কোভিড ১৯ এর জন্য দায়ী সার্স কোভ ২ প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, এমন গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসাবিষয়ক প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সম্প্রতি বলেছে, সংক্রমিত কোনো বস্তু স্পর্শের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একেবারেই কম।
অক্সফোর্ড অ্যাকাডেমিকের দ্য জার্নাল অফ ইনফেকশনাস ডিজিজেস, নেচারসহ আরও কয়েকটি সাময়িকীতে দাবি করা হয়েছে, খোলা জায়গার চেয়ে আবদ্ধ পরিবেশে করোনাভাইরাস বেশি ছড়ায়। এমন অবস্থায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রচলিত কৌশল ঢেলে সাজানোর আহ্বান জোরাল হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নতুন গবেষণার আলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাইডলাইনে পরিবর্তন আনা দরকার।
দেশে এ ধরনের তেমন কোনো গবেষণা নেই স্বীকার করে তারা বলছেন, এ কারণেই বাংলাদেশে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তাদের সুপারিশে পরিবর্তন এলে বাংলাদেশেও সেটি কার্যকর করা হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই বলছে, করোনাভাইরাস মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে নিকটজনের কাছে ছড়ায়। এজন্য, হাঁচি-কাশি আক্রান্তদের কাছ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, আক্রান্তদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনসহ বেশকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। এছাড়া, কোভিড ১৯ সংক্রমণের মাত্রা কমাতে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কৌশলও নেয়া হচ্ছে।
তবে ল্যানসেটে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ছয় বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত হওয়ার কারণেই প্রচলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, উন্মুক্ত পরিবেশের চেয়ে আবদ্ধ জায়গায় করোনাভাইরাস ছড়ানোর মাত্রা অনেক বেশি। আবদ্ধ জায়গায় বাতাস চলাচলের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে এই সংক্রমণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, কোভিডের যত সংক্রমণ, তার প্রায় ৪০ শতাংশই ঘটছে উপসর্গহীন আক্রান্তদের মাধ্যমে। এই উপসর্গবিহীন আক্রান্তদের হাঁচি-কাশি নেই, এটাও ভাইরাসের বায়ুবাহী সংক্রমণের বিষয়টিকে সমর্থন করে।
আরও পড়ুন: করোনা বায়ুবাহিত, আবদ্ধ জায়গায় সংক্রমণ বেশি: গবেষণা
এর আগে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির হালনাগাদ করা ‘সারফেস ক্লিনিং গাইডলাইন’ এ বলা হয়, সংক্রমিত কোনো বস্তু স্পর্শের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক অনেক কম। ১০ হাজারের মধ্যে একজনেরও কম ব্যক্তি এভাবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
করোনাভাইরাস কোনো বস্তুর পৃষ্ঠতলে পড়ার পর দীর্ঘ সময় টিকে থাকে এবং সেই বস্তু স্পর্শ করলে মানুষও সংক্রমিত হতে পারে, এমন অবস্থান থেকে সরে এসে সিডিসি বলেছে, করোনার বিস্তার ঠেকাতে কেবল কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার। প্রাত্যহিক জীবনে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়াই যথেষ্ট। বস্তুর উপরিতল পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ কোনো রাসায়নিক জীবাণুনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: বস্তু থেকে ছড়ায় না করোনাভাইরাস, সিডিসির ইউটার্ন
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির শুরুর দিকে বিদেশি বেশকিছু গবেষণায় এসব তথ্য বিচ্ছিন্নভাবে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালাও বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন হয়েছে। এবারও তাদের নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা উচিত।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাতাসের মাধ্যমে করোনা ছড়ায় এটা অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটা নতুন কিছু নয়। এছাড়া ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষ উপসর্গ ছাড়াই করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। তারা কিন্তু কথার মাধ্যমেই করোনা ছড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গবেষকদের পরামর্শ বাস্তবায়নের বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভেবে দেখা উচিত। এছাড়া মহামারির বয়সও এক বছর হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই নতুন কিছু যুক্ত করে গাইডলাইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘শুধু বিশ্ব সংস্থা নয়, পৃথিবীর সব দেশেই গাইউলাইন পরিবর্তন করা উচিত। নতুন গবেষণার আলোকে এটা অবশ্যই পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি। সে ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবে সম্প্রতি আমাদের দেশে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গবেষণা হচ্ছে, এটা শেষ হতে কিছু দিন সময় লাগবে।’
অক্সফোর্ড অ্যাকাডেমিকের দ্য জার্নাল অফ ইনফেকশনাস ডিজিজেস এ গত ফেব্রুয়ারিতে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ঘরের বাইরে বেশি সময় কাটানোর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে, এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে।
অন্যদিকে বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচারে গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দেয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকার কড়া সমালোচনা করা হয়। ওই নিবন্ধেও দাবি করা হয়, উন্মুক্ত পরিবেশের চেয়ে বদ্ধ জায়গাতেই করোনাভাইরাস বেশি ছড়ায়।
এসব গবেষণা তথ্যের সঙ্গে লকডাউনের কৌশল সাংঘর্ষিক কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘গবেষণায় করোনা শুধু বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এটা বলা হয়নি। যারা অসুস্থ তাদের সংস্পর্শেও ছড়াচ্ছে। লডউাউনের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর উৎসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন যদি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে তাহলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভালো কিছু পরিবর্তন হবে।’
দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গঠিত কারিগরি কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন এসব গবেষণায় যা বলা হচ্ছে তার যুক্তি রয়েছে। তবে আমাদের দেশে এ ধরনের গবেষণা হয়নি।’
বাংলাদেশের মতো দেশে লকডাউনের প্রয়োজন ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যে জন্য আমাদের দেশে লকডাউনে দেয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। লকডাউনের মাঠে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো লোককে দেখা যাচ্ছে না। যেসব এলাকায় বেশি সংক্রমণ হয়েছে সেখানে গণহারে পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত করা উচিত ছিল, সেটা করা হয়নি। এ সময়ে যদি করোনা রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশনে নেয়া যেত তাহলে হয়ত আমরা লকডাউনের সুবিধা পেতাম।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ইউনিটের ত্রুটি স্বীকার করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে বাতাস বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চিকিৎসকেরা পিপিই পরে দায়িত্বপালন করছেন। যেহেতু করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় তাই এসব ইউনিটের ওপর দিয়ে বাতাস বের করার একটি ব্যবস্থা করতে হবে।’
করোনাভাইরাসের চরিত্র নিয়ে দেশে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন গবেষণার আলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা পরিবর্তন জরুরি। একইসঙ্গে আমাদের দেশে এ ধরনের গবেষণা করতে হবে। আইসিডিডিআর,বি অথবা আইইডিসিআর এটা করতে পারে, তবে তাদের জনবল খুবই কম। এজন্য সরকারের অর্থ বরাদ্দ দেয়া উচিত।’
অণুজীববিজ্ঞানী ও গবেষক ডা. সমীর কুমার সাহা ও তার মেয়ে ডা. সেঁজুতি সাহা বাংলাদেশে প্রথম করোনার জিন মানচিত্র তৈরি করেন। ডা. সমীর কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা হচ্ছে। এটি নতুন একটি মহামারি বলে নতুন নতুন গবেষণায় নতুন নতুন তথ্য আসছে। এটা স্বভাবিক। আমাদের উচিত হবে আমাদের দেশে এ ধরনের গবেষণা করা। সেক্ষেত্রে বিশ্ব সংস্থা সংস্থার নীতিমালা বা গাইডলাইনে এখনই পরিবর্তনের আগে আরও বিস্তর আলোচনা করা উচিত।’
করোনাভাইরাস নিয়ে বিস্তর গবেষণা না হলেও এই ভাইরাসে কাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি, সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কাদের বেশি সতর্ক থাকা উচিত, এসব বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় মৃত্যুঝুঁকি কমাতে গবেষণায় যে সুপারিশ আসবে, সে অনুয়ায়ী কাজ করা হবে। গবেষণার অগ্রগতি নিয়ে আগামীকাল (রোববার) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা হবে।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য