দেশের প্রথম এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছে এক বছর হলো। ঢাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও এর স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে উত্তরের জেলা লালমনিরাহাটে।
প্রায় ৬৪০ একর জমিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে সমীক্ষা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। ১০ কোটি টাকারও কম ব্যয়ের সমীক্ষা প্রকল্পে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ চাওয়া হয়েছে গাড়ির পেছনে। এতে গাড়ি কেনা, নিবন্ধন, রক্ষণাবেক্ষণ ও তেলের পেছনেই যাবে ব্যয়ের ২১ শতাংশ অর্থ।
এক বছরে বাস্তবায়নযোগ্য ছোট এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের গাড়ি কেনা ও তার ব্যয় এবং অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত প্রাক্কলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। আবার এভিয়েশন-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প হলেও তাতে অ্যারোস্পেস-এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ পরামর্শকও রাখা হয়নি, যা নিয়েও আপত্তি রয়েছে কমিশনের।
আগামী ২ জুন অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় (পিইসি) আপত্তি বিষয়ে জানতে চাইবে কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলার হাড়িভাঙা এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’- বিএসএমআরএএইউর স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে। এ জন্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি ডিভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক একটি সমীক্ষা প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের আলোকেই হবে মূল কাজের ব্যয় প্রাক্কলন।
কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ছোট এই প্রকল্পতেও অনেক খাতেই অতিরিক্ত ব্যয় চাওয়া হয়েছে। এমন একটি প্রকল্পে যদি এক-চতুর্থাংশ গাড়িতেই ব্যয় হয়, সমীক্ষার অন্য কাজের কী হবে? ইচ্ছেমতো ব্যয় করতে চাইলে তো হবে না। পরিকল্পনা কমিশনসহ অন্যদের নিয়ে প্রকল্প ব্যয় যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি আছে। এ কমিটির সভায় সব দিক বিবেচনা করে যা যৌক্তিক হবে, তাই দেয়ার সুপরিশ করা হবে। তবে অবাস্তব আবদার করাও উচিত নয়।’
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের প্রায় প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যয় নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এগুলোতে প্রচুর অনিয়ম হয়, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রচুর ব্যয় করা হয়। এর অন্যতম হচ্ছে গাড়ি কেনা। এগুলো প্রকল্প পরিচালকসহ শীর্ষ ব্যক্তিরাই ব্যবহার করেন। যদিও সেগুলো তেমন প্রয়োজন হয় না। কারণ তারা প্রকল্প এলাকায় থাকেন না। তা ছাড়া প্রয়োজনে দু-একটি গাড়ি হায়ার (ভাড়া) করলেই হয়।’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার লোকেরা এসে হোটেলে থেকে ভাড়া গাড়ি নিয়ে সমীক্ষার কাজ করেন। কিন্তু আমাদের লোকেরা তা পারেন না। তাদের গাড়ি কেনা লাগেই।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, যা বাংলাদেশের এভিয়েশন এবং অ্যারোস্পেস (মহাকাশ) সম্পর্কিত প্রথম এবং একমাত্র উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিমানশিল্পে দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দক্ষ বৈমানিক, বিমান প্রকৌশলী, বেসামরিক বিমান পরিবহনের সব স্তরের দক্ষ জনবল, বিমান তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়, মহাকাশ-সম্পর্কিত বিভিন্ন স্তরের উচ্চশিক্ষা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হবে।
সমীক্ষা প্রকল্প প্রস্তাবানায় দেখা যায়, সমীক্ষা প্রকল্পের জন্য ১ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকায় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার কথা বলা হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। তেলের জন্য ১৮ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং প্রায় ১২ লাখ টাকা বা দেড় শতাংশ অর্থ চাওয়া হয়েছে গাড়ির নিবন্ধন ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে। সব মিলিয়ে গাড়ির পেছনেই খরচ হবে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা বা ২১ শতাংশ।
প্রস্তাবিত সমীক্ষা প্রকল্পে অন্য ব্যয়ের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের জন্যও ৫৮ লাখ টাকা রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এক বছরের জন্য নেয়া এই প্রকল্পে ৮ লাখ টাকার অফিস সরঞ্জাম, দেশে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের পেছনে ৬ লাখ টাকা, ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং ব্যয়, ২ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন ব্যয় এবং ৪ লাখ টাকা বিনোদন ব্যয় ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া পরামর্শক খাতে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা, জরিপকাজে ২ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ম্যানেজমেন্ট খাতে ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, সম্মানী ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ অন্যান্য ব্যয়ও রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন উঠেছে গাড়ির পেছনে খরচ নিয়ে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন নিজেদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি স্বল্প বাজেটের। তাই এতে এত বেশি টাকা গাড়ির পেছনে ব্যয় করা উচিত নয়। প্রকল্প ব্যয়ে গাড়ি কেনার পেছনে ১৮ শতাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও তেলের পেছনে আরও ৩ শতাংশসহ মোট ২১ শতাংশ ব্যয় যৌক্তিক বা সমীচীন নয়। সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের জন্য প্রকল্পের প্রয়োজনে এক বছর মেয়াদে গাড়ি ভাড়া করার প্রস্তাব করা ছিল যুক্তিযুক্ত। এ সম্পর্কে পিইসি সভায় সংস্থার প্রতিনিধির কাছে জানা যেতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের এভিয়েশন-সংক্রান্ত পড়ালেখার প্রয়োজন আছে। তবে এত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে নতুন আরেকটি প্রয়োজন কি না, তা দেখা উচিত ছিল। বিদ্যমান প্রতিটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ-সম্পর্কিত আলাদা বিভাগ বা কোর্স খুলেও তা চালানো যেত। কারণ এসব বিষয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েটসহ বিভিন্ন পর্যায়ে জানাশোনা মানবসম্পদ অছে কি না, তা দেখতে হবে। সমীক্ষা প্রকল্পে গাড়ি কেনার প্রয়োজন নেই বলেও মনে করি আমি।’
সমীক্ষা কার্যক্রমে অধিক পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ প্রয়োজন বলে মির্জ্জা আজিজুল মন্তব্য করেন। আবার আকাশপথ ও মহাকাশ-সম্পর্কিত প্রকল্প হলেও তাতে একাধিক আরবান প্ল্যানার বা পরামর্শক রাখা হয়েছে, কিন্তু কোনো এভিয়েশন-অ্যারোস্পেস বিশেষজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়নি। এতে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষা করার কথা বলা হলেও পৃথক পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব বিষয়ে যৌক্তিকতা সংস্থার প্রতিনিধির কাছে জানতে চাইবে কমিশন।
সমীক্ষা প্রকল্প শুরু করতেও বিলম্ব হয়েছে। প্রথমে প্রকল্পটি সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত এক বছর বাস্তবায়ন সময় ধরা হয়েছিল। এরই মধ্যে যা প্রায় পার হয়ে গেছে। অর্থাৎ সমীক্ষা শুরুর আগেই সময় বাড়বে। তা ছাড়া প্রস্তাবনায় মাত্র এক বছরে অনেক বিষয়ে তথ্য যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পে দুটি বাস্তবায়নকারী সংস্থার কথা বলাও হয়েছে।
অন্য খাতের ব্যয় নিয়ে কমিশন বলছে, বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় সুস্পষ্ট ও যৌক্তিক হওয়া প্রায়োজন। ম্যানেজমেন্ট চার্জ হিসেবে ফিজিবিলিটি কমিটির মিটিং, পিইসি/টিইসি মিটিং, ড্রইং অ্যাপ্রুভাল কমিটির মিটিংয়ের সম্মানী নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন। ফরেন ট্যুর, এন্টারটেইনমেন্ট এক্সপেন্স, সেমিনার ও কনফারেন্স এক্সপেন্স, কনভেইয়েন্স, ট্যুর-ট্রাভেল (অভ্যন্তরীণ), প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং, অনারিয়াম বা সম্মানী ইত্যাদি খাতের ব্যয় যৌক্তিক করা এবং এসব ব্যয়ের বিস্তাবিত বিবরণ সম্পর্কে সভায় আলোচনা হতে পারে।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংসদে এ-সম্পর্কিত বিল পাসের পর দেশের প্রথম এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়টি পরের বছরের (২০২০ সাল) জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে। ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম ব্যাচে বিএসসি এন অ্যারোনিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইন এভিয়েশন সেফটি অ্যান্ড অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন এবং এমবিএ ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট– এই তিনটি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের দায়িত্বে রয়েছেন এয়ার ভাইস মার্শাল এ এইচ এম ফজলুল হক।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে লালমনিরহাটে বিএসএমআরএএইউর অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বিমানবাহিনী-প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত। লালমনিরহাটে মূল ক্যাম্পাসের পাশাপাশি ঢাকার আশকোনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা থাকবে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মান দিতে আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানি, এভিয়েশন কোম্পানি ও এভিয়েশন অথরিটি, ইউরোপীয় বহুজাতিক কোম্পানি এয়ারবাসের সঙ্গে সহযোগিতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়া শীর্ষ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটি, সারে ইউনিভার্সিটি এবং জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টারসহ ইউরোপের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণায় সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরের আদলে এই ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের শিল্পখাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পরিবেশবান্ধব নীতি অনুসরণ করছে দেশের সুপারব্র্যান্ড ও টেক জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। জিরো কার্বন নিঃসরণ, সাশ্রয়ী জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্লিন ও গ্রিন এনার্জি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নিজস্ব অর্থায়নে ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ভাসমান (ফ্লোটিং) সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে ওয়ালটন। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের শিল্পখাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের পথে আরেকটি নতুন মাইলফলক।
ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সের জলাশয়ের ওপর স্থাপন করা হয়েছে এই ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফ্লোটিং সোলার প্রজেক্ট, যা দেশের বেসরকারি খাতে নির্মিত সবচেয়ে বড় ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরে স্থাপিত ২.৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে জলাশয়ের ওপর ০.৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্যানেল ভাসমানভাবে স্থাপন করা হয়েছিল।
ওয়ালটনের এনভায়রনমেন্ট, হেলথ অ্যান্ড সেফটি বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান রাজু বলেন,
“ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ওয়ালটন নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। এটি প্রমাণ করে, ভবিষ্যতের টেকসই শিল্পোন্নয়ন প্রকৃতি ও প্রযুক্তির ভারসাম্যের মাধ্যমেই সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, জলাশয়ের ওপর স্থাপিত এই প্রকল্প শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই করছে না, বরং মাছ চাষ, ভূমি সংরক্ষণ, পানির বাষ্পীভবন হ্রাস ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ বা আংশিক উৎপাদনে থাকলে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেট মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাজু জানান, প্রকল্পে ব্যবহৃত ফ্লোটিং স্ট্রাকচারগুলো ফুড-গ্রেড প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, যা পানি ও জলজ প্রাণীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্যানেলগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে মাছের স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত না হয়। এই সিস্টেম আগামী ২০ বছর পর্যন্ত কার্যকরভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম থাকবে।
উল্লেখ্য, ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ, ফুটপাত ও খালি জায়গায় ১০ মেগাওয়াট সৌর শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শিল্পপ্রক্রিয়ায় পানি সাশ্রয় ও পুনঃব্যবহারের জন্য ইটিপি’র মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত পানির প্রায় ৭৫ শতাংশ নিরাপদভাবে পুনঃব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ই-বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার ও আপসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য হ্রাস ও সম্পদের পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করছে ওয়ালটন।
এসব কার্যক্রমের ফলে প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৯১১,৮২৩ মেট্রিক টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস এবং সামগ্রিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট ১০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়ালটন শুধু পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণই করেনি, বরং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই শিল্প ও সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি আদর্শ মডেল তৈরি করেছে।
জেবি/এসডি
ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম (DMF) দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করেছে “ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”, যা বাংলাদেশের অনুপ্রেরণাদায়ক সাংবাদিক, মিডিয়াকর্মী ও উদ্ভাবকদের স্বীকৃতি জানাতে একটি মহোৎসব।
এই মর্যাদাপূর্ণ আয়োজনে সাংবাদিকতা, উদ্ভাবন ও মিডিয়ার সৃজনশীলতায় অসামান্য অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানানো হয়, যাদের কাজ সমাজে স্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডিজিটাল মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার ও ডিএমএফ এর সাধারণ সম্পাদক রায়হান রবিন। তিনি বলেন, ডিএমএফ-এর এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ডিজিটাল সাংবাদিকতার নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পেশাদারিত্ব ও উদ্ভাবনের মান উন্নয়ন করা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন “ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”-এর জুরি বোর্ডের সদস্যরা, যারা দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের সম্পাদনা ও ডিজিটাল নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তব্য
সংগঠনের সভাপতি ও দ্য বাংলাদেশ টাইমস-এর ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন,
“নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল সাংবাদিকতা ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করা, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গণমাধ্যমকে আরও এগিয়ে নেওয়া এবং সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়াই এই আয়োজনের লক্ষ্য। সাংবাদিকতা পেশাকে আরও শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়ার সম্ভাবনাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরাই ডিএমএফ-এর মূল উদ্দেশ্য।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. তৃণা ইসলাম (হেড অব অপারেশনস, দ্য বিজনেস ডেইলি) ও ফয়সাল তিতুমীর (সিনিয়র প্রেজেন্টার, যমুনা টেলিভিশন), যারা সজীব উপস্থাপনায় পুরো আয়োজনে প্রাণ ঢেলেছেন।
প্রধান অতিথি: জনাব শফিকুল আলম, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
বিশেষ অতিথি: জনাব ফয়েজ আহমেদ, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
গেস্ট অব অনার:
২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিএমএফ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়া পেশাজীবীদের অন্যতম শীর্ষ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যেখানে টেলিভিশন, প্রিন্ট ও অনলাইন সাংবাদিকদের একত্র করে প্রশিক্ষণ, উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল মিডিয়া ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করার কাজ করছে।
জুরি বোর্ড (২০২৫)
পুরস্কারপ্রাপ্তরা (প্রফেশনাল বিভাগসমূহ)
জুরি স্পেশাল অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা
এই সম্মাননায় ডিএমএফ আবারও প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আজ শুধুমাত্র সংবাদ প্রচার নয়—এটি প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার সমন্বয়ে সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
২৬ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার,, প্রথমবারেরে মতো গেমিফিকেশন লার্নিং প্রোগ্রাম বিষয়ে একটি ইভেন্টের আয়োজন করছে GREC BD & Aemers Admission Worldwide। এই প্রোগ্রামটি বিশেষভাবে বর্তমান আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে আলোচনা , চিন্তাভাবনা, দলবদ্ধ কাজ, সার্ভের মাধ্যমে এ গেমটি ডিজাইন করেছে। প্রোগ্রামে পাঁচটি ইন্টারেক্টিভ লার্নিং গেম থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করবে। প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে শেখা, গঠনমূলক চিন্তাভাবনা, দলগতভাবে কাজ করা এবং সমস্যা সমাধান কিভাবে করতে হয় শেখার সুযোগ পাবেন।
এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান এই গেম এর মাধ্যমে তাদের অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটিস বোঝা এবং ক্রিটিক্যাল সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়তা করবে এবং উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের এই যাত্রাকে আরও সহজ করবে। এই গেমটি তৈরি করেছে কিছু মেধাবী আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী। তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও কাজের সময় যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই এটি নির্মিত। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা যদি এই গেম থেকে উপকৃত হয়, তবে আমাদের এই উদ্যোগই হবে সত্যিকারের সফলতা।
এছাড়াও এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাল্টিপল-চয়েস, ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক, ড্র্যাগ-অ্যান্ড-ড্রপ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখবে কিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়, ব্যবসা ও ফাইন্যান্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হয় এবং জীবন ও কর্মধারার পরিবর্তন ঘটে।
এখানে ৫০-এর অধিক শিক্ষার্থী সনদপত্র পেয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা ও অভিভাবক অংশগ্রহণ করে তাদের সাফল্য উদযাপন করেছেন। এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে অভিভাবক, অতিথি ও কমিউনিটি লিডাররাও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জেলার মানুষের গড়ে মাথাপিছু আয় বর্তমানে ৫ হাজার ১৬৩ মার্কিন ডলার। এটি দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ের প্রায় দুই গুণের কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছর (২০২৪–২৫) শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নবিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয়ের এমন তথ্য জানানো হয়।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বার জানায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালে করা জেলাভিত্তিক জিডিপির তথ্যকে ভিত্তি ধরে এ জেলার বিনিয়োগ, ভোগ, ব্যয়, আমদানি, রপ্তানি, আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা জেলার মাথাপিছু আয়ের এ হিসাব অনুমান করা হয়েছে। যদিও ঢাকার মাথাপিছু আয় ও জিডিপির এসব তথ্যের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি।
সর্বশেষ গত মে মাসে জাতীয় মাথাপিছু আয়ের তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। এতে উঠে আসে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন (২০২৪–২৫ অর্থবছর) ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এই মাথাপিছু আয় এযাবতকালের রেকর্ড। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। তবে বিবিএস বিভাগ বা জেলাভিত্তিক মাথাপিছু আয়ের হিসাব করে না।
মাথাপিছু আয় ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।
বিবিএসের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২১–২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। এরপর ২০২২–২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। গত অর্থবছরে তা আরও কমে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার হয়। মূলত ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিবিএসের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য হয়।
কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ ঢাকায়
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ কে এম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ সম্পন্ন হয় ঢাকা জেলায়। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ আসে এই জেলা থেকে। ঢাকাকে বিবেচনা করা হয় আর্থিক খাতের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাড়ে ৭০০–এর বেশি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ঢাকা জেলায় অবস্থিত।
আসাদুজ্জামান জানান, দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩২ শতাংশের বাস ঢাকা জেলায়। আর মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ঢাকায় থাকেন। ঢাকা খুবই শিল্পঘন জেলা। দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি হয় এ জেলা থেকে। সব মিলিয়ে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) এককভাবে ৪৬ শতাংশ অবদান রাখছে ঢাকা জেলা।
ইপিআই সূচক চালু করবে ঢাকা চেম্বার
দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা চেম্বার। প্রতি তিন মাস পরপর ইপিআই সূচক প্রকাশ করা হবে। এতে মূলত শিল্প ও সেবা খাতের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হবে এবং তার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
ঢাকা চেম্বারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ইপিআই সূচক নির্ধারণের প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ পরিমাপের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন সূচক, যেমন বিসিআই, ইজ অব ডুইং বিজনেস ইনডেক্স, জিডিপি প্রভৃতি রয়েছে। তবে এসব সূচক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত পরিবর্তন ও কারণগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে পারে না। সরকার অনেক সময় ভূ–অর্থনৈতিক পটভূমি নীতিনির্ধারণ করে, কিন্তু হালনাগাদ তথ্য না থাকায় সেগুলো সব সময় কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
এমন বাস্তবতায় ইপিআই সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাসকিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন সূচকে দেখা যায়, ‘দেশের অর্থনীতি ভালো করছে। কিন্তু বৈশ্বিক সূচকের কিংবা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখতে পাই, আমরা বিভিন্ন সূচকে সবচেয়ে নিচের দিকে থাকি। তাই এসব সূচকের তথ্যে আত্মতুষ্টির কারণ নেই; বরং এসব সূচককে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে তুলনা করে প্রকাশ করলে সেটি বেশি কার্যকর হবে।’
আর ইপিআই সূচকটি প্রতি মাসে প্রকাশ করা ও সূচকের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দেন ঢাকা চেম্বারের আরেক সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) মহাপরিচালক মো. নূরুল আলম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের (এসএসজিপি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ নেসার আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সৈয়দ মুনতাসির মামুন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম আতিকুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) নওশাদ মোস্তফা, পরিচালক মো. সালিম আল মামুন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. দীন ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট মিয়া রহমত আলী প্রমুখ।
ফ্রান্সের পারফরম্যান্স লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ড ইএলএফ লুব্রিক্যান্টস স্থানীয় গাড়ি মেকানিকদের দক্ষতা উন্নয়নে একদিনব্যাপী বিশেষ হাইব্রিড গাড়ি সার্ভিস প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করেছে।
টোটালএনার্জিসের এই ব্র্যান্ডের উদ্যোগে কর্মশালাটি শুক্রবার রাজধানীর কন্টিনেন্টাল ওয়ার্কস লিমিটেডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের বিভিন্ন সার্ভিস ওয়ার্কশপ থেকে আসা ৫০ জন অভিজ্ঞ মেকানিক প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
কর্মশালায় হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ, ইলেকট্রিক মোটর পরীক্ষা, হাইব্রিড ট্রান্সমিশন সার্ভিসিং, হাই-ভোল্টেজ নিরাপত্তা ও আধুনিক ত্রুটি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইএলএফ জানিয়েছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য স্থানীয় মেকানিকদের আরও দক্ষ করে তোলা, যাতে তারা গাড়ির কর্মক্ষমতা বাড়াতে, মেরামতের সময় কমাতে ও গাড়ির আয়ুষ্কাল দীর্ঘ করতে পারেন।
এতে চালক ও মালিকরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও হ্রাস পাবে বলে জানায় ইএলএফ।
প্রশিক্ষণটি স্থানীয় চাহিদা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সাজানো হয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল অটোমোটিভ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটি ইএলএফ-এর একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টোটালএনার্জিস বাংলাদেশের বাণিজ্যিক বিক্রয় পরিচালক টেরি হায়াশি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্কশপ মালিক, সার্টিফায়েড মেকানিক, প্রশিক্ষক, ফ্লিট সার্ভিস ম্যানেজার, মোটরযান সাংবাদিক, ইএলএফ পরিবেশক ও অন্যান্য অংশীদাররা।
ইএলএফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান সাজেদুর রহমান বলেন, ‘গাড়ির প্রযুক্তি দ্রুত বদলাচ্ছে, তাই তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। আজকের প্রশিক্ষণ তাদের জন্য স্বীকৃতি, যারা প্রতিদিন আমাদের সড়ক ব্যবস্থা সচল রাখছেন। পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক পরিবহনের ভবিষ্যৎ গড়তে আমরা বাংলাদেশের মেকানিকদের পাশে থাকতে পেরে গর্বিত।’
ইএলএফ বাংলাদেশের পরিচালক কোসুকে ইয়োশিদা বলেন, টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ মানে ভবিষ্যতের পরিবহন খাতকে শক্তিশালী করা। আমরা হাইব্রিড সার্ভিসিং জ্ঞান ও নিরাপদ কার্যাভ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে একটি টেকসই সার্ভিস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি।
আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের গাড়ির জন্য স্থানীয় কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইএলএফ, যা গাড়ির সার্ভিসিং মান, নিরাপত্তা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জি টু জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি শুরু করছে।
উভয় দেশের সরকারে মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে এ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর মধ্যে চুক্তিটি সই হয়। এর আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে।
প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি নোরস স্ট্রিড জাহাজটি শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে পৌঁছায়।
জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গমের মধ্যে ৩৪ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন চট্টগ্রামে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে রিজার্ভ বৃদ্ধি প্রশংসনীয়। তবে এই প্রক্রিয়া দেশের ঘোষিত বিনিময় হার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা তারা মূল্যায়ন করবে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক থমাস হেলব্লিং বলেন, “রিজার্ভের সঞ্চয়কে আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির একটি কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে যেহেতু দেশটি এখনো পেমেন্ট ভারসাম্যের চাপের মুখে রয়েছে।”
গত শুক্রবার হংকংয়ে আয়োজিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, পেমেন্ট ভারসাম্যের দুর্বলতা হ্রাসে রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সাফল্যের জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান।
তিনি জানান, ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনার অংশ হিসেবে আইএমএফের একটি মিশন চলতি মাসেই বাংলাদেশ সফর করবে। মিশনটি মাঠপর্যায়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। ফলাফল কী হয়, তা এখনো দেখার বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, সেটিও আইএমএফ মূল্যায়ন করবে বলে তিনি জানান।
আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ বৃদ্ধি ঘটেছে মূলত মুদ্রা প্রবাহ বাড়া, ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজার থেকে ডলার কেনার কারণে।
২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আমদানি বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হয়। ওই সময় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ‘ক্রলিং পেগ’ (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা) বিনিময় হার ব্যবস্থা বজায় রাখার পর, ২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হার ব্যবস্থায় নমনীয়তা চালু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত টাকার মান ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ, বিশেষ করে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মন্তব্য