কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একসঙ্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যক্তিগত ফোনে এমন নজরদারি করছে, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য অয়্যার এ নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
একটি ইসরায়েলি নজরদারি প্রযুক্তি সংস্থার ফাঁস হওয়া ডেটাবেসে বিভিন্ন দেশের সরকারি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে হাজারো টেলিফোন নম্বরের তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিন শরও বেশি ভারতীয় টেলিফোন নম্বর রয়েছে বলে উঠে এসেছে দ্য অয়্যার ও এর ১৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তদন্তে। এই নম্বরগুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে আছেন মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও অধিকার কর্মী।
এসব নম্বর ব্যবহারকারীদের ফোনের একটা ছোট অংশের ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এর মধ্যে ৩৭টিতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার টার্গেট করেছে। ওই ৩৭টির মধ্যে ১০টি ফোন ভারতীদের। এই ফোনগুলোর বিশদ প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ না করে এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে, এতে সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছে কি না বা এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে কি না।
বিশ্বজুড়ে পেগাসাসের (ফোন হ্যাকিং সফটওয়্যার) বিক্রেতা ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও জানিয়েছে, তাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে ‘পরীক্ষিত সরকার’ রয়েছে, যার সংখ্যা সম্ভবত ৩৬। যদিও কোম্পানিটি ক্লায়েন্টদের নাম জানাতে চায়নি। তবে তাদের এই দাবি থেকে বোঝা যায় দ্য অয়্যার ও এর সহযোগীরা যে আক্রমণের কথা প্রকাশ করেছে সেটি কোনো ভারতীয় বা বৈশ্বিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঘটেনি।
ফাঁস হওয়া ডেটাবেসটি প্রথমে হাতে পায় প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল। যেটি তারা ‘দ্য পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামের একটি সহযোগিতামূলক তদন্তের অংশ হিসেবে দ্য অয়্যার, ল্য মঁদ, দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট ও আরও ১৩টি মেক্সিকান, আরব ও ইউরোপীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করেছে।
ডেটাবেস হাতে পেয়ে ফরবিডেন স্টোরিজ জানায়, এতে এনএসও ক্লায়েন্টদের টার্গেট করা কিছু নির্বাচিত ফোন নম্বরের রেকর্ড আছে। তবে এনএসও আনুষ্ঠানিকভাবে এর সত্যতা অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, এনএসও গ্রাহকরা হয়তো ওই নম্বরগুলো ‘অন্য কোনো উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করেছে।
তালিকার যে নম্বরগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ ভৌগলিক ভাবে ১০টি দেশের: ভারত, আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
২০১৯ সালে এনএসও কোম্পানির বিরুদ্ধে হোয়্যাটসঅ্যাপে আক্রমণের বিষয়টি উদঘাটন করে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল নজরদারি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ‘সিটিজেন ল্যাব’। সে সময় এই ১০টি দেশের প্রতিটিকেই পেগাসাস ক্লায়েন্টদের নিশানার অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি ল্যাবটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা ফর্বিডেন স্টোরিজের সমন্বয়ে গঠিত ৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের একটি দল আক্রান্ত ফোন নম্বরগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে।
এরপর ওই ডেটাবেসে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবহৃত ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করার চেষ্টা চালানো হয়। ভারতীয় নম্বরগুলোর ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
আইনিভাবে আড়িপাতার জন্য দ্য ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট ও ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের অনুমোদিত উপায় অবলম্বন করা বাধ্যতামূলক। দেশ ভেদে আইন ভিন্ন, কিন্তু কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তির ফোন হ্যাক করে নজরদারির স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়া ভারতের আইটি অ্যাক্টের অধীনে পুরোপুরি অপরাধ।
দ্য অয়্যার ধাপে ধাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাচাই করা নামগুলো আগামী কয়েকদিন তার অংশীদারদের সঙ্গে প্রকাশ করবে।
ডেটাবেসে যাদের নম্বর রয়েছে তাদের মধ্যে ৪০ জন সাংবাদিক, বিরোধী দলের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, একজন সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ, নরেন্দ্র মোদি সরকারের দুই মন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থার বর্তমান ও সাবেক প্রধান ও কর্মকর্তা ও অসংখ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন।
ডেটাবেসে নম্বরের উপস্থিতিতে এটা নিশ্চিত যে, তাদেরকে নজরদারিতে রাখার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। তবে আসলেই ওই ফোনগুলো হ্যাক হয়েছে কি না বা আক্রান্ত হয়েছে কি না সেটা যাচাই করতে হলে ডিভাইসটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আইফোন হলে এটি সহজে করা সম্ভব।
পেগাসাস প্রজেক্টের ডেটাবেসের নম্বরগুলোর একটি বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের নামে নিবন্ধিত ছিল। ওই নম্বরটি তিনি তালিকায় যোগ হওয়ার আগেই ব্যবহার বন্ধ করেছিলেন। তবে নম্বরটি নির্বাচন করার সময় তিনি হোয়্যাটসঅ্যপ বা অন্য এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতেন কি না সে বিষয়ে অবশ্য দ্য অয়্যার নিশ্চিত হতে পারেনি। ওই সময়সীমার মধ্যে নম্বরটির প্রকৃত ব্যবহারকারীকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত দ্য অয়্যার ওই বিচারকের নাম প্রকাশ করবে না।
দ্য অয়্যার ও তার অংশীদাররা বিশ্বব্যাপী ১৩ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের নাম ছাড়া, যে নামগুলো সন্ত্রাসবাদবিরোধী বা রাষ্ট্রীয় গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত তাদের পরিচয় প্রকাশ করবে না।
গোপনীয়তার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতির কথা বলছে ভারত
সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেগাসাস প্রজেক্টের পার্টনারদের পাঠানো বিশদ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মিনিস্ট্রি অফ ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (এমইআইটিওয়াই) জানায়, ‘ভারত একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ, যা তার সমস্ত নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তারা এও জানায়, ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর সরকারি নজরদারি সম্পর্কিত অভিযোগগুলির কোনো দৃঢ় ভিত্তি একেবারেই নেই।’
সরকার পেগাসাস ব্যবহার করছে, এমনটা নির্দিষ্টভাবে অস্বীকার না করে এমইআইটিওয়াই তাদের উত্তরে জানায়, ‘বাধা, পর্যবেক্ষণ ও ডিক্রিপশনের প্রতিটি কেস উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে করা হয়… এই পদ্ধতি তাই নিশ্চিত করে যে, কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোনো তথ্যে বাধা, পর্যবেক্ষণ বা ডিক্রিপশন আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারেই সম্পন্ন করা হয়েছে।’
প্রকৃতপক্ষে, আইনি হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়াটির প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু লিখিত ও সময়সীমাবদ্ধ অনুমোদনই অন্তর্ভুক্ত নয়, একই সঙ্গে যিনি হস্তক্ষেপের কাজটি করছেন সেই টেলিকম বা কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহারকারীও আছেন। সাধারণত যিনি এই কাজটি করেন তিনি আইটি আইনের ৪৩ ধারায় বর্ণিত ‘হ্যাকিং’ এর কার্যক্রমের আওয়ায় পড়েন না।
পেগাসাসের মতো স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে কারও ওপর নজরদারি করার জন্য ব্যক্তিগত স্মার্টফোনে হ্যাক করাটা জরুরি।
এনএসও বলছে, ডেটা ‘হয়ত’ তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কিত
এনএসও কোম্পানি বারবার বলে আসছে, ফাঁস হওয়া ডেটাবেসে ‘পেগাসাস ব্যবহার করে সরকারি নিশানায় থাকা নম্বরের তালিকা নেই।’ তবে তারা দ্য অয়্যার ও এর পার্টনারদের আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, তাদের ‘বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণ’ আছে যে, ফাঁস করা তথ্য ‘বড় একটা তালিকার একটা অংশ, যেটা এনএসও গ্রুপের গ্রাহকেরা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন।’
এই ‘অন্য উদ্দেশ্য’ কী হতে পারে সেটি জিজ্ঞেস করায় অবস্থান পরিবর্তন করে এনএসও দাবি করে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডগুলো মূলত ‘সবার জন্যে সুলভ ও প্রকাশ্যে থাকা এইচএলআর লুকআপ সার্ভিসের মতো’ এবং এর সঙ্গে ‘পেগাসাসের গ্রাহকদের নিশানায় থাকা তালিকা কিংবা অন্য কোনো এনএসও প্রোডাক্টের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এইচএল আর লুক আপ সার্ভিস হচ্ছে, কোনো ফোন নম্বর কোনো নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করার একটি ব্যবস্থা।
এনএসও যেমনটা বলছে, ফাঁস করা নম্বরগুলো আসলেই যদি এইচএলআর লুকআপ সার্ভিসের ফল হয়, তারপরও পেগাসাস গ্রাহকদের নজরে থাকা এলাকার দেশগুলোর থেকে পাওয়া ডেটা দুটো প্রশ্নের জন্ম দেয়: এগুলো কি সবই এক সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে পাওয়া গেছে? আর এগুলোকে কি একত্র করে একই জায়গায় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে?
টেলিমার্কেটারদের জন্য এইচএলআর লুকআঅ্যাপের বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা আছে। তারপরেও টেলেকম নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো আসলে স্পাইওয়্যার নির্ভর নজরদারি ব্যবস্থার অংশ হতে পারে।
বার্লিনের সিকিউরিটি রিসার্চ ল্যাবসের প্রধান বিজ্ঞানী কার্স্টেন নোল পেগাসাস প্রজেক্টকে বলেন, ‘এইচএলআর লুকআপ ব্যবহার করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ফোনটা অন করা আছে।’ এর অর্থ হলো, হ্যাকিং করা সম্ভব।
৫০ হাজার ব্যক্তিকে পেগাসাস ব্যবহার করে নিশানায় রাখা হচ্ছে এমনটা অস্বীকার করে এনএসও বোঝাতে চেয়েছে, এর গ্রাহক সরকারগুলো সবমিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি নিশানার ওপর এটি ব্যবহার করে না।
যেসব সরকার সম্ভাব্য হ্যাকিং ও নজরদারি করার জন্য হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের নির্বাচন করে, তারা চাইবে না যে, তাদের নজরদারির বিস্তারিত তথ্য বা মেটাডাটা বিদেশি কেউ বা বেসরকারি কেউ জেনে যাক।
যে সরকারগুলোর নাম এসেছে তাদের এই ইস্যুতে পরিষ্কার কথা বলার কোনো উদ্যোগ নেই। যে দেশগুলোতে আইনের শাসন আছে, সেখানে রাজনীতিক ও সাংবাদিকসহ সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্টজনের ওপর এমন বিশদ ও বেআইনি নজরদারি প্রোগ্রামের সম্ভাব্য ব্যবহার- নিশ্চিত ভাবেই গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি। যেটি একটি স্বাধীন তদন্ত দাবি করে।
আরও পড়ুন:আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ১২ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পাহাড়ি বাদার এলাকায় যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তীব্র গোলাগুলির পর ১২ জন সেনা এবং ১৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছে।
পাকিস্তানি তালেবান নামক একটি জিহাদিগোষ্ঠী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, সৈন্যদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং ড্রোনও দখলে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে হামলার পর তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে আকাশে হেলিকপ্টার দেখতে পেয়েছে।
পাকিস্তানি তালেবানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় সাধারণত সামরিক যান চলাচলের আগে কারফিউ জারি করা হয়। পথগুলো স্ক্যান করা হয়।
ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, ভারতের সহায়তায় আফগানের তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানি তালেবানদের আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল এবং নয়াদিল্লির এই অভিযোগ অস্বীকার করে। সশস্ত্র গ্রুপটি আফগান তালেবান থেকে অনুপ্রাণিত।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে এই গোষ্ঠীটি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে। ফলে সেনাসহ শত শত বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা সাইবারস্পেসে আটকে থাকার চেয়ে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন উদার মানুষ হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে এক কালচারস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যতের বিশ্বে মানুষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
পুতিন বলেন, মানবতার ভবিষ্যৎ তাদের হাতে, যারা ভালোবাসা, বন্ধুত্ব এবং পরিবারকে মূল্য দেয়- সাইবারস্পেসে আটকে থাকা অহংকারী একাকীদের চেয়ে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ভবিষ্যতের পৃথিবী অহংকারীদের জগৎ নয়, যারা সম্পূর্ণরূপে সাইবারস্পেসে ডুবে আছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী ‘নিজের জন্য’ নীতিতে বিশ্বাসী একাকী লোকদেরও নয়, বরং এমন লোকদের জগৎ যারা এখনো ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বকে মূল্য দেয়, তাদের প্রিয়জনদের লালন করে, সমাজের সঙ্গে তাদের অবিচ্ছেদ্য সংযোগ এবং এর প্রতি দায়িত্ব বোঝে।
তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং প্রবণতা ভবিষ্যদ্বাণী করে। তবে আমি বিশ্বাস করি বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সামাজিক ক্ষেত্রে আবিষ্কার এবং অগ্রগতির উপযোগী মৌলিক সমাধানগুলো শুধু মানুষের অনুপ্রেরণা, প্রতিভা এবং স্রষ্টার অনুপ্রেরণা ও প্রতিভার মাধ্যমেই দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, মানবজাতিকে এই নতুন বাস্তবতাকে ‘অধিগ্রহণ’ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, রাশিয়ান পরিচয় এবং জাতীয় চরিত্র উভয়ই ‘পরিবারের শেকড়ে প্রোথিত।’
পুতিন গত বছরের গোড়ার দিকে ‘পরিবার’ নামে একটি জাতীয় প্রকল্প চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল- শিশুসহ পরিবারগুলো সহায়তা করা এবং দেশে জন্মহার বাড়ানো।
মস্কো তখন থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থা চালু করেছে, যেমন- পরিবারে প্রতিটি সন্তানের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান, বিস্তৃত মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং পরিবারগুলোতে চলমান আর্থিক সহায়তা।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি সম্প্রতি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বা তার অধীনস্থরা কোনো আইনি পরামর্শের তোয়াক্কা করেননি।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, যুদ্ধের প্রথম ১৭ মাস ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) নেতৃত্ব দিয়ে গত মার্চে পদত্যাগ করেন হালেভি। সম্প্রতি দক্ষিণ ইসরায়েলের এক কমিউনিটি সভায় তিনি বলেন, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা প্রায় ‘২ লাখেরও বেশি মানুষ’। তার এ অনুমান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের কাছাকাছি, যা এতদিন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘হামাসের প্রোপাগান্ডা’ বলে উড়িয়ে দিত। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বরাবরই এই তথ্যকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৭১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জন। এছাড়া বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত শুক্রবারও ইসরায়েলি হামলায়, বিশেষ করে গাজা সিটির আশপাশে, আরও ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
ফাঁস হওয়া ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত নিহতদের ৮০ শতাংশের বেশি বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ২০০ জন, যার মধ্যে ৮১৫ জন ছিলেন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক। নিহতদের অনেকেই সামরিক সদস্য ছিলেন।
হালেভি সভায় বলেন, ‘এটি কোনো কোমল যুদ্ধ নয়। আমরা প্রথম মিনিট থেকেই গ্লাভস খুলে ফেলেছি।’ তার দাবি, ৭ অক্টোবরের আগেই ইসরায়েলের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইডিএফ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমার মধ্যেই কাজ করে, তবুও স্বীকার করেন যে তিনি কখনোই আইনি পরামর্শকে গুরুত্ব দেননি।
তার ভাষায়, ‘কেউ আমাকে একবারও থামায়নি। একবারও না। সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি, যার আমাকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই, তিনিও না।’
তবে ওয়াইনেট নিউজে প্রকাশিত রেকর্ডিংয়ে হালেভির এই বক্তব্য ছিল না। পত্রিকাটির বরাত দিয়ে আরও জানানো হয়, হালেভির দৃষ্টিতে সামরিক আইনজীবীদের আসল কাজ হলো- আইডিএফের কর্মকাণ্ডকে বৈধ হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা।
এই মন্তব্য নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান আইডিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এদিকে ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সফার্দ বলেন, হালেভির বক্তব্য নিশ্চিত করেছে যে সামরিক আইনি উপদেষ্টারা কার্যত ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে কাজ করেন।
এর আগে হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, হালেভির উত্তরসূরি বর্তমান আইডিএফ চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামিরও সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেলের আইনি পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। তোমের-ইয়েরুশালমি জানিয়েছিলেন, গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ মানুষকে দক্ষিণে সরে যেতে বলার আগে সেখানে পর্যাপ্ত আশ্রয় ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেই হামলা চালানো হয়। গত শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলায় নিহত অনেক ফিলিস্তিনি সম্ভবত ওইসব মানুষ, যারা দক্ষিণে যেতে পারেনি বা ঘরবাড়ি ছাড়তে অনিচ্ছুক ছিল- কারণ দক্ষিণেও ইসরায়েলের বোমা হামলার ঝুঁকি থেকে যায়।
‘হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন’ গঠনের প্রস্তাব পাস জাতিসংঘে
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েল এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলেও জাতিসংঘ তা কার্যকর রাখতে অনঢ় রয়েছে। তবে ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হামাস। খবর রয়টার্সের। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সাধারণ পরিষদের ১৪২টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। তাদের মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
এই প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। ঘোষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা যেমন- নিন্দনীয়, তেমনি গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও অনাহারও অমানবিক। এতে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট, সময়সীমাসাপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগের দিনই ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিন কখনোই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে না। জাতিসংঘের ঘোষণাও প্রত্যাখ্যান করে তেল আবিব।
গত শুক্রবার ভোটের পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন বলেন, ঘোষণায় হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ না করাই প্রমাণ করে যে সাধারণ পরিষদ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে পরিণত হয়েছে।
যদিও, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান উপেক্ষা করে নিজেদের ঘোষণায় অনড় থাকার সিদ্ধান্ত জানায় জাতিসংঘ।
তবে, হামাস এই ঘোষণা অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা এটিকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের সাধারণ পরিষদ বৈঠকে কিছু দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও জানায় গণমাধ্যম।
দেশটির একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি একথা জানিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইনের নিয়ন্ত্রণের জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে।
তারা গত বছর সেখানকার বেশ কিছু ভূখণ্ড দখল করে নেয়।
২০২১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি’র বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর থেকে মিয়ানমারে যে রক্তাক্ত বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়, রাখাইন লড়াই সেগুলোর অন্যতম।
এএ শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম-এ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার মধ্যরাতের ঠিক পরেই কিয়াউকতাও শহরের দুটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলায় ১৫ থেকে ২১ বছর বয়সী ১৯ জন শিক্ষার্থী নিহত ও আরও ২২ জন আহত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর জন্য আমরা নিহতদের পরিবারের মতোই দুঃখিত ।’
তারা হামলার জন্য জান্তাকে দায়ী করেছে, কিন্তু ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য জান্তার মুখপাত্রের কাছে এএফপি’র আহ্বানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকাকালিন একটি জান্তা যুদ্ধবিমান সেখানে দুটি ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলেছে।
ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে, ‘নৃশংস হামলার’ নিন্দা জানিয়েছে।
এএফপি কিয়াউকতাওয়ের আশপাশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। সেখানে ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবা অচল রয়েছে।
মিয়ানমারের বিভিন্ন ফ্রন্টে সেনাবাহিনী তাদের শাসনের বিরোধিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বেসামরিক সম্প্রদায়ের ওপর বিমান ও কামান হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
নেপালের রাজধানী ধীরে ধীরে শান্ত পরিস্থিতির দিকে ফিরছে। কারফিউ শিথিল হওয়ায় দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
শনিবার সকালের মধ্যে রাস্তার পরিবেশ অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে মঙ্গলবার ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।
নেপালে ২০০৮ সালে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের অবসান ও রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিক্ষোভে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছে।
দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভের ফলে সরকার পতন এবং সংসদে আগুন দেওয়ার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় বুধবার থেকে রাস্তায় বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এখন সেখানে রাস্তায় সৈন্যদেরর উপস্থিতি কমিয়ে আনা হয়েছে। খবর এএফপি’র।
এদিকে শপথ নেয়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য অবস্থান ঘোষণাকারী সুশীলা কার্কি শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যত গঠনের দায়িত্ব পেলেন। দুর্নীতিমুক্ত দেশ বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি।
নেপালে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের ৫ মার্চ নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে অনেক নেপালি কার্কির নিয়োগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
সমাজকর্মী সুরজ ভট্টরাই (৫১) বলেন, নেপাল তার প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রী, আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রাখবেন এবং সুশাসনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
কাঠমান্ডুর একটি দোকানে কর্মরত ২৩ বছর বয়সী দুর্গা মাগার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত আপাতত ভালো।
তিনি আরও বলেন, এই সময়ে জনগণের, বিশেষ করে তরুণদের কাছে প্রধান সমস্যা হল দুর্নীতি।
তিনি আরও বলেন, ‘জেন জেড’ অথবা বড় কোনো রাজনৈতিক নেতা যেই এটি করুক, তা বিবেচ্য বিষয় নয়, এটি কেবল বন্ধ করা দরকার।
দুর্গা মাগার আরও বলেন, আমরা জানি না ভবিষ্যতে কী হবে, তবে আমরা আজ সন্তুষ্ট। আশা করি ভবিষ্যতে পরিস্থিতি এতটা উত্তেজনাপূর্ণ থাকবে না।
তবে দুর্নীতি নির্মূল করার আশা এতো সহজ হবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিদেশি নাটক-সিনেমা দেখা বা শেয়ার করার মতো কাজের জন্য উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে - জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কিম জং উনের নেতৃত্বে গত এক দশকে দেশটিতে প্রযুক্তি-নির্ভর দমননীতি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খবর আল জাজিরা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়, সাত দশক ধরে কিম রাজবংশ উত্তর কোরিয়ায় পরম ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এর ফলে জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই ভীতি, দমন-পীড়ন ও সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে বাস করছে।
জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়া মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রধান জেমস হিনান জেনেভায় ব্রিফিংয়ে বলেন, কোভিড-যুগের বিধিনিষেধের পর থেকে রাজনৈতিক ও সাধারণ অপরাধ উভয়ের জন্যই মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় কে-ড্রামা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষকে ইতিমধ্যেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি দিক এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি শিশুদেরও বাধ্যতামূলকভাবে কয়লাখনি ও নির্মাণকাজের মতো কঠিন শ্রমে নিয়োজিত করা হচ্ছে।
এ প্রতিবেদনকে জাতিসংঘ বলছে গত এক দশকের বিস্তৃত পর্যালোচনা। এর আগে ২০১৪ সালের ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন, অনাহার এবং ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে কারাগারে আটকে রাখার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ উঠে এসেছিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করে বলেন, “যদি উত্তর কোরিয়া বর্তমান গতিপথে এগিয়ে চলে, তবে জনগণ আরো বেশি নির্মম দমননীতি, ভয় ও ভোগান্তির শিকার হবে।”
নতুন প্রতিবেদন নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি উত্তর কোরিয়ার জেনেভা মিশন কিংবা লন্ডন দূতাবাস।
জাপানে ১০০ বা তারও বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যা নতুন এক রেকর্ড। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতবর্ষী এসব মানুষের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জাপান। যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একদিকে যেমন জাপানের জনসংখ্যা কমছে, অন্যদিকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাপানে মোট ৯৯ হাজার ৭৬৩ জন শতবর্ষী ছিলেন। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ৪ হাজার ৬৪৪ জন বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশই নারী।
জাপানের সবচেয়ে প্রবীণ নাগরিক হলেন ১১৪ বছর বয়সি শিগেকো কাগাওয়া। তিনি কিয়োটোর কাছে নারা অঞ্চলে থাকেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছেন, এ নারীর বয়স যখন ৮০ বছর ছিল তখনও তিনি চিকিৎসক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘজীবী হওয়ার ব্যাপারে কাগাওয়া বলেন, ‘রোগীর বাড়ি বাড়ি হেঁটে গিয়ে সেবা দেওয়ার অভ্যাস আমার পা দুটিকে মজবুত করেছে, আর এটাই আমার বর্তমান প্রাণশক্তির মূল উৎস।’
বয়স ১১৪ হলেও তিনি এখনো খালি চোখে ভালো দেখতে পান। তার দিন কাটে টিভি দেখে, খবরের কাগজ পড়ে ও ক্যালিগ্রাফি করে।
জাপান গত কয়েক বছর ধরেই জনসংখ্যার সংকটে রয়েছে। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ায় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু এই ব্যয় মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশক্তির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।
গত মাসে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা গেছে যে, ২০২৪ সালে জাপানি নাগরিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ ৯ লাখেরও বেশি কমেছে।
দেশটির সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ওই সময় এ পরিস্থিতিকে ‘নীরব জরুরি অবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। জনসংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা ঠেকাতে তিনি পরিবার-বান্ধব নানা উদ্যোগ হিসেবে কর্মঘণ্টার নমনীয়তা এবং বিনামূল্যে ডে-কেয়ারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলো এখনো জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্কতা রোধে তেমন কোনো কার্যকর প্রভাব রাখতে পারেনি।
মন্তব্য