তিন বছর আগে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ‘বিএন টু ওয়ান ওয়ান’ দুর্ঘটনায় ৫১ আরোহী নিহত হন। এ ঘটনার পর আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৩টি সুপারিশ করেছিল দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি।
দুর্ঘটনার যেসব কারণ শনাক্ত করা হয়েছিল, তার মধ্যে প্রধান ছিল পাইলটের মানসিক অস্থিরতা।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন হাতে এসেছে নিউজবাংলার। এতে দেখা যায়, কমিটির বেশির ভাগ সুপারিশই ছিল মূলত পাইলট বা ককপিট ক্রুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত।
কমিটির প্রথম সুপারিশ ছিল স্বাস্থ্যগত কারণে কোনো পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করা হলে পরবর্তীতে ফ্লাইটে ফেরার আগে যেন তার পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা হয়।
সুপারিশ বাস্তবায়নসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো পাইলটের লাইসেন্স নবায়নের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই পাইলটকে পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি চাকরিতে প্রবেশ ও প্রশিক্ষণের সময় প্রত্যেক পাইলটের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে বেবিচক। দুর্ঘটনার পর নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে নীতি তৈরি করেছে ইউএস বাংলা এয়ারও।
কমিটির আরেকটি সুপারিশে ইউএস বাংলাকে বলেছিল, এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে, যাতে ক্রুদের পেশাগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক বিষয়গুলোকেও প্রাধান্য দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউএস বাংলা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনকাঠামো উন্নত করেছে। পাশাপাশি ককপিট ক্রুরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট কি না তা নিশ্চিত করতে লাইসেন্স নবায়নের আগে বেবিচকের সহযোগিতায় পরীক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দৈনিক রোস্টার করার ক্ষেত্রে ক্রুরা অবসাদ বা ক্লান্তিতে ভুগছেন কি না তাও নিশ্চিত করেছে ইউএস বাংলা।
তদন্ত কমিটির সুপারিশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ফ্লাইট চলাকালীন ক্রুদের ধূমপান থেকে বিরত রাখা এবং ধূমপানমুক্ত ফ্লাইট নিশ্চিত করা। এ প্রেক্ষিতে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ তাদের সব ক্রুকে ধূমপানে বিরত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল কাঠমান্ডুতে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সিমুলেটরে পাইলটদের রানওয়ে টু জিরো দিয়ে অবতরণ ও উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া এবং এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে নবীন পাইলটদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
তবে ইউএস বাংলা এয়ার যেহেতু এখন এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে না, তাই এ সুপারিশ দুটি বাস্তবায়ন হয়নি।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশনের প্রধান সালাউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত তিন বছরে কমিটির সুপারিশের প্রায় সবগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে। এগুলো অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানো যাবে।
‘প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যে দুটি সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, কাঠমান্ডু রুটে পুনরায় ফ্লাইট শুরু করলে সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে ইউএস বাংলা।’
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বিমান দুর্ঘটনার পর বেবিচক কড়া হলেও এখনও কিছু গলদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সুপারিশ কাগজে-কলমে বাস্তবায়ন হলেও বাস্তব চিত্র এতটা সহজ নয়।
অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন করেছে। আর নিরাপত্তা নজরদারিও বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে।
‘তারা ফ্লাইট সেফটির বিষয়ে আরও সতর্ক হয়েছে, এটি ঠিক। এই কারণে এওসি ও লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এগুলো ইতিবাচক দিক।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, হিউম্যান অ্যাওয়ারনেস যেটা বা হিউম্যান পারফরমেন্সের দিকগুলোতে আরও খবরদারি করা উচিত। ফ্লাইট সেফটিতে হিউম্যান অ্যাওয়ারনেস খুব বেশি প্রয়োজন। এ জায়গায় আরও কাজ করা উচিত।
‘সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যেটা রয়েছে, সেটা গ্রাউন্ড লেবেল পর্যন্ত কথা বলা উচিত। প্রত্যেক এয়ারলাইনস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এটা করতে পারে। এটা আসলে যতটা হওয়া উচিত, ততটা হচ্ছে না। আমরা কাগজে-কলমে অনেক কিছুই করছি, কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রে কতটা কী হচ্ছে এটা বেবিচকের আরও কঠোরভাবে দেখা উচিত।’
এ টি এম নজরুল বলেন, ‘অপারেটর এবং রেগুলেটর প্রত্যেকেরই সেফটি ম্যানেজমেন্ট যেটা ডকুমেন্টেড আছে, সেটাকে এক্সিকিউট করা উচিত। আবার এটা আসলেই হচ্ছে কি না সেটা মনিটরিংও করা উচিত।
‘এমপ্লয়িদের মধ্যে যখন অসন্তোষ তৈরি হয়, এটা কিন্তু ফ্লাইট সেফটির জন্য মারাত্মক হুমকি। এটা মনে হয়, প্র্যাকটিক্যালি হওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা পাইলট এবং ক্রু, প্রত্যেকেরই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়া উচিত এবং রিকমেন্ডেশনগুলো প্রয়োগ করা উচিত। এতে করে কঠিন সময়ে তারা কীভাবে কাজ করবেন, সেটা বোঝা যাবে।’
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিএস টু ওয়ান ওয়ান। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ড্যাশ এইট উড়োজাহাজটির চার ক্রুসহ ৫১ আরোহী। এদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২৪ জন নেপালি ও একজন চীনের নাগরিক। দুর্ঘটনায় যে ২০ জন প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তাদের অনেকেরই আঘাত ছিল গুরুতর।
এ দুর্ঘটনার পর যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়, তাতে বলা হয়, উড়োজাহাজটি অবতরণের শেষ মুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করছিল। ফলে রানওয়ে থেকে একটু দূরে মাটিতে আছড়ে পড়ে। আর এর ছয় সেকেন্ডের মধ্যে এটিতে আগুন ধরে যায়। আর এতেই মারা যান ফ্লাইটের বেশির ভাগ আরোহী।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে পাইলটের মানসিক অস্থিরতাবশত দিগ্ভ্রান্ত হওয়া ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ফ্লাইট অবতরণের সময় কন্ট্রোল টাওয়ার ও ককপিট ক্রুদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তিকেও সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
কাঠমান্ডুর এ দুর্ঘটনা ছিল ১৯৯২ সালের পর নেপালের সবচেয়ে বড় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ) বিমান বিধ্বস্তে নিহত হন ১৬৭ জন।
নেপালের এই বিমানবন্দরটিকে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোর একটি হিসেবে।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আজ গণতন্ত্রের মা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। তিনি এ দিনটি উদযাপন করেন না, তবে দল থেকে সারাদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আজ বিকেলে ম্যাডামের (বেগম জিয়া) জন্য ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। তাঁর কর্মকর্তারা এটি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে পৌঁছে দেন।
বিকেল প্রায় ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় গিয়ে তাঁর একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারের হাতে ফুলের তোড়াটি হস্তান্তর করেন।
এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এবং চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত উইংয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চীনের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্য জন্মদিনের ফুলের তোড়া পাঠানো হয়।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর তিনি ৮১ বছরে পা রেখেছেন।
ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বৃহষ্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর রেল ভবনে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে রেল স্টেশনে তামাক সচেতনতা ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য আরএনবি ও জিআরপি (পুলিশ) এবং রেলওয়ের ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সম্মাননা পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে রেলওয়ে কর্মীদের উৎসাহিত করে দেশের সকল স্টেশন ও ট্রেনকে ধূমপান ও তামাকমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন-
মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার, উপসচিব (বাজেট অধিশাখা), রেলপথ মন্ত্রণালয়; মোঃ জাকির হোসেন, পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহণ), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আনসার আলী, উপ-পরিচালক (টিসি), বাংলাদেশ রেলওয়ে; গৌতম কুমার কুণ্ডু, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (লালমনিরহাট), বাংলাদেশ রেলওয়ে; ফারহান মাহমুদ, এডিসিও (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোহাম্মদ আমিনুল হক, এসিও-১ (ঢাকা), বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের বেজলাইন ও এন্ডলাইন সার্ভের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা/কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার যাত্রীসেবার মানের ওপর যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অনুষ্ঠানে তার বিস্তারিত আলোচনা করেন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ভূমিকা পালনকারী সাবেক ও বর্তমান সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা। তাঁরা রেলওয়ের প্রতিটি স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলার ওপর তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “রেলপথ জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। তাই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাবো না।”
অনুষ্ঠানে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ধূমপান ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সভা আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।
দেশের শতকরা ৯০ ভাগ বিরোধের উৎস্য ভূমি। এটা কিন্তু খুব কমই প্রতিকার নিতে পারছি আমরা। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আমারও দায়িত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণেরও সচেতনতা প্রয়োজন। ফেনীতে অনুষ্ঠিত অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি ফেনী থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি, বাংলাদেশ এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার।
ফেনী জেলা প্রশাসন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো: এমদাদুল হক চৌধুরী, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প এর প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো: পারভেজ হাসান বিপিএএ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব, সাংবাদিক আবু তাহের, ফেনী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নুরুল আমিন খান, ফেনী সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজিব তালুকদার, ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা নাসরিন কান্তা, ফেনী জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি আব্দুল হান্নান, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বৃহত্তর নোয়াখালীর ভূমি বিষয়ক সার্চ অফিসার সরোয়ার উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফাহমিদা হক প্রমূখ।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জেলার ভূমি বিভাগ, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রয়েছে, কিন্তু এই পদক্ষেপটি আমরা গত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, গত সরকারের সময়ে প্রকাশিত জিডিপি, ব্যক্তিগত আয়, মাতৃস্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাস্তবিক অর্থে,স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
উপদেষ্টা আজ বুধবার (১৩ আগষ্ট) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) কনফারেন্স রুমে নাগরিক উদ্যোগ ও পিপলস হেলথ মুভমেন্ট আয়োজিত "বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সতর্ক পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন"- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরিসংখ্যান বহন করলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে আমাদের দেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা গ্রহণের সময় আসবে, এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে তা অনুযায়ী নিয়ম মেনে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে শুল্ক ও জিএসপি সুবিধার প্রভাব কোথায় বৃদ্ধি পাবে এবং কোথায় হ্রাস পাবে, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিদেশ থেকে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় গবাদিপশুর বাজারে প্রভাব পড়বে এবং লাখ লাখ খামারি, বিশেষ করে গরীব মহিলারা যারা গরু লালন-পালন করে উদ্যোক্তা হিসেবে অবদান রাখছেন, তাদের ক্ষতি হবে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিদেশ থেকে মাংস আমদানি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। কারণ, আমদানি করা মাংসের মাধ্যমে জুনোটিক রোগ প্রবেশের ঝুঁকি রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, সাগরের সি উইড ও কুচিয়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি হ্রাস করতে হবে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় আরো বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জেনেভা ভিত্তিক লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও সিনিয়র রিসার্চার সানিয়া রিড স্মিথ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ মাসুদ, অ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের কো-অর্ডিনেটর বারাকাত উল্লাহ মারুফ।
তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরও সক্রিয় হয়ে অপতথ্য ও গুজবের বিরুদ্ধে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নীতি, উন্নয়ন কর্মসূচি ও সাফল্যের প্রচারে তথ্য অধিদপ্তর প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই দায়িত্ব নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে।
বুধবার তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘তথ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম অধিকতর দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে’ আয়োজিত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর।
তথ্য সচিব বলেন, সরকার যেসব জনমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছে, সেগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা সরকারের বার্তা জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেন, তারাই প্রথম চালিকাশক্তি। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকা সময়ের দাবী।
বর্তমানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অপতথ্য ও গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন মাহবুবা ফারজানা। তিনি বলেন, অপতথ্যের বিরুদ্ধে আপনাদেরই দক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ, সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত প্রচার করতে হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, শিক্ষিত ও দক্ষ। অপতথ্য ছড়ানো গোষ্ঠী ছোট এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা অশিক্ষিত বা সরকারের কাজ সম্পর্কে অবগত নয়। সে তুলনায় আপনারা অনেক বেশি যোগ্য।
তথ্য সচিব বলেন, নিউজ ও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তনের দিকগুলোও তুলে ধরতে হবে। এজন্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট, ছোট ভিডিও, লাইভ কভারেজ এবং সময়োপযোগী গল্প বলার কৌশল প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ।
তরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মাহবুবা ফারজানা বলেন, আপনারা ইয়াং স্টার। আপনারা অবশ্যই পারবেন। প্রচার-প্রচারণার মান উন্নয়ন করুন। লেখার মান, বলার মান উন্নত করুন। প্রতিটি সংবাদ যেন সরকারের সাফল্যের জীবন্ত চিত্র হয়।
তথ্য সচিব আরও বলেন, সংবাদ শুধু নয়, তথ্য হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তি। সত্যনিষ্ঠ খবর প্রচার করতে হবে। তথ্যের মাধ্যমে আস্থা গড়ে তুলেই বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চাই।
মন্তব্য