তিনি কাসাব্লাঙ্কার কারাগারে ১০ মাস আটক থাকেন। তাকে যে সেলে রাখা হয় সেটা সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীদের জন্য বরাদ্দ। অন্য কয়েদিরা ওই সেলটির নাম দিয়েছে ‘লা পুবেল’ বা দ্য ট্র্যাশ বিন। ছাড়া পাওয়ার পরদিনই মানসুরি মরক্কো ছেড়ে ফ্রান্সে চলে আসেন ও রাজনৈতিক আশ্রয় পান।

ওই ঘটনার পাঁচ বছর পর মানসুরি জানতে পারেন, এখনও মরক্কো সরকারের টার্গেট তিনি।

মানসুরি ফরবিডেন স্টোরিজকে বলেন, ‘প্রতিটা স্বৈরাচারী সরকার সবসময় সব জায়গায় বিপদ দেখে। আমরা নিজেদের বিপজ্জনক ভাবি না, কারণ আমরা আইন মেনেই সবকিছু করি, আমরা জানি যে এটা আমাদের অধিকার। কিন্তু তাদের কাছে এগুলো বিপজ্জনক। তারা স্ফূলিঙ্গকে ভয় পায়, কারণ সেখান থেকে আগুন ছড়াতে পারে।’

ফাঁস হওয়া ডেটা থেকে জানা যায়, এনএসওর সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট হিসেবে মরক্কো চার দেশের ৩৫ জন সাংবাদিকের ওপর নজর রেখেছে। এদের মধ্যে মরক্কোর অনেক সাংবাদিকই কোনো না কোনো সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন, মানহানি করা হয়েছে বা অন্য কোনো ভাবে গোয়েন্দা বাহিনীর শিকার হয়েছেন। টার্গেটের অন্যতম দুই জন পত্রিকার সম্পাদক তৌফিক বুয়াশ্রিন ও সোলাইমানে রাইসোনিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মরক্কোতে মুক্ত সাংবাদিকতাকে রুখতে মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তারা উস্কানি দিয়েছেন।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও তার সহযোগীদের উদ্দেশে পাঠানো এক বিবৃতিতে মরক্কো দূতাবাসের প্রতিনিধি জানান, তারা ‘প্রশ্নগুলো কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে’ সেটা বুঝতে পারেননি। তারা ‘মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলি কোম্পানির’ সম্পর্ক থাকার ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ’ চেয়েছেন ফরবিডেন স্টোরিজের কাছে।

আখবার আল-ইয়ায়ুমের সম্পাদক বুয়াশ্রিনকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানবপাচার, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি ও হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। সিপিজে জানায়, যে ১৪ জন নারী বুয়াশ্রিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন তাদের ১০ জন কোর্টে হাজিরা দেন। এদের পাঁচ জন বলেন যে, বুয়াশ্রিন নির্দোষ।

বুয়াশ্রিন মরক্কান স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় লিখেছেন। যেখানে তিনি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়, যার মধ্যে এক বছর তাকে নিঃসঙ্গ কারাগারে রাখা হয়।

ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর সহযোগীরা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে যে, ওই মামলায় জড়িত অন্তত দুই জন নারীকে পেগাসাসের টার্গেট করা হয়।

বুয়াশ্রিনের উত্তরসূরী সোলাইমানে রাইসোনিকেও যৌন হয়রানির মামলায় ২০২০ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরের বছর জুলাইয়ে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রাইসোনির বিরুদ্ধে আদিল আইত ওউশরা নামের এক এলজিবিটিকিউ কর্মী হয়রানির অভিযোগ আনেন। আদিল সিপিজেকে জানান, নিজের লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে প্রকাশ্য অভিযোগ করতে তিনি স্বস্তি বোধ করেননি।

সাংবাদিক ও সংবাদ অধিকারকর্মীরা সিপিজেকে বলেন, তাদের বিশ্বাস রাইসোনির সমালোচনা মূলক প্রতিবেদনের প্রতিশোধ হিসেবেই এই মামলা করানো হয়। ২০২১ সালে বিচারের অপেক্ষায় থাকা রাইসোনি এই প্রতিবেদন লেখার সময় ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অনশন করছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা জানান ৭৬ দিনের পর তার অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে শীর্ষ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম তালকুয়েল ও নিশানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক সাংবাদিক আহমেদ বেনশেমসি বলেন, ‘নজরদারির উদ্দেশই হচ্ছে কারও ব্যক্তিগত জীবনে নজর রাখা। যাতে করে কোনো একটা ত্রুটি বের করে তাকে বড় একটা মামলায় ঝুলিয়ে দেয়া যায়।’

তার মতে, অতীতে মরক্কোর সাংবাদিকরা নিয়মিতভাবে তাদের লেখায় রাজাকে অসম্মান বা অশ্রদ্ধা করার জন্য আইনি হামলার শিকার হয়েছেন। তবে নতুন কৌশল হল, তাদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা। এই উদ্দেশ হাসিলের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বের করে আনতে নজরদারি এখন অন্যতম হাতিয়ার।

বেনশেমসি বলেন, ‘বড় কোনো কুৎসার পেছনে খুব অল্প পরিমাণ সত্য থাকে। কিন্তু সেই অল্প সত্যটি সাধারণত কোনো ব্যক্তিগত ও গোপন তথ্য যা একমাত্র নজরদারি করেই পাওয়া সম্ভব।’

বিদেশি যেসব সাংবাদিক মরক্কোর সাংবাদিকদের দুর্দশার বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করেছেন তাদেরকেও টার্গেট করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের ফোনে সফল আক্রমণও চালানো হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাবের এক বিশ্লেষণ, যেটাকে পরে ডিজিটাল অধিকার সংস্থা সিকিউরিটি ল্যাবও পর্যালোচনা করে, তাতে পাওয়া যায় যে, ফরাসি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম মিডিয়াপার্টের পরিচালক ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এডুই প্লেনেলের ফোনে ২০১৯ এর গ্রীষ্মে আক্রমণ করা হয়।

ওই বছরের জুনে প্লেনেল মরক্কোর অনুসন্ধানী ম্যাগাজিন ল্য ডেস্কের প্রতিষ্ঠাতা ও মিডিয়াপার্টের সহযোগী সাংবাদিক আলি আমারের আমন্ত্রণে মরক্কোর এসাউইরাতে দুই দিনের এক সম্মেলনে যোগ দেন। ফরবিডেন স্টোরিজের হাতে আসা ফোন রেকর্ডের মধ্যে আলি আমারের নম্বরও ছিল। ওই সম্মেলনে প্লেনেন একাধিক সাক্ষাৎকারে মরক্কোর সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন। প্যারিসে ফেরার পর তার ফোনে সন্দেহজন কর্মকাণ্ড শুরু হয়।

ফরবিডেন স্টোরিজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্লেনেল বলেন, ‘আমরা আলি আমারের সঙ্গে কাজ করেছি। একই সঙ্গে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপিয়েছি। মরক্কোতে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য লড়তে থাকা অনেক সাংবাদিকের মতো আলি আমারকেও আমি কিছুটা চিনি। যে কারণে আমি নজরদারি সম্পর্কে যখন জানতে পারলাম তখন সবকিছুই বুঝতে পেরেছি।’

প্লেনেল জানান, তার ও মিডিয়াপার্টের আরেক সাংবাদিক লেনা ব্রেদোর ফোনে পেগাসাসের যে আক্রমণ করা হয়, যেটা মূলত তাদের মরক্কান সহকর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো একটি ‘ট্রোজান হর্স ম্যালওয়্যার’।

মনসুরির মতো অনেক মরক্কান সাংবাদিক হয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বা পুরোপুরি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছেন। রাইসোনি আর বুয়াশ্রিনের পত্রিকা আখবার আল-ইয়ায়ুম তাদের গ্রেপ্তার ও আর্থিক অনটনের ভার নিতে পারেনি ও ২০২১ সালের মার্চে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।

বেনশেমসি বলেন, ‘১০ বা ১৫ বছর আগেও মরক্কোতে বাক স্বাধীনতার জায়গা ছিল। এখন আর নেই। সব শেষ। যদি আপনি সরকারকে সমর্থন করেন তাহলে সব ঠিক, না হলে টিকে থাকতে নিজে থেকেই কঠোর সেন্সরশিপ মানতে হবে।’

ভয়ংকর এক মারণাস্ত্র?

এনএসও গ্রুপের ২০২১ সালের ট্র্যান্সপারেসি প্রতিবেদনে একটি বাক্য তিনবার ঘুরে ফিরে এসেছে: ‘জীবন বাঁচানো’। এক জায়গায় কোম্পানিটি লিখেছে, ‘আমাদের লক্ষ্য রাষ্ট্রকে এর নাগরিকদের নিরাপদে রাখতে সাহায্য করা ও জীবন বাঁচানো।’

তবু সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এনএসও স্পাইওয়্যারের উদ্বেগজনক ব্যবহার তাদের এই ব্যাখ্যাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর, দুপুর ১টার দিকে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট জামাল খাশোগজি তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে যান এবং সেখান থেকে আর ফেরেননি। ভিন্ন মতের এই সাংবাদিকের নির্লজ্জ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার সংস্থা ও সচেতন নাগরিকরা সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তার হত্যাকাণ্ডে এনএসও গ্রুপের স্পাইওয়্যার জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে।

ওই হত্যার দুই সপ্তাহ পর সিটিজেন ল্যাব জানায়, খাশোগজির মৃত্যুর অন্তত মাসখানেক আগে তার কাছের বন্ধু ওমার আব্দুলাজিজের ফোনে পেগাসাসের আক্রমণ হয়।

এনএসও নিজেদের সাফাইয়ে বারবার বলেছে, তাদের কাছে এটিকে অকার্যকর করার উপায় আছে। এবং যেসব ক্লায়েন্ট মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় তাদের অ্যাকসেস তারা মুছে ফেলেছে।

কোম্পানিটি খাশোগজির হত্যায় তাদের কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

তবে ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর সহযোগীরা বের করেছে, খাশোগজি মারা যাওয়ার মাত্র চারদিন পর তার বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিজের ফোনে সফল ভাবে পেগাসাস ঢোকানো হয়েছে।

ফরবিডেন স্টোরিজের হাতে আসা ডেটা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এই কাজটি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। তারা খাশোগজির হত্যার কয়েক সপ্তাহ পর তার ছেলের ফোনকে টার্গেট করে। এনএসওর ক্লায়েন্ট নিহত সাংবাদিকের কাছের বন্ধু, পরিবার ও সহকর্মীদেরকে টার্গেট করে। পেগাসাস প্রজেক্টের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দুই ক্লায়েন্টকে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে।

ফরবিডেন স্টোরিজকে লেখা এক চিঠিতে এনএসও গ্রুপ জানায়, ‘যেমনটা এনএসও আগেও বলেছে যে, আমাদের প্রযুক্তি কোনো ভাবেই জামাল খাশোগজির ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, আপনাদের জিজ্ঞাসায় যেমনটা বলা হয়েছে- তার বা তার পরিবারের সদস্যদের কথা শোনা, নজরদারিতে রাখা, গতিপথ চিহ্নিত বা তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি।’

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাশোগজির মৃত্যু ও এতে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের সন্দেহ কোনো ‘অনন্য’ ঘটনা নয়।

গালপেরিন বলেন, ‘ক্ষুব্ধ সরকারের হাতে খুন হয়েছেন এমন সাংবাদিক খাশোগজিই প্রথম নন। আর ক্ষুব্ধ সরকারের হাতে খুন হওয়া তিনিই প্রথম সাংবাদিক নন, যার মৃত্যুতে ম্যালওয়্যার ও নজরদারি জড়িত ছিল। এই বিষয়গুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কযুক্ত।’

২০১৭ সালের ২ মার্চ, স্থানীয় মেক্সিকান সাংবাদিক সিসিলিও পিনেদা তার ফোনে নিজের সবশেষ ভিডিও রেকর্ড করেন।

আলতামিরানো শহরের এক প্রতিবেদক যিনি ৫০ হাজার ফলোয়ারের একটি ফেসবুক পেজ চালান, তার ওই ভিডিওতে রাজ্য সরকার, স্থানীয় পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ নিয়ে কথা বলেন।

দুই ঘণ্টা পর তাকে মৃত পাওয়া যায়। তাকে এক কার ওয়াশের সামনে একটি হ্যামকে শোয়া অবস্থায় দুই মোটরবাইক আরোহী অন্তত ছয়টি গুলি করে।

২০১৭ সালে পিনেদাকে যখন ৩৮ বছর বয়সে হত্যা করা হয়, সেটা নিয়ে বিশ্বে খুব একটা মাতামাতি হয়নি। তার মৃত্যুটি ছিল মেক্সিকোর মতো সাংবাদিকদের জন্য মৃত্যুকূপে আরেক জন সাংবাদকের মৃত্যু মাত্র। ফরবিডেন স্টোরিজ ও তার সহযোগীদের হাতে আসা রেকর্ড যাচাই করে দেখা যায়, পিনেদার মৃত্যু এক স্থানীয় ড্রাগ কার্টেলের হাতে রাস্তায় খুন হওয়ার ঘটনা মতো নয়।

পিনেদার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে এনএসওর এক মেক্সিকান ক্লায়েন্ট তার মোবাইল ফোনটিকে টার্গেট করে।

ফরবিডেন স্টোরিজ নিশ্চিত করতে পেরেছে, শুধু পিনেদা নন, মামলাটির দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় আইনজীবী হাভিয়ের ওলেয়া পেলায়েসকেও, পিনেদার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ বা মাসখানেক আগে পেগাসাসের টার্গেট করা হয়। ফরবিডেন স্টোরিজ পিনেদার খুন হওয়ার পরপরই তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটিরও বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়। ওই সময় থেকে পেলায়েস তার সঙ্গে ফোন রাখেননি, ফলে তাকে পেগাসাস আক্রমণ করেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

যখন টার্গেট করা হয় ওই সময় পিনেদা স্থানীয় মাফিয়া বস ‘এল তেকিলেরো’ ও গেরেরো রাজ্যের গভর্নর হেক্তর আস্তুদিয়োর মধ্যে যোগাযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন। পিনেদার বন্ধু ও পরিবার যারা ফরবিডেন স্টোরিজ ও এর অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা জানান, পিনেদা হুমকি পেতেন ও সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তাকে থাকতে বলা হয়েছিল।

পিনেদার বন্ধু ইসরায়েল ফ্লোরেস এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সিসিলিও পিনেদা অনেক ভয়ংকর হুমকি পেতেন কিন্তু সেগুলোকে পাত্তা দিতেন না। উনি সবসময়ই বলতেন, ‘কিছুই হবে না’”।

পিনেদা স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও মাদক ব্যবসায়ীদের জোটের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে হুমকি আরও জোরেশোরে আসতে থাকে। তার মা জানান, পিনেদার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে, একটি সাদা গাড়িতে করে আসা কয়েকজন লোক তাদের বাড়ির ছবি তোলেন।

যেদিন তাকে হত্যা করা হয়, সেদিন এক রাজনৈতিক সমাবেশে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার আগে পিনেদা মায়ের বাড়িতে যান। সেটাই ছিল মায়ের সঙ্গে তার শেষ দেখা।

তার মা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সে আমাকে বলত ‘দুষ্টু লোকেরা আমাকে মারবে না। তারা আমাকে চেনে। তারা আমার বন্ধু। আমাকে যদি কেউ হত্যা করে সেটি হবে সরকার।’”

পিনেদার স্ত্রী মারিসল তোলেদো ফোরবিডেন স্টোরিজের এক সদস্যকে জানান, পিনেদার মৃত্যুর পরদিন তিনি একজন সরকারি কর্মচারীর কাছ থেকে একটি ফোন পান। তাকে ওই ব্যক্তি বলেন যে, তিনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছেন। পরে তিনি আর কখনওই যোগাযোগ করেননি।

তোলেদো বলেন, ‘আমরা জানি না তদন্তে কী ঘটল। আমরা কোনো ঝামেলা চাই না। ক্ষমতায় যারা আছেন তারা চাইলে যে কারও সঙ্গে যা খুশি তাই করতে পারেন।’

পিনেদার ফোন পাওয়া যায়নি, পুলিশ আসার পর সেটি ক্রাইম সিন থেকে গায়েব হয়ে যায়। তবে যখন পিনেদার গতিবিধিগুলো ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে স্পাইওয়্যারের সম্ভাব্য ভূমিকার কথা বলা হয়েছে, তোলেদো অবাক হননি।

তিনি বলেন, ‘তারা যদি এতে সফল হয় তাহলে সে (পিনেদা) কোথায়, কখন আছে তা সবসময়ই জানতে পারার কথা।’

আরও পড়ুন:
পেগাসাস-কাণ্ডে ভারতে মামলা
ইমরান-মাখোঁসহ ১৪ নেতার ফোনে নজরদারি
রাহুল গান্ধী, মমতার ভাগনের ফোনেও চলেছে নজরদারি
সরকারপ্রধান, মন্ত্রীরাও পেগাসাসের নজরদারিতে
গোয়েন্দা হানা: বেশি অনিরাপদ আইফোন

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশেষ
In Pakistans military vehicle unprovoked attacks 12 soldiers killed

পাকিস্তানে সামরিক গাড়িতে অতর্কিত হামলা, ১২ সেনা নিহত

পাকিস্তানে সামরিক গাড়িতে অতর্কিত হামলা, ১২ সেনা নিহত

আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পাহাড়ি বাদার এলাকায় যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তীব্র গোলাগুলির পর ১২ জন সেনা এবং ১৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছে।

পাকিস্তানি তালেবান নামক একটি জিহাদিগোষ্ঠী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, সৈন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং ড্রোনও দখলে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে হামলার পর তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে আকাশে হেলিকপ্টার দেখতে পেয়েছে।

পাকিস্তানি তালেবানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় সাধারণত সামরিক যান চলাচলের আগে কারফিউ জারি করা হয়। পথগুলো স্ক্যান করা হয়।

ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, ভারতের সহায়তায় আফগানের তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানি তালেবানদের আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল এবং নয়াদিল্লির এই অভিযোগ অস্বীকার করে। সশস্ত্র গ্রুপটি আফগান তালেবান থেকে অনুপ্রাণিত।

২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে এই গোষ্ঠীটি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে। ফলে সেনাসহ শত শত বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন।

মন্তব্য

বিশেষ
The future world is not for the arrogant for liberal people Putin

ভবিষ্যতের পৃথিবী উদার মানুষের জন্য, অহংকারীদের জন্য নয়: পুতিন

ভবিষ্যতের পৃথিবী উদার মানুষের জন্য, অহংকারীদের জন্য নয়: পুতিন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা সাইবারস্পেসে আটকে থাকার চেয়ে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন উদার মানুষ হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে এক কালচারস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যতের বিশ্বে মানুষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

পুতিন বলেন, মানবতার ভবিষ্যৎ তাদের হাতে, যারা ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এবং পরিবারকে মূল্য দেয়- সাইবারস্পেসে আটকে থাকা অহংকারী একাকীদের চেয়ে।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ভবিষ্যতের পৃথিবী অহংকারীদের জগৎ নয়, যারা সম্পূর্ণরূপে সাইবারস্পেসে ডুবে আছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী ‘নিজের জন্য’ নীতিতে বিশ্বাসী একাকী লোকদেরও নয়, বরং এমন লোকদের জগৎ যারা এখনো ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বকে মূল্য দেয়, তাদের প্রিয়জনদের লালন করে, সমাজের সঙ্গে তাদের অবিচ্ছেদ্য সংযোগ এবং এর প্রতি দায়িত্ব বোঝে।

তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং প্রবণতা ভবিষ্যদ্বাণী করে। তবে আমি বিশ্বাস করি বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সামাজিক ক্ষেত্রে আবিষ্কার এবং অগ্রগতির উপযোগী মৌলিক সমাধানগুলো শুধু মানুষের অনুপ্রেরণা, প্রতিভা এবং স্রষ্টার অনুপ্রেরণা ও প্রতিভার মাধ্যমেই দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, মানবজাতিকে এই নতুন বাস্তবতাকে ‘অধিগ্রহণ’ করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, রাশিয়ান পরিচয় এবং জাতীয় চরিত্র উভয়ই ‘পরিবারের শেকড়ে প্রোথিত।’

পুতিন গত বছরের গোড়ার দিকে ‘পরিবার’ নামে একটি জাতীয় প্রকল্প চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল- শিশুসহ পরিবারগুলো সহায়তা করা এবং দেশে জন্মহার বাড়ানো।

মস্কো তখন থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা চালু করেছে, যেমন- পরিবারে প্রতিটি সন্তানের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান, বিস্তৃত মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং পরিবারগুলোতে চলমান আর্থিক সহায়তা।

মন্তব্য

বিশেষ
2 lakhs of casualties in Gaza

গাজায় হতাহত ২ লক্ষাধিক

গাজায় হতাহত ২ লক্ষাধিক

গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি সম্প্রতি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বা তার অধীনস্থরা কোনো আইনি পরামর্শের তোয়াক্কা করেননি।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুদ্ধের প্রথম ১৭ মাস ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) নেতৃত্ব দিয়ে গত মার্চে পদত্যাগ করেন হালেভি। সম্প্রতি দক্ষিণ ইসরায়েলের এক কমিউনিটি সভায় তিনি বলেন, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা প্রায় ‘২ লাখেরও বেশি মানুষ’। তার এ অনুমান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের কাছাকাছি, যা এতদিন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘হামাসের প্রোপাগান্ডা’ বলে উড়িয়ে দিত। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বরাবরই এই তথ্যকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৭১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জন। এছাড়া বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত শুক্রবারও ইসরায়েলি হামলায়, বিশেষ করে গাজা সিটির আশপাশে, আরও ৪০ জন নিহত হয়েছেন।

ফাঁস হওয়া ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত নিহতদের ৮০ শতাংশের বেশি বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ২০০ জন, যার মধ্যে ৮১৫ জন ছিলেন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক। নিহতদের অনেকেই সামরিক সদস্য ছিলেন।

হালেভি সভায় বলেন, ‘এটি কোনো কোমল যুদ্ধ নয়। আমরা প্রথম মিনিট থেকেই গ্লাভস খুলে ফেলেছি।’ তার দাবি, ৭ অক্টোবরের আগেই ইসরায়েলের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইডিএফ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমার মধ্যেই কাজ করে, তবুও স্বীকার করেন যে তিনি কখনোই আইনি পরামর্শকে গুরুত্ব দেননি।

তার ভাষায়, ‘কেউ আমাকে একবারও থামায়নি। একবারও না। সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি, যার আমাকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই, তিনিও না।’

তবে ওয়াইনেট নিউজে প্রকাশিত রেকর্ডিংয়ে হালেভির এই বক্তব্য ছিল না। পত্রিকাটির বরাত দিয়ে আরও জানানো হয়, হালেভির দৃষ্টিতে সামরিক আইনজীবীদের আসল কাজ হলো- আইডিএফের কর্মকাণ্ডকে বৈধ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা।

এই মন্তব্য নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান আইডিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিকে ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সফার্দ বলেন, হালেভির বক্তব্য নিশ্চিত করেছে যে সামরিক আইনি উপদেষ্টারা কার্যত ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে কাজ করেন।

এর আগে হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, হালেভির উত্তরসূরি বর্তমান আইডিএফ চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামিরও সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেলের আইনি পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। তোমের-ইয়েরুশালমি জানিয়েছিলেন, গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ মানুষকে দক্ষিণে সরে যেতে বলার আগে সেখানে পর্যাপ্ত আশ্রয় ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেই হামলা চালানো হয়। গত শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলায় নিহত অনেক ফিলিস্তিনি সম্ভবত ওইসব মানুষ, যারা দক্ষিণে যেতে পারেনি বা ঘরবাড়ি ছাড়তে অনিচ্ছুক ছিল- কারণ দক্ষিণেও ইসরায়েলের বোমা হামলার ঝুঁকি থেকে যায়।

‘হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন’ গঠনের প্রস্তাব পাস জাতিসংঘে

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েল এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলেও জাতিসংঘ তা কার্যকর রাখতে অনঢ় রয়েছে। তবে ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হামাস। খবর রয়টার্সের। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়।

প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সাধারণ পরিষদের ১৪২টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। তাদের মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব।

এই প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। ঘোষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা যেমন- নিন্দনীয়, তেমনি গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও অনাহারও অমানবিক। এতে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট, সময়সীমাসাপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগের দিনই ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিন কখনোই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে না। জাতিসংঘের ঘোষণাও প্রত্যাখ্যান করে তেল আবিব।

গত শুক্রবার ভোটের পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন বলেন, ঘোষণায় হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ না করাই প্রমাণ করে যে সাধারণ পরিষদ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে পরিণত হয়েছে।

যদিও, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান উপেক্ষা করে নিজেদের ঘোষণায় অনড় থাকার সিদ্ধান্ত জানায় জাতিসংঘ।

তবে, হামাস এই ঘোষণা অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা এটিকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের সাধারণ পরিষদ বৈঠকে কিছু দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও জানায় গণমাধ্যম।

মন্তব্য

বিশেষ
At least 5 students killed in airstrikes at Myanmar High School

মিয়ানমারে উচ্চ বিদ্যালয়ে বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৯ শিক্ষার্থী নিহত

মিয়ানমারে উচ্চ বিদ্যালয়ে বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৯ শিক্ষার্থী নিহত

মিয়ানমারের একটি পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ১৯ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

দেশটির একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি একথা জানিয়েছে।

আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইনের নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে।

তারা গত বছর সেখানকার বেশ কিছু ভূখণ্ড দখল করে নেয়।

২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি’র বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে মিয়ানমারে যে রক্তাক্ত বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়, রাখাইন লড়াই সেগুলোর অন্যতম।

এএ শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাতের ঠিক পরেই কিয়াউকতাও শহরের দুটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলায় ১৫ থেকে ২১ বছর বয়সী ১৯ জন শিক্ষার্থী নিহত ও আরও ২২ জন আহত হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর জন্য আমরা নিহতদের পরিবারের মতোই দুঃখিত ।’

তারা হামলার জন্য জান্তাকে দায়ী করেছে, কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য জান্তার মুখপাত্রের কাছে এএফপি’র আহ্বানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালিন একটি জান্তা যুদ্ধবিমান সেখানে দুটি ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলেছে।

ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে, ‘নৃশংস হামলার’ নিন্দা জানিয়েছে।

এএফপি কিয়াউকতাওয়ের আশপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। সেখানে ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা অচল রয়েছে।

মিয়ানমারের বিভিন্ন ফ্রন্টে সেনাবাহিনী তাদের শাসনের বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বেসামরিক সম্প্রদায়ের ওপর বিমান ও কামান হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

মন্তব্য

বিশেষ
Nepal is returning to calm

শান্ত অবস্থায় ফিরছে নেপাল

শান্ত অবস্থায় ফিরছে নেপাল

নেপালের রাজধানী ধীরে ধীরে শান্ত পরিস্থিতির দিকে ফিরছে। কারফিউ শিথিল হওয়ায় দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

শনিবার সকালের মধ্যে রাস্তার পরিবেশ অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে মঙ্গলবার ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।

নেপালে ২০০৮ সালে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের অবসান ও রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিক্ষোভে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছে।

দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভের ফলে সরকার পতন এবং সংসদে আগুন দেওয়ার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় বুধবার থেকে রাস্তায় বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এখন সেখানে রাস্তায় সৈন্যদেরর উপস্থিতি কমিয়ে আনা হয়েছে। খবর এএফপি’র।

এদিকে শপথ নেয়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য অবস্থান ঘোষণাকারী সুশীলা কার্কি শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যত গঠনের দায়িত্ব পেলেন। দুর্নীতিমুক্ত দেশ বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি।

নেপালে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে অনেক নেপালি কার্কির নিয়োগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

সমাজকর্মী সুরজ ভট্টরাই (৫১) বলেন, নেপাল তার প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রী, আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রাখবেন এবং সুশাসনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

কাঠমান্ডুর একটি দোকানে কর্মরত ২৩ বছর বয়সী দুর্গা মাগার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত আপাতত ভালো।

তিনি আরও বলেন, এই সময়ে জনগণের, বিশেষ করে তরুণদের কাছে প্রধান সমস্যা হল দুর্নীতি।

তিনি আরও বলেন, ‘জেন জেড’ অথবা বড় কোনো রাজনৈতিক নেতা যেই এটি করুক, তা বিবেচ্য বিষয় নয়, এটি কেবল বন্ধ করা দরকার।

দুর্গা মাগার আরও বলেন, আমরা জানি না ভবিষ্যতে কী হবে, তবে আমরা আজ সন্তুষ্ট। আশা করি ভবিষ্যতে পরিস্থিতি এতটা উত্তেজনাপূর্ণ থাকবে না।

তবে দুর্নীতি নির্মূল করার আশা এতো সহজ হবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

মন্তব্য

বিশেষ
Foreign drama cinema is the death sentence in North Korea

বিদেশি নাটক-সিনেমা দেখলেই উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড

বিদেশি নাটক-সিনেমা দেখলেই উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড

বিদেশি নাটক-সিনেমা দেখা বা শেয়ার করার মতো কাজের জন্য উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে - জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম জং উনের নেতৃত্বে গত এক দশকে দেশটিতে প্রযুক্তি-নির্ভর দমননীতি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খবর আল জাজিরা।

জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়, সাত দশক ধরে কিম রাজবংশ উত্তর কোরিয়ায় পরম ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এর ফলে জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই ভীতি, দমন-পীড়ন ও সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে বাস করছে।

জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়া মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রধান জেমস হিনান জেনেভায় ব্রিফিংয়ে বলেন, কোভিড-যুগের বিধিনিষেধের পর থেকে রাজনৈতিক ও সাধারণ অপরাধ উভয়ের জন্যই মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় কে-ড্রামা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষকে ইতিমধ্যেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি দিক এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি শিশুদেরও বাধ্যতামূলকভাবে কয়লাখনি ও নির্মাণকাজের মতো কঠিন শ্রমে নিয়োজিত করা হচ্ছে।

এ প্রতিবেদনকে জাতিসংঘ বলছে গত এক দশকের বিস্তৃত পর্যালোচনা। এর আগে ২০১৪ সালের ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন, অনাহার এবং ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে কারাগারে আটকে রাখার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ উঠে এসেছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করে বলেন, “যদি উত্তর কোরিয়া বর্তমান গতিপথে এগিয়ে চলে, তবে জনগণ আরো বেশি নির্মম দমননীতি, ভয় ও ভোগান্তির শিকার হবে।”

নতুন প্রতিবেদন নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি উত্তর কোরিয়ার জেনেভা মিশন কিংবা লন্ডন দূতাবাস।

মন্তব্য

বিশেষ
In Japan the number of people aged 5 or more is one lakh

জাপানে ১০০ বা তারও বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা এক লাখ

জাপানে ১০০ বা তারও বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা এক লাখ

জাপানে ১০০ বা তারও বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যা নতুন এক রেকর্ড। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতবর্ষী এসব মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী।

গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জাপান। যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একদিকে যেমন জাপানের জনসংখ্যা কমছে, অন্যদিকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাপানে মোট ৯৯ হাজার ৭৬৩ জন শতবর্ষী ছিলেন। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৪ হাজার ৬৪৪ জন বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশই নারী।

জাপানের সবচেয়ে প্রবীণ নাগরিক হলেন ১১৪ বছর বয়সি শিগেকো কাগাওয়া। তিনি কিয়োটোর কাছে নারা অঞ্চলে থাকেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছেন, এ নারীর বয়স যখন ৮০ বছর ছিল তখনও তিনি চিকিৎসক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন।

দীর্ঘজীবী হওয়ার ব্যাপারে কাগাওয়া বলেন, ‘রোগীর বাড়ি বাড়ি হেঁটে গিয়ে সেবা দেওয়ার অভ্যাস আমার পা দুটিকে মজবুত করেছে, আর এটাই আমার বর্তমান প্রাণশক্তির মূল উৎস।’

বয়স ১১৪ হলেও তিনি এখনো খালি চোখে ভালো দেখতে পান। তার দিন কাটে টিভি দেখে, খবরের কাগজ পড়ে ও ক্যালিগ্রাফি করে।

জাপান গত কয়েক বছর ধরেই জনসংখ্যার সংকটে রয়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ায় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু এই ব্যয় মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশক্তির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।

গত মাসে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা গেছে যে, ২০২৪ সালে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ ৯ লাখেরও বেশি কমেছে।

দেশটির সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ওই সময় এ পরিস্থিতিকে ‘নীরব জরুরি অবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। জনসংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা ঠেকাতে তিনি পরিবার-বান্ধব নানা উদ্যোগ হিসেবে কর্মঘণ্টার নমনীয়তা এবং বিনামূল্যে ডে-কেয়ারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলো এখনো জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্কতা রোধে তেমন কোনো কার্যকর প্রভাব রাখতে পারেনি।

মন্তব্য

p
উপরে