চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেহানা বিমানবন্দর সড়কের বলাকা ভবন লাগোয়া ঝোপঝাড় পরিষ্কারে ব্যস্ত। হঠাৎ চোখে পড়ে, ঝোপের ভেতরে পড়ে আছে দু-তিন দিনের এক নবজাতক।
রেহানার কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ওই নবজাতককে উদ্ধার করে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখন তার ঠিকানা আজিমপুরের সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্র ছোটমণি নিবাস।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হয়েছে পরিত্যক্ত ৩০ নবজাতক। আর অর্ধযুগের হিসাবে এই সংখ্যা ২১০। ফেলে দেয়া নবজাতকদের অনেককে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্থায়।
প্রায়ই খবরের শিরোনাম হওয়া নবজাতক উদ্ধারের পেছনের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করেছেন অপরিকল্পিত অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণকে। তারা বলছেন, সামাজিক ও আইনগত জটিলতা এড়াতে অনেকেই গোপনে গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলে দেন নবজাতককে।
গত এক দশকের বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আগের চেয়ে গোপন গর্ভপাতের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। শুধু গর্ভধারণ করা নারী নন, আইনি বিধিনিষেধের কারণে বিষয়টি গোপন রাখছেন গর্ভপাতসংশ্লিষ্ট চিকিৎসাকর্মীরাও। একই সঙ্গে অনিরাপদ গোপন গর্ভপাতে জীবনসংকটে পড়ছেন অসংখ্য নারী।
রাজধানীর গুলশানের এক নারী তানিয়া (ছদ্মনাম)। দেবরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে গর্ভবতী হন তানিয়া। পরে নিজেই বাসার পাশে এক বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাত করান। তবে এর দুদিন পর জরায়ু থেকে রক্তপাত শুরু হয়।
অবস্থা খারাপ হলে এক বান্ধবীকে বিষয়টি জানান তানিয়া। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চিকিৎসার এক পর্যায়ে মারা যান তিনি। এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পর হাতুড়ে চিকিৎসক, কবিরাজ, অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে গর্ভপাত করাতে গিয়ে তানিয়ার মতো অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রাণে বেঁচে গেলেও ভুগছেন দীর্ঘ শারীরিক জটিলতায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্মনিরোধক ব্যবহার বা পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি থাকলেও গর্ভবতী হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে গর্ভপাতকে বেছে নেন অনেকে।
এমআর-এর মোড়কে গর্ভপাত
দেশের আইনে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ ছাড়া গর্ভপাত পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লোকের গর্ভপাত করায়, এবং যদি সে গর্ভপাত সরল বিশ্বাসে উক্ত স্ত্রী লোকের জীবন বাঁচাবার উদ্দেশ্যে না করা হয়ে থাকে, তবে সে ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত যেকোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন এবং যদি স্ত্রী লোকটি শিশুর বিচরণ অনুভব করে, তবে সে ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’
দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ববর্তী ধারায় বর্ণিত অপরাধটি সংশ্লিষ্ট স্ত্রী লোকের সম্মতি ছাড়া সম্পাদন করে, স্ত্রী লোকটি আসন্ন প্রসবা হোক বা না হোক, তবে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’
৩১৪ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লোকের গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে কৃত কোনো কাজের ফলে সেই স্ত্রী লোকটির মৃত্যু ঘটায়, তবে ওই ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’
৩১৫ ধারায় বলা হয়েছে: কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শিশুর জন্মের পূর্বে এমন কোনো কাজ করেন, যাতে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হতে না পারে বা জন্মের পরে তার মৃত্যু হয় এবং অনুরূপ কাজের ফলে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ না হয় বা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মৃত্যু হয় এবং যদি কাজটি মাতার জীবন রক্ষার জন্য সরল বিশ্বাসে কৃত না হয়, তবে ওই ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।’
এছাড়া, দণ্ডবিধির ৩১৬ ধারায় বলা হয়েছে: ‘যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করেন, যা দ্বারা সে কোনো মৃত্যু ঘটালে তা হলে সে অপরাধজনক নরহত্যা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং অনুরূপ কাজের সাহায্যে একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটান, তবে ওই ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে- দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’
আইনে অন্তঃসত্ত্বার ‘জীবন বাঁচানোর’ মতো পরিস্থিতি ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে গর্ভপাতের উপর আইনি বিধিনিষেধ থাকলেও ১৯৭২ সাল থেকে সরকারস্বীকৃত এমআর (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) পদ্ধতি চালু আছে বাংলাদেশে।
এ বিষয়ে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এমআরকে বৈধতা দেয় সরকার৷ আগে এমআর করার সর্বোচ্চ সময়সীমা ছিল আট সপ্তাহ, কিন্তু এখন ১২ সপ্তাহ৷ প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই এমআর-এর আলাদা বিভাগ আছে৷ প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোও বৈধভাবেই এমআর করছে৷’
তবে এই এমআর আর সাধারণ গর্ভপাতের মধ্যে একটি বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) যুগ্ম পরিচালক (স্বাস্থ্য) কল্লোল চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমআর মানে গর্ভপাত নয়। এটা এক ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি। কোনো নারী মিনস্ট্রেশন বন্ধ থাকলে বা গর্ভধারণের জটিলতার কারণ বের করতে আমরা ডায়াগনোস্টিক এমআর করে থাকি। এর মাধ্যমে জরায়ুতে কোনো জটিলতা বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি বের করা হয়। আর থেরাপিউটিক এমআরের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করে মিনস্ট্রেশন স্বাভাবিক করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আরলি প্রেগনেন্সিতে অ্যাবরশন করানোর জন্যও এমআর করা হয়। মায়ের জীবন বাঁচাতে এটা আইনগতভাবেই করা যেতে পারে। তবে আট সপ্তাহের বেশি গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এমআর করা ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রডাক্টের (ভ্রূণ) কিছু অংশ ভেতরে থেকে যেতে পারে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।’
এসব ক্ষেত্রে এমআর-এর পরিবর্তে ডিঅ্যান্ডসি (ডাইলেটেশন অ্যান্ড কিউরেটেজ) এবং ডিঅ্যান্ডইঅ্যান্ডসি (ডাইলেটেশন অ্যান্ড ইভাকুয়েশন অ্যান্ড কিউরেটেজ) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বলে জানান কল্লোল চৌধুরী।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইনি জটিলতা এড়াতে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিকে অনুমোদিত নির্ধারিত সময়ের বাইরের গর্ভপাতকেও ‘এমআর’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অনেক সময় ডিঅ্যান্ডসির প্রয়োজন হলেও এমআর-এর মাধ্যমেই ঘটানো হচ্ছে গর্ভপাত। ‘জীবন বাঁচানো’র শর্ত অনুসরণের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলছে গর্ভপাত।
দেশে বাড়ছে গর্ভপাত
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গুটমাকার ইনস্টিটিউটের করা একটি জরিপ দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১৪, এই পাঁচ বছরে ‘এমআর’ কমলেও দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত। ২০১০ সালে দেশে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ১০০টি এমআর করা হয়েছে৷ ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার, যা ২০১০ সালের চেয়ে ৩৪ শতাংশ কম।
এর পাশাপাশি সংস্থাটি বলছে, ২০১০ সালে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬০০টি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে বাংলাদেশে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার। ২০১০ সালে গর্ভবতীদের মধ্যে প্রতি হাজারে গর্ভপাত করান ১৮ দশমিক ২ জন, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ১ হাজারে ২৯ জনে পৌঁছেছে।
গুটমাকার ইনস্টিটিউটের জরিপের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। এতে দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে এমআর সেবা দেয়ার পরিমাণ কমছে। ২০১৪ সালে সারা দেশে মোট গর্ভপাতের ৫৩ শতাংশ হয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে ২০১০ সালে এই পরিমাণ ছিল ৬৬ শতাংশ।
এমআর কমে আসা এবং গর্ভপাত বাড়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষকেরা বলছেন, দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশির ভাগে এমআর করানোর সুবিধা নেই। এ কারণে বেসরকারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভপাতের প্রবণতা বাড়ছে।
নিরাপদ গর্ভপাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন আইপাস। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সাইদ রুবায়েত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যতসংখ্যক নারী গর্ভধারণ করছেন তার প্রায় অর্ধেকই অনিচ্ছাকৃত। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পর্যায়ের সব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সব কেন্দ্রেই ওষুধ ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কুসংস্কার দূর করতেও আমাদের ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত।’
আইন এড়াতে বেআইনি পথ
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘এমআর’ (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) সেবা দেয়ার নামে বেআইনিভাবে চলছে গর্ভপাত। বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। যারা সেবা নিচ্ছেন তারা বিষয়টি গোপন রাখতে চান৷ কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের অগোচরেই ঘটাচ্ছেন গর্ভপাত।
রাজধানীর ধানমন্ডির মেরী স্টোপসের প্রিমিয়াম ক্লিনিকে গিয়ে একজন সেবাগ্রহীতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এরপর সেখানকার এক চিকিৎসক জানান, তাদের ক্লিনিকে তিনভাবে গর্ভপাত করানো হয়। নাম-পরিচয় গোপন করা হয় সেবাগ্রহীতার।
তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ব্যথামুক্ত এমআর করানো হয়। সাড়ে ৩ হাজারের মধ্যে ওষুধের মাধ্যমেও গর্ভপাত করানো হয়। যদি ওষুধে কাজ না হয় কিছু বাড়তি টাকা নিয়ে গর্ভপাত করানো হয়।’
এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৪২ দিন পর্যন্ত এমআর-এর সুযোগ দেই৷ কারণ, ওই সময় পর্যন্ত ঠিক নিশ্চিত হওয়া যায় না গর্ভে সন্তান আছে কি নেই৷ তবে এর বেশি সময় হলে আমরা কাউন্সেলিং করে মাকে এমআর থেকে বিরত রাখি৷’
তিনি জানান, অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তান নিতে চান না৷ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হলে তারা এমআর করাতে চান।
ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে সরাসরি গর্ভপাত করাতেও আসেন, কিন্তু আমরা ফিরিয়ে দিই। কারণ, আইনে গর্ভপাতের সুযোগ নেই এবং আইনের চোখে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷’
বর্তমানে গর্ভপাত করাতে যারা আসছেন তাদের মধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীর সংখ্যা বেশি বলেও জানান তিনি। ডা. বিলকিস বলেন, ‘লোকলজ্জার ভয়ে এ ধরনের তরুণীরা গোপনে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট করেন।’
তিনি বলেন, ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এমআর কমে আসবে৷ আমরা তাই এখন এমআর নিরুৎসাহিত করি৷ সঠিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেই, উৎসাহিত করি৷’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গাইনি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার নুসরার আরফিন নীলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিবাহিতদের মধ্যে যারা আসছেন তাদের মধ্যে নতুন দম্পতির সংখ্যা বেশি। বিয়ের প্রথম বছরের মধ্যে অসতর্কতার কারণে গর্ভবতী হওয়ায় অনেকেই গর্ভপাতের পথ বেছে নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘একাধিক সন্তান থাকার পরেও অসতর্কতার কারণে যেসব নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ছেন তারাও গর্ভপাত করাতে আসেন। এ ছাড়া সন্তাব প্রসবের জন্য যেসব মায়ের জীবন হুমকির মুখে থাকে, ডাক্তারের পরামর্শে তাদের গর্ভপাত করানো হচ্ছে।’
গর্ভপাত-সংক্রান্ত আইন নিয়ে রিট চলছে আদালতে
গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তির বিষয়ে ফৌজদারি দণ্ডবিধির পাঁচটি (৩১২ থেকে ৩১৬ ধারা) ধারা বাতিল চেয়ে গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন। এরপর আদালত ওই ধারাগুলো সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হিসেবে কেন বাতিল করা হবে না- জানতে চেয়ে রুল দেয়।
আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিরাপদ গর্ভপাত ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং পছন্দ নিশ্চিত করার জন্য এই রিট করেছি। বাস্তবতা থেকে দেখলে মামলার ভয়ে অনেক ডাক্তার-নার্স গর্ভপাত করাতে চান না। তাই প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার-নার্সদের দিয়ে গর্ভপাত করানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে স্থানীয় ডাক্তার-নার্সদের বাসায় নিয়ে গর্ভপাত করান অনেকে। ফলে গর্ভপাতটি সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না এবং পরে তা অন্যান্য রোগের কারণ হয়ে ওঠে।’
সৈয়দা নাসরিন বলেন, ‘দণ্ডবিধির ওই ধারাগুলোতে ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ সুযোগ রাখা হয়নি। এ ছাড়া সংসারজীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও আইনি বাধার কারণে নারীদের বাচ্চার জন্ম দিতে হচ্ছে। তাই আইনের ধারাগুলো চ্যালেঞ্জ করেছে।’
বিবাদী পক্ষ এখনও রুলের জবাব দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারপরেও বিষয়টি শুনানির জন্য সময় সুযোগমতো আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’
এ বিষয়ে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘সরাসরি গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া যায় না, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে এর প্রয়োজন আছে।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘ধর্ষণ, শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক কারণ, ভ্রুণের বিকলাঙ্গতা এসব ক্ষেত্রেও গর্ভপাত আইনসিদ্ধ নয়। এটা এক ধরনের জটিলতা তৈরি করে।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য