× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
ভিক্ষু থেকে অস্ত্র হাতে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই
google_news print-icon

ভিক্ষু থেকে অস্ত্র হাতে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই

ভিক্ষু-থেকে-অস্ত্র-হাতে-জান্তার-বিরুদ্ধে-লড়াই
মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষু চিয়াও সোয়ার হিতা এখন জর্জ মাইকেল নাম নিয়ে সশস্ত্র লাড়াই করছেন সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। ছবি: ভাইস
বিহারের শান্ত সৌম্য পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে দমন পীড়নের বিরুদ্ধে ভিক্ষুদের বিক্ষোভে যোগ দেয়ার অতীত ইতিহাস আছে। এবারও সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কিছু সংখ্যক ভিক্ষুর অবস্থান পরিষ্কার।

মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামীদের ওপর চলছে সামরিক জান্তার নির্মম নির্যাতন। এমন অবস্থায় অনেকেই বেছে নিয়েছেন সশস্ত্র সংগ্রামের পথ। এমনই একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জীবন কাহিনী তুলে ধরেছে সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার

বেশ কয়েকবার নাম বদলানো চিয়াও সোয়ার হিতা একজন সাবেক ভিক্ষু। এখন পরিচয় দেন জর্জ মাইকেল নামে। প্রতিবেলা খাবার খাওয়ার সময় তার মনে হয়, এটাই বোধহয় শেষ খাওয়া। প্রয়োজনে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা জীবন দিতেও প্রস্তুত। প্রত্যেকের ইউনিফর্মের বুক পকেটে একটা করে গ্রেনেড। যেটি শত্রুর দিকে ছুড়ে মারার জন্য নয়, রাখা হয়েছে মিয়ানমারের সৈনিকদের হাতে ধরা পড়ার আগে নিজেকে উড়িয়ে দেয়ার জন্য।

৩৩ বছর বয়সী এই ভিক্ষুর সঙ্গে যোগাযোগ হয় ফোনে। পূর্ব মিয়ানমারের অজ্ঞাত কোনো জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি বলেন, ‘আমরা কখনওই আত্মসমর্পণ করব না। তারা আমাদের ধরতে পারলেও, শুধু আমাদের মৃতদেহই পাবে। জীবিত পাবে না। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমরা লড়ে যাব।’

১ ফ্রেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চিকে উৎখাতের পর মিয়ানমারের ওই অঞ্চলেই জান্তাবিরোধীরা জড়ো হয়েছেন।

অস্ত্র হাতে লড়াইরত এই সাবেক ভিক্ষুর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়গুলো তার বদলাতে থাকা নামের মধ্যেই পাওয়া যায়। নাম পালটানো মিয়ানমারে স্বাভাবিক ঘটনা। চিয়াও সোয়ার হিতায় হিসেবেই আগে তাকে সবাই চিনতেন। ভিক্ষু হওয়ার পর উ চেয়থারা নাম গ্রহণ করেন তিনি। সবশেষ ভিক্ষুর পোশাক ত্যাগের পর নিজেকে জর্জ মাইকেল হিসেবে পরিচয় দেন। বিখ্যাত পপস্টারের নাম হলেও এই মিল আসলে কাকতালীয়।

কিছুদিন আগেও কারেন রাজ্যের একেবেঁকে চলা পাহাড়ি পথ ও জঙ্গলগুলোতে আদিবাসী সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ লেগে থাকত। কিন্তু গণতন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া অভ্যুত্থানের পর থাইল্যান্ডের সীমান্তের কাছের এই জঙ্গলে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে যোগ দিয়েছেন কবি, গায়ক, এমনকি সাবেক এক সুন্দরী মডেলও।

ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও প্রতিবাদের জায়গা নিয়েছে নতুন পদ্ধতি, যেখানে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাশাপাশি শহরেও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বড় শহর মান্দালায়ের গত মাসে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বোমা বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর নিয়মিত শিরোনাম হতে থাকে।

বিহারের শান্ত সৌম্য পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে দমন পীড়নের বিরুদ্ধে ভিক্ষুদের বিক্ষোভে যোগ দেয়ার অতীত ইতিহাস আছে। এবারও সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কিছু সংখ্যক ভিক্ষুর অবস্থান পরিষ্কার। তবে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির ধর্মীয় নেতাদের কয়েক জন সামরিক জান্তার সঙ্গে হাতও মিলিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হরসি বলেন, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অনেকেই সশস্ত্র আন্দোলন করেছেন; তাদেরই একজন ছিলেন সায়া সান। যিনি ভিক্ষুর বেশ ত্যাগ করে ব্রিটিশবিরোধী কৃষক আন্দোলনে অংশ নেন।’

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে ৯০ এর দশকে ভিক্ষু উ থুজানা ডেমোক্র্যাটিক কারেন বুদ্ধিস্ট আর্মির বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।

হরসি আরও বলেন, ‘ভিক্ষুদের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়াটা খুব অস্বাভাবিক বিষয় নয়। মিয়ানমারের নানা শ্রেণির মানুষ অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করছেন এবং জনগণের ওপর শাসকদের নিপীড়নের জন্য সবাই ক্ষুব্ধ। সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় যাওয়া থেকে বিরত রাখতে অস্ত্র হাতে নেওয়া নেয়াসহ যেকোনো কিছু করতেই তারা প্রস্তুত।’

২০০৭ সালে তৎকালীন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে স্যাফ্রন রেভোল্যুশন সংঘটিত হয়, যাকে কঠোর ভাবে দমন করে সামরিক বাহিনী। ওই আন্দোলনের অন্যতম নেতা উ গামবিরা এবার মাইকেলের লড়াই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

২০০৭ আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে চার বছর জেল খাটতে হয় গামবিরাকে। তাকে কারাগারে নির্যাতন করা হয়, যার যন্ত্রণা তিনি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। ২০১২ সালে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান গামবিরা। তবে রাজনৈতিক বন্দি হওয়ার কারণে কোনো বিহার তাকে গ্রহণ করেনি। ভিক্ষু পরিচয় ছেড়ে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়েছে।

মাইকেল বিহার ছেড়ে দেয়ায় কষ্ট পেয়েছেন গামবিরা। তবে একই সঙ্গে তার কিছুটা গর্ববোধও রয়েছে। গামবিরা বলেন, ‘এটা তার (মাইকেল) ব্যক্তিগত চাওয়া ছিল না। দেশ ও জনগণের ডাকে তিনি ভিক্ষুর জীবন ত্যাগ করেছেন।’

কয়েকদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে রেডিও ফ্রি এশিয়ার মিয়ানমার শাখাকে মাইকেল তার পুরনো এবং বর্তমান জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক ফারাকের কথা জানান।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যখন ভিক্ষু ছিলাম তখন হত্যা করা নিষেধ ছিল। আর এখন আমরা হত্যার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আমি জানি না যুদ্ধে আমি আসলেই কাউকে হত্যা করতে পারব কিনা। আগে কাউকে হত্যা করা তো দূরের কথা, অন্যদেরকে আমি হত্যা করতে বারণ করতাম। অথচ এখন সৈনিক হিসেবে আমি হত্যা করতে প্রস্তুত।’

মাইকেল এখন অধিকাংশ সময় জঙ্গলে কাটান। তিনি জানান, সঙ্গে ছোট একটা দল আছে, যারা মিয়ানমারের সৈনিকদের বিরুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধ করছে। এখন তিনি ‘পিছু না হটার’ নীতিতে বিশ্বাসী।

তিনি বলেন, “আমাদের স্লোগান হচ্ছে ‘ম্যাগাজিন খালি হয়ে গেলে তাদের লাকড়ি দিয়ে মার।’”

ইয়াঙ্গুনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা মাইকেল, চার সদস্যের পরিবারের ছোট ছেলে। ছোটবেলায় তার পরিবার হ্লাইং থারিয়ার অঞ্চলে আসেন। মাইকেলের বয়স যখন ১০ বছর তখন তার বাবা মারা যান। তারপরও তার শৈশব আনন্দে কেটেছে। আর পারিবারিক ব্যবসাও ভালো যাচ্ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমি দারুণ একটা জীবন পেয়েছি। মাঝে মাঝে আমার পরিবারের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত আদরও পেতাম।’

২০ বছর বয়সে মা তাকে ভিক্ষু হতে বলেন। ক্যান্সারের রোগী হিসেবে ছেলেকে ভিক্ষুর গেরুয়া পোশাকে দেখতে পাওয়ার তার জন্য ছিল শান্তির।

শ্রমজীবী মানুষ ও পোশাক শ্রমিকেরা থাকেন হ্লাইং থারিয়ারে, যেটি ইয়াংগুনের দরিদ্রতম এলাকাগুলোর একটি। দাতব্য কাজের জন্য মাইকেলের বিহারটি দ্রুত পরিচিতি লাভ করে।

তিনি জানান, গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় ও খাবার এবং জনসাধারণকে জরুরি সহায়তা দিতেন ভিক্ষু থাকার সময়।

তবে দেশের অনেকের মতোই ১ ফেব্রুয়ারির পরের দিনগুলোতে মাইকেল তার চোখের সামনে ঘটা দৃশ্যে প্রচণ্ড মর্মাহত হন। ওইদিন অং সান সুচিকে গ্রেপ্তারের পর ইন্টারনেট কেটে দেয়া হয় এবং ভয়াবহ শক্তি প্রয়োগের আগে মাত্র কয়েক দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মেনে নেয়া হয়।

শুরুর দিককার নৃশংস দমন পীড়ন দেখে মাইকেল তার বিহার ছেড়ে সেফ হাউসে ওঠেন এবং বিক্ষোভে অংশ নিতে শুরু করেন। আন্দোলনের একটি ছবিতে তাকে দেখা যায় ফুলের তৈরি হার্ট আকৃতির মালা উঁচিয়ে রেখেছেন। মার্চে হ্লাইন থারিয়ারে অসংখ্য লোককে হত্যা করা হলে তিনি ভিন্ন পথ অবলম্বনের চেষ্টা করেন।

মাইকেল বলেন, ‘তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। যে কারণে বিপ্লবীদের আন্দোলনে যোগ দেই, আমি তখন ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলাম।’

মার্চে যখন মাইকেল পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পান। তবে তাকে দ্রুত পালাতে হয়, কারণ সামরিক জান্তা তার বিপ্লবী কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে জেনে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘মাকে বিদায় জানানোর যথেষ্ট সময় পাইনি। আমি তার সমাধিফলকের রংটাও জানি না।’

বাসে চেপে ইয়াংগুন থেকে পালান মাইকেল। ভিক্ষু বেশের কারণে বিভিন্ন চেকপয়েন্টে তাকে সৈন্যরা খেয়াল করেনি।

পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে তিনি দেশের অন্যতম বড় সশস্ত্র বাহিনী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অধিকৃত মুক্ত অঞ্চলে পৌঁছান।

মাইকেল ওই এলাকায় নতুন আসা অন্যদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। শিগগিরই তিনি ফ্রন্ট লাইনারদের ছোট একটা গ্রুপের নেতৃত্ব পান ও কৌশলগত পোস্টগুলি রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত হন।

তারা এখন প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন। মাইকেলের অধীনে অস্ত্র পরীক্ষা করা হয়। সবাই সকালের অনুশীলন শেষে ৮টার দিকে নাস্তা সারেন। এরপর দুপুরে খাওয়ার আগ পর্যন্ত আবার চলে প্রশিক্ষণ। দুপুরের পর চলে ক্লাস। ৬টায় রাতের খাবার খেয়ে তারা জঙ্গলে ফিরে যান ও রাতের শোবার জন্য একটা যুতসই জায়গা খুঁজে বের করেন।

সম্ভাব্য বিমান হামলা থেকে রক্ষা পেতে তারা কেউ ক্যাম্পে ঘুমান না। বহু বছর পর ওই এলাকায় বিমান হামলা শুরু হয়েছে।

মাইকেল জানান, তার জীবন পালটে গেলেও মানুষকে সেবা করার মানসিকতা বদলায়নি। এখন তিনি তাদেরকে সাহায্য করছেন, যারা ‘গণতন্ত্র ও সত্যের’ পক্ষে।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশেষ
Israel has begun to evacuate Palestinians from Gaza

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ শুরু করেছে ইসরায়েল

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ শুরু করেছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ শুরু করেছে। গতকাল রোববার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তাঁবুতে থাকা একটি শিশু এবং ত্রাণ প্রত্যাশী লোকজনসহ কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, গাজা শহরের দক্ষিণ জেইতুন এলাকা থেকে হাজার হাজার বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। সেখানে কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে শহরের হামাস-নিয়ন্ত্রিত পৌরসভা বিবিসিকে জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজা শহর থেকে দশ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক দক্ষিণে শিবিরে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে। গাজার বাসিন্দাদের ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য’ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছিটমহলের দক্ষিণে স্থানান্তরিত করার আগে রবিবার থেকে তাদের তাঁবু এবং অন্যান্য আশ্রয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখল এবং সেখানকার জনগণকে স্থানচ্যুত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। এরপর থেকেই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা।

গাজা সিটি পৌরসভার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছয় দিনের টানা ইসরায়েলি বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের পর জেইতুনে ইতিমধ্যেই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ঘটছে।

গাজায় দুর্ভিক্ষে একদিনে ৭ জনের মৃত্যু

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও সাত ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। রোববার (১৭ আগস্ট) স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মৃত ৭ জনের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন এই প্রাণহানির ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ১১০ জন শিশু রয়েছে।

যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল ২০২৩ সাল থেকে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজার সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে এই অঞ্চলের ২৪ লাখ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজারে পৌঁছেছে। একই সময়ে দেড় লাখের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরে আছেন।

চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে একটি পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করেছে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী ত্রাণ সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংসপ্রায় গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এক্সবার্তায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বর্তমানে চিকিৎসা ও মানবিক বিবেচনায় অল্পসংখ্যক অস্থায়ী মার্কিন ভিসা প্রদান করা হচ্ছে, তা আমরা পূর্ণ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা প্রদান করা স্থগিত থাকবে।’

কয়েক দিন আগে মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ‘হিল’-এর সহায়তায় চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয় গাজায় ইসরাইলি অভিযানে গুরুতর আহত ৩ ফিলিস্তিনি শিশু এবং তার পরিবারের সদস্যদের। ১৬ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য উল্লেখ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মার্কিন কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী লরা লুমের।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত লরা লুমের এক্সে পোস্ট করা সেই বার্তায় বলেন, ‘কীভাবে ইসলামিক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশ করতে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে?’

পোস্টটি দেওয়ার পর সেটির কমেন্ট সেকশনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা-কর্মী-সমর্থক লরা লুমেরকে সমর্থন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে মন্তব্য করা শুরু করেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা প্রদান স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে এক্সবার্তা দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য

বিশেষ
Malala of deep mourning for the flood victims of Pakistan

পাকিস্তানের বন্যা দুর্গতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ মালালার

পাকিস্তানের বন্যা দুর্গতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ মালালার

পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সংহতি জানান।

তিনি লিখেছেন, ‌‘পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তান থেকে আজাদ জম্মু ও কাশ্মির, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের, সোয়াত, বাজাউর ও শাংলায় যে ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের জন্য আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে।’

মালাকান্দ ডিভিশনের নয়নাভিরাম শাংলা জেলাই মালালার জন্মভূমি। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পিডিএমএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু শাংলায়ই ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মানসেহরায় ২৩, সোয়াতে ২২, বাজাউরে ২১, বাত্তাগ্রামে ১৫, লোয়ার দিরে ৫ এবং আবোটাবাদে ১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্যায় ১১টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৩টি। সোয়াতের দুটি ও শাংলার একটি বিদ্যালয়ও ক্ষতির শিকার হয়েছে।

মালালা আরও লিখেছেন, ‌‘যারা প্রিয়জন, ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।’

পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রবল মৌসুমি বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৪ জনই খাইবার পাখতুনখোয়ায় মারা গেছেন। বেশিরভাগই আকস্মিক বন্যা ও ঘরবাড়ি ধসে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১৩৭ জন।

প্রাদেশিক উদ্ধার সংস্থা জানিয়েছে, নয়টি জেলায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে অব্যাহত বৃষ্টিপাত কাজ ব্যাহত করছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষা অধিকার নিয়ে সোচ্চার মালালা চলতি বছরের মার্চে নিজের গ্রাম শাংলার বারকানায় ফিরে যান। ২০১২ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর এটাই ছিল তার জন্মভূমিতে প্রথম প্রত্যাবর্তন। যদিও ২০১৮ সালে পাকিস্তান সফরে এসে তিনি শাংলায় যেতে পারেননি।

স্মরণযোগ্য, ২০১২ সালে সোয়াত উপত্যকায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সন্ত্রাসীরা স্কুল বাসে হামলা চালিয়ে তাকে গুলিবিদ্ধ করে। পরে তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। এরপর থেকে তিনি বিশ্বব্যাপী নারী শিক্ষার পক্ষে সোচ্চার হন এবং মাত্র ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি পান।

মন্তব্য

বিশেষ
Netanyahus Greater Israeli comments condemned the Muslim world of the Muslim world  

নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যে মুসলিম বিশ্বের ৩১ দেশের নিন্দা  

নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যে মুসলিম বিশ্বের ৩১ দেশের নিন্দা  

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কথিত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যের বিরুদ্ধে একযোগে নিন্দা জানিয়েছেন আরব ও ইসলামি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীদের ফিলিস্তিন ভূখণ্ড বিভক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই নিন্দা জানান তারা।

গতকাল শনিবার যৌথ বিবৃতিতে ৩১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আরব লীগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) প্রধানরা এই নিন্দা জানান।

সৌদি প্রেস এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রীপরিষদের বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের এক নির্লজ্জ ও বিপজ্জনক লঙ্ঘন এবং এটি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যে সরাসরি হুমকি।

বিবৃতিতে সই করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে - সৌদি আরব, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বাহরাইন, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিশর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। এছাড়া আরব লীগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের মহাসচিবরাও বিবৃতিতে যুক্ত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘ সনদের ২ নম্বর অনুচ্ছেদ, ৪ নম্বর প্যারাগ্রাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘যেখানে বলপ্রয়োগ বা বলের হুমকি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে আমরা শান্তি রক্ষায় সকল নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করব, যা সকল রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করবে।’

তারা ইসরায়েলি কট্টরপন্থি মন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের পশ্চিম তীরের তথাকথিত ‘ই ওয়ান’ এলাকায় বসতি পরিকল্পনার অনুমোদন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতামূলক বর্ণবাদী বক্তব্যেরও তীব্র প্রতিবাদ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের ‘আগ্রাসন, গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের অপরাধ’ এর নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের গণহত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত পরিকল্পিত অনাহার নীতির অবসান ঘটাতে নিঃশর্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানান তারা।

এদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোও এই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জার্মানি সতর্ক করে বলেছে, ‘ই ওয়ান’ বসতি এবং মা’আলে আদুমিম সম্প্রসারণ পশ্চিম তীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফিলিস্তিনিদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করবে এবং পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।

তারা সতর্ক করে বলেন, ‘ইসরায়েলের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, ফিলিস্তিনিদের, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকারকে অগ্রাহ্য করছে। এটি সরাসরি সহিংসতা ও সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছে এবং ন্যায়সঙ্গত ও বিস্তৃত শান্তি অর্জনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে।’

প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল ২০২৩ সাল থেকে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

মন্তব্য

বিশেষ
More than 20 percent of Gaza suffers from malnutrition UNRWA

গাজার ২০ শতাংশের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে: ইউএনআরডব্লিউএ

গাজার ২০ শতাংশের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে: ইউএনআরডব্লিউএ

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজার ২০ শতাংশেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধ ও অবরোধের ফলে পানি শূন্যতা বেড়ে চলেছে। খবর প্রেস টিভির।

গত শুক্রবার ইউএনআরডব্লিউএ এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, গাজায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে। সীমিত পানি সরবরাহের কারণে পানি শূন্যতা বেড়ে চলেছে।

জাতিসংঘের সংস্থাটি তাদের সর্বশেষ মিড-আপার আর্ম সার্কামফারেন্স (এমইউএসি)-ভিত্তিক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গাজা সিটিতে শিশুদের অপুষ্টির হার ২১.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় প্রতি পাঁচজন ছোট শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছেন এমন শিশুদের শনাক্ত করার জন্য এমইউএসি একটি বহুল ব্যবহৃত নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ।

সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানায়, ইউএনআরডব্লিউএর কর্মীরা ‘অত্যন্ত ক্লান্ত, মানসিকভাবে চাপে আছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হচ্ছেন।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় এই অঞ্চলে কমপক্ষে একজন শিশু অনাহারে মারা গেছে, যার ফলে ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর মোট সংখ্যা ২৪০ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৭ জন শিশু রয়েছে।

ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, গাজা উপত্যকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো গুরুতর অপারেশনাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার ব্যাপক ক্ষতি, নিরাপদ চলাচলে বাধা এবং চিকিৎসা সরবরাহ ও জ্বালানি প্রবেশের উপর ইসরায়েলি বিধিনিষেধ।

জাতিসংঘের সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরবরাহের অভাব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে সংকটের মধ্যে ফেলেছে, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ও সংক্রামক রোগে ভুগছেন এমন রোগীরা প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে করে ব্যাপকভাবে জনস্বাস্থ্য সংকটের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের কয়েক দশক ধরে আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা (হামাস) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম পরিচালনা করে। এর জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬১ হাজার ৮২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার আগে গত ২ মার্চ থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় সব ধরনের মানবিক ত্রাণের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এতে গাজায় মানবিক সংকটকে আরো ভয়াবহ হয়ে পড়েছে।

গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৬০ জনের মৃত্যু

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস শুক্রবার জানিয়েছে যে, মে মাসের শেষের দিক থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গত মে মাসে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে বিতর্কিত সংস্থা ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়মিত গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে।

ফিলিস্তিনিদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৭ মে থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৭৬০ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৯৪ জন জিএইচএফের সাইটের আশেপাশে এবং ৭৬৬ জন ত্রাণ সরবরাহের বিভিন্ন রুটে নিহত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে সংঘটিত হয়েছে।

গত ১ আগস্ট জাতিসংঘের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ১,৩৭৩ জন বলা হয়েছিল। এরপরেও প্রায় প্রতিদিনই ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিনিরা নিহত হচ্ছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে ১২ জন মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, তাদের সেনারা হামাসের সামরিক সক্ষমতা ভেঙে ফেলার জন্য কাজ করছে এবং আরও জানিয়েছে যে তাদের সদস্যরা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

বুধবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান বলেন, গাজায় নতুন আক্রমণের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে, যার লক্ষ্য হামাসকে পরাজিত করা এবং বাকি সকল জিম্মিকে মুক্ত করা।

সেনাবাহিনী গাজা শহর এবং এর কাছাকাছি শরণার্থী শিবিরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। প্রায় দুই বছর ধরে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় সংঘাত চলছে।

শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে, তাদের সৈন্যরা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছে। ইসরায়েলি সরকারের যুদ্ধ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র নিন্দার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবেও বিরোধিতার জন্ম দিয়েছে।

জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই অঞ্চলে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কারণ ইসরায়েল সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬১ হাজর ৮২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

মন্তব্য

বিশেষ
The attempt to stop the war is becoming complicated Zelnsky

যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা জটিল হয়ে উঠছে: জেলেনস্কি

যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা জটিল হয়ে উঠছে: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ তাঁর অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাশিয়া একের পর এক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করছে। কবে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে তা এখনও জানি না। এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।’ খবর-বিবিসি

সোমবার জেলেনস্কি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন। এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে শান্তি চুক্তিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানাবেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিনের সাথে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নয়, স্থায়ী শান্তি চুক্তির দিকে যেতে চান। শুক্রবার আলাস্কায় পুতিনের সাথে বৈঠকের পর ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ এ লিখেছেন, ‘এটি হবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ, যুদ্ধবিরতি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়’।

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের পর জেলেনস্কিকে ফোন করে প্রকৃত ও স্থায়ী শান্তি চুক্তি করার আহ্বান জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আগুন থামাতে হবে, হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে’। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি মস্কোর সঙ্গে টেকসই ও নির্ভরযোগ্য শান্তি প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে- বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং ক্রেমলিন কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চল থেকে অপহৃত শিশুদের মুক্তি দেওয়া।

ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যুদ্ধের স্থায়ী অবসান নিয়ে তার অবস্থানের বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। কেননা, আলাস্কা বৈঠকের আগেই তিনি বলেছিলেন, তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতি চান। বরাবরই ইউক্রেনের প্রধান দাবি ছিল- দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও পরে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিয়ে আলোচনা। আর ট্রাম্পও ইউরোপীয় নেতাদের আগেই জানিয়েছিলেন যে, তার লক্ষ্য হচ্ছে শীর্ষ বৈঠকে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা।

পুতিন ট্রাম্পকে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে ডনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে, এবং এর বিনিময়ে রাশিয়া জাপোরিঝিয়া ও খেরাসনের সম্মুখভাগে যুদ্ধ স্থগিত করবে।

রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অবৈধভাবে দখল করে নেয়। পরে আট বছর পর পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু করে। তারা ডনবাসকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে এবং বর্তমানে লুহানস্কের বেশিরভাগ অংশ এবং দোনেৎস্কর ৭০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই বলেছিলেন, যে কোনো শান্তিচুক্তিতে ‘অঞ্চলের বিনিময়ের বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে। বৈঠকের পর ট্রাম্প ফোনে সেই প্রস্তাব জেলেনস্কির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। মাত্র কয়েক দিন আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস ইউক্রেন হস্তান্তর করবে না। কেননা পরবর্তীতে এটিকেই আগ্রাসনের জন্য ব্যবহার করতে পারে।

বিবিসির অংশীদার সিবিএস কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ইউরোপীয় কূটনীতিকরা উদ্বিগ্ন যে, ট্রাম্প সোমবার জেলেনস্কিকে চাপে ফেলতে পারেন, যাতে তিনি বৈঠকে আলোচিত শর্তগুলো মেনে নেন। সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতাদের ফোন করে বলেছেন পুতিন ‘কিছু ছাড়’ দিতে রাজি, তবে তিনি বিস্তারিত জানাননি।

মন্তব্য

বিশেষ
The death toll in Pakistan has increased to 120

পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৭

পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৭

পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৭ এ পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) এর বরাত দিয়ে ডন অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশি। গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে নজিরবিহীন বন্যায় যথাক্রমে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে, পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞও ঘটেছে।

গত শুক্রবার খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং মেঘ ভাঙনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় একদিনে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে মোহমান্দে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের সময় বিধ্বস্ত প্রাদেশিক সরকারের একটি হেলিকপ্টারের পাঁচজন ক্রু সদস্যও রয়েছেন।

পিডিএমএর পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রদেশে গত ৪৮ ঘন্টায় ২০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ১২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৫০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

বুনেরে ১৮৪ জন, অ্যাবোটাবাদে শাংলায় ৩৬ জন, মানসেহরা ২৩ জন, সোয়াত ২২ জন, বাজাউরে ২১ জন, বটগ্রাম ১৫ জন, লোয়ার দিরে পাঁচজন এবং দুবেতে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গিলগিট-বালতিস্তান এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরে কমপক্ষে ১২ জন এবং নয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

বেসরকারি সংস্থা আল-খিদমত ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ খালিদ সিনহুয়া বলেন, ‘বন্যায় গ্রামগুলো ডুবে যাওয়ায় পুরো পরিবার ভেসে গেছে, অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসের ফলে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’

পিডিএমএ এএফপিকে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং নয়টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

রেসকিউ ১১২২ এর মহাপরিচালক মুহাম্মদ তৈয়ব আবদুল্লাহ ডন ডটকমকে জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় অভিযান ‘তীব্র অসুবিধার’ সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে ৮০ জনের একটি বিশেষ উদ্ধার দল গঠন করা হয়েছে।

দাফনের মতো লোকও নেই এক গ্রামে

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের স্থানীয় ইমাম মওলানা আব্দুল সামাদ অন্য গ্রামবাসীর মতো তার পরিবারকেও দ্রুত বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন।

তিনি তখন নফল নামাজ পড়ছিলেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তার বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

পাকিস্তানের সরকারি হিসাবে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে গত ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।

সেখানকার প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩০৭ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। পিডিএমএ -এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে ২৭৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী এবং ১৩ জন শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ, চার জন নারী এবং দুই জন শিশু রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৩টি আংশিক এবং ১১টি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

এমন দুর্ঘটনা প্রদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন সোয়াত, বুনের, বাজাউর, তোরঘর, মানসেহরা, শাঙলা এবং বটগ্রাম। বন্যায় পুরো বাড়ি ভেসে যাওয়ার সময় আব্দুল সামাদের পরিবারের পাঁচজন সদস্য ছিলেন ভেতরে। তারা এখনো নিখোঁজ। কেউ তাদের খবর জানে না।

সেই সময় পীর বাবা সাহেব উপজেলার প্রাক্তন কর্মকর্তা বা তহসিল নাজিম আশফাক আহমদ ইসলামাবাদে ছিলেন। যখন তিনি তার বাড়ি থেকে খবর পান যে বিশাল বন্যা হানা দিতে পারে, তিনি তখনই তার পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন

কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে কারও কোনো খোঁজ মেলেনি। এমনকি পুরো গ্রামের কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এই উদ্বেগজনক অবস্থায় তিনি যখন তার গ্রামে পৌঁছান, তখন সর্বত্র কেয়ামতের দৃশ্য দেখা যায়। পুরো গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাড়ি-ঘর বিনষ্ট হয়ে গেছে, আহতরা এখানে সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে।

মন্তব্য

বিশেষ
Chinas top diplomat is going to visit India to discuss border

সীমান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত সফরে যাচ্ছেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক

সীমান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত সফরে যাচ্ছেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক

দুই দেশের যৌথ সীমান্ত সংক্রান্ত নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে ভারত সফর করবেন চীনের প্রধান কূটনীতিক। একই সঙ্গে দুই দেশ পাঁচ বছর বন্ধ থাকা সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনাও পরীক্ষা করছে।

শনিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কথা জানিয়েছে। বেইজিং থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ১৮ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফর করবেন এবং চীন-ভারত সীমান্ত ইস্যুতে ২৪তম বিশেষ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে যোগ দেবেন।

শীতল ও উচ্চভূমি হিমালয় সীমান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অতীতে বাণিজ্য সাধারণত সামান্য পরিমাণে হলেও পুনরায় শুরু হওয়া তা প্রতীকী দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে সীমান্তে সৈন্যদের মধ্যে প্রাণহানিকর সংঘর্ষের পর বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আলোচনা করতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং সোমবার নয়াদিল্লি সফরে আসবেন। গত জুলাই মাসে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করও বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন।

দুইটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করে আসছে।

তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট বিশ্ব বাণিজ্য এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তারা আটকে থাকা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে গেছে।

কয়েক সপ্তাহে চীনা ও ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে দুই দেশ সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করছে।

পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করার এবং পর্যটক ভিসা প্রদান সংক্রান্ত চুক্তিগুলো তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মন্তব্য

p
উপরে