খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হকের দখল করা মাদ্রাসাকে ঘাঁটি বানিয়ে রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিলেন তার ছেলে মামুনুল হক। অস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসাটি দখলের নেতৃত্বও দেন মামুনুল ও তার ভাই মাহফুজুল।
আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর অধ্যক্ষ হয়েই জড়িয়ে পড়েন অনিয়মে, যে কারণে ১৯৯৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত হন।
তবে এর দুই বছরের মধ্যে চারদলীয় জোট সরকারের আমলের শুরুতে পুলিশের উপস্থিতিতে মাদ্রাসায় হামলা করে বৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে আজিজুল হকের পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে, আজিজুল হকের পরিবার এই মাদ্রাসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেটি ধর্মীয় উগ্রবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। নতুন পরিচালনা কমিটিতে আজিজুল হকের পরিবারের সদস্য ছাড়াও যুক্ত হন বিএনপির কয়েক নেতা, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় সরাসরি মদত দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এই মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আজিজুল হকের পরিবার কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল ক্ষমতাধর হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকার এরপর ক্ষমতায় এলেও তারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তৈরি হয় সুসম্পর্ক।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হক জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ে দুজনেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। মামুনুলকে উগ্রবাদী তৎপরতা এবং মাহফুজুলকে পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝিতে বহিষ্কার করা হয়। তবে আজিজুল হক প্রভাব খাটিয়ে দুই ছেলেকে আবার মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনেন। এখন এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন মাহফুজুল হক।
মাদ্রাসাটি যেভাবে গড়ে ওঠে
মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা নিয়ে অনুসন্ধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে নিউজবাংলা। মাদ্রাসাটির বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও কথা বলেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৮৬ সালে স্থানীয় আবাসন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ও তার ভাই মোহাম্মদ নূর হোসেন মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদের পশ্চিম পাশে ১৬ কাঠা জমির ওপর মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন। এরপর ১৯৮৮ সালের ৯ নভেম্বর ও ১৯৯২ সালের ৩ ডিসেম্বর তারা দুটি নিবন্ধিত দলিলে মাদ্রাসাটি ওয়াকফ করেন।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি থেকে নিবন্ধন হয় মাদ্রাসার নামে। জমির মালিক ও সাধারণ মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় পাঁচতলা ভবনে রূপ নেয় মাদ্রাসাটি। গঠন করা হয় ২১ সদস্যের পরিচালনা কমিটি, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি কমিটির মেয়াদ তিন বছর।
শায়খুল হাদিস আজিজুল হক: শিক্ষক থেকে দখলদার
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শুরুতেই সেখানে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আজিজুল হক। এরপর ১৯৯২ সালে মাওলানা আলী আজগরের জায়গায় নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
মূল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অধ্যক্ষ হওয়ার পর আজিজুল হক সেই নিয়ম ভাঙতে শুরু করেন। রাজনৈতিক সংগঠন খেলাফত মজলিসের আমির হওয়ার সুবাদে বিএনপি সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। এরপর নানান অভিযোগে ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসা থেকে তাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।
তবে ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি ও পুলিশের সহায়তায় আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যরা মাদ্রাসাটি দখল করেন। হামলায় নেতৃত্ব দেন মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হক। চারদলীয় জোটের এমপি ও আজিজুল হকের এক মেয়ের ভাশুর মুফতি শহীদুল ইসলামও ছিলেন তাদের সঙ্গে।
মাদ্রাসা দখলের পর এর প্রতিষ্ঠাতা ও সরকার অনুমোদিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিতাড়িত করা হয়। অনুমোদনহীন পারিবারিক কমিটির মাধ্যমে শুরু হয় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। অন্যদিকে, প্রকৃত পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বিতাড়িত হওয়ার পর মূল মাদ্রাসার কয়েক শ গজ দূরে একই নামে আরেকটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন মূল জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত অধ্যক্ষ মাওলানা হিফজুর রহমান। নতুন ওই মাদ্রাসার কার্যক্রম এখনও চলমান।
বিষয়টি নিয়ে মাওলানা হিফজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি অসুস্থ উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে মাদ্রাসা দখলের দিন সেখানে উপস্থিত থাকা সাবেক এক শিক্ষক কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন বাৎসরিক ছুটি চলছিল বলে মাদ্রাসা ছিল একেবারে ফাঁকা। শুধু আমি আর সিনিয়র শিক্ষক ও তৎকালীন কমিটির সদস্য মুফতি মনসুরুল হক এবং কিছু ছাত্র ছিলাম।
‘হঠাৎ করেই বিকেলে মামুনুল হক ও মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে কয়েক শ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলা করে। তারা মাদ্রাসাজুড়ে তাণ্ডব চালায়, মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণ করে। আমি মাদ্রাসার তৃতীয় তলার বাথরুমে ও মনসুর হুজুর একটি কক্ষে আশ্রয় নেন। তারা মাদ্রাসা দখল নেবার পর পুলিশ এসে নিরাপত্তার কথা বলে আমাদের বের করে নিয়ে যায়। বের হবার পথে লক্ষ করি মাদ্রাসার চারপাশে পুলিশ আর দুটি মাইক্রোবাস ভর্তি নানা ধরনের অস্ত্র। এরপর থেকে আমরা আর মাদ্রাসায় ঢুকতে পারিনি।’
মাদ্রাসায় পারিবারিক পুনর্বাসন
আজিজুল হক জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের কর্তৃত্ব বাড়াতে বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেন। তখনকার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রভাব খাটাতে শুরু করেন মাদ্রাসায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার সাবেক তিন শিক্ষক নিউজবাংলাকে জানান, আজিজুল হক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তার ছেলে মাহফুজুল হক পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে আবার আজিজুলের চাপেই তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পর মাহফুজুলের বিরুদ্ধে চারিত্রিক স্খলনের অভিযোগও ওঠে। মাদ্রাসারই আরেক শিক্ষক মাওলানা মোস্তাক আহমদ শরিয়তপুরী তার বিরুদ্ধে সমকামিতার লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তবে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেই শিক্ষককেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন আজিজুল হক।
আজিজুল হকের আরেক ছেলে মামুনুল হক উগ্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ছাত্র থাকার সময় মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কৃত হন। সে সময় মামুনুল খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মাদ্রাসায় রাজনীতি তখনও নিষিদ্ধ থাকায় পরিচালনা কমিটির চাপে আজিজুল হক নিজেই মামুনুলসহ পাঁচ ছাত্রকে বহিষ্কারে বাধ্য হন। তবে কিছুদিন পর অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু নিজের ছেলেকে তিনি মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনেন।
মাদ্রাসার সাবেক কয়েক শিক্ষক নিউজবাংলাকে জানান, আজিজুল হক কোনো নিয়ম না মেনে নিজের ছেলে ও নাতিদের নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া, মাদ্রাসার পাঠ্যবই কেনায় অনিয়মসহ বেশ কিছু গুরুতর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষিত
২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে আজিজুল হক মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসা দখলের পর মাওলানা আবদুল মালেককে প্রধান করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করেন।
সেই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে বিতাড়িত পরিচালনা কমিটি। ঢাকা জেলা জজ আদালতের সেই মামলার (নম্বর ৪১০/২০০১) রায় বিতাড়িত কমিটির বিপক্ষে যায়। আজিজুল হকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেলে ২০১২ সালে হাইকোর্টও বিতাড়িত কমিটির পক্ষে রায় দেয়। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ২০১৪ সালে আপিল বিভাগেও খারিজ হয়।
এর মধ্যে ২০১২ সালের আগস্টে আজিজুল হক মারা যান। তবে তার মৃত্যুর পর ছেলেদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসাটি।
আদালতে মামলার মধ্যেই ২০০৩ সালে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন পেয়ে ২০০৬ সালে ২১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে মাদ্রাসার বিতাড়িত কমিটি। নতুন কমিটির সভাপতি আহমদ ফজলুর রহমান জমির বৈধ কাগজের ভিত্তিতে আজিজুল হকের অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করে তাদের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ওয়াকফ প্রশাসনে আবেদন করেন।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটিকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয় ওয়াকফ প্রশাসন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুইবার জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হলেও তারা উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ নেননি। ওয়াকফ কমিশনের এই আদেশের বিরুদ্ধেও উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন আজিজুল হক, তবে সেটিও খারিজ হয়।
আইনি এসব লড়াইয়ের বেশ কিছু নথি পেয়েছে নিউজবাংলা। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে মাদ্রাসাটি দখলমুক্ত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মকবুল হোসেন ও মো. কামরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের বর্তমান অবস্থান চিহ্নিত করতে পারেনি নিউজবাংলা, ফলে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে মাদ্রাসার কয়েকজন সাবেক শিক্ষকের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে তখন আজিজুল হক পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সে জন্য মাদ্রাসা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট আলেম সমাজ নয়, সকল আলেমদের সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আর জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসার দুই পক্ষকেই আমি সম্মান করতাম। তাদের দুই পক্ষই নানা সময়ে আমার কাছে মাদ্রাসার বিষয়টা নিয়ে এসেছিল, কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় তখন আমার এ নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমার কারণে মাদ্রাসার অবৈধ কমিটির উচ্ছেদ হয়নি এ অভিযোগ ঠিক নয়। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল ঠিকই, কিন্তু কোনো পক্ষই আমার কাছ থেকে বাড়তি সুযোগ নিতে পারেনি।’
উচ্চ আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পরেও কেন বিষয়টির সুরাহা করা হয়নি, জানতে চাইলে নানক বলেন, ‘মামলার রায় হয়েছে সেটাই আমি জানতাম না, আজকেই জানলাম।’
আজিজুল হক মাদ্রাসাটি দখল করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ করেছিলেন।’
আজিজুলের কমিটিতে বিএনপি নেতারাও
মাদ্রাসার দখল বৈধ করতে ওয়াকফ প্রশাসন থেকে নিবন্ধন নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন আজিজুল হক। এ জন্য মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য ১৯ সদস্যের একটি কমিটি করে ওয়াকফ প্রশাসনে জমা দেয়া হয়। তবে উচ্চ আদালতে রিট করে সেই কমিটিতে স্থগিতাদেশ পায় মাদ্রাসার বৈধ কমিটি।
আজিজুল হকের করা ১৯ সদস্যের কমিটির প্রথমেই ছিল তার নিজের নাম। এ ছাড়া, আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন তার মেয়ের জামাই মাওলানা গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, দুই ছেলে মাহফুজুল হক ও মামুনুল হক, নাতি দেলোয়ার হোসেন ও আরও তিন আত্মীয়।
নড়াইল-২ আসন থেকে ২০০২ সালের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী খেলাফত মজলিসের এমপি মুফতি শহীদুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠিত মারকাজুল ইসলামের প্রধান কর্মকর্তা মাওলানা সাঈদ নূর ছিলেন এই কমিটির সদস্য।
এই শহীদুল ইসলাম আল্লামা আজিজুল হকের এক মেয়ের ভাশুর। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুবাই থেকে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদকে সংগঠিত করার অভিযোগ রয়েছে।
আজিজুল হকের করা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন কিশোরগঞ্জের বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী হাজি সিদ্দিক মিয়া। এ ছাড়া, টুঙ্গিপাড়া থেকে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি নেতা মাওলানা মো. ওমরসহ মাওলানা মো. মহিউদ্দিন মোল্লা নামে আরও একজন নেতা ছিলেন সেই কমিটিতে।
মাদ্রাসার আড়ালে উগ্রবাদী কার্যক্রম
মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় আজিজুল হকের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর সেটি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সংগঠিত হওয়ার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয় বলে প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ ডিসি হারুন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নিয়ামতউল্লাহ ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। সেখান থেকে এসে জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরুর পর তার সঙ্গে মামুনুলের বোনের বিয়ে হয়। এই নিয়ামতউল্লার সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের বন্ধুত্ব ছিল।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর নিয়ামতউল্লাহকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আজিজুল হক তখন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান আসমি হুজি নেতা মুফতি হান্নানেরও যাতায়াত ছিল ওই মাদ্রাসায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ২০০৫ সালের দিকে নিয়ামতউল্লার সঙ্গে মামুনুলও ৪০ দিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানকার একটি ধর্মীয় সংগঠনকে তারা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে তা বাংলাদেশের ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন। আর এসব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল মোহাম্মদপুরের দখল করা মাদ্রাসাটি।
মাদ্রাসাটি দখলের পরই যে মাওলানা আবদুল মালেককে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বানানো হয়েছিল, তার ছেলে হাফেজ মাওলানা আবু তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি।
মাদ্রাসা দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাহফুজুল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি, ক্ষুদেবার্তারও সাড়া দেননি।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের রায় পাওয়ার পরও আজিজুল হকের পরিবার মাদ্রাসাটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আমরা মূল কমিটির কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তাদের উচ্ছেদে অবশ্যই সাহায্য করব।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন কমিশন কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (টিওটি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই)-এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সিইসি এ কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘এই ম্যাসেজটা আপনাদের দিতে চাই যে, আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তা ছাড়া আমরাও আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব বা হুকুম দেব না। আপনারা ধরে রাখতে পারেন, রিলেভেন্ট টু ইলেকশন (নির্বাচন সম্পর্কিত) যে আইন প্রচলিত আছে সেই আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারার চেষ্টা করবেন।’
সিইসি বলেন, আমরা কামনা করি, আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে (প্রফেশনালি) কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই জাতি তত সভ্য। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আমাদের এই কালচারটা কাল্টিভেট করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষ আইন মেনে চলবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করবে। যে গন্ডির মধ্যে আমার কাজ থাকবে সেখানেই আমি আইনকে বাস্তবায়ন করব। আমরা চাইব আপনারা আইনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের উপরে নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এই সমন্বয়টা খুবই জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। জেলার যে ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে ওটার সাথে সমন্বয়। এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। এই দায়িত্বটা আপনাদের কাঁধে নিতে হবে। যেকোনো ক্রাইসিস হলে আপনারা চেষ্টা করবেন শুরুতেই যাতে এটার সমাধান করা যায়।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হব, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে গিয়ে এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আপনাদের প্রতি ম্যাসেজ হচ্ছে সামনের নির্বাচন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কাজ করবেন, ইসি আপনাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক কোনো কাজ করলে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়বেন। আর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। চাকরির মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদের না করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের একটা আবহ সৃষ্টি করতে হবে।’
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন মাঠে যারা আছেন তারা যেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলেন। প্রশাসন কঠোরভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে। এবারের নির্বাচনে সমন্বিতভাবে মাঠ প্রশাসন যে, একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি তা আমরা দেখিয়ে দেব।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, ‘তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, একজন ধূমপায়ী চিকিৎসক রোগীকে ধূমপানে বাঁধা দিলে তিনি গ্রহণ করবেন না। তাই চিকিৎসকদেরকে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, সিটিএফকে, বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে রপ্তানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। এই পরিস্থিতিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তি ও বিমার বাইরে করা পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, ওষুধ, চামড়াসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডে স্পষ্ট যে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর নয়। নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে কেবল ব্যবসায়িক ক্ষতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিকারকরা কার্গো ভিলেজে নিরাপত্তাহীনতা, গুদাম ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও মালামাল চুরির অভিযোগ জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি বলেছে, ওষুধ, তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, ফলমূল, হিমায়িত খাদ্য ও অন্যান্য রপ্তানিকারক খাত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে রপ্তানি চুক্তি ও অর্ডারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইএবি সভাপতি বলেন, আগুনের ঘটনাটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে এবং দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অঘটন আর না ঘটে।
এ সময় কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীততাপনিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন, নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ ও সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর গুদাম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ, গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফাইল ছবি
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে বলে পুনরায় জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।”
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কোর কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের সফল আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বডিওর্ন ক্যামেরা কেনা হবে এবং এ বিষয়ে সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক কিছু বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা আছে কিনা- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এসব ঘটনা তদন্তের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করা হবে।
প্রবাসীদের জন্য পাসপোর্ট ফি কমানো এবং বিমান ও বিমানবন্দরে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলেও তিনি জানান। সূত্র: বাসস
নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। ফাইল ছবি
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। স্থগিত দল হওয়া মানে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত। তাই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।’
তিনি আজ রোববার সকালে সিলেটে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার জেলা পুলিশ লাইনে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আয়োজিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র প্রতীক সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতীক নির্ধারণ সংবিধান ও নির্বাচনী বিধিমালার আওতায় করা হয়। শাপলা প্রতীক সেই তালিকায় নেই।
তাই তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগও নেই।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ‘অতীতের মতো বিতর্কিত নির্বাচন আর হবে না। সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মকর্তা যাতে নির্বাচনী দায়িত্বে না থাকেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’ সূত্র: বাসস
ছবি: বাসস
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীকে।
অন্য সদস্যরা হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মুঃ রইচ উদ্দিন খান ও মোঃ তারেক হাসান এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।
কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র: বাসস
গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড SRO No-404-Law/2025 এর মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রণীত আয়কর আইন, ২০২৩ এর Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ বাতিল করে ২০২৩ সালে বাংলা আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করার পর হতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আয়কর আইনের Authentic English Text প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকতেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text সরকারী গেজেটে প্রকাশ হবার ফলে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ আয়কর আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাবেন বিধায় করদাতাগণের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কাস্টমস আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর Authentic English Text সরকারি গেজেটে প্রকাশের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই এই দুটি আইনের Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীগনের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
মন্তব্য