নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় ১৫ দিন আগে ঘটেছিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় ৫২ প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর জানা যায় কারখানার অধিকাংশ শ্রমিকই ছিল শিশু।
এরপর বের হয়ে এসেছে নারায়ণগঞ্জে এমন হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা চলছে শিশুদের দিয়েই। এসব শিশুর বয়স ৮ বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও নারায়ণগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গড়ে ওঠা কারখানায় অল্প বেতনে কাজ করছে শিশুরা।
সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর কিছু কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আইনে আদালতে মামলা করলেও তার সংখ্যা নগণ্য। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, মামলার বেশি পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা নেই তাদের।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, কেমিক্যাল, হোসিয়ারি কারখানাসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে শিশুরা কাজ করে, সেগুলোর অধিকাংশতেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। সরু গলিতে গড়ে ওঠা কারখানার ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ।
আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মতো রাস্তাই নেই অনেক কারখানার সামনে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটলে হতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানি।
নারায়ণগঞ্জে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জেলায় নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে ৩ হাজার ৪৫০টি। তবে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে কয়েক হাজার কারখানা। এর মধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি ও উকিল পাড়া এলাকায় দুই হাজারের বেশি হোসিয়ারি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০টি কারখানা পরিদর্শন করেছেন সংস্থাটির পরিদর্শকরা। সেখানে অনেক কারখানায় শিশুদের কাজ করতে দেখেছেন তারা।
তবে শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানোয় শ্রম আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ২৫টি কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে।
শুধু হোসিয়ারি কারখানা নয়, বেকারি, ভবন নির্মাণ, কেমিক্যাল কারখানা, লোহার সামগ্রী তৈরির কারখানা, স্টিল মিল, ববিন ফ্যাক্টরি, ডাইং কারখানা, জুতার কারখানা, মেটাল কারখানা, চুনাপাথর কারখানা, প্লাস্টিক পণ্যের কারখানা, সাবান ও ডিটারজেন্ট তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন বেভারেজ ও কাচের কারখানাতে শ্রমিকদের পাশাপাশি কাজ করছে শিশুরা।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক ফারহানা কবির নিউজবাংলাকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ হলে কারখানার কর্তৃপক্ষকে অধিদপ্তর থেকে সনদ দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন ছাড়া যেসব কারখানা রয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক কারখানা শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে।
‘আমরা এমন ২৫টি কারখানামালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। অনেক কারখানার মালিককে নোটিশ করেছি। কিন্তু তাতেও কারখানামালিকরা শিশুদের নিয়োগ বন্ধ করেননি।’
নয়ামাটি, উকিলপাড়াসহ নগরীর টানবাজার এলাকা ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশুদের হোসিয়ারি ও কেমিক্যাল কারখানাগুলোতে কাজ করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব কারখানায় কাজ করে তারা।
নগরীর টানবাজার এলাকায় দাহ্য পদার্থের দোকানেও শিশুদের কাজ করতে দেখা গেছে।
ঘিঞ্জি পরিবেশে ছয়তলা একটি ভবনের তিনতলার হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করে ১০ বছরের মোহাম্মদ মাসুদ। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখার পর পরিবারের অভাবের কারণে কারখানায় কাজ শুরু করে সে। এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে দেড় হাজার টাকা বেতনে তাকে নেয় কারখানাটির মালিক।
মাসুদ বলে, ‘মালিক যা কাম দেয়, তাই করি। সকালে কারখানায় আসি, রাতে যাই। কারখানার গলিটা অন্ধকার, তাই ভয় লাগে।’
তার সঙ্গে আরও কয়েকজন শিশুকে ওই কারখানায় কাজ করতে দেখা যায়।
পাশের আরেকটি পাঁচতলা ভবনের চারতলার কারখানায় কাজ করে আব্বাস উদ্দীন নামের এক শিশু। তার বাড়ি বরিশালে। দুই বছর আগে এই কারখানায় ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেয় শিশুটি। তার সঙ্গেও রয়েছে কয়েকজন শিশু।
নয়ামাটির একটি কারখানায় কাজ করা চট্টগ্রামের ৮ বছরের শিশু মোবারক হোসেনের বেতন মাসে দেড় হাজার টাকা।
সে বলে, ‘বাপ নাই, মায় অন্যের বাসায় কাম (গৃহকর্মী) করে। বড় ভাইও হোসিয়ারিতে কাম করে। আমি হোসিয়ারিতে থাকি, মেসে খাই। বিল্ডিংয়ের শেষ মাথায় আমাগো বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি। ওপরে কাম করতে ডর করে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকা একটি কারখানার মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘গ্রাম থেকে শহরে আসার পর অভাবের কারণে শিশুরা কাজে লাগে। কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিশুদের কারখানার কাজে আনা হয়।
‘তাদের মাসিক বেতন কম দেয়া যায়। তা ছাড়া চা আনানো থেকে শুরু করে সব কাজই করানো যায়। এ কারণে অধিকাংশ কারখানায় কমপক্ষে দুজন করে শিশু কাজ করে।’
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন শিশুদের কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবার যে গতি হবে ওদেরও একই গতি হবে। তবে আমরা ওদের বেশি খেয়াল রাখি।’
যেভাবে নিয়োগ হয় শিশুদের
সংসারে অভাব অনটন থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে সপরিবারে আসেন অনেকে। ঘর ভাড়া করে থাকেন শহরের বিভিন্ন এলাকায়। নিজেরা নানা কাজে যোগ দেয়ার পর শিশুসন্তানকেও কাজে লাগিয়ে দেন মা-বাবা।
পাশের বাড়ির প্রতিবেশী, বাড়ির মালিক, পূর্ব পরিচিত, স্বজন ও বিভিন্ন কারখানার মালিকরা খোঁজ পেলে বাড়ি থেকে কারখানায় কাজে নিয়ে যায় শিশুদের।
অল্প বেতনে শিশুদের নিয়োগ
প্রাপ্ত বয়স্ক একজন শ্রমিককে মাসিক বেতন দিতে হয় কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা। তাই অধিকাংশ কারখানার মালিক সহকারী হিসেবে বেছে নেন শিশুদের।
শুরুতে তাদের দেয়া হয় দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। বছর পার হলে পাঁচ টাকা করে মাসিক বেতন বাড়ে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করানো হয় তাদের। মাঝখানে ১ ঘণ্টার ছুটি থাকে খাবারের জন্য।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুরা
অলিগলি ও সরু পথের পাশে থাকা অধিকাংশ বহুতল ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিলেও গা করেন না কারখানার মালিকরা।
এ ছাড়া কারখানাগুলো কাছাকাছি হওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগের জন্য সড়কে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। এতে শর্টসার্কিট থেকে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে কারখানায়।
ভবনগুলোর অবস্থা খারাপ। নিম্নমানের সামগ্রী ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অনুমোদন ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এগুলো। কারখানার জন্য কোনো রকমে তৈরি করা ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে যেকোনো সময়।
ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন নিউজবাংলাকে জানান, নয়ামাটি ও উকিলপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অনেক দুর্বল। আশপাশে কোনো পুকুর বা পানি সংগ্রহের জায়গা নেই।
একটি গলিতে শত শত কারখানা। আবার বড় ভবনগুলোর সিঁড়িও একটা। তাই আগুন লাগলে তা অনেক ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
কারখানা ও ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, অনেক কারখানায় শিশুরাও কাজ করে। কেমিক্যাল কারখানাতেও আছে। আমরা এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সভায় বলেছি। সেখানে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও ছিলেন।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘শিশুদের কারখানায় নিয়োগ দেয়া বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে কারখানা বন্ধ ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা করা না হলে যেকোনো দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া নিউজবাংলাকে জানান, নয়ামাটিতে অনেক শ্রমিক কাজ করে। তাদের পরিদর্শকরা সেখানে গিয়ে শিশুদের কাজ করতে দেখায় একাধিক কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
তিনি দাবি করেন, তাদের মামলা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, তাদের এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা নেই। তবে জেলা প্রশাসনকে অনেকবার জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, শিশুদের দিয়ে কাজ করানো অবৈধ। শিশুদের শ্রমিক বানিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করাচ্ছে কলকারখানা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু (২২) নামের বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালাংগী বিজিবি ক্যাম্পের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন রাখালসহ শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের ওপারে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গরু আনতে যান আবুল কালাম ডাকু। গরু নিয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোররাতে বিএসএফের ডোরাডাবরী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকু গুরুতর আহত হলে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ঝালাংগী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নুরুল আমিন বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। পাটগ্রাম থানা পুলিশ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নিহত যুবকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী অপরাধের জন্য বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করল জানি না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি আবু সাইদ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক আবুল কালাম ডাকুকে পরিবারের সদস্যরা পাটগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যান। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় তিন চাকার ভ্যানের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুস সালাম (৫০) ও ছানোয়ার হোসেন (৪৫) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তারা স্থানীয় কাটিগ্রাম বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর বন্দর আড়ত থেকে চাষীদের কাছ থেকে সবজি কিনে তিন চাকার ভ্যানের মাধ্যমে কাটিগ্রাম যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ও ছানোয়ার হোসেন, কিন্তু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে পাটুরিয়াগামী একটি কাভার্ড ভ্যান ওভারটেক করতে গিয়ে ওই তিন চাকার ভ্যানকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই আবদুস সালাম নিহত হন এবং গুরুত্ব অবস্থায় ছানোয়ার হোসেনকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি জানান, নিহতদের একজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এবং অপরজনের মরদেহ গোলড়া থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় গোলড়া থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ৬০ বছর বয়সী হাজী উমর আলী একই গ্রামের বাসিন্দা।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, প্রায় তিন-চার দিন ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে বোরো ধান ক্ষেতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতি নেমে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে হাতির পালটি বাতকুচি গ্রামের ধান ক্ষেতে যায়। এ সময় উমর আলি ও গ্রামবাসীরা তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য মশাল জ্বালিয়ে ডাক ও চিৎকার শুরু করেন।
একপর্যায়ে বন্যহাতির পালটি একটু পিছিয়ে যায়। পরে বাড়িতে যাওয়া সময় পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা হাতির পালটি উমর আলিকে ঘিরে ফেলে ও পা দিয়ে পিষ্ট করে।
বন বিভাগের ময়মনসিংহ মধুটিলা ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে নিহত উমর আলির পরিবারকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আরও পড়ুন:সিলেটে মধ্যরাতে খোলা মাঠ থেকে একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার কম্পিউটার ইনচার্জের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নগরের হাজারিবাগ এলাকার পেছনের মাঠ থেকে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো অমিত দাস শিবু স্থানীয় দৈনিক উত্তরপূর্বর কম্পিউটার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শিবুর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তিনি নগরের বাগবাড়ি নরসিংটিলা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেবাংশু কুমার দে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘রাতে কাজ শেষে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন অমিত। তার মৃত্যু রহস্যজনক মনে হচ্ছে। পাশেই তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল রাখা ছিল।’
তিনি জানান, রাত ২টার দিকে স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখে থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়।
এসএমপির উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। তার মরদেহের পাশে মোটরসাইকেলটি চাবি লাগানো অবস্থায় রাখা ছিল, তবে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার মোবাইলের শেষ লোকেশন ঘটনাস্থলেই দেখাচ্ছে।’
আজবাহার বলেন, ‘অমিতের দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। এরপরও ঘটনাটিকে রহস্যজনক ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরের শ্রীপুরে বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় টেবিলের ওপরে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
উপজেলার মুলাইদ গ্রামের ফারুক খানের বহুতল ভবনের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো ইসরাফিল (১৭) শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানান হলদি গ্রামের বাসিন্দা ও তার স্ত্রী রোকেয়া খাতুনের (১৫) বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার পস্তারি গ্রাম।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গত সাত থেকে আট মাস আগে তারা পরিবারের অমতে বিয়ে করেন। তারা দুজনই শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের ফারুক হোসেনের বহুতল ভবনে ভাড়া থাকতেন। ইসরাফিল স্থানীয় একটি ওয়ার্কসপে ও রোকেয়া স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন।
রোকেয়ার ভাই বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সাত থেকে আট মাস আগে পরিবারের অমতে তারা বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছিল। বিয়ের পর তাদের সম্পর্ক ভালোই চলছি। সম্প্রতি ইসরাফিল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। পরে বৃহস্পতিবার তাদের বুঝিয়ে বাসায় আনা হয়। সকালে তাদের মৃত্যুর খবর পাই।’
ইসরাফিলের বাবা মফিজুল হক জানান, পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন তারা। পরিবারের রান্নার কাজ তারা ইসরাফিলের ফ্ল্যাটে করতেন। শুক্রবার সকালে তাদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ভেতরে যান এবং ইসরাফিলকে ওড়নায় পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় এবং রোকেয়ার মরদেহ খাটের ওপর বিছানায় দেখতে পান।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে স্ত্রী আত্মহত্যা করে। স্ত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টি স্বামী সইতে না পেরে তিনিও আত্মহত্যা করেন।’
এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর মোহনায় জেলের জালে এবার ধরা পড়েছে ২৬ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি কোরাল মাছ।
পরে সেই মাছটি কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারে বিক্রি করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৫০ টাকায়।
কুয়াকাটা পৌর মাছ বাজারের ‘কুয়াকাটা ফিস পয়েন্টের’ পরিচালক নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মাছটি কেনেন।
তিনি বলেন, ‘সাগর মোহনায় সচরাচর এত বড় মাছ পাওয়া যায় না। আজ দুপুরে মাছটি মার্কেটে আসার পর এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নেই।’
স্থানীয় জেলেরা জানান, গত মঙ্গলবার কুয়াকাটার বাবলাতলা এলাকার জেলে রাসেল ‘মায়ের দোয়া’ নামের তার ট্রলারটি নিয়ে গভীর সমুদ্রে ইলিশ মাছ ধরতে রওনা হন। পরবর্তীতে বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় রাত ২টার দিকে রাসেলের জালে এ বিশাল কোরাল মাছটি ধরা পড়ে।
রাসেল বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ শুরুর পর থেকে সাগরে মাছ পড়ে না। ভাগ্য সহায় বলে এত বড় মাছ আল্লাহ দিয়েছেন। মাছটি তীরে নিয়ে আসলে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা মাছটি ক্রয় করতে চেয়েছেন। পরে কুয়াকাটা মাছ বাজারে এক হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে মাছটি বিক্রি করেছি।’
জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নদ-নদী এবং সাগরে বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায়। সব সময় বড় মাছ ধরা পড়ছে না। সামুদ্রিক কোরাল এর চেয়েও অনেক বড় হয়।
সরকারের দেয়া ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার সফল কার্যক্রমের কারণেই এ ধরনের মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য