পটুয়াখালীতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ শয্যা পাঠানো হয়েছে, সেগুলো আড়াই মাসেও স্থাপনই করা যায়নি।
ভোলারগুলো তা-ও স্থাপন করা গেছে, কিন্তু চালানোর লোক নেই। রাজবাড়ীতে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন-সুবিধা।
বাগেরহাটে অক্সিজেন নিয়ে সমস্যা নেই। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য তিন শয্যার ইউনিট উপহার দিয়েছেন, কিন্তু চিকিৎসকের দক্ষতা নেই সেগুলো চালানোর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের জেলা মানিকগঞ্জের কথা না বললেই নয়। সাড়ে ছয় বছর আগে সেখানে আইসিইউ ইউনিট চালু হলেও একজন রোগীকেও সেবা দেয়া যায়নি। কারণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা নার্স নেই।
করোনাকালে জেলায় জেলায় আইসিইউ স্থাপন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের চিত্র হলো এই।
এর প্রধান কারণ হচ্ছে, শয্যা পাঠালেও চিকিৎসক ও নার্স প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। কোথাও আবার নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন-সুবিধা।
কোথাও কোথাও আবার টেকনিশিয়ান নেই, যারা শয্যাগুলো বসাবে। বিস্ময়কর হলো, এমন জেলায় দ্বিতীয়বারের মতো পাঠানো হয়েছে শয্যা। ফলে এসব জেলায় আইসিইউ সেবার নয়, দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইউনিট পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। সেগুলো পরিচালনার বিষয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে যে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে।
গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপের পর আইসিইউ এর স্বল্পতার বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি কথা হচ্ছে এ কারণে যে, আক্রান্তদের অনেককে এই সুবিধা দিতে হয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাইরাসটির ভারতীয় ধরনে আরও বেশি লাগে এই সুবিধা।
এই এক বছরে দেশে আইসিইউ-সুবিধা বেড়েছে বটে, তবে তা রাজধানীতেই বেশি। অথচ এখন করোনার প্রকোপ বেশি মফস্বল শহর ও গ্রাম এলাকায়।
এই পরিস্থিতিতে জেলা শহরে পাঠানো শয্যাগুলো থেকে রোগীরা আদৌ কোনো সুবিধা পাচ্ছেন কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে এই চিত্র খুঁজে পেয়েছে নিউজবাংলা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের জেলার চিত্র
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের উত্তর পাশের পুরোনো ভবনে দুই শয্যার আইসিইউ ইউনিটের উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। কিন্তু সেটি পরিচালনায় জনবল ছিল না। তাই কক্ষে ঝোলে তালা।
সাড়ে ছয় বছর পর চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনে আইসিইউ ইউনিটটি হস্তান্তর করা হয় এবং দুটি শয্যা বেড়ে হয় ৫টিতে। নতুন করে আইসিইউর মালামাল কেনা হয়। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়।
সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুাবধার কারণে হাসপাতালের পুরনো ভবন থেকে আটতলা হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলার পশ্চিম পাশে আইসিইউ শয্যাগুলো হস্তান্তর করা হয়। কেনাও হয় নতুন মামলাল ও চিকিৎসা সরাঞ্জাম।
কিন্তু ভেতরের চিত্র একেবারে সাধারণ শয্যার চেয়েও খারাপ অবস্থা। এলোমেলো ও অগোছালোভাবে রয়েছে শয্যা। এখানে সেখানে পড়ে রয়েছে চেয়ার ও বসার টুল। ময়লা পড়ে আছে আইসিইউ শয্যায়।
কোনো কোনো শয্যার পলিথিনও খোলা হয়নি এখনও। কোনোটির আবার চাদরও নেই। দেখে মনে হবে লোক দেখানোর জন্য করা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য নয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘আইসিইউ এর জন্য যা প্রয়োজন সব করা হয়েছে এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা করা আছে। কিন্তু রোগী না থাকায় আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে।’
তিনি জানান, আইসিইউ পরিচালনার জন্য দুই জন চিকিৎসক ও ছয়জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে আইসিইউর জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসক নাই।
আইসিইউ আছে অক্সিজেন নেই
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ২০ শয্যা করোনা ইউনিটে গত ১৯ এপ্রিল তিনটি আইসিউ শয্যা স্থাপন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সেবা পাননি সেখান থেকে। এর কারণ, অবকাঠামোগত অন্যান্য সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা যায়নি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দীপক কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন এর কাজ চলছে। এটার কাজ এই মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে আমাদের আইসিইউ চালানোর মতো সম্পূর্ণ দক্ষ নার্স নেই। এটার জন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চাহিদা হিসেবে চিঠি দিয়েছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি জানান চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে শূন্য ২৬টি।
তবে সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটোন দাবি করছেন, তারা রোগীদের সেবা দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আলাদা কোন জনবল নার্স বা ডাক্তার নেই, তবে যা আছে এইগুলো দিয়ে আমি আইসিইউ চালাতে পারব, এরা আইসিইউ চালাতে পারবে।’
তবে একইসঙ্গে বিপরীতধর্মী বক্তব্য দিয়ে তিনি চিকিৎসকের অভাবে সেবা হিমশিম খাওয়ার কথাও জানান।
এমপির দেয়া আইসিইউ বেগার পরে
গত ২৩ এপ্রিল বাগেরহাট সদর আসনের সংসদ সদস্য শেখ সাহরান নাসের তন্ময় তিনটি আইসিইউ শয্যা উপহার দেন সদর হাসপাতালকে। ঘটা করে আইসিইউ উদ্বোধন করে চিকিৎসা প্রশাসন।
জেলায় আইসিইউ চালানোর মতো লোকবল না থাকার বিষয়ে নিউজবাংলার এক প্রশ্নে সেদিন সিভিল সার্জনকে এম হুমায়ুন কবির বলেছিলেন, তারা খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আনবেন। আড়াই মাস পরেও সেই বক্তব্য পাল্টায়নি।
ফলে আইসিইউ ইউনিট কেবল দেখতেই পারবেন, এর সুবিধা পাবে না বাগেরহাটবাসী।
তবে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
সিভিল সার্জন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও এখানে জনবল আছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের। তার ওপর করোনার জন্য আলাদা ৫০ শয্যা। মোট ১৫০ শয্যার বিপরীতে যে জনবল, তাতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
‘কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য আছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স না থাকায় আমাদের সংসদ সদস্য শেখ সারহান এর দেয়া তিনটি আইসিইউ বেড এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আইসিইউ বেডগুলো চালু করতে হলে প্রশিক্ষিত চিৎকিসক ও নার্স প্রয়োজন। তা না হলে ১০ চিকিৎসক ও ১৫ জন নার্সকে ছয় মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ছাড়া সারা দেশে করোনা ভাইরাসে চলোমান লকডাউনের কারণে এই মুহূর্তে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। ’
তবে তিনটি আইসিইউ শয্যা চালু করতে না পারলেও ১০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ ও ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জুলাই মাসে গণপূর্ত বিভাগ দরপত্র আহ্বান করবে বলেও জানিয়েছেন জেলা চিকিৎসা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
আগেরগুলো চালু হয়নি, তবু নতুন শয্যা
গত ১৮ এপ্রিল ভোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় তিনটি আইসিইউ শয্যা, তিনটি ভেন্টিলেটর ও তিনটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা।
এই হাসপাতালের কর্মীরা জানতেনই না এই শয্যা ও ভেন্টিলেটর কীভাবে স্থাপন করতে হয়। পরে ফোনে শুনে সেগুলো বসানো হয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্তই।
এর মধ্যে ৮ জুলাই সকালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকে নতুন আরও তিনটি আইসিইউ শয্যা ভোলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কিন্তু এগুলো স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত লোকবল সংকটের সমাধান হয়নি। আইসিইউ পরিচালনার জন্য যে দক্ষতার চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান দরকার, সেই ধরনের দক্ষতাও নিশ্চিত করা যায়নি কারও।
জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সিরাজ উদ্দিন এ বলেন, ‘পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১২ জন ডাক্তার ভোলার আইসিইউ ও করোনা ইউনিট পরিচালনার জন্য পাঠানো কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ অনুমোদনটি স্থগিত করেন। আশা করি অনুমোদন হয়ে গেলে পরিপূর্ণ সেবা চালু করা সম্ভব হবে।’
আড়াই মাস ধরে হাসপাতালের বারান্দায়
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় আড়াই মাস ধরে পড়ে আছে ঢাকা থেকে পাঠানো পাঁচটি আইসিইউ শয্যা।
২৪ এপ্রিল ঢাকা থেকে ঢাকা থেকে বেড পাঁচটি ট্রাকযোগে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌঁছে। পরে সেগুলো হাসপাতালের গুদামকক্ষে রাখা হয়। পরের দিন সেখান থেকে শয্যাগুলো হাসপাতালের নতুন ভবনের নীচতলায় নামানো হয়। এখনও সেখানেই পড়ে আছে।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম শিপন বলেন, হাসপাতালের ৮০ শয্যা করোনা ইউনিটের অর্ধেক অংশ নিয়ে ‘আইসিইউ ইউনিট’স্থাপনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আগামী সোম বা মঙ্গলবার ঢাকা থেকে আইসিইউ বেড টেকনিশিয়ান আসবে। তারা এসে পাঁচটি বেড আইসিইউ ইউনিটে বসিয়ে দিয়ে যাবে। এরপর আমাদের শুধু আইসিইউ দক্ষ লোকবল হলেই ইউনিটটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাবে।’
দক্ষ কারিগর বা প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার পরেও কেন এসব সরঞ্জামাদির চাহিদা পাঠানো হলো এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মতিন বলেন, ‘আগে তো মালামাল আনতে হবে তারপর না হয় মিস্ত্রি। আমরা প্রয়োজনীয় জনবল চেয়েছি। আশা করি আইসিইউ এবং সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেমের মতো জনবলও পেয়ে যাব।’
ব্যতিক্রম কেবল লক্ষ্মীপুর
এই হতাশার চিত্রের মধ্যে ব্যতিক্রম একমাত্র লক্ষ্মীপুর। সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের সুফল পেয়েছে জেলার মানুষ।
গত ২২ এপ্রিল করোনা ইউনিটে তিনটি আইসিইউ শয্যা চালুর পর এখন পর্যন্ত ১৭৫ জন রোগী সেবা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তবে প্রথম দিকে আইসিইউ পরিচালনার বিষয়ে নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু ২ মাসের ব্যবধানে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গফ্ফার।
তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য তারা মোট ৭টি আইসিইউ শয্যা চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য