খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হকের দখল করা মাদ্রাসাকে ঘাঁটি বানিয়ে রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিলেন তার ছেলে মামুনুল হক। অস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসাটি দখলের নেতৃত্বও দেন মামুনুল ও তার ভাই মাহফুজুল।
আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর অধ্যক্ষ হয়েই জড়িয়ে পড়েন অনিয়মে, যে কারণে ১৯৯৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত হন।
তবে এর দুই বছরের মধ্যে চারদলীয় জোট সরকারের আমলের শুরুতে পুলিশের উপস্থিতিতে মাদ্রাসায় হামলা করে বৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে আজিজুল হকের পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে, আজিজুল হকের পরিবার এই মাদ্রাসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেটি ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। নতুন পরিচালনা কমিটিতে আজিজুল হকের পরিবারের সদস্য ছাড়াও যুক্ত হন বিএনপির কয়েক নেতা, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় সরাসরি মদত দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এই মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আজিজুল হকের পরিবার কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকার এরপর ক্ষমতায় এলেও তারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তৈরি হয় সুসম্পর্ক।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হক জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ে দুজনেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। মামুনুলকে উগ্রবাদী তৎপরতা এবং মাহফুজুলকে পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে বহিষ্কার করা হয়। তবে আজিজুল হক প্রভাব খাটিয়ে দুই ছেলেকে আবার মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনেন। এখন এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন মাহফুজুল হক।
মাদ্রাসাটি যেভাবে গড়ে ওঠে
মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা নিয়ে অনুসন্ধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে নিউজবাংলা। মাদ্রাসাটির বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও কথা বলেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৮৬ সালে স্থানীয় আবাসন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও তার ভাই মোহাম্মদ নূর হোসেন মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদের পশ্চিম পাশে ১৬ কাঠা জমির ওপর মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন। এরপর ১৯৮৮ সালের ৯ নভেম্বর ও ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর তারা দুটি নিবন্ধিত দলিলে মাদ্রাসাটি ওয়াকফ করেন।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি থেকে নিবন্ধন হয় মাদ্রাসার নামে। জমির মালিক ও সাধারণ মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় পাঁচতলা ভবনে রূপ নেয় মাদ্রাসাটি। গঠন করা হয় ২১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি কমিটির মেয়াদ তিন বছর।
শায়খুল হাদিস আজিজুল হক: শিক্ষক থেকে দখলদার
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শুরুতেই সেখানে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আজিজুল হক। এরপর ১৯৯২ সালে মাওলানা আলী আজগরের জায়গায় নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
মূল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অধ্যক্ষ হওয়ার পর আজিজুল হক সেই নিয়ম ভাঙতে শুরু করেন। রাজনৈতিক সংগঠন খেলাফত মজলিসের আমির হওয়ার সুবাদে বিএনপি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। এরপর নানান অভিযোগে ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসা থেকে তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।
তবে ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি ও পুলিশের সহায়তায় আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যরা মাদ্রাসাটি দখল করেন। হামলায় নেতৃত্ব দেন মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হক। চারদলীয় জোটের এমপি ও আজিজুল হকের এক মেয়ের ভাশুর মুফতি শহীদুল ইসলামও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
মাদ্রাসা দখলের পর এর প্রতিষ্ঠাতা ও সরকার অনুমোদিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিতাড়িত করা হয়। অনুমোদনহীন পারিবারিক কমিটির মাধ্যমে শুরু হয় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। অন্যদিকে, প্রকৃত পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিতাড়িত হওয়ার পর মূল মাদ্রাসার কয়েক শ গজ দূরে একই নামে আরেকটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন মূল জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত অধ্যক্ষ মাওলানা হিফজুর রহমান। নতুন ওই মাদ্রাসার কার্যক্রম এখনও চলমান।
বিষয়টি নিয়ে মাওলানা হিফজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি অসুস্থ উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে মাদ্রাসা দখলের দিন সেখানে উপস্থিত থাকা সাবেক এক শিক্ষক কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন বাৎসরিক ছুটি চলছিল বলে মাদ্রাসা ছিল একেবারে ফাঁকা। শুধু আমি আর সিনিয়র শিক্ষক ও তৎকালীন কমিটির সদস্য মুফতি মনসুরুল হক এবং কিছু ছাত্র ছিলাম।
‘হঠাৎ করেই বিকেলে মামুনুল হক ও মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে কয়েক শ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলা করে। তারা মাদ্রাসাজুড়ে তাণ্ডব চালায়, মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণ করে। আমি মাদ্রাসার তৃতীয় তলার বাথরুমে ও মনসুর হুজুর একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। তারা মাদ্রাসা দখল নেবার পর পুলিশ এসে নিরাপত্তার কথা বলে আমাদের বের করে নিয়ে যায়। বের হবার পথে লক্ষ করি মাদ্রাসার চারপাশে পুলিশ আর দুটি মাইক্রোবাস ভর্তি নানা ধরনের অস্ত্র। এরপর থেকে আমরা আর মাদ্রাসায় ঢুকতে পারিনি।’
মাদ্রাসায় পারিবারিক পুনর্বাসন
আজিজুল হক জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের কর্তৃত্ব বাড়াতে বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেন। তখনকার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রভাব খাটাতে শুরু করেন মাদ্রাসায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার সাবেক তিন শিক্ষক নিউজবাংলাকে জানান, আজিজুল হক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তার ছেলে মাহফুজুল হক পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে আবার আজিজুলের চাপেই তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পর মাহফুজুলের বিরুদ্ধে চারিত্রিক স্খলনের অভিযোগও ওঠে। মাদ্রাসারই আরেক শিক্ষক মাওলানা মোস্তাক আহমদ শরিয়তপুরী তার বিরুদ্ধে সমকামিতার লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তবে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেই শিক্ষককেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন আজিজুল হক।
আজিজুল হকের আরেক ছেলে মামুনুল হক উগ্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ছাত্র থাকার সময় মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। সে সময় মামুনুল খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মাদ্রাসায় রাজনীতি তখনও নিষিদ্ধ থাকায় পরিচালনা কমিটির চাপে আজিজুল হক নিজেই মামুনুলসহ পাঁচ ছাত্রকে বহিষ্কারে বাধ্য হন। তবে কিছুদিন পর অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু নিজের ছেলেকে তিনি মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনেন।
মাদ্রাসার সাবেক কয়েক শিক্ষক নিউজবাংলাকে জানান, আজিজুল হক কোনো নিয়ম না মেনে নিজের ছেলে ও নাতিদের নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া, মাদ্রাসার পাঠ্যবই কেনায় অনিয়মসহ বেশ কিছু গুরুতর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষিত
২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসা দখলের পর মাওলানা আবদুল মালেককে প্রধান করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করেন।
সেই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে বিতাড়িত পরিচালনা কমিটি। ঢাকা জেলা জজ আদালতের সেই মামলার (নম্বর ৪১০/২০০১) রায় বিতাড়িত কমিটির বিপক্ষে যায়। আজিজুল হকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে ২০১২ সালে হাইকোর্টও বিতাড়িত কমিটির পক্ষে রায় দেয়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ২০১৪ সালে আপিল বিভাগেও খারিজ হয়।
এর মধ্যে ২০১২ সালের আগস্টে আজিজুল হক মারা যান। তবে তার মৃত্যুর পর ছেলেদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসাটি।
আদালতে মামলার মধ্যেই ২০০৩ সালে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন পেয়ে ২০০৬ সালে ২১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে মাদ্রাসার বিতাড়িত কমিটি। নতুন কমিটির সভাপতি আহমদ ফজলুর রহমান জমির বৈধ কাগজের ভিত্তিতে আজিজুল হকের অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে তাদের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ওয়াকফ প্রশাসনে আবেদন করেন।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয় ওয়াকফ প্রশাসন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুইবার জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হলেও তারা উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ নেননি। ওয়াকফ কমিশনের এই আদেশের বিরুদ্ধেও উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন আজিজুল হক, তবে সেটিও খারিজ হয়।
আইনি এসব লড়াইয়ের বেশ কিছু নথি পেয়েছে নিউজবাংলা। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে মাদ্রাসাটি দখলমুক্ত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মকবুল হোসেন ও মো. কামরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের বর্তমান অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেনি নিউজবাংলা, ফলে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে মাদ্রাসার কয়েকজন সাবেক শিক্ষকের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে তখন আজিজুল হক পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সে জন্য মাদ্রাসা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট আলেম সমাজ নয়, সকল আলেমদের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আর জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসার দুই পক্ষকেই আমি সম্মান করতাম। তাদের দুই পক্ষই নানা সময়ে আমার কাছে মাদ্রাসার বিষয়টা নিয়ে এসেছিল, কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় তখন আমার এ নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমার কারণে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটির উচ্ছেদ হয়নি এ অভিযোগ ঠিক নয়। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল ঠিকই, কিন্তু কোনো পক্ষই আমার কাছ থেকে বাড়তি সুযোগ নিতে পারেনি।’
উচ্চ আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পরেও কেন বিষয়টির সুরাহা করা হয়নি, জানতে চাইলে নানক বলেন, ‘মামলার রায় হয়েছে সেটাই আমি জানতাম না, আজকেই জানলাম।’
আজিজুল হক মাদ্রাসাটি দখল করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ করেছিলেন।’
আজিজুলের কমিটিতে বিএনপি নেতারাও
মাদ্রাসার দখল বৈধ করতে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন আজিজুল হক। এ জন্য মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য ১৯ সদস্যের একটি কমিটি করে ওয়াকফ প্রশাসনে জমা দেয়া হয়। তবে উচ্চ আদালতে রিট করে সেই কমিটিতে স্থগিতাদেশ পায় মাদ্রাসার বৈধ কমিটি।
আজিজুল হকের করা ১৯ সদস্যের কমিটির প্রথমেই ছিল তার নিজের নাম। এ ছাড়া, আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তার মেয়ের জামাই মাওলানা গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, দুই ছেলে মাহফুজুল হক ও মামুনুল হক, নাতি দেলোয়ার হোসেন ও আরও তিন আত্মীয়।
নড়াইল-২ আসন থেকে ২০০২ সালের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী খেলাফত মজলিসের এমপি মুফতি শহীদুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠিত মারকাজুল ইসলামের প্রধান কর্মকর্তা মাওলানা সাঈদ নূর ছিলেন এই কমিটির সদস্য।
এই শহীদুল ইসলাম আল্লামা আজিজুল হকের এক মেয়ের ভাশুর। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুবাই থেকে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদকে সংগঠিত করার অভিযোগ রয়েছে।
আজিজুল হকের করা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন কিশোরগঞ্জের বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী হাজি সিদ্দিক মিয়া। এ ছাড়া, টুঙ্গিপাড়া থেকে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি নেতা মাওলানা মো. ওমরসহ মাওলানা মো. মহিউদ্দিন মোল্লা নামে আরও একজন নেতা ছিলেন সেই কমিটিতে।
মাদ্রাসার আড়ালে উগ্রবাদী কার্যক্রম
মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় আজিজুল হকের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর সেটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সংগঠিত হওয়ার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয় বলে প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ ডিসি হারুন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নিয়ামতউল্লাহ ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। সেখান থেকে এসে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরুর পর তার সঙ্গে মামুনুলের বোনের বিয়ে হয়। এই নিয়ামতউল্লার সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের বন্ধুত্ব ছিল।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর নিয়ামতউল্লাহকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আজিজুল হক তখন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান আসমি হুজি নেতা মুফতি হান্নানেরও যাতায়াত ছিল ওই মাদ্রাসায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০০৫ সালের দিকে নিয়ামতউল্লার সঙ্গে মামুনুলও ৪০ দিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানকার একটি ধর্মীয় সংগঠনকে তারা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে তা বাংলাদেশের ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন। আর এসব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল মোহাম্মদপুরের দখল করা মাদ্রাসাটি।
মাদ্রাসাটি দখলের পরই যে মাওলানা আবদুল মালেককে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বানানো হয়েছিল, তার ছেলে হাফেজ মাওলানা আবু তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি।
মাদ্রাসা দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাহফুজুল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি, ক্ষুদেবার্তারও সাড়া দেননি।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের রায় পাওয়ার পরও আজিজুল হকের পরিবার মাদ্রাসাটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আমরা মূল কমিটির কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তাদের উচ্ছেদে অবশ্যই সাহায্য করব।’
আরও পড়ুন:জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে সরকারি সফর করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। শুক্রবার তাকে বহনকারী হেলিকপ্টার উপজেলার গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আগামী এক মাসের ভেতর আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। আমরা আলু রপ্তানীতে প্রণোদনা দিচ্ছি এবং রপ্তানিতে সহযোগিতা করছি। চাহিদা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
গোপীনাথপুর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বগুড়ার দুঁপচাচিয়া উপজেলার মর্তুজাপুর গ্রামে গিয়ে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জুম্মার নামাজ আদায়ের পর তার শ্বশুর মরহুম আব্দুর রাজ্জাক আকন্দের কবর জিয়ারত করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টাককে ও হেলিকপ্টার দেখতে উৎসুক লোকজনের ভিড়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসছেন এমন খবর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানাজানি হয়।
সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী, বাণিজ্য উপদেষ্টার হেলিকপ্টার শুক্রবার সকাল ১১ টায় গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে। সকাল থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। সকাল ১০টার আগেই গণমাধ্যম কর্মীরাও গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আসেন। তখন থেকেই উৎসুক জনতা গোপীনাথপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দুটি ফটকে বাণিজ্য উপদেষ্টা ও হেলিকপ্টার দেখতে ভিড় করছিলেন। তবে দেড় ঘন্টা বিলম্বে দুপুর পৌঁনে একটার দিকে উপদেষ্টাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করে।
গোপীনাথপুর এলাকার আবু রায়হান তার দুই বছরের নাতিকে কাঁধে নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টাকে ও হেলিকপ্টার দেখতে আসেন। তিনি বলেন, আমার নাতি হেলিকপ্টার দেখার বয়না ধরেছে। নাতিকে কাঁধে নিয়ে হেলিকপ্টার দেখতে এসেছি। বাণিজ্য উপদেষ্টা গোপীনাথপুরে এসেছেন। গোপীনাথপুরের বাসিন্দা হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আগে কখনও সরকারের কোনা মন্ত্রী গোপীনাথপুরের এসেছিল কি না তা জানি না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মৎস্য খাতে এ দেশের বিজ্ঞানীদের অবদান গর্ব করার মতো। তাই মৎস্য সম্পদ রক্ষায় গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
শুক্রবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী তৃতীয় ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর সাসটেইনেবল ফিশারিজ (আইসিএসএফ)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও গবেষণার উন্নয়ন, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিনিময় এবং অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত মাছ শিকার এবং অবৈধ জাল যেমন চায়না জাল ও ট্রল ডোর ব্যবহার করে মাছ শিকার অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে মাছের ক্ষতি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের কথা কেউ ভাবছে না।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, শীতকালে কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বর্ষা মৌসুমে সেই বিষ পানিতে মিশে মাছের ক্ষতি করছে। কীভাবে কৃষিতে বালাইনাশকের ব্যবহার কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং মৎস্যসম্পদ রক্ষা করা যায় সে লক্ষ্যে কৃষি খাতে বালাইনাশক ব্যবহার সীমিত করতে ইতোমধ্যে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইলিশের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টি সময়মতো না হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং নদীর নাব্যতা হ্রাসসহ নানা কারণে ইলিশ আহরণ কমে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মিঠা পানির মাছচাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে মিঠা পানির মাছের চাষ বাড়াতে হবে। তাই মাছের বৈচিত্র রক্ষা এবং হাওড়, নদীসহ প্রজনন ক্ষেত্রগুলো সংরক্ষণে জোর দিতে হবে।
হাওড়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাওড়ে অপরিকল্পিত সড়ক বা অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা যাবে না। হাওড় গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটকে সমন্বয় করে কীভাবে হাওড় রক্ষা করা যায়, সে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম। মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এটিএম মাহবুব-ই-এলাহি, কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম কায়সার রহমান।
সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ স্পিকার হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওয়াহাব। তিন দিনব্যাপী ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ১১টি সেশনে প্রায় আড়াই শতাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।
দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে চিকিৎসকদের ‘মানবিক চিকিৎসক’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, চিকিৎসকদের সবসময় রোগীদের প্রতি মানবিক ব্যবহার এবং তাদের সেবার মাধ্যমে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন করতে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। মা ও শিশু হাসপাতালের কনফারেন্স কক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নূরজাহান বেগম বলেন, ঢাকায় সবক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ হাসপাতাল থাকলেও চট্টগ্রামে জনসাধারণের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের মাধ্যমে সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও এখানকার জনসাধারণের তুলনায় তা খুব কম। তার ওপর সরকারি হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতির সংকট এবং বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হতো না। বর্তমান সরকার দায়িত্বে নেওয়ার পর এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জাপানে সামনে ১ হাজার দক্ষ নার্স পাঠানো হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফরে গিয়ে যে ১লাখ দক্ষ জনবল নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন জাপান সরকারকে, তারই ধারাবাহিকতায় জাপানে সামনে ১ হাজার দক্ষ নার্স পাঠানো হবে। আমাদের বাইরে নানা ক্ষেত্রে দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত জনবল পাঠানোর সুযোগ থাকলেও নানা অব্যবস্থাপনা, দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের অভাবে আমরা তা পারছি না।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে সরকারিভাবে আমাদের ১০হাজার চিকিৎসক এবং ১২হাজার নার্সের সংকট রয়েছে। সে সংকট কাটানোর লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে ৩হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে, সামনে আরও ২হাজার নিয়োগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। নার্সের সংকট নিরসনে সাড়ে ৩ হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে।
উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ক্যান্সার এবং হার্টের রিং এর দাম কমিয়েছে। সামনে তিনশ’ ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। ডেঙ্গুর কিটের দাম সরকারিভাবে ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাদেশে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বিষধর সাপের কামড়ের রোগীদের জন্য এনটিভেনম সরবরাহ করা হচ্ছে। চিকিৎসা খাতের সংকট দূর করার জন্য আরও ৩৫০কোটি টাকার বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং ওষুধ আমদানি করা হবে।
মা ও শিশু হাসপাতালের সভাপতি সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বী, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গভর্নিং বডির সদস্য ড. মনজুরুল ইসলাম, মা ও শিশু হাসপাতালের সহসভাপতি আবদুল মান্নান রানা, ডা. কামরুন্নাহার দস্তগীর, যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ হাসান, মো. সগীর, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. রেজাউল করিম প্রমুখ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মৎস্য খাতে এ দেশের বিজ্ঞানীদের অবদান গর্ব করার মতো। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। তাই সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
উপদেষ্টা আজ সকালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী তৃতীয় ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর সাসটেইনেবল ফিশারিজ (আইসিএসএফ)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও গবেষণার উন্নয়ন, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিনিময় এবং অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ কনফারেন্স আয়োজন করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত মাছ শিকার, অবৈধ জাল যেমন চায়না জাল ও ট্রল ডোর ব্যবহার করে মাছ শিকার অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা এভাবে সাময়িক লাভের জন্য মাছ শিকার করছে, তারা প্রকৃত মৎস্যজীবী নয়। এতে মাছের ক্ষতি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতের কথা কেউ ভাবছে না। মৎস্য অধিদপ্তর ও বিএফআরআইকে এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, শীতকালে কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বর্ষা মৌসুমে সেই বিষ পানিতে মিশে মাছের ক্ষতি করছে। কীভাবে কৃষিতে বালাইনাশকের ব্যবহার কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং মৎস্যসম্পদ রক্ষা করা যায়— সে লক্ষ্যে কৃষিখাতে বালাইনাশক ব্যবহার সীমিত করতে ইতোমধ্যে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইলিশের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এ বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি সময়মতো না হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং নদীর নাব্যতা হ্রাসসহ নানা কারণে ইলিশ আহরণ কমে গেছে। তবে ইলিশ যাতে সাধারণ মানুষের পাতে পৌঁছায়, সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টদের তিনি আরো গুরুত্বপ্রদানের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মিঠা পানির মাছ চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাছের প্রাপ্যতা বাড়লেও তা নিরাপদ কিনা, সে বিষয়েও নজর দিতে হবে। নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে মিঠা পানির মাছের চাষ বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, মাছের বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশ অনন্য। তাই মাছের বৈচিত্র রক্ষা এবং হাওড়, নদীসহ প্রজননক্ষেত্রগুলো সংরক্ষণে জোর দিতে হবে। নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
হাওড়ের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাওড়ে অপরিকল্পিত সড়ক বা অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করা যাবে না। হাওড় গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটকে সমন্বয় করে কীভাবে হাওড় রক্ষা করা যায়, সে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার মাধ্যমে মাছ, গবাদিপশু ও ফসলের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করছে, যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ খাতে আরও ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। দেশে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হলে শুধু দেশের চাহিদা পূরণ নয়, বরং তা বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও পথ খুলে দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রয়ের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ অধ্যাপক ড. এটিএম মাহবুব-ই-এলাহি, কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম কায়সার রহমান।
কনফারেন্সের কী-নোট স্পিকার হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওয়াহাব।
তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ১১টি সেশনে প্রায় আড়াই শতাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। এতে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট খাতের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা অংশ নিচ্ছেন।
অধূমপায়ীদের সুরক্ষা এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় মৎস্য অধিদপ্তরের অফিস প্রাঙ্গণ শতভাগ তামাকমুক্ত রাখার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে তামাক বিরোধী সংগঠন তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট)। সভাটি আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আব্দুর রউফ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (প্রশাসন), পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য), প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উপপরিচালক, সিনিয়র সহকারী পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আতাউর রহমান মাসুদ। তিনি তামাকজাত দ্রব্যের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক এবং এর বহুমুখী প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তাবিনাজের পরিচালক সীমা দাস সীমু তার বক্তব্যে ধোঁয়ামুক্ত ও ধোঁয়াযুক্ত তামাকজাত দ্রব্য এবং গবেষণালব্ধ তথ্য তুলে ধরেন। তাবিনাজ কর্মী শারমিন কবীর বীণা গ্রামীণ তামাক চাষ ও এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোকপাত করেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা অফিস প্রাঙ্গণ শতভাগ তামাকমুক্ত রাখতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ও কর্মপরিকল্পনা দেন।
সুপারিশসমূহ:
১. অফিস প্রাঙ্গণে ধূমপানের জন্য কোনো স্মোকিং জোন থাকবে না।
২. ক্যান্টিনে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে।
৩. দেশব্যাপী মৎস্য অধিদপ্তরের সকল অফিস প্রাঙ্গণকে শতভাগ তামাকমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
৪. সকল অফিস প্রাঙ্গণে ‘তামাকমুক্ত এলাকা’ লেখা সম্বলিত সাইনেজ প্রতিস্থাপন করা হবে।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা তামাকমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়াসে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন।
অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে স্নাতকে (অনার্স) তথ্য প্রযুক্তি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে গতকাল বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের এটুআই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এসব কথা বলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাক্রমের আইসিটি বিষয়ের ‘টিচিং, লার্নিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক এ কর্মশালার প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর।
উপাচার্য বলেন, কলেজগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাদানে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সহায়তার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সব টেকনিক্যাল কলেজ ও কম্পিউটার কাউন্সিলের সাথে আলোচনা করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের মেধার ঘাটতি নেই। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে তারা সহজেই তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক, সময়োপযোগী ও কর্মমুখী তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম ও শিক্ষাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন কলেজের ৮টি বিভাগের ৪০ জন তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. নাজমা তারা এবং মির্জা মোহাম্মদ দিদারুল আনাম।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য