জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই বাজারে আসতে শুরু করে নানান জাতের আম। জাতভেদে এসব আমের বাজারে আসার সময়ও ভিন্ন।
এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে কয়েক জাতের সুমিষ্ট আম। খুচরা বাজারে এসব আম বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। দাম নির্ভর করছে আম কতটা তাজা তার ওপর।
তাজা আম কীভাবে চেনা যায় তা জানালেন ফার্মগেটের বিক্রেতা মো. রমজান। প্রতিবছর তারা আমের মৌসুমে অস্থায়ী ফলের মেলা বসান। তাদের ‘সাতক্ষীরা-রাজশাহীর ফলের মেলা’ দোকানে শুধু আমই থাকে।
গত শুক্রবার রমজানের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, হিমসাগরের পাশাপাশি ল্যাংড়া আমও উঠেছে। জাতভেদে দামে তফাত তো আছেই। এমনকি একই জাতের আমেরও ভিন্ন দাম। হিমসাগর আমের দামের ট্যাগ লাগানো রয়েছে ১১০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। ল্যাংড়া ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
রমজান বলেন, ‘আম যত তাজা, দামও তত বেশি। রাজশাহী-সাতক্ষীরায় আমাগো চুক্তি করা বাগান আছে। বাগান থেকেই আম ঢাকায় আনি।
‘মনে করেন, গাছ থেইক্যা পাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কস্টমারের সামনে আম রাখি। আইজকার তাজা আমের দাম বেশি, কাইল বা পরশুর আমের দাম একটু কম। গতকাইলেরটা ১৩০ টাকা, তার আগেরটা ১১০ টাকা।’
তিনি জানান, তাজা আমের বোঁটা তাজা ও সবুজ; আমও সবুজ। গাছ থেকে সবুজ আমই পাড়া হয়। ঢাকায় আসার পরও দুই থেকে তিন দিন সেগুলো সবুজ থাকে। তাজা আমের বোঁটা ছিঁড়লে সাদা কষ বের হয়। আর দুই দিন পর থেকেই বোঁটা শুকাতে শুরু করে বা বোঁটা ঝরে যায়। আমও একটু শুকাতে থাকে।
তিনি বলেন, বাজারে সবার আগে আসে গোপালভোগ আর হিমসাগর। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এই আম আসা শুরু হয়েছে। এখন হিমসাগরের পূর্ণ মৌসুম। তাই হিমসাগরের রাজত্ব চলছে বাজারে। এটি আরও কিছুদিন থাকবে। এরপর আসবে রাজশাহীর অন্যান্য জাতের আম।
আমের যত জাত
দেখতে প্রায় একই রকম হলেও আমের নানান জাত রয়েছে। দেশের আমের জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, মোহনভোগ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, ফজলি, গুটি, রানিপছন্দ, রুপালি বা আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনা, গৌরমতি, মল্লিকা, হাড়িভাঙা ইত্যাদি। এর বাইরে বৌ-ভোলানি, জামাইখুশি, বৃন্দাবন, লখনা, বোম্বাই, দাউদভোগ, সিন্দুরি, ব্যানানা, ক্ষুদি খিরসাপাতি, কালীভোগসহ সব মিলিয়ে শতাধিক জাতের আম রয়েছে।
হিমসাগর ও খিরসাপাতি দেখতে প্রায় একই রকম। তবে খিরসাপাতি বড় ও একটু কালচে সবুজ ধরনের। ফজলি ও আশ্বিনা দেখতে প্রায় একই রকম। তবে মিষ্টতায় পার্থক্য রয়েছে। ফজলি মিষ্টি বেশি। আশ্বিনা পরিপক্ব না হলে একটু টক ধরনের।
পাকা আশ্বিনা একটু বেশি সবুজ। আর পাকা ফজলি আম হলুদ হয়। আবার গোপালভোগ ও রানিপছন্দের চেহারায় মিল আছে। তবে গোপালভোগ আকারে বড়; রানিপছন্দ একটু ছোট।
আমের বিষয়ে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের বিক্রেতা এমারত হোসেন বলেন, ‘বাজারে সব আম এক লগে উঠে না। এক আমের এক সময়। কাস্টমার সময়-অসময় না দেইখা আম খোঁজে। এখন রুপালি (আম্রপালি) চাইলে কী হবে?
‘এখন হিমসাগরের সময়। কোন আম কোন সময় পাকব, একটু মাথায় রাখন লাগব। হিসাব বুঝে কিনা লাগব। তাতে ঠকার সুযোগ কম।’
তিনি জানান, তার দোকানে হিমসাগর আম বিক্রি করছেন ৮০ টাকা কেজিতে। ল্যাংড়া ৭০ টাকায়। বাদামতলী পাইকারি ফলের বাজার থেকে আম আনেন। যেমন দামে কেনা পড়ে, তেমন দামে বিক্রি করেন।
মধ্য বাড্ডার ফল বিক্রেতা শ্যামল দাসও হিমসাগর ৯০ টাকা এবং ল্যাংড়া ৮০ টাকায় এবং লক্ষ্মণভোগ ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ‘আম বড় হওনের সময় বাগানে বৃষ্টির পানি লাগে। এবার বৃষ্টি কম। তাই আমও ছোট ছোট। পাবলিক খালি বড় আম খোঁজে। তবে ঝড়-তুফান না হওয়ায় আম নষ্টও হইছে কম।’
কোন আম কখন বাজারে আসবে
জাতভেদে বাজারে আম আসার সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার একই জাতের আম এলাকাভেদেও ভিন্ন ভিন্ন সময় পাকে। তাই বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম আসা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জেলায় গাছ থেকে আম নামানোর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী জেলায় গুটি জাতের আম ১৫ মে থেকে এবং গোপালভোগ ২০ মে থেকে নামানো শুরু হয়েছে। লক্ষ্মণভোগ ও রানিপছন্দ ২৫ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাতি ২৮ মে থেকে বাজারে আসবে। এ ছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে।
তবে সেদিক দিয়ে আগেই বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম। প্রশাসনের নির্দেশনামতো ১ মে থেকে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম গাছ থেকে পাড়া শুরু হয়েছে। ২১ মে থেকে পুরোদমে বাজারে আসা শুরু করেছে এ জেলার হিমসাগর আম।
২৭ মে থেকে ল্যাংড়া আম ও ৪ জুন থেকে আম্রপালি আম বাজারে আসবে। তবে কারও বাগানে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাকলে তা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে বাজারে ছাড়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ হিসাবে নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ আগেই বাজারে পাওয়া যায় আম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গাছে পাকলেই পাড়া হবে। এ জেলার আম জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসতে শুরু করবে। শুরুতে গাছ থেকে নামবে গুটি আম; পরে অন্যান্য আম।
নাটোর ও নওগাঁয় ১০ মে থেকে গুটি আম এবং ২০ মে থেকে গোপালভোগ পাড়া শুরু হয়েছে। অন্যান্য আমের মধ্যে লক্ষ্মণভোগ ২৫ মে, খিরসাপাতি ২৮ মে, ল্যাংড়া ৫ জুন, ফজলি ২০ জুন, আম্রপালি ২০ জুন, মল্লিকা ৩০ জুন, আশ্বিনা ১৫ জুলাই, রানিপছন্দ ২৫ মে, মোহনভোগ ১৫ জুন, বারি আম-৪ ১০ জুলাই, হাড়িভাঙা ২০ জুন এবং গৌরমতি আম ১৫ আগস্ট থেকে পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিক্রেতারা জানান, সাধারণত বাজারে যে জাতের আম সবার আগে ওঠে, তা হলো সাতক্ষীরার গোপালভোগ। এটির নিচের দিকটা একটু সরু। পাকলে হলুদ ভাব আসে। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ বা মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এটি বাজারে পাওয়া যায়।
রাজশাহীর গোপালভোগ বাজারে আসে মে মাসের মাঝামাঝিতে। মে মাসের শেষদিকে আসে হিমসাগর। তার পরেই খিরসাপাতি জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসে। দুটি খুবই মিষ্টি আম। প্রায় একই সময় আসে ল্যাংড়া আমও। দেখতে কিছুটা গোপালভোগের মতো হলেও ল্যাংড়া তত মিষ্টি হয় না।
জুন মাসজুড়ে বাজারে থাকে নানান জাতের আম। এ সময় আসে লক্ষ্মণভোগও। এ আমের মিষ্টতা অনেক কম। লক্ষ্মণভোগে চেনার উপায় হলো এটির পেটের মাঝামাঝি স্থানে ‘নাক’ আছে।
বাজারে এর একটু পরেই আসে ফজলি। জুনের শেষ দিকে থাকে এ আমের রাজত্ব। বাজারে তখন অন্যান্য আম কমতে থাকে। এ সময় ফজলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকে সবচেয়ে মিষ্টি আম আম্রপালি।
নিচের দিকে একটু সুচাল, ওপরে একটু গোল। এই আম মিষ্টি বেশি, স্বাদে অন্য রকম। জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে আসে আশ্বিনা ও বারি আম-৪। তবে এরপর যেসব আম আসে সেগুলোর পরিমাণ খুবই কম।
বাগান ও পাইকারিতে দাম
মে মাসের শুরুতে সাতক্ষীরায় গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ বাগানে প্রতি মণ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। শুক্রবার গোপালভোগ আমের মণ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং হিমসাগর ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাদামতলী ফলের আড়তে শুক্রবার প্রতি কেজি হিমসাগর আম মানভেদে পাাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে এ আড়তে এক ক্যারেটের কম আম বিক্রি হয় না।
প্রতি ক্যারেটে ২০ থেকে ২৬ কেজি আম থাকে। এখানে গোপালভোগ ও ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। গুটি আম বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।
আরও পড়ুন:ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে এটাই বিএনপির নেতাদের প্রথম বৈঠক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকমিশনারের বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের তিন নেতা। এ সময় হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার দুজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওই লেখায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে হাইকমিশনার সারাহ কুকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ তাদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদরোগে আক্তান্ত ডা. পারভেজ রেজা কাকনের শারীরিক খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি অসুস্থ কাকনের শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা দলীয় প্রতীকে শুরু করেছে।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জনের পর তারা বুঝতে পেরেছে যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হলে দেশের সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে যাবে। তারা নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া এবং এই সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। তবে গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না সেটা তো বিএনপি দলীয়ভাবে দেখতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার হামলা-মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এসব করে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনেও তারা দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি।
‘ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। কারণ এই ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই।’
মঈন খান বলেন, ‘দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠন করা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে গুছিয়ে আলনা বা আলমারিতে রাখা যায়। সরকারকে বলবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দলটির এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। সে কারণে দল চায় যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে অংশ না নেন।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) দলের একটি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলা-উপজেলায় তা জানাতে শুরু করেছি।’
এবার স্বতন্ত্র মডেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও এসবে কান দিচ্ছেন না তারা।
কোনো কোনো সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজ দলের প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নানামুখী বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। ভোটের মাঠে স্বজনদের জিতিয়ে আনতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছে। এতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দলীয় সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করলে তাদেরকে শো-কজ, সতর্কতা, তলবসহ বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়।
জাতীয় নির্বাচনের মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন কাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এবার চার পর্বে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২১ মে হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে টিউবওয়েল বসানোর জন্য স্থাপন করা পাইপে পানির পরিবর্তে উঠে আসছে এক ধরনের তরল। অনেকটা ডিজেলের মতো গন্ধযুক্ত এই তরল নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
উপজেলার ভোলামোড় এলাকায় এক বাড়িতে ঘটেছে এই ঘটনা। বাড়ির মালিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য তিন বছর আগে এখানে মোটর বসানো হয়। এটি উপজেলা পরিষদ থেকেই বসানো হয়েছিল। কয়েক মাস থেকে মোটরটি দিয়ে পানি উঠছে না। কারণ জানার জন্য বুধবার সকালে মিস্ত্রি ডেকে আনা হয়।
‘মিস্ত্রি কাজ করার সময় মোটরের সঙ্গে যুক্ত পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানির পরিবর্তে তেলের মতো এক ধরনের তরল উঠে আসে। তা দেখে মনে হয়েছে ডিজেলের মতো। বিষয়টি আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, যাতে তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় পাইপ দিয়ে উঠে আসা তরলে তিনি কাগজ চুবিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাতে আগুন ধরে যায়। তার প্রশ্ন- পানি হলে তো ভেজা কাগজে আগুন ধরতো না। তাহলে এই তরল কি খনিজ তেল?
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার জানান, তিনিও বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর করবেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্য