গরুর মাংসের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টাতেও সফল বাংলাদেশ। উৎপাদনে এসেছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। পৌঁছেছে উদ্বৃত্তস্তরেও।
কেবল পশুর সংখ্যা বাড়িয়ে এই সাফল্য আসেনি। নানা কৌশলে জাত উন্নয়ন ও খাবারে মুনশিয়ানা এনে প্রাণীগুলোর আকারও বড় করা হয়েছে। আগের তুলনায় দ্বিগুণ মাংস পাওয়া যাচ্ছে এখন ষাঁড়ে।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ও নিরাপদ পদ্ধতিতে গরুর ওজন বৃদ্ধি করেই তা সম্ভব হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে জাদুকরি ভূমিকা রাখছে খড়ের সঙ্গে চিটাগুড়।
এ প্রক্রিয়ায় মাত্র তিন মাসেই একটি গরুর শরীরে দ্বিগুণ মাংস উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। গরুর জাত উন্নত হলে মাংস মিলছে তিন থেকে চার গুণ।
এ জন্য উদ্যোক্তা বা খামারিকে খুব বেশি কিছু করতে হচ্ছে না। প্রাকৃতিক খাবার- পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস, পরিমিত দানাদার খাদ্য (কুঁড়া, গমের ভুসি, চালের খুদ, খইল, কলাই, মটর, খেসারি) ও পানি খাওয়ালেই হচ্ছে।
আধুনিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা
গরু মোটাতাজা করার প্রক্রিয়াটি এখন আরও আধুনিক হয়েছে। গরুর শরীরের ওজন বা মাংসের উৎপাদন বাড়াতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ইউরিয়া মিশ্রিত প্রক্রিয়াজাত খড় কিংবা চিটাগুড় খাওয়ানো হচ্ছে। এতে আরও বেশি লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)-এর গবেষণা বলছে, কোনো খামারি সরকারি ফর্মুলা অনুযায়ী আধুনিক প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক উপায়ে গরু হৃষ্টপুষ্ট করলে তার লাভ ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি হতে পারে। অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে গরুকে সহজলভ্য খড়ের সঙ্গে ১ টাকার চিটাগুড় মিশিয়ে খাওয়ালে ৫ থেকে ৭ টাকার মাংস উৎপাদন সম্ভব।
পদ্ধতিটি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে সরকারিভাবে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর নাম রাখা হয়েছে ‘আধুনিক প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক উপায়ে ও নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ’।
প্রকল্প পরিচালক প্রাণকৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, ‘প্রকল্পের যাত্রা মাত্র দুই বছর। সেটিও স্বল্প পরিসরের। কিন্তু এতেই মাংস উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য পাওয়া গেছে।’
তিনি জানান, এই সময়ের মধ্যে এবার ঈদুল আজহার জন্য সারা দেশের উপকারভোগী খামারি বা মালিক কর্তৃক ৭৪ হাজার হৃষ্টপুষ্ট গরুর বাজারজাত করা হয়েছে। নির্বাচিত গরুর ওজন শতভাগ বৃদ্ধি বা দ্বিগুণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন থেকে চার গুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
প্রাণকৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, প্রকল্পের আওতায় যে পরিমাণ হৃষ্টপুষ্ট গরু সরবরাহ দিয়েছে, তার চেয়েও বড় কাজ করেছে-তারা তাদের শিক্ষাটাকে এলাকার অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছে।
এর ফলে এখন বাণিজ্যিক খামারির পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক ব্যক্তি উদ্যোগও নিরাপদ উপায়ে মাংস উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি মনোযোগী হচ্ছেন।
গত তিনটি মৌসুমে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে স্থানীয় পশুতেই। চলতি বছর ১ কোটি ১৯ লাখের বেশি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এর সরবরাহ দেয়া হচ্ছে দেশি পশুতেই। এর মধ্যে ৪৮ লাখের বেশি হৃষ্টপুষ্ট গরুর সরবরাহ রয়েছে।
জাত উন্নয়ন
এই প্রকল্প ছাড়াও পশুর কৃত্রিম প্রজনন, জাত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, রোগ প্রতিরোধবিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও বাড়তি মাংস উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ প্রচেষ্টা চলছে সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবেই।
বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বিভিন্ন খামারে গরুর মাংস উৎপাদন বাড়াতে জাত উন্নয়নের চেষ্টার অংশ হিসেবে এখন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, আয়ারশায়ার, গুয়েরেন্সি, ব্রাউন সুইস, সিন্ধি, শাহিওয়াল ও হরিয়ানা জাতের গরু উৎপাদন হচ্ছে। সংকরায়িত জাতগুলোতে দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়তি মাংসও পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় দেশি গরুর তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি মাংস পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-এর মহাসচিব শাহ ইমরান নিউজবাংলাকে জানান, তাদের সদস্যভুক্ত ৮ লাখের বেশি খামারি রয়েছে। তারা জাত উন্নয়নের মাধ্যমেও সংকরায়িত বিভিন্ন বিদেশি জাতের গরু বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালন ও উৎপাদন করছে।
দেশি জাতের গরুর সংকরায়ন ও প্রজননের মাধ্যমে উন্নত জাতে রূপান্তর ঘটানো এই জাত বিএলআরআই ক্যাটেল ব্রিড-১ বা (বিসিবি-১) নামে পরিচিতি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই) দাবি করছে, এ জাতের একটি ষাঁড় তিন বছর বয়সেই ৩৫০-৪৫০ কেজি ওজনের হচ্ছে, যা আগে ছিল ২০০-২৫০ কেজির মধ্যে। অর্থাৎ জাত উন্নয়নেও গরু থেকে দ্বিগুণ মাংস উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছে বাংলাদেশ।
বিএলআরআই জানিয়েছে, দেশি জাতের গাভিতে বিদেশি জাতের ষাঁড়ের শুক্রাণু দিয়ে সংকরায়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএলআরআই আরও অধিক মাংস উৎপাদনকারী জাত উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই কর্মসূচির আওতায় এখন বিসিবি-১ জাতের গাভিকে লিমোজিন জাতের সিমেন দ্বারা প্রজনন ঘটিয়ে লিমোজিন ক্রস বিসিবি-১, সিমেন্টাল জাতের সিমেন দ্বারা প্রজনন ঘটিয়ে সিমেন্টাল ক্রস বিসিবি-১ এবং শ্যারোলেইস প্রজাতিকে শ্যারোলেইস ক্রস বিসিবি-১ গরু উৎপাদন করা হচ্ছে।
সংকরায়নের ফলাফল কী?
প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, দেশি আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা উপযোগী এই সংকর জাতের গুরুগুলো দুই বছর বয়সেই ৫০০-৬০০ কেজি পর্যন্ত মাংস উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন বা সর্বসাধারণের লালন-পালনের জন্য এখনও সেভাবে এই জাতগুলো উন্মুক্ত করা হয়নি। এসব জাতের আরও উন্নয়নের চেষ্টা চলছে, যা আগামীর বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার হাতছানি দিয়েই ডাকছে।
একইভাবে ব্রাহমা জাতের সিমেন দ্বারা প্রজনন ঘটিয়ে ব্রাহমা ক্রস বিসিবি-১ সংকর জাতের গরু উৎপাদনের চেষ্টাও চলছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পশু পালনে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের নানা রকম নীতিসহায়তা রয়েছে। মূলত এই নীতিসহায়তার ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিবছর গড়ে ১৬ লাখ হারে বাড়ছে গরুর উৎপাদন। এর ধারাবাহিকতায় মাংস উৎপাদনেও দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের তথ্য বলছে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫টি, যা ২০১৮ সালে গরুর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩৯ লাখ। এই সময়ে উৎপাদন বেড়েছে ৪৬ লাখ।
দেশে মাথাপিছু মাংসের চাহিদা রয়েছে ১২০ গ্রাম হারে। এই চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মোট জনগোষ্ঠীর মাংসের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ৭২ লাখ ৯৭ হাজার টন। এর বিপরীতে মাথাপিছু উৎপাদন হচ্ছে ১২৪.৯৯ গ্রাম হারে। এতে মোট উৎপাদন হচ্ছে ৭৫ লাখ ১৪ হাজার টন। মাথাপিছু উৎপাদন বেশি হচ্ছে গড়ে ৫ (৪.৯৯) গ্রাম।
মাংস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব আরও, তবে সংকট অন্য জায়গায়
এই মাংসের উৎপাদন দেশে আরও বাড়ানো সম্ভব হতো, যদি সরকার ব্রাহমা জাতের সংকরায়িত জাত দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অনুমতি দিত। এটি হলে দেশের মানুষকে মাংসও খাওয়ানো যেতে অনেক কম দামে।
ব্রাহমা জাতের সিমেন দ্বারা প্রজনন ঘটিয়ে ব্রাহমা ক্রস বিসিবি-১ সংকর জাতের গরু উৎপাদন দক্ষতা মূল্যায়ন পর্যবেক্ষণের কাজ এখন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) চলমান রয়েছে। তবে এর আগেই মাংস উৎপাদন বাড়াতে সরকার দেশে ব্রাহমা জাত বিস্তারের লক্ষ্যে ‘বিফ ক্যাটেল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ গ্রহণ করে। প্রকল্পটির গবেষণা ও মূল্যায়নেও সাফল্য মেলে।
প্রকল্পের আওতায় এই জাতের সংকরায়িত একটি গরু থেকে ৯০০ কেজি থেকে ১১০০ কেজি পর্যন্ত মাংস সরবরাহ মিলত। কিন্তু জাতটি বেসরকারিভাবে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনে সরকারের অনুমোদনের আগেই কিছু কর্মকর্তা ও খামারির মাধ্যমে সারা দেশে স্বল্প পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে।
এতে মাংস উৎপাদন ও লাভ বেশি হয় দেখে অনেক দুগ্ধজাত খামারি তখন দুধ উৎপাদনের পরিবর্তে দেশি ও উন্নতজাতের গাভির সঙ্গে ব্রাহমা ষাঁড়ের শুক্রাণুর সংকরায়ন ও উৎপাদিত জাত বাণিজ্যিকভাবে পালনের চেষ্টা চালায়।
এতে দেখা দেয় নতুন বিপত্তি। কারণ, ব্রাহমার সিমেন যেই গাভিতে প্রয়োগ করা হয়, ওই গাভির দুধ উৎপাদন কমে যায়। এতে দেশে দুধ উৎপাদনে বড় ঘাটতির শঙ্কা দেখা দেয়।
বিবিএসের তথ্যমতে, মাথাপিছু দুধের চাহিদা হচ্ছে ২৫০ গ্রাম, এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৬৫.০৭ গ্রাম। সামগ্রিকভাবে দুধের বাৎসরিক চাহিদা আছে ১৫২ লাখ ২ হাজার টন। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ৯৯.২৩ লাখ টন। অর্থাৎ দেশে দুধের ঘাটতি দৃশ্যমান।
সাভারে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের মহাপরিচালক আব্দুল আউয়াল নিউজবাংলাকে জানান, মাংসের উপাদন বাড়াতে গিয়ে ব্যাহত হচ্ছিল দেশের চাহিদা অনুযায়ী দুধের উৎপাদন। এই পরিস্থিতিতে ‘বিফ ক্যাটেল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এর বাণিজ্যিক লক্ষ্য বন্ধ করা হয়। চাহিদার পরিমাণ দুধ উৎপাদনে না যাওয়া পর্যন্ত অধিক মাংস উৎপাদনশীল ব্রাহমা জাত বাংলাদেশে উৎপাদন, প্রজনন নিষিদ্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, ‘তবে মাংস উৎপাদনের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে ‘আধুনিক উপায়ে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ’ প্রজেক্টসহ নানা ধরনের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। যার সাফল্য আমরা দেখছি। এর মানে এই নয়, বিএলআরআই-এর উন্নত জাত কার্যক্রম থেমে আছে।’
এ প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার যা করে তার মূলে থাকে জনকল্যাণ ও দেশের স্বার্থ। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা কোনো একটি অঞ্চলের লোকের সুবিধা দেখে না। মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর চেয়ে এই মুহূর্তে দুধের উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। তাছাড়া দুধে পুষ্টিও বেশি। দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন এবং এর ভোক্তাও বেশি। সম্মিলিত স্বার্থের চিন্তা করেই অধিক মাংস উৎপাদনকারী ব্রাহমা জাতের বাণিজ্যিক উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
বিকল্প কী তবে?
দ্বিপক্ষীয় এই অবস্থানে কীভাবে সমন্বয় করে করা যায়- তা জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ও এই বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমাদের দুটোরই দরকার আছে। কোনো একটির উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে যাতে অপরটির ক্ষতি না হয় সে জন্য সমন্বিত ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা দরকার। সে ক্ষেত্রে মাংস ও দুধ উৎপাদনের পকেটগুলো অঞ্চলভেদে আলাদা আলাদা হওয়া দরকার।’
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ধরুন, ঢাকায় দুধের চাহিদা প্রচুর। দামও মেলে বেশ। ঢাকার চারপাশে দুগ্ধ খামার গড়ে ওঠাই ভালো। এখানকার খামারিরা পশু থেকে দুধ উৎপাদন কোন প্রক্রিয়ায় বাড়াবে এবং কীভাবে তার সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে সেদিকে মনোযোগী হবে।
‘আবার চরাঞ্চলে দুধ ও মাংস উভয়েরই চাহিদা কম। কিন্তু সেখানে গবাদিপশু লালন-পালন ও স্বাস্থ্যসম্মত পশুখাদ্য নিশ্চিত করার মতো অনেক উপকরণ রয়েছে। অর্থাৎ সেসব জায়গায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাংস উৎপাদনকারী খামার গড়ে তুললে খরচ হবে অল্প। মাংস পাওয়া যাবে বেশি। সরকারি ব্যবস্থানার সহায়তায় একটি সুন্দর সাপ্লাই চেইন গড়ে তুলতে পারলে চরাঞ্চলে আরও বেশি মাংস উৎপাদন খামার গড়ে উঠবে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এ বছরও দেশের বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ‘বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫’ গ্রহণ করেছে।
এ উপলক্ষ্যে সোমবার (৩০ জুন) বিমান বাহিনী সদর দফতর প্রাঙ্গনে গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে উক্ত কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’ জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানের এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এ বছরের বৃক্ষরোপণ অভিযান কর্মসূচি পালন করছে।
বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসাররা বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করে ওই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিমান সদরের পরিচালকরা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিট সমূহেও একই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় বিমান বাহিনী বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ ও ওষুধি গুনাগুন সম্পন্ন গাছের চারা রোপণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর ও আন্তরিকভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে চীন। সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চীন আশা প্রকাশ করেছে যে, তারা বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আরও বেশি আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে কাজ করবে।’
ফখরুলের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক চীন সফরের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সফর নিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি দল চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে। বলেন, ‘আমরা এই প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছি এবং তারা ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে।’
তিনি বলেন, চীনা পক্ষ এখনো তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ‘ভবিষ্যতে যদি আমাদের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাই এবং তারা(চীন) যদি এই প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়—তাহলে আমরা মনে করি আমরা এটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করব।’
ফখরুল বলেন, বিএনপি প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে চীনকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারকে রাজি করানোর জন্য তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের সফর দুই ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নত ও জোরদার করার জন্য একটি পথ খুলে দিয়েছে—ভবিষ্যতে এই বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলেও তিনি আশা করেন।
এর আগে ২২ জুন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আমন্ত্রণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিএনপির প্রতিনিধিদল পাঁচ দিনের জন্য চীন সফর করে।
বিএনপির প্রতিনিধিদলের অন্য আট সদস্য ছিলেন—বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
সফরকালে ফখরুল বলেন, বিএনপির প্রতিনিধিদল সিপিসির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় বিষয় এবং সিপিসি ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাট চাষের জন্য জমির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক শূন্য ৫ লাখ হেক্টর। এ পরিমাণ জমিতে চাষাবাদের জন্য পাট বীজ প্রয়োজন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টন।
সোমবার বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) কৃষি উইং আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে পাটের মোট উৎপাদন ১৫ লাখ মেট্রিক টন, পাটকাঠির মোট উৎপাদন ৩০ লাখ মেট্রিক টন এবং চারকোলের উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। কাঁচা পাট নিয়ে অন্যান্য দেশ কীভাবে কাজ করছে তার ওপরেও মার্কেট রিসার্চে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বদ্ধ চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানীদের বিশদভাবে কাজ করতে হবে। কারণ পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। মার্কেট এবং বাস্তবতার নিরিখে গবেষণা করতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধ জমিতে কীভাবে পাটের উৎপাদনকে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, ‘পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চাষিরা কৃষিঋণের মতো পাটঋণ এবং পণ্য রপ্তানিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকার থেকে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পায় চারকোল রপ্তানিকারকরা। দেশে প্রায় ৫০টি চারকোলের কারখানা রয়েছে। বর্তমানে কিছু কারখানা বন্ধ আছে।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজেআরআইয়ের প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম মোস্তফা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেআরআইয়ের জেনোম গবেষণা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম মাহবুব আলী।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক মো. সাইফুল আজম খান, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনা কমিটির ৭ম (সপ্তম) কর্পোরেশন সভা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা কমিটির ২৫ (পঁচিশ) জন সদস্য আজ সোমবার নগর ভবনে উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভার শুরুতে ০৫ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কর্পোরেশনের সভার কার্য বিবরণী দৃঢ়ীকরণ এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। পরবর্তীতে সভার আলোচ্য সূচি অনুযায়ী আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (অতি. দা.) জনাব আলী মনসুর। পরবর্তীতে, পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৩৮৪১.৩৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন প্রদান করেন।
বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ ও অনুমোদন প্রদান করায় পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এর প্রশাসক বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট কেবল গাণিতিক সংখ্যা নয়। এই বাজেট আমাদের কাছে সম্মানীত করদাতাদের আমানত। এই বাজেট সফলভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করছে আমাদের সবার প্রিয় এই নগরীর ব্যবস্থাপনা এবং আমাদের দৈনন্দিন নাগরিক সমস্যার সমাধান।”
সভায় ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ‘আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প-২ পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানকারী এনজিওসমূহের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পরবর্তীতে, অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৬০০/- (ছয় শত) টাকা হতে ৮০০/- (আট শত) টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীপাড়ায় অবস্থিত অস্থায়ী মসজিদটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি তিনতলাবিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদে রূপান্তরের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ সকল বিভাগীয়গণ উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে শেরপুর জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলার ইউএনও জনাব মো. আশরাফুল আলম রাসেল।
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নির্ভুলতা, সময়ানুবর্তিতা ও সার্বিক দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনায় অনন্য ভূমিকা রাখায় তাঁকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন শেরপুর এর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ মাজিস্ট্রেট তরফদার মাহমুদুর রহমান।
পুরস্কার গ্রহণের পর অনুভূতি প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন,"এই স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়, এটি ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্মী, গ্রাম পুলিশ এবং সহযোগী সব পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টার ফল। আমরা চেষ্টা করেছি নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ রাখা, জনসচেতনতা তৈরি ও নিবন্ধন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে। এই সম্মাননা আমাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে জনসেবায় নতুন উদ্যমে কাজ করতে। আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “জন্ম ও মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক তথ্যের সঠিক নিবন্ধন ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অন্যতম ভিত্তি। তাই এই কাজকে আমি শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, নাগরিক অধিকারের অংশ হিসেবেও দেখি।”
এছাড়াও একই কার্যক্রমে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও একজন শ্রেষ্ঠ গ্রাম পুলিশকেও পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাদের নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও নিবন্ধন কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) ও গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বায়ুদূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে চীনের একদল বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা জানান, শীত আসার আগেই রাজধানীর সব কাঁচা ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ধুলা দূষণ কমাতে রাস্তায় মাটি ঢেকে দেওয়া ও পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ‘জিরো সয়েল’ নীতি কার্যকর, মাটি শক্তকরণ ও পানি ছিটানোর গাড়ি ব্যবহারের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শহুরে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ পুরনো ও উচ্চমাত্রার ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পুরনো যানবাহন অপসারণ ও নতুন ২৫০টি পরিবেশবান্ধব যানবাহন যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া, নির্গমন মান বজায় রাখতে ১০টি স্বয়ংক্রিয় যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র স্থাপন করবে বিআরটিএ।’
দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে চীনা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘সঠিক তথ্য ও বিশ্লেষণ ছাড়া কার্যকর নীতিমালা তৈরি সম্ভব নয়। এজন্য একটি উন্নত বায়ু নির্গমন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন, বৈশ্বিক মান অনুসারে নির্গমন মান উন্নয়ন, স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও বর্জ্য ইনসিনারেশন প্ল্যান্ট চালু ও রান্নার জন্য এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণে কর প্রণোদনাও বিবেচনায় রয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্পের আওতায় উচ্চ দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত নির্গমন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করবে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং দেশজুড়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এদিকে, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) শহরে সড়কে বেড়া বসানো ও ৫০টি বৈদ্যুতিক যানবাহন চালুর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।
জাইকা সহায়তাপ্রাপ্ত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটটি বাস্তবভিত্তিক বায়ু গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বিইএসটি প্রকল্পও বাস্তবায়িত হবে।
এ সময় চীনা বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা বাংলাদেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট—পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব মো: খায়রুল ইসলাম, নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অনুষদের নির্বাহী ডিন অধ্যাপক ইউ ঝাও, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানজিং-হেলসিঙ্কি ইনস্টিটিউটের উপ-ডিন অধ্যাপক হাইকুন ওয়াং এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক টেংইউ লিউ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুদূষণ) মো. জিয়াউল হক প্রমুখ।
বৈঠকে জাতীয় নির্গমন ইনভেন্টরি ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়, যা দেশের বায়ুদূষণের উৎস চিহ্নিত করে বিজ্ঞানভিত্তিক টার্গেটেড হস্তক্ষেপের ভিত্তি তৈরি করবে।
মন্তব্য