বিস্তৃর্ণ হাওর, হাওরজুড়ে শুষ্ক মৌসুমে ধান আর বর্ষায় মাছ, পাগল করা বাউল সুর আর প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য খ্যাতি ছিল সুনামগঞ্জের। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছে অচেনা এক সুনামগঞ্জকে।
হেফাজতে ইসলামের সমালোচনা করাই যেন অপরাধ এখানে। সমালোচনা করলেই গ্রেপ্তার, মারধর, হেনস্তা করা হচ্ছে। বাড়িঘরে হামলা-হুমকি তো রয়েছেই। সাম্প্রতিক এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জে। এমনকি একজন সমালোচনা করার কারণে পুরো গ্রামে তাণ্ডবও চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশ সব সময় সমালোচনাকারীর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত করছে। তবে এতে করে তারা নিজেরাও রক্ষা পাচ্ছে না। থানাতেও ঘটেছে হামলার ঘটনা।
অসাম্প্রদায়িকতা ও সংস্কৃতিচর্চার জন্য বিখ্যাত সুনামগঞ্জে কেন একের পর এক এ রকম ঘটনা ঘটছে? কীভাবে উগ্রবাদী গোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে উঠল হাওরের এই সরল জনপদে?
স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক রাজনীতিবিদ, সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ হয় এ নিয়ে। প্রত্যেকেই বলছেন, বামধারার রাজনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়া, ভোটের লোভে আওয়ামী লীগ নেতারা আদর্শচ্যুত হওয়া ও ভিন্ন আদর্শের লোকদের দলে ভেড়ানো, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা ও দুর্বল হয়ে পড়া এবং একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মকাণ্ড গত দুই দশকে বদলে দিয়েছে সুনামগঞ্জের চিত্র।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের পরও এখানে ভোটের মূল লড়াই হতো আওয়ামী লীগ আর বাম দলগুলোর মধ্যে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক চর্চার জন্য খ্যাতি ছিল এই অঞ্চলের। খ্যাতি ছিল বাউল ও সহজিয়া দর্শনের সাধকদের উর্বরভূমি হিসেবে।
হাসন রাজা, রাধারমন, দুর্বিন শাহ, শাহ আব্দুল করিম- সুনামগঞ্জের এমন অসংখ্য সাধক গানে-কথায় জীবনভর অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবপ্রেমের কথা প্রচার করে গেছেন। আবার এই অঞ্চলে জন্ম নিয়ে বরুণ রায়, আবদুস সামাদ আজাদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো নেতারা বাম ও আওয়ামী ধারার রাজনীতিতে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অথচ এই সুনামগঞ্জ থেকেই এখন ছড়াচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প।
একের পর এক ঘটনা
গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলামের একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক। পরদিন দিরাইয়ের পাশের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস নামের এক যুবক ফেসবুকে মামুনুল হকের সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দেন।
এ নিয়ে ওই দিনই শাল্লায় উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয় লোকদের উসকে দেয় উগ্রবাদীরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই রাতেই ঝুমন দাসকে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসী।
পরদিন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে ঝুমনের গ্রাম নোয়াগাঁওয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় কয়েক হাজার লোক। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আশপাশের গ্রাম থেকে মিছিল নিয়ে এসে তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে গ্রামের অন্তত ৮০টি বাড়িতে।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই রিসোর্ট-কাণ্ডের পর ৪ এপ্রিল হেফাজত নেতা মামুনুল হক ও ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নিয়ে সমালোচনা করায় তোপের মুখে পড়েন দিরাইয়ের এক স্কুলশিক্ষক। ফেসবুকে নয়, স্থানীয় একটি বাজারে চায়ের আড্ডায় মামুনুল হক ও মাদানীর সমালোচনা করেছিলেন স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসবি গোলাম মোস্তফা। এতেই ক্ষেপে যায় হেফাজত অনুসারীরা।
প্রথমে তর্কাতর্কি, পরে কয়েক শ লোক জড়ো করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিছিল করে তারা। যথারীতি অভিযোগ আনা হয় ধর্ম অবমাননার। পরে ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় প্রশাসন হাজির হয় ঘটনাস্থলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ক্ষমা চান স্কুলশিক্ষক।
তবে এতেও ক্ষান্ত হয়নি হেফাজত অনুসারীরা। তারা স্কুলশিক্ষকের পদচ্যুতির দাবি জানায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসানকেও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে ফোন করে ওই শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিতে হয়।
মামুনুল হক যেদিন নারীসহ ধরা পড়লেন সোনারগাঁয়ে, সেদিনও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হেনস্তার শিকার হন যুবলীগের এক নেতা। মামুনুলের নারীসহ রিসোর্টে যাওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বিপাকে পড়েন যুবলীগ নেতা এমাদ হোসেন জয়।
এই পোস্টকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে। পরদিন আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। জয় ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা জজ মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক।
সর্বশেষ হেফাজতের সমালোচনা করে পোস্ট দিয়ে হেনস্তার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতা আফজাল খান। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায়। হেফাজতকে নিয়ে পোস্ট দেয়ার পর গত মঙ্গলবার তাকে ধর্মপাশার জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে আটকে রেখে লাঞ্ছিত করা হয়। তাৎক্ষণিক কয়েক শ মানুষ জড়ো হয়ে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসে ও উত্তেজিত জনতার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে।
এদিকে, গত শনিবার রাতে মামুনুল হককে আটক করা হয়েছে এমন খবরে ছাতকে মিছিল বের করে হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা। এই মিছিল থেকে ছাতক থানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
এ রকম একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলছে। ফেসবুকে হেফাজত ও তাদের নেতাদের সমালোচনা করে পোস্ট দিলেই হামলা, হেনস্তা, গ্রেপ্তার ছাড়াও ফেসবুকে গালাগালি ও হুমকির অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য।
প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
শাল্লার তাণ্ডবের পরই প্রশ্ন ওঠে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। আগের দিন উত্তেজনা জানার পরও নোয়াগাঁওয়ে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি; সেই সুযোগে তাণ্ডব চালানো হয় পুরো গ্রামে।
পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে এই অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। এই হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে গত মঙ্গলবার শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হককে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে মৌলভীবাজারে বদলি করা হয়েছে।
শাল্লায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে সমালোচনা করায় আটক ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে পুলিশ। এই মামলায় পুলিশের বাদী হওয়া আইনবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও দিরাইয়ের ঘটনায়ও। হেফাজতের সমালোচনা করায় তাহিরপুরে যুবলীগ নেতাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো, ধর্মপাশায় ছাত্রলীগ নেতাকে কেন হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে আসা ও ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হলো, এসব প্রশ্ন তুলে তার সমালোচনা করছেন অনেকেই।
ধর্মপাশায় ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্তার ঘটনায় থানার ওসি দেলোয়ার হোসেনসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বুধবার বদলি করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা মনে করেন, হেফাজত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করে। প্রশাসনও এতে ভয় পায়। ফলে তাদের ব্যাপারে নমনীয় থাকে। এই নমনীয়তাকে কাজে লাগায় হেফাজত। এ ছাড়া মাঠ প্রশাসনে অনেকে তাদের অনুসারীও থাকতে পারে।
হেফাজতের সমালোচনা করলেই কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন করা হয় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমানকে। তিনি অযথা কাউকে আটক বা হেনস্তা করা হচ্ছে না জানিয়ে বলেন, অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে অনেক ভূমিকা নিতে হয়। তবে যা কিছু হচ্ছে আইন মোতাবেকই হচ্ছে।
তিনি বলেন, কাউকে ধরে আনা মানেই সে অপরাধী নয়। পুলিশের কাজ বিচার করা নয়। পুলিশ আটকের পর আদালতে পাঠায়। আদালত যদি মনে করে সে অপরাধী নয় তাহলে ছেড়ে দেয়।
তবে সাম্প্রতিক সুনামগঞ্জের ঘটনাগুলো প্রসঙ্গে পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, যেসব ঘটনার ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুলিশ, আইনের বাইরে কেউ কিছু করতে পারবে না। করলে বিপদে পড়বে। এ ব্যাপারে সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে।
আওয়ামী লীগ-হেফাজত একাকার
১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে যে সমাবেশটি করে হেফাজতে ইসলাম, সরাসরি এর সহযোগিতায় ছিলেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগ দলীয় দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিত রায় ওই সমাবেশে মঞ্চে উঠে বক্তৃতাও করেছেন।
কেবল এই সভায়ই নয়, সম্প্রতি সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সভার নামে বেশ কয়েকটি জমায়েত করে হেফাজতে ইসলাম। এতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। তার সবগুলোতেই অর্থ, জনবল, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এবং অতিথি হয়ে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
সুনামগঞ্জের তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও হেফাজত অনেকটা একাকার হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ দলটির অনেক নেতার। তারা নিজেদের গ্রুপ ভারী করতে জামায়াত-হেফাজতকে দলে ভেড়াচ্ছেন। আবার অনেক নেতা নিজেই হেফাজতের প্রতি ঝুঁকছেন বলে অভিযোগ আছে। এ
ছাড়া দলীয় গ্রুপিং ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে অনেকে হেফাজতকে ব্যবহার করে সুবিধা নেয়ার অভিযোগও আছে।
দিরাইয়ে সমাবেশের পর শাল্লায় হিন্দুপল্লিতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রধান আসামি করা হয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে এলাকায় চাউর আছে।
এ ছাড়া ধর্মপাশায় ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানকে হেনস্তার ঘটনায় করা মামলার আসামি জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের (সদ্য বহিষ্কৃত) সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ।
মুজাহিদের নেতৃত্বেই স্থানীয়দের উসকে দিয়ে এই হেনস্তার ঘটনা ঘটে বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন আফজাল। এ ঘটনায় আবুল হাশেম আলমকে বুধবার বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। একই দিনে তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
সুনামগঞ্জে সাম্প্রতিক এ রকম সবগুলো ঘটনায়ই দেখা গেছে আওয়ামী লীগ ও হেফাজত নেতারা একাকার। সমাবেশ কিংবা হামলা- সবই মিলেমিশে করছেন তারা।
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এম রশিদ আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। জেলার আওয়ামী রাজনীতির এই অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ভোটের রাজনীতি করি। আদর্শ রাজনীতি থেকে সরে এসেছি। এতে প্রতিক্রিয়াশীলরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। একসময় সুনামগঞ্জের প্রগতিশীল নেতারা সারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন সেদিন বদলে গেছে। আমরাই দলে প্রতিক্রিয়াশীলদের জায়গা করে দিচ্ছি।’
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদির আহমদ মুক্তাও। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির অদূরদরদর্শিতার কারণে এমনটি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা মূল আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। দলে আদর্শবিরোধী অনেকে ঢুকছে। অনেক নেতার মাধ্যমে তারা ঢুকছে। দলীয় আদর্শ প্রচারের চেয়ে নেতারা গড্ডালিকায় গা ভাসান। আবার মুখে ধর্মের বুলি আওড়ে হেফাজতিরা আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয়দের সহজেই দলে ভিড়িয়ে নিতে পারে।’
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খাইরুল কবির রুমেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জ শান্তির শহর। সংস্কৃতির শহর। কিন্তু কিছু মৌলবাদী এ শহরের শান্তি নষ্ট করতে নানা রকম পাঁয়তারা করছে। এদের মধ্যে আমাদের দলের কিছু লোক তাদের সহযোগিতা করছে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ থেকে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং আমাদের মনিটরিং সেল এসব বিষয়ে নজরদারি রাখছে। এমন যাদেরই পাওয়া যাবে, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
আছে উসকানি, গুজব
সুনামগঞ্জে সাম্প্রতিক সবগুলো ঘটনার পেছনেই উসকানি দিয়ে ও গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করার অভিযোগ রয়েছে।
শাল্লা, দিরাই, তাহিরপুর কিংবা ধর্মপাশায় ঘটা সাম্প্রতিক সবগুলো ঘটনায় দেখা গেছে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর দ্রুততম সময়ে তা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে জড়ো হয়ে যায় হাজারও মানুষ। হেফাজতে ইসলামের সমালোচনাকে ইসলাম ধর্মের সমালোচনা বলেও অপপ্রচার চালানো হয় এবং সমালোচনাকারীকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়।
সুনামগঞ্জের একটি থানার ওসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হেফাজতের নেতারা উসকানি দিয়ে ও গুজব ছড়িয়ে এমন পরিস্থিতির তৈরি করে তাতে এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। ফলে অনেকের জানমাল রক্ষায় পুলিশ বাধ্য হয়ে সমালোচনাকারীকে ধরে নিয়ে আসে।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য খ্যাতি রয়েছে সুনামগঞ্জের। অসংখ্য বাউল ও লোকশিল্পীর জন্ম এ অঞ্চলে। বছরজুড়েই লেগে থাকত গান-নাচ-নাটকের উৎসব। তবে সাম্প্রতিক একদিকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে হেফাজত ইসলামের বিভিন্ন কর্মসূচিকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের সাংবাদিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্মী শামস শামীম বলেন, ‘সুনামগঞ্জে আগে বছরজুড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা হতো। ছোটবেলা পথেঘাটে মেলা, বাউল গানের আসর, ওরস দেখেছি। এগুলোতে সব ধর্মের মানুষ যেত। সব মানুষের সম্মেলনের কথা বলা হতো। এখন এগুলো বন্ধ। এখন এসব আয়োজন করতে গেলেই বাধা আসে। ধর্মান্ধরা বাধা দেয়। প্রশাসন বাধা দেয়। এখন সব বন্ধ করে কেবল ওয়াজ মাহফিল হয়। আর এসব মাহফিলে ধর্মচর্চার চেয়ে উগ্রতা ও উসকানিমূলক কথাই বেশি হয়। এ জন্য প্রশাসন ও সরকার দায়ী।’
সুনামগঞ্জের বাউলশিল্পী লাল শাহ। শাল্লার তাণ্ডবের পর সেখানে ছুটে গিয়েছেন তিনি। লাল শাহ বলেন, ‘আমি যদি মানুষই হতে পারি না, তাহলে মুসলমান হব কীভাবে?’
লাল শাহ বলেন, ‘আমরা এখন মনে করছি নামাজ পড়লে, রোজা রাখলেই বেহেশতে চলে যাব। কিন্তু মানুষ চিনলাম না। বিভিন্ন জনকে ফতোয়া দিলাম। এসব করে তো হবে না। আগে মানুষ হতে হবে। মানুষ চিনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ কেবল ভুল চিন্তা করছে। আমাকে বেহেশতে নেবে আমার সৎকর্ম। আমার দেহের ভেতরে যে প্রকৃত মানুষ আছে সে-ই মানুষ।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সরকারি ক্রয় পদ্ধতি পুরোপুরি ডিজিটাল করা ও সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সরকারি সেবার উন্নয়নে ক্রয় আধুনিকীকরণ’(পিএমআইপিএসডি) শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। ইউএনবির হাতে আসা একটি নথিতে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, প্রকল্পটিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।
সরকারি নথি থেকে জানা যায়, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি ই-ক্রয় (ই-জিপি) ব্যবস্থাকে দেশের সব সরকারি কেনাকাটার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা—যাতে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ ( বিপিপিএ) ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
মোট ব্যয়ের মধ্যে ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি ১১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় সব সরকারি কেনাকাটা ই- জিপি (সরকারি ক্রয়) ব্যবস্থার আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করতে চাইছে সরকার। এ ছাড়া, বিপিপিএয়ের ডেটা সেন্টারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উন্নত করে এর কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ রক্ষণাবেক্ষণ ও টেকসই পরিচালনার পরিকল্পনাও করছে সরকার।
তাছাড়া, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে— নিরাপদ, সময়োপযোগী ও আধুনিক তথ্য বিশ্লেষণ সক্ষমতা গড়ে তোলা; যেখানে ব্যবহার করা হবে খোলামেলা সরকারি চুক্তির তথ্য প্রকাশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (ওপেন কন্ট্রাক্টিং ডেটা স্ট্যান্ডার্ডস-ওসিডি’স), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি।
পাশাপাশি, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নে সব স্তরের সরকারি ক্রয়-সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য চুক্তি ব্যবস্থাপনা-ভিত্তিক মধ্য-মেয়াদি সক্ষমতা উন্নয়ন কৌশল তৈরি করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় বহুল ব্যবহৃত পণ্যের জন্য নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ করা হবে, যাতে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি হালনাগাদ করা সহজ হয়। এ ছাড়া, বর্তমান স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্টের (এসটিডি) প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় জরুরি সরকারি ক্রয়ের জন্যও পদ্ধতি তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে, বিপিপিএকে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্তৃপক্ষ হিসেবে রূপান্তরের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হবে।
এই উদ্যোগটি ২০১৭ সাল থেকে বাস্তবায়িত ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সরকারি ক্রয় আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পের সফলতার ধারাবাহিকতায় নেওয়া হচ্ছে।
পিএমআইপিএসডি প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—বিপিপিএর তথ্যকেন্দ্রকে উন্নত যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ওসিডি সংযুক্ত করে নিরাপদ ও তাৎক্ষণিক তথ্য বিশ্লেষণ সক্ষমতা গড়ে তোলা, এবং দুর্যোগের সময় জরুরি সরকারি ক্রয় পদ্ধতি তৈরি করা।
এছাড়াও, প্রকল্পের আওতায় সরকারি ক্রয়চুক্তি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিয়ে মধ্য-মেয়াদি দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশল প্রণয়ন, বহুল ব্যবহৃত পণ্যের জন্য নতুন মান নির্ধারণ এবং বিদ্যমান এসটিডির ব্যবহারযোগ্যতা বাড়ানোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রকল্পের কাজের মধ্যে থাকবে—আধুনিক সরকারি ইলেকট্রনিক ক্রয় তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চুক্তি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ও সরকারি ই-ক্রয় ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক সই যুক্ত করা, ক্রয় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য নতুন অনলাইন প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম চালু করা এবং টেকসই সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া তৈরি করা।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, বিপিপিএ বর্তমানে দুটি তথ্যকেন্দ্র পরিচালনা করছে—একটি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এবং অন্যটি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জাতীয় তথ্যকেন্দ্রে। ২০১৮ সালে স্থাপিত বিপিপিএর নিজস্ব কেন্দ্রটি আরও বেশি কার্যকর, বিস্তৃত সেবা প্রদান ও উন্নত সাইবার নিরাপত্তার জন্য আধুনিকায়নের প্রয়োজন রয়েছে।
২০১১ সালে চালু হওয়া সরকারি ই-ক্রয় ব্যবস্থা সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের ডিজিটাল রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি দরপত্র প্রস্তুতি ও প্রকাশ থেকে শুরু করে মূল্যায়ন, বরাদ্দ ও চুক্তি ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত ক্রয়ের পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। এই ব্যবস্থা সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে এবং প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এই ই-ক্রয় ব্যবস্থা টেকসই সরকারি ক্রয়ের অন্যতম ভিত্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সরকার। তাছাড়া, এটি জনসেবার মানোন্নয়ন ও সরকারি সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকদের আরও উন্নত সেবা নিশ্চিত করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছিল বলে আদালতকে জানিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ওই নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন ছিল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে শুনানিতে তার প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন হাবিবুল আউয়াল। হাবিবুল আউয়ালের এমন উত্তরের পর তাকে আদালত প্রশ্ন করেন, তাহলে তিনি পদত্যাগ করলেন না কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে কোনো সিইসি পদত্যাগ করেননি।
হাবিবুল আউয়াল পরে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের অনিয়মের প্রসঙ্গ আদালতে তুলে ধরেন।
এদিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগ আনা মামলায় তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
গতকাল তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার। অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাফিজুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় হাবিবুল আউয়ালকে গত বুধবার সকালে রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
একই মামলায় গত রোববার আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন সোমবার তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে গত রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।
মামলায় ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের ধারা যুক্ত করার বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ আবেদন করলে বুধবার তা মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান (নাম অজ্ঞাত), সাবেক এনএসআই প্রধান ও সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল আলম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান ও তৎকালীন নির্বাচন সচিব (নাম অজ্ঞাত)।
খুলনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। দুই বছর আগে বিএনপির দলীয় কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় এ মামলা করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বেলা ১২টার দিকে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন জমা দেন বাদীর আইনজীবী সৈয়দ শামীম হাসান।
আবেদনের বিষয়ে আদালত আজ আদেশ দেবেন বলেও জানান তিনি।
শামীম হাসান বলেন, ‘২০২৩ সালের ১৯ মে খুলনা প্রেসক্লাবে বিএনপির কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ ও গুলি করে পণ্ড করে দিয়েছিল পুলিশ। এ ঘটনায় বাদী শফিকুল আলম তুহিনসহ ৫০ থেকে ৬০ জন আহত হন এবং ৯ জনকে আটক করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনাকে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’
এ ছাড়া, মামলার আবেদনে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাবেক এমপি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
কারও অন্যায় তদবির মেনে না নিলেই সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয় বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি কথা বলেন। ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিশ্বাস করবেন, আমার কাছে বহুত (অনেক) অন্যায় তদবির আসে। যে মুহূর্তে তদবিরগুলো মানি না; দেখা যায় যার তদবির, অন্যায় তদবির রাখিনি, কিছুদিন পর সে আমাকে ভারতের দালাল বলা শুরু করে দেয়। ৪০-৫০ বছর আগে আমার সঙ্গে কার কোন সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম বানানো শুরু করে দেয়। যা ইচ্ছা বলে। ওই যে ঝিনুক, নীরবে সও, সহ্য করে যাই। কিচ্ছু করি না। মামলা তো দূরের কথা, কোনো উত্তরও দেই না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হচ্ছে, জীবনে কখনো এত শক্তিহীন, দুর্বল এবং অবরুদ্ধ অনুভব করিনি। সরকারে যোগ দিয়ে যা ফিল করছি। এই সমালোচনার ক্ষেত্রে বলছি। সোশ্যাল মিডিয়ায়, মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় নয়।’
উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বেশি পরিচিত, তারা গণমাধ্যমের বেশি নোংরামির শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দুর্বলতা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারা সেবকের মতো কাজ করার চেষ্টা করছেন বলেও জানান এই উপদেষ্টা।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা মিনিমাম আন্ডারস্ট্যান্ড থাকতে হবে, পুলিশ রিলেটেড (সম্পর্কিত) কোনো কিছুর ব্যাপারে আমার কোনো কিছু করার নেই। সাংবিধানিকভাবে কোনো কিছু করার নেই। যতই আমার গুড উইশ থাকুক, যতই রক্তক্ষরণ থাকুক, কেউ ফলস (মিথ্যা) মামলা করলে আমার কিছু করার নেই। তাহলে আমি কীভাবে কিছু করব?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয় উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ইউনূস স্যার, শফিক, আমিসহ আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অকল্পনীয়, গাঁজাখুরি, অবিশ্বাস্য, নির্মম, মিথ্যাচার দিনের পর দিন চলছে। আমরা একটা মামলাও করিনি। এটি বাংলাদেশের মানুষের বিবেকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, একশ্রেণির মানুষ মামলা করার মধ্যে যদি ব্যবসার প্রবণতা খুঁজে পান, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ যদি এর সঙ্গে শামিল হন, পুলিশ যদি দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে এটি বন্ধ করা যাবে না।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, সাবসটেনটিভ ও সাবসটেনশিয়াল এভিডেন্স পাওয়া না গেলে কাউকে যাতে গ্রেপ্তার করা না হয়। তারপরও হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়ে থাকতে পারে। আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। আমরা প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করছি।’
একাত্তর টিভির দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি জানি, গ্রেপ্তার নিয়ে অনেকের আপত্তি হচ্ছে। আমি যেটুকু জানি, তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সেটি সাংবাদিকতা করার জন্য হয়নি। তারা জামিন পেতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও তোলা যায়। কিন্তু মামলার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ, মামলা করেছে সাধারণ মানুষ।’
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সভায় আরও বক্তব্য দেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ও শিক্ষক পারভেজ করিম আব্বাসী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, বিএসএম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান, বিদেশে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক পারভীন এফ চৌধুরী, ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির প্রমুখ।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৩৮৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায়, গত ১৯ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনস্থ ইউনিটসমূহ কর্তৃক অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।’
এ সকল যৌথ অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, চোরাকারবারী, কিশোর গ্যাং সদস্য, চাঁদাবাজ, অপহরণকারী, অবৈধ দখলদার, ডাকাত সদস্য, টিসিবির পণ্য আত্মসাতকারী, অবৈধ রিক্রুটমেন্টের সাথে জড়িত দালাল, ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসায়ী, অবৈধ বালি উত্তোলনকারী, মব ভায়োলেন্স সৃষ্টিকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ মোট ৩৮৫ জন অপরাধীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের কাছ থেকে ২৬টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৭০টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ১১টি ককটেল বোমা, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্র, চোরাই মালামাল, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃতদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
দেশব্যাপী জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও, বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা হচ্ছে।
দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ জনগণকে যেকোন সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে নতুন করে ১৯৫ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃতদের মধ্যে একজন ১৪ বছর বয়সী কিশোর ও অন্যজন ৪৮ বছর বয়সী নারী রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায় বরিশাল বিভাগ শীর্ষে , যেখানে ৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে এ সংখ্যা ৬০ জন, অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশন বাদে) হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩০ জন। রাজশাহী বিভাগে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ জন, চট্টগ্রামে ৮ জন, সিলেটে ৩ জন এবং ময়মনসিংহে ২ জন।
চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হযে এ পর্যন্ত মোট ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২০ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী । এছাড়া দেশে এবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯,০৬৫ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বরিশালে আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় সেখানে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জনগণকে বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে না দেওয়া, মশারি ব্যবহার এবং জ্বর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ শীর্ষক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ নির্দেশ দেন।
বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, ইন্টারন্যাশনাল রিনিউবেল এনার্জি এজেন্সির ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুৎ প্রসার ও ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভারতে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৭.১৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৩৯.৭ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ থেকে পূরণ হলেও বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র ৫.৬ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতোমধ্যেই ৫ হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার স্থলভিত্তিক ৫৫টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেন্ডার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। এর অংশ হিসেবে তিনি সকল সরকারি ভবন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও সকল সরকারি হাসপাতালের ছাদে রুফটপ সোলার সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি ভবনে সোলার প্যানেল বসানোর কাজটি বেসরকারি উদ্যোগে করা যায় কি না, সে ব্যাপারে বিবেচনা করুন। যারা বসাবে, তারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই এটার রক্ষণাবেক্ষণ করবে ও কার্যকরভাবে এটা পরিচালনা করবে। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু ছাদটা দেওয়া হবে, বাকি কাজ তারাই করবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে সকল প্রতিষ্ঠান রুফটপ সোলার প্যানেল করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। তারা কী ধরনের সমস্যায় পড়েছে, সেগুলো জানতে হবে। সেই সমস্যাগুলো সমাধানের দিকে যেতে হবে।’
এ প্রক্রিয়ায় সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য কোনো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে না এবং সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত ছাদের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া পাবে।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং মাধ্যমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য