টাকা বিনিয়ম মাধ্যম। কিন্তু এই টাকা কেউ চাইলেই কি তাকে দিতে হবে? বা দিতে কি বাধ্য?
এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ টাকার মধ্যে লেখা ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’।
কেন টাকায় লেখা থাকে এমন কথা? এর অর্থ কী?
‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকা’ কথাটার অর্থ কিছুটা জটিল। ব্যবহারকারী বা বিনিময়ের সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সরকারি মুদ্রা হলো দুটি। এক ও দুই টাকার নোট কিংবা কয়েন হলো সরকারি মুদ্রা। আর বাকিগুলো হলো সমপরিমাণ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।
ধরুন, আপনি কোনো কারণে ব্যাংক নোটের উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই আপনি ২০০ টাকার একটি নোট বাংলাদেশ ব্যাংক কাউন্টারে জমা দিয়ে বিনিময় চাইলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিবামাত্র এর বাহককে অর্থাৎ আপনাকে সমপরিমাণ এক ও দুই টাকা দিয়ে দেবে। অর্থাৎ চাওয়ামাত্রই বাহককে টাকা দিয়ে দায়মুক্ত হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এটিই হচ্ছে বাধ্য থাকার মূল বিষয়।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি আমল থেকে লেখা হয়েছে বলে সেই ধারাবাহিতা এখনও বজায় রাখা হয়েছে। এটা লেখার আসলে কোনো কারণ নেই। ডলারে কিন্তু এটা লেখা থাকে না। যখন স্বর্ণের মূল্যমানের সমপরিমাণ টাকা ছাপানো হতো, তখন এটা লেখা হতো। কারণ তখন টাকা দিয়ে সমপরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন গোল্ড স্ট্যান্ড্যার্ডে টাকা ছাপানো হয় না। অন্যভাবে হিসেব-নিকেশ করা হয়। এ জন্য বর্তমানে এটা লেখা থাকার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। যেহেতু আগে থেকে লেখা ছিল, সে জন্য ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এখনও লেখা হয়। তবে এখন অনেক দেশ এটা পরিবর্তন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে প্রত্যেকটা ব্যাংকের নোট ইস্যু করা হতো স্বর্ণ মুদ্রার বিপরিতে। যত টাকা নোট ইস্যু করা হবে, ঠিক তত স্বর্ণ বা অন্যান্য আর্থিক সম্পদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষণ করা থাকবে।
‘কিন্তু এখন আমাদের কারেন্সি কত লাগবে, এটা নির্ভর করে মানুষের স্পেন্ডিং বিহেভিয়ারের (ব্যয়ের প্রবণতা) উপর। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ নগদ টাকা পছন্দ করে। চেক বা কার্ডে লেনদেন অনেকে করতে চায় না। এ জন্য আমাদের কারেন্সি বেশি প্রয়োজন হয়।’
বাহককে দিতে বাধ্যবাধকতা
বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপার একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি মুদ্রা হলো তিনটি। এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট কিংবা কয়েন হলো সরকারি মুদ্রা আর বাকিগুলো হলো সমপরিমাণ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।
বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার বিপরীতে নোট ছাপে। তাই এটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন কোনো নোট বাজারে ছাড়ে, তখনই সমপরিমাণ এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট বা কয়েন সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেয়। আবার যখন এক, দুই ও পাঁচ টাকা বাজারে ছাড়ে, তখনই সমপরিমাণ নোট সরকারি অ্যাকাউন্টে জমা দেয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নিকট থেকে টাকা নিয়ে টাকা ছাড়ে। সে হিসেবে বাজারে যত টাকার নোট (বিল অফ এক্সচেঞ্জ) আছে, ঠিক সমপরিমাণ টাকা (এক, দুই ও পাঁচ টাকা) বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত আছে। সুতরাং সব নোট ব্যাংকে জমা করলেও এক, দুই, পাঁচ টাকার কয়েন বা নোট দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক, দুই, পাঁচ টাকা হলো টাকা। বাকিগুলো বিল অব এক্সচেঞ্জ। আর এ জন্য টাকায় লেখা থাকে না ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’। অথচ বাকি নোটগুলোয় (বিল অফ এক্সচেঞ্জ) ঠিকই লেখা থাকে।
মুদ্রা দুই প্রকার: ঐচ্ছিক ও বিহিত মুদ্রা
ঐচ্ছিক মুদ্রা বিনিময়ের এমন এক মাধ্যম যা চাইলে অপরপক্ষ গ্রহণ করতেও পারে, নাও করতে পারে। যেমন ব্যাংক চেক। কোনো কিছু কিনে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক চেক প্রদান করা হলে গ্রহিতা চাইলে ব্যাংক চেকটি গ্রহণ করতে পারেন অথবা বলতে পারেন নগদ টাকায় পরিশোধ করতে হব। এটা পুরোপুরি ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
বিহিত মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে নিতে অপরপক্ষ বাধ্য থাকে এবং বাহক দিতে বাধ্য থাকে। যেমন ব্যাংক নোট। কোনো কিছুর বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক নোট দেয়া হলে গ্রহিতা সেটি গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন। তাই এই ধরনের মুদ্রাকে বিহিত মুদ্রা বলা হয়ে থাকে। তাই টাকার গায়ে লেখা থাকে ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে (বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে) দিতে বাধ্য থাকিবে।’
ব্যাংক নোট বাংলাদেশ ব্যাংক বের করে বলে এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সই থাকে। কিন্ত সরকারি নোট বের করে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ-মন্ত্রণালয়। এ জন্য এতে থাকে অর্থসচিবের সই।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে সকল নোট ছাপায়, তা সরাসরি টাকা না। সেগুলো হলো সমপরিমাণ সরকারি মুদ্রার বিনিময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’।
ব্যাংক নোটগুলো যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের টাকা নয়, বরং বিল অফ এক্সচেঞ্জ, আর এগুলো ছাপাচ্ছে স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংক, সেহেতু এটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা দায়।
যেহেতু এটা ব্যাংকের দায়, তাই তারা সমপরিমাণ বিনিময়মূল্য দিতে বাধ্য। এই কারণেই সকল প্রকার ব্যাংক নোটের উপর তারা লিখে দেয়, ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।’
টাকার জন্মের ইতিহাস
স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন থাকার যুগে ধাতুর তৈরি টাকা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এ ধরনের টাকা ক্ষয় হয়ে যেত এবং এর পরিমাণ কমে যেত, অন্য দিকে বেশি পরিমাণে স্বর্ণমুদ্রা পরিবহন করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টসাধ্য কাজ ছিল।
এরপর মানুষ স্বর্ণকারের কাছে স্বর্ণ রেখে একটা স্লিপ বা রশিদ নিয়ে আসতো। এই রশিদ অনেকটা চেকের মত কাজ করতো। লেনদেনের সময় রশিদ ধরিয়ে দিত এবং সেই রশিদ সেই স্বর্ণকারের কাছে জমা দিলে স্বর্ণকার তাকে ধাতব মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকত। সেই রশিদে এই কথাটা লেখা থাকতো: ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকিবে।’
এরপর এটার আধুনিকায়ন এবং জাতীয়করণের ফলে এটা কাগজের মুদ্রা কিংবা টাকায় পরিণত হয়েছে।
১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত টাকা স্বর্ণের মজুদের ভিত্তিতে ছাপা হত।
অর্থাৎ সরকারের রিজার্ভে যদি ১০ টন স্বর্ণ জমা থাকে, তবে বাংলাদেশ ১০ টন স্বর্ণের মূল্য মানের টাকা ছাপাতে পারবে।
১৯৭১ সালে আমেরিকা এই আন্তর্জাতিক নিয়ম অস্বীকার করে এবং ইচ্ছামতো টাকা ছাপাতে শুরু করে।
বর্তমানে মুদ্রার মূল্য স্বর্ণের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে দেশের জিডিপি, ব্যয়ের প্যাটার্নের উপর।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য