নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় ১৫ দিন আগে ঘটেছিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় ৫২ প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর জানা যায় কারখানার অধিকাংশ শ্রমিকই ছিল শিশু।
এরপর বের হয়ে এসেছে নারায়ণগঞ্জে এমন হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা চলছে শিশুদের দিয়েই। এসব শিশুর বয়স ৮ বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও নারায়ণগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গড়ে ওঠা কারখানায় অল্প বেতনে কাজ করছে শিশুরা।
সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর কিছু কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আইনে আদালতে মামলা করলেও তার সংখ্যা নগণ্য। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, মামলার বেশি পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা নেই তাদের।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, কেমিক্যাল, হোসিয়ারি কারখানাসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে শিশুরা কাজ করে, সেগুলোর অধিকাংশতেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। সরু গলিতে গড়ে ওঠা কারখানার ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ।
আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার মতো রাস্তাই নেই অনেক কারখানার সামনে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটলে হতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানি।
নারায়ণগঞ্জে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জেলায় নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে ৩ হাজার ৪৫০টি। তবে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে কয়েক হাজার কারখানা। এর মধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি ও উকিল পাড়া এলাকায় দুই হাজারের বেশি হোসিয়ারি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০টি কারখানা পরিদর্শন করেছেন সংস্থাটির পরিদর্শকরা। সেখানে অনেক কারখানায় শিশুদের কাজ করতে দেখেছেন তারা।
তবে শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানোয় শ্রম আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ২৫টি কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে।
শুধু হোসিয়ারি কারখানা নয়, বেকারি, ভবন নির্মাণ, কেমিক্যাল কারখানা, লোহার সামগ্রী তৈরির কারখানা, স্টিল মিল, ববিন ফ্যাক্টরি, ডাইং কারখানা, জুতার কারখানা, মেটাল কারখানা, চুনাপাথর কারখানা, প্লাস্টিক পণ্যের কারখানা, সাবান ও ডিটারজেন্ট তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন বেভারেজ ও কাচের কারখানাতে শ্রমিকদের পাশাপাশি কাজ করছে শিশুরা।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক ফারহানা কবির নিউজবাংলাকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ হলে কারখানার কর্তৃপক্ষকে অধিদপ্তর থেকে সনদ দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন ছাড়া যেসব কারখানা রয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক কারখানা শিশুদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে।
‘আমরা এমন ২৫টি কারখানামালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। অনেক কারখানার মালিককে নোটিশ করেছি। কিন্তু তাতেও কারখানামালিকরা শিশুদের নিয়োগ বন্ধ করেননি।’
নয়ামাটি, উকিলপাড়াসহ নগরীর টানবাজার এলাকা ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশুদের হোসিয়ারি ও কেমিক্যাল কারখানাগুলোতে কাজ করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব কারখানায় কাজ করে তারা।
নগরীর টানবাজার এলাকায় দাহ্য পদার্থের দোকানেও শিশুদের কাজ করতে দেখা গেছে।
ঘিঞ্জি পরিবেশে ছয়তলা একটি ভবনের তিনতলার হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করে ১০ বছরের মোহাম্মদ মাসুদ। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখার পর পরিবারের অভাবের কারণে কারখানায় কাজ শুরু করে সে। এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে দেড় হাজার টাকা বেতনে তাকে নেয় কারখানাটির মালিক।
মাসুদ বলে, ‘মালিক যা কাম দেয়, তাই করি। সকালে কারখানায় আসি, রাতে যাই। কারখানার গলিটা অন্ধকার, তাই ভয় লাগে।’
তার সঙ্গে আরও কয়েকজন শিশুকে ওই কারখানায় কাজ করতে দেখা যায়।
পাশের আরেকটি পাঁচতলা ভবনের চারতলার কারখানায় কাজ করে আব্বাস উদ্দীন নামের এক শিশু। তার বাড়ি বরিশালে। দুই বছর আগে এই কারখানায় ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেয় শিশুটি। তার সঙ্গেও রয়েছে কয়েকজন শিশু।
নয়ামাটির একটি কারখানায় কাজ করা চট্টগ্রামের ৮ বছরের শিশু মোবারক হোসেনের বেতন মাসে দেড় হাজার টাকা।
সে বলে, ‘বাপ নাই, মায় অন্যের বাসায় কাম (গৃহকর্মী) করে। বড় ভাইও হোসিয়ারিতে কাম করে। আমি হোসিয়ারিতে থাকি, মেসে খাই। বিল্ডিংয়ের শেষ মাথায় আমাগো বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি। ওপরে কাম করতে ডর করে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকা একটি কারখানার মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘গ্রাম থেকে শহরে আসার পর অভাবের কারণে শিশুরা কাজে লাগে। কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিশুদের কারখানার কাজে আনা হয়।
‘তাদের মাসিক বেতন কম দেয়া যায়। তা ছাড়া চা আনানো থেকে শুরু করে সব কাজই করানো যায়। এ কারণে অধিকাংশ কারখানায় কমপক্ষে দুজন করে শিশু কাজ করে।’
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন শিশুদের কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবার যে গতি হবে ওদেরও একই গতি হবে। তবে আমরা ওদের বেশি খেয়াল রাখি।’
যেভাবে নিয়োগ হয় শিশুদের
সংসারে অভাব অনটন থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে সপরিবারে আসেন অনেকে। ঘর ভাড়া করে থাকেন শহরের বিভিন্ন এলাকায়। নিজেরা নানা কাজে যোগ দেয়ার পর শিশুসন্তানকেও কাজে লাগিয়ে দেন মা-বাবা।
পাশের বাড়ির প্রতিবেশী, বাড়ির মালিক, পূর্ব পরিচিত, স্বজন ও বিভিন্ন কারখানার মালিকরা খোঁজ পেলে বাড়ি থেকে কারখানায় কাজে নিয়ে যায় শিশুদের।
অল্প বেতনে শিশুদের নিয়োগ
প্রাপ্ত বয়স্ক একজন শ্রমিককে মাসিক বেতন দিতে হয় কমপক্ষে ৭ হাজার টাকা। তাই অধিকাংশ কারখানার মালিক সহকারী হিসেবে বেছে নেন শিশুদের।
শুরুতে তাদের দেয়া হয় দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। বছর পার হলে পাঁচ টাকা করে মাসিক বেতন বাড়ে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করানো হয় তাদের। মাঝখানে ১ ঘণ্টার ছুটি থাকে খাবারের জন্য।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুরা
অলিগলি ও সরু পথের পাশে থাকা অধিকাংশ বহুতল ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিলেও গা করেন না কারখানার মালিকরা।
এ ছাড়া কারখানাগুলো কাছাকাছি হওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগের জন্য সড়কে বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। এতে শর্টসার্কিট থেকে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে কারখানায়।
ভবনগুলোর অবস্থা খারাপ। নিম্নমানের সামগ্রী ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অনুমোদন ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এগুলো। কারখানার জন্য কোনো রকমে তৈরি করা ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে যেকোনো সময়।
ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন নিউজবাংলাকে জানান, নয়ামাটি ও উকিলপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অনেক দুর্বল। আশপাশে কোনো পুকুর বা পানি সংগ্রহের জায়গা নেই।
একটি গলিতে শত শত কারখানা। আবার বড় ভবনগুলোর সিঁড়িও একটা। তাই আগুন লাগলে তা অনেক ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
কারখানা ও ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকবার নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, অনেক কারখানায় শিশুরাও কাজ করে। কেমিক্যাল কারখানাতেও আছে। আমরা এই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সভায় বলেছি। সেখানে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও ছিলেন।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘শিশুদের কারখানায় নিয়োগ দেয়া বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে কারখানা বন্ধ ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা করা না হলে যেকোনো দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া নিউজবাংলাকে জানান, নয়ামাটিতে অনেক শ্রমিক কাজ করে। তাদের পরিদর্শকরা সেখানে গিয়ে শিশুদের কাজ করতে দেখায় একাধিক কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
তিনি দাবি করেন, তাদের মামলা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, তাদের এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা নেই। তবে জেলা প্রশাসনকে অনেকবার জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, শিশুদের দিয়ে কাজ করানো অবৈধ। শিশুদের শ্রমিক বানিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করাচ্ছে কলকারখানা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য