আফগানিস্তানে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর হামলার পর পতন হয় তালেবান সরকারের। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর কাবুল থেকে পিছু হটে তালেবান বাহিনী। তবে এর পরের ২০ বছরেও দেশটি থেকে উৎখাত করা যায়নি কট্টোর এই গোষ্ঠীকে। বরং সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর ফের নতুন অঞ্চলের দখল নিচ্ছে তালেবানরা।
আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। দেশটির ৪০৭টি ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে ৭০টিতে চলছে এই গোষ্ঠীর শাসন।
সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস-এর সংবাদকর্মীদের একটি দল সম্প্রতি আফগানিস্তানের তালেবাননিয়ন্ত্রিত ওয়ারদাক রাজ্যে পাঁচ দিন কাটিয়েছে। তাদের এই সফরের অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে অ্যাডাম ডেসিডারিওর প্রতিবেদনে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
ঘড়িতে ভোর ৫টার একটু বেশি। কোনো এক শুক্রবার এক পুরোনো টয়োটা করোলার পেছনের সিটে চেপে, লুকিয়ে আমরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। গাড়ির সামনে বসা স্থানীয় গাইড আমাদের তিনজনের দলটিকে ঘাড় ঘুরিয়ে পরখ করে নেন যে, তালেবাননিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে দুই দিনের ভ্রমণের জন্য আমাদের পোশাক ঠিক আছে কি না।
আমাদের গাড়িচালক স্থূল রসবোধসম্পন্ন, সাদা দাড়ির, বেঁটে ও গাট্টাগোট্টা শরীরের এক আফগান। রিয়ার ভিউ মিররে আমার দিকে তাকিয়ে তিনি জোরে বলে ওঠেন, ‘কান্দাহার’।
আমার পরনে ছিল একটা রোদে জ্বলে যাওয়া সালোয়ার-কামিজ, একটা সবুজ রঙের শাল আর তার সঙ্গে ম্যাচ করা টুপি, যাকে এখানে বলা হয় সিন্ধি। আর আমাদের দলের একমাত্র নারী সদস্য ভাইসের নিউজ করেসপনডেন্ট হিন্দ হাসানের পরনে ছিল তালেবানরা ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের যেমন মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে বলে, তেমনভাবে ঢাকা নীল রঙের আফগানি বোরকা।
আমাদের গন্তব্য ওয়ারদাক রাজ্য। এটি মধ্য আফগানিস্তানের একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, কারণ এটাই রাজধানী কাবুলে ঢোকার রাস্তা। ওয়ারদাকে যাওয়ার জন্য আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত ন্যাশনাল হাইওয়ে ওয়ান ধরে এগোচ্ছিলাম। কাবুলকে এটি তালেবানের জন্মস্থান কান্দাহারের সঙ্গে যুক্ত করে।
আমাদের সামনেই ধীরেসুস্থে এগোতে থাকা আফগান ন্যাশনাল আর্মির (এএনএ) বেশ কিছু হামভি জিপ। কাছের কোনো পোস্টে সাপ্লাই নিয়ে যাচ্ছিল ওগুলো। পরের এক ঘণ্টায় আমরা যুদ্ধ করছে না, কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে আটকে যাওয়া আফগান বেসামরিক নাগরিকদের জীবন কেমন হয়, সেটার ভয়াবহ কিছু ঝলক দেখতে পেলাম।
জানতে পারলাম, তালেবানরা এএনএকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। সৈন্যরা আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাস্তার বাস ও আমাদের মতো গাড়ির লম্বা সারির মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
এই কৌশল সরাসরি তালেবানদের কাছ থেকেই ওদের শেখা। আমরা এগোতে শুরু করার পরই সৈন্যরা সবুজ ঝোপের দিকে রাইফেল তাক করে গুলি করতে শুরু করে। এ ধরনের ঝোপ তালেবানরা লুকানোর জন্য ব্যবহার করে।
তালেবানদের দেশে
আমাদের স্থানীয় গাইড জানালেন, ‘এই চেক পয়েন্টের পর থেকে সবকিছুই তালেবানদের অধীনে।’
এখান থেকে মোটরসাইকেলে চড়া একদল তালেবান যোদ্ধা আমাদের পথ দেখাবেন। কাবুলে তারা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেয়নি। আর যেকোনো ধরনের ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহারে ছিল কড়া নিষেধ।
মূল সড়ক থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের ওপর ছোট একটা গ্রাম আরব শাহ খেল। ওখানকার প্রায় পূর্ণ আর বিস্তৃত কবরস্থান খুব ভালোভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমেরিকার দীর্ঘতম যুদ্ধের প্রকৃত মূল্য। ২০০১ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে এই যুদ্ধে ৭১ হাজার আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন।
নিজের বোন নাসিবাহর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ২৫ বছরের আমরুল্লাহ ক্বানি বলেন, ‘এখানে প্রতিদিনই যুদ্ধ হয়। যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখন বাড়িতে গুলি এসে পড়ে আর বিস্ফোরণ হয়।’
নিজ বাড়িতে মর্টারের আঘাতে নিহত হন নাসিবাহ। আমিরুল্লাহ বলেন, ‘আমার বোন খুবই হৃদয়বান ও বুদ্ধিমতী ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক যে এমনটা ওর সঙ্গে হয়েছে।’
কাছেরই আরেকটি গ্রাম মালি খেলের ২৮ বছরের বাসিন্দা সাফিউল্লাহ অশ্রুভরা চোখে স্থানীয় এক মসজিদ ধ্বংসের কথা আমাদের বলেন।
‘তারা (আমেরিকানরা) আমাদের কোরআনকে অপমান করেছে। মসজিদকে অপমান করেছে। এটা আমাদের কাছে মক্কার মতো ছিল।’
মসজিদের তৃতীয় তলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। ধর্মীয় নেতারা শিশুদের ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোরআন ও অন্যান্য ধর্মীয় বইয়ের টুকরাগুলো জড়ো করতে বিভিন্নভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের একজন নেমাতুল্লাহ বলেন, ‘আমি সব মাফ করে দিতে পারব, কিন্তু এটা না। এখানেই আমার হৃদয় পড়ে আছে, আর এটাতেই আমি বিশ্বাস করি। এখানে কোনো তালেবান দেখছেন? আল-কায়েদা? নেই!’
গ্রামবাসী দিয়ে ঘিরে থাকা অবস্থায় সাফিউল্লাহ জানান, মাঝরাতে মাথার ওপরে ড্রোনের শব্দে তার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। এর একটু পরই মসজিদে আঘাত হানা হয়। ‘এটা শান্তি নয়’, বোমা বিস্ফোরণের জায়গা থেকে পাওয়া একটা শার্পনেলের টুকরা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সন্ত্রাস।’
আমরা আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোমার অংশবিশেষের ছবি দেখাই। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ধাতব খণ্ডটি জিবিইউ টুয়েলভ মডেলের লেজার গাইডেড বোমার ডানার অংশ। এমকে এইটি টু নামেও পরিচিত বোমাটি আফগান ও আমেরিকান দুই দেশের যুদ্ধবিমানই ব্যবহার করে। এতে আঁকা চিহ্ন দেখে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রেথিওন গত বছরের মার্চে বোমাটি বানিয়েছে। বানানো হয়েছে দোহায় তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তির এক মাস পর।
ভাইস নিউজকে দেয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মালি খেলে আক্রমণের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে বারবার অনুরোধের পরেও আফগান সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
সম্প্রতি সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তালেবানের সিভিল ক্যাজুয়াল্টিস প্রিভেনশন অ্যান্ড কমপ্লেইন্টস কমিশনের প্রতিনিধি কমান্ডার খাদেম বলেন, “এগুলো সবই কাবুলের ‘পুতুল সরকার’-এর কাজ। কাবুল সরকার এলাকায় তালেবানের উপস্থিতি আছে কি না, তা না জেনেই আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।’
খাদেম রাতের বেলা আমাদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখছিলেন। একটি বৈরী এলাকায় আমরা পাশ্চাত্য সাংবাদিক, আর তাই তালেবানের অন্য উগ্রবাদী সদস্যদের কাছে থেকে আমাদের দূরে রাখার নির্দেশনা ছিল তার ওপর।
আমরা এক এপিক যাত্রা শুরু করি। নদীর ওপর দিয়ে, পাহাড়ের কিনারা ধরে কর্দমাক্ত চার ঘণ্টার এক যাত্রা শেষে দুর্গম এক পাহাড়ের সেফহাউসে পৌঁছাই, যেখানে আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল।
পরদিন সকালে বান্দ-ই-চাক জেলার সামরিক প্রধান কমান্ডার খাতাবের সঙ্গে দেখা হয়। কালো কাপড় পরা ও কালাশনিকভ হাতে চার যোদ্ধাকে পাশে নিয়ে থাকা খাতাব আমাদের উপস্থিতিতে বিরক্ত হচ্ছিলেন, আর সাক্ষাৎকারের বেশির ভাগ সময়ে চুপ করে ছিলেন।
জেলার এক সামরিক উপ-প্রধান নাউয়িদ বলেন, ‘আমরা আমেরিকান গণতন্ত্র চাই না। আমেরিকা এখানে গণতন্ত্রের যে নীতি প্রয়োগ করেছে এবং জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে তা কেবল আফগানিস্তানের জনগণের ক্ষতিই করবে, আর কিছু নয়।’
আমেরিকান সেনারা এক মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়তে যাচ্ছে। অনেক আফগানের আশঙ্কা, তালেবান তার পুরোনো পথে ফিরে আসবে, ইসলামি শরিয়াহ আইনের উগ্র ব্যাখ্যায় নারীর অধিকার সীমাবদ্ধ করবে ও সমাজকে পরিচালনা করবে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে কমান্ডার খাতাব দ্রুত প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।
‘শুটিং বন্ধ করুন। বন্ধ করুন,’ হাসতে হাসতে বলে ওঠেন খাতাব। মাঝপথে সাক্ষাৎকার বন্ধ করে দেন এবং আমাদের ক্যামেরা বন্ধ করে কাবুল ফিরে যেতে বলেন।
তালেবানের অধীনে জীবন
ছয় মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের প্রাক্কালে তালেবানদের সঙ্গে তিন দিন কাটানোর জন্য আমাদের আবার ওয়ারদাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এবার পরিষ্কার ছিল যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জোর করে ক্ষমতা ফিরে পেতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী দেশজুড়ে বিস্তৃত অঞ্চল দখলের অভিযান আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ধারণা অনুযায়ী, গোষ্ঠীটি দেশের ৫০ শতাংশেরও বেশি অংশে নিয়ন্ত্রণ করছে বা দখলের চেষ্টা করছে। ৭০টিরও বেশি জেলা তাদের কবজায়। প্রতি সপ্তাহে এই সংখ্যা বাড়ছে।
তালেবান যোদ্ধা ও বোমা কারিগর মজিবুল রাহমান বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে যত কনভয় আসুক না কেন, আমরা তাদের জন্য আইইডি পেতে রাখি।’ সোডার বোতলে বোমা ভরে আফগান সৈনিকদের হত্যা করে গর্বিত মজিবুল যোগ করেন, ‘আমি তাদের টুকররা করে উড়িয়ে দিয়েছি। একেবারে আকাশে উড়িয়েছি।’
তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার অচলাবস্থায় এবং আমেরিকান বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রগুলোকে দ্রুত ছেড়ে দিতে থাকায় তালেবানরা তাদের পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার একেবারে কাছাকাছি আছে। যে ব্যবস্থা আমেরিকান নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের মাধ্যমে ২০০১ সালে ক্ষমতা থেকে তাদের হটে যাওয়ার আগে ছিল।
‘আফগানিস্তান তাদের (আমেরিকানদের) তৈরি ব্যবস্থায় চলে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়’, বলছিলেন ২০ জন যোদ্ধা দিয়ে ঘিরে থাকা কমান্ডার হামাস। পাহাড়ের ওপর থেকে টাঙ্গি উপত্যকার দিকে তাকিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যখন তারা আমাদের বলবে, দেশে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা কায়েম হচ্ছে, তখনই আমরা অস্ত্র জমা দিয়ে ইসলামিক শাসনব্যবস্থার অংশ হতে প্রস্তুত।’
তালেবানদের দাবি, তারা আগের মতো নারীদের অধিকার বঞ্চিত করা, মেয়েদের স্কুলে যেতে বাধা দেয়া, চোরদের হাত কেটে শাস্তি দেয়া, প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা ও ব্যভিচারের দায়ে নারীদের পাথর ছুড়ে হত্যা করার মতো নৃশংস গোষ্ঠী আর নেই।
কমান্ডার হামাসের দাবি, ‘সত্যি কথা হচ্ছে, আফগানিস্তানে বসবাসকারী মুসলিম পুরুষ ও নারীর ইসলামিক ব্যবস্থাকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই, কারণ ইসলামিক শাসনব্যবস্থা শান্তি, একতা ও উন্নয়ন নিয়ে আসে। ইনশাল্লাহ সবার অধিকারই রক্ষা করা হবে এবং সবাই নিরাপদে থাকবেন।’
আমাদের তালেবান গাইড দেখাতে উদগ্রীব ছিলেন যে তারা কতটা বদলে গেছেন। তারা গ্রামের একটা বাজারে আমাদের নিয়ে যান যেখানে তরুণ যুবকরা প্রকাশ্যে ধূমপান করছিল, ভলিবল খেলছিল। এসব কর্মকাণ্ড আগে তালেবানরা নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু এখন কিছু কিছু এলাকায় তারা এসবের অনুমতি দিয়েছে।
এটাই হয়তো তারা আমাদের দেখাতে চেয়েছিল। তবে এটি স্পষ্ট যে, প্রাত্যহিক জীবনের অনেক দিকেই কোনো বদল আসেনি। বাইরে খুব বেশি নারীর দেখা মেলে না; টেলিভিশন দেখা, গান শোনা ও খেলাধুলা করা এখনও নিষিদ্ধ; আর এই সামাজিক নিয়মকানুন গ্রামে ঘুরে ঘুরে কঠোরভাবে কার্যকর রাখে সশস্ত্র যোদ্ধারা, যারা ভয়, সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের ওপর নির্ভর করে শাসন করছে।
শরিয়াহ আইন
তালেবান আন্দোলনের মূল ভিত্তি এবং এর রাজনৈতিক লক্ষ্য সব সময় ছিল শরিয়াহ আইনের মৌলবাদী ব্যাখ্যার ভিত্তিতে একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করা। শরিয়াহ আইন অ্যাডহক আদালত প্রণীত এক ধরনের ইসলামিক আইন।
এর ব্যাখ্যায় তালেবান কমান্ডার তাওয়াকুল বলেন, ‘সামরিক দায়িত্বের সঙ্গে আমাদের নাগরিক দায়িত্বও আছে। যখন আমরা কোনো অপরাধের ব্যাপারে জানতে পারি, সেই অপরাধী বা চোরকে ধরার পর কোনো জোরজবরদস্তি ছাড়া আমরা তাদের বক্তব্য শুনি, যাতে করে সে তার অপরাধ স্বীকার করতে পারে।’
এখানে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। কিছু ক্ষেত্রে তালেবান কমান্ডারদের তাদের পছন্দমতো শাস্তি কার্যকর করার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
তাওয়াকুল যোগ করেন, ‘তার স্বীকারোক্তির পর বিচারকাজ শুরু হয়। আমাদের আদালত একটা পঞ্চায়েতের মতো। সেখানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকেন মুফতি ও প্রশাসনিক পর্যায়ের মতো বিজ্ঞ ব্যক্তিরা। তারা একসঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাদের নীতিগত রায় গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে করা হয় এবং কোরআন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হয়।’
এদিন স্থানীয় এক ভেড়া পালকের কাছ থেকে ভেড়া চুরি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির প্রাথমিক শুনানি দেখার জন্য আমাদের নজিরবিহীন ছাড় দেয়া হয়। অভিযুক্তকে কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তার করে কোনো আইনি প্রতিনিধি ছাড়াই তালেবানদের কারাগারে রাখা হয়েছে।
মামলার শুনানিতে নেতৃত্ব দেন ২৭ বছরের এক তালেবান কমান্ডার। অভিযুক্তকে ঘিরেছিলেন একাধিক তালেবান যোদ্ধা। তাকে কমান্ডারের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়।
তাওয়াকুলের চড়ে মাথার টুপি পড়ে যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিটির। তাওয়াকুল তাকে বলেন, ‘আসল ঘটনা স্বীকার করো। নাহলে আমরা তোমাকে পেটাব! কোন ভেড়াটি নিয়েছ? কোথায় নিয়েছ? তুমি চুরি করেছ?... ওভাবে বলার দরকার নেই, বল যে তুমি চুরি করেছ।’
অভিযুক্ত স্বীকার করে, ‘আমি চুরি করেছি।’
লোকটির মুখের ওপরে মোবাইল ফোন ধরে তাওয়াকুল জিজ্ঞাস করেন, ‘এটা ছাড়া আর কী কী চুরি করেছ?’
‘আর কিছু করিনি’, অনুনয়ের সুরে বলে ওঠে লোকটি। ‘যদি প্রমাণিত হয়, আমার হাত কেটে ফেলেন।’
প্রাথমিক শুনানি শেষে লোকটির ক্যামেরায় দেয়া জবানবন্দি নিশ্চিতভাবেই তার ভাগ্য নির্ধারণ করে ফেলবে। এখন ভ্রাম্যমাণ তালেবান বিচারক ওয়ারদাকে আসবেন চূড়ান্ত রায়ের জন্য। এ ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে জনসমক্ষে চাবুক মারা বা হাত কেটে ফেলা।
তাওয়াকুল বলেন, ‘আমরা যা কিছু শিখেছি, আমাদের সব পদক্ষেপ, আচরণ শরিয়াহ মোতাবেক এবং এর সঙ্গে একমত। এর বাইরে আর কিছু নেই।’
বিচারকে নিষ্ঠুর মনে হলেও স্থানীয়দের মধ্যে এ ধরনের দ্রুত বিচারের প্রতি এক রকম আস্থা রয়েছে। কারণ তারা একে আফগান সরকারের বিচারব্যবস্থার চেয়ে কম কলুষিত মনে করে।
এটি পরিষ্কার যে বিচারের এই ধারার বাস্তবায়ন তালেবানরা কাবুলসহ পুরো আফগানিস্তানে দেখতে চায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তালেবানরা আফগান সরকার ও পুরো দেশকে তা অনুসরণ করতে বাধ্য করতে পারে কি না?
তাওয়াকুল বলেন, ‘(আফগান সরকারের সঙ্গে) সমঝোতার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।’
আরও পড়ুন:পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেশের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ‘সমন্বিত ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তার নিজ দলের অনেকই জড়িত বলে জানা গেছে। তবে এ ধরনের তৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পিটিআইয়ের অন্য নেতারা।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গানদাপুর অভিযোগ করেছেন, গভর্নরের শাসন জারি ও ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে ছিটকে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা চলছে। তিনি এ ধরনের উদ্যোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন।
পিটিআইয়ের অভ্যন্তরে বিভাজনের অভিযোগ
পিটিআইয়ের অভ্যন্তরে ভাঙন ধরানোর ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেত্রী আজমা বুখারি ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আজমা’র দাবি, ইমরানকে তার নিজের বোন আলিমা খান ও দলের সদস্যরাই কোণঠাসা করে ফেলেছেন। আলিমার সঙ্গে পিটিআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া ইউনিটও নাকি ইমরান খানের বিরুদ্ধ একই অভিযানে যুক্ত।
আজমা বুখারি বলেন, যিনি (ইমরান) একদিন নওয়াজ শরিফকে ‘সাইডলাইন’ করার চেষ্টা করেছিলেন, আজ তিনি নিজেই তার ঘরে ও দলে অবাঞ্ছিত হয়ে গেছেন।
আজমা আরও দাবি করেন, পিটিআই এখন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তিনটি ও প্রাদেশিক পর্যায়ে আরও তিনটি ভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত। খাইবার পাখতুনখোয়ায় একদিকে জুনায়েদ আকবর, অন্যদিকে আতিফ খান ও আরেকটি গ্রুপ বিদ্রোহী সদস্যদের নিয়ে গঠিত।
পিটিআইয়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া
আজমার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পিটিআই মুখপাত্র শেখ ওয়াকাস আকরাম বলেন, ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার এই ষড়যন্ত্রে সরকার নিজেই অপমানিত ও নগ্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে ইমরান খানকে মাইনাস নয়, বরং তার অবস্থান আরও কয়েকগুন শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতি তাকে সবার ওপরে স্থান দিয়েছে।
ওয়াকাস আকরাম দাবি করেন, গত তিন বছরে একাধিকবার পিটিআইকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছে। ‘ইমরান শুধু পিটিআইয়ের নেতা নন, তিনি জাতির নেতা। তার জনপ্রিয়তা, দমন-পীড়নের মধ্যেও বেড়েই চলেছে।
পাঞ্জাব সরকারকে দুর্নীতির অভিযোগে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, পাঞ্জাবের এই ‘চুরি করা ম্যান্ডেট’ এখন এক লাখ কোটি রুপি লোপাটের কলঙ্কে কলুষিত। আজমা বুখারিকে বলা উচিত, ‘পানামা কুইনের’ অধীনে কীভাবে জনগণের সম্পদ লুট হচ্ছে।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী গানদাপুর বলেন, ইমরান খানই দলের নেতা। যদি তিনি বলেন, আমি এক মিনিটেই এই সরকার ছেড়ে দেব। সরকারটি তারই। তাকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা মানে দলের অস্তিত্বের ওপর আঘাত হানা।
তিনি অভিযোগ করেন, ইমরানের পরামর্শ ছাড়াই বাজেট পাশ করানো হয়েছিল ও পরিকল্পিতভাবে দলের ভেতরের আলোচনা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আলোচনা বাধাগ্রস্ত করে সরকার হাইজ্যাক করার একটি প্রচেষ্টা ছিল, যা ব্যর্থ হয়েছে।
গানদাপুর বলেন, খাইবার পাখতুনখোয়ায় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করে গভর্নরের শাসন চাপিয়ে দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র চলছে। এটি মূলত ইমরান খানকে বাজেট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার কৌশল।
তিনি আরও জানান, ইমরান খান মুক্তি পেলেই দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রকারীরা জনসম্মুখে উন্মোচিত হবেন। দেখা যাবে কারা ইমরানকে দুর্বল করতে চাইছে, আর জনতা তাদের বিচার করবে।
পিটিআই কি বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে?
এই মুহূর্তে পিটিআই যে একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে- তা খোদ ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই বলছেন। দলটির কৌশলগত সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠছে কেন্দ্রে ও প্রাদেশিক পর্যায়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পিটিআইয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বহিরাগত চাপ- উভয়ই একত্রে কাজ করছে। ইমরান খানের অনুপস্থিতিতে দল নেতৃত্বহীন অবস্থায় নানা চাপ মোকাবিলা করছে এবং তার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
চলতি সপ্তাহে মালয়েশিয়ার পুলিশ এক অভিযানে ৩৬ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগ, তাদের চরমপন্থি মতাদর্শ ও সহিংস চিন্তাধারায় পরিচালিত একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল জানান, ২৪ এপ্রিল শুরু হওয়া অভিযানটি সেলাঙ্গর ও জোহর অঞ্চলে তিন ধাপে পরিচালিত হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে শাহ আলম ও জোহর বারুর সেশন আদালতে সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট অপরাধের ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৫ জনের বিরুদ্ধে দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) আদেশ জারি করা হয়েছে এবং ১৬ জনের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, দলটি মালয়েশিয়ায় আইএসের মতাদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং নিজেদের কমিউনিটির ভেতরেই নিয়োগ সেল গঠন করেছিল।
সাইফুদ্দিন ইসমাইল বলেন, সেলগুলোর উদ্দেশ্য ছিল উগ্র মতাদর্শ প্রচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের বৈধ সরকার উৎখাত করা। মালয়েশিয়া কখনো কোনো বিদেশি উগ্রবাদী আন্দোলনের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে না।
মন্ত্রী বলেন, আমরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব, যেন মালয়েশিয়া শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং সন্ত্রাসী হুমকি থেকে মুক্ত থাকে। এই দেশকে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের অপারেশনাল ঘাঁটি বা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করলে কঠোর, দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার খবর প্রচারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে।
তারা জোর দিয়ে বলেছে, অভিযানটি সম্পূর্ণ সফল।
তারা সন্দেহ জাগিয়ে তোলা একটি গোয়েন্দা মূল্যায়নের প্রতিবেদনের জন্য সাংবাদিকদের তিরস্কার করেছে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
গত সপ্তাহান্তে আমেরিকান বি-২ বোমারু বিমান দুটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বিশাল জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কার-বাস্টার বোমা হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে একটি গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তৃতীয় স্থানে আঘাত করেছে।
পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ ইসরামফল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘যুদ্ধ শেষ করার জন্য পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করে করে দিয়েছেন।’
ট্রাম্প নিজেই এই হামলাগুলোকে ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’ বলে অভিহিত করে বারবার বলেছেন, তারা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করেছে।
‘কিন্তু মার্কিন গণমাধ্যম এই সপ্তাহের শুরুতে একটি প্রাথমিক আমেরিকান গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, এই হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
হেগসেথ ও অন্যান্যরা এই প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
হগসেথ বলেন, সিএনএন, এমএসএনবিসি বা নিউ ইয়র্ক টাইমস, যাই হোক না কেন, প্রাথমিক মূল্যায়নের ভুয়া খবর প্রচার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই নথিটি ফাঁস হয়েছে, কারণ কারোর উদ্দেশ্য ছিল জল ঘোলা করা এবং এই ঐতিহাসিক হামলা সফল হয়নি বলে দেখানো’।
ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কভারেজের নিন্দা করেছেন। সাংবাদিকদের চাকরি হারানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ডেমোক্র্যাটদের মূল্যায়ন ফাঁস করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে, তাদের বিচার করা উচিত।
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে লক্ষ্যবস্তু স্থাপনার কাছে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় চীনা টিভি সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
তিনি তখন ওই এলাকায় প্রতিবেদনের কাজে নিয়াজিত ছিলেন।
শুক্রবার তার নিয়োগকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রচারকটি জানায়, রাষ্ট্র-অধিভুক্ত ফিনিক্স টিভির এক প্রতিবেদক লু ইউগুয়াং বৃহস্পতিবার বিকেলে আহত হন এবং তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শুক্রবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে লুকে মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার সময় লু কোরেনেভো গ্রামে এক চলচ্চিত্র কর্মীর সঙ্গে ছিলেন।
রাশিয়া কিয়েভকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ’ করার অভিযোগ করেছে এবং ‘দায়িত্বশীল সরকারগুলোকে এই ঘটনার নিন্দা’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনে মন্তব্য করেনি।
ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে চীন নিজেকে একটি নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
কিন্তু পশ্চিমা সরকারগুলো বলেছে, বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মস্কোকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়েছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধের অবসানের পর তিনি ‘শান্তি চুক্তি সম্প্রসারণের একটি সুযোগ দেখছেন’।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
তিনি এক ভিডিও বক্তৃতায় বলেন, ‘আমরা ইরানের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে লড়াই করেছি এবং একটি দুর্দান্ত বিজয় অর্জন করেছি। এই বিজয় শান্তি চুক্তিগুলোকে নাটকীয়ভাবে সম্প্রসারিত করার পথ খুলে দিয়েছে’।
তার মন্তব্য মূলত আব্রাহাম চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো।
ইসরাইল ও ইরান উভয়েই ১২ দিনের যুদ্ধে বিজয় দাবি করে। যা গত ২৪ জুন যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
সংঘাত থামার পর ইসরাইল জানায়, তারা গাজায় হামাসবিরোধী অভিযানকে আবারও অগ্রাধিকার দেবে। সেখানে হামাস যোদ্ধারা এখনো ইসরাইলি জিম্মিদের আটকে রেখেছে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসের বিরুদ্ধে বিজয়ের পাশাপাশি, এখন একটি বড় পরিসরের শান্তি চুক্তির জন্য জানালা খুলেছে। আমরা যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না করি। একদিনও যেন নষ্ট না হয়।’
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর সৌদি আরবও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।
গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের ভয়াবহ হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় তাদের ধ্বংসাত্মক আক্রমণ শুরু করে।
তেহরান যদি বিশ্বব্যাপী পরমাণু বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তবে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ হবে বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
তিনি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলা ‘সত্যিকার অর্থেই কার্যকর’ ছিল।
ব্রাসেলস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের ম্যাক্রোঁ বলেন, ইরানের পরমাণু বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া হবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি।
চুক্তিটি বজায় রাখার জন্য ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার সীমিত করার উদ্দেশ্যে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের সঙ্গেও কথা বলবেন।
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনালাপের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই এই আলোচনা শুরু হয়েছে।
আলোচনায় ম্যাক্রোঁ জানান, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে গত কয়েক দিন ধরে তেহরানের সঙ্গে প্যারিসের যোগাযোগের কথা জানিয়েছেন।
ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমাদের আশা, দৃষ্টিভঙ্গির সত্যিকারের মিলন ঘটবে, লক্ষ্য ছিল ইরান কর্তৃক ‘পুনরায় পারমাণবিক নির্মাণের কোনও প্রচেষ্টা’ না করা।
ইরান ১৯৭০ সালে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) অনুমোদন করে এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার কাছে তার পারমাণবিক উপাদান ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু সম্প্রতি তারা চুক্তি থেকে সম্ভাব্য প্রত্যাহারের জন্য ভিত্তি প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। সংস্থাটিকে ইসরাইলের ‘আগ্রাসন যুদ্ধে’ ‘অংশীদার’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ এনেছে।
আমেরিকান বি-২ বোমারু বিমান গত সপ্তাহান্তে বিশাল জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কার-বাস্টার বোমা দিয়ে দুটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত করেছে, যখন একটি গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তৃতীয় স্থানে আঘাত করেছে।
ট্রাম্প নিজেই এই হামলাগুলোকে ‘চমৎকার সামরিক সাফল্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বারবার বলেছেন যে, তারা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করেছে।
কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যম এই সপ্তাহের শুরুতে একটি প্রাথমিক আমেরিকার গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেবল কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ ও অন্যরা এই প্রতিবেদনের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ডলারের মূল্য বৃহস্পতিবার তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছ, কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলের উত্তরসূরি খোঁজা শুরু করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে।
তবে ওয়াল স্ট্রিটে ছিল চাঙাভাব। চিপ নির্মাতা মাইক্রনের ভালো আয় ও হোয়াইট হাউসের সম্ভাব্য শুল্ক সময়সীমা বৃদ্ধির ইঙ্গিতের কারণে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ প্রায় রেকর্ড ছোঁয়া অবস্থানে পৌঁছে যায়।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানিয়েছে, বুধবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ২০২৬ সালে পাওয়েলের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁর বিকল্প তৈরির বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা এএফপি’কে জানিয়েছেন, ‘চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা বদলানোর অধিকার রয়েছে।’
ডলার ইনডেক্স, যা ডলারকে ছয়টি প্রধান মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করে, তা বৃহস্পতিবার নেমে আসে ৯৬,৯৯৭ পয়েন্টে, যা মার্চ ২০২২-এর পর সর্বনিম্ন।
অন্যদিকে, পাউন্ড ডলারের তুলনায় অক্টোবর ২০২১ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
বিনিময় প্ল্যাটফর্ম নেগা.কম মিডল ইস্টের মহাব্যবস্থাপক জর্জ পাভেল বলেন, ‘ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ এবং মুদ্রানীতি শিথিলের বাড়তে থাকা প্রত্যাশা ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যদি ফেড চেয়ারম্যান পরিবর্তনের বিষয়টি সত্য হয়, তবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলবে, যা ডলারের জন্য নেতিবাচক ইঙ্গিত।’
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প ক্রমাগত মার্কিন সুদের হার না কমানোর জন্য পাওয়েলের সমালোচনা করে আসছেন ও তার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি তিন বা চারজন লোককে জানি যাদের আমি বেছে নিতে যাচ্ছি।’
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরেই ট্রাম্প নতুন চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করতে পারেন। সম্ভাব্যদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট ও সাবেক ফেড গভর্নর কেভিন ওয়ার্শ।
সপ্তাহের শুরুতে জেরোম পাওয়েল কংগ্রেসে জানান, ট্রাম্পের শুল্কনীতি অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে, তা মূল্যায়নের পরই ফেড সুদের হারে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে তথ্য অনুযায়ী প্রথম তিন মাসে মার্কিন অর্থনীতি বার্ষিক ০.৫ শতাংশ হারে কমেছে, যা পূর্বের অনুমানের চেয়ে কম।
তবে বাজার সাধারণত এই ধরনের তথ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয় না, কারণ তা অতীতের ঘটনা এবং এখন সময় চলেছে দ্বিতীয় প্রান্তিকের শেষ দিকে।
ইতিবাচক দিক হলো, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের টেকসই পণ্যের অর্ডার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়েছে, যদিও শ্রমবাজারের তথ্য ছিল মিশ্র।
ওইদিন ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে ওঠানামা দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমে আসায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় মনোযোগ ফিরতে থাকায় তেলের দাম ছিল স্থিতিশীল।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সামরিক বাজেট বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর ইউরোপের প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ারের দামে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি দেখা যায়। ফ্রাঙ্কফুর্টে রাইনমেটালের শেয়ার ৭ শতাংশের বেশি বেড়ে এরপর থেমে যায়, ফ্রান্সের থ্যালেসের শেয়ার বাড়ে ৩ শতাংশ, আর যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমসের শেয়ার বেড়ে ৩.৮ শতাংশে পৌঁছায়।
দিনের শেষভাগে এশিয়ার প্রধান শেয়ার বাজারগুলো মিশ্র ধারায় লেনদেন শেষ করে।
মন্তব্য