কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে একসঙ্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যক্তিগত ফোনে এমন নজরদারি করছে, যার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য অয়্যার এ নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটি অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
একটি ইসরায়েলি নজরদারি প্রযুক্তি সংস্থার ফাঁস হওয়া ডেটাবেসে বিভিন্ন দেশের সরকারি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে হাজারো টেলিফোন নম্বরের তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিন শরও বেশি ভারতীয় টেলিফোন নম্বর রয়েছে বলে উঠে এসেছে দ্য অয়্যার ও এর ১৬টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তদন্তে। এই নম্বরগুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে আছেন মন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও অধিকার কর্মী।
এসব নম্বর ব্যবহারকারীদের ফোনের একটা ছোট অংশের ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এর মধ্যে ৩৭টিতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার টার্গেট করেছে। ওই ৩৭টির মধ্যে ১০টি ফোন ভারতীদের। এই ফোনগুলোর বিশদ প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ না করে এখনও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে, এতে সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছে কি না বা এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে কি না।
বিশ্বজুড়ে পেগাসাসের (ফোন হ্যাকিং সফটওয়্যার) বিক্রেতা ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও জানিয়েছে, তাদের ক্লায়েন্টদের মধ্যে ‘পরীক্ষিত সরকার’ রয়েছে, যার সংখ্যা সম্ভবত ৩৬। যদিও কোম্পানিটি ক্লায়েন্টদের নাম জানাতে চায়নি। তবে তাদের এই দাবি থেকে বোঝা যায় দ্য অয়্যার ও এর সহযোগীরা যে আক্রমণের কথা প্রকাশ করেছে সেটি কোনো ভারতীয় বা বৈশ্বিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঘটেনি।
ফাঁস হওয়া ডেটাবেসটি প্রথমে হাতে পায় প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদমাধ্যম ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল। যেটি তারা ‘দ্য পেগাসাস প্রজেক্ট’ নামের একটি সহযোগিতামূলক তদন্তের অংশ হিসেবে দ্য অয়্যার, ল্য মঁদ, দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট ও আরও ১৩টি মেক্সিকান, আরব ও ইউরোপীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করেছে।
ডেটাবেস হাতে পেয়ে ফরবিডেন স্টোরিজ জানায়, এতে এনএসও ক্লায়েন্টদের টার্গেট করা কিছু নির্বাচিত ফোন নম্বরের রেকর্ড আছে। তবে এনএসও আনুষ্ঠানিকভাবে এর সত্যতা অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, এনএসও গ্রাহকরা হয়তো ওই নম্বরগুলো ‘অন্য কোনো উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করেছে।
তালিকার যে নম্বরগুলো চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ ভৌগলিক ভাবে ১০টি দেশের: ভারত, আজারবাইজান, বাহরাইন, হাঙ্গেরি, কাজাখস্তান, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
২০১৯ সালে এনএসও কোম্পানির বিরুদ্ধে হোয়্যাটসঅ্যাপে আক্রমণের বিষয়টি উদঘাটন করে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল নজরদারি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ‘সিটিজেন ল্যাব’। সে সময় এই ১০টি দেশের প্রতিটিকেই পেগাসাস ক্লায়েন্টদের নিশানার অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি ল্যাবটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা ফর্বিডেন স্টোরিজের সমন্বয়ে গঠিত ৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের একটি দল আক্রান্ত ফোন নম্বরগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে।
এরপর ওই ডেটাবেসে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবহৃত ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করার চেষ্টা চালানো হয়। ভারতীয় নম্বরগুলোর ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
আইনিভাবে আড়িপাতার জন্য দ্য ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট ও ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের অনুমোদিত উপায় অবলম্বন করা বাধ্যতামূলক। দেশ ভেদে আইন ভিন্ন, কিন্তু কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তির ফোন হ্যাক করে নজরদারির স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে দেয়া ভারতের আইটি অ্যাক্টের অধীনে পুরোপুরি অপরাধ।
দ্য অয়্যার ধাপে ধাপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাচাই করা নামগুলো আগামী কয়েকদিন তার অংশীদারদের সঙ্গে প্রকাশ করবে।
ডেটাবেসে যাদের নম্বর রয়েছে তাদের মধ্যে ৪০ জন সাংবাদিক, বিরোধী দলের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, একজন সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ, নরেন্দ্র মোদি সরকারের দুই মন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থার বর্তমান ও সাবেক প্রধান ও কর্মকর্তা ও অসংখ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন।
ডেটাবেসে নম্বরের উপস্থিতিতে এটা নিশ্চিত যে, তাদেরকে নজরদারিতে রাখার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। তবে আসলেই ওই ফোনগুলো হ্যাক হয়েছে কি না বা আক্রান্ত হয়েছে কি না সেটা যাচাই করতে হলে ডিভাইসটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আইফোন হলে এটি সহজে করা সম্ভব।
পেগাসাস প্রজেক্টের ডেটাবেসের নম্বরগুলোর একটি বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের নামে নিবন্ধিত ছিল। ওই নম্বরটি তিনি তালিকায় যোগ হওয়ার আগেই ব্যবহার বন্ধ করেছিলেন। তবে নম্বরটি নির্বাচন করার সময় তিনি হোয়্যাটসঅ্যপ বা অন্য এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতেন কি না সে বিষয়ে অবশ্য দ্য অয়্যার নিশ্চিত হতে পারেনি। ওই সময়সীমার মধ্যে নম্বরটির প্রকৃত ব্যবহারকারীকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত দ্য অয়্যার ওই বিচারকের নাম প্রকাশ করবে না।
দ্য অয়্যার ও তার অংশীদাররা বিশ্বব্যাপী ১৩ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের নাম ছাড়া, যে নামগুলো সন্ত্রাসবাদবিরোধী বা রাষ্ট্রীয় গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত তাদের পরিচয় প্রকাশ করবে না।
গোপনীয়তার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতির কথা বলছে ভারত
সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেগাসাস প্রজেক্টের পার্টনারদের পাঠানো বিশদ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মিনিস্ট্রি অফ ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (এমইআইটিওয়াই) জানায়, ‘ভারত একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ, যা তার সমস্ত নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তারা এও জানায়, ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর সরকারি নজরদারি সম্পর্কিত অভিযোগগুলির কোনো দৃঢ় ভিত্তি একেবারেই নেই।’
সরকার পেগাসাস ব্যবহার করছে, এমনটা নির্দিষ্টভাবে অস্বীকার না করে এমইআইটিওয়াই তাদের উত্তরে জানায়, ‘বাধা, পর্যবেক্ষণ ও ডিক্রিপশনের প্রতিটি কেস উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে করা হয়… এই পদ্ধতি তাই নিশ্চিত করে যে, কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থার মাধ্যমে যে কোনো তথ্যে বাধা, পর্যবেক্ষণ বা ডিক্রিপশন আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারেই সম্পন্ন করা হয়েছে।’
প্রকৃতপক্ষে, আইনি হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়াটির প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু লিখিত ও সময়সীমাবদ্ধ অনুমোদনই অন্তর্ভুক্ত নয়, একই সঙ্গে যিনি হস্তক্ষেপের কাজটি করছেন সেই টেলিকম বা কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহারকারীও আছেন। সাধারণত যিনি এই কাজটি করেন তিনি আইটি আইনের ৪৩ ধারায় বর্ণিত ‘হ্যাকিং’ এর কার্যক্রমের আওয়ায় পড়েন না।
পেগাসাসের মতো স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে কারও ওপর নজরদারি করার জন্য ব্যক্তিগত স্মার্টফোনে হ্যাক করাটা জরুরি।
এনএসও বলছে, ডেটা ‘হয়ত’ তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কিত
এনএসও কোম্পানি বারবার বলে আসছে, ফাঁস হওয়া ডেটাবেসে ‘পেগাসাস ব্যবহার করে সরকারি নিশানায় থাকা নম্বরের তালিকা নেই।’ তবে তারা দ্য অয়্যার ও এর পার্টনারদের আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, তাদের ‘বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণ’ আছে যে, ফাঁস করা তথ্য ‘বড় একটা তালিকার একটা অংশ, যেটা এনএসও গ্রুপের গ্রাহকেরা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন।’
এই ‘অন্য উদ্দেশ্য’ কী হতে পারে সেটি জিজ্ঞেস করায় অবস্থান পরিবর্তন করে এনএসও দাবি করে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডগুলো মূলত ‘সবার জন্যে সুলভ ও প্রকাশ্যে থাকা এইচএলআর লুকআপ সার্ভিসের মতো’ এবং এর সঙ্গে ‘পেগাসাসের গ্রাহকদের নিশানায় থাকা তালিকা কিংবা অন্য কোনো এনএসও প্রোডাক্টের কোনো সম্পর্ক নেই।’
এইচএল আর লুক আপ সার্ভিস হচ্ছে, কোনো ফোন নম্বর কোনো নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করার একটি ব্যবস্থা।
এনএসও যেমনটা বলছে, ফাঁস করা নম্বরগুলো আসলেই যদি এইচএলআর লুকআপ সার্ভিসের ফল হয়, তারপরও পেগাসাস গ্রাহকদের নজরে থাকা এলাকার দেশগুলোর থেকে পাওয়া ডেটা দুটো প্রশ্নের জন্ম দেয়: এগুলো কি সবই এক সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে পাওয়া গেছে? আর এগুলোকে কি একত্র করে একই জায়গায় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে?
টেলিমার্কেটারদের জন্য এইচএলআর লুকআঅ্যাপের বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা আছে। তারপরেও টেলেকম নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো আসলে স্পাইওয়্যার নির্ভর নজরদারি ব্যবস্থার অংশ হতে পারে।
বার্লিনের সিকিউরিটি রিসার্চ ল্যাবসের প্রধান বিজ্ঞানী কার্স্টেন নোল পেগাসাস প্রজেক্টকে বলেন, ‘এইচএলআর লুকআপ ব্যবহার করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ফোনটা অন করা আছে।’ এর অর্থ হলো, হ্যাকিং করা সম্ভব।
৫০ হাজার ব্যক্তিকে পেগাসাস ব্যবহার করে নিশানায় রাখা হচ্ছে এমনটা অস্বীকার করে এনএসও বোঝাতে চেয়েছে, এর গ্রাহক সরকারগুলো সবমিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি নিশানার ওপর এটি ব্যবহার করে না।
যেসব সরকার সম্ভাব্য হ্যাকিং ও নজরদারি করার জন্য হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের নির্বাচন করে, তারা চাইবে না যে, তাদের নজরদারির বিস্তারিত তথ্য বা মেটাডাটা বিদেশি কেউ বা বেসরকারি কেউ জেনে যাক।
যে সরকারগুলোর নাম এসেছে তাদের এই ইস্যুতে পরিষ্কার কথা বলার কোনো উদ্যোগ নেই। যে দেশগুলোতে আইনের শাসন আছে, সেখানে রাজনীতিক ও সাংবাদিকসহ সমাজের নানা স্তরের বিশিষ্টজনের ওপর এমন বিশদ ও বেআইনি নজরদারি প্রোগ্রামের সম্ভাব্য ব্যবহার- নিশ্চিত ভাবেই গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি। যেটি একটি স্বাধীন তদন্ত দাবি করে।
আরও পড়ুন:ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ৭৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক যুদ্ধ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তিক্ততার মাঝেই গতকাল মঙ্গলবার দুই নেতার ফোনালাপ হয়েছে।
ট্রাম্প-মোদির এই ফোনালাপকে সম্পর্কের শীতলতা কাটার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফোনালাপের পর ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন। লিখেছেন, মোদি একটি অসাধারণ কাজ করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে সহায়তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।
রাশিয়ার কাছে থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে সম্প্রতি ভারতের ওপর শাস্তিমূলক ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। পারস্পরিক মিলিয়ে দেশটির ওপর আরোপ হওয়া মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশ। বিবিসি বলছে, এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পর মোদির সঙ্গে এটিই ট্রাম্পের প্রথম ফোনালাপ।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুভেচ্ছা বার্তার জবাবও দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এক্সে লিখেছেন, ‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আমার বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ। আপনার মতো আমিও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্ব নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আপনার পদক্ষেপে আমাদের সমর্থন আছে।’
এর আগে শুল্ক যুদ্ধ নিয়ে উভয় নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ককে ‘অন্যায়’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। আর ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলেছিলেন ট্রাম্প। উভয়পক্ষের তীক্ষ্ণ মন্তব্য আদানপ্রদানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাগুলোও স্থগিত হয়।
তবে গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন বাণিজ্য আলোচক ব্রেন্ডান লিঞ্চের নেতৃত্বে একটি দল দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
দিল্লির কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের বৈঠককে কোনো বাণিজ্য আলোচনার শুরু হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। এটি আলোচনা করার চেষ্টা মাত্র।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি ক্লিয়ারেন্স অভিযান চলাকালে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন সেনা নিহত হয়েছেন। একই অভিযানে ‘ভারত-সমর্থিত’ পাঁচ সন্ত্রাসীও নিহত হয়েছে বলে সামা টিভির খবরে বলা হয়েছে।
গত সোমবার কেচ জেলার শেরবান্দি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) নিশ্চিত করেছে।
আইএসপিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, শেরবান্দি এলাকায় সন্ত্রাসীদের আস্তানা উচ্ছেদের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী একটি অভিযান চালাচ্ছিল। এ সময় একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর গাড়ি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, যার ফলে পাঁচজন সেনা নিহত হন।
নিহত সেনারা হলেন ক্যাপ্টেন ওয়াকার আহমদ (লোরালাই), নায়েক আসমাতুল্লাহ (ডেরা গাজী খান), ল্যান্স নায়েক জুনায়েদ আহমদ (সুক্কুর), ল্যান্স নায়েক খান মোহাম্মদ (মারদান) এবং সিপাহী মোহাম্মদ জাহুর (সোয়াবি)।
আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানের সাহসী অফিসার ও সেনাদের এই আত্মত্যাগ দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূলের দৃঢ় সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভারত-পৃষ্ঠপোষক সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে নিরাপত্তা বাহিনী জাতির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ গত এক সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন সামরিক অভিযানে অন্তত ১৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে খাইবার পাখতুনখোয়ার লালকিলা মাইদান এলাকায় ‘ভারত সমর্থিত সন্ত্রাসী’দের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাতজন সেনা সদস্য নিহত হন। নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালাচ্ছিল।
ন্যায়সঙ্গত ও অধিক ভারসাম্যপূর্ণ বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকেও গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভ (জিজিআই) এ অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের উদ্যোগে গৃহীত এ কর্মসূচির লক্ষ্য বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি ‘চীনা সমাধান’ উপস্থাপন করা।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত সোমবার ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠককালে এ আমন্ত্রণ জানান।
মঙ্গলবার ঢাকার চীনা দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সোমবারের বৈঠকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, বৈশ্বিক শাসন উদ্যোগ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, উভয় দেশই সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখেছে। দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা নির্বিঘ্নে চলছে এবং বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দু’দেশের নেতাদের মধ্যে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।
পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম (গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভকে (বৈশ্বিক শাসন উদ্যোগ) স্বাগত জানিয়ে এর প্রশংসা করেন। তিনি এটিকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সি জিনপিংয়ের সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবেও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ এবং দুই দেশের জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজায় চলমান যুদ্ধ ও কট্টর উগ্র ডানপন্থি নীতির কারণে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি বলেছেন, দেশকে এখন স্বনির্ভর অর্থনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। গত সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও তার সরকারের কট্টর ডানপন্থি নীতির কারণে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে অবশেষে প্রথমবারের মতো ইসরাইলের একঘরে হয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে চলে যাচ্ছি, আর আমাদের ধীরে ধীরে এমন এক অর্থনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে যেখানে স্বনির্ভরতার বৈশিষ্ট্য থাকবে।’
মূলত নেতানিয়াহুর সরকার এতদিন কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল। তবে মাসের পর মাস নানা সতর্কবার্তার পর নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে বড় ধরনের স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েলি দৈনিক দ্য মার্কারও নেতানিয়াহুর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তিনি বলেছেন- দেশ এখন ‘এক ধরনের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার’ মধ্যে আছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাইরের ওপর নির্ভরতা এড়াতে ইসরায়েলকে নিজেদের অস্ত্র নিজেকেই তৈরি করতে হবে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্য, স্পেন ও কানাডা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ চলতি মাসের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
এদিকে নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতা ভাগ্য নয়, এটা নেতানিয়াহুর ভুল ও ব্যর্থ নীতির ফল। তিনি ইসরায়েলকে তৃতীয় বিশ্বের দেশে পরিণত করছেন এবং পথ বদলানোরও চেষ্টা করছেন না।’
গাজা সিটিতে মঙ্গলবার ভোরের আগে ইসরায়েল তাদের বহুল প্রতীক্ষিত স্থল হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ আগেই সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গাজায় হামাস নির্মূল করার ইসরায়েলের লক্ষ্যকে সমর্থন জানান।
এদিকে জাতিসংঘের এক তদন্তে অভিযোগ আনা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের উসকানির জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
রাতে ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালায় এবং একইসঙ্গে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্রে স্থলবাহিনী অগ্রসর হয়।
সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত রাতে আমরা গাজা সিটির পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে, মূল ধাপে প্রবেশ করেছি... বাহিনী হামাসের প্রধান ঘাঁটি গাজা সিটিতে স্থল অভিযান সম্প্রসারিত করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা গাজা সিটির কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’ সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞেস করেন, সেনারা শহরের কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করেছে কি না, তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’
সেনাদের হিসাব অনুযায়ী, ওই এলাকায় প্রায় ‘দুই হাজার থেকে তিন হাজার হামাস যোদ্ধা’ সক্রিয় রয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, গাজা সিটি এখন ‘আগুনে জ্বলছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আইডিএফ (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) সন্ত্রাসী অবকাঠামোর ওপর লোহার মুঠোয় আঘাত হানছে, আর আইডিএফ সেনারা সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করছে যাতে জিম্মিদের মুক্তি ও হামাসকে পরাজিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপিকে জানিয়েছে, গাজা সিটিতে নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ চলছে—অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া প্রায় দুই বছরের ইসরায়েলি হামলার কারণে যার অনেকাংশই ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
২৫ বছর বয়সি বাসিন্দা আহমেদ গাজাল বলেছেন, ‘আমরা তাদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি।’
গত সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে রুবিও এই সামরিক অভিযানে জোরালো সমর্থন দেন। নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে গাজা সিটি দখলের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসরায়েল ছাড়ার সময় রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি একটি চুক্তি হওয়ার জন্য সময় খুবই সীমিত। আর মাস নয়, আমাদের হাতে হয়তো কেবল কয়েক দিন কিংবা হয়তো কয়েক সপ্তাহ আছে।’
তিনি বলেন, হামাসকে নিরস্ত্র করার কূটনৈতিক সমাধানই যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার রয়ে গেছে।
তবে তিনি যোগ করেন, ‘কখনো কখনো যখন হামাসের মতো বর্বরদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়, তখন সেটা সম্ভব হয় না। তবু আমরা আশা করি এটি ঘটতে পারে।’
জেরুজালেমে গত সোমবার গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রুবিও। তিনি স্বীকার করেন, জিম্মিদের হাতে রেখে হামাস বর্তমানে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, ‘যদি কোনো জিম্মি না থাকত আর কোনো বেসামরিক নাগরিক বাধা হয়ে না দাঁড়াত, তবে এই যুদ্ধ এক বছর ছয় মাস আগেই শেষ হয়ে যেত।’
অন্যদিকে জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন জানিয়েছে, নেতানিয়াহু হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর তারা তাদের প্রিয়জনদের জন্য ‘ভয়ে আতঙ্কিত।’
তারা এক বিবৃতিতে জানায়, ‘তিনি (নেতানিয়াহু) এমন সবকিছু করছেন যাতে কোনো চুক্তি না হয় এবং যাতে তাদের (জিম্মিদের) ফেরত আনা না যায়।’
ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস হামলা ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ইসরায়েল সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, গাজায় চলমান সংঘাতে ইসরায়েলকে ‘অবিচল সমর্থন’ দিয়ে যাবে তার দেশ। উপত্যকাটি থেকে হামাসকে নির্মূল করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রুবিও ইসরায়েলে পৌঁছান গত রোববার। এরপর গত সোমবার জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে পরিকল্পনা করছে, তার সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, এমন পদক্ষেপ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তা শুধু হামাসকে আরও সাহসী করে তুলবে।
রুবিও বলেন, ভালো একটি ভবিষ্যৎ গাজার বাসিন্দাদের প্রাপ্য। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত হামাসকে নির্মূল না করা হবে, ততক্ষণ তারা কোনো ভালো ভবিষ্যৎ পাবে না। নেতানিয়াহুর উদ্দেশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি আমাদের অব্যাহত সমর্থন ও অঙ্গীকারের ওপর নির্ভর করতে পারেন।’ গাজা নগরী দখলে ইসরায়েলি পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন নেতানিয়াহু। তাকে সম্বোধন করেন ইসরায়েলের ‘সর্বকালের সবচেয়ে ভালো বন্ধু’ হিসেবে। নেতানিয়াহু বলেন, রুবিওর সফর স্পষ্টভাবে এই বার্তা দিচ্ছে যে ইসরায়েলিদের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
এমন সময় রুবিও ইসরায়েলকে সমর্থনের ঘোষণা দিলেন, যখন আজ শুধু গাজার উত্তরে গাজা নগরীতেই অন্তত ২৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর আগের দিনও শহর এলাকায় অন্তত ৫৩ জনকে হত্যা করা হয়। ইসরায়েলের হামলা ও হুমকির মুখে সেখান থেকে পালাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। এর বাইরে পুরো উপত্যকায় চলছে ইসরায়েলের হামলা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসা হয় প্রায় ২৫০ জনকে। সেদিন থেকেই গাজায় তীব্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে ২৩ মাসের বেশি সময়ে উপত্যকাটিতে হামলায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যে নানা বিষয় নিয়ে চলমান সংকটের মধ্যেই ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালায় ইসরায়েল। দোহায় অবস্থান করা হামাস নেতাদের উদ্দেশ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর। তবে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাতার। বন্ধুদেশের ওপর হামলার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্পও।
এমন পরিস্থিতিতে আজ থেকে দোহায় শুরু হয়েছে আরব লিগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি সম্মেলন। সেখানে যোগ দিতে আরব ও মুসলিম দেশের নেতারা কাতারে পৌঁছেছেন। এর আগের দিন এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি ইসরায়েলের ব্যাপক সমালোচনা করেন। ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানানোয় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রশংসা করে তিনি বলেন, কাতারের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আইনি ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
জব্দ সম্পদ ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। দেশটি বলেছে, রাশিয়ার সম্পদ কেড়ে নেওয়া ইউরোপের যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউ দেশগুলো রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে লেনদেন সীমাবদ্ধ করে। সেই সঙ্গে রাশিয়ার ৩০০ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ করে।
বিপুল পরিমাণ এই সম্পদ এখন ইউক্রেনের সহায়তায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় দেশগুলো। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েন একটা নতুন উপায় খুঁজছেন যার মাধ্যমে ওইসব সম্পদ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহার করা যায়।
এমন প্রতিবেদন সামনে আসার পর গত সোমবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, যদি এমনটা ঘটে, চলতি শতকের শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে ধাওয়া করবে রাশিয়া।
তিনি আরও বলেন, এর পাশাপাশি যারা রাশিয়ার সম্পদ দখলে জড়িত থাকবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোকেও ছাড়া হবে না। তিনি বলেন, রাশিয়া সম্ভাব্য সব উপায়ে, সব আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আদালতে এবং আদালতের বাইরেও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে ধাওয়া করবে।
জব্দ সম্পদ নিয়ে রাশিয়া বলছে, তাদের সম্পদ দখল মানে চুরি করা। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বন্ড ও মুদ্রার ওপর আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধে ইউক্রেন ধ্বংসের জন্য রাশিয়াই দায়ী। তাই মস্কোর সঙ্গে জোর করে হলেও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
তবে কিছু ব্যাংকার সতর্ক করে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ জব্দের নজির বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে পশ্চিমা দেশগুলোর বন্ড কেনায় নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিনিয়োগে আস্থা কমতে পারে।
মন্তব্য