নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকা জাতীয় পরিচয়ত্রের (এনআইডি) দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেয়া নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে হইচই। দায়িত্ব সরানোর সিদ্ধান্তের জন্য ইসির গাফিলতিজনিত জনদুর্ভোগকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে ইসিসহ সুশীল সমাজ সরকারি এই সিদ্ধান্তকে দেখছে সাংবিধানিক সংকট ও ইসির স্বাধীনতার কফিনে সরকারের শেষ পেরেক হিসেবে।
ইসি এনআইডির নিয়ন্ত্রণের আশা না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ-সংক্রান্ত সেবার মান বাড়িয়ে নাগরিকের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
গত ১৭ এপ্রিল এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মে এনআইডি কার্যক্রম ও লোকবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করায় ব্যবস্থা নিতে ইসিকে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আশা ছাড়ছে না ইসি
জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া সহজ হবে না বলে মনে করে ইসি। দায়িত্ব হস্তান্তরে সাংবিধানিক সংকটের বাইরেও নৈতিকতার বিষয় রয়েছে বলে মনে করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্রের সুরক্ষা বিভাগকে এ দায়িত্ব স্থানান্তরের কথা বললেও ইসি তার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ৩ জুন উপপরিচালক আরাফাত আরা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নাগরিকের দুর্ভোগ লাঘবে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয় ইসি।
এতে বলা হয়, ‘বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রতিরোধ/মোকাবিলায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাগণ বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও বিদেশগামী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম যথাসম্ভব দ্রুত সম্পন্ন করবেন।
‘এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ যাতে হয়রানিমুক্তভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা পায়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা এবং সেবা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ জানানো হলো।’
এনআইডি থেকে ইসির আয়
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এনআইডি সেবা থেকে ইসি প্রায় ২৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে।
এনআইডির তথ্য-উপাত্ত যাচাই/সরবরাহ চার্জ, এককালীন, নবায়ন ও সাবইউজার চার্জ এবং হারানো এনআইডি তোলা বা সংশোধন থেকে এই টাকা আয় হয়েছে।
প্রায় ১৪০টি প্রতিষ্ঠান ইসির জাতীয় ভোটার তথ্যভান্ডার থেকে নাগরিকদের তথ্য যাচাই সেবা নিয়ে থাকে। তথ্য-উপাত্ত যাচাই/সরবরাহ চার্জ থেকে এখন পর্যন্ত ইসির রাজস্ব আয় হয়েছে ১৪৯ কোটি ১৭ লাখ ১৭ হাজার ১২৫ টাকা।
এই সেবা নিতে হলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এককালীন, নবায়ন ও সাব-ইউজার চার্জ দিতে হয়।
এ বাবদ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ১৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার ৭৫০ টাকা এবং হারানো ও এনআইডি সংশোধন ফি থেকে আয় হয়েছে ৮২ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৭ টাকা।
এখন পর্যন্ত এনআইডি সেবা থেকে মোট আয় হয়েছে ২৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৭২ টাকা।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, শুধু রাজস্ব আয় নয়, এনআইডি সেবার মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, জমি রেজিস্ট্রেশন, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন, সিম নিবন্ধন, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, চাকরি প্রাপ্তিসহ সব ক্ষেত্রে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। অসংখ্য বেওয়ারিশ লাশের পরিচয়ও নির্ণয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এনআইডি সেবার মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ ভুয়া টিআইএনধারী শনাক্তকরণ, ১২ কোটি মোবাইল সিম নিবন্ধন/পুনর্নিবন্ধন, সরকারি-বেসরকারি ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে দিবা-রাত্রি পরিচিতি যাচাই সেবা প্রদান, তথ্যভান্ডারে ১০ আঙুলের ছাপ, আইরিস গ্রহণ ও সংরক্ষণ, করোনা দুর্যোগের সময় সফটওয়্যার আপগ্রেড করে অনলাইন সেবাদানের মাধ্যমে নাগরিকদের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দেয়া ও অনলাইন এনআইডি কপি দেয়া ও সোয়া ৭ কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রদত্ত নগদ টাকা সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনআইডি তথ্যভান্ডার থেকে প্রায় ৫০ লাখ নাগরিকের পরিচিতি যাচাই এবং দক্ষতার সাথে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ভুয়া/দ্বৈত আইডি/ব্যক্তি শনাক্ত করে সঠিক নাগরিকদের কাছে ঈদ উপহার নিশ্চিতকরণ, বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি সংবলিত ইভিএম প্রচলনের মাধ্যমে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে।’
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লাখ ভোটারের বায়োমেট্রিকসহ ডেমোগ্রাফিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
একটি জাতীয় তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার মাধ্যমে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে নিবন্ধিত সব ভোটারকে এনআইডি দেয়ার মাধ্যমে এই সেবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ করে।
ইসির নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এনআইডি সেবা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৫১৯টি উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস, ৬৪টি জেলা নির্বাচন অফিস, ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকেও নাগরিকদের এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম দিকে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা ফ্রি দেওয়া হলেও ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে কমিশন।
কেন স্বরাষ্ট্রে এনআইডি নেয়ার উদ্যোগ
গত ২৪ মে নির্বাচন কমিশনকে এনআইডি কার্যক্রম ও লোকবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিমের সই করা চিঠিতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজটি সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দিতে তিনটি নির্দেশনা দেয়া হয়।
প্রথমত নির্দেশনায় বলা হয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর রুল ১০ অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ থেকে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে হবে।
দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করাসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তৃতীয় ও শেষ নির্দেশনায় রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনআইডি নিয়ে প্রথম থেকেই নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নাগরিকরা। পরিচয়পত্রে তথ্য ভুল করা, জীবিতকে মৃত বানিয়ে দেয়াসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ভুল সংশোধনেও লাগে দীর্ঘ সময়।
পাসপোর্ট ইস্যু, বিভিন্ন ব্যক্তির পরিচয় (বিশেষ করে অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি) নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারের সহায়তা লাগে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং থেকে তারা এ তথ্য সংগ্রহ করে। তবে অন্যের তথ্যভান্ডার থেকে সহায়তা পেতে বেশি সময় ব্যয়সহ আরও কিছু বিষয়ে তাদের বেগ পেতে হচ্ছিল।
‘স্বরাষ্ট্রের হাতেই থাকা উচিত’
জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকা উচিত বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র আর ভোটার আইডি কার্ড এক বিষয় নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়। পৃথিবীর সব দেশে এই জাতীয় পরিচয়পত্র দেয় স্বরাষ্ট্র অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এটি নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করে।’
বাংলাদেশে শুধু ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রকল্প যৌক্তিকভাবেই নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখন যখন ভোটার তালিকা নয়, জাতীয় পরিচয়পত্র করা হচ্ছে, তখন পৃথিবীর সব দেশের মতো এটি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকাই যুক্তিযুক্ত।’
নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য সকল তথ্য-উপাত্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংগ্রহ করে; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দেয়। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদেরকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দেয়। তাদেরকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই সিদ্ধান্ত।’
সাংবিধানিক সংকট দেখছে ইসি
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে অন্য কোনো সংস্থার অধীনে নেয়া হলে সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তাই সংকট এড়াতে এটি ইসির অধীনেই থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সংক্রান্ত চিঠি চালাচালির মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসির সঙ্গে দুই দফা সাক্ষাৎ করেন।
তাদের যুক্তি, এনআইডি কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নিলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটাদানে জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভোটার সার্ভার নিয়ে সংকটের সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রের অর্থের বিরাট অপচয় হবে।
সিইসি বলেন, ‘এনআইডি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্যক্রম আলাদাভাবে করা যাবে না। এনআইডি কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থার হাতে গেলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে।
‘তাই এটি ইসির অধীনেই থাকা উচিত। আমরা বিষয়টি নিয়ে কেবিনেটের কাছে লিখিত যুক্তি তুলে ধরব। এ জন্য এনআইডি মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
এদিকে জনবলসহ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের নির্দেশনাকে ইসির কফিনে শেষ পেরেক বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা বোধগম্য নয়।’
বিষয়টিকে সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমি তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। মন্ত্রিপরিষদের যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত ২৪ মের পত্রে এনআইডি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ‘নির্বাচন কমিশন’-এর বদলে ‘সরকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে এনআইডির বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশ দেয়া কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচ্য। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজনির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হবে।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, দায়িত্ব হস্তান্তরে নির্বাচন ব্যবস্থা ও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হবে।
‘এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না বলে মনে করি। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর। বিষয়টি কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের শামিল।’
আরও পড়ুন:বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেন, আমদানি করা যত পণ্য ছিল সব আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত সেটা আমরা খাতভিত্তিক নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করছি।
রোববার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুড়ে যাওয়া কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যত ধরনের অভিযোগ আছে, প্রত্যেকটা অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। এখানে কারো কোনও ব্যত্যয় আছে কিনা সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উপদেষ্ট আরো বলেন, আমাদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগুনের পূর্ববর্তী এবং বর্তমান অবস্থান পুরো ঘটনা অনুসন্ধান করবে। তারপর অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সব তদন্ত সংস্থার সবাইকে একত্র করে এ রহস্য উদঘাটন করব।
তিনি বলেন, এখন যেসব পণ্য আসছে, কার্গো থেকে এসব পণ্য সরবরাহে যাতে কোনও জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আগামী সাতদিন ২৪ ঘণ্টা করে কাজ করবো। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ইন্সুরেন্স কভারেজ কী আছে এবং আমাদের বিমানবন্দরের ইন্সুরেন্স কাভারেজ কী আছে সবকিছু আমলে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হব।
তিনি বলেন, গতকালকে ২১টির মত ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে। এসব ফ্লাইটের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগামী তিন দিন অতিরিক্ত ফ্লাইটের সব ধরনের চার্জ মওকুফ করেছে সরকার।
বিদেশ যেতে না পেরে ক্ষোভে মাইক ভাড়া করে পুরো এলাকাবাসীকে গালাগাল করেছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার এক যুবক। পরে সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান গ্রামে। ওই যুবকের নাম সারোয়ার হোসেন রাব্বি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তিনি বিদেশ যেতে পারেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাব্বি বিভিন্ন এনজিও ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কেউ সহযোগিতা না করায় তার মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নেয়। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে তিনি ক্ষোভের বশে ৫০০ টাকা খরচ করে একটি মাইক ভাড়া নেন এবং পুরো গ্রামজুড়ে মাইকযোগে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে গালাগাল করেন।
পরে তিনি গালাগালের ভিডিও নিজ ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন। ভিডিওতে রাব্বি অভিযোগ করেন, তিন-চার মাস ধরে সৌদি যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও মাত্র এক লাখ টাকা জোগাড় করতে না পারায় তার ভিসা ও মেডিকেল মেয়াদ (৩০ অক্টোবর) শেষ হতে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সমিতির কাছে ঋণ চাইলেও কেউ সহযোগিতা করেনি। এমনকি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকেও লোন নিতে গেলে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
রাব্বি বলেন, “মানুষের কারণে আগেও দু’বার আমার ভিসা নষ্ট হয়েছে। এবারও কেউ সাহায্য করল না। তাই রাগের মাথায় ভুল করেছি।”
ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেনন “প্রথমে ক্ষমা চাইছি। আমি অনেক খারাপ ভাষায় গালাগাল করেছি। আমি কেন এমন করেছি, শুনুন।”
রাব্বি জানান, তিনি বিবাহিত এবং এক ছোট সন্তানের পিতা। জীবিকার তাগিদে তিনি অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি বিকাশের কাজ করেন।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীরা প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও পরে ভিডিওটি ভাইরাল হলে অনেকে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হন। কেউ কেউ আবার রাব্বির মানসিক কষ্ট ও পারিবারিক চাপের প্রতি সহানুভূতিও প্রকাশ করেছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তবে এখন চায়ের দোকান থেকে ঘরোয়া আড্ডা সব জায়গায় রাব্বির ঘটনাই আলোচনার বিষয়।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম স্বৈরাচারের মতো, তাদের রিমোট কন্ট্রোল অন্যের হাতে।
রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে শাপলা অর্জন করা হবে। মধ্যযুগীয় রাজা বাদশাদের মতো আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। গণবিশ্বাসী ও জনবান্ধব আচরণ হওয়া উচিত ছিল।
এনসিপির এ নেতা বলেন, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার মতো বর্তমান কমিশনের কোনো যোগ্যতা নেই। নুরুল হুদার মতো পরিণতি যাতে না হয় এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক দলের জন্য তৈরি করা প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকায় এনসিপির আবেদন বারবারই নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নিরাপদ ও দখলমুক্ত সড়কের দাবিতে ফার্মগেটে বিক্ষোভ করেছে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও সরকারি সাইন্স হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট মোড়ে শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে প্রথমে মানববন্ধন করে। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের স্কুল ও কলেজের সামনে অটোরিকশাগুলো জ্যাম তৈরি করে। গেটের সামনে রিকশাগুলো লাইন ধরে থাকে। এই এলাকায় স্কুল, কলেজ ও বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী এই রাস্তা দিয়ে পারাপার করতে হয়। অটোরিকশা একটার পর একটা থাকায় জ্যাম সৃষ্টি করে। রাস্তা পারাপারের সমস্যা হয়। রাস্তা যখন ফাঁকা থাকে, তখন তারা ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালায়। অটোরিকশার যে ব্রেক, তা দিয়ে কন্ট্রোল করা সম্ভব না। অনেক সময় তারা শিক্ষার্থীর উপরে রিকশা তুলে দেয়। ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হতে হয়।
পাঁচ দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনের সড়কে অবিলম্বে স্পিড ব্রেকার স্থাপন করতে হবে। পর্যাপ্ত ল্যাম্প পোস্ট লাগাতে হবে। লেন ডিভাইডার এবং ট্রাফিক আইল্যান্ড স্থাপন করতে হবে। ফুটপাথ থেকে সব অবৈধ দোকান, অস্থায়ী স্থাপনা, পার্কিং স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে হবে।
বাড়িভাড়ার ৫ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পরপরই এ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতার প্রজ্ঞাপন আমাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়। কিন্তু ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে রোববার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় শহিদ মিনারে ৮ম দিনের মতো অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে দুপুর ১২টায় শিক্ষাভবন অভিমুখে ভুখা মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাড়ি ভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ, মেডিকেল ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
এর আগে এদিন সকালে বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এবং সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা বৃদ্ধিতে সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ।
উপসচিব মিতু মরিয়মের স্বাক্ষর করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, ৬ শর্ত পালন সাপেক্ষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা) দেওয়া হবে। আদেশ আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নং গেটের কার্গো ভিলেজ আগুনে পুড়ে যাওয়ার ২১ ঘণ্টা পরও ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ধ্বংসস্তূপ ভবনে এখনও পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টার পরও এমন চিত্র দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, আগুন এখনও পুরোপুরি নির্বাপণে আসেনি। এজন্য ধোঁয়া উড়ছে। তবে আমাদের ২২ ইউনিট আগুন নির্বাপণের কাজ করছে। আগুন যেন বাড়তে না পারে সেজন্য অনবরত পানি ছিটানো হচ্ছে।
এদিকে, সকাল থেকেই বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ধ্বংসস্তূপ দেখতে আসছেন ভুক্তভোগীরা। উৎসুক জনতার ভিড়ও দেখা গেছে। তবে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টে কর্মরত রেজাউল করিম রনি বলেন, শুক্র-শনিবার আমদানি বন্ধ থাকে। কিন্তু রপ্তানি সবসময় খোলা থাকে। সেই সুবাদে শনিবার দিন সকালে আমি এক্সপোর্ট করতে আসি। বৃহস্পতিবার আমরা টাকাও জমা দিয়েছি। কিন্তু মালামাল নিতে পারিনি। রোববার নেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আগুনের প্রভাব পড়বে দেশের তৈরি পোশাক কারখানায়। কারণ এখানে এমন পণ্য সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে শনিবার বা ছুটির দিন এমন ঘটনা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এছাড়া আগুনে হাজারও কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। একইসঙ্গে কাজ করেন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন, দুই প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ-আনসার সদস্যরা।
সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজটি মূলত পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি জায়গায় বা আট নম্বর গেটের পাশে। আর আগুন লেগেছে আমদানির কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে। এখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হয়। আগুনে এখানকার প্রায় সব মালামাল পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ভয়াবহ আগুনের কারণে বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ঢাকার বদলে সব বিমান চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে, তিনটি ফ্লাইট সিলেটে, চেন্নাই ও দিল্লি থেকে দুটি ফ্লাইট কলকাতায় অবতরণ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রাত ৯টার পর উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হয়। তবে ছয় ঘণ্টায় ২৩টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী।
তথ্য মতে, আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার ফাইটার, সিভিল অ্যাভিয়েশন, আনসারসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আনসার সদস্যই রয়েছেন ২৫ জন। তাদের সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিমানবন্দরের সূত্রমতে, তৈরি পোশাক কারখানার জন্য আমদানি করা বিপুল পরিমাণ কাপড় ও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল আগুন লাগা ভবনে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লেগেছে। কবে নাগাদ ফের কার্গো ভিলেজ চালু করা যাবে তা পরে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারে মিষ্টির বক্সের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিরোধের জেরে টর্চলাইট জ্বালিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের ইমামবাড়ি বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ১০ অক্টোবর বানিয়াচং উপজেলার সন্দলপুর গ্রামের আমির উদ্দিনের মালিকানাধীন নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি বাজারের ‘ভাই ভাই হোটেল’ থেকে কালিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সাদমান আহমেদ ইমন মিষ্টি ক্রয় করেন। মিষ্টির বক্সে অতিরিক্ত ওজন ধরা পড়লে ইমন বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। এতে হোটেল মালিকপক্ষ ও ইমন মিয়ার পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত শনিবার সন্ধ্যার পর উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় টর্চলাইট জ্বালিয়ে চলে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারজুড়ে টর্চের আলো আর চিৎকারে আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী।
মন্তব্য