চারপাশে ধানি জমি। ফাঁকে ফাঁকে জলমগ্ন ডোবা। ডোবা আর ধানক্ষেত পেরোলে বাঁশবাগান-ঝোপঝাঁড়। কোনো রাস্তা নেই। ক্ষেতের আলপথ ধরে বাঁশবাগান পেরিয়ে সামনে গেলেই দেখা মেলে একটি বাড়ির।
বড় উঠানের শেষ প্রান্তে টিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি সাধারণ ভাঙাচোরা ঘর। দারিদ্রের স্পষ্ট ছাপ থাকা এই বাড়ি নিয়েই গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম। নাম শ্রীমুখ। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থান এই গ্রামের।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর নথি ও ভোটার তালিকাতেও রয়েছে একটি পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা এই গ্রামের নাম। শ্রীমুখ দেশের তো বটেই, এমনকি বিশ্বের ‘সবচেয়ে ছোট গ্রাম’ বলে দাবি করছেন গবেষকেরা।
সরকারি নথিতে অবশ্য সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে আলাদা করে শ্রীমুখের উল্লেখ নেই। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নথিপত্র ঘেঁটে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে শ্রীমুখের এই স্বীকৃতি আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হবে।
কোথায় শ্রীমুখ
সিলেটের একেবারে পশ্চিমের উপজেলা বিশ্বনাথ। প্রবাসীবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও এখানকার বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। উপজেলা সদর থেকে রামপাশা হয়ে ২০ মিনিট এগোলেই পৌঁছানো যাবে খাজাঞ্চি ইউনিয়নের শ্রীমুখ গ্রামে। তেলিকোনা ও পশ্চিম নোয়াগাও নামে দুটি গ্রামের মাঝখানে অবস্থান শ্রীমুখের।
গ্রামের আয়তন মাত্র ৬০ শতক। লোকসংখ্যা মোট চার জন, যারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে। বাকি তিন জনের মধ্যে দুজন নারী ও একজন শিশু। সবশেষ ভোটার তালিকায় এই গ্রামে ভোটার আছেন দুজন।
পরিসখ্যান ব্যুরোর নথিতে শ্রীমুখ গ্রামের উল্লেখ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই দপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের উপ পরিচালক মুহাম্মদ আতিকুল কবীর। তিনি বলেন, ‘সবশেষ জরিপ অনুসারে বিশ্বনাথের শ্রীমুখ গ্রামে একটি পরিবার রয়েছে, আর লোকসংখ্যা ৪ জন।’
সবচেয়ে ছোট গ্রাম
আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও গবেষকরা মনে করছেন, আয়তন ও লোকসংখ্যার দিক দিয়ে শ্রীমুখই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম।
এই গ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি মৌজা নিয়েই শ্রীমুখ গ্রাম। দাগ, খতিয়ান এবং মৌজাসহ সরকারি সব নথিপত্রে শ্রীমুখ আলাদা গ্রাম হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এর আয়তন ৬০ শতক, ফলে এটি দেশের পাশাপাশি বিশ্বেরও সবচেয়ে ছোট গ্রাম।’
তিনি বলেন, ‘এখন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম ধরা হয় ক্রোয়েশিয়ার ‘হাম’-কে। সেখানকার জনসংখ্যা ৩০ জন। হাম আয়তনের দিক থেকেও শ্রীমুখের চেয়ে অনেক বড়।’
তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা গেছে, হামকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট শহর হিসেবেও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
ড. জহিরুল হক শাকিল নিজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে শ্রীমুখের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত। এতে এই গ্রামের পরিচিত বাড়বে। পর্যটকদের জন্যও গ্রামটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।’
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই গ্রামটির ব্যাপারে আমি শুনেছি। সম্প্রতি বিশ্বনাথের সহকারী কমিশনার (ভূমি) গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন। আমরা এখন বিভিন্ন নথিপত্র জোগাড় করছি। তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে শ্রীমুখের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যে এটি আলাদা গ্রাম হিসেবেই উল্লেখ আছে। এই গ্রামে মাত্র একটি পরিবার রয়েছে।’
ছোট গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া কিছুটা ঝামেলার এবং অনেক সময়সাপেক্ষ। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা এলে এটি দ্রুততম সময়ে সম্ভব হবে। আমাদের পক্ষেও তখন কাজ করতে সুবিধা হবে।’
তবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন জানিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া বলেন, ‘আমি পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে এ গ্রাম নিয়ে কথা বলে এসেছি। কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গ্রাম হিসেবে শ্রীমুখ গ্রামের স্বীকৃতি আদায় করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে তাকে অনুরোধ করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’
শ্রীমুখ গ্রামের অস্পষ্ট ইতিহাস
শ্রীমুখ গ্রামে এখন বসবাস করে সৌদি প্রবাসী আপ্তাব আলীর পরিবার। আপ্তাব আলীর স্ত্রী, সন্তান ও বোন থাকেন গ্রামের একমাত্র বাড়িটিতে। এর আগে বাড়িটি ছিল একটি হিন্দু পরিবারের।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৪ সালে হিন্দু পরিবারটি আপ্তাব আলীর দাদা হাবিব উল্লাহর কাছে বাড়ি ও জমি বিক্রি করে ভারতে চলে যায়। দাদার কাছ থেকে এই বাড়ি পান আপ্তাব আলী।
ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আপ্তাব আলীর স্ত্রী রাহিমা বেগমের সঙ্গে। গ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। বিয়ের পর থেকেই এ বাড়িতে বসবাস করছেন বলে জানান রহিমা।
রহিমা বেগম বলেন, ‘আমরার একটা বাড়ি লইয়াই আমরার গ্রাম। এক বাড়ি লইয়া কিলা গ্রাম অইলো ইটা আমি জানি না।’
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আইনজীবী আব্দুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি ব্রিটিশ আমলে এখানে একটি হিন্দু পরিবার বসবাস করতো। পরে তারা অন্যত্র চলে যায়। এসময় পাশের পশ্চিম নোয়াগাওঁ গ্রামের আব্দুল গনির পিতা মরহুম হাবিব উল্লাহ এই বাড়িটি ক্রয় করেন। পরে শ্রীমুখ গ্রামের বাড়িটি হাবিব উল্লাহ তার মেয়ে কটাই বিবিকে দান করেন। এরপর কটাই বিবি স্বামী আব্দুল রহমানকে নিয়ে এ বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। কটাই বিবি ও তার স্বামী মারা যাওয়ায় পর ছেলে আপ্তাব আলীর পরিবার বর্তমানে এ বাড়িতে আছে।
অধ্যাপক জহিরুল হক শাকিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামটির আয়তন আগে হয়তো অনেক বেশি ছিলো। সম্ভবত নদীভাঙনে কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। অন্য গ্রামের লোকদের কাছে বিক্রি করার ফলে এই গ্রামের জায়গা অন্য গ্রামের অন্তর্ভুক্তও হয়ে যেতে পারে। এছাড়া আগে এখানে একাধিক পরিবারও বসবাস করে থাকতে পারে। তবে ১৯৬৪ সালের পাওয়া হিসাবে এখানে একটি পরিবারই ছিল।’
শ্রীহীন শ্রীমুখ
গ্রামে যেতে নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই। হেমন্তে অন্যের জমির আলপথ পেরিয়ে, আর বর্ষায় কিছুটা নৌকায় করে ও কিছুটা কাদামাটি পেরিয়ে যেতে হয় শ্রীমুখ গ্রামে।
আপ্তাব আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়িত ঢুকার কোনো রাস্তা নাই। আরোকজনোর জমিনোর উপর দিয়া আইতে অয়। বাইচ্চার স্কুলো যাইতে খুব সমস্যা অয়। আর বর্ষার সময় তো পানিত বন্দি থাকি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘একটামাত্র বাড়ি হওয়ায় আমরার গ্রামোর উন্নয়নোর কথা কেউ জিন্তা করইন না।’
গ্রামটির দুরবস্থা প্রসঙ্গে খাজাঞ্চি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মো. গিয়াস উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামের একটিমাত্র বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে। তাদের প্রধান সমস্যা এখন নিজস্ব সড়ক না থাকা, তবে বাড়ির চাপাশে অন্যের ব্যক্তিমালাকাধীন জমি থাকায় চাইলেই সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব নয়।’
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘জমির মালিকরা যদি একটু জমি ছেড়ে দেন তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সড়ক তৈরি করতে উদ্যোগ নেব।’
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য