বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আরও এক দিক থেকে ছিল অনন্য। এটি মুক্তিযুদ্ধের আগে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভিডিও রেকর্ডেড ভাষণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার সেই ভাষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সাত বাঙালি কর্মকর্তা। শুধু ভিডিওচিত্র ধারণই নয়, এটি ডেভেলপের পাশাপাশি সংরক্ষণও তারা করেছিলেন।
২৫ মার্চ কালরাতের পর অবরুদ্ধ ঢাকা শহরের সরকারি দপ্তর থেকে তারা সেই ভিডিওটেপ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করেছেন তারা। সে সময় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ক্যামেরা সহকারী ছিলেন আমজাদ আলী খন্দকার। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভিডিওটেপ সরিয়ে কীভাবে তারা দোহারের একটি বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন, সে গল্প তিনি বলেছেন নিউজবাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আশিক হোসেনের কাছে।
একাত্তরে তো আপনারা পাকিস্তান সরকারের কর্মচারী। তারপরও ৭ মার্চের ভাষণ ধারণ করলেন কীভাবে? আর কোনো বিভাগ কি আপনাদের সঙ্গে ছিল?
৭ মার্চ কিন্তু একদিনে আসেনি। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের পথেই ৭ মার্চ এসেছে। এই ভাষণ ধারণ করার জন্য আমাদের পরিচালকের নেতৃত্বে দুই দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমরা কে কী করব, সেগুলো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আমরা তখন মূলত ছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ফিল্ম ডিভিশনের স্টাফ। আমরাই এটা করেছি। তখন পাকিস্তানের আরও কিছু সংস্থা, যেমন ডিএফপি ছিল। তারা কিন্তু এ কাজ করেনি। তারা কিন্তু মাঠের ধারেকাছেও আসেনি। আমরা ফিল্ম ডিভিশন এ কাজটা করেছি। আমাদের ফিল্ম ডিভিশনের পরিচালক ছিলেন আবুল খায়ের (খ্যাতিমান অভিনেতা) সাহেব। ক্যামেরাম্যান ছিলেন জি জেড এম এ মবিন, এম এ রউফ। অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম আমি, এস এম তৌহিদ আর সৈয়দ মইনুল আহসান। দুইজন ছিল লাইটবয়; জুনায়েদ আহমেদ আর একজন হাবিব। লাইটবয়রা আমাদের সহযোগিতা করত। আর আমাদের পরিচালক জানত, কে কী কাজ করতে পারে।
মঞ্চে মূল কাজটা কীভাবে করলেন? কার কী দায়িত্ব ছিল? প্রস্তুতিই বা শুরু করলেন কীভাবে?
মবিন সাহেব ছিলেন ফিল্মের ক্যামেরাম্যান মূলত। আর আমি ছিলাম এফডিসির রাইজিং ক্যামেরাম্যান। পরিচালক মনে করলেন, এই দুজনকে যদি মঞ্চে দিই তাহলে তারা ভালো রেকর্ড করতে পারবে। আমাদের দুজনকে মঞ্চে দিলেন। রউফ সাহেব আর তৌহিদকে দায়িত্ব দিলেন, তারা ঘুরে ঘুরে ছবি নেবে। আর মইনুলকে দিলেন এই যে টেপ রেকর্ডার বসবে, সেইটা চালুর দায়িত্ব।
তখন কলরেডি ছিল। তারা আগের দিন পুরো মাঠে শত শত মাইক বসিয়েছে। তারা হাইভোল্টেজ লাইন এনেছিল। আমরা ক্যামেরা চালাব কারেন্ট দিয়ে, ব্যাটারি দিয়ে যদি চালাই, তাহলে সে ক্যামেরায় অনেক আওয়াজ হবে, কখন ব্যাটারি বসে যাবে আমরা বুঝতে পারব না।
সিংক মোটর বলে একটি জিনিস আছে। সেটা দিয়ে আমরা ক্যামেরা চালালাম, যাতে করে কোনো শব্দ না পায়। সাউন্ডপ্রুফ ক্যামেরা নিয়ে গেলাম। কারণ, আমাদের ক্যামেরায় যদি আওয়াজ হয়, একটা লোকও মাঠে থাকবে না। এত আওয়াজ হবে, সব মানুষ চলে যাবে। এর জন্য আগের দিন বিকেলে একটা কয়েল তার নিয়ে গেলাম কলরেডির কাছে। তখন যারা কাজ করছিল, তারা আমাকে আর লাইন দেবে না। পরে কলরেডির মালিক আসার পরে আমরা লাইন পেলাম। তো তখনই ভিডিওধারণের জন্য লাইন টেনে রাখা হলো।
পরের দিন ৭ মার্চ, সকাল ৭টায় ক্যামেরা নিয়ে মাঠে চলে গেলাম।
৭ মার্চ সকালে যখন রেসকোর্স ময়দানে গেলেন, তখন কী দেখলেন? আপনাদের ভয় করেনি?
সকালে মাঠে গিয়ে দেখি, মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। একদিকে কালীমন্দির, এদিকে টিএসসি, একদিকে ঢাকা ক্লাব আর ওদিকে হাইকোর্ট। তখন তো কোনো গাছপালা ছিল না। পুরো মাঠ ছিল খালি। তো আমরা গিয়ে দেখলাম, পুরো মাঠ মানুষ দিয়ে ভরে গেছে। আমরা তখন ক্যামেরা-ট্যামেরা লাগিয়ে সব রেডি করে রেখেছি।
এর মধ্যে একটা গুজবও ছিল যে, বোমা মেরে সব উড়িয়ে দেবে। প্রস্তুতিও নাকি ছিল। আমরা তো তখন ভয় পেয়েছি। এই যে সাতজনের নাম বললাম, আমরাই প্রথম প্রকাশ্যে মাঠে এসেছি। আর কেউ কিন্তু আসেনি। তখন আমরা পাকিস্তান সরকারের কর্মচারী। গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরা উপস্থিত ছিল। তারা আমাদের দেখেছে যে আমরা কাজ করছি। ভয় ছিল, ধরে নিয়ে যাবে। তবে সাহস ছিল, বঙ্গবন্ধু আমাদের যেভাবেই হোক বের করে নিয়ে আসবে। আটকে রাখতে পারবে না। আর মরে গেলে তো মরেই গেলাম।
এভাবেই আমরা কাজ করলাম। ভয় আমাদের ছিল না। যখন একবার কাজের নেশায় চলে গিয়েছি, তখন আর ভয় নাই। তখন চিন্তা, কীভাবে ফোকাস থাকবে।
যারা ফিল্মের ক্যামেরাম্যান তারা বুঝবে কী কষ্ট করে আমরা এ কাজটা করেছি। ম্যাগাজিন, ফিল্ম চেঞ্জিং। ব্যাগ সব সাইডে রাখা আছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট দুজন সাইডে আছে। আমাদের ৫০০ ফিট লোড করলে মাত্র ৫ মিনিট শ্যুট করা যায়। এক ঘণ্টা শ্যুট করা যায় এ পরিমাণ ফিল্ম আমাদের কাছে ছিল।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সেই মুহূর্তের কথা আপনার মুখে শুনতে চাই।
বঙ্গবন্ধু আসলেন। এত মানুষ হয়েছে, কিন্তু কারও মুখে কোনো কথা নেই। এই যে মাইকে বলে ডানে আসেন বামে আসেন, বসেন, এসব কোনো কথা বলতে হয়নি। সব একদম সাইলেন্ট। মানুষের চিন্তাটা এ রকম ছিল যে, এই যে এত দিনের এক আন্দোলন, এত সংগ্রাম হয়েছে, এটা তার ফসল। আজকে তিনি কী নির্দেশ দেন তা শুনে বাড়ি যাব। সবাই সেটা শুনতেই এসেছে। একটা কথাই মানুষ শুনতে এসেছে যে, বঙ্গবন্ধু কী বলেন। এ জন্যই সবাই চুপ করে বসে ছিল। বঙ্গবন্ধু আসলেন একদম বীরের মতো। মঞ্চে উঠলেন। আশেপাশে যারা ছিল, কারও সাথে কোনো কথা না বলে সরাসরি ডায়াসে এসে চশমা রেখে উনি ভাষণ শুরু করলেন। একটানা বলে গেলেন। কারও কোনো স্লিপও নিলেন না, কারও কোনো ইশারাও শুনলেন না। কী বলবেন, আগে থেকে কোনো কিছু ঠিকও করা ছিল না। থাকে না, মানুষের ভাষণ লেখা থাকে। এ রকম কিছুই ছিল না। উনি অনর্গল ওনার কথা বলে গেলেন। আর যা বললেন, তা তো রেকর্ডে আছেই, আপনারা শুনেছেন। তখন পাকিস্তান আমল। তার মধ্যেও তিনি বললেন স্বাধীনতার কথা।
রেকর্ড তো করলেন। তারপর এটা ডেভেলপ করলেন কীভাবে? কেউ সন্দেহ করেনি?
আমরা ভাষণ রেকর্ড করলাম। আমাদের অফিস ছিল সচিবালয়ের ২২ নম্বর শেডে। অর্ধেকটা আমাদের, আর বাকিটা অন্য ডিপার্টমেন্টের। এখন সমস্যা হলো এই যে, বঙ্গবন্ধুর নামে কীভাবে ফিল্মগুলো ডেভেলপ করে আনব। ক্যামেরাম্যানের দায়িত্ব হলো শ্যুট করে দেয়া। এখন ডেভেলপের দায়িত্ব তো আমাদের ওপরে। তখন ডেভেলপ করতে হতো এফডিসিতে। এফডিসিতে গেলাম। কিন্তু ফিল্মের উপরে লিখব কী? সে বছর একটা সাইক্লোন হয়েছিল। তো একটা ফিল্মের উপর লেখলাম, ‘সাইক্লোন’। অন্যগুলো কোনোটাতে ‘নির্বাচন’। এভাবে লিখে ‘এক’, ‘দুই’ দিয়ে আমরা ডেভেলপে দিতাম। তারপর সেগুলো রক্ষণও আমরাই করতাম। পরিচালকের একটা আলমারি ছিল। সেখানে সারিবদ্ধভাবে রাখা হতো। আমরা এভাবেই ফিল্ম প্রসেস করে নিয়ে আসলাম।
২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হলেন। দেশের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিল সেনাবাহিনী। তখন তো তারা অনেক নথি নষ্ট করে ফেলে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রক্ষা পেল কীভাবে?
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে গেল পাকিস্তানিরা। এরপর আর্মিরা প্রায় সব অফিসের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিল। সচিবালয়ে আর্মির আনাগোনা বেড়ে গেল। একদিন আমাদের পরিচালক (আবুল খায়ের) ডেকে বললেন, ‘আমজাদ, তোমাকে একটা দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সেটা এই মুহূর্তে এবং আজই।’ আমি বললাম, ‘কী করতে হবে স্যার।’ তিনি আমাকে নানা কারণে অনেক বিশ্বাস করতেন। যা হোক, আমাকে বললেন, ‘তুমি এখনই সদরঘাট যাও।’ তখন সবকিছু কিনতে হলে সদরঘাট যেতে হতো। আমাকে তিনি বললেন, ‘সদরঘাট থেকে একটা ট্রাংক নিয়ে এসো।’ টাকা দিয়ে দিলেন, আমি ৪২ ইঞ্চির একটি বড় কালো ট্রাংক নিয়ে আসলাম। উনাকে দেয়ার পরে এটাতে ভরলেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, যেটা আমরা ৭ মার্চ রেকর্ড করেছিলাম, সেটা। এর সাথে কাজী নজরুল ইসলামের উপরে একটা ডকুমেন্টারি আমরা করেছিলাম গোপনে, সেটা। সাথে বঙ্গবন্ধুর আরও কিছু ছবি ট্রাংকে ভরলেন। এরপর আমাকে বললেন, ‘তোমাকে আজই বের হয় যেতে হবে।’ আমি বললাম, ‘কোথায় যাব?’ বললেন, ‘জয়পাড়া যাবা।’ কোথায় যেতে হবে ঠিকানা দিয়ে দিলেন। আমি বললাম, ‘স্যার আমার বাবার সাথে একটু দেখা করে আসি।’ উনি আমাকে পয়সা দিয়ে বললেন, ‘যাও।’ আমি বাবাকে বললাম, ‘বাবা, আমার আসতে দুই দিন দেরি হবে, চিন্তা করবেন না।’ ফিরে আসার পর আমাকে তিনি (আবুল খায়ের) রুমের ভেতর নিয়ে গেলেন। আমার হাতটা ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললেন, ‘আমজাদ! আল্লাহ হাফেজ!’ তার চোখগুলো এত বড়বড় হয়ে গেল। উনি জানতেন, এই ছেলে যদি বের হয়ে যায়, আর ধরা পড়ে, তাহলে এখনই শেষ হয়ে যাবে। আর ফিরে আসবে না।
সারা শহরে তখন আর্মির প্রহরা। এর মধ্যে বের হলেনই বা কীভাবে?
প্রথম যে সংকটটা হলো: সচিবালয় থেকে বের হব কীভাবে? সব জায়গায় তো পাঞ্জাবিরা আছে, বিহারিরা আছে। গেট পাস দিবে কে? যে গেট পাস দেবে, সেই তো পরে ধরা পড়বে। এখন তাহলে গেট পাস ছাড়াই আমাকে বের হতে হবে। কিন্তু কীভাবে? তখন ২ নম্বর গেটে একজন সার্জেন্ট ছিলেন ফরিদ, বাঙালি। তার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তাকে আমি বললাম, বের হতে চাই, এই হচ্ছে ব্যাপার। সে যেহেতু বাঙালি, আমাদের বিষয়ে সব সে জানত আর কী। তো আমাকে বলল, ‘ঠিক আছে অসুবিধা নাই, তুমি বেবি নিয়ে আসো, আমি তোমাকে বের করে দেব।’ দ্বিতীয় গেট দিয়ে তখন শুধু ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। ফরিদ করল কী, পল্টন থেকে যে গাড়িগুলো আসছিল ওগুলোকে আটকে দিয়ে আমাকেসহ বেবিটা বের করে দিল। আমার সাথে যারা চাকরি করত, অনেককেই বললাম, ‘আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আয়।’ কিন্তু কেউ আসল না। আমি একাই আল্লাহর নাম নিয়ে বের হয়ে গেলাম। বেবিওয়ালাও বুঝল, এটা মনে হয় বিশেষ ব্যবস্থা। সে-ও কোনো দিকে না তাকিয়ে দিল এক টান।
প্রেস ক্লাবের সামনে আর্মি একটা বড় ট্রাকের উপরে বসে আছে। তার নিচ দিয়েই বেবিটা চলে গেল। ওরা আমাকে ডাকলও না, আমিও তাকালাম না। ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ করতে করতে চলে গেলাম।
কার্জন হল, চানখাঁর পুলের সামনে দিয়ে গেলাম চকবাজার। চকবাজার গিয়ে একটু স্বস্তি পেলাম। কিছু লোকজন দেখা যায়। আর সব রাস্তা ফাঁকা। আর্মি টহল দিচ্ছে। এখান থেকে সোয়ারি ঘাটে যাওয়ার পর দুটো ছেলে এগিয়ে এলো ট্রাংক নিতে। আমি তাদের বললাম, ‘তোমরা পারবা না। বড় কাউকে ডাকো।’ পরে একজন এলো। ট্রাংক নিয়েই বলে উঠল, ‘ইসমে কেয়া হ্যায় ইতনা ওজন।’ আমি বললাম, ‘নিয়ে যা, কোনো কথা কইস না। আমাকে পার করে দে আগে।’ এখান থেকে এভাবে জিঞ্জিরা পর্যন্ত গেলাম। সেখানে দেখি, শয়ে শয়ে লোক জীবন নিয়ে পালাচ্ছে। বোঝেন না, জীবনের ভয়ে ওরা পালায়, আর আমি ছুটছি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাঁচাতে।
দেখলাম একটা বাস ছেড়ে দিচ্ছে। আমি সেটার পেছনে জোরে এক থাপ্পড় দিলাম। তখন তরুণ ছিলাম, চেহারার মধ্যে একটা অন্য রকম ইয়ে ছিল। ড্রাইভার তখন পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখল, কী বুঝল জানি না। বাস থামিয়ে দিল। আমাকে ইঙ্গিত দিল উপরে তুলে দেন। আমি বাসের ছাদে উঠে পড়লাম। তারপরেও কিন্তু শান্তি পেলাম না। ভয় হলো (আর্মি) যদি আমার পিছু নেয়, যদি দেখে ফেলে তাহলে কী হবে?
তখন এক বাঙালি অন্য বাঙালিকে খুব সহযোগিতা করত। জিঞ্জিরা থেকে গেলাম বক্সনগর নামে একটা জায়গা আছে, সেখানে। এই পর্যন্তই বাস যেত, তারপরে আর যেত না। রাস্তা ছিল দুই পাশে ইট বিছানো, সেটা দিয়েই বাস যেত। সেখানে নামার পরে ট্রাংক নামালাম। এখন যদি নৌকায় উঠি, তাহলে আমাকে যদি চেক করে, তাহলে তো দৌড়াতে পারব না। আমি করলাম কী, একটা ঘোড়াওয়ালা ঠিক করলাম। সেখান থেকে গেলাম জয়পাড়া মজিদ দারোগার বাড়ি, দোহার থানায়। সেখানে গিয়ে উঠি।
এদিকে (আবুল খায়ের) খায়ের সাহেব তো আমাকে বিদায়ের সাথে সাথে বের হয়ে আমাকে পায়নি। এত জলদি যে আমি বের হয়ে যাব, এটা উনি চিন্তা করেননি। আমাকে না পেয়ে আবার তিনি গেছেন পাগল হয়ে। তিনি মনে করেছেন, আমাকে মনে হয় ধরে নিয়ে গেছে, মেরে ফেলেছে। আমার যেই বাড়িতে যাওয়ার কথা তিনিও সেই বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। এদিকে আমিও পৌঁছেছি। আমি তো ওখানে গিয়ে বলিনি, বলেছি অফিসের কাগজপত্র। এটার মধ্যে কী আছে, এত কিছু বলিনি।
এটা কার বাড়ি ছিল?
এটা ছিল জয়পাড়া মজিদ দারোগার বাড়ি। আমি বলেছি, স্যার পাঠিয়েছেন, কিছু কাগজপত্র আছে। এদিকে খায়ের সাহেব চলে এসেছেন। আমাকে দেখে বলেন, ‘ও এসেছ তুমি?’ বললেন, বসো। আমরা ওখানে খাওয়াদাওয়া করলাম। পরের দিন সকালে সেখান থেকে চলে এলাম।
ট্রাংকটা কি তাহলে মজিদ দারোগার বাসাতেই ছিল শেষ পর্যন্ত?
কিছুদিন ছিল মজিদ দারোগার বাসায়। তারপর খায়ের সাহেবের ফ্যামিলির কেউ তো আর তখন ঢাকায় নেই। দোহারের চরকোশায়ই নামে একটা গ্রাম আছে, জয়পাড়ার পাশেই। আমাকে (তিনি) বললেন, ‘তুমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে আসো। চরকোশায়ই দানেশ খাঁর বাড়িতে চলে এসো।’
দানেশ খাঁর ভাই উমেদ খাঁ আমার পরিচিত ছিলেন। দানেশ খাঁ যে তারই ভাই, এটা তখনও আমি জানতাম না। একদিন পর তার ফ্যামিলি নিয়ে ফিরলাম। তিনি যে পরের দিনই কলকাতা চলে যাবেন, এই কথাটা আবার আমার থেকে গোপন করে গেছেন। আমাকে শুধু বলেছে, ‘যা ঘটবে, শুধু ছবি তুলে রাখবা।’ এই দায়িত্বটা দিয়ে গিয়েছিলেন।
আমাদের মধ্যে কিছু নন-বেঙ্গলি ছিল। তারা বলত যে, ‘আমজাদ, তুমি বঙ্গবন্ধুর ভাষণও সরালা, আবার পরিচালককেও সরায় দিলা।’
আমি ভয় পেলাম। যদি এসব প্রকাশ করে দেয়, আমি তো মরে যাব। তখন আমি আত্মগোপনে এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে গেলাম। পরে অবশ্য ফিরে আসি।
তাহলে ভাষণের ভিডিওটা কোথায় ছিল? চরকোশাই?
ভাষণটা তো চরকোশাই নিয়ে গেল। উমেদ খাঁর ধানের গোলায় চলে গেল ওটা। খায়ের সাহেব যখন কলকাতায় চলে গেলেন, সেখানে বাংলাদেশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করে মুক্তিবাহিনী পাঠিয়ে ওটাকে নিয়ে যান ভারতে। যুদ্ধ চলাকালে পুরো সময় ওটা ভারতেই ছিল। অনেকে জানে না কোথায়। দেশ যখন স্বাধীন হলো, তখন উনি ওটা নিয়ে দেশে ফিরলেন।
আরও পড়ুন:২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাভার থেকে গুম হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন মেধাবী শিক্ষার্থী দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ওয়ালি উল্লাহ এবং আল-ফিক্হ অ্যান্ড ল’ বিভাগের আল মুকাদ্দাসকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির মানববন্ধনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধানের জন্য পুনর্গঠিত ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়।
এ কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান শেখ এবং সদস্য সচিব হিসেবে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দায়িত্ব পেয়েছেন। এছাড়া সদস্যরা হলেন দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ হুম তরীকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহা. খাইরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা দায়রা জজকোর্টের অ্যাডভোকেট এস এম শাতিল মাহমুদ।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, আমি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি ভাইবা বোর্ডের সদস্য হিসেবে। কমিটির ব্যাপারে আমি আপাতত কিছু জানি না। শুনেছি ডিপার্টমেন্টে একটা চিঠি এসেছে। ক্যাম্পাসে ফিরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের অবদান অব্যাহত রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকা আরও সুসংগঠিত করা জরুরি। এর মধ্যে স্পষ্ট কমান্ড কাঠামো ও সকল বাহিনীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় নিশ্চিত করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাতির প্রতি অঙ্গীকার করেছি— এমন একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য যা ভোটার উপস্থিতি, নতুন ও নারী ভোটারের অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে বৈশ্বিক আস্থা এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উৎসবমুখর পরিবেশের দিক থেকে আলাদা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান উপদেষ্টাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে তিনি গুজবের প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পুরো সেনাবাহিনী সরকারের সব উদ্যোগ ও কর্মসূচি সফল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সৈয়দপুরে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার বিকাল ৫ টায় সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের রংপুর রোডে বাংলা হাইস্কুল মাঠে আলোচনা ও সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এরপর আলোচনা সভা শেষে র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের শহীদ ডা. জিকরুল সড়কসহ সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে র্যালিটি শেষ হয়।
সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকারের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন আকতার শাহীনের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম জনি, কাজী একরামুল হক, দেলোয়ার চৌধুরী, জিয়াউল হক জিয়া, সি. যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন পাপ্পু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, হাফিজ খান, বিএনপি নেতা শওকত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমাণিক, এমএ পারভেজ লিটন, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী মন্টু, প্রচার সম্পাদক আবু সরকার, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও নীলফামারী জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সৈয়দপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম লোকমান, সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান কার্জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নীলফামারী জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ রশিদুল হক সরকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওসমান প্রমুখ।
নেতারা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতারা দল গোছানোর পাশাপাশি ভোটের জন্য সাধারণ জনগণের পাশে গিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এই সময়ে সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা- ১৪ ইউনিয়ন ও সৈয়দপুর পৌর এলাকার ১৫ ওয়াডের বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের এই দলটি গঠন করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল -জাগদল- নামে একটি দল গঠন করেন। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে ঢাকার রমনা ময়দানে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন।
নোয়াখালীর মাইজদী শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে হামলা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার সাড়ে ১১ টার দিকে নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনে ওই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১ টায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফাহিম হাসান খানের নেতৃত্বে জেলা শহরের সড়কের দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেসময়ে সড়কের পাশে অবৈধভাবে থাকা বিভিন্ন গাড়ি ডাম্পিং করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ির মালিক ও চালকরা মাইজদী প্রধান সড়ক অবরোধ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক টিম উপস্থিত হয়ে দুপুর একটা দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীতে বাস, প্রাইভেট কার ও মাইক্রো চালকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্টভাবে স্ট্যান্ডের জায়গা দেওয়া হয়েছে। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোচালকদের জন্য নোয়াখালী নতুন বাসস্ট্যান্ডের একটি অংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সেখানে তাদের গাড়ি না রেখে নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনের প্রধান সড়কের উপরে এলোমেলোভাবে তাদের গাড়ি রাখেন। এতে সারা শহর জুড়ে যানজট তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে একাধিকবার এ বিষয়ে নিষেধ করা হলেও তারা তার তোয়াক্কা করছেন না।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোনায় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১১টায় ছোট বাজারের দলীয় কার্যালয় থেকে জেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি জোলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় পাবলিক হলে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
নেত্রকোনা জেলা বিএনপির নব নির্বাচিত সভাপতি বিশিষ্ট অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাজেজুল ইসলাম ফারাস সুজাতের সঞ্চালনায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম শফিকুল কাদের সুজা, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান পাঠান, জেলা কৃষক দলের সভাপতি সালাহউদ্দিন খান মিল্কী, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন ফারাস সেন্টু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন, জেলা বিএনপি নেতা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনি, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান মশু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সোলায়মান হাসান রুবেল, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আকিকুর রেজা খান খোকন, জেলা তাতী দলের সভাপতি সাইফ উদ্দিন আহমেদ লেলিন, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক হাফিজা ইসলাম, জেলা ওলামা দলের সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা কাজী তসনীম আলম ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি অনীক মাহবুব চৌধুরী প্রমুখ।
পরে বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি এবং দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
দুই প্রবাসীর দেওয়া অর্থে নতুন ঘর পেল নওগাঁর রাণীনগরে সেই দুই অসহায় শিশু। উপজেলার কুজাইল হিন্দুপাড়া গ্রামের প্রীতম ও প্রিয়সী নামের দুই শিশু।
কাকার কাঁধে ভর করে স্বপ্ন দেখতে চায় প্রীতম ও প্রিয়সী দুই ভাই-বোন। এমন সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে অনেকের। এরপর স্থানীয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন সরদার ও সাংবাদিক রায়হানের মাধ্যমে জানতে চায় রাজু এবং শেখ আলী নামের দুই সৌদি প্রবাসী।
সোমবার দুই প্রবাসীর অর্থে বানানো ঘর হস্তান্তর করা হয়। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ১১ বছরের ৭ম শ্রেণির প্রিতম ও ৭ বছরের ২য় শ্রেণির প্রিয়সী দুই ভাই-বোন। শিশু দুটির- মা মারা গেছে ৬ মাস আগে। বাবা কম বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ায় তেমন কাজ করতে পারে না। মা মারা যাওয়ায় অন্ধকার নেমে আসে তাদের জীবনে। সহায় সম্বলহীন দুই শিশুর থাকার ঘরের খুবই প্রয়োজন ছিল। পড়াশোনাও করতে চায়। হাল ধরে ডিগ্রি পাস কাকা পলাশ চন্দ্র প্রামাণিক। সেই কাকার কাঁধে ভর করেই স্বপ্ন দেখতে চায় তারা। কিন্তু কাকা পলাশের জীবনই চলে কোনোমতে, বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে সিঙ্গাড়া বিক্রি করে।
এমন বিষয় নিয়ে গত মাসে বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নজরে আসে অনেকের।
এর মধ্যে স্থানীয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন সরদার এবং সাংবাদিক রায়হানের করা ভিডিওতে প্রিতম ও প্রিয়সী নামের অসহায় দুই শিশুকে নতুন ঘর করে দেওয়ার জন্যে আর্থিক সহায়তা কামনা করা হয়। ভিডিওটি কাশিমপুর ইউনিয়নের সৌদি আরব প্রবাসী রাজু এবং শেখ আলীর নজরে আসলে তারা দুইজন শিশু দুটির থাকার ঘরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে।
এদিকে ঘর তৈরি করতে সকল দায়িত্ব পালন করেছে মতিন সরদার ও রায়হান। অপরদিকে তাদের সাহস ও উৎসাহ দিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ ও সাইফুল ইসলাম।
নতুন ঘর পেয়ে খুবই খুশি প্রিতম ও প্রেয়সী দুই ভাই-বোন। যাদের সহযোগিতায় তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে তাদের সকলের প্রতি জানালেন ধন্যবাদ। এখন তাদের স্বপ্ন ও চাহিদা ভালোভাবে যেন পড়াশোনা করতে পারে। তাই চেয়েছেন সকলের দোয়া ও ভালোবাসা।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক রায়হান বলেন, ‘কিছুদিন আগে সাংবাদিক বিকাশের করা একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারি দুটি অসহায় শিশুর করুণ কাহিনী। এরপর বিষয়টি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন ভাইকে জানালে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এরপর এই পর্যন্ত করতে পেরেছি।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন সরদার বলেন ‘আমি ও রায়হান সব সময় ভিডিওর মাধ্যমে গরিব ও অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রীতম ও প্রিয়সীর ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওটি সৌদি প্রবাসী রাজু এবং শেখ আলীর নজরে আসার পর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সঙ্গে সঙ্গেই নগদ ২৫ হাজার টাকা দেয়। আমার ভিডিওর কারণে যদি কেউ উপকৃত হয় তখন খুবই ভালো লাগে।
স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম এমন কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন ‘সমাজে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের অবশ্যই উচিত অসহায়দের সাহায্য করা। সাহায্যকারী প্রবাসী দুই ভাইকেও বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে দুই শিশু যেন আগামী দিনগুলোতে ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সেই জন্য তাদের জন্য স্থায়ী একটা আয়ের ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
এ ধরনের জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো রাকিবুল হাসান। ওই দুই শিশুর বিষয়ে অবগত আছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।
সড়ক নিরাপত্তা ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে দেশের অন্যতম ইস্পাত প্রস্তুতকারী শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের পক্ষ থেকে ট্রাফিক সাইন ও বিভিন্ন সামগ্রি হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার (৩১ আগস্ট) উত্তরা ৪ নং সেক্টরে হাইওয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব সামগ্রি হস্তান্তর করা হয়। কেএসআরএমের পক্ষে বিজনেস রিসার্চ অ্যাড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের
মহাব্যবস্থাপক কর্নেল (অব.) আশফাকুল ইসলাম হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়ার কাছে এসব সামগ্রি হস্তান্তর করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (এডমিন) ইমতিয়াজ আহমেদ, কেএসআরএমের সহ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, মো. নাজমুল হুদা, ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কর্মকর্তা (ব্র্যান্ড) মো. মুনমুন রহমান, প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমানসহ হাইওয়ে পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে কেএসআরএম সরকার ও জনগণের পাশে থাকে। অতীতের মতো এবারও এগিয়ে এসেছে সবার আগে। আমরা আগামীতেও কেএসআরএম আমাদের পাশে থাকবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছি। পাশাপাশি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি কেএসআরএম সংশ্লিষ্ট সকলকে।
কেএসআরএমের মহাব্যবস্থাপক কর্নেল আশফাকুল ইসলাম বলেন, কেএসআরএম বরাবরের মতো দেশ ও দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সবসময় যুক্ত থাকে। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্য