জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই বাজারে আসতে শুরু করে নানান জাতের আম। জাতভেদে এসব আমের বাজারে আসার সময়ও ভিন্ন।
এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে কয়েক জাতের সুমিষ্ট আম। খুচরা বাজারে এসব আম বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। দাম নির্ভর করছে আম কতটা তাজা তার ওপর।
তাজা আম কীভাবে চেনা যায় তা জানালেন ফার্মগেটের বিক্রেতা মো. রমজান। প্রতিবছর তারা আমের মৌসুমে অস্থায়ী ফলের মেলা বসান। তাদের ‘সাতক্ষীরা-রাজশাহীর ফলের মেলা’ দোকানে শুধু আমই থাকে।
গত শুক্রবার রমজানের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, হিমসাগরের পাশাপাশি ল্যাংড়া আমও উঠেছে। জাতভেদে দামে তফাত তো আছেই। এমনকি একই জাতের আমেরও ভিন্ন দাম। হিমসাগর আমের দামের ট্যাগ লাগানো রয়েছে ১১০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ল্যাংড়া ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
রমজান বলেন, ‘আম যত তাজা, দামও তত বেশি। রাজশাহী-সাতক্ষীরায় আমাগো চুক্তি করা বাগান আছে। বাগান থেকেই আম ঢাকায় আনি।
‘মনে করেন, গাছ থেইক্যা পাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কস্টমারের সামনে আম রাখি। আইজকার তাজা আমের দাম বেশি, কাইল বা পরশুর আমের দাম একটু কম। গতকাইলেরটা ১৩০ টাকা, তার আগেরটা ১১০ টাকা।’
তিনি জানান, তাজা আমের বোঁটা তাজা ও সবুজ; আমও সবুজ। গাছ থেকে সবুজ আমই পাড়া হয়। ঢাকায় আসার পরও দুই থেকে তিন দিন সেগুলো সবুজ থাকে। তাজা আমের বোঁটা ছিঁড়লে সাদা কষ বের হয়। আর দুই দিন পর থেকেই বোঁটা শুকাতে শুরু করে বা বোঁটা ঝরে যায়। আমও একটু শুকাতে থাকে।
তিনি বলেন, বাজারে সবার আগে আসে গোপালভোগ আর হিমসাগর। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই আম আসা শুরু হয়েছে। এখন হিমসাগরের পূর্ণ মৌসুম। তাই হিমসাগরের রাজত্ব চলছে বাজারে। এটি আরও কিছুদিন থাকবে। এরপর আসবে রাজশাহীর অন্যান্য জাতের আম।
আমের যত জাত
দেখতে প্রায় একই রকম হলেও আমের নানান জাত রয়েছে। দেশের আমের জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, মোহনভোগ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, ফজলি, গুটি, রানিপছন্দ, রুপালি বা আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনা, গৌরমতি, মল্লিকা, হাড়িভাঙা ইত্যাদি। এর বাইরে বৌ-ভোলানি, জামাইখুশি, বৃন্দাবন, লখনা, বোম্বাই, দাউদভোগ, সিন্দুরি, ব্যানানা, ক্ষুদি খিরসাপাতি, কালীভোগসহ সব মিলিয়ে শতাধিক জাতের আম রয়েছে।
হিমসাগর ও খিরসাপাতি দেখতে প্রায় একই রকম। তবে খিরসাপাতি বড় ও একটু কালচে সবুজ ধরনের। ফজলি ও আশ্বিনা দেখতে প্রায় একই রকম। তবে মিষ্টতায় পার্থক্য রয়েছে। ফজলি মিষ্টি বেশি। আশ্বিনা পরিপক্ব না হলে একটু টক ধরনের।
পাকা আশ্বিনা একটু বেশি সবুজ। আর পাকা ফজলি আম হলুদ হয়। আবার গোপালভোগ ও রানিপছন্দের চেহারায় মিল আছে। তবে গোপালভোগ আকারে বড়; রানিপছন্দ একটু ছোট।
আমের বিষয়ে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের বিক্রেতা এমারত হোসেন বলেন, ‘বাজারে সব আম এক লগে উঠে না। এক আমের এক সময়। কাস্টমার সময়-অসময় না দেইখা আম খোঁজে। এখন রুপালি (আম্রপালি) চাইলে কী হবে?
‘এখন হিমসাগরের সময়। কোন আম কোন সময় পাকব, একটু মাথায় রাখন লাগব। হিসাব বুঝে কিনা লাগব। তাতে ঠকার সুযোগ কম।’
তিনি জানান, তার দোকানে হিমসাগর আম বিক্রি করছেন ৮০ টাকা কেজিতে। ল্যাংড়া ৭০ টাকায়। বাদামতলী পাইকারি ফলের বাজার থেকে আম আনেন। যেমন দামে কেনা পড়ে, তেমন দামে বিক্রি করেন।
মধ্য বাড্ডার ফল বিক্রেতা শ্যামল দাসও হিমসাগর ৯০ টাকা এবং ল্যাংড়া ৮০ টাকায় এবং লক্ষ্মণভোগ ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ‘আম বড় হওনের সময় বাগানে বৃষ্টির পানি লাগে। এবার বৃষ্টি কম। তাই আমও ছোট ছোট। পাবলিক খালি বড় আম খোঁজে। তবে ঝড়-তুফান না হওয়ায় আম নষ্টও হইছে কম।’
কোন আম কখন বাজারে আসবে
জাতভেদে বাজারে আম আসার সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার একই জাতের আম এলাকাভেদেও ভিন্ন ভিন্ন সময় পাকে। তাই বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম আসা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জেলায় গাছ থেকে আম নামানোর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী জেলায় গুটি জাতের আম ১৫ মে থেকে এবং গোপালভোগ ২০ মে থেকে নামানো শুরু হয়েছে। লক্ষ্মণভোগ ও রানিপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাতি ২৮ মে থেকে বাজারে আসবে। এ ছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে।
তবে সেদিক দিয়ে আগেই বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম। প্রশাসনের নির্দেশনামতো ১ মে থেকে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়েছে। ২১ মে থেকে পুরোদমে বাজারে আসা শুরু করেছে এ জেলার হিমসাগর আম।
২৭ মে থেকে ল্যাংড়া আম ও ৪ জুন থেকে আম্রপালি আম বাজারে আসবে। তবে কারও বাগানে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাকলে তা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে বাজারে ছাড়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ হিসাবে নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ আগেই বাজারে পাওয়া যায় আম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছে পাকলেই পাড়া হবে। এ জেলার আম জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসতে শুরু করবে। শুরুতে গাছ থেকে নামবে গুটি আম; পরে অন্যান্য আম।
নাটোর ও নওগাঁয় ১০ মে থেকে গুটি আম এবং ২০ মে থেকে গোপালভোগ পাড়া শুরু হয়েছে। অন্যান্য আমের মধ্যে লক্ষ্মণভোগ ২৫ মে, খিরসাপাতি ২৮ মে, ল্যাংড়া ৫ জুন, ফজলি ২০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, মল্লিকা ৩০ জুন, আশ্বিনা ১৫ জুলাই, রানিপছন্দ ২৫ মে, মোহনভোগ ১৫ জুন, বারি আম-৪ ১০ জুলাই, হাড়িভাঙা ২০ জুন এবং গৌরমতি আম ১৫ আগস্ট থেকে পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিক্রেতারা জানান, সাধারণত বাজারে যে জাতের আম সবার আগে ওঠে, তা হলো সাতক্ষীরার গোপালভোগ। এটির নিচের দিকটা একটু সরু। পাকলে হলুদ ভাব আসে। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ বা মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এটি বাজারে পাওয়া যায়।
রাজশাহীর গোপালভোগ বাজারে আসে মে মাসের মাঝামাঝিতে। মে মাসের শেষদিকে আসে হিমসাগর। তার পরেই খিরসাপাতি জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসে। দুটি খুবই মিষ্টি আম। প্রায় একই সময় আসে ল্যাংড়া আমও। দেখতে কিছুটা গোপালভোগের মতো হলেও ল্যাংড়া তত মিষ্টি হয় না।
জুন মাসজুড়ে বাজারে থাকে নানান জাতের আম। এ সময় আসে লক্ষ্মণভোগও। এ আমের মিষ্টতা অনেক কম। লক্ষ্মণভোগে চেনার উপায় হলো এটির পেটের মাঝামাঝি স্থানে ‘নাক’ আছে।
বাজারে এর একটু পরেই আসে ফজলি। জুনের শেষ দিকে থাকে এ আমের রাজত্ব। বাজারে তখন অন্যান্য আম কমতে থাকে। এ সময় ফজলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকে সবচেয়ে মিষ্টি আম আম্রপালি।
নিচের দিকে একটু সুচাল, ওপরে একটু গোল। এই আম মিষ্টি বেশি, স্বাদে অন্য রকম। জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আসে আশ্বিনা ও বারি আম-৪। তবে এরপর যেসব আম আসে সেগুলোর পরিমাণ খুবই কম।
বাগান ও পাইকারিতে দাম
মে মাসের শুরুতে সাতক্ষীরায় গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ বাগানে প্রতি মণ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। শুক্রবার গোপালভোগ আমের মণ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং হিমসাগর ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাদামতলী ফলের আড়তে শুক্রবার প্রতি কেজি হিমসাগর আম মানভেদে পাাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে এ আড়তে এক ক্যারেটের কম আম বিক্রি হয় না।
প্রতি ক্যারেটে ২০ থেকে ২৬ কেজি আম থাকে। এখানে গোপালভোগ ও ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। গুটি আম বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ।
আজ এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকেও আমি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার নিয়োগে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’
অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, নেপালের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন হিসেবে সুশীলা কার্কির দায়িত্বগ্রহণকে বাংলাদেশ গুরুত্ব সহকারে দেখছে।
তিনি বলেন, ‘একজন দীর্ঘদিনের বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার দক্ষ নেতৃত্বে নেপাল ও এর দৃঢ়চেতা জনগণ শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলীতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন।
বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত ও পূর্ণ আরোগ্য কামনা করি।’
অধ্যাপক ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক তাঁর নেতৃত্বে আরও জোরদার হবে।
তিনি সুশীলা কার্কির সুস্বাস্থ্য ও সফলতা এবং নেপালের জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আয়োজনে ‘গণমাধ্যমে অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজ কনফারেন্স রুমে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহিনা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, অপসাংবাদিকতা গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল থেকে জনগণের কাছে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপন করতে হবে।
কর্মশালায় রিসোর্স পার্সন ছিলেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. আব্দুস সবুর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল খায়ের।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় মৌলভীবাজার জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। শেষে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। বক্তারা সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা, তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ময়মনসিংহের ভালুকায় বন বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিহিংসামূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেন জেলার জ্যেষ্ঠ ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। তারা জানান, দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম জুয়েল, নয়া দিগন্তের আসাদুজ্জামান ফজলু, মানবকণ্ঠের শফিকুল ইসলাম ও গ্লোবাল টিভির শাহিদুজ্জামান সবুজের বিরুদ্ধে বন বিভাগ কর্তৃক দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক ও প্রতিহিংসার অংশ।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ভালুকা রেঞ্জের বিট অফিসার আনোয়ার হোসেন ও হারুন অর রশিদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তাদের প্রভাব খাটিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকরা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দায়িত্বশীলভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলেই এ ধরনের মামলা দায়ের করা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা। অতীতে এমন চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হবে।
মানববন্ধনে অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
যশোরের কেশবপুরে ভবদহ অঞ্চলে পরিবেশ বান্ধব টেকসই মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছে ঘের ব্যবসায়ীরা। মাছ রোগবালাই থেকে রক্ষা করতে মালিকরা প্রাকৃতিক খাদ্য সরবরাহে ঘেরে শ্যাওলার ব্যবহারে ঝুকে পড়ছে। মৎস্য অধিদপ্তর এটি একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরে ৪ হাজার ৬৫৮ টি, মণিরামপুরে ৪ হাজার ৮৮৯ টি ও অভয়নগরে ১ হাজার ২০৫টি মাছের ঘের রয়েছে। বর্তমানে ঘের মালিকরা উপজেলার বিভিন্ন জলাবদ্ধ বিল থেকে পাটা শ্যাওলাসহ জলজ জাতীয় উদ্ভিদ সংগ্রহ করে মাছের ঘেরে ব্যবহার করছে। প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে শ্যাওলা ব্যবহার করায় ঘের মালিকদের বাণিজ্যিক খাদ্যের খরচও কম হচ্ছে। এ সকল উপজেলায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯০২ বিঘা জমিতে মোট ১০ হাজার ৭৫২টি মৎস্য ঘের রয়েছে।
সরেজমিন কেশবপুর, মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন জলাবদ্ধ বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ঘের মালিকদের পাটা নামক এক প্রকার চিকন শ্যাওলা সংগ্রহ করতে। পাঁজিয়া জলাবদ্ধ বিল থেকে শ্যাওলা সংগ্রহ করার সময় বাগডাঙ্গা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী পরেশ মন্ডল বলেন, ঘেরের মাছ মোটাতাজাসহ রোগ বালাই থেকে রক্ষা করতে শ্যাওলা খুবই উপকারী। মণিরামপুরের গৌরীপুর বিল থেকে শ্যাওলা সংগ্রহ করাকালীন ঘের ব্যবসায়ীর শ্রমিক তাজুল ইসলাম বলেন, ঘের মালিকরা মাছ চাষে বিলের শ্যাওলা ব্যবহার করায় তারা প্রতিদিন কাজ পাচ্ছে। মণিরামপুর উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী সুলতান হোসেন বলেন, ঘেরে প্রাকৃতিক খাদ্য সরবরাহ করা গেলে মাছ সতেজ হয়ে উঠে। শ্যাওলা ব্যবহারে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। তাছাড়া যে সমস্ত বিল থেকে শ্যাওলা তোলা হয় সে সমস্ত বিলেও দেশী প্রজাতি মাছ সহজে চলা ফেরা করে প্রজননে সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে। অভয়নগরের ভবদহ এলাকার ঘের ব্যবসায়ি মোস্তাক হোসেন বলেন, মাছের খাদ্য হিসেবে পাটা শ্যাওলা এখন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই শ্যাওলা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে মাছের রোগ বালাই এয় না। তা ছাড়া বানিজ্যিক খাদ্যের খরচের হাত থেকেও অনেকটা রক্ষা পাওয়া যায়। জলাবদ্ধ বিল থেকে শ্যাওলা সংগ্রহ করে ঘের মালিকরা প্রতিদিন মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। পাটা শ্যাওলা মাছো শ্যাওলা নামেও পরিচিত। চিংড়ি মাছ ছাড়া সব ধরণের সাদা মাছের প্রিয় খাদ্য শ্যাওলা।
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, বিল থেকে শ্যাওলা তুলে ঘেরে মাছকে খেতে দেওয়ায় মাছের বৃদ্ধি ঘটে। এ পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই। ঘেরে প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহার করতে পারলে মালিকদের বাণিজ্যিক খাদ্যের খরচ কম হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহার করায় প্রতিদিন শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এটি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধিসহ মাছ উৎপাদনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। শ্যাওলা মাছের খুবই পুষ্টিকর খাদ্য।
জয়পুরহাট সদর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর হাঁসুয়ার কোপে রোকেয়া বেগম (৬০) নামে এক নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী জহির উদ্দীনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নের বড় তাজপুর মৌলভীপাড়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, ভোরে প্রকৃতির ডাকে ঘুম থেকে উঠলে স্ত্রী রোকেয়ার সঙ্গে স্বামী জহির উদ্দীনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ঘরে থাকা হাঁসুয়া দিয়ে রোকেয়ার মাথায় বেশ কয়েকটি কোপ দেন জহির। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালর মর্গে পাঠায়।
নিহতের পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আগেও হত্যার চেষ্টা করেছেন স্বামী।
জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তামবিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় জহির উদ্দিনকে আটক করা হয়েছে। হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“ফজরের নামাজের পর হাটতে বের হলে শিয়াল কুকুরের জ¦ালায় কোথাও যেতে পারি না। একটু নিরিবীলি জায়গা পেলেই দলবেধে ওরা এসে কামড়ে দেয়ার চেষ্ঠা করে। শুক্রবার ভোরে জলসিঁড়ির বালুতে হাটতে গেলে একদল শিয়াল আক্রমন করে বসে, কোন রকমে প্রাণপনে দৌড়ে রক্ষা পাই।” এমনি করে কথাগুলো বলেন কাজী আবুল হোসেন।
মহসিন মিয়া বলেন, রাতের আধারে আমার খামারে শিয়ালের দল ডুকে ৪ টা ছাগলকে কামড়ে মেরে ফেলেছে। এতে আমার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। দিনে কুকুরে কামড়ায় আর রাতে শিয়ালে। এ থেকে আমাগো কেউ বাঁচান।
“কি আর কমু গো ভাই? নগর পাড়া ব্রিজ, কেওডালা ব্রিজ অদৃশ্য শক্তির ছোয়ায় আটকে আছে। ভয়ঙ্কর ঝুকিপূর্ন চনপাড়া সেতুর মেরামত হচ্ছে না একযুগ ধরে। আমরা রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা অনেক বিপদে আছি। আমাগো দেখার কেউ নেই। আমরা নিজ দেশে পরবাসীর মত। নদীতে পচা পানি। দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। মশার জ¦ালার কথা আর কি কমু? দিনে দুপুরেই কামড়ায়। রাত হলে তো কথাই নাই। একটু বাতাস ছুটলে বালির জ¦ালায় ঘরে বাহিরে থাকা দায়। এরওপর নতুন আরো জ¦ালা, দিনে কুকুরের জ¦ালা আর রাতের বেলায় শিয়ালের খেলা/ উপদ্রব। আর ভাল লাগে না। আল্লাহ ছাড়া আমাগো দেখার আর কেউ নাই।” এমনি করে মনের দুঃখে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার আমজাদ হোসেন।
দিনে কুকুর আর রাতে শিয়ালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জবাসী। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হলেও কুকুরের কামড়ে আহত হওয়ার শঙ্কায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। বেশি আতঙ্ক ছোট শিশুদের নিয়ে। ছোট্ট শিশু নুশাইবা বলেন, কুকুরের ভয়ে দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হতে পারি না। দলবেধে যেভাবে খা খা করে এগিয়ে আসে ভয়েই সামনে দিয়ে যাওয়া যায় না। আরেকজন হামিম বলেন, বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কি কারণে জানি না দলবদ্ধ কুকুর ভয়ঙ্কর আচরন করছে। বিগত ১ মাসে ২০ জনকে কামড়েছে এ কুকুর। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১২ টি ছাগলকেও কামড়ে দিয়েছে ভয়ঙ্কর কুকুরদল।
এ তো গেল দিনের চিত্র, রাতের চিত্র ভিন্ন। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের নানী দাদীরা ছোট শিশুদের ঘুম পাড়াতে রাক্ষস-খোক্কস, দৈত্য-দানবের গল্প না বলে শেয়ালের গল্প বলছে। শুধু গল্প নয়, শঙ্কাও আছে। এখানে সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে যায়। দল বেঁধে শেয়াল বাড়ি-ঘরের আনাচে কানাচে ঘোরাফেরা শুরু করে। এতে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল এমনকি ছোট শিশুদের নিয়েও ভয়ে আছে বাসিন্দারা। সন্ধ্যার আগেই গবাদিপশু ও ছোট শিশুদের নিয়ে ঘরে চলে আসতে হয়।
শেয়াল-কুকুরের উপদ্রব নিয়ে সিয়াম মিয়া বলেন, কী আর করমু ভাই, দিনের বেলা কুত্তা আর রাইতে হিয়ালের (শিয়াল) তা-বে আমরা আছি বড়ই যন্ত্রণায়। এসবের কারণে পশু-পাখিসহ বাচ্চাদের নিয়ে সারা দিন দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।
উপজেলার তালাশকুট এলাকার সারমিন আক্তার নামের এক গৃহবধূ বলেন, ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে ভয়ে থাকি। যে পরিমাণ শেয়াল-কুকুর বেড়েছে এলাকায়, না জানি কখন কাকে কামড়ে দেয়! সন্ধ্যার পর শেয়াল বেড়ে যায়। বেশ কিছু দিন আগে উপজেলার খামারপাড়া এলাকার এক মাদ্রাসার ছাত্র শিয়ালের কামড়ে ভোগে অবশেষে মৃত্যুবরণ করে।
রূপগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাগুলোতে কুকুর বেশি থাকলেও শেয়াল তেমন একটা নেই। তবে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের খামারপাড়া , নগরপাড়া, কামসাইর, দেইলপাড়া, বাঘবাড়ী, পিরুলিয়া, ছনেরটেক, কায়েতপাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে শেয়াল-কুকুরের উপদ্রব বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডাঃ আইভী ফেরদৌস বলেন, শিয়াল কুকুরের কামড়েরর রোগী আসে। আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা করি। ওষুধ সাপ্লাই স্বল্পতা রয়েছে। আর এ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে নেয়াই ভাল।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সজল কুমার দাস বলেন, ভাদ্র মাসে কুকুরের উপদ্রব একটু বেড়ে যায়। মানুষকেও কামড়ে দেয়। শুনেছি শিয়ালের উপদ্রবও বেড়ে গেছে। তাই আমরা উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। ভয়ের কিছু নেই। সচেতন থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, শেয়াল কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি সত্যিই আতঙ্কের বিষয়। বিশেষ করে শিশুরা অনেক ভয়ে থাকে। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানে কথা বলব। তবে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সর্বক্ষেত্রেই সচেতনতার বিকল্প নেই।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের আনারপুরা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ইউটার্নে যাত্রীবাহী বাস ও রেডিমিক্সের গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ উভয় পরিবহনের ১২জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় মহাসড়কের আনারপুরা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ জনের নাম জানা গেছে গেছে। তারা হলোঃ আয়াজ(৩৫), ইউনুস মুন্সী (৪৫), মাইন উদ্দিন (৪২), রাসেল(৪০), ওমর ফারুক (২৫), মারুফ(৪০), তারেক রহমান(৩০), হারুন-অর-রশিদ(৪০), হাবিবুর রহমান (৪৫) ও জেমস(২৮)।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। পথে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের আনারপুরা এলাকায় প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানির একটি রেডিমেক্সের গাড়ি ইউটার্ন নেওয়ার সময় সেটিকে ধাক্কা দেয় বাসটি। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় রেডিমিক্সের গাড়ির চালক-হেলপার ও বাসের ১০জন যাত্রী আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় স্থানীয়রা।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১০ জন গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। গুরুতর অবস্থায় ইউনুস মুন্সী, মাইন উদ্দিন, মারুফ ও রাসেলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
এ বিষয়ে গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শওকত হোসেন বলেন,' সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে'।
মন্তব্য