কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একসঙ্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যক্তিগত ফোনে এমন নজরদারি করছে, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য অয়্যার এ নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
একটি ইসরায়েলি নজরদারি প্রযুক্তি সংস্থার ফাঁস হওয়া ডেটাবেসে বিভিন্ন দেশের সরকারি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে হাজারো টেলিফোন নম্বরের তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিন শরও বেশি ভারতীয় টেলিফোন নম্বর রয়েছে বলে উঠে এসেছে দ্য অয়্যার ও এর ১৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তদন্তে। এই নম্বরগুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে আছেন মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও অধিকার কর্মী।
এসব নম্বর ব্যবহারকারীদের ফোনের একটা ছোট অংশের ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এর মধ্যে ৩৭টিতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার টার্গেট করেছে। ওই ৩৭টির মধ্যে ১০টি ফোন ভারতীদের। এই ফোনগুলোর বিশদ প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ না করে এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে, এতে সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছে কি না বা এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে কি না।
বিশ্বজুড়ে পেগাসাসের (ফোন হ্যাকিং সফটওয়্যার) বিক্রেতা ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও জানিয়েছে, তাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে ‘পরীক্ষিত সরকার’ রয়েছে, যার সংখ্যা সম্ভবত ৩৬। যদিও কোম্পানিটি ক্লায়েন্টদের নাম জানাতে চায়নি। তবে তাদের এই দাবি থেকে বোঝা যায় দ্য অয়্যার ও এর সহযোগীরা যে আক্রমণের কথা প্রকাশ করেছে সেটি কোনো ভারতীয় বা বৈশ্বিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঘটেনি।
ফাঁস হওয়া ডেটাবেসটি প্রথমে হাতে পায় প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল। যেটি তারা ‘দ্য পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামের একটি সহযোগিতামূলক তদন্তের অংশ হিসেবে দ্য অয়্যার, ল্য মঁদ, দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট ও আরও ১৩টি মেক্সিকান, আরব ও ইউরোপীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করেছে।
ডেটাবেস হাতে পেয়ে ফরবিডেন স্টোরিজ জানায়, এতে এনএসও ক্লায়েন্টদের টার্গেট করা কিছু নির্বাচিত ফোন নম্বরের রেকর্ড আছে। তবে এনএসও আনুষ্ঠানিকভাবে এর সত্যতা অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, এনএসও গ্রাহকরা হয়তো ওই নম্বরগুলো ‘অন্য কোনো উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করেছে।
তালিকার যে নম্বরগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ ভৌগলিক ভাবে ১০টি দেশের: ভারত, আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
২০১৯ সালে এনএসও কোম্পানির বিরুদ্ধে হোয়্যাটসঅ্যাপে আক্রমণের বিষয়টি উদঘাটন করে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল নজরদারি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ‘সিটিজেন ল্যাব’। সে সময় এই ১০টি দেশের প্রতিটিকেই পেগাসাস ক্লায়েন্টদের নিশানার অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি ল্যাবটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা ফর্বিডেন স্টোরিজের সমন্বয়ে গঠিত ৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের একটি দল আক্রান্ত ফোন নম্বরগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে।
এরপর ওই ডেটাবেসে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবহৃত ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করার চেষ্টা চালানো হয়। ভারতীয় নম্বরগুলোর ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
আইনিভাবে আড়িপাতার জন্য দ্য ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট ও ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের অনুমোদিত উপায় অবলম্বন করা বাধ্যতামূলক। দেশ ভেদে আইন ভিন্ন, কিন্তু কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তির ফোন হ্যাক করে নজরদারির স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়া ভারতের আইটি অ্যাক্টের অধীনে পুরোপুরি অপরাধ।
দ্য অয়্যার ধাপে ধাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাচাই করা নামগুলো আগামী কয়েকদিন তার অংশীদারদের সঙ্গে প্রকাশ করবে।
ডেটাবেসে যাদের নম্বর রয়েছে তাদের মধ্যে ৪০ জন সাংবাদিক, বিরোধী দলের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, একজন সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ, নরেন্দ্র মোদি সরকারের দুই মন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থার বর্তমান ও সাবেক প্রধান ও কর্মকর্তা ও অসংখ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন।
ডেটাবেসে নম্বরের উপস্থিতিতে এটা নিশ্চিত যে, তাদেরকে নজরদারিতে রাখার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। তবে আসলেই ওই ফোনগুলো হ্যাক হয়েছে কি না বা আক্রান্ত হয়েছে কি না সেটা যাচাই করতে হলে ডিভাইসটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আইফোন হলে এটি সহজে করা সম্ভব।
পেগাসাস প্রজেক্টের ডেটাবেসের নম্বরগুলোর একটি বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের নামে নিবন্ধিত ছিল। ওই নম্বরটি তিনি তালিকায় যোগ হওয়ার আগেই ব্যবহার বন্ধ করেছিলেন। তবে নম্বরটি নির্বাচন করার সময় তিনি হোয়্যাটসঅ্যপ বা অন্য এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতেন কি না সে বিষয়ে অবশ্য দ্য অয়্যার নিশ্চিত হতে পারেনি। ওই সময়সীমার মধ্যে নম্বরটির প্রকৃত ব্যবহারকারীকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত দ্য অয়্যার ওই বিচারকের নাম প্রকাশ করবে না।
দ্য অয়্যার ও তার অংশীদাররা বিশ্বব্যাপী ১৩ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের নাম ছাড়া, যে নামগুলো সন্ত্রাসবাদবিরোধী বা রাষ্ট্রীয় গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত তাদের পরিচয় প্রকাশ করবে না।
গোপনীয়তার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতির কথা বলছে ভারত
সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেগাসাস প্রজেক্টের পার্টনারদের পাঠানো বিশদ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মিনিস্ট্রি অফ ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (এমইআইটিওয়াই) জানায়, ‘ভারত একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ, যা তার সমস্ত নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তারা এও জানায়, ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর সরকারি নজরদারি সম্পর্কিত অভিযোগগুলির কোনো দৃঢ় ভিত্তি একেবারেই নেই।’
সরকার পেগাসাস ব্যবহার করছে, এমনটা নির্দিষ্টভাবে অস্বীকার না করে এমইআইটিওয়াই তাদের উত্তরে জানায়, ‘বাধা, পর্যবেক্ষণ ও ডিক্রিপশনের প্রতিটি কেস উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে করা হয়… এই পদ্ধতি তাই নিশ্চিত করে যে, কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোনো তথ্যে বাধা, পর্যবেক্ষণ বা ডিক্রিপশন আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারেই সম্পন্ন করা হয়েছে।’
প্রকৃতপক্ষে, আইনি হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়াটির প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু লিখিত ও সময়সীমাবদ্ধ অনুমোদনই অন্তর্ভুক্ত নয়, একই সঙ্গে যিনি হস্তক্ষেপের কাজটি করছেন সেই টেলিকম বা কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহারকারীও আছেন। সাধারণত যিনি এই কাজটি করেন তিনি আইটি আইনের ৪৩ ধারায় বর্ণিত ‘হ্যাকিং’ এর কার্যক্রমের আওয়ায় পড়েন না।
পেগাসাসের মতো স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে কারও ওপর নজরদারি করার জন্য ব্যক্তিগত স্মার্টফোনে হ্যাক করাটা জরুরি।
এনএসও বলছে, ডেটা ‘হয়ত’ তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কিত
এনএসও কোম্পানি বারবার বলে আসছে, ফাঁস হওয়া ডেটাবেসে ‘পেগাসাস ব্যবহার করে সরকারি নিশানায় থাকা নম্বরের তালিকা নেই।’ তবে তারা দ্য অয়্যার ও এর পার্টনারদের আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, তাদের ‘বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণ’ আছে যে, ফাঁস করা তথ্য ‘বড় একটা তালিকার একটা অংশ, যেটা এনএসও গ্রুপের গ্রাহকেরা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন।’
এই ‘অন্য উদ্দেশ্য’ কী হতে পারে সেটি জিজ্ঞেস করায় অবস্থান পরিবর্তন করে এনএসও দাবি করে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডগুলো মূলত ‘সবার জন্যে সুলভ ও প্রকাশ্যে থাকা এইচএলআর লুকআপ সার্ভিসের মতো’ এবং এর সঙ্গে ‘পেগাসাসের গ্রাহকদের নিশানায় থাকা তালিকা কিংবা অন্য কোনো এনএসও প্রোডাক্টের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এইচএল আর লুক আপ সার্ভিস হচ্ছে, কোনো ফোন নম্বর কোনো নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করার একটি ব্যবস্থা।
এনএসও যেমনটা বলছে, ফাঁস করা নম্বরগুলো আসলেই যদি এইচএলআর লুকআপ সার্ভিসের ফল হয়, তারপরও পেগাসাস গ্রাহকদের নজরে থাকা এলাকার দেশগুলোর থেকে পাওয়া ডেটা দুটো প্রশ্নের জন্ম দেয়: এগুলো কি সবই এক সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে পাওয়া গেছে? আর এগুলোকে কি একত্র করে একই জায়গায় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে?
টেলিমার্কেটারদের জন্য এইচএলআর লুকআঅ্যাপের বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা আছে। তারপরেও টেলেকম নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো আসলে স্পাইওয়্যার নির্ভর নজরদারি ব্যবস্থার অংশ হতে পারে।
বার্লিনের সিকিউরিটি রিসার্চ ল্যাবসের প্রধান বিজ্ঞানী কার্স্টেন নোল পেগাসাস প্রজেক্টকে বলেন, ‘এইচএলআর লুকআপ ব্যবহার করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ফোনটা অন করা আছে।’ এর অর্থ হলো, হ্যাকিং করা সম্ভব।
৫০ হাজার ব্যক্তিকে পেগাসাস ব্যবহার করে নিশানায় রাখা হচ্ছে এমনটা অস্বীকার করে এনএসও বোঝাতে চেয়েছে, এর গ্রাহক সরকারগুলো সবমিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি নিশানার ওপর এটি ব্যবহার করে না।
যেসব সরকার সম্ভাব্য হ্যাকিং ও নজরদারি করার জন্য হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের নির্বাচন করে, তারা চাইবে না যে, তাদের নজরদারির বিস্তারিত তথ্য বা মেটাডাটা বিদেশি কেউ বা বেসরকারি কেউ জেনে যাক।
যে সরকারগুলোর নাম এসেছে তাদের এই ইস্যুতে পরিষ্কার কথা বলার কোনো উদ্যোগ নেই। যে দেশগুলোতে আইনের শাসন আছে, সেখানে রাজনীতিক ও সাংবাদিকসহ সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্টজনের ওপর এমন বিশদ ও বেআইনি নজরদারি প্রোগ্রামের সম্ভাব্য ব্যবহার- নিশ্চিত ভাবেই গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি। যেটি একটি স্বাধীন তদন্ত দাবি করে।
আরও পড়ুন:আজ বৃহস্পতিবার জিলহজ মাসের ৮ তারিখ পবিত্র হজের দিন। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক’... মধুধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফার পাহাড় ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত এখন। সু-উচ্চকণ্ঠ নিনাদের তালবিয়ায় মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ব ও মহত্ত্বের কথা বিঘোষিত হচ্ছে প্রতি অনুক্ষণ। ‘আমি হাজির। হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধুই তোমার। সাম্রাজ্য তোমারই। তোমার কোনো শরিক নেই।’ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা প্রান্তর।
বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন পবিত্র হজ। আজ ভোর থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীর আরাফার আদিগন্ত মরু প্রান্তর এক অলৌকিক পুণ্যময় শুভ্রতায় ভরে উঠেছে। সফেদ-শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়ের এহরাম পরিহিত হাজিদের অবস্থানের কারণে সাদা আর সাদায় একাকার। পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করেছেন।
আজ ফজরের পর গোটা দুনিয়া থেকে আগত ২৫ লক্ষাধিক মুসলমান ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে উপস্থিত হচ্ছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ৮৭ হাজারের বেশি। আজ ৮ জিলহজ মূল হজের দিন তারা এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। আরাফার ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে এ বছর পবিত্র হজের খুতবা দেবেন মসজিদুল হারামের প্রখ্যাত খতিব ও সৌদি সিনিয়র ওলামা পরিষদের সদস্য ড. শায়খ সালেহ বিন হুমায়েদ।
সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফার ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তা’আলার জিকির আসকার ইবাদতে মশগুল থাকবেন। অতঃপর মাগরিবের নামাজের আযানের পর মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন হাজিরা। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারা রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে পুনরায় মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। জিলহজের ১১ তারিখ মিনায় রাত যাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন।
১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন। মক্কায় পৌঁছার পর হাজিদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ি তাওয়াফ। স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ি তাওয়াফ অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাত বার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজব্রত পালন।
সৌদিতে গতকাল গড় তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রখর রোদ আর প্রচণ্ড গরম। সৌদি বার্তা সংস্থা ‘এসপিএ’ জানায়, প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজিরা।
প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র না থাকায় ২ লাখ ৬৯ হাজার মুসল্লিকে পবিত্র মক্কা নগরে প্রবেশ করতে দেয়নি সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। এসব মুসল্লি পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।
হজের খুতবা বাংলায় অনুবাদ করবেন চার বাংলাদেশি:
প্রতি বছরের মতো পবিত্র হজের খুতবা এবারও বাংলাসহ বহু ভাষায় অনুবাদ করা হবে। বাংলায় অনুবাদ করবেন চার জন বাংলাদেশি। তারা হলেন ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান, মুবিনুর রহমান ও নাজমুস সাকিব। তারা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন।
হজের খতিবের সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ:
বাংলাদেশি হজযাত্রীদের হজ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং দলের দলনেতা ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এবং ধর্মসচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিকও এখন মিনায় অবস্থান করছেন। পবিত্র আরাফার ময়দানে খুতবা প্রদান করবেন মসজিদলু হারামের প্রখ্যাত খতিব ও সৌদি সিনিয়র ওলামা পরিষদের সদস্য ড. শায়খ সালেহ বিন হুমায়েদ। তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীতে পানির স্তর বাড়তে থাকায় গতকাল শনিবার রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি)। ইতোমধ্যে সিকিমের মাঙ্গান, গিয়ালশিং ও সোরেং জেলাগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসের শঙ্কায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিপ্তর (আইএমডি)। এদিকে বাংলাদেশেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গ্যাংটক জেলার ম্যাজিস্ট্রেট এক জরুরি গণবিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, তবে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাঙ্গান জেলার তিস্তা নদীর অববাহিকা, বিশেষ করে ডিকচু থেকে সিংতাম পর্যন্ত অঞ্চলটি বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিমগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ভারতের উজানে পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে বাংলাদেশ অংশেও বাড়ছে তিস্তার পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী তিন দিন পানির স্তর আরও বাড়তে পারে। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুর জেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে নতুন করে বন্যার শঙ্কা।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও যেকোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে শুক্রবার দুপুর ১২টায় পানি রেকর্ড হয়েছে ৫১.১৫ মিটার, যা বিপদসীমার মাত্র এক মিটার নিচে। রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টেও পানি দ্রুত বাড়ছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতির কারণে ১ জুন পর্যন্ত এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। গেলো ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গড়ে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার কিছু এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা এবং ভাঙনের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিস্তাপাড়ের প্রায় ৯৫টি চর এলাকা পানিতে প্লাবিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব নিচু চরজমিতে বসবাসকারী মানুষজন এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আদিতমারী উপজেলার চর গোবর্ধন এলাকার বাসিন্দা ফজলার রহমান বলেন, ‘বন্যা এলে আমাদের কিছুই থাকে না। মাঠের ফসল, গবাদি পশু সবই ভেসে যায়। এবারও সবাই ঘরবাড়ি তুলে নিচ্ছে, উঠোনে পলিথিন দিয়ে জিনিসপত্র বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।’
ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর গত ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও দুই দেশের মধ্যে বাকযুদ্ধ এখনো চলছে। দুই প্রতিবেশী দেশই প্রতিপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের দেশের অবস্থানের কথা তুলে ধরার চেষ্টাও জারি আছে।
ইরান সফরে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান শান্তির বিষয়ে কথা বলতে প্রস্তুত এবং তারা পানি, বাণিজ্য ও সন্ত্রাসের মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনায় বসতে পারে যদি ভারত গুরুত্ব দেয়। এরই মধ্যে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আবার পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে জড়িয়েছে দুই দেশ।
ভারত আরও একবার নিজেদের পক্ষে স্পষ্ট করে গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হলে তা সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েই হবে। অন্যদিকে ইসলামাবাদের বক্তব্য পাকিস্তান কখনোই কাশ্মীর ছেড়ে যাবে না।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের তিনি পরিবারের অংশ বলেই মনে করেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দারা একসময় নিজের ইচ্ছায় ফিরে (ভারতে) আসবেন। পরে সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংএ কাশ্মীর ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে বলতে শোনা যায়, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হলে তা দ্বিপাক্ষীকভাবেই হবে এবং এই বিষয়ের ওপর হবে যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর তারা (পাকিস্তান) কবে খালি করবে।
এরপর ইসলামাবাদও পাল্টা জবাব দেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির জানিয়ে দেন, কাশ্মীর নিয়ে কোনো সমঝোতা সম্ভব না। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি বার্ষিক বিজনেস সামিট ২০২৫ উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। মঞ্চে ভাষণের সময় ওঠে আসে পাকিস্তানের প্রসঙ্গ।
এ সময় রাজনাথ সিং বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ এবং আলোচনার বিষয়টি নিয়ে আমরা পুনর্মূল্যায়ন করেছি। যখনই আলোচনা হোক, তা হবে শুধু সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে। পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের বিষয়েও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জনগণ আমাদের নিজেদের। তারা আমাদের পরিবারেরই অংশ। আমরা এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের সংকল্পের প্রতি দায়বদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস যে আমাদের ভাইয়েরা যারা ভৌগোলিক ও রাজনৈতিকভাবে আজ আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন, তারা একদিন অবশ্যই আত্মসম্মান নিয়ে, স্বাধীন ইচ্ছায় ভারতের মূলধারায় ফিরে আসবেন। রাজনাথ বলেছেন, আমি জানি, সেখানকার বেশির ভাগ মানুষই ভারতের সঙ্গে এক ধরনের সংযোগ অনুভব করেন। কিছু মুষ্টিমেয় মানুষ রয়েছে, যাদের ভুল বোঝানো হয়েছে। ভারত সব সময় হৃদয়ের সংযোগে বিশ্বাস করে।
পেহেলগ্রাম হামলার কদিন আগে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের আসিম মুনিরকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে বিশ্বের কোনো শক্তি কাশ্মীরকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে পারবে না। কাশ্মীরকে পাকিস্তানের জাগুলার ভেইন (যা মস্তিষ্ক, ঘাড়, মুখের একাংশ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে দেয়) বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি। পেহেলগ্রাম হামলার পর, তার সেই মন্তব্যকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়।
তিনি বলেছিলেন, কাশ্মীরের বিষয়ে আমাদের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট, এটি আমাদের জাগুলার ভেইন ছিল এবং থাকবে। আমরা একে ভুলব না। আমরা আমাদের কাশ্মিরী ভাইদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামকে ত্যাগ করব না। পাশাপাশি উপস্থিত ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়ে অবগত করতে হবে।
তিনি বলেছিলেন, আপনাদের সন্তানদের পাকিস্তানের কথা বলতে হবে যাতে তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের চিন্তা-ভাবনাকে ভুলে না যায়, ভুলে না যায় যে আমরা হিন্দুদের থেকে আলাদা। আমাদের ধর্ম, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, চিন্তা-ভাবনা, উদ্দেশ্য সবই আলাদা। তার বক্তব্যে বিভাজনমূলক বিষয় রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছিল এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগ আরও একবার তুলেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসের ব্যবসা চালানোটা ব্যয়সাশ্রয়ী বিষয় নয়। পাকিস্তান আজ বুঝতে পেরেছে যে এর জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কৌশল এবং প্রতিক্রিয়া উভয়কেই নতুন করে ডিজাইন ও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছি। পরে সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংএ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে পাকিস্তানের বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট ও ধারাবাহিক। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো আলোচনা শুধু দুই দেশের মধ্যে, অর্থাৎ দ্বিপাক্ষীকই হতে হবে।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার আবহে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল। সেই চুক্তি এখনো স্থগিত রয়েছে।
জয়সওয়ালকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে বলব, যতক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যভাবে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা বন্ধ করছে, ততদিন এই নিয়ে কোনো কথা হবে না। যেমনটি প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছেন।
গাজার দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংস্থার পরিচালিত নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে মঙ্গলবার হাজারো ফিলিস্তিনি ভিড় করেন। এ সময় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইসরাইল এদিন গাজায় নতুন ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি কার্যকর করে।
ফিলিস্তিনের রাফা থেকে এএফপি জানায়, মাত্র কয়েকদিন আগে ইসরাইল কর্তৃক আরোপিত পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করার পর রাফায় এ ঘটনা ঘটেছে। ২ মার্চ থেকে আরোপিত সেই অবরোধ খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট তৈরি করে।
পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করেন যে ‘ত্রাণকেন্দ্রে এক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম’। তবে এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা এই বিতরণকে ‘সফলতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানায়, বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী আয়মান আবু যায়েদ এএফপিকে বলেন, তিনি কেন্দ্রে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ‘হঠাৎ করেই অনেক মানুষ ধাক্কা দিয়ে এলোমেলোভাবে ঢুকে পড়তে থাকে’।
তিনি বলেন, ‘এটা হয়েছে ত্রাণের অভাব এবং বিলম্বের কারণে। মানুষ ভেতরে ঢুকে যতটুকু পারা যায় সংগ্রহের চেষ্টা করেছে।’
একপর্যায়ে ‘ইসরাইলি বাহিনী গুলি ছোড়া শুরু করে, শব্দটা খুব ভয়ের ছিল। মানুষ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তারপরও অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়।’
পরবর্তীতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ‘কেন্দ্রের বাইরের এলাকায় সতর্কতামূলক গুলি’ ছুঁড়েছে।
তারা আরও জানায়, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিকল্পনামাফিক চলবে, এবং আইডিএফ (ইসরাইলি বাহিনী)-এর সদস্যদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি।’
জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এসডিএস (ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র)-এ একসময় এত বেশি ভিড় হয় যে আমাদের দল পেছনে সরে গিয়ে কিছু সংখ্যক গাজাবাসীকে নিরাপদে ত্রাণ নিতে দেয় এবং ছত্রভঙ্গ হতে দেয়।’
‘স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে’, যোগ করে সংস্থাটি।
এএফপির ফুটেজে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বিপুল সংখ্যক মানুষ ত্রাণের বাক্স, যার গায়ে ‘জিএইচএফ’ চিহ্ন ছিল, বহন করে এলাকা ত্যাগ করছে।
-‘৪,৬২,০০০ খাবারের ব্যবস্থা’-
জিএইচএফ আরও জানিয়েছে, ‘হামাসের আরোপিত অবরোধ’ তাদের একটি কেন্দ্রে কয়েক ঘণ্টার বিলম্ব সৃষ্টি করেছে।
এদিকে হামাসের সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ইসরাইলের নতুন উদ্যোগ ‘চরমভাবে ব্যর্থ’ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যর্থতা দেখা দেয় তখন, যখন হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ, যারা প্রায় ৯০ দিন ধরে দখলদার বাহিনীর অবরোধে খাদ্য ও ওষুধবিহীন অবস্থায় রয়েছে, দুঃখজনক ও মর্মন্তুদ দৃশ্যের মধ্যে ওইসব এলাকায় ছুটে যায়।’
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে জিএইচএফ জানায়, এখন পর্যন্ত ‘প্রায় ৮,০০০ খাবারের বাক্স বিতরণ করা হয়েছে... যা ৪,৬২,০০০ খাবার হিসেবে গণ্য’। তারা জানায়, এর আগের দিন থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আজকের দিনটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের জন্য সফল ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামাস চেষ্টা করেছিল যেন সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে এগিয়ে না আসে। কিন্তু গাজাবাসীরা হাজার হাজার প্যাকেজ নিতে এসেছিল।’
ইসরাইল জিএইচএফ-এর ত্রাণ বিতরণ প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করছে, এবং বলছে যে তারা ত্রাণকে হামাসের হাত থেকে দূরে রাখতে চায়।
মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আমাদের মার্কিন বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেছি, যাতে ত্রাণ বিতরণ সাইটগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এবং একটি মার্কিন কোম্পানি ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর মধ্যে খাবার বিতরণ করে।’
‘এক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণ হারানো গিয়েছিল, তবে পরে তা পুনরুদ্ধার করা গেছে।’
-‘হৃদয়বিদারক দৃশ্য’-
জিএইচএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা ইসরাইলের সামরিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করছে, ফিলিস্তিনিদের উপেক্ষা করছে, জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়েছে এবং মানবিক নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্য আচরণ করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র মঙ্গলবারের দৃশ্যকে ‘নেহায়েত হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করেন।
স্টেফান দুজারিক বলেন, ‘গত সপ্তাহে মহাসচিব যা বলেছেন, আমরা ও আমাদের অংশীদাররা একটি সুসংহত, নীতিনির্ভর, পরিচালনাযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন নিয়ে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
জেনেভায় গত ফেব্রুয়ারিতে নিবন্ধিত হলেও, জিএইচএফ-এর কোনো অফিস বা প্রতিনিধি নেই মানবিক বিশ্বের অঘোষিত রাজধানীতে।
সংস্থাটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক জেক উড রোববার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মানবিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা সম্ভব নয়।
কিছু মানবিক কর্মী যুক্তি দিয়েছেন যে, নিরাপদ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র নির্ধারণের মাধ্যমে মানুষকে পুনরায় স্থানচ্যুত হতে বাধ্য করা মানবিক নীতির লঙ্ঘন।
সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, এসব বিতরণ কেন্দ্র কোথায় হবে তা কে নির্ধারণ করেছে ু বিশেষ করে যখন ইসরাইল ‘গাজা বিজয়ের’ পরিকল্পনা করছে বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
জাতিসংঘ জিএইচএফ-এর পরিকল্পনায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটি আমাদের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় নিরপেক্ষতা, স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার মতো নীতিগুলোর সঙ্গেও না।’
২৪ মে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, গাজার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন ত্রাণ পরিকল্পনাটি ‘মূলত ইসরাইলিদের দ্বারা তৈরি ও পরিকল্পিত, এর লক্ষ্য হামাসকে দুর্বল করা।’
ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিইএ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের শেয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় এপ্রিল মাসে ইলন মাস্কের টেসলার তৈরি গাড়ির বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশে সামগ্রিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি পেলেও, ইলন মাস্কের টেসলার শেয়ার নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
ইউরোপীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিইএ) জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে টেসলার বিক্রি কমে ৫ হাজার ৪৭৫টি গাড়িতে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৫২.৬ শতাংশ কম।
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে, টেসলার বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬.১ শতাংশ কমে ৪১ হাজার ৬৭৭টি গাড়িতে দাঁড়িয়েছে।
জেটো ডায়নামিক্সের পরামর্শদাতাদের মতে, একসময় বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টেসলাকে এপ্রিল মাসে ভক্সওয়াগন, বিএমডব্লিউ, রেনল্ট এবং চীনা নির্মাতা বিওয়াইডিসহ ১০টি প্রতিদ্বন্দ্বী টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে।
টেসলা এপ্রিল মাসে ঘোষণা করেছিল, প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী তাদের বিক্রয় ১৩ শতাংশ কমেছে, যা মাস্কের ওপর চাপ বাড়িয়েছে, যদিও কোম্পানিটি আংশিকভাবে মডেল ওয়াই স্ট্যান্ডার্ড-বেয়ারার আপগ্রেডের কারণে উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী করেছে।
মাস্ক তখন থেকেই ঘোষণা করেছেন, তিনি ট্রাম্পকে মার্কিন সরকারের ব্যয় কমাতে সাহায্য করার জন্য তার কাজ কমিয়ে দেবেন এবং গত সপ্তাহে বলেছিলেন টেসলার বিক্রয় ‘ভালো’ হচ্ছে।
এসিইএ তথ্য অনুসারে, এপ্রিল মাসে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি গত বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ২৬.৪ শতাংশ বেড়ে বাজারের ১৫.৩ শতাংশ অংশ দখল করেছে।
ইউরোপ জুড়ে এই বৃদ্ধি অসম কারণ বিভিন্ন সরকার এবং নির্মাতারা বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়। জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি এবং স্পেনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে ফ্রান্সে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে।
এসিইএ-এর মহাপরিচালক সিগ্রিড ডি ভ্রিস বলেন, ব্যাটারি-বৈদ্যুতিক যানবাহনের চাহিদা ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে, কিন্তু ইইউ দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান এবং অসম রয়ে গেছে’।
তিনি বলেন, ‘ব্যাটারি-ইলেকট্রিক যানবাহনকে মূলধারার পছন্দে পরিণত করার জন্য, সরকারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির শর্তাবলী, যেমন ক্রয় এবং আর্থিক প্রণোদনা, রিচার্জিং অবকাঠামো এবং বিদ্যুতের দাম বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।’
ইউরোপীয় বাজারে এখনও ছোট বৈদ্যুতিক ব্যাটারি সহ হাইব্রিড গাড়ির বিক্রি প্রাধান্য পেয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ২০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে একই সময়ে কেবল পেট্রোল-চালিত গাড়ি ২০.৬ শতাংশ কমেছে।
বিওয়াইডি, এমজি, এক্সপেং এবং লিপমোটর ব্র্যান্ডগুলোর বৈদ্যুতিক এবং হাইব্রিড বিক্রয় বছরে ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসিইএ বিশেষজ্ঞ ফেলিপ মুনোজ বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো চীনা হাইব্রিড গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করে কিনা তা এখনও দেখার বিষয়।
২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০৩০ সালের এক্সপোসহ বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতির আগে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে চায় সৌদি আরব। এ লক্ষ্যে ২০২৬ সালের মধ্যে ৬০০টি পর্যটন স্থানে দীর্ঘদিনের জন্য মদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ধাক্কায় ‘অতি-রক্ষণশীল’ দেশটি পাঁচ তারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং প্রবাসী-বান্ধব কম্পাউন্ডসহ লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানে ওয়াইন, বিয়ার এবং সাইডার বিক্রির অনুমতি দেবে। তবে জনসাধারণ, বাড়ি, দোকান এবং ফ্যান জোনে মদ্যপান নিষিদ্ধ থাকবে।
দ্য সানের প্রতিবেদন বলছে, এই নাটকীয় নীতিগত পরিবর্তন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ। এর লক্ষ্য আন্তর্জাতিক পর্যটন বৃদ্ধি করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং এর ‘টিটোটাল ভাবমূর্তি’ ঝেড়ে ফেলা।
কর্মকর্তারা আশা করছেন, নিওম, সিন্দালাহ দ্বীপ এবং লোহিত সাগর প্রকল্পের মতো জমকালো এলাকায় নিয়ন্ত্রিত অ্যালকোহল বিক্রি দেশটিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুবিধা দেবে-যেখানে পর্যটন অঞ্চলে মদ্যপান ইতোমধ্যেই বৈধ। দ্য সানের প্রতিবেদন অনুসারে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানগুলো কঠোরভাবে ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার’ অধীনে পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী এবং অপব্যবহার রোধ ও দেশের ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য কঠোর নিয়ম থাকবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লক্ষ্য হলো-সাংস্কৃতিক পরিচয় না হারিয়ে বিশ্বকে স্বাগত জানানো। বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে সৌদি আরবকে একটি প্রগতিশীল, অথচ সম্মানজনক খেলোয়াড় হিসেবে স্থান দেওয়া। প্রতিবেদন অনুসারে, এই পরিকল্পনাটি ২০২৬ সালে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে - বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আট বছর আগে। দেশের ভাবমূর্তি আধুনিকীকরণের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
দ্য সানের প্রতিবেদন আরও বলছে, চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেছিলেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে মদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। এরপর এটি ইংল্যান্ডের ফুটবল ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
সৌদির উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর আল সৌদ গত ফেব্রুয়ারিতে এলবিসি রেডিওকে বলেছিলেন, ‘এখানে কোনো অ্যালকোহল নেই, বরং আমাদের আবহাওয়ার মতো, এটি একটি শুষ্ক দেশ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতির সীমানার মধ্যে থাকা মানুষকে আপন করে নিতে পেরে খুশি, কিন্তু আমরা অন্য কারও জন্য আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চাই না। এটি কোনো সৌদি অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি ‘বিশ্ব অনুষ্ঠান’ এবং অনেকাংশে যারা আসতে চান তাদের আমরা স্বাগত জানাব।’
এরপর বিষয়টি পশ্চিমা মহলে ক্ষোভের জন্ম দেয়। দ্য সান অনুসারে, কিন্তু এখন সৌদি অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা আশা করছেন, নতুন মদ নীতি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেবে এবং দেখাবে যে, দেশটি ‘পার্টি করতে প্রস্তুত’, তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে।
সূত্র দ্য সানকে জানায়, এই মডেলটি দুবাই এবং মানামায় সফল ‘অ্যালকোহল প্রচারণা’ থেকে অনুপ্রাণিত। যেখানে কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, ফলে ঐতিহ্যকে নষ্ট না করে পর্যটন এবং ব্যবসাকে বাড়িয়ে তুলেছে। সৌদি জোর দিয়ে বলছে, কেউ আইনের অপব্যবহার করলে, ধরা পড়লে তাকে দ্রুত পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।
দ্য সান বলছে, একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিক্রয় কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হবে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত পরিষেবাকর্মী এবং স্পষ্ট পরিচালনামূলক নিয়মাবলী নিশ্চিত করার জন্য, যাতে অ্যালকোহল দায়িত্বশীলতা এবং সম্মানের সাথে পরিচালনা করা হয়।’ আরও জানানো হয়, ২০% এর বেশি ‘ABV’ স্পিরিট এবং হার্ড লিকার নিষিদ্ধ থাকবে। দোকান, টেকওয়ে বা হোম ব্রুয়িং থাকবে না।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরাকে স্থানীয় একটি চিকিৎসা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, হামলা অব্যাহত থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ছে। গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারকে লক্ষ্য করে চালানো বোমাবর্ষণে প্রায় ৫০ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মজা করে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজার পরিস্থিতি এখন এই ‘নিষ্ঠুর সংঘর্ষের সবচেয়ে নিষ্ঠুর পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিরা অভুক্ত থেকে মরছে, অথচ ইসরায়েল সাহায্য হিসেবে কেবল ‘এক চামচ ত্রাণ’ প্রবেশ করতে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত অবরুদ্ধ উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৮২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি হতে পারে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খাবারে পানি মিশিয়ে বেশি দিন চালানোর চেষ্টা
দুই বছর বয়সী মেয়ার, হাসপাতালে একটি বেডে শুয়ে আছে। তার পাঁজরের হাড় বেরিয়ে এসেছে, পেট ফোলা। মেয়ের দুর্বল হাত ধরে শার্ট পরিয়ে দিচ্ছিলেন মা আসমা আল-আর্জা। বেডে শুয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। এই প্রথম নয়, আগেও অপুষ্টির কারণে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে গাজা উপত্যকার এই নিষ্পাপ শিশুটি। তবে এবারই টানা ১৭ দিন বাচ্চাটি হাসপাতালে রয়েছে বলে জানান তার মা।
মেয়ারের সিলিয়াক ডিজিজ নামের একটি বিশেষ রোগ রয়েছে। এ কারণে গ্লুটেনজাত খাবার খেতে পারে না সে, তার জন্য বিশেষ খাবারের দরকার হয়। কিন্তু ১৯ মাসের যুদ্ধ আর ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে গাজায় এই খাবার এখন আর নেই। সাধারণ খাবারও সে হজম করতে পারে না। মেয়ারের মা বলেন, ডায়াপারের পাশাপাশি ওর সয়ামিল্ক আর বিশেষ খাবারের দরকার। কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকায় এগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও অনেক দাম, আমি কিনতে পারি না। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গাজায় নয় হাজারের বেশি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আগামী বছর এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েল যদি সামরিক অভিযান বন্ধ না করে এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর আরোপিত অবরোধ পুরোপুরি না তুলে নেয়, তাহলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে বারবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে গাজায় অনেক মানুষ খাবার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ফিলিস্তিনি অঞ্চলের প্রতিনিধি নেস্টর ওয়োমুহাঙ্গি বলেন, গাজার যেদিকে তাকাবেন, ক্ষুধার্ত মানুষ চোখে পড়বে। সবাই ইশারায় দেখান যে তারা খাবার চান। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় এখন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি চলছে।
টানা অবরোধে টান পড়েছে ত্রাণে
সবশেষ গত ২ মার্চ গাজায় সব ধরনের খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস এই অঞ্চলে। একের পর এক বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের সঙ্গে চলছে এই অবরোধ। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গাজার মানুষ বাইরের সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কারণ ইসরায়েলের হামলায় স্থানীয়ভাবে খাবার উৎপাদনের প্রায় সব ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে গেছে।
অবরোধের পর গাজার খাদ্যসংকট নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে প্রথমদিকে ইসরায়েল দাবি করেছিল, গাজায় পর্যাপ্ত খাবার আছে। তবে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর চলতি সপ্তাহে গাজায় সীমিত পরিসরে শিশুখাদ্যসহ মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেয় ইসরায়েল।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েল যেটুকু সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছে, তা একেবারেই অপ্রতুল। অবরোধের আগে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ত্রাণের ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত। বর্তমানে যা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে, তা আগের সংখ্যার ধারেকাছেও নয়।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থার সদস্য টেস ইনগ্রাম বলেন, এরই মধ্যে গাজায় শিশুরা অপুষ্টিতে মারা যেতে শুরু করেছে। যদি দ্রুত পুষ্টিকর খাবার না পৌঁছায়, তাহলে আরও অনেক শিশু প্রাণ হারাতে পারে। তাছাড়া, সামরিক নিয়মকানুন ও গাজার অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় সহায়তা ঠিকঠাক পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, মধ্য গাজায় কয়েকটি গুদামে ১২টির বেশি ট্রাক পৌঁছেছে। অবরোধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পর এটিই প্রথম সহায়তা, যা সরাসরি বিতরণের জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে।
এদিকে, হামাস সদস্যরা ত্রাণ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইসরায়েল। যদিও তারা এই বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ত্রাণ বিতরণের নতুন পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নতুন পরিকল্পনায় হামাস যোদ্ধারা যাতে খাবার না পায়, তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও নেতানিয়াহুর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য ত্রাণদাতা সংস্থা।
অনবরত হামলার কারণে এত এত আহত মানুষ নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে গাজার হাসপাতালগুলো। সেখানকার খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সবসময় রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
মন্তব্য