‘সব জায়গায় পানি, এক ফোঁটা পানি নেই পান করার’- ইংরেজ কবি স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ রচিত বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য রাইম অফ দ্য এনশিয়েন্ট মেরিনার’-এর একটি পঙক্তি। সমুদ্রে পথ হারানো নাবিকের অবস্থা বর্ণনায় এটি বলা হয়।
কয়েক দশক ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারীদের অবস্থাও অনেকটা ওই নাবিকদের মতো। এ অঞ্চলের মাটি ও পানিতে গত কয়েক দশক ধরেই বাড়ছে লবণাক্ততা। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে মিঠা পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এখানে।
উপকূলের এসব এলাকায় সারা বছরই থাকে পানীয় জলের অভাব। শুষ্ক মৌসুমে পানি আনতে হয় দূর-দূরান্ত থেকে। একবিংশ শতাব্দীতেও পুকুর থেকে পানি এনে তা ফুটিয়ে পান করা হয় অনেক স্থানে।
এ ছাড়া লবণাক্ততার কারণে নিয়মিত ফসলি জমি হারাচ্ছেন কৃষকরা। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। শিশুদের শরীরেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
খুলনার লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, দেশে লবণাক্ত জমির পরিমাণ জানতে ১৯৭৩ সালে প্রথম জরিপ চালায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)।
সেই জরিপে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের উপকূলীয় ১৮টি জেলার ২৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরের মধ্যে ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ত। প্রথম জরিপের ২৭ বছর পর ২০০০ সালে দ্বিতীয় এবং ২০০৯ সালে তৃতীয় জরিপ চালায় সংস্থাটি।
২০০০ সালের জরিপে দেখা যায়, লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ৭০০ হেক্টরে। ২০০৯ সালের জরিপে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার ২৬০ হেক্টর। সব মিলিয়ে এই ৩৬ বছরে লবণাক্ত জমি বেড়েছে প্রায় ২৬ দশমিক ৭ ভাগ।
২০২০ সালে চতুর্থ জরিপ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে তা হয়নি। সেই জরিপ হয়েছে ২০২১ সালে। ৬ মাস পর এ জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে।
এ ছাড়া মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রতি মাসে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলার ১৭টি পয়েন্ট থেকে মাটি এবং ১৩টি নদীর পানির লবণাক্ততা পরীক্ষা করে।
২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ পরীক্ষার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি থেকে নদীর পানিতে লবণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। মে মাসে এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। মাটিতে লবণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে এপ্রিলে।
দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্র নাথ জানান, লবণাক্ততার সহনশীল মাত্রা প্রতি ঘনমিটার পানির জন্য ০.৭৫ ডেসি সিমেন (ডিএস) এবং মাটির জন্য ২ ডিএস। মাটিতে লবণাক্ততা ৪ ডিএসের বেশি থাকলে ফলন কমে। ৪ থেকে ৮ ডিএস পর্যন্ত ফলন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। প্রতি ঘনমিটারে লবণের পরিমাণ ১২ ডিএসের ওপরে গেলে ফসল আশা করা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম হয়।
একইভাবে পানিতে লবণের পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ২ ডিএসের নিচে থাকলে সেচ দেয়া যায়। ২ থেকে ৪-এর মধ্যে থাকলে সব ফসলে সেচ দেয়া যায় না। ৪-এর ওপরে গেলে এই পানি সেচকাজে ব্যবহার করা যায় না।
জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত খুলনার রূপসা নদীতে মে মাসে গড়ে লবণাক্ততা ছিল ১৮ দশমিক ৫৬ ডিএস। শোলমারী নদীর কৈয়া বাজার পয়েন্টে গড়ে ১৮ দশমিক ৩৭, ডুমুরিয়ার ভদ্রা নদীতে ২১ দশমিক ৯৬, সাতক্ষীরার বেতনা নদীতে ২০ দশমিক ৯৮ ও পাইকগাছার শিবসা নদীতে ২৬ দশমিক ৬৪ ডিএস প্রতি ঘনমিটারে।
মাটিতে এই লবণাক্ততা বটিয়াঘাটার কৃষ্ণনগরে এপ্রিল মাসে গড়ে ৬ দশমিক ৪৮ ডিএস মিটার, মোংলা উপজেলার দিগরাজে ২০ দশমিক ৭৩, পাইকগাছার শিববাড়ি এলাকায় ১৩ দশমিক ৯৬।
মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে আশির দশকে নদীর পানি কৃষিজমিতে এনে শুরু হয় চিংড়ি চাষ। বর্তমানে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের এক লাখ ৪৫ হাজার ৪১২ হেক্টর জমিতে লবণ পানির চিংড়ি চাষ হচ্ছে। সেই হিসাবে নদী ও খালের পাশাপাশি এই এলাকার বিপুল পরিমাণ জমি এই মুহূর্তে লবণ পানির নিচে রয়েছে।
পরিবেশবিদরা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার স্থায়ীভাবে চেপে বসেছে। উজানের পানি কমে যাওয়া, নদী ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ অঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে।
লবণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে মিঠা পানির চরম সংকট দেখা দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত ফসলি জমি হারাচ্ছেন কৃষক। এ ছাড়া নারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর শরীরেও থাকছে লবণাক্ততার নেতিবাচক প্রভাব।
কয়রার কাশিয়ানি হাটখোলার গৃহিণী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘চারদিকে পানি তবে মিঠা পানির অভাব। শুষ্ক মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে পুকুরের পানি আনতে হয়। পরে সেই পানি ফুটিয়ে পান করি। তবে বর্ষা মৌসুমে মিঠা পানির সংকট কম থাকে।’
দাকোপের গৃহিণী রিতা রানী জানান, প্রায়ই তার পেটে সমস্যা থাকে। সারা দিন লবণ পানিতে কাজ করায় তার চামড়ায় সাদাটে ঘা হয়ে গেছে।
দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা অন্তঃসত্ত্বা শিউলী বেগম জানান, লোনা পানির কারণে এর আগে তার ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যায়। এবার ভয়ে ভয়ে আছেন। তাই চিকিৎসকের কাছে এসেছেন।
কয়রার কাশিয়ানি হাটখোলা এলাকার গৃহিণী রাফিজা জানান, তার পাঁচ বছরের ছেলে মাসুম জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। হাঁটতে পারে না ও কানেও শুনতে পারে না।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন লোনা পানি ব্যবহারে ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগ ও গর্ভকালীন নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, সমুদ্র উপকূলে দুর্বল বাঁধগুলো মেরামত ও উঁচু করার জন্য নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া লবণ চাষ বা চিংড়ির জন্য বাঁধ কেটে কেউ যাতে নোনাপানি প্রবেশ করাতে না পারে সেজন্য অভিযান চলছে। স্লুইস গেট দিয়ে পানি আসা-যাওয়া তদারকি করেছে পানি ব্যবস্থাপনা দল।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান বলেন, ‘খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকূলীয় ৯টি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়নকে আমরা বেশি লবণাক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এসব জায়গায় আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে পুকুর খনন করেছি।
‘এ ছাড়া যে স্থানে নলকূপে মিঠা পানি পাওয়া যায় না, সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। মোংলায় একটি পানি পরিশোধন কেন্দ্রও করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুরের গাংনীতে সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবদুল হান্নান (৭৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর দক্ষিণপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুল হান্নান দেবীপুর দক্ষিণপাড়ার খোদা বক্সের ছেলে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য হিরোক আহমেদ বলেন, ‘আজ সকালে আবদুল হান্নান নিজ গ্রামের মাঠে অবস্থিত সেচ পাম্পের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্থানীয়রা মরদেহটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়ি দেবীপুরে নিয়ে আসে।’
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিদুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছি। বতর্মানে মরদেহটি পরিবারের কাছে রয়েছে।’
নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার আগ্রান ঈদগাহ মাঠ এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ওই ভ্যানের এক যাত্রী।
নিহত মোজাহার আলী একই উপজেলার পারকোল গ্রামের মৃত শাহাদত আলীর ছেলে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলীমুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি ট্রাক ভ্যানটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ভ্যানচালক মোজাহার মারা যান। সেই সাথে ভানযাত্রী মিজান শেখ আহত হন।
তিনি বলেন, পরে স্থানীয়রা আহত মিজানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে। পানির অভাবে ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে বোরো ধান। ধানের পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্যান্য ফসলও। পানির সংকট হওয়ায় আমের মুকুল ঝরে যাচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ধান চাষি আজমত উল্লাহ জানান, পানির অভাবে ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ধানে পোকাড় আক্রমণ হচ্ছে। ধানের থোড়া আসায় পানির দরকার হলেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন বরেন্দ্রের গভীর নলকূপে সেচের জন্য ঘুরছেন। তবে সিরিয়াল পাচ্ছেন না।
জেলার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণ আম ঝড়ে পড়ছে। গাছের নিচে ঝড়া আম স্তুপ হয়ে আছে।
চারঘাট উপজেলার আমচাষী জব্বর আলী বলেন, পানির অভাবে আম ঝড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আম ঝড়ে যাচ্ছে। পানি দিয়েও আম ঝড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। পানিও ঠিক মত উঠছে না। এবার আমের ফলন ঠিক মত হবে না।
অন্যান্য চাষীরাও বলছেন একই কথা। পানি না থাকায় বালায় নাশক স্প্রেও দেয়া যাচ্ছে না। ফলে পোকামাকড় আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরেন্দ্রের অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্পের কারণে এই অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। ফলে পানির সংকট সৃষ্টি হয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, বোরো ধানের জমিতে কম পক্ষে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। ধানের থোড়া তে প্রচুর পরিমাণ চিটা দেখা দেয়। আর পানির অভাবে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়ে ধান গাছ হলুদ হয়ে যায়। যেভাবেই হোক বোরো ধানের জমিতে সব সময় পানির ধরে রাখতে হবে। এবার যেভাবে তাপ প্রবাহ ও পানির সংকট তৈরি হয়েছে এটা আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকলে বোরোর উতপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপ প্রবাহের ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানির সংকট তৈরি হওয়ায় আম ঝড়ে পড়ছে। আমের ঝড়ে পড়া রোধে আম গাছের গোড়াতে সপ্তাহে অন্তত একদিন পানি দিতে হবে হবে। কৃষকদের আমরা গাছের গোড়াতে পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শীতাংশু কুমার পাল বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অপরিকল্পিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের কারণে পানির স্তর আরো বেশি দ্রুত নিচে নেমেছে। গভীর নলকূপেও এখন ঠিম মত অয়ানি উঠছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমিয়ে নদী থেকে জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের দাবি, সমালোচকরা পানি সংকটের বিষয়ে বরেন্দ্রের ঘাড়ে এককভাবে দোষ চাপাচ্ছে। পানির সংকট মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পদ্মা নদী থেকে আশেপাশের অঞ্চলে সেচের পানি সরবারাহ করতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যাওয়া গভীর নলকূপ গুলোও মেরামত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তীব্র তাপ প্রবাহের ফলে কিছুটা পানি সংকট তৈরি হলেও তা দ্রুত সমাধান করতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে। বোরো ধানের জমিতে পানি পানি সরবারাহের বিষয়ে বরেন্দ্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাবিনা বেগম জানান, বোরো ধানের জমিতে পানি সরবাহর নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর একযোগে কাজ করার ব্যাপারে সমন্বয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলা হচ্ছে যেন সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহ নিশ্চিত করা যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সম্পত্তির লোভে মারধর করে আপন ভাতিজিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমুদপুর গ্রামে বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারীসহ তিনজনকে আট করেছে পলাশবাড়ী থানা পুলিশ।
প্রাণ হারানো তরুণীর নাম শারমিন আক্তার (২২), যিনি প্রয়াত শুক্কুর উদ্দিনের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর শারমিন বাবার বাড়িতেই থাকতেন।
শারমিনের অভিযুক্ত চাচার নাম আবদুল খালেক।
তরুণীর পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, প্রায় এক বছর আগে পিতৃহারা শারমিনকে কৌশলে বিয়ে দেন তার চাচারা। বিয়ের পর তালাক হলে সমঝোতায় দেনমোহরের টাকা শারমিনকে না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তার বড় চাচা আবদুল খালেক। সেই টাকা ও শারমিনের নামে থাকা জমি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
তারা আরও জানান, সম্পত্তি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টার দিকে শারমিনের সঙ্গে তার চাচাদের বিরোধ বাধে। ওই সময় অভিযুক্তদের মারধরে গুরুতর আহত হন শারমিন। পরে আহত শারমিনকে অভিযুক্তরাই উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
শারমিনের দুলাভাই রুহুল আমিন বলেন, ‘শারমিন ও শাম্মী আপন দুই বোন। আমার শ্বশুর (শারমিনের বাবা) মারা গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর শারমিন আমার বাড়িতেই থাকত। পরে শারমিনের বাবলু নামের এক ফুফা ও তার জ্যাঠারা মিলে কৌশলে শারমিনকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে বিয়ে দেন।
‘বিয়ের তিন-চার মাস পরই তালাক হয় শারমিনের। তখন থেকেই শারমিন আমার শাশুড়ির সাথে তার বাবার বাড়িতেই থাকত।’
শারমিনের মা এবং এ তরুণীর দুলাভাই রুহুল আমিনের অভিযোগ, শাম্মী ও শারমিনের নামে ৩২ শতাংশ জমি আছে। সেই জমি নেয়ার লোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া-বিবাদ, গালিগালাজসহ শারমিনকে মারধর করতেন তার চাচা আবদুল খালেক। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার শারমিনের কাছে জমি চেয়ে মারধর শুরু করেন তিনি। পরে আবদুল খালেকের ভাই আবদুল বারী, ভাতিজা রহমান ও ছকু নামের একজন মারধর করতে থাকেন। ওই সময় তাদের মারধরে শারমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ওসি কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওই সময় এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিক সুরতহালে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গলাতে কোনো দাগ চোখে পড়েনি, তবে শ্বাসরোধের বিষয়টি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য