পটুয়াখালীতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ শয্যা পাঠানো হয়েছে, সেগুলো আড়াই মাসেও স্থাপনই করা যায়নি।
ভোলারগুলো তা-ও স্থাপন করা গেছে, কিন্তু চালানোর লোক নেই। রাজবাড়ীতে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন-সুবিধা।
বাগেরহাটে অক্সিজেন নিয়ে সমস্যা নেই। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য তিন শয্যার ইউনিট উপহার দিয়েছেন, কিন্তু চিকিৎসকের দক্ষতা নেই সেগুলো চালানোর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের জেলা মানিকগঞ্জের কথা না বললেই নয়। সাড়ে ছয় বছর আগে সেখানে আইসিইউ ইউনিট চালু হলেও একজন রোগীকেও সেবা দেয়া যায়নি। কারণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা নার্স নেই।
করোনাকালে জেলায় জেলায় আইসিইউ স্থাপন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের চিত্র হলো এই।
এর প্রধান কারণ হচ্ছে, শয্যা পাঠালেও চিকিৎসক ও নার্স প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। কোথাও আবার নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন-সুবিধা।
কোথাও কোথাও আবার টেকনিশিয়ান নেই, যারা শয্যাগুলো বসাবে। বিস্ময়কর হলো, এমন জেলায় দ্বিতীয়বারের মতো পাঠানো হয়েছে শয্যা। ফলে এসব জেলায় আইসিইউ সেবার নয়, দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইউনিট পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। সেগুলো পরিচালনার বিষয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে যে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে।
গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর আইসিইউ এর স্বল্পতার বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি কথা হচ্ছে এ কারণে যে, আক্রান্তদের অনেককে এই সুবিধা দিতে হয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাইরাসটির ভারতীয় ধরনে আরও বেশি লাগে এই সুবিধা।
এই এক বছরে দেশে আইসিইউ-সুবিধা বেড়েছে বটে, তবে তা রাজধানীতেই বেশি। অথচ এখন করোনার প্রকোপ বেশি মফস্বল শহর ও গ্রাম এলাকায়।
এই পরিস্থিতিতে জেলা শহরে পাঠানো শয্যাগুলো থেকে রোগীরা আদৌ কোনো সুবিধা পাচ্ছেন কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এই চিত্র খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের জেলার চিত্র
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের উত্তর পাশের পুরোনো ভবনে দুই শয্যার আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। কিন্তু সেটি পরিচালনায় জনবল ছিল না। তাই কক্ষে ঝোলে তালা।
সাড়ে ছয় বছর পর চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনে আইসিইউ ইউনিটটি হস্তান্তর করা হয় এবং দুটি শয্যা বেড়ে হয় ৫টিতে। নতুন করে আইসিইউর মালামাল কেনা হয়। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুাবধার কারণে হাসপাতালের পুরনো ভবন থেকে আটতলা হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার পশ্চিম পাশে আইসিইউ শয্যাগুলো হস্তান্তর করা হয়। কেনাও হয় নতুন মামলাল ও চিকিৎসা সরাঞ্জাম।
কিন্তু ভেতরের চিত্র একেবারে সাধারণ শয্যার চেয়েও খারাপ অবস্থা। এলোমেলো ও অগোছালোভাবে রয়েছে শয্যা। এখানে সেখানে পড়ে রয়েছে চেয়ার ও বসার টুল। ময়লা পড়ে আছে আইসিইউ শয্যায়।
কোনো কোনো শয্যার পলিথিনও খোলা হয়নি এখনও। কোনোটির আবার চাদরও নেই। দেখে মনে হবে লোক দেখানোর জন্য করা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য নয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘আইসিইউ এর জন্য যা প্রয়োজন সব করা হয়েছে এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা করা আছে। কিন্তু রোগী না থাকায় আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে।’
তিনি জানান, আইসিইউ পরিচালনার জন্য দুই জন চিকিৎসক ও ছয়জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে আইসিইউর জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসক নাই।
আইসিইউ আছে অক্সিজেন নেই
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ২০ শয্যা করোনা ইউনিটে গত ১৯ এপ্রিল তিনটি আইসিউ শয্যা স্থাপন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সেবা পাননি সেখান থেকে। এর কারণ, অবকাঠামোগত অন্যান্য সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা যায়নি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দীপক কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এর কাজ চলছে। এটার কাজ এই মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে আমাদের আইসিইউ চালানোর মতো সম্পূর্ণ দক্ষ নার্স নেই। এটার জন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চাহিদা হিসেবে চিঠি দিয়েছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি জানান চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে শূন্য ২৬টি।
তবে সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটোন দাবি করছেন, তারা রোগীদের সেবা দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলাদা কোন জনবল নার্স বা ডাক্তার নেই, তবে যা আছে এইগুলো দিয়ে আমি আইসিইউ চালাতে পারব, এরা আইসিইউ চালাতে পারবে।’
তবে একইসঙ্গে বিপরীতধর্মী বক্তব্য দিয়ে তিনি চিকিৎসকের অভাবে সেবা হিমশিম খাওয়ার কথাও জানান।
এমপির দেয়া আইসিইউ বেগার পরে
গত ২৩ এপ্রিল বাগেরহাট সদর আসনের সংসদ সদস্য শেখ সাহরান নাসের তন্ময় তিনটি আইসিইউ শয্যা উপহার দেন সদর হাসপাতালকে। ঘটা করে আইসিইউ উদ্বোধন করে চিকিৎসা প্রশাসন।
জেলায় আইসিইউ চালানোর মতো লোকবল না থাকার বিষয়ে নিউজবাংলার এক প্রশ্নে সেদিন সিভিল সার্জনকে এম হুমায়ুন কবির বলেছিলেন, তারা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আনবেন। আড়াই মাস পরেও সেই বক্তব্য পাল্টায়নি।
ফলে আইসিইউ ইউনিট কেবল দেখতেই পারবেন, এর সুবিধা পাবে না বাগেরহাটবাসী।
তবে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
সিভিল সার্জন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও এখানে জনবল আছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের। তার ওপর করোনার জন্য আলাদা ৫০ শয্যা। মোট ১৫০ শয্যার বিপরীতে যে জনবল, তাতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
‘কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য আছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স না থাকায় আমাদের সংসদ সদস্য শেখ সারহান এর দেয়া তিনটি আইসিইউ বেড এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আইসিইউ বেডগুলো চালু করতে হলে প্রশিক্ষিত চিৎকিসক ও নার্স প্রয়োজন। তা না হলে ১০ চিকিৎসক ও ১৫ জন নার্সকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ছাড়া সারা দেশে করোনা ভাইরাসে চলোমান লকডাউনের কারণে এই মুহূর্তে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। ’
তবে তিনটি আইসিইউ শয্যা চালু করতে না পারলেও ১০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ ও ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জুলাই মাসে গণপূর্ত বিভাগ দরপত্র আহ্বান করবে বলেও জানিয়েছেন জেলা চিকিৎসা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
আগেরগুলো চালু হয়নি, তবু নতুন শয্যা
গত ১৮ এপ্রিল ভোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় তিনটি আইসিইউ শয্যা, তিনটি ভেন্টিলেটর ও তিনটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা।
এই হাসপাতালের কর্মীরা জানতেনই না এই শয্যা ও ভেন্টিলেটর কীভাবে স্থাপন করতে হয়। পরে ফোনে শুনে সেগুলো বসানো হয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্তই।
এর মধ্যে ৮ জুলাই সকালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকে নতুন আরও তিনটি আইসিইউ শয্যা ভোলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কিন্তু এগুলো স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত লোকবল সংকটের সমাধান হয়নি। আইসিইউ পরিচালনার জন্য যে দক্ষতার চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান দরকার, সেই ধরনের দক্ষতাও নিশ্চিত করা যায়নি কারও।
জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সিরাজ উদ্দিন এ বলেন, ‘পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১২ জন ডাক্তার ভোলার আইসিইউ ও করোনা ইউনিট পরিচালনার জন্য পাঠানো কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ অনুমোদনটি স্থগিত করেন। আশা করি অনুমোদন হয়ে গেলে পরিপূর্ণ সেবা চালু করা সম্ভব হবে।’
আড়াই মাস ধরে হাসপাতালের বারান্দায়
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় আড়াই মাস ধরে পড়ে আছে ঢাকা থেকে পাঠানো পাঁচটি আইসিইউ শয্যা।
২৪ এপ্রিল ঢাকা থেকে ঢাকা থেকে বেড পাঁচটি ট্রাকযোগে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌঁছে। পরে সেগুলো হাসপাতালের গুদামকক্ষে রাখা হয়। পরের দিন সেখান থেকে শয্যাগুলো হাসপাতালের নতুন ভবনের নীচতলায় নামানো হয়। এখনও সেখানেই পড়ে আছে।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম শিপন বলেন, হাসপাতালের ৮০ শয্যা করোনা ইউনিটের অর্ধেক অংশ নিয়ে ‘আইসিইউ ইউনিট’স্থাপনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আগামী সোম বা মঙ্গলবার ঢাকা থেকে আইসিইউ বেড টেকনিশিয়ান আসবে। তারা এসে পাঁচটি বেড আইসিইউ ইউনিটে বসিয়ে দিয়ে যাবে। এরপর আমাদের শুধু আইসিইউ দক্ষ লোকবল হলেই ইউনিটটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাবে।’
দক্ষ কারিগর বা প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার পরেও কেন এসব সরঞ্জামাদির চাহিদা পাঠানো হলো এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মতিন বলেন, ‘আগে তো মালামাল আনতে হবে তারপর না হয় মিস্ত্রি। আমরা প্রয়োজনীয় জনবল চেয়েছি। আশা করি আইসিইউ এবং সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেমের মতো জনবলও পেয়ে যাব।’
ব্যতিক্রম কেবল লক্ষ্মীপুর
এই হতাশার চিত্রের মধ্যে ব্যতিক্রম একমাত্র লক্ষ্মীপুর। সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের সুফল পেয়েছে জেলার মানুষ।
গত ২২ এপ্রিল করোনা ইউনিটে তিনটি আইসিইউ শয্যা চালুর পর এখন পর্যন্ত ১৭৫ জন রোগী সেবা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে প্রথম দিকে আইসিইউ পরিচালনার বিষয়ে নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু ২ মাসের ব্যবধানে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গফ্ফার।
তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য তারা মোট ৭টি আইসিইউ শয্যা চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯৪ জন। আর চলতি সপ্তাহের এই কয়েকদিনে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে আক্রান্ত হয় সর্বোচ্চ ১৫৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯৪ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০২ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বরিশাল বিভাগের বরগুনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধা রাবেয়া (১০০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার ভোরে তিনি বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বরগুনার বাসিন্দাই রয়েছে ৬ জন। এদিকে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১২৯ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার ভোরে মৃত্যু হওয়া শতবর্ষী রাবেয়া বেগম বরগুনা সদরের বাসিন্দা। তাকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগে তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ৮ জন।
পটুয়াখালী জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৭ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, ভোলা সদর হাসপাতালে ৫ জন ভর্তি হয়েছে। পিরোজপুরে ১৬ জন ও বরগুনায় ৭৩। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশংকাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হবে। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশে-পাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে ঊর্ধ্বগতির আক্রান্তের হারের মধ্যে দেশে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২২ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৯২ জন।
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বরিশাল বিভাগে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৯২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৬ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০৬ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পুরুষ এবং ৫০ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ৩৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
রবিবার (২২ জুন) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নতুন তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনায় মোট মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫১৫ জনে এবং মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জনে।
২৪ ঘণ্টায় ৬২১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নীতকরণের লক্ষ্যে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইবি শিক্ষার্থী তানভীর মাহমুদ মন্ডলের প্রতিনিধিত্বে এই দাবিসমূহ জানানো হয়েছে।
২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতি রয়ে গেছে। একটি উন্নত, মানবিক ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবহন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অপরিহার্য। উপস্থাপিত চার দফা দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের স্থায়ী সংস্কারের লক্ষ্যে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সভার আয়োজন করা, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসাসেবা উন্নতিকরণ এবং কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সিট সার্বক্ষণিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা, পরিবহন পুল থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন অপসারণ এবং চালক ও সহকারীদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা এবং পরিবহন সংকট নিরসনে জরুরিভিত্তিতে নতুন যানবাহন সংযোজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর মন্ডল জানান, ‘স্মারকলিপি দিয়েছি। উল্লেখ করা দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাজীবন উপভোগ করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবনাগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ উপস্থাপন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আশ্বস্ত করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা খুবই যৌক্তিক কিছু দাবি উত্থাপন করেছে৷ কয়েকদিন আগেও আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী বাস-ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এর আগেও এমন দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই মৃত্যু হয়। আর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৫২ জন।
শনিবার (২১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটিতে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর আক্রান্তের হারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে বিভাগটিতে নতুন করে মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৫২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৯০ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।
সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় সাত-আট মাস কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এতে তৃণমুলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা এলাকায় ৪০টি ইউনিয়ন পরিবারকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিভিল সার্জন কর্তৃক সাতটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালিত হয় । বাকিগুলো পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে।
সিভিল সার্জন কর্তৃক পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনটি, লোহাগড়া উপজেলায় তিনটি এবং কালিয়া উপজেলায় একটি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার ওপর গ্রামাঞ্চলের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষগুলো সুস্থ ও সবলভাবে বেচে থাকার জন্য অনেকটিই নির্ভর করে। এসব কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ওষুধ সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ । কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার জেলার কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের অনেক মহিলা চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাদের মুখখানা ছিল মলিন । আবার অনেক কেন্দ্র ছিল ফাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার একটি কক্ষে বসে গল্পে মেতে আছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো.আলাউদ্দীন কেন্দ্রের একটি কক্ষে চুপচাপ বসে আছেন । জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের এখানে ২৫ রকমের ওষুধ বরাদ্দ ছিল। তখন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু-নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে জড়ো হতেন। গত সাত-আট মাস হলো কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই । ফলে কেন্দ্রে রোগীদের তেমন ভিড়ও নেই। শুধু পরিবার পরিকল্পনা কিছু সামগ্রী আছে তাই দিয়ে সেবা চলছে। তিনি বলেন, এখানে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগ হচ্ছে শিশু ও নারী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি হয় না।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হলে তৃণমুলে সাধারণ মানুষ বিপদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো.রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। না হলে গ্রামের কৃষক শ্রেণির মানুষের জীবনের ছন্দ পতন ঘটবে। গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কুমড়ি গ্রাম থেকে ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসেছেন সালমা আক্তার । তার কোলের শিশুর সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে এহেনে ডাক্তার দেহালি ওষুধ দেতো। এহোনে দেচ্ছে না । কাগজে লেহে দিলি আমাগে বাজারের দুয়ানতে কিনে নিতি হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। অত টায়া পয়সা নাই আমাগে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকাররে কচ্ছি আগের মতো আমাগে মাগনা (বিনা টাকায়) ওষুধ দিতি হবে।’
কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের মুলশ্রী গ্রামের দীপ্তি রানী মণ্ডল বুকে ব্যথা অনুভব করলে নিজের ওষুধ নিতে এসেছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘এহেনের ডাক্তার সাদা কাগজে কী যেন লেহে দেলো। আর কলো এই কাগজ নিয়ে বাজারের দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে । কিরাম কতা হলো কওদিন বাপু । আমাগে যদি দুয়ানেরতে অসুদ কিনতি হবে তালি তুমরা এহানে বসে রইছো ক্যান ? আগেতো এমন কতা শুনিনি।’
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আলিফ নূর বলেন, ‘পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত থেকে আট মাস। যে কারণে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধের মধ্যেও খোলা ছিল । ওষুধ না পেলেও চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল না । যারা গর্ভবতী মা তারা চেকআপের জন্য কেন্দ্রে আসছেন । তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংকট মোচন হবে ।
মন্তব্য