নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকা জাতীয় পরিচয়ত্রের (এনআইডি) দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেয়া নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে হইচই। দায়িত্ব সরানোর সিদ্ধান্তের জন্য ইসির গাফিলতিজনিত জনদুর্ভোগকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে ইসিসহ সুশীল সমাজ সরকারি এই সিদ্ধান্তকে দেখছে সাংবিধানিক সংকট ও ইসির স্বাধীনতার কফিনে সরকারের শেষ পেরেক হিসেবে।
ইসি এনআইডির নিয়ন্ত্রণের আশা না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ-সংক্রান্ত সেবার মান বাড়িয়ে নাগরিকের দুর্ভোগ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
গত ১৭ এপ্রিল এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মে এনআইডি কার্যক্রম ও লোকবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করায় ব্যবস্থা নিতে ইসিকে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আশা ছাড়ছে না ইসি
জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া সহজ হবে না বলে মনে করে ইসি। দায়িত্ব হস্তান্তরে সাংবিধানিক সংকটের বাইরেও নৈতিকতার বিষয় রয়েছে বলে মনে করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্রের সুরক্ষা বিভাগকে এ দায়িত্ব স্থানান্তরের কথা বললেও ইসি তার কাজ অব্যাহত রেখেছে। ৩ জুন উপপরিচালক আরাফাত আরা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নাগরিকের দুর্ভোগ লাঘবে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয় ইসি।
এতে বলা হয়, ‘বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রতিরোধ/মোকাবিলায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাগণ বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-শিক্ষক ও বিদেশগামী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম যথাসম্ভব দ্রুত সম্পন্ন করবেন।
‘এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ যাতে হয়রানিমুক্তভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা পায়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা এবং সেবা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ জানানো হলো।’
এনআইডি থেকে ইসির আয়
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এনআইডি সেবা থেকে ইসি প্রায় ২৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে।
এনআইডির তথ্য-উপাত্ত যাচাই/সরবরাহ চার্জ, এককালীন, নবায়ন ও সাবইউজার চার্জ এবং হারানো এনআইডি তোলা বা সংশোধন থেকে এই টাকা আয় হয়েছে।
প্রায় ১৪০টি প্রতিষ্ঠান ইসির জাতীয় ভোটার তথ্যভান্ডার থেকে নাগরিকদের তথ্য যাচাই সেবা নিয়ে থাকে। তথ্য-উপাত্ত যাচাই/সরবরাহ চার্জ থেকে এখন পর্যন্ত ইসির রাজস্ব আয় হয়েছে ১৪৯ কোটি ১৭ লাখ ১৭ হাজার ১২৫ টাকা।
এই সেবা নিতে হলে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এককালীন, নবায়ন ও সাব-ইউজার চার্জ দিতে হয়।
এ বাবদ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ১৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার ৭৫০ টাকা এবং হারানো ও এনআইডি সংশোধন ফি থেকে আয় হয়েছে ৮২ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৭ টাকা।
এখন পর্যন্ত এনআইডি সেবা থেকে মোট আয় হয়েছে ২৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৭২ টাকা।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, শুধু রাজস্ব আয় নয়, এনআইডি সেবার মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, জমি রেজিস্ট্রেশন, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন, সিম নিবন্ধন, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, চাকরি প্রাপ্তিসহ সব ক্ষেত্রে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। অসংখ্য বেওয়ারিশ লাশের পরিচয়ও নির্ণয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এনআইডি সেবার মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ ভুয়া টিআইএনধারী শনাক্তকরণ, ১২ কোটি মোবাইল সিম নিবন্ধন/পুনর্নিবন্ধন, সরকারি-বেসরকারি ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে দিবা-রাত্রি পরিচিতি যাচাই সেবা প্রদান, তথ্যভান্ডারে ১০ আঙুলের ছাপ, আইরিস গ্রহণ ও সংরক্ষণ, করোনা দুর্যোগের সময় সফটওয়্যার আপগ্রেড করে অনলাইন সেবাদানের মাধ্যমে নাগরিকদের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দেয়া ও অনলাইন এনআইডি কপি দেয়া ও সোয়া ৭ কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রদত্ত নগদ টাকা সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনআইডি তথ্যভান্ডার থেকে প্রায় ৫০ লাখ নাগরিকের পরিচিতি যাচাই এবং দক্ষতার সাথে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ভুয়া/দ্বৈত আইডি/ব্যক্তি শনাক্ত করে সঠিক নাগরিকদের কাছে ঈদ উপহার নিশ্চিতকরণ, বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি সংবলিত ইভিএম প্রচলনের মাধ্যমে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে।’
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লাখ ভোটারের বায়োমেট্রিকসহ ডেমোগ্রাফিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
একটি জাতীয় তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার মাধ্যমে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে নিবন্ধিত সব ভোটারকে এনআইডি দেয়ার মাধ্যমে এই সেবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ করে।
ইসির নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এনআইডি সেবা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৫১৯টি উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস, ৬৪টি জেলা নির্বাচন অফিস, ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকেও নাগরিকদের এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম দিকে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা ফ্রি দেওয়া হলেও ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফি নেওয়া শুরু করে কমিশন।
কেন স্বরাষ্ট্রে এনআইডি নেয়ার উদ্যোগ
গত ২৪ মে নির্বাচন কমিশনকে এনআইডি কার্যক্রম ও লোকবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিমের সই করা চিঠিতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজটি সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দিতে তিনটি নির্দেশনা দেয়া হয়।
প্রথমত নির্দেশনায় বলা হয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর রুল ১০ অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ থেকে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে হবে।
দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০১০-এ ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পরিবর্তে ‘সরকার’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করাসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তৃতীয় ও শেষ নির্দেশনায় রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনআইডি নিয়ে প্রথম থেকেই নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নাগরিকরা। পরিচয়পত্রে তথ্য ভুল করা, জীবিতকে মৃত বানিয়ে দেয়াসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ভুল সংশোধনেও লাগে দীর্ঘ সময়।
পাসপোর্ট ইস্যু, বিভিন্ন ব্যক্তির পরিচয় (বিশেষ করে অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি) নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারের সহায়তা লাগে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং থেকে তারা এ তথ্য সংগ্রহ করে। তবে অন্যের তথ্যভান্ডার থেকে সহায়তা পেতে বেশি সময় ব্যয়সহ আরও কিছু বিষয়ে তাদের বেগ পেতে হচ্ছিল।
‘স্বরাষ্ট্রের হাতেই থাকা উচিত’
জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকা উচিত বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র আর ভোটার আইডি কার্ড এক বিষয় নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়। পৃথিবীর সব দেশে এই জাতীয় পরিচয়পত্র দেয় স্বরাষ্ট্র অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এটি নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করে।’
বাংলাদেশে শুধু ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রকল্প যৌক্তিকভাবেই নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখন যখন ভোটার তালিকা নয়, জাতীয় পরিচয়পত্র করা হচ্ছে, তখন পৃথিবীর সব দেশের মতো এটি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকাই যুক্তিযুক্ত।’
নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমত জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য সকল তথ্য-উপাত্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংগ্রহ করে; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দেয়। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদেরকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট দেয়। তাদেরকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই সিদ্ধান্ত।’
সাংবিধানিক সংকট দেখছে ইসি
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসির কাছ থেকে অন্য কোনো সংস্থার অধীনে নেয়া হলে সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তাই সংকট এড়াতে এটি ইসির অধীনেই থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সংক্রান্ত চিঠি চালাচালির মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসির সঙ্গে দুই দফা সাক্ষাৎ করেন।
তাদের যুক্তি, এনআইডি কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নিলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটাদানে জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভোটার সার্ভার নিয়ে সংকটের সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রের অর্থের বিরাট অপচয় হবে।
সিইসি বলেন, ‘এনআইডি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। ভোটার তালিকা ও এনআইডি কার্যক্রম আলাদাভাবে করা যাবে না। এনআইডি কার্যক্রম অন্য কোনো সংস্থার হাতে গেলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে।
‘তাই এটি ইসির অধীনেই থাকা উচিত। আমরা বিষয়টি নিয়ে কেবিনেটের কাছে লিখিত যুক্তি তুলে ধরব। এ জন্য এনআইডি মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
এদিকে জনবলসহ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরের নির্দেশনাকে ইসির কফিনে শেষ পেরেক বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা বোধগম্য নয়।’
বিষয়টিকে সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমি তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। মন্ত্রিপরিষদের যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত ২৪ মের পত্রে এনআইডি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ‘নির্বাচন কমিশন’-এর বদলে ‘সরকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে এনআইডির বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের নির্দেশ দেয়া কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচ্য। ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজনির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হবে।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, দায়িত্ব হস্তান্তরে নির্বাচন ব্যবস্থা ও কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হবে।
‘এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না বলে মনে করি। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর। বিষয়টি কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের শামিল।’
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে, যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এক ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এর অনুপ্রেরণা ও অবদানের প্রশংসা করেন।
চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৫ সাল কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীও।
তিনি আট দশক আগে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের অপরিসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শক্তিশালী রেকর্ডসহ একটি প্রধান শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী নেতৃত্বে, চীনা জনগণ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণের অলৌকিক সাফল্য অর্জন করেছে। চীন সর্বদা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হিসেবে থাকবে।”
রাষ্ট্রদূত ইয়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভের উপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছেন, যা বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার একটি নজির।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি বলেন, দুই দেশ শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও সমান সমান সহযোগিতার দ্বারা পরিচালিত সুসম্পর্কেও ভিত্তিতে সর্বদা "ভালো প্রতিবেশী, আন্তরিক বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে।"
তিনি আরও বলেন, "চীন বাংলাদেশকে তার আধুনিকীকরণের যাত্রায় সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং ভবিষ্যতে একটি চীন-বাংলাদেশ সম্প্রদায় গঠনে একটি নতুন অধ্যায় লিখতে প্রস্তুত।"
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের উন্নয়ন অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবাতে চীনের অবদানের প্রশংসা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে, এই ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশী জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা প্রদান করেছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দুটি দেশ জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, প্রধান রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশী কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞ সহ ৬০০ জনেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় ইউনান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ এবং কোয়ানঝো আর্ট ট্রুপের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, জাতিগত নৃত্য, অ্যাক্রোব্যাটিক্স এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দর্শকদের কাছে তা খুবই উপভোগ্য ছিল।
অতিথিরা চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রদর্শনীও পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে এন্টারপ্রাইজ বুথ, পর্যটন প্রচারণা এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কর্নারও ছিল, যা দর্শকদেরও ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআরের (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পক্ষে নয় বিএনপি। এটার কোনো ভিত্তি নেই। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে হবে এবং সেটা ঐক্যবদ্ধভাবে। যেকোনো বিষয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান হবে মনে করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনার মধ্যে কর্মসূচি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। রাজপথে নামলেই সমস্যার সমাধান হবে কি? আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি কোনো ইস্যুতেই আন্দোলনে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ সময় বিএনপি কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে যোগ দেব। কিন্তু এজেন্ডা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
অনুমোদিত ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশের মধ্যে সরবরাহ সীমিত থাকায় গত দুই দিনে মোট ৫৬.২৫ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে ৩৭.৪৬ মেট্রিক টন এবং বৃহস্পতিবার ১৮.৭৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন অফিসার সজীব সাহা, মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করেছি যে রপ্তানির জন্য নির্বাচিত প্রতিটি ইলিশ স্বাস্থ্যসম্মত, রোগমুক্ত এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যোগ্য। এই পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যে প্রতিটি চালান নিরাপদ ও উচ্চমানের। এছাড়া সরবরাহ সীমিত থাকায় দুই দিনের রপ্তানি অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় কম হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য মানসম্পন্ন ইলিশ রপ্তানি বজায় রাখা।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩,৯৫০ টনের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে একাই রপ্তানি হয়েছে ৫৩২.৩ মেট্রিক টন।
স্থানীয় ইলিশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সততা ফিশের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, দুর্গাপূজা ও আসন্ন উৎসবের কারণে ইলিশের চাহিদা বেশি। আমরা চেষ্টা করছি বাজার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ সরবরাহ বজায় রাখতে। তবে মাছের সীমিত পরিমাণ রপ্তানিতে কিছুটা বাধা থাকলেও আমাদের কার্যক্রম সচল রয়েছে।
"একজন শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষকের কাছে পড়লে আপনি তাকে কম মার্কস দিবেন, আপনার কাছে পড়লে প্র্যাক্টিক্যালে ভালো মার্কস দিবেন, তার সাথে ভালো আচরণ করবেন এটাও কিন্তু এক ধরণের দুর্নীতি। দুর্নীতি কিন্তু শুধু টাকা খাওয়া না, শুধু অন্যায় করা না। শিক্ষার্থী যে শিক্ষকের কাছেই পড়ুক না কেন তার খাতাটি আপনি নিরপেক্ষভাবে দেখবেন। আপনারা কখনোই শিক্ষার্থীদের সাথে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করবেন না। দুর্নীতি করে কিন্তু কেউই বেশি দূর এগোতে পারে না। পরকালের কথা বাদ দিয়ে ইহকালেও কিন্তু দুর্নীতি করে কেউ সফল হতে পারেনি। কাজেই আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করুন।"
এসময় পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভালো ফলাফল পেতে হলে তোমাদেরকে পরিশ্রম করতে হবে। পরীক্ষা ভয় পাওয়ার বিষয় নয়, এটি জীবনের একটি ধাপ মাত্র। নিয়মিত পড়াশোনা, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তোমাদের পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায় একদিন পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য গর্বের কারণ হবে।”
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আপনারা আপনাদের বাচ্চাদেরকে সময় দিন। অফিস থেকে এসে রিলাক্স মুডে মোবাইল দেখবেন না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলবেন না। আপনি সন্তানের সামনে মোবাইল ব্যবহার করলে ও কিন্তু ভালো কিছু শিখবে না।"
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজবাড়ীর পাংশায় এস.এস.সি-২০২৬ পরীক্ষার প্রস্তুতি, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মন্ডলীর উপস্থিতিতে অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা আক্তার এসব কথা বলেন।
পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন পাংশা পৌরসভার পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কাজী আব্দুল মাজেদ একাডেমি ও এয়াকুব আলী চৌধুরী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম. আবু দারদা'র সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মো. বাহারাম হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ।
সঞ্চালনায় ছিলেন উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামসুল আলম (সোহরাব)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সান্ত্বনা দাস।
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রস্তুতি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও পবিত্র গীতা পাঠ করা হয়। আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক ৩টি বিদ্যালয়ের মাঝে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় আধুনিক পৌর পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নান্দাইল মডেল থানার সংলগ্ন এ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার।
এ সময় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তারকে ঘিরে শুরু হয় প্রশংসার ঢল। স্থানীয়রা মন্তব্য করছেন, তাঁর দূরদর্শী উদ্যোগ ও সাহসী পদক্ষেপের কারণেই অবশেষে নান্দাইলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, “এ পার্ক হবে নান্দাইলবাসীর জন্য একটি উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্র। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ এখানে সময় কাটাতে পারবেন। একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা এবং সামাজিক আড্ডার একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে এটি ব্যবহৃত হবে।”
তিনি আরও জানান, পার্কে বসার স্থান, ফুলের বাগান, হাঁটার ট্র্যাকসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নান্দাইলে দীর্ঘদিন ধরে একটি মানসম্মত বিনোদনকেন্দ্রের অভাব ছিল। পরিবার নিয়ে বেড়ানো কিংবা শিশুদের খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত জায়গার অভাবে অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হতো। নতুন এ পৌর পার্ক সেই শূন্যতা পূরণ করবে বলেই মনে করছেন তারা।
ফেসবুকে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নান্দাইলের সৌন্দর্যবর্ধনে ইউএনও সারমিনা সাত্তারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। কেউ কেউ লিখেছেন, “এ পার্ক শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।”
উপস্থিত বক্তারাও একে নান্দাইলের জন্য যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, এ পার্ক উদ্বোধনের পর থেকে পুরো এলাকা প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, নান্দাইল পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এটি শুধু বিনোদন কেন্দ্র নয়, বরং নান্দাইল পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধনেও নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে টানা তৃতীয় দিনের মতো জেলা ও ৯টি উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এ কর্মসূচিতে বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির শত শত নেতা-কর্মী অংশ নেন। কর্মসূচি চলাকলীন নির্বাচন অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কর্মসূচি শেষে কমিটির কোকনভেনার এম এ সালাম জানান, (আজ) শুক্রবার ও (কাল) শনিবার কোনো কর্মসূচি না থাকলেও আগামী রোববার ও সোমবার দুই দিন আবারও ঘেরাও কর্মসূচি চলবে। এবং সোমবারের কর্মসূচি চলাকালীন পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করীম বলেন, আপনারা ইতোমধ্যেই দেখেছেন বাগেরহাটবাসী তাদের দাবি আদায়ে একত্র হয়েছে এবং রাজপথে নেমেছে। তবুও নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিকে আমলে নিচ্ছে না। কমিশন যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে যেভাবে আন্দোলন করলে দাবি আদায় সম্ভব, বাগেরহাটবাসী সেভাবেই আন্দোলন চালাবে।
সর্বদলীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মাদ ইউনুস জানিয়েছেন, গত ১৭ বছর আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে এসেছি। যার কারণে মামলা-হামলাকে আমরা ভয় পাই না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
এদিকে চারটি আসন বহালের দাবিতে দায়ের করা রিটে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে, যেখানে নির্বাচন কমিশনকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দের তিন বছরে উৎপাদনে গেছে মাত্র একটি কারখানা। অথচ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩৪টি প্লট। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটগুলোর বেশিরভাগই পড়ে আছে ফাঁকা। সেখানে গজিয়ে উঠেছে কাঁশবন। দ্রুত বাকি সব কারখানা চালুর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্পনগরী। প্রধান ফটক পেরিয়ে চোখে পড়ে কয়েকটি নির্মাণাধীন কারখানা। তাদের মধ্যে মেসার্স জিলানী ফ্লাওয়ার মিলস অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাকি কয়েকটি কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। একটু সামনে এগোতেই দেখা মিলছে সারি সারি কাঁশবন। প্রতিটি প্লটেই ফুটেছে ফুল। নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ৪০ একর ভূমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য সরকার অনুমোদন দেয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। তবে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু হলেও আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম।
প্লট বরাদ্দের পর তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে আটটি কারখানা, নির্মাণাধীন সাতটি এবং নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে ১৮টি। বাকি ২২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করেননি।
ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীতে ১২৪ শিল্প ইউনিটে ২৩৪ প্লট বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্য খাদ্য উৎপাদন খাতে ৪০টি, বস্ত্র উৎপাদন খাতে তিনটি, রসায়ন খাতে ৪০টি, চামড়া ও রাবার শিল্প উৎপাদন খাতে ২২টি, প্রকৌশলী উৎপাদন খাতে ১৪টি এবং প্যাকেজিং উৎপাদন খাতে পাঁচটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি শিল্পনগরীর সব কারখানা চালু হয়, তাহলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। বদলে যাবে ভৈরবের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা পাদুকা শিল্পের ক্লাস্টারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে এ শিল্পে জড়িতরা সহজ শর্তে ঋণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলাত মিয়া বলেন, ‘বিসিকের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় এখানে রাত হলেই অপরাধ চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। ফলে বিসিক সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে।’
কালিকা প্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে দাবি, যেন দ্রুত বিসিকের সব কার্যক্রম শুরু করা হয়। এটা হলে এলাকার হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ বলেন, বিসিক শিল্পে তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদনে যেতে পেরেছে। বাকিগুলো এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। তাদের মধ্য বরাদ্দ পাওয়া বেশিরভাগই এখনো স্থাপনার কাজ শুরু করেনি। যারা বিসিক শিল্পে এখনো তাদের বরাদ্দকৃত প্লটে কোনো কাজ শুরু করেননি, সেসব প্লটের মালিকানা বাতিল করে নতুনভাবে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভৈরব শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবিদুর রহমান খান জানান, শিল্পনগরীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হতে কিছু সময় লাগবে। তবে বিসিক শিল্পের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অফিসিয়াল কার্যক্রমসহ শিল্পের নিরাপত্তা রক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি, খুব শিগগির বিসিক শিল্পের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হবে।
এদিকে, গত ১৭ আগস্ট এক আনন্দঘন ও প্রেরণাদায়ক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিসিক জেলা কার্যালয়, কিশোরগঞ্জ-এর উদ্যোগে আয়োজিত 'শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্স (১ম ব্যাচ)'-এর উদ্বোধন করা হয়। হাওরপাড়ের সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিসিকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ সাইফুল ইসলাম। সেদিন তিনি তাঁর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে বলেন, বিসিক সৃষ্টি লগ্ন থেকেই সারা দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের দৃঢ় মনোবল, উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে একদল স্বপ্নবাজ তরুণের নতুন পথচলা শুরু হয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে, বিসিকের চেয়ারম্যান বিসিক শিল্পনগরী, কিশোরগঞ্জ এবং শিল্পনগরী, ভৈরব পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শিল্পনগরী দুটির সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন, উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
মন্তব্য