গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে মাঠের রাজনীতিবীদদের খুব একটা প্রাধান্য দেয়নি কোনো দলই। দেশের সবচেয়ে পুরনো দল আওয়ামী লীগও এর বাইরে নয়। বরং পরিচিত মুখ বা প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পেশার মানুষদের সংসদ সদস্য করতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল।
জাতীয় নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর পর যে আসনগুলো খালি হয়েছিল, সেখানেও দেখা গেছে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য।
তবে সম্প্রতি সে ধারায় দেখা যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। উপনির্বাচন তো বটেই এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও দলের ত্যাগী ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদেরই সামনে নিয়ে আসছে দলটি। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের জন্য ত্যাগ না করলে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই আর মনোনয়ন পাওয়া যাবে না।
দেশে সবশেষ অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও প্রার্থিতার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে নেই এমন নেতাদের আধিক্য। নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের ১৪৭ জনই হলফনামায় নিজেদের সরাসরি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন। আর পেশা হিসেবে কৃষি ও ব্যবসা পরিচয় দেন ৩৬ জন। এ হিসেবে মোট সংসদ সদস্যদের ৬১ ভাগই ব্যবসা পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১৩ শতাংশ আইনপেশার। শুধু রাজনীতি হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন মাত্র ৭ শতাংশ সংসদ সদস্য। এর আগের নির্বাচনগুলোতেও চিত্র ছিল প্রায় এক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক হারুন অর রশিদের মতে, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনের সময় দল ভারি করতে অর্থ ও বিত্তবানদের হাতে রাজনীতি ছেড়ে দেয়া হয়। টিকে থাকতে আওয়ামী লীগও সেই ধারায় নিজেদের মানিয়ে নেয়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে সৃষ্ট দল। সারা দেশে এই সংগঠনের লাখ লাখ নিবেদিতপ্রাণ কর্মী রয়েছে। তাদের বঞ্চিত করে হঠাৎ করে কোনো ব্যবসায়ী বা অন্য কোনো পেশার মানুষকে নমিনেশন দেয়া এটা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আশা করা যায় না।
‘বঙ্গবন্ধুর সময়ও আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ যাদের টাকা পয়সা নেই তাদেরও নমিনেশন দিয়েছে। দেশের রাজনীতিতে এ ধারার পরিবর্তন দেখা যায় সামরিক শাসনের সময় থেকে। চালু হলো “মানি ইজ নো প্রবলেম” সংস্কৃতি। এটি মূলত টাকার খেলা। টাকা দিয়ে দল ভাঙা এবং দল সৃষ্টি করা। এখানেই রাজনীতিতে দূষণ সৃষ্টি হয়েছে। সেটার মধ্যে পরে রাজনীতিতে যে প্রতিযোগিতা ছিল সেই সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়। মাসল এবং মানির অপসংস্কৃতি তৈরি হয়। এর প্রতিফলনই পরবর্তীতে দেখা যায়।’
অধ্যাপক হারুন বলেন, ‘২০০০ সালের পর রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধীদলের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানও আমরা দেখি না। রাজনীতি তো করবে রাজনীতিবিদরা, ব্যাকরণে এটাই বলে। কিন্তু আমলা বা ব্যবসায়ীদের হাতে রাজনীতি থাকার কথা না। কিন্তু তাদের হাতে যদি রাজনীতি চলে যায়, তাহলে আওয়ামী লীগের যে চরিত্র সেটি কিন্তু আর থাকে না।’
সাম্প্রতিক সময়ে এ ধারা থেকে বেড়িয়ে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে মাঠের রাজনীতিবীদদেরই প্রাধান্য দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সবশেষ ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে তৃণমূলের কর্মীদের উপরই আস্থা রাখতে দেখা গেছে দলটিকে। এই তিন আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আগাখান মিন্টু, আবুল হাসেম খান ও হাবিবুর রহমান তৃণমূল থেকে রাজনীতি করা নেতা।
এর মধ্যে মিরপুরের শাহ আলী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আগাখান মন্টু প্রায় ৫০ বছর ধরে দলের রাজনীতি করছেন। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবুল হাসেম খানও অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আর হাবিবুর রহমান খানও তেমন বড় কোনো মুখ নন।
আসলামুল হক আসলামের মৃত্যুর পর ঢাকা-১৪, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সিলেট ৩ ও আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে কুমিল্লা-৫ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়।
এই তিন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ঢাকা-১৪ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ৩৩ জন, কুমিল্লা-৫-এ ৩৫ এবং সিলেট-৩-এ ২১ জন, যার মধ্যে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যসহ অন্য পেশার অনেকেই ছিলেন।
এর আগে অনুষ্ঠিত পাবনা-৪, ঢাকা-৫, নওগাঁ-৬, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিলো নুরুজ্জামান বিশ্বাস, কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, আনোয়ার হোসেন হেলাল ও হাবিব হাসানকে।
পাবনা-৪ আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ২৪ বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। তার মৃত্যুর পর ডিলুর পরিবারের অন্তত আট সদস্য উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে।
একইভাবে ঢাকা-৫ আসনের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যু হলে এতে প্রার্থী করা হয় যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে। নওগাঁ- ৬ এ আনোয়ার হোসেন হেলাল ও ঢাকা-১৮ তে মনোনয়ন পান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান। এর বাইরে যশোর-৬ এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও গাইবান্ধা-৩ আসনে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এটি নিয়ে অনেক কথাবার্তাও হয়েছে। আমার ধারণা দলের অভ্যন্তরেও আলোচনা-সমালোচনা আছে। বলা যেতে পারে, এটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হয়তো আমলে নিয়েছেন। আর এ কারণেই সাধারণ নির্বাচনেও যেখানে অন্য পেশার মানুষকে নমিনেশন দেয়া হয়েছিল, সেখানে দেখা যাচ্ছে একেবারে মাঠের রাজনীতি যারা করেছেন বা মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন, অর্থবিত্ত নাই কিন্তু নিষ্ঠা আছে, ত্যাগ আছে, তাদের নমিনেশন দেয়া হচ্ছে উপনির্বাচনে।
‘এটা একটা ইতিবাচক দিক। এটাই হওয়া উচিৎ, ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগে এটাই হওয়ার কথা। দলের এ সিদ্ধান্তের কারণে তৃণমুলেও ভালো বার্তা যাবে।’
উপনির্বাচনের বাইরেও সম্প্রতি যে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলোতেও ত্যাগী নেতাদেরই এগিয়ে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বলছে, ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা সাম্প্রতিক বিষয় না। সব সময়ই আওয়ামী লীগে তৃণমুলের মাঠকর্মীদের, দুর্দিনের-দুঃসময়ের মাঠকর্মীদের, সৎ, জনপ্রিয়দের প্রাধান্য দেয়া হয়। এটা নতুন কিছু না। এটা আওয়ামী লীগের হেরিটেজ। এটাকে ধরে রেখেই আওয়ামী লীগ এতো ঘাত-প্রতিঘাতের পরেও টিকে আছে।
‘এই প্রাধান্য সব সময় থাকবে। আগামী দিনে আরো বেশি করে দেয়া হবে, এটা তারই শুভ ইঙ্গিত বলতে পারেন। এটা সব পর্যায়ের নেতৃত্ব কিংবা নির্বাচনের ক্ষেত্রেই বলবৎ থাকবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যেকোনো মূল্যে তাকে প্রতিহত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার নোয়াখালী প্রেসক্লাবে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় দলীয় প্রধানের আদেশ অমান্য করে নিজের ছেলেকে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করায় একরামুল করিম চৌধুরীর সংসদ সদস্যপদ স্থগিতের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়রুল আনাম সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শিহাব উদ্দিন শাহিন, সাধারণ সম্পাদক মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন খেলন ও সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বাড়ি কবিরহাট উপজেলায়। তিনি নিজ ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র স্থানান্তর করে সুবর্ণচরে নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা খায়রুল আনম সেলিমের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছেন।
‘প্রতীক পাওয়ার আগে থেকে ভোটের মাঠে নেমে এমপি একরাম আওয়ামী লীগের নেতাদের হুমকি দিচ্ছেন, বিষোদ্গার করছেন। ভোট না দিলে উন্নয়ন করবেন না বলে সাধারণ মানুষকে শাসাচ্ছেন।’
‘জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলকে অফিস থেকে বের হতে দেবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। একজন আইনপ্রণেতা হয়ে তিনি আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।’
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিম বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একরাম চৌধুরী নোয়াখালী পৌরসভার মেয়রের কক্ষে আমাকে নেতা-কর্মীদের সামনে চরমভাবে অপমান করেন। একপর্যায়ে তেড়ে আসেন এবং আমাকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমপি একরাম তার ছেলে সাবাব চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। অঢেল টাকা, পেশিশক্তি, সন্ত্রাসী বাহিনী, অবৈধ অস্ত্র এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জয়ী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি।
‘এমপি একরামের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩ বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের ‘অবিচার ও নৃশংসতা’ ফাঁস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধাসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিবেদনে গুম, গুপ্তহত্যা ও নির্যাতনসহ বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করার নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
অবিচার ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্যমান ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আসল রূপ তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট মানবাধিকার প্রতিবেদনটি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
‘গিলক্রিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কারসাজির মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দেয়া হয়েছে আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছিল মাত্র চারটি মামলা।
‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা প্রত্যাহার করিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এবার তা যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টেই উঠে এসেছে। মানুষ বিশ্বাস করত সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার খালেদা জিয়া। এবার গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে।’
সোমবার ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন (এইচআরআর) প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। একে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি ‘বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ’ রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
১৯৮টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি (এইচআরআর) তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অংশে বলা হয়, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, নির্বিচারে আটক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেক খবর পাওয়া গেছে।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করতে ও শাস্তি দিতে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিপীড়ন, নৃশংসতা, গুম, খুনসহ নানা অপকর্মের কথা বলে আসছে।
‘এখন আর লুকানোর কিছু নেই। শেখ হাসিনার সরকারের অবিচার, রক্তপাত ও নানা অপকর্মের ঘটনা ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বেরিয়ে আসছে। গোটা বিশ্ব এর নিন্দা করছে।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-১ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, এই উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৭ মে। এছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১০ থেকে ১৪ মে ও আপিল নিষ্পত্তি ১৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৭ মে।
এই সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মার্চ মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে ৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন। এর মধ্যে দুটি উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার নির্বাচনে ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে এবং বাছাই ১২ মে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে ও প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। আর ভোটগ্রহণ হবে ৫ জুন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এসব পদে ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না।
মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা ওই প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা।
তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ইসির তথ্য অনুযায়ী বালিয়াডাঙ্গি (ঠাকুরগাঁও) উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, হাকিমপুরে (দিনাজপুর) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সাঘাটায় (গাইবান্ধা) চেয়ারম্যান, বেড়ায় (পাবনা) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সিংড়ায় (নাটোর) চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, বাগেরহাট সদরে সব পদ, মুন্সীগঞ্জ সদরে সব পদ, শিবচরে (মাদারীপুর) সব পদ, বড়লেখায় (মৌলভীবাজার) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পরশুরামে (ফেনী) সব পদ, সন্দ্বীপে (চট্টগ্রাম) ভাইস চেয়ারম্যান, কক্সবাজার সদরে ভাইস চেয়ারম্যান, রোয়াংছড়িতে (বান্দরবান) চেয়ারম্যান, কাউখালীতে (রাঙামাটি) ভাইস চেয়ারম্যান এবং চুয়াডাঙ্গার ডামুহুদায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন পড়বে না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এসব পদে একক প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে দেড়শ’ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ না করেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। তিনি সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই আদেশের ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করতে হবে না।
কুষ্টিয়া ও সিলেটের দুটি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রশ্নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আনা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিল উচ্চ আদালত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক থাকার পরও দেশি-বিদেশি চক্র অপপ্রচার মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে তো বটেই বাইরেও নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে দেখছি।
মঙ্গলবার সকালে গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত প্রচারপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি চিহ্নিত অপশক্তি দেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকার নস্যাৎ করতে নির্বাচনবিরোধী অপতৎরতায় লিপ্ত রয়েছে। গণতন্ত্র, শান্তি, উন্নয়ন নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ও প্রগতিশীল শক্তির কাছে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তি আমাদের ভিত্তিমূলে আঘাত করতে যাচ্ছে। তাদের আমাদের প্রতিহত করতে হবে, সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্য জনগণকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট দিয়ে আপনার নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণ সব শক্তির উৎস।
তিনি বলেন, দেশবিরোধী অপশক্তি জাতির পিতার পরিবারকে হত্যা করে জনগণকে সামরিক স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে দীর্ঘকাল পিষ্ট করেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করেছেন।
মন্তব্য