× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
পাঁচ বছরে পদ্মায় সবচেয়ে কম পানি
google_news print-icon

পাঁচ বছরে পদ্মায় সবচেয়ে কম পানি

পাঁচ-বছরে-পদ্মায়-সবচেয়ে-কম-পানি
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহ। ছবি: নিউজবাংলা
পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় এর প্রধান শাখা নদী গড়াই শুকিয়ে গেছে। কুষ্টিয়ার খোকসায় মানুষ হেঁটে পার হচ্ছেন এই নদী। অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের পাম্প বন্ধ রাখায় সংকটে পড়েছেন হাজারো কৃষক।

পাঁচ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে কম পানি বইছে পদ্মা নদীতে। যৌথ নদী কমিশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের শেষের দিকে কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে মাত্র ২৩ হাজার কিউসেকের মতো পানি প্রবাহ রয়েছে।

যৌথ নদী কমিশনের হিসাবে, এর আগে ২০১৬ সালে মার্চের শেষে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ২১ হাজার ৭১০ কিউসেক। এর পরে এখানে পানির প্রবাহ কখনও ৩০ হাজার কিউসেকের নিচে নামেনি।

পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় এর প্রধান শাখা নদী গড়াই শুকিয়ে গেছে। কুষ্টিয়ার খোকসায় মানুষ হেঁটে পার হচ্ছেন এই নদী। অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের পাম্প বন্ধ রাখায় সংকটে পড়েছেন হাজারো কৃষক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা অবশ্য বলছেন, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ১ এপ্রিল থেকে ১০ দিন ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে। তখন সংকট কেটে যাবে।

১৯৯৬ সালে সই হওয়া গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১১ থেকে ২০ মার্চ, ১ থেকে ১০ এপ্রিল এবং ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে। বাকি সময়ে ভারত পাবে গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি। সে অনুযায়ী, এখন অর্থাৎ ২১ থেকে ৩১ মার্চ চলছে ভারতের প্রাপ্যতার সময়। বাংলাদেশ এখন পাচ্ছে অবশিষ্ট পানি।

যৌথ নদী কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগের ১০ দিনে (১১-২০ মার্চ) যখন বাংলাদেশ গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পেয়েছে, তখন ভারত পেয়েছিল অবশিষ্ট ২৪ হাজার ৫২২ কিউসেক।

গঙ্গা নদী পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশের পর কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয়। এখানে যৌথ নদী কমিশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পানির হিসাব রাখে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পদ্মায় বালুচর জাগতে দেখা গেছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মোট ১৬টি গার্ডারের মধ্যে ১০টি আছে পানির মধ্যে। মাটিতে থাকা দুই পাশের দুটি বাদ দিলে বাকি চারটি গার্ডারের গোড়ায় বালুচর জমেছে।

পাঁচ বছরে পদ্মায় সবচেয়ে কম পানি
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে কমছে পানি প্রবাহ

যৌথ নদী কমিশনের হিসাবে, এ বছর জানুয়ারি থেকেই ধারাবাহিকভাবে পানির প্রবাহ কমছে। ১০ দিন করে ভাগ করে প্রতি মাসে তিন ধাপে পানি প্রবাহের হিসাব দেয় তারা। তাদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম ধাপে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৬৯ হাজার কিউসেকের ওপরে, এর পরের ১০ দিন ছিল ৫৫ হাজারের ওপরে, শেষের ১১ দিনে তা নেমে আসে সাড়ে ৫২ হাজারে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৫০ হাজার কিউসেক থাকলেও শেষ ভাগে ছিল ৩৯ হাজার কিউসেক পানি। আর মার্চের প্রথম ১০ দিনে এখানে পানি ছিল ৩৬ হাজার ৯৭৮, মাঝের ১০ দিনে পাওয়া গেছে ৩৬ হাজার ৩৯৩ কিউসেক।

এ সময় ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার মোট পানি ছিল ৫৯ হাজার ৫২২ কিউসেক। আগামী ১ এপ্রিল ২১ থেকে ৩১ মার্চের পানির প্রাপ্যতার তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম সাইফুদ্দিন।

তবে, গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম যৌথ নদী কমিশনের সূত্র উল্লেখ করে জানান, মার্চের শেষে এসে পদ্মায় পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৩ হাজার কিউসেকের মতো। যে কারণে পানি ৪.১ মিটার রিডিউসড লেভেলে (আরএল) নেমে আসায় গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ রাখতে হচ্ছে জিকে সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্পই।

১৯৯৬ সাল থেকে ২৬ বছরের যৌথ নদী কমিশনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২১-৩১ মার্চ সবচেয়ে কম পানি থাকে গঙ্গায়। আর পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী এই সময়টিই গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানির প্রাপ্যতা রয়েছে ভারতের ভাগে। তাছাড়া মার্চ মাস ৩১ দিনে হওয়ায় সবচেয়ে শুষ্ক মৌসুমে ১০ দিনের জায়গায় ১১ দিন এই ভাগ নিচ্ছে ভারত।

গত বছরের মার্চ মাসের পানির হিসাবের সঙ্গে এবার তুলনা করলেও দেখা যায়, গঙ্গায় পানিপ্রবাহ অনেক কমেছে। ২০২০ সালের মার্চের প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ছিল ৯৪ হাজার ৯৯০ কিউসেক। এবার সেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৬২ হাজার ৪০২ কিউসেক। আর পরের ১০ দিনে ২০২০ সালের পাওয়া যায় ৯৫ হাজার ৯৭০ কিউসেক। এবার সেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৫৯ হাজার ৫২২ কিউসেক। আর ২০২০ সালে মার্চের শেষ ১১ দিনে ফারাক্কায় পানি পাওয়া গেছে ১ লাখ ১১ হাজার ৬১৯ কিউসেক। প্রকৌশলীদের দেয়া হিসাবে সেখানে এবার পানি মিলতে পারে ৫৮/৫৯ হাজার কিউসেকের মতো।

ফারাক্কা পয়েন্টের আগে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারত উত্তরখাণ্ড থেকে শুরু করে ফারাক্কা পর্যন্ত অন্তত ১ হাজারটি সেচ প্রকল্প এবং ব্যারেজ নির্মাণ করেছে। সমালোচিত ইন্টার রিভার লিংকিং প্রকল্পের মাধ্যমে এসব প্রকল্প ও ব্যারেজের জন্য আগেই গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাই ফারাক্কা পয়েন্টে কত পানি পাচ্ছি তা নিয়ে আমাদের হৈচৈ না করে পুরো গঙ্গা বেসিন ধরে হিসাব নিতে হবে।’

পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে হলে পদ্মায় পানি লাগবে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মার পানি ধরে রাখতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের যে পরিকল্পনা ছিল সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে ব্যারেজে পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে।’

ধুঁকছে গড়াই

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী কুষ্টিয়ার গড়াই। এটি পদ্মার প্রধান শাখা নদী। কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা হয়ে বিভিন্ন নামে এই নদী সুন্দরবনে গিয়ে সমুদ্রে মিশেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, পরিকল্পিত খননে এবার নদীতে পানি প্রবাহ বেশি আছে। আর এ কারণে সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলে কমছে লবণাক্ততার মাত্রা। এ বছর শুষ্ক মৌসুমেও কুষ্টিয়া শহরের কাছে গড়াইয়ে কিছুটা পানিপ্রবাহ আছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম জহুরুল হক জানান, নাব্যতা ধরে রাখতে টানা খনন চলছে গড়াইয়ে। সাতটি ড্রেজার দিয়ে উৎস মুখ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া থেকে ২০ কিলোমিটার খনন হবে কুমারখালী পর্যন্ত।

পাঁচ বছরে পদ্মায় সবচেয়ে কম পানি
খোকসায় নদী পার হওয়া যাচ্ছে হেটে

তবে কুমারখালীর পরেই খোকসায় গিয়ে দেখা গেছে গড়াই একেবারে শুকিয়ে গেছে। কোনোমতে বইছে ক্ষীণ পানির ধারা। স্থানীয় সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মানুষ বাঁশের চরাট ফেলে তার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছে। পুরো নদী প্রস্থে প্রায় এক কিলোমিটার ধু ধু বালুচর জমেছে।’

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল নদী পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় শাখা নদী গড়াইয়েও পানি কমেছে। তবে ১ এপ্রিল থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পেলে অবস্থার উন্নতি হবে।’

বেহাল জিকে সেচ প্রকল্প

পদ্মা নদীতে পানি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্প মেশিনই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যার পর থেকে পাম্প দুটির পানি সরবরাহ শূন্যে নিয়ে আসা হয় বলে জানান পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।

পাম্প বন্ধ রাখায় চরম সংকটে পড়েছেন কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার কৃষকেরা। অনেকেই শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভ থেকে পানি তুলে সেচ দিচ্ছেন।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আশুরহাটের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই এলাকায় জিকে সরবরাহ আছে, কিন্তু ঠিকমতো পানি আসে না। তাই কৃষকরা আগে থেকেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বোরিং করে পাম্প মেশিন বসিয়ে নিয়েছে।’

কুষ্টিয়া সদরের সোনাইডাঙ্গা গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দুই দিন আগে থেকে পানি আসছে না। আমরা ভেবেছিলাম কোনো গেট আটকে রাখায় পানি পাচ্ছি না। মাঠে সবারই বোরো ধান রয়েছে। সাড়ে তিন মাসের এই ধানের কেবল দুই মাস হয়েছে। আরও অন্তত ২০ দিন সেচ দিতে হবে।’

কুমারখালী উপজেলার পাহাড়পুরের কৃষক মো. দেলোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পাম্প বন্ধ করে দেয়া তো গাছে তুলে মই টান দেয়ার মতো। আমাদের এই পেঁয়াজ এবং ভুট্টার এখন কী হবে! এ ছাড়া সামনে পাট এবং আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করতে হবে।’

পাঁচ বছরে পদ্মায় সবচেয়ে কম পানি
সেচ প্রকল্পের পানি না পেয়ে তোলা হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, ‘জেলার কিছু কিছু এলাকায় জিকে খালের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। সেসব এলাকার কৃষক বেকায়দায় পড়েছেন।’

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিকের সেচসুবিধা বন্ধ থাকলে কৃষকের অনেক ক্ষতি হবে। বোরো চাষে এই সময়ে সেচ দেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেচ না দিলে ফলনে প্রভাব পড়বে।’

জিকে প্রকল্পের আওতায় বোরো মৌসুমে এবার কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলায় ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালের মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়লেই আবার কৃষকদের সেচসুবিধা দেয়া যাবে। ১ এপ্রিল আবার পাম্প চালু হতে পারে।’

আরও পড়ুন:
গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে ভারত: সচিব

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশেষ
The youngest hero Prateek Shahiduls family has no permanent residence

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামের পরিবার। ছবি: নিউজবাংলা
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে।’

‘রাজাকার-আলবদর থাকে আজ রাজপ্রাসাদে, আমি শহীদুল ইসলাম বীর প্রতীক থাকি একটা কুইড়াঘরে (কুঁড়েঘরে) তার কারণ কী?’

২০০৩ সালে ধারণ করা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সূতী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে শহীদুল ইসলাম।

তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছোট থেকেই অনেক সাহসী ও বুদ্ধিমান ছিলেন শহীদুল। তাই তো দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ১২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির অধীনে।

দেশের সর্বকনিষ্ঠ এ বীর প্রতীকের পরিবারের নেই স্থায়ী কোনো নিবাস। সন্তানদের জন্য নেই চাকরির ব্যবস্থা। তিনি কুলির কাজ ও খাবার হোটেলের কাজ করে কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের পরিবার বসবাস করছেন ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে। প্রথম সন্তান মুক্তা বেগম (৩৫) পেশায় গৃহিণী, স্বামীর বাড়ি রাজশাহীর নাটোরে। দ্বিতীয় সন্তান আক্তার হোসেন (৩২) পেশায় গাড়ি চালক, তৃতীয় সন্তান সোহাগ হোসেন (২৭) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, চতুর্থ সন্তান শিখা আক্তার (২০) ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভারতে ট্রেনিং চলাকালে সর্বকনিষ্ঠ হওয়ায় সহযোদ্ধারা তাকে লালু আর তার চেয়ে বয়সে বড় শ্যামলকে ভুলু নামে ডাকতে শুরু করেন। দেশে ফিরলে তার বুদ্ধিমত্তায় একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণে বাঁচেন।

সেই ঘটনাই বর্ণনা করে তার পরিবার, কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডারের নির্দেশে ছদ্মবেশ ধারণ করেন চতুর শহীদুল ইসলাম। কৌশলে এক রাজাকারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে গোপালপুর থানা কম্পাউন্ডের, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাংকারে ঢুকে পরেন। তার কৌশল ও দুঃসাহসিক গ্রেনেড হামলায় একাধিক বাংকার ধ্বংস করলে গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হয়।

শহীদুলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর প্রতীক উপাধি লাভ করেন তিনি। রাইফেলের সমান উচ্চতা হওয়ায় ভারতে প্রশিক্ষণ চলাকালে তাকে স্টেনগান চালনা ও গ্রেনেড ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কাদেরিয়া বাহিনী ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অস্ত্র সমর্পণের সময় সময় ১২ বছরের কিশোর শহীদুলের বীরত্বের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে কোলে তুলে নেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ছবিটি সামরিক ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস
ছবি: সংগৃহীত

শহীদুলের জীবন সংগ্রাম

শৈশবে বাবা-মা আর মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ভাই-এক বোনের মৃত্যু হলে দারিদ্র্যতায় উপায়ান্তর না দেখে মুক্তিযুদ্ধের পর দুই ভাইকে রেখে জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছাড়া হন শহীদুল। ঢাকার সোয়ারীঘাটে বালু টানা, ঠেলা গাড়ি চালানো, রাজমিস্ত্রীর হেলপারের কাজ, শেষে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন।

একপর্যায়ে কুলির কাজ শেষে হোটেলে কাজ শুরু করেন। যাযাবর অবস্থায় বিয়েও করেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম নেয়া সেই সংসার স্থায়ী হয়নি।

পরবর্তী সময় কুমিল্লায় হোটেলে কাজ করা অবস্থায় সহকর্মীকে জীবনের সব ঘটনা খুলে বলেন। দুই সন্তানকে নিয়ে ওই সহকর্মীর সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর চলে যান। ১৯৯৬ সালে সেই সহকর্মীর নিকটাত্মীয় মালা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

এ দম্পতির ছেলে সন্তান সোহাগ হোসেনের জন্মের পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। ঢাকার পোস্তগোলায় নিজের খাবার হোটেল চালু করার কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৯৮ সালে জটিল কিডনি রোগে আক্রান্তের কথা জানতে পারেন শহীদুল।

কোনো উপায় না পেয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঢাকার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে দেখা করেন। কাদের তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করান, উপস্থিত সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন তার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে। কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধা বীর প্রতীক আবদুল্লাহকে নির্দেশ দেন, ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পে শহীদুলের পরিবারের জন্য জায়গা দিতে। সে অনুযায়ী তার পরিবারের ঠাঁই হয় সেখানে।

বীর প্রতীক খেতাব লাভ

চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন শহীদুল ইসলাম। কাগজপত্র সংগ্রহের পর জানতে পারেন তিনি বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনিই সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তাকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অপর দুইভাই তাকে খুঁজে পায়।

শহীদুলের চিরবিদায়

অসুস্থতার কারণে শেষ সময়ে কোনো কাজকর্ম করতে পারেননি শহীদুল। শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থে চলেছে চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ। ২০০৯ সালে ২৫ মে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

পরিবারের বক্তব্য

বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামে স্ত্রী মালা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামীর জীবদ্দশায় ভাতাপ্রাপ্ত ছিলেন না, তাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চিকিৎসা করাতে হয়েছে। উনার মৃত্যুর পর চার সন্তানকে অনেক কষ্টে লালনপালন করি। এরপর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর কাছে গেলে ২০১৪ সালে দুই হাজার টাকা ভাতা চালু হয়।

‘মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে একাধিক রুম বানিয়ে ভাড়ার টাকায় সন্তানদের বড় করি। সন্তানদেরকে শিক্ষিত বানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার দাবি সন্তানদের জন্য উপযুক্ত চাকরি ও আমাদের স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থা করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার নিজ এলাকার মানুষের থেকে সে তেমন মূল্যায়ন পায়নি, এই ক্ষোভে তিনি মৃত্যুর আগে কখনও গোপালপুর যাননি, তবে সন্তানদের নিয়ে আমি একাধিকবার গোপালপুর গিয়েছিলাম।’

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের সন্তান সোহাগ হোসেন বলেন, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি বাসস্থান। আমরা বিশেষ পরিবারের সন্তান হলেও ঢাকার মিরপুরে সরকারি জমিতে বসবাস করতেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, স্থায়ী বাসস্থান ও আমাদের জন্য উপযুক্ত চাকুরির ব্যবস্থা যেন উনি করেন।’

নিয়মিত সরকারি রেশন ও ভাতা পাচ্ছেন বলেও জানান তারা।

জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য

গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্রনাথ সরকার বিমল বলেন, ‘সূতী মীরপাড়ায় গোপালপুরের একমাত্র বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামের জন্ম হলেও, এখানে তার বাড়ি-ঘর নেই। তার পরিবার এখানে এসে কিছু চায় নাই, তাই বীর নিবাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি পায়নি। তার পরিবার বীর প্রতীক ভাতা পাচ্ছেন।’

গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে।

‘উনাকে আবেদন করে রাখতে বলেন। পরের অর্থবছরে আবার যদি বরাদ্দ আসে তবে হয়ত এগুলো পাঠাতে পারব।’

আরও পড়ুন:
কুমিল্লায় ১৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা
বীর নারী মুক্তিযোদ্ধারা পেলেন সম্মাননা
কিশোরী রানীর ভাতের পাতিলে লুকানো পিস্তল-গুলি
ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা মাস’ চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দাবি

মন্তব্য

বিশেষ
Changa Sylhets tourism sector on the occasion of Eid

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত
সিলেটে আগামী কয়েক দিন পর্যটনে চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ছবি: নিউজবাংলা
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

কিছুদিন মন্দাবস্থার পর ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। এতে খুশি পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।

আগামী কয়েক দিন এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি গন্তব্য গোয়াইনঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। এ দুই জায়গাতেই ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, তবে ঈদের দিনের চেয়ে তার পরের দিন পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে।

জাফলংয়ের পর্যটন খাতের উদ্যেক্তারা জানান, ঈদ মৌসুমে জাফলংয়ে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন তারা।

জাফলং, সাদাপাথর ছাড়াও বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, পানতুমাই ঝরনা, লালাখাল ও সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট এখন অতিথিতে পূর্ণ।

সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর। সাদা পাথুরে নদীর শীতল জল আর পাশেই দিগন্ত বিস্তৃত মেঘালয় পাহাড়। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ঈদুল ফিতরের পরের দিন শুক্রবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কারণে নদীতে পা ফেলার অবস্থা নেই। ভিড়ের কারণে অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছিলেন; নামতে পারছিলেন না পানিতে।

সাদাপাথর ঘুরতে আসা কুমিল্লার শিউলি বেগম বলেন, ‘এই পরিবেশ অপরূপ। যে কেউ আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।’

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা রাজেল মিয়া বলেন,‘দুপুরে সাদাপাথরে এসেছি। সাদাপাথরের ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ মনকে চাঙা করে দিয়েছে।

‘সত্যিই অসাধারণ জায়গা। অবসর পেলেই চলে আসি।’

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন।

‘আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।’

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য জাফলং। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।

জাফলংয়ে সকাল থেকেই দলবেঁধে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। নদীতে নেমে কেউ কেউ গোসল করতে ব্যস্ত। আর নৌকা পার হয়ে অনেকের গন্তব্য মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পল্লি ও চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

পর্যটক সুজন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যরা মিলে ঘুরতে এসেছি। জাফলং ভীষণ ভালো লেগেছে।

‘পাহাড় আর পাথরের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে, তবে বৃষ্টিতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’

এদিকে পর্যটকদের চাপে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ খালি ছিল না। ব্যস্ততা দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটকের সমাগমে খুশি এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।

জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।

‘এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ রতন শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখরিত ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’

আরও পড়ুন:
তীব্র লোডশেডিং, পানির সংকটে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী
সিলেটে গ্রামের চেয়ে বেশি লোডশেডিং শহরে
সিলেট টেস্টে শোচনীয় হার বাংলাদেশের
সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৬
উদ্ভাবনী পদমর্যাদায় ‘ইনফেকশাস-ডিজিজ’ বিষয়ে প্রথম স্থান সিকৃবির

মন্তব্য

বিশেষ
Crowds to watch the Eid festival of farmers and farmers in Kurigram

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড় কোলাজ: নিউজবাংলা
কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে  ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ঈদ উৎসবে কিষান-কিষানিদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সেসব খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো দর্শনার্থী এস ভিড় জমায়।

কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। খেলা শেষে ৩৫ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হাঁড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সুঁইসুতা, সাঁতার, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে চড়া, স্লো সাইকেল রেস, বেলুন ফাটানো এবং কিষানিদের বল ফেলা, বালিশ খেলা এবং যেমন খুশি তেমন সাঁজোসহ আরও অন্যান্য খেলা। এসব খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের শতাধিক কিষান-কিষানি।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, সাংবাদিক শফি খান, রংপুর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক সাইদুল হক, ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের প্রমুখ।

খেলা দেখতে আসা ময়নাল হক বলেন, ‘গ্রামে এসব খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০-১৫ বছর পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখে খুবই আনন্দ পেলাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কৃষকদের হাঁড়ি ভাঙা, সাইকেল খেলা দেখে। এছাড়া কিষানিদের সুঁইসুতা খেলা ও বালিশ খেলা ছিল বেশ আনন্দের।’

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যি ভালো লেগেছে। আমরা এখানে শতাধিক কিষান-কিষানি আজকের খেলায় অংশ নিয়েছি। খু্ব ভালো লেগেছে।’

ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক হাসলে বাংলাদেশ হাসে- এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী শতাধিক কিষান-কিষানিকে নিয়ে প্রায় ২২টি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

‘এ খেলার মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেও এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

মন্তব্য

বিশেষ
Akalima is excited to get a wheelchair on the day of Eid

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা ছবি: নিউজবাংলা
জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আকলিমার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে হুইলচেয়ার পেয়ে প্রতিবন্ধী কিশোরী আকলিমা আক্তারের মুখে হাসি ফুটেছে। আর্থিক টানাটানির পরিবারে এতদিন আদরের মেয়ের হুইলচেয়ারের আবদার রক্ষা করতে পারেননি মা-বাবা। অবশেষে ‘প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মানবিক সংগঠনের সহযোগিতায় হুইলচেয়ার পেয়ে ঈদের দিন শুধু মেয়ে নয়, মা-বাবার মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি।

জানা গেছে, ধলাপাড়া ইউনিয়নের আষাঢ়িয়াচালা গ্রামের গৃহকর্মী রাবেয়া ও আসলাম দম্পতির একমাত্র মেয়ে আকলিমা। জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের কোলে বেড়ে উঠলেও বয়স বাড়ায় কষ্ট করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। বাকি সময় তাকে শুয়ে-বসেই দিন কাটাতে হয়। অভাব-অনটনের সংসারে তাকে একটি হুইলচেয়ার কিনে দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই পরিবারটির।

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘এতদিন আমার চলতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এই চেয়ারটি আগে পেলে আমার চলাচলে অনেক সুবিধা হতো। আজ ঈদের দিন চেয়ারটি পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি হাঁটতে না পারলেও চেয়ারটি ব্যবহার করে আমার সহপাঠীদের সঙ্গে অন্তত ঘুরতে পারব এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাতায়াত করতে পারব।’

আকলিমার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বসতবাড়ি ছাড়া আমাদের কোনো সম্পদ নেই। মানুষের খেত-খামারে কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাই। দীর্ঘদিন ধরে একটি হুইল চেয়ারের অভাবে সারা দিন মেয়েটাকে শুয়ে থাকতে হতো। হাত দিয়ে ভর করে চলতে চলতে পা ও আঙুল বিকল হয়ে গেছে। এখন চেয়ার পেয়ে পরিবারের সবারই ভালো লাগছে।’

প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক মো. জাফর আলী বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আকলিমা আক্তার নামের একটি মেয়ে ছোট থেকেই এভাবে চার হাত-পায়ে অনেক কষ্টে চলাচল করছে। হাঁটুর ওপর ভর করে চলতে চলতে পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে।

‘এদিকে তার দুই হাতের অনেকটাই অবশ। আকলিমার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। যার কারণে, আমাদের এই উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগটা আমরা ঈদের দিনে বাস্তবায়ন করেছি যাতে এই আনন্দের দিনে আনন্দের পরিমাণটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।’

এ বিষয়ে প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের অপর সমন্বয়ক ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আকলিমার মুখে হাসি ফোটানোর এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটি আজকের দিনের বড় একটি পাওয়া। আমরা প্রান্তিক অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও আমাদের সংগঠনের এরকম মানবিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

আরও পড়ুন:
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, জরিমানা
প্রতিবন্ধী শিশুকে ঢামেকে ফেলে গেল স্বজন
কীভাবে পড়াশোনা করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা
প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
শ্রুতিলেখকের কলমে স্বপ্ন যাদের

মন্তব্য

বিশেষ
Weather may be bearable on Eid day

ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া

ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন আবহাওয়াবিদ। ছবি: অপূর্ব দত্ত/নিউজবাংলা
আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

ঈদুল ফিতরের দিন বৃহস্পতিবার দেশের আবহাওয়া সহনশীল পর্যায়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন আবহাওয়াবিদ।

তরিকুল নেওয়াজ কবির বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিনে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ অব্যাহত থাকা নিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘পাবনা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান এবং পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকবে।’

ঈদের দিনের তাপমাত্রা নিয়ে তরিকুল নেওয়াজ বলেন, ‘এপ্রিল মাস হচ্ছে বছরের উষ্ণতম মাস, স্বভাবতই একটু গরম থাকে, তবে কালকে ঈদের দিন আমরা আশার করছি যেটা, হালকা মেঘ থাকবে।

‘সেই সাথে একটু সহনশীল পর্যায়ে আবহাওয়াটা থাকবে। এত বেশি গরম থাকবে না হয়তো।’

আরও পড়ুন:
দিনে গরম বাড়বে
বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি, আরও ঘামবে মানুষ
কোথাও কোথাও হতে পারে শিলা বৃষ্টি
ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে পাঁচ বিভাগে
দেশজুড়ে বাড়তে পারে দিন ও রাতের তাপমাত্রা

মন্তব্য

বিশেষ
There is no joy of Eid in the families of the hostage crew due to anxiety
জলদস্যুদের কবলে এমভি আবদুল্লাহ

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

রাত পোহালেই ঈদ। অথচ গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ক্যাপ্টেনসহ ২৩ ক্রুর পরিবারে কারও মুখে হাসি নেই; তাদের ঘরে নেই ঈদের আমেজ। চোখে মুখে দুর্ভাবনা, চিন্তার ভাঁজ কপালে।

চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন। কবে জিম্মিদশা থেকে তারা মুক্তি পাবেন, সেই দিকেই চেয়ে আছেন নাবিকদের পরিবার-স্বজনরা।

জিম্মি নাবিকদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তাদের ঘরে কাপড় চোপড়সহ ঈদের কোনো কেনাকাটা হয়নি। রোজা রেখে দিন কাটছে তাদের।

ঈদের আগে যদি নাবিকরা মুক্তি পান তাহলে এর চাইতে বড় খুশির খবর তাদের কাছে আর কিছু নেই। তারা মুক্তি না পেলে এবারের ঈদ স্বজনদের কাছে আনন্দের হয়ে উঠবে না।

জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম বলেন, ‘জিম্মি অবস্থায় বড় ছেলে বিপদের মধ্যে রয়েছে। সেখানে সে ভালো নেই। এ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছি না।’

আতিকের জন্য পরিবার ও স্বজন সবার মন খারাপ। তারা বলছেন, আমরা এখনও কেউ ঈদের কেনাকাটা করিনি। কারো মন-মানসিকতা ভালো নেই।

আতিক উল্লাহর ভাই আসিফ খান জানান, তাদের কারও মনে শান্তি নেই। ভাই ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের এ উৎকণ্ঠা শেষ হওয়ার নয়।

চট্টগ্রাম শহরে থাকেন জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমদের মা, স্ত্রী আর ছোট ভাই।

তানভীরের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মনে শান্তি না থাকলে ঈদের আনন্দ কীভাবে আসবে? ঈদের দিন শুধু প্রার্থনা করে যাব যেন সন্তান দ্রুত মুক্তি পায়, নিরাপদে দেশে আসতে পারে।’

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
জিম্মি জাহাজ এভি আব্দুল্লাহর ২৩ ক্রু। কোলাজ: নিউজবাংলা

জিম্মি জাহাজের নাবিক সামশুদ্দিন শিমুলের সাত বছর বয়সী মেয়ে আয়ুবা তাসনিম সাঈদা তার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছে ঈদে আব্বু বাড়ি আসবে কি না। শিমুল সোমালি দস্যুদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবেন, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও সাঈদাকে তার মা সান্তনা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার আব্বু ঈদের পরে আসবে।’

নাবিক তরিকুল ইসলামের বড় ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, ‘২৮ দিন ধরে ছোট ভাই জিম্মি অবস্থায় রয়েছে, সেখানে কীভাবে আমরা ভাল থাকি? মা-বাবাসহ পরিবারের কারও মন ভালো নেই।’

নাবিক মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের জন্য ঈদের আনন্দটা এবার আসে নাই। স্বজনদের জন্য আমরা এতটাই দুশ্চিন্তায় আছি যে ঈদের কোনো প্রস্তুতি বা শপিং কিছুই হয়নি। আমার কিংবা আমার শিশুপুত্রের মাঝে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।’

জাহাজ মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজের ক্রুদের মুক্তির বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ঈদের পরে তাদের মুক্তির সম্ভাবনা বেশি। তাদের (দস্যুদের) যোগাযোগ চলছে। আমরা সবসময় ক্রুদের পরিবারের সঙ্গে আছি। ঈদের সময়ও আমরা তাদের পাশে থাকব।’

এ বিষয়ে বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজ ও এর ক্রু দুটোই উদ্ধার করার ক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, শিগগির তাদেরকে মুক্ত করতে পারব। তবে উদ্ধারের দিনক্ষণ বলাটা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (ক্রুদের) পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে। প্রথমত, যারা অপহরণ করেছে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। দ্বিতীয়ত, তাদের ওপর মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করা হয়েছে।

‘তারা ভালো আছেন, নিয়মিতভাবে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। এমনকি ভিডিও কলে কথাও বলছেন। সুতরাং যে উদ্বেগটা কিছুদিন আগে ছিল, সেটি এই মুহূর্তে নেই। আশা করছি তাদেরকে শিগগির মুক্ত করতে পারব।’

উৎকণ্ঠায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি ক্রুদের পরিবারে
বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

অপরদিকে, বন্দি ক্রুদের চলতি মাসেই সুষ্ঠুভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের (ক্রুদের) পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো ছোট ঘটনা নয়, অনেক বড় ঘটনা। কাজেই দিন-তারিখ দিয়ে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, আমরা তাদের সুষ্ঠুভাবে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, ঈদের আগে নাবিকদের যেন দেশে আনতে পারি, কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। সেখানে একটা সমস্যা হয়েছে। তবে আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম জানান, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে।

ক্রুদের পরিবারে ঈদের আনন্দ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, ‘তাদের তো এই ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল না। মানসিক অশান্তি থেকে তাদের যতদ্রুত সম্ভব মুক্তি দেয়া যায়, সরকার সে চেষ্টা করছে।

‘তবে তাদের পরিবারে আর্থিক কোনো সমস্যা নেই। সরকার তাদের পরিবারের সঙ্গে আছে। জিম্মিদশা থেকে তাদের মুক্ত করার সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

জাহাজে জিম্মি নাবিকদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরকলে। সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা। থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার বাসিন্দা। ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর থানার বাসিন্দা। চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামানের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ ও ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ ফেনী জেলার বাসিন্দা। ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানায়।

এছাড়া ক্রুদের মধ্যে মো. শরিফুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানা এলাকায়, মো. আসিফুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, মোশাররফ হোসেন শাকিল ও আইনুল হকের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায়; মো. সাজ্জাদ হোসেন, নুর উদ্দিন ও মোহাম্মদ সামসুদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি উপজেলায়; মো. আনোয়ারুল হকের বাড়ি নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জ, জয় মাহমুদের বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া, মো. নাজমুল হকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কামারাখন্দ এবং মো. আলী হোসেনের বাড়ি বরিশালে বানাড়িপাড়া গ্রামে।

আরও পড়ুন:
ঈদ কার্ড বানিয়ে নতুন জামা পেল শিশুরা

মন্তব্য

বিশেষ
Why is the price of meat high in Meherpur on the eve of Eid?

ঈদের আগের দিন মেহেরপুরে মাংসের দাম বেশি কেন

ঈদের আগের দিন মেহেরপুরে মাংসের দাম বেশি কেন ঈদুল ফিতরের আগের দিন বুধবার মেহেরপুরের বামন্দী কসাইখানায় মাংস কাটায় ব্যস্ত কসাই। ছবি: নিউজবাংলা
মাংসের চাহিদা বাড়ায় জেলায় বিক্রেতারা বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা, তবে বিক্রেতাদের ভাষ্য, তারা বেশি দামে গরু কেনায় মাংসের দামও বেশি নিতে হয়েছে।

ঈদুল ফিতরের আগের দিন বুধবার দেশের অন্য অনেক এলাকার মতো গরুর মাংসের চাহিদা বেড়েছে মেহেরপুরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলার তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাংস ব্যবসায়ীরা মহিষ, গরু ও ছাগল জবাই করতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

মাংসের চাহিদা বাড়ায় জেলায় বিক্রেতারা বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা, তবে বিক্রেতাদের ভাষ্য, তারা বেশি দামে গরু কেনায় মাংসের দামও বেশি নিতে হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি ছাগলের মাংস বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজিতে। আর মহিষের মাংস বিক্রি হতে দেখা যায় ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা কেজি দরে।

মাংস কিনতে আসা মন্টু মিয়া বলেন, ‘ঈদের দিন মাংসের দোকানে অনেক ভিড় থাকে। তাই আমরা এক দিন আগেই মাংস কিনে রাখি, তবে মাংসের দাম অন্য সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। তারপরও কিনতে হবে, ঈদ বলে কথা।’

দিনমজুর জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আগামীকাল ঈদের দিন। পরিবারের সকলকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করব। এ বছর ছেলে-মেয়েদের পোশাক কিনতে গিয়ে সব টাকা শেষ হইয়ি গিছে। আজ সেমাই সুজির সাথে মাংস কিনলেই চলবে।

‘বাজারে এসে দেখি প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা করে, কিন্তু মাংসের যে দাম! বাধ্য হয়ে অল্প করে গরুর মাংস কিনব। তা ছাড়া ব্রয়লার মুরগি কিনব।’

স্কুলশিক্ষক শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের সাতজনের পরিবার। তার মধ্যে দুজনের গরুর মাংস খাওয়া নিষেধ। তাই ছাগলের মাংসও কেনা লাগবে। বাজারে এসে দেখি প্রতি কেজি ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা করে।

‘মাংস বিক্রেতারা জানে ঈদের ছুটি হওয়ায় ভোক্তা-অধিকার কিংবা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সম্ভাবনা কম। তাই ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাংস বিক্রেতা মনিরুল বলেন, ‘আমরা ঈদ উপলক্ষে যতগুলো গাছান (জ্যান্ত) গরু কিনেছি, সব ৭২০ টাকা করে কেনা পড়েছে। তাহলে আমাদের পরিশ্রমের দামসহ হিসাব করে বিক্রি করলে ৮০০ টাকা করে বেচা উচিত, কিন্তু তা তো আর পারছি না।’

আরেক মাংস ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের দুই দিন আগ থেকে শুরু করে ঈদের দিন পর্যন্ত আমার চারটা মহিষ ও ১০টা গরু লাগবে বিক্রির জন্য। সে হিসেবে আমরা এক সপ্তাহ আগ থেকে গরু, মহিষ কেনা শুরু করেছি। হঠাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাছান গরু আমাদের ৭২০ টাকা করে কেজি পড়তা পড়ছে।

‘তাই আমরা ৫০ টাকা লাভ হিসেবে মাংস বিক্রি করছি। আমরা ৫০ টাকা বেশি দামে মাংস বেচলেই নিউজ হয়। অথচ আমরা যে ৮০ টাকা করে বেশি দামে গরু কিনলাম, তা আর নিউজ হয় না।

বামন্দী পশুহাট ইজারাদার সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সপ্তাহে দুই দিন পশু হাট বসে। সোম ও শুক্রবার। গত দুই হাটে প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি, তবে গত দুই হাট ছাগল ও গরু বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। কারণ ঢাকাসহ বাইরের অনেক বেপারি হাটে আসায় গরুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
মরা গরুর মাংস বিক্রির অপরাধে শরণখোলায় আটক ২
গাংনীতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ
ফরিদপুরে ৫০০ টাকায় গরুর গোশত
মেহেরপুরে মৌমাছির আক্রমণে অন্তত ২৫ জন আহত
মেহেরপুরে মাদক মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার 

মন্তব্য

p
উপরে