গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে মাঠের রাজনীতিবীদদের খুব একটা প্রাধান্য দেয়নি কোনো দলই। দেশের সবচেয়ে পুরনো দল আওয়ামী লীগও এর বাইরে নয়। বরং পরিচিত মুখ বা প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পেশার মানুষদের সংসদ সদস্য করতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।
জাতীয় নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর পর যে আসনগুলো খালি হয়েছিল, সেখানেও দেখা গেছে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য।
তবে সম্প্রতি সে ধারায় দেখা যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। উপনির্বাচন তো বটেই এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও দলের ত্যাগী ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদেরই সামনে নিয়ে আসছে দলটি। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের জন্য ত্যাগ না করলে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই আর মনোনয়ন পাওয়া যাবে না।
দেশে সবশেষ অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও প্রার্থিতার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে নেই এমন নেতাদের আধিক্য। নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের ১৪৭ জনই হলফনামায় নিজেদের সরাসরি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন। আর পেশা হিসেবে কৃষি ও ব্যবসা পরিচয় দেন ৩৬ জন। এ হিসেবে মোট সংসদ সদস্যদের ৬১ ভাগই ব্যবসা পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১৩ শতাংশ আইনপেশার। শুধু রাজনীতি হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন মাত্র ৭ শতাংশ সংসদ সদস্য। এর আগের নির্বাচনগুলোতেও চিত্র ছিল প্রায় এক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক হারুন অর রশিদের মতে, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনের সময় দল ভারি করতে অর্থ ও বিত্তবানদের হাতে রাজনীতি ছেড়ে দেয়া হয়। টিকে থাকতে আওয়ামী লীগও সেই ধারায় নিজেদের মানিয়ে নেয়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে সৃষ্ট দল। সারা দেশে এই সংগঠনের লাখ লাখ নিবেদিতপ্রাণ কর্মী রয়েছে। তাদের বঞ্চিত করে হঠাৎ করে কোনো ব্যবসায়ী বা অন্য কোনো পেশার মানুষকে নমিনেশন দেয়া এটা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আশা করা যায় না।
‘বঙ্গবন্ধুর সময়ও আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ যাদের টাকা পয়সা নেই তাদেরও নমিনেশন দিয়েছে। দেশের রাজনীতিতে এ ধারার পরিবর্তন দেখা যায় সামরিক শাসনের সময় থেকে। চালু হলো “মানি ইজ নো প্রবলেম” সংস্কৃতি। এটি মূলত টাকার খেলা। টাকা দিয়ে দল ভাঙা এবং দল সৃষ্টি করা। এখানেই রাজনীতিতে দূষণ সৃষ্টি হয়েছে। সেটার মধ্যে পরে রাজনীতিতে যে প্রতিযোগিতা ছিল সেই সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়। মাসল এবং মানির অপসংস্কৃতি তৈরি হয়। এর প্রতিফলনই পরবর্তীতে দেখা যায়।’
অধ্যাপক হারুন বলেন, ‘২০০০ সালের পর রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধীদলের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানও আমরা দেখি না। রাজনীতি তো করবে রাজনীতিবিদরা, ব্যাকরণে এটাই বলে। কিন্তু আমলা বা ব্যবসায়ীদের হাতে রাজনীতি থাকার কথা না। কিন্তু তাদের হাতে যদি রাজনীতি চলে যায়, তাহলে আওয়ামী লীগের যে চরিত্র সেটি কিন্তু আর থাকে না।’
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের তিনটি আসনে উপ নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন পান আগাখান মিন্টু (বাঁয়ে), কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল হাসেম খান (মাঝে) ও সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান
সাম্প্রতিক সময়ে এ ধারা থেকে বেড়িয়ে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে মাঠের রাজনীতিবীদদেরই প্রাধান্য দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সবশেষ ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে তৃণমূলের কর্মীদের উপরই আস্থা রাখতে দেখা গেছে দলটিকে। এই তিন আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আগাখান মিন্টু, আবুল হাসেম খান ও হাবিবুর রহমান তৃণমূল থেকে রাজনীতি করা নেতা।
এর মধ্যে মিরপুরের শাহ আলী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আগাখান মন্টু প্রায় ৫০ বছর ধরে দলের রাজনীতি করছেন। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবুল হাসেম খানও অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আর হাবিবুর রহমান খানও তেমন বড় কোনো মুখ নন।
আসলামুল হক আসলামের মৃত্যুর পর ঢাকা-১৪, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সিলেট ৩ ও আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে কুমিল্লা-৫ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়।
এই তিন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ঢাকা-১৪ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ৩৩ জন, কুমিল্লা-৫-এ ৩৫ এবং সিলেট-৩-এ ২১ জন, যার মধ্যে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যসহ অন্য পেশার অনেকেই ছিলেন।
এর আগে অনুষ্ঠিত পাবনা-৪, ঢাকা-৫, নওগাঁ-৬, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিলো নুরুজ্জামান বিশ্বাস, কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, আনোয়ার হোসেন হেলাল ও হাবিব হাসানকে।
পাবনা-৪ আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ২৪ বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। তার মৃত্যুর পর ডিলুর পরিবারের অন্তত আট সদস্য উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে।
একইভাবে ঢাকা-৫ আসনের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যু হলে এতে প্রার্থী করা হয় যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে। নওগাঁ- ৬ এ আনোয়ার হোসেন হেলাল ও ঢাকা-১৮ তে মনোনয়ন পান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান। এর বাইরে যশোর-৬ এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও গাইবান্ধা-৩ আসনে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এটি নিয়ে অনেক কথাবার্তাও হয়েছে। আমার ধারণা দলের অভ্যন্তরেও আলোচনা-সমালোচনা আছে। বলা যেতে পারে, এটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হয়তো আমলে নিয়েছেন। আর এ কারণেই সাধারণ নির্বাচনেও যেখানে অন্য পেশার মানুষকে নমিনেশন দেয়া হয়েছিল, সেখানে দেখা যাচ্ছে একেবারে মাঠের রাজনীতি যারা করেছেন বা মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন, অর্থবিত্ত নাই কিন্তু নিষ্ঠা আছে, ত্যাগ আছে, তাদের নমিনেশন দেয়া হচ্ছে উপনির্বাচনে।
‘এটা একটা ইতিবাচক দিক। এটাই হওয়া উচিৎ, ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগে এটাই হওয়ার কথা। দলের এ সিদ্ধান্তের কারণে তৃণমুলেও ভালো বার্তা যাবে।’
উপনির্বাচনের বাইরেও সম্প্রতি যে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলোতেও ত্যাগী নেতাদেরই এগিয়ে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বলছে, ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা সাম্প্রতিক বিষয় না। সব সময়ই আওয়ামী লীগে তৃণমুলের মাঠকর্মীদের, দুর্দিনের-দুঃসময়ের মাঠকর্মীদের, সৎ, জনপ্রিয়দের প্রাধান্য দেয়া হয়। এটা নতুন কিছু না। এটা আওয়ামী লীগের হেরিটেজ। এটাকে ধরে রেখেই আওয়ামী লীগ এতো ঘাত-প্রতিঘাতের পরেও টিকে আছে।
‘এই প্রাধান্য সব সময় থাকবে। আগামী দিনে আরো বেশি করে দেয়া হবে, এটা তারই শুভ ইঙ্গিত বলতে পারেন। এটা সব পর্যায়ের নেতৃত্ব কিংবা নির্বাচনের ক্ষেত্রেই বলবৎ থাকবে।’
আরও পড়ুন:স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আমরা এই আদর্শকে ধারণ করি, লালন করি। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল তখন একজন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার শহীদ জিয়াউর রহমান পাকিস্তানীদের এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তান সরকারের সাথে। আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে কোর্ট মার্শালে জিয়াউর রহমানের ফাঁসি হতো এই বিদ্রোহ ঘোষণার কারণে। নিশ্চিত ফাঁসি জেনেও তিনি দেশ মাতৃকার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজি মন্টু কলেজ মাঠে আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এসএম জিলানী বলেন, ইতিহাস থেকে জেনেছি, যখন কোনো দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তখন সেই দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের নেতা সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে থাকেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নাই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেদিন দিকবেদিক নেতৃত্ব শূণ্যতায় ছিল। জিয়াউর রহমান অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা কেউ দিবে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের নেতা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করলেন যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দেই তাহলে বাংলাদেশর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে না। আর যদি বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে পারব না।
সমাবেশে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী আবুল খায়ের। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা মোদাচ্ছের ঠাকুরসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সিনিয়র নেতারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন চলছে ভোট গণনার প্রস্তুতি। এ নির্বাচনে ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে। গণনা হচ্ছে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। ভোট গণনা সরাসরি দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে। এজন্য রয়েছে ১৪টি এলইডি স্ক্রিন।
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, চাকসু নির্বাচনে হাতে লাগানো অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, খুবই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখে সত্যি ভালো লাগছে। আমাদের পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সিভিল প্রশাসনের লোকবল রয়েছে। ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এমন প্রচারণা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত কোরআন অবমাননা ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, জামায়াত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা কিছু ছেলেপেলেকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার, কটূক্তি ও করুচিপূর্ণ কথা ছড়ানোর বাহিনী গড়ে তুলেছে। এরা মিথ্যাকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রচার করছে প্রতিনিয়ত।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত আওয়ামী লীগের লেজ ধরে চলতে ভালোবাসে, এখনো কেন যেন আওয়ামী লীগের ভোট নেওয়ার জন্য কায়দা কানুন করছে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইসলামের মৌলিক নীতির বাইরে কথা বলছে তারা।’
সাধারণ মানুষ পিআর সম্পর্কে জানে না জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘যারা নভেম্বরে গণভোটের কথা বলছেন তাদের কোনো মাস্টারপ্ল্যান আছে, তারা শর্ত দিয়ে বিভ্রান্ত করে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও উপদেষ্টা পর্যায়ে দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কিছু উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন। কারা কারা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের তালিকা ও রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি আরো দাবি করেন, বর্তমানে ডিসি, এসপি ও ইউএনও নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারের কিছু উপদেষ্টা, যারা নিজেরা নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও, মূলত একটি দলের হয়ে ভূমিকা রাখছেন।
তাহের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই ষড়যন্ত্র থামাতে হবে। প্রশাসনের ভেতর দলীয় প্রভাব ও গোপন মদদ থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যারা নির্বাচনের নামে নাটক করতে চায়, জনগণ তা মেনে নেবে না।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আবারও গণভোটের দাবি তুলে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে জনগণের ইচ্ছা ও বাস্তবতা পরিস্কার হবে। স্বচ্ছতা থাকলে ২১ দিনেই গণভোট সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একটি দল মুখে গণতন্ত্র ও সংস্কারের কথা বললেও ঐক্যমতের ক্ষেত্রে তারা অনুপস্থিত। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাজপথে থাকব। প্রয়োজন হলে আরও বড় কর্মসূচিতে যাব।
জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার জবাবে তাহের বলেন, জামায়াত দখলবাজি করে না, চাঁদাবাজি করে না। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। ক্ষমতায় গেলে কৃষকের ঋণ মামলাগুলো প্রত্যাহার করব। আমরা সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক বিচার চাই, যেন-তেন বিচার নয়।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমানুষের দাবি মেনে নিতে হবে। গণভোট দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি মানতে হবে। আর যারা খুন-গুমে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শেরপুরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রথম গেইটে এ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির মাও: হাফিজুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি নুরুজ্জামান বাদল, সাবেক নায়েবে আমির মাও: আব্দুল বাতেনসহ আরো অনেকে।
এসময় বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তারা জামায়াত ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। তবে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশ ও বিদেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং এ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানি দিতে দেখা গেছে হাসিনাকে।
এদিকে ২০২৪ সালের শেষভাগে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত একটি জুম বৈঠককে কেন্দ্র করে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালে ১৯ ডিসেম্বর ওই ভার্চুয়াল সভায় দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
সিআইডির ফরেনসিক ও গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সভায় অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন বৈধ সরকার উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ উসকে দেয়ার পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার ঘোষণা দেন।
এই তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে, ২০২৫ সালের ৪ মার্চ মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত ও অভিযোগ দায়েরের অনুমতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ রমনা থানায় সিআর মামলা নং-২২২/২০২৫ দাখিল হয়, যার ধারাগুলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১২১, ১২১(ক), ১২৪(ক)।
পাঁচ মাসেই সিআইডির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার শুরু হচ্ছে। আদালত আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিনটি প্রধান এজেন্ডা- সংস্কার, নির্বাচন ও বিচার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত ধারায় (১২১/১২১ক/১২৪ক) অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংস্থাটি। এ মামলার বিচারকার্য শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১৮, ঢাকায় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিদের অধিকাংশ অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন।
ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে দেশে থাকা সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করে বিভিন্ন জেলা কারাগারে থাকা ৯১ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি ১৯৫ জন আসামি এখনো পলাতক বলে জানা গেছে।
গতকালকের শুনানিতে প্রধান আসামিসহ অধিকাংশ অভিযুক্ত আদালতে অনুপস্থিত থাকায়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রকাশ্য সমন ও গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করার আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে আহ্বান জানানোর নির্দেশ দেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা অনুপস্থিত থাকলে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১২ ধারার আওতায় অনুপস্থিতিতেই বিচার পরিচালনা করা হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন—রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিচার ও দায়বদ্ধতা’ এজেন্ডার বাস্তব প্রতিফলন, তেমনি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দৃঢ় সঙ্কেতও।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে মঙ্গলবার দিনব্যাপী দেবিদ্বার উপজেলার ৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নে লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ এফ এম তারেক মুন্সী। এ সময় তিনি খলিলপুর বাজার, নূরপুর, ফতেহাবাদ মোকামবাড়ি ও ফতেহাবাদ বাজার এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন। এছাড়া খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, গঙ্গামন্ডল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, নূরপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং ফতেহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গণসংযোগকালে এ এফ এম তারেক মুন্সী বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি হলো জাতির পুনর্জাগরণের নকশা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ধানের শীষ কেবল একটি প্রতীক নয়, এটি পরিবর্তন ও আশার প্রতীক। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন—উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন মাহফুজ, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম পাঠান, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পূর্ব বিএনপির সভাপতি শাকিল মুন্সী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, পশ্চিম শাখার সভাপতি এডভোকেট সোহরাব হোসেন, সদস্য সচিব দৌলত খান, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম ইমরান হাসান, উপজেলা যুবদলের সভাপতি নুরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মো. রকিবুল হাসান, জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নেয়ামত উল্লাহ এবং উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কাউছার মোল্লা।
মন্তব্য