সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলামের যে সম্মেলনে মামুনুল হকের বক্তব্য নিয়ে এক যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং তার জেরে শাল্লায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
শানে রিসালত সম্মেলন নামের ওই আয়োজনে অতিথি ছিলেন হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে পড়েন হেফাজত নেতা মামুনুল। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় মামুনুলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন। বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বাধার মুখেও পড়তে হয় তাকে।
কিন্তু এর মাঝেই ১৫ মার্চের ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতা ও উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই সমাবেশের কিছু ছবিতে দেখা যায় মঞ্চে উপস্থিত আছেন দিরাই পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়। তিনি সমাবেশে বক্তৃতাও দেন।
সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় দেখা গেছে পৌর যুবলীগের সভাপতি জুয়েল মিয়াকে। স্বেছাসেবকদের জন্য তৈরি আলাদা টি-শার্টও তার পরনে ছিল।
অনেকের অভিযোগ, এই দুই নেতা নিজেদের অনুসারী আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
এ ছাড়া সমাবেশের প্রস্তুতিমূলক সভাতেও হেফাজত নেতাদের সঙ্গে দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান বুলবুলকে দেখা গেছে।
বুলবুলের বাসায় আয়োজিত ওই বৈঠকের ছবিও ফেসবুকে আছে। হেফাজতের সমাবেশে বুলবুল আর্থিক সহায়তা করেন বলেও জানা গেছে।
দিরাইয়ের সমাবেশে মামুনুলসহ হেফাজতের শীর্ষ নেতারা সরকারের সমালোচনা করেন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদির আসার বিরোধিতা করে বিভিন্ন বক্তব্য দেন।
ওই সমাবেশে মামুনুলের বক্তব্য নিয়েই স্ট্যাটাস দেন শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের এক যুবক। এই স্ট্যাটাসের জেরে ১৭ মার্চ সকালে ওই গ্রামে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় ৮০টির বেশি হিন্দুবাড়ি।
এ রকম একটি সমাবেশে মঞ্চে উপস্থিত থাকার বিষয়ে পৌর মেয়র বিশ্বজিৎ রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে সমাবেশে গিয়েছিলাম। আমার বক্তৃতায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশটি করার অনুরোধ করেছি।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধীর সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তৃতা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এলাকার শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থে ওই সমাবেশে একজন মেয়র হিসেবে আমার উপস্থিতি দোষের কিছু নয়।’
পৌর মেয়র জানান, হেফাজতের শীর্ষ নেতারা অনুষ্ঠানে আসার আগেই তিনি বক্তৃতা দিয়ে চলে যান। তাই তারা কী বলেছেন তা তিনি জানেন না।
সাবেক পৌর মেয়র বুলবুল যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। তিনি ১২ মার্চ হেফাজত নেতাদের নিয়ে সমাবেশের বিষয়ে সভা করেন। এরপর সমাবেশের আগের দিনই যুক্তরাজ্য ফিরে যান। এ কারণে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, বুলবুল ভবিষ্যতে এই এলাকা থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে চান। এ কারণে তিনি সব পক্ষকে নিজের পক্ষে রাখতে হেফাজতকেও সহায়তা করছেন। ভোটের রাজনীতির হিসেবেই হিন্দুধর্মাবলম্বী মেয়রও ওই সমাবেশে যান বলে অভিযোগ তাদের।
তবে হেফাজতের সমাবেশের আগের দিনই যুক্তরাজ্য চলে যান আজিজুর রহমান বুলবুল। তাই এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবু হানিফ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, সম্মেলন সফল করতে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে আজিজুর রহমান বুলবুলের বৈঠকের যে অভিযোগ ওঠেছে তা সত্য নয়।
আজিজুল হক বুলবুলের সঙ্গে হেফাজত নেতার যে ছবি দিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে সেটি একটি সৌজন্য সাক্ষাতের ছবি। কোনো প্রস্তুতি সভা নয়।
আবু হানিফ বলেন, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা আল্লামা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জে সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। সব ধর্মের মানুষ তাকে সম্মান করেন। গত ১২ মার্চ তিনি দিরাইয়ে একটি ওয়াজ মাহফিলে এসেছিলেন। দিরাইয়ে এসে জানতে পারবেন সাবেক মেয়র বুলবুল পরদিন যুক্তরাজ্য চলে যাবেন। তাই তার বাসায় সৌজন্য সাক্ষাত করতে এসেছিলেন নুরুল ইসলাম খান। এ সময় অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। তবে তখন হেফাজতের সম্মেলন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘যে ছবিটি নিয়ে প্রপাগান্ডা চলছে সেই ছবি আমি তুলে ফেসবুকে দেই। এখন আওয়ামী লীগের বুলবুল বিরোধী একটি অংশ এই ছবি ব্যবহার করে মিথ্যাচার করছে।’
দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক (পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত) মোশরাফ মিয়া বলেন, ‘হেফাজতের সমাবেশ সফল করতে আজিজুর রহমান বুলবুলের বাসায় বৈঠক হয়েছে। তিনি হেফাজতের সমাবেশে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে নেমে হেফাজতের নেতারা বুলবুলের গাড়িতে করেই অনুষ্ঠান মঞ্চে আসেন।’
এ ছাড়া ওই সমাবেশে বক্তৃতা করেন পৌর মেয়র বিশ্বজিৎ আর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলেন যুবলীগ নেতা জুয়েল।
তিনি বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বলে, সরকারের বিরুদ্ধে বলে তাদের সমাবেশে কী করে আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত থাকেন, সেটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর। আমি তাদের দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। জেলার নেতাদেরও বিষয়টি অবহিত করেছি।’
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের দাবি, পৌর মেয়র বিশ্বজিৎ ছাড়া হেফাজতের সমাবেশে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ছিলেন না। কেউ সহায়তাও করেননি।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দলেরই কিছু লোক ব্যক্তিগত রেষারেষি থেকে অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নাম করছে।’
হেফাজতের সমাবেশে পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়ের উপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে ওইখানে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অনুরোধ করেছে। মেয়র হিসেবে এটা তার দায়িত্বও।’
সুনামগঞ্জে আরেক সম্মেলন মামুনুলের
এদিকে শাল্লার ঘটনা নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই আগামী রোববার সুনামগঞ্জের আরেক উপজেলা জামালগঞ্জ যাচ্ছেন মামুনুল হক।
খাদিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসা আয়োজিত ‘খতমে বুখারি ও ইসলামি মহাসম্মেলনে’ মামুনুলকে অতিথি করে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এই সমাবেশের অতিথির তালিকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরও নাম রয়েছে।
উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড মাঠের এই আয়োজনে অতিথি তালিকায় নাম রয়েছে জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরী, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার (সাজিব), জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম (সুহেল) এবং জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর।
তবে শাল্লার ঘটনার পর বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের এই নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা না বলেই মামুনুলের সমাবেশে অতিথি করা হয়েছে।
অবশ্য আয়োজকদের দাবি, সবার সঙ্গে আলাপ করেই অতিথি করা হয়েছিল। এখন অনেকে তা অস্বীকার করছেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গাড়ির চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওডালা এলাকায় শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার খেজুরা এলাকার সুরেশ ডাকুয়া (৩৫) ও তার ছেলে লোকেশ ডাকুয়া (৯)। এ ঘটনায় আহত লোকেশ ডাকুয়ার মা নিপু রায় (৩০) বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে স্বামী-সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জে ‘বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী’ মন্দিরে পূজা করতে যান তারা। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি গাড়ি তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় তিনজনকে স্থানীয়রা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকেশকে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। সুরেশ ও নিপু রায়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সুরেশ ডাকুয়ার মৃত্যু হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ‘নিপু রায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। নিহত দুইজনের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলাসহ গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে ১৯৭১ সালের অসহায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ স্মরণে ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রায় ফুটে উঠেছে নওগাঁয় রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র।
ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিলের এ দিনে ‘রোড টু বালুরঘাট’ স্মরণ করল নওগাঁবাসী। প্রায় ৬০ মিনিটে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন নওগাঁ রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা ও অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নওগাঁ রোডে এ প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। শহরের তাজের মোড় শহিদ মিনার পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্ত মঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে শরণার্থীদের প্রতীকী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা মইনুল হক দুলদুল, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ বিন আলী পিন্টু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সাইমা ফেরদৌসী, নাইস পারভীন, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, গুলশানারাসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে বিশেষ করে ২০ এপ্রিল এই দিনে পায়ে হেঁটে নওগাঁর সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। চলার পথে সেই সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হয়। সে সব শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ স্মরণে একুশে পরিষদ নওগাঁ ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘আমরা অনেকেই একাত্তরের ইতিহাস ভুলে গেছি। ৫৩ বছরের আগে কী ঘটেছিল। লাখ লাখ মানুষ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করার জন্য। চলার পথে সে সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নওগাঁর মূল ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সব তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের জানানোর লক্ষ্যেই আয়োজনটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পটিয়ার সড়কে শুক্রবার বিকেল ও রাতে দুটি দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
বাস উল্টে হেলপার নিহত
পটিয়ার মনসা বাদামতলা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী একটি মিনিবাস বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। ওই সময় বাসটির হেলপার রফিক (২৩) লাফ দিলে বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিনি।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি জানিয়েছেন।
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত
উপজেলার খরনা চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
নিহত দুজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকার আবু বক্কর তাসিফ (১৮) ও কক্সবাজারের ঈদগাহ মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার নুরুল আমিন (২৭)।
আহত চারজন হলেন বৈলতলীর রাকিব হোসেন (২০), মোহাম্মদ জাবেদ (১৯), মোহাম্মদ সিহাব (২২) ও চকরিয়ার অটোরিকশার চালক লিটন (৩৫)।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার ওসি তৌফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম অভিমুখী দ্রুতগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস নম্বরবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়রা অটোরিকশার যাত্রীদের উদ্ধার করে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত চারজনকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:সুনামগঞ্জের ছাতকের ঐতিহ্যবাহী জাউয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ধারা জারি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যধারার এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মুস্তাফা মুন্না।
আদেশে বলা হয়েছে, “যেহেতু ছাতক উপজেলাধীন ‘জাউয়া বাজার’ ইজারাকে কেন্দ্র করে বিবাদমান পক্ষসমূহের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর ফলে আইন শৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে মর্মে অফিসার ইন- চার্জ, ছাতক থানা, সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছে।
“সেহেতু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আমি গোলাম মুস্তাফা মুন্না, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ছাতক, সুনামগঞ্জ আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ৬ ঘটিকা হতে রাত ১২ ঘটিকা পর্যন্ত জাউয়া বাজার এলাকা এবং তার আশেপাশের এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারা জারি করলাম।”
আদেশ অনুযায়ী, এ সময় উক্ত এলাকায় সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন, লাঠি বা দেশীয় কোনো অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা তার অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।
‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’
জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।
তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে ১২ ফুট লম্বা একটি অজগরের।
মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির সামনে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন বিভাগের ভাষ্য, অজগরটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, লাউয়াছড়ায় বনের ভেতরে যানবাহন চলাচলের জন্য বন বিভাগ দিকনির্দেশনা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে, কিন্তু কেউ সেটা মানে না। যেভাবে খুশি সেভাবে চলাচল করে সব ধরনের গাড়ি। ধারণা করা হচ্ছে কোনো এক সময় রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির চাপায় ১২ফুট লম্বা অজগরটি পিষ্ট হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মারা যায়।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লাউয়াছড়া বনের মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির সামনে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে শুক্রবার সকালে অজগর সাপকে মৃত অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
‘খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন মৃত অজগরটিকে উদ্ধার করে জানকীছড়ায় মাটিচাপা দেন।’
মন্তব্য