বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের যে ১১১টি ছিটমহল ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া। এটির আয়তন ৬ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের পর দাসিয়ারছড়া এখন বাংলাদেশের ভূখণ্ড।
ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ হেড কাউন্টিং ২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখানে ১ হাজার ৩৬৪টি পরিবারের ৬ হাজার ৫২৯ জনের বসবাস।
১৫ মে দাসিয়ারছড়ায় গিয়ে দেখা গেছে মাত্র ছয় বছরে অনেক বদলে গেছে এখানকার বাসিন্দাদের ৬৮ বছরের বঞ্চনার জীবন।
ছিটমহলে থাকাকালীন এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আধুনিক ঘরবাড়ি তো দূরের কথা চলাচলের কোনো রাস্তাঘাটই ছিল না। নদী, খাল, ডোবা এমনকি জমির আলের ভেতর দিয়ে মানুষজন কোনোমতে যাতায়াত করত।
দাসিয়ারছড়ায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অলিগলিতে এখন প্রশস্ত পাকা রাস্তা। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। সুদৃশ্য মসজিদ-মন্দির, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, সরকারের নানারকম উদ্যোগে বদলে গেছে এক নতুন জনপদ দাসিয়ারছড়া।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিস জানিয়েছে, ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি দাখিল মাদ্রাসা, দুটি কলেজ, ডিজিটাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার, ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালীর হাটে কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচটি মসজিদ, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ মিটারের একটি ব্রিজ, ৭টি বক্স কালভার্ট, ৩৫টি ইউড্রেন, ১টি কবরস্থান, শ্মশানঘাট ২টি, টিউবওয়েল ৩৮৪টি, কাঁচাপাকা ল্যাট্রিন ১ হাজার ১৫০টি স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে হতদরিদ্র পরিবারের ১০টি বসতবাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, শতভাগ বিদ্যুতের সংযোগ, দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ইউনিসেফের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক্প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। সেখানকার বাসিন্দাদের দেয়া হয়েছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও স্মার্টকার্ড।
দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিতে চালু করা হয়েছে নানারকম উদ্যোগ। তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সেখানে ডি-সেট সেন্টার চালু করেছে আইসিটি বিভাগ। অনলাইনে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসেবা দেয়া হচ্ছে। করা যাচ্ছে ভিসা আবেদনও। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাও চালু হয়েছে সেখানে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বেকার যুব ও যুব মহিলাদের দেওয়া হয়েছে নানা পেশায় প্রশিক্ষণ।
এখানকার বাসিন্দা সলিমুদ্দি শেখ বলেন, ‘বাপ-দাদা থেকে চৌদ্দগোষ্টি এখানে আছি। কী যে কষ্ট করি আচিলোং, সেটা হামরা জানি। যকন সিটোত আচিনোং তখন কিছু আচিল নে, এলা সোউগ হইচে। আস্তা, পুল, স্কুল-কলেজ, মাদরেসা সব হইচে। বাজারোত থাকি ব্যাংকের মাধ্যমে টাহাও পাঠপার পাই। হামরা অনেক ভালো আছি।’
আব্দুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা আগে সাইকেল নিয়ে বের হতে পারি নাই। রাস্তা ছিল না। জমির আইল দিয়ে বের হইছি। এখন কত বড় বড় সড়ক হইছে। নদী পার হইলে সাইকেল ঘাড়ে নেয়া লাগত। এখন বড় ব্রিজ দিছে সরকার। আমরা সবাই মিলে শান্তিতে আছি।’
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়শা আক্তার মণি বলে, ‘আগে আমাদের ভাইবোনেরা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মিথ্যা ঠিকানা দিয়া পড়ালেখা করছে। এখন আমরা আর মিথ্যা ঠিকানা দিই না। বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে পড়ালেখা করছি। বই ও উপবৃত্তি সব পাই।’
দাসিয়ারছড়া সমন্বয়পাড়া নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্কুল-কলেজে এখনও বিল বেতন পাইনি। আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবে।’
মুদি ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় হওয়ার আট বছর আগ থেকে আমাদের ভারত যাওয়া বন্ধ হয়। আমরা সেখানে গেলেই গ্রেপ্তার হতাম। অনেকেই জেল খেটেছে। বাংলাদেশে গেলেও জেলে যেতে হয়েছে। সেটা থেকে যেমন মুক্তি পেয়েছি, তেমনি আমাদের অনেকের ছেলের চাকরি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আনারুল ইসলামের বিজিবিতে বিনা টাকায় বিনা সুপারিশে চাকরি হয়েছে। এমন অনেকের পুলিশ, আর্মিতেও চাকরি হচ্ছে। বাংলাদেশ না হলে এটা সম্ভব হতো না। আমরা এখন গর্বের সহিত বসবাস করছি।’
আলমগীর নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের অনেক সফল কৃষক আছে। কৃষি অফিস অনেক কৃষককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিভিন্ন জাতের ধান ও সবজি চাষ করে আমাদের দাসিয়ারছাড়ায় অনেকেই এখন সফল কৃষক। সরকার আমাদের অনেক দিয়েছে।’
ছয় বছরে মামলা একটি
সাবেক ছিট মহলের পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল মান্নান শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একসময়ে এই দাসিয়ারছড়ায় যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমরাই বিচার-সালিশ করতাম। জমিজমা ভাগ-বাটোয়ারা যা আছে, সবই আমরা দেখতাম। এখন বাংলাদেশ হবার পর অনেক ভালো আছি। এই জুলাই মাস এলে ৬ বছর হবে বাংলাদেশ হবার। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ছোট কামাত গ্রামে জমি নিয়ে মারামারি হয়েছে। দুই পক্ষ থানায় গিয়ে মামলা করেছে। আমরা আবার সেটি সমাধান করে দিয়েছি। দুই পক্ষ মামলা তুলে নিয়েছে। সেই থেকে আর কোনো সমস্যা হয়নি এখানে।’
ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজিব কুমার রায় বলেন, ‘সেখানে আইনশৃঙ্খলা ভালো আছে। কোনো অভিযোগ থানায় আসে না। এ ছাড়া আমরা সেখানে নিয়মিত পুলিশ টহল পাঠাই। আগে একটি ফাঁড়ি ছিল। এখন সেটিও নেই। আমরা তুলে নিয়েছি।’
সৌহার্দ্য সম্প্রীতি
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় বাংলাদেশ অংশের দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, যখন বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় হয়, তখন বাংলাদেশ থেকে ৬৫টি পরিবারের ১০৭ জন হিন্দু এবং ১০০ জন মুসলিম ভারতে যায়। তাদের আমরা সহযোগিতা করি। ভারত থেকে কেউ এখানে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কালীতলা বাজারে একটি মসজিদ আছে। তার ঠিক ১০০ গজ দূরে একটি বড় মন্দির আছে। যে যার ধর্ম পালন করছে। কোনো অসুবিধা নেই। আজানের সময় মসজিদে আজান হয় আর হিন্দু ভাইয়েরা তাদের সময়মতো পূজা করেন। আমরা মুসলিম-হিন্দু মিলে অনেক ভালো আছি। সরকার আমাদের ভালো রেখেছে।’
এখনও যে সমস্যা
দাসিয়ারছড়ায় এখনও ভূমি জটিলতা পুরোপুরি নিরসন হয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১ হাজার ৬৪৩ একর ও সরকারি খাসখতিয়ানভুক্ত ৯ একর জমির প্রাক্ জরিপ শেষ করে খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানায় খাজনা খারিজ জটিলতা থাকায় কেউ জমি বিক্রি এবং ক্রয় করতে পারছেন না। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দারা।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য ইউনিয়নের মতো এখানেও সরকারের সকল দপ্তরের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা রাস্তাঘাট অগ্রাধিকার দিয়ে করা হয়েছে। আমরা সব বিষয়ে সর্বোচ্চ কাজ করেছি। এ ছাড়া পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিতে সরকার সব ধরনের সহযেগিত করছে। উন্নয়ন করছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে।’ জমি-সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
ছিটমহল যেভাবে তৈরি হয়
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় সীমানা নির্ধারণের জন্য সিরিল রেডক্লিফকে সভাপতি করে একটি কমিশন গঠন করা হয়। ওই কমিশন ১৯৪৭ সালের ১৩ আগস্ট সীমানা নির্ধারণের নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
ইতিহাস বলছে, তৎকালীন জমিদার, নবাব ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কারণে দুই দেশের সীমানা নির্ধারণে জটিলতা তৈরি হয়। রেডক্লিফের কমিশন ভারতের কোচবিহার ও রংপুর এলাকার ছিটমহলগুলোর কোনো সমাধানে আসতে পারেনি এবং ছিটমহলগুলো রেখেই সীমানা নির্ধারণ হয়।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নূন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ছিটমহল সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছিটমহল নিয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের ইন্দিরা গান্ধী ‘মুজিব-ইন্দিরা’ স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তি দীর্ঘ সময় নানা কারণে বাস্তবায়ন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ পায় এবং সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়া বিলুপ্ত হয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। চলতি বছরের জুলাই এলে এই চুক্তির ৬ বছর পূর্ণ হবে।
আরও পড়ুন:গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-যশোরসহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে গরমের দাপট আরও বেশি।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এদিন চুয়াডাঙায় ছিল ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাগেরহাট জেলাজুড়ে বয়ে যাওয়া দাবদাহের মধ্যে শনিবার বিকেল ৩টায় মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি অতীতের যেকোনো সময়ের মধ্যে এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবারের চেয়ে বাগেরহাটের তাপমাত্র শুন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
গত পাঁচদিন ধরে বাগেরহাটে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। তীব্র গরমে খেটে খাওয়া লোকজন বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় শ্রমিক সঙ্কটে অনেক মিল-কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
সূর্যের প্রচণ্ড তাপে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের পিচ গলে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। সড়কে যানবাহন চলাচলও অনেক কমে গেছে। অতি-প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরবাড়ি থেকে বের হচ্ছে না।
বাগেরহাট আন্তঃজেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আব্দুল বাকী বলেন, ‘গত পাঁচদিন ধরে বাগেরহাটে তীব্র তাপদাহের কারণে লোকজন বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল অনেক কমে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘শনিবার দুপুর থেকে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হিটওয়েভে রাস্তার পিচ গলে একাকার হয়ে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। এই অবস্থায় নিরাপদে যানবাহন চালানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এদিকে হঠাৎ গরমে জেলার জনস্বাস্থ্যেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, জ্বর-কাশি নিয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ৩২ বেডের শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছে ১১২ জন। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৭১টি।
তীব্র তাপদাহে হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে লোকজনকে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া ও শিশুসহ সবাইকে সুপেয় পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার।
বৃষ্টি না হলে বাগেরহাটের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে জানান মোংলা আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহওয়াবিদ মো. হারুন অর রশিদ।
আরও পড়ুন:সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ দুবাইয়ের পথে রয়েছে। জাহাজটি ২২ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আল হামরিয়া বন্দরে নোঙর করার কথা ছিল। তবে গতি বাড়িয়ে এগিয়ে চলা জাহাজটি একদিন আগেই ২১ এপ্রিল রোববার সংশ্লিষ্ট বন্দরে পৌঁছবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আমিরাতের বন্দরে পৌঁছার পর ২৩ নাবিকের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাদের
মধ্যে দুজন বিমানে দেশে ফিরবেন। বাকিরা জাহাজেই দেশে ফেরার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। যে দুজন বিমানে ফিরতে চান তারা হলেন জেনারেল স্টুয়ার্ড মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ও সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। বাকি ২১ জন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন।
জাহাজে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন জেনারেল স্টুয়ার্ড নূর উদ্দিন। কিন্তু এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া এবং জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তিনি দেশে স্বজনের কাছে ফিরতে চাচ্ছেন।
স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে ফোনে একথা জানিয়েছেন নূর উদ্দিন। ফারদিন নূর নামে তাদের আড়াই বছর বয়সী এক সন্তান রয়েছে। জান্নাতুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সুস্থ থাকলে অনেক কিছু করা যাবে। কিন্তু মানসিকভাবে তিনি যদি সুস্থ না থাকেন, তাহলে তো বিকল্প ভাবতে হবে আমাদের।’
অভিন্ন ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেদুল ইসলামও। তিনি তার মা ফেরদৌস আক্তারকে ফোন করে দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
ফেরদৌস আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে এখন প্রতিদিনই কথা হয়। আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছে ওরা। আমাদেরও দুশ্চিন্তা কমেছে। তবে টেনশন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। ছেলে বলছে, তার মানসিক অবস্থা ভালো নেই; দ্রুত দেশে ফিরতে চায়।
‘জাহাজে করে দেশে ফিরতে আরও সাত-আট দিন দেরি হবে। তাই দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরবে বলে জানিয়েছে। তবে কবে কোথায় আসবে, তা এখনও জানে না সে। এটা জাহাজের মালিক পক্ষ ঠিক করবে।’
এমভি আব্দুল্লাহর মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ জানিয়েছে, জাহাজটি দুবাইয়ে ২২ এপ্রিল নোঙ্গর করার কথা ছিল। কিন্তু গতি বাড়ার কারণে একদিন আগে ২১ এপ্রিল দুবাই পৌঁছবে। সেখানে পণ্য খালাস কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই নাবিকদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কেএসআরএমের সিইও মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুজন নাবিক দুবাই থেকে বিমানে দেশে ফিরতে চান। বাকি ২১ জন জাহাজে করেই দেশে ফিরবেন। ওই দুজন কখন কীভাবে দেশে ফিরবেন, সেটা আমরা জাহাজ নোঙর করার পর ঠিক করব। যিনি যেভাবে আসতে চান, তাকে সেভাবেই দেশে ফিরিয়ে আনব আমরা।’
কেএসআরএমের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, জাহাজটি ২২ এপ্রিল দুবাইয়ে নোঙর ফেলার কথা থাকলেও তা এখন একদিন এগিয়ে যাচ্ছে। ২১ এপ্রিল এটি নোঙর করবে সেখানে।’
জাহাজটি ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় জলদস্যুমুক্ত হয়। এরপর আরব আমিরাতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন নাবিকরা। শুক্রবার বিকেল ৫টায় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬৮৭ নটিক্যাল মাইল এবং দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দর থকে ৯৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। এটি নিরাপদ জোন হিসেবে পরিচিত। এজন্য দুশ্চিন্তাও কিছুটা কমেছে নাবিকদের। ফুরফুরে মেজাজে থাকার কিছু ছবিও পাঠিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে দলের হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্ত মানছেন না তৃণমূলের নেতারা। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতারা। ফলে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিলেটে উপজেলার ভোটে থাকছে বিএনপিও।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সিলেট বিভাগের ১১টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে অন্তত চারটি উপজেলায় বিএনপির ১৩ জন নেতা প্রার্থী হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে সাতজনই সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সুনামগঞ্জের শাল্লায় তিনজন ও দিরাইয়ে দুজন এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখায় একজন প্রার্থী রয়েছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বুধবার যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেছেন। বিভাগের মধ্যে একমাত্র হবিগঞ্জ জেলায় বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী হননি।
জেলা বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত প্রার্থী হওয়া নেতাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ ও গোলাপগঞ্জ; সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা; মৌলভীবাজারের জুড়ি, কুলাউড়া ও বড়লেখা এবং হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হচ্ছে। এই ১১ উপজেলায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল। আর ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
সিলেটের বিশ্বনাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপির ৭ নেতার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থী হয়েছেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির যে চার নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান, তার চাচাতো ভাই যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন।
তাদের মধ্যে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সুহেল আহমদ চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সেই বহিষ্কারাদেশ এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. কাওছার খান ও খাজাঞ্চি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব সরকার।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম স্বপ্না শাহিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া বলেন, ‘এলাকার মানুষের চাওয়ার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছেন। তাদের দাবি- যেহেতু বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনে ভোট দেবে, সেহেতু নিজেদের একজনকে দিতে পারে। সেই দাবি থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে দল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে নিতে পারে। আমার কিছু করার থাকবে না।’
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান বলেন, ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখনও অনেক সময় বাকি আছে। আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।’
তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে গিয়ে কেউ অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সুনামগঞ্জোর শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেশ চন্দ্র দাস উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুর রহমান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল মজিদ প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া দিরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাপ মিয়া। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতি ছবি চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রাহেনা বেগম হাছনা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের কাউকে প্রার্থী না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কেউ এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোটেও আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসককে নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ভোটেও আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ করা হয়েছে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমার শেষ তারিখ ২ মে ও মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৫ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ৬ থেকে ৮ মে, আপিল নিষ্পত্তি ৯ থেকে ১১ মে এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে এবং ভোটগ্রহণ হবে ২৯ মে। েই ধাপে ৪৭টি জেলার ১১২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে।
তৃতীয় ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত জেলা ও অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিষ্পত্তি করবেন জেলা প্রশাসক।
দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২১ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৩ এপ্রিল, আপিল গ্রহণ ২৪-২৬ এপ্রিল এবং আপিল নিষ্পত্তি ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২ মে। আর ১৬১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ২১ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেসব উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি সেখানে একাধিক সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন।
প্রথম ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাইয়ের সময় শেষ। বৈধ প্রার্থী এক হাজার ৭৮৬ জন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ সময় ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৩ এপ্রিল। আর ১৫২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:গাইবান্ধার সাঘাটায় ১৭ বছরী বয়সী কিশোর সম্রাট হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। অনলাইন জুয়া খেলতে ক্যামেরা বন্ধক নেয়ার জেরে তাকে খুন করে তারই বন্ধু রিফাত। পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত কোমলপানীয় পান করে অজ্ঞান হয়ে গেলে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয় সম্রাটকে।
শুক্রবার রাত ১টার দিকে উপজেলার পশ্চিতবাড়ি গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে সাঘাটা থানা পুলিশ। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল ওই বন্ধুর বাড়িতে ক্যামেরা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সম্রাট।
সম্রাট উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের আফজাল হোসেনের ছেলে। অন্যদিকে অভিযুক্ত ১৭ বছরের রিফাত সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম বাটি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, সম্রাট ও রিফাত একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দুজনে একই বিদ্যালয়ের একই ক্লাসের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি অনলাইন জুয়া খেলে টাকা খোয়ায় সম্রাট। জুয়ায় হেরে সে তার ক্যামেরাটি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধু রিফাতের কাছে বন্ধক রাখে। কয়েকদিন পর রিফাতের কাছে ক্যামেরা ফেরত নিতে যায় সে। সেখানে গিয়ে সম্রাট জানতে পারে, রিফাতও জুয়ায় হেরে বন্ধক নেয়া ক্যামেরা বগুড়ায় কারও কাছে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। পরে এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
পরবর্তীতে গত ১৭ এপ্রিল পরিকল্পিতভাবে সম্রাটকে ক্যামেরা নিতে নিজ বাড়িতে ডাকেন রিফাত। ওইদিন বিকেলেই সম্রাট বন্ধু রিফাতের বাড়িতে ক্যামেরা নিতে গিয়ে সেদিন থেকেই নিখোঁজ হয়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্তানকে না পেয়ে পরের দিন নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান চেয়ে সাঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে সম্রাটের পরিবার। রিফাতের ডাকে সম্রাট বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
জিডির পর শুক্রবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্রাটকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে সাঘাটা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বন্ধু সম্রাটকে খুন করে সেপটিক ট্যাংকে গুম করে রাখার কথা স্বীকার করে সে।
পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত ১টার দিকে পশ্চিতবাড়ি গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বসতঘরের পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধক রাখা ক্যামেরা বিক্রি করা নিয়ে দুই বন্ধুর দ্বন্দ্বের জেরে এক বন্ধু অপরজনকে হত্যা করে। অভিযুক্ত রিফাত পরিকল্পিতভাবে তার বন্ধু সম্রাটকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ৭/৮টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করায়, যা খেয়ে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে সম্রাট। পরে ঘুমন্ত সম্রাটকে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত রিফাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সম্রাটের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী ৭ই জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে এখন আরও তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মিথ্যাচার, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অপকৌশলের মাধ্যমে অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ গণতন্ত্রমনা বিরোধী দল, ভিন্ন মত-পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজা প্রদানসহ জামিন নামঞ্জুর করে বিরোধী নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর মাধ্যমে দখলদার আওয়ামী সরকার দেশে নব্য বাকশালী শাসন কায়েম করেছে।
‘বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা আওয়ামী জুলুমের আরেকটি বর্ধিত প্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে প্রতিনিয়ত সরকারের মদদে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদেরকে সাজা প্রদানসহ জামিন নামঞ্জুরের মাধ্যমে কারান্তরীণ করার ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজের সাজা বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক নির্বাচন নয়। কারণ বর্তমান সরকার দলীয় রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরাকর নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কাজেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক কোনো ফ্লেভার নেই।
তিনি বলেছেন, তারপরও যাতে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন, সেটার অপশনও রাখা হয়েছে, অর্থাৎ ভোট ফ্লেক্সিবল করা হয়েছে। ইচ্ছে করলে স্বাধীনভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন; রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। আবার চাইলে অনেকে রাজনৈতিক পরিচয়েও নির্বাচন করতে পারবেন, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হলরুমে হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলার প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির উদ্দেশে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের অনেক সমর্থক-প্রার্থী আনঅফিশিয়ালি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সুতরাং এটা বলার সুযোগ নেই যে, নির্বাচন অংশগ্রহণ মুলক নির্বাচন হচ্ছে না।’
ইসি আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে এবং কোনোমতেই যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি না হয়। অন্যায়ভাবে কেউ যাতে কোনো প্রার্থীকে প্রচারে ও ভোটদানে বাধা দিতে না পারে। সবাই যাতে সমানভাবে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা করতে পারে এবং ভোটরা যাতে স্বাধীনভাবে তার ভোট দিতে পারে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কার কোন আত্মীয় অংশ নিল বা কে অংশ নিল না- সেটা আমাদের বিষয় নয়; সেটা রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক বিষয়, কিন্তু আমাদের নির্বাচনি আইনে যদি কোনো ব্যক্তি ওই এলাকার ভোটার হয় এবং তার বিরুদ্ধে যদি কোনো আইনি ঝামেলা না থাকে, তাহলে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন। আমাদের আইনে আত্মীয়তার সঙ্গে কোনো সর্ম্পক নেই।’
এ সময় জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুজন সরকার ও জেলা নির্বাচন অফিসার আমিনুর রহমান মিঞাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য