× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত
google_news print-icon

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত

অনাকাঙ্ক্ষিত-গর্ভধারণে-দ্বিগুণ-বেড়েছে-গর্ভপাত
প্রতীকী ছবি।
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গুটমাকার ইনস্টিটিউটের জরিপ বলছে, ‘বাংলাদেশে ২০১০ সালে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬০০টি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার। ২০১০ সালে গর্ভবতীদের মধ্যে প্রতি হাজারে গর্ভপাত করান ১৮ দশমিক ২ জন, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ১ হাজারে ২৯ জন।’

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেহানা বিমানবন্দর সড়কের বলাকা ভবন লাগোয়া ঝোপঝাড় পরিষ্কারে ব্যস্ত। হঠাৎ চোখে পড়ে, ঝোপের ভেতরে পড়ে আছে দু-তিন দিনের এক নবজাতক।

রেহানার কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ওই নবজাতককে উদ্ধার করে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখন তার ঠিকানা আজিমপুরের সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্র ছোটমণি নিবাস।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হয়েছে পরিত্যক্ত ৩০ নবজাতক। আর অর্ধযুগের হিসাবে এই সংখ্যা ২১০। ফেলে দেয়া নবজাতকদের অনেককে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত বা অর্ধমৃত অবস্থায়।

প্রায়ই খবরের শিরোনাম হওয়া নবজাতক উদ্ধারের পেছনের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করেছেন অপরিকল্পিত অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণকে। তারা বলছেন, সামাজিক ও আইনগত জটিলতা এড়াতে অনেকেই গোপনে গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলে দেন নবজাতককে।

গত এক দশকের বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আগের চেয়ে গোপন গর্ভপাতের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। শুধু গর্ভধারণ করা নারী নন, আইনি বিধিনিষেধের কারণে বিষয়টি গোপন রাখছেন গর্ভপাতসংশ্লিষ্ট চিকিৎসাকর্মীরাও। একই সঙ্গে অনিরাপদ গোপন গর্ভপাতে জীবনসংকটে পড়ছেন অসংখ্য নারী।

রাজধানীর গুলশানের এক নারী তানিয়া (ছদ্মনাম)। দেবরের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে গর্ভবতী হন তানিয়া। পরে নিজেই বাসার পাশে এক বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাত করান। তবে এর দুদিন পর জরায়ু থেকে রক্তপাত শুরু হয়।

অবস্থা খারাপ হলে এক বান্ধবীকে বিষয়টি জানান তানিয়া। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। চিকিৎসার এক পর্যায়ে মারা যান তিনি। এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পর হাতুড়ে চিকিৎসক, কবিরাজ, অদক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে গর্ভপাত করাতে গিয়ে তানিয়ার মতো অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রাণে বেঁচে গেলেও ভুগছেন দীর্ঘ শারীরিক জটিলতায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্মনিরোধক ব্যবহার বা পদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি থাকলেও গর্ভবতী হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমন পরিস্থিতিতে গর্ভপাতকে বেছে নেন অনেকে।

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত

এমআর-এর মোড়কে গর্ভপাত

দেশের আইনে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ ছাড়া গর্ভপাত পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লোকের গর্ভপাত করায়, এবং যদি সে গর্ভপাত সরল বিশ্বাসে উক্ত স্ত্রী লোকের জীবন বাঁচাবার উদ্দেশ্যে না করা হয়ে থাকে, তবে সে ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত যেকোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন এবং যদি স্ত্রী লোকটি শিশুর বিচরণ অনুভব করে, তবে সে ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’

দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ববর্তী ধারায় বর্ণিত অপরাধটি সংশ্লিষ্ট স্ত্রী লোকের সম্মতি ছাড়া সম্পাদন করে, স্ত্রী লোকটি আসন্ন প্রসবা হোক বা না হোক, তবে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

৩১৪ ধারায় বলা হয়েছে: ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লোকের গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে কৃত কোনো কাজের ফলে সেই স্ত্রী লোকটির মৃত্যু ঘটায়, তবে ওই ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

৩১৫ ধারায় বলা হয়েছে: কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শিশুর জন্মের পূর্বে এমন কোনো কাজ করেন, যাতে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হতে না পারে বা জন্মের পরে তার মৃত্যু হয় এবং অনুরূপ কাজের ফলে শিশুটি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ না হয় বা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মৃত্যু হয় এবং যদি কাজটি মাতার জীবন রক্ষার জন্য সরল বিশ্বাসে কৃত না হয়, তবে ওই ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।

এছাড়া, দণ্ডবিধির ৩১৬ ধারায় বলা হয়েছে: ‘যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করেন, যা দ্বারা সে কোনো মৃত্যু ঘটালে তা হলে সে অপরাধজনক নরহত্যা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং অনুরূপ কাজের সাহায্যে একটি জীবন্ত অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটান, তবে ওই ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে- দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত

আইনে অন্তঃসত্ত্বার ‘জীবন বাঁচানোর’ মতো পরিস্থিতি ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে গর্ভপাতের উপর আইনি বিধিনিষেধ থাকলেও ১৯৭২ সাল থেকে সরকারস্বীকৃত এমআর (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) পদ্ধতি চালু আছে বাংলাদেশে।

এ বিষয়ে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এমআরকে বৈধতা দেয় সরকার৷ আগে এমআর করার সর্বোচ্চ সময়সীমা ছিল আট সপ্তাহ, কিন্তু এখন ১২ সপ্তাহ৷ প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই এমআর-এর আলাদা বিভাগ আছে৷ প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোও বৈধভাবেই এমআর করছে৷’

তবে এই এমআর আর সাধারণ গর্ভপাতের মধ্যে একটি বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) যুগ্ম পরিচালক (স্বাস্থ্য) কল্লোল চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমআর মানে গর্ভপাত নয়। এটা এক ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি। কোনো নারী মিনস্ট্রেশন বন্ধ থাকলে বা গর্ভধারণের জটিলতার কারণ বের করতে আমরা ডায়াগনোস্টিক এমআর করে থাকি। এর মাধ্যমে জরায়ুতে কোনো জটিলতা বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি বের করা হয়। আর থেরাপিউটিক এমআরের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করে মিনস্ট্রেশন স্বাভাবিক করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আরলি প্রেগনেন্সিতে অ্যাবরশন করানোর জন্যও এমআর করা হয়। মায়ের জীবন বাঁচাতে এটা আইনগতভাবেই করা যেতে পারে। তবে আট সপ্তাহের বেশি গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এমআর করা ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে প্রডাক্টের (ভ্রূণ) কিছু অংশ ভেতরে থেকে যেতে পারে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।’

এসব ক্ষেত্রে এমআর-এর পরিবর্তে ডিঅ্যান্ডসি (ডাইলেটেশন অ্যান্ড কিউরেটেজ) এবং ডিঅ্যান্ডইঅ্যান্ডসি (ডাইলেটেশন অ্যান্ড ইভাকুয়েশন অ্যান্ড কিউরেটেজ) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় বলে জানান কল্লোল চৌধুরী।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইনি জটিলতা এড়াতে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিকে অনুমোদিত নির্ধারিত সময়ের বাইরের গর্ভপাতকেও ‘এমআর’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অনেক সময় ডিঅ্যান্ডসির প্রয়োজন হলেও এমআর-এর মাধ্যমেই ঘটানো হচ্ছে গর্ভপাত। ‘জীবন বাঁচানো’র শর্ত অনুসরণের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলছে গর্ভপাত।

দেশে বাড়ছে গর্ভপাত

যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গুটমাকার ইনস্টিটিউটের করা একটি জরিপ দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১৪, এই পাঁচ বছরে ‘এমআর’ কমলেও দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত। ২০১০ সালে দেশে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ১০০টি এমআর করা হয়েছে৷ ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার, যা ২০১০ সালের চেয়ে ৩৪ শতাংশ কম।

এর পাশাপাশি সংস্থাটি বলছে, ২০১০ সালে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৬০০টি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে বাংলাদেশে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সংখ্যাটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার। ২০১০ সালে গর্ভবতীদের মধ্যে প্রতি হাজারে গর্ভপাত করান ১৮ দশমিক ২ জন, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ১ হাজারে ২৯ জনে পৌঁছেছে।

গুটমাকার ইনস্টিটিউটের জরিপের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। এতে দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে এমআর সেবা দেয়ার পরিমাণ কমছে। ২০১৪ সালে সারা দেশে মোট গর্ভপাতের ৫৩ শতাংশ হয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে ২০১০ সালে এই পরিমাণ ছিল ৬৬ শতাংশ।

এমআর কমে আসা এবং গর্ভপাত বাড়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষকেরা বলছেন, দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশির ভাগে এমআর করানোর সুবিধা নেই। এ কারণে বেসরকারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভপাতের প্রবণতা বাড়ছে।

নিরাপদ গর্ভপাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন আইপাস। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সাইদ রুবায়েত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যতসংখ্যক নারী গর্ভধারণ করছেন তার প্রায় অর্ধেকই অনিচ্ছাকৃত। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পর্যায়ের সব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সব কেন্দ্রেই ওষুধ ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কুসংস্কার দূর করতেও আমাদের ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত।’

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত

আইন এড়াতে বেআইনি পথ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘এমআর’ (মিন্সট্রুয়াল রেগুলেশন) সেবা দেয়ার নামে বেআইনিভাবে চলছে গর্ভপাত। বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। যারা সেবা নিচ্ছেন তারা বিষয়টি গোপন রাখতে চান৷ কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের অগোচরেই ঘটাচ্ছেন গর্ভপাত।

রাজধানীর ধানমন্ডির মেরী স্টোপসের প্রিমিয়াম ক্লিনিকে গিয়ে একজন সেবাগ্রহীতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এরপর সেখানকার এক চিকিৎসক জানান, তাদের ক্লিনিকে তিনভাবে গর্ভপাত করানো হয়। নাম-পরিচয় গোপন করা হয় সেবাগ্রহীতার।

তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ব্যথামুক্ত এমআর করানো হয়। সাড়ে ৩ হাজারের মধ্যে ওষুধের মাধ্যমেও গর্ভপাত করানো হয়। যদি ওষুধে কাজ না হয় কিছু বাড়তি টাকা নিয়ে গর্ভপাত করানো হয়।’

এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৪২ দিন পর্যন্ত এমআর-এর সুযোগ দেই৷ কারণ, ওই সময় পর্যন্ত ঠিক নিশ্চিত হওয়া যায় না গর্ভে সন্তান আছে কি নেই৷ তবে এর বেশি সময় হলে আমরা কাউন্সেলিং করে মাকে এমআর থেকে বিরত রাখি৷’

তিনি জানান, অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তান নিতে চান না৷ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হলে তারা এমআর করাতে চান।

ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে সরাসরি গর্ভপাত করাতেও আসেন, কিন্তু আমরা ফিরিয়ে দিই। কারণ, আইনে গর্ভপাতের সুযোগ নেই এবং আইনের চোখে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷’

বর্তমানে গর্ভপাত করাতে যারা আসছেন তাদের মধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীর সংখ্যা বেশি বলেও জানান তিনি। ডা. বিলকিস বলেন, ‘লোকলজ্জার ভয়ে এ ধরনের তরুণীরা গোপনে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট করেন।’

তিনি বলেন, ‘জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এমআর কমে আসবে৷ আমরা তাই এখন এমআর নিরুৎসাহিত করি৷ সঠিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেই, উৎসাহিত করি৷’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গাইনি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার নুসরার আরফিন নীলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিবাহিতদের মধ্যে যারা আসছেন তাদের মধ্যে নতুন দম্পতির সংখ্যা বেশি। বিয়ের প্রথম বছরের মধ্যে অসতর্কতার কারণে গর্ভবতী হওয়ায় অনেকেই গর্ভপাতের পথ বেছে নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘একাধিক সন্তান থাকার পরেও অসতর্কতার কারণে যেসব নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ছেন তারাও গর্ভপাত করাতে আসেন। এ ছাড়া সন্তাব প্রসবের জন্য যেসব মায়ের জীবন হুমকির মুখে থাকে, ডাক্তারের পরামর্শে তাদের গর্ভপাত করানো হচ্ছে।’

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণে দ্বিগুণ বেড়েছে গর্ভপাত

গর্ভপাত-সংক্রান্ত আইন নিয়ে রিট চলছে আদালতে

গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তির বিষয়ে ফৌজদারি দণ্ডবিধির পাঁচটি (৩১২ থেকে ৩১৬ ধারা) ধারা বাতিল চেয়ে গত বছরের আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন। এরপর আদালত ওই ধারাগুলো সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি হিসেবে কেন বাতিল করা হবে না- জানতে চেয়ে রুল দেয়।

আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিরাপদ গর্ভপাত ও ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং পছন্দ নিশ্চিত করার জন্য এই রিট করেছি। বাস্তবতা থেকে দেখলে মামলার ভয়ে অনেক ডাক্তার-নার্স গর্ভপাত করাতে চান না। তাই প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার-নার্সদের দিয়ে গর্ভপাত করানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে স্থানীয় ডাক্তার-নার্সদের বাসায় নিয়ে গর্ভপাত করান অনেকে। ফলে গর্ভপাতটি সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না এবং পরে তা অন্যান্য রোগের কারণ হয়ে ওঠে।’

সৈয়দা নাসরিন বলেন, ‘দণ্ডবিধির ওই ধারাগুলোতে ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ সুযোগ রাখা হয়নি। এ ছাড়া সংসারজীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে বাচ্চার জন্ম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও আইনি বাধার কারণে নারীদের বাচ্চার জন্ম দিতে হচ্ছে। তাই আইনের ধারাগুলো চ্যালেঞ্জ করেছে।’

বিবাদী পক্ষ এখনও রুলের জবাব দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারপরেও বিষয়টি শুনানির জন্য সময় সুযোগমতো আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’

এ বিষয়ে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, ‘সরাসরি গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া যায় না, তবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে এর প্রয়োজন আছে।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘ধর্ষণ, শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক কারণ, ভ্রুণের বিকলাঙ্গতা এসব ক্ষেত্রেও গর্ভপাত আইনসিদ্ধ নয়। এটা এক ধরনের জটিলতা তৈরি করে।’

আরও পড়ুন:
এক নারীর পরিবর্তে আরেক জনের গর্ভপাতের চেষ্টা তদন্তে কমিটি
এক জনকে ভেবে আরেক জনকে গর্ভপাতের কক্ষে
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত বৈধ
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত বৈধতার বিল সিনেটে
অবৈধ গর্ভপাত ঘটিয়ে কোটিপতি নার্স

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশেষ
New Member of the Press Council Matiur Rahman Chowdhury

প্রেস কাউন্সিলের নতুন সদস্য মতিউর রহমান চৌধুরী

প্রেস কাউন্সিলের নতুন সদস্য মতিউর রহমান চৌধুরী

সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’

বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।

এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।

মন্তব্য

বিশেষ
Meeting the Religion Advisor with the Prime Minister of Pakistan

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।

এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
Decision to form an independent investigation service of the police

পুলিশের স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত

পুলিশের স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত

পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।

পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’

সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
Basic training duration of cadre officers is 6 months

ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৪ মাস নির্ধারণ

ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৪ মাস নির্ধারণ

ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।

সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।

সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র‌্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’

সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।

কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।

মন্তব্য

বিশেষ
Literature of the National Writers Forum

জাতীয় লেখক ফোরামের সাহিত্য আড্ডা

জাতীয় লেখক ফোরামের সাহিত্য আড্ডা

জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।

মন্তব্য

বিশেষ
The government will take drastic action to collect interest free loans M Sakhawat Hossain

সুদমুক্ত ঋণ আদায়ে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে: এম সাখাওয়াত হোসেন

সুদমুক্ত ঋণ আদায়ে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে: এম সাখাওয়াত হোসেন

শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।

তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।

উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"

তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
Foreign Adviser

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।

বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মঙ্গলবার এক বৈঠকে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। আজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানান।

ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের স্থায়ী সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।

ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর সমর্থনের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ওপরও জোর দেন।

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে ড. আল-হাব্বাশ তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।

মন্তব্য

p
উপরে