× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বিশেষ
যেভাবে রক্ষা পেল ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওটেপ
google_news print-icon

যেভাবে রক্ষা পেল ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওটেপ

যেভাবে-রক্ষা-পেল-৭-মার্চের-ভাষণের-ভিডিওটেপ
আমজাদ আলী খন্দকার। ছবি: নিউজবাংলা
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওটেপ একটি ট্রাংকে ভরে লুকিয়ে ঢাকার বাইরে দোহারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি ধানের গোলায় সেটি লুকিয়ে রাখা হয়। তা না হলে বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক ভাষণের কোনো ভিডিওচিত্র থাকত না।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আরও এক দিক থেকে ছিল অনন্য। এটি মুক্তিযুদ্ধের আগে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভিডিও রেকর্ডেড ভাষণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার সেই ভাষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সাত বাঙালি কর্মকর্তা। শুধু ভিডিওচিত্র ধারণই নয়, এটি ডেভেলপের পাশাপাশি সংরক্ষণও তারা করেছিলেন।

২৫ মার্চ কালরাতের পর অবরুদ্ধ ঢাকা শহরের সরকারি দপ্তর থেকে তারা সেই ভিডিওটেপ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করেছেন তারা। সে সময় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ক্যামেরা সহকারী ছিলেন আমজাদ আলী খন্দকার। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভিডিওটেপ সরিয়ে কীভাবে তারা দোহারের একটি বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন, সে গল্প তিনি বলেছেন নিউজবাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আশিক হোসেনের কাছে।

একাত্তরে তো আপনারা পাকিস্তান সরকারের কর্মচারী। তারপরও ৭ মার্চের ভাষণ ধারণ করলেন কীভাবে? আর কোনো বিভাগ কি আপনাদের সঙ্গে ছিল?

৭ মার্চ কিন্তু একদিনে আসেনি। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের পথেই ৭ মার্চ এসেছে। এই ভাষণ ধারণ করার জন্য আমাদের পরিচালকের নেতৃত্বে দুই দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমরা কে কী করব, সেগুলো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আমরা তখন মূলত ছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ফিল্ম ডিভিশনের স্টাফ। আমরাই এটা করেছি। তখন পাকিস্তানের আরও কিছু সংস্থা, যেমন ডিএফপি ছিল। তারা কিন্তু এ কাজ করেনি। তারা কিন্তু মাঠের ধারেকাছেও আসেনি। আমরা ফিল্ম ডিভিশন এ কাজটা করেছি। আমাদের ফিল্ম ডিভিশনের পরিচালক ছিলেন আবুল খায়ের (খ্যাতিমান অভিনেতা) সাহেব। ক্যামেরাম্যান ছিলেন জি জেড এম এ মবিন, এম এ রউফ। অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম আমি, এস এম তৌহিদ আর সৈয়দ মইনুল আহসান। দুইজন ছিল লাইটবয়; জুনায়েদ আহমেদ আর একজন হাবিব। লাইটবয়রা আমাদের সহযোগিতা করত। আর আমাদের পরিচালক জানত, কে কী কাজ করতে পারে।

মঞ্চে মূল কাজটা কীভাবে করলেন? কার কী দায়িত্ব ছিল? প্রস্তুতিই বা শুরু করলেন কীভাবে?

মবিন সাহেব ছিলেন ফিল্মের ক্যামেরাম্যান মূলত। আর আমি ছিলাম এফডিসির রাইজিং ক্যামেরাম্যান। পরিচালক মনে করলেন, এই দুজনকে যদি মঞ্চে দিই তাহলে তারা ভালো রেকর্ড করতে পারবে। আমাদের দুজনকে মঞ্চে দিলেন। রউফ সাহেব আর তৌহিদকে দায়িত্ব দিলেন, তারা ঘুরে ঘুরে ছবি নেবে। আর মইনুলকে দিলেন এই যে টেপ রেকর্ডার বসবে, সেইটা চালুর দায়িত্ব।

যেভাবে রক্ষা পেল ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওটেপ

তখন কলরেডি ছিল। তারা আগের দিন পুরো মাঠে শত শত মাইক বসিয়েছে। তারা হাইভোল্টেজ লাইন এনেছিল। আমরা ক্যামেরা চালাব কারেন্ট দিয়ে, ব্যাটারি দিয়ে যদি চালাই, তাহলে সে ক্যামেরায় অনেক আওয়াজ হবে, কখন ব্যাটারি বসে যাবে আমরা বুঝতে পারব না।

সিংক মোটর বলে একটি জিনিস আছে। সেটা দিয়ে আমরা ক্যামেরা চালালাম, যাতে করে কোনো শব্দ না পায়। সাউন্ডপ্রুফ ক্যামেরা নিয়ে গেলাম। কারণ, আমাদের ক্যামেরায় যদি আওয়াজ হয়, একটা লোকও মাঠে থাকবে না। এত আওয়াজ হবে, সব মানুষ চলে যাবে। এর জন্য আগের দিন বিকেলে একটা কয়েল তার নিয়ে গেলাম কলরেডির কাছে। তখন যারা কাজ করছিল, তারা আমাকে আর লাইন দেবে না। পরে কলরেডির মালিক আসার পরে আমরা লাইন পেলাম। তো তখনই ভিডিওধারণের জন্য লাইন টেনে রাখা হলো।

পরের দিন ৭ মার্চ, সকাল ৭টায় ক্যামেরা নিয়ে মাঠে চলে গেলাম।

যেভাবে রক্ষা পেল ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওটেপ

৭ মার্চ সকালে যখন রেসকোর্স ময়দানে গেলেন, তখন কী দেখলেন? আপনাদের ভয় করেনি?

সকালে মাঠে গিয়ে দেখি, মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। একদিকে কালীমন্দির, এদিকে টিএসসি, একদিকে ঢাকা ক্লাব আর ওদিকে হাইকোর্ট। তখন তো কোনো গাছপালা ছিল না। পুরো মাঠ ছিল খালি। তো আমরা গিয়ে দেখলাম, পুরো মাঠ মানুষ দিয়ে ভরে গেছে। আমরা তখন ক্যামেরা-ট্যামেরা লাগিয়ে সব রেডি করে রেখেছি।

এর মধ্যে একটা গুজবও ছিল যে, বোমা মেরে সব উড়িয়ে দেবে। প্রস্তুতিও নাকি ছিল। আমরা তো তখন ভয় পেয়েছি। এই যে সাতজনের নাম বললাম, আমরাই প্রথম প্রকাশ্যে মাঠে এসেছি। আর কেউ কিন্তু আসেনি। তখন আমরা পাকিস্তান সরকারের কর্মচারী। গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরা উপস্থিত ছিল। তারা আমাদের দেখেছে যে আমরা কাজ করছি। ভয় ছিল, ধরে নিয়ে যাবে। তবে সাহস ছিল, বঙ্গবন্ধু আমাদের যেভাবেই হোক বের করে নিয়ে আসবে। আটকে রাখতে পারবে না। আর মরে গেলে তো মরেই গেলাম।

এভাবেই আমরা কাজ করলাম। ভয় আমাদের ছিল না। যখন একবার কাজের নেশায় চলে গিয়েছি, তখন আর ভয় নাই। তখন চিন্তা, কীভাবে ফোকাস থাকবে।

যারা ফিল্মের ক্যামেরাম্যান তারা বুঝবে কী কষ্ট করে আমরা এ কাজটা করেছি। ম্যাগাজিন, ফিল্ম চেঞ্জিং। ব্যাগ সব সাইডে রাখা আছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট দুজন সাইডে আছে। আমাদের ৫০০ ফিট লোড করলে মাত্র ৫ মিনিট শ্যুট করা যায়। এক ঘণ্টা শ্যুট করা যায় এ পরিমাণ ফিল্ম আমাদের কাছে ছিল।

যেভাবে রক্ষা পেল ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিওটেপ

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সেই মুহূর্তের কথা আপনার মুখে শুনতে চাই।

বঙ্গবন্ধু আসলেন। এত মানুষ হয়েছে, কিন্তু কারও মুখে কোনো কথা নেই। এই যে মাইকে বলে ডানে আসেন বামে আসেন, বসেন, এসব কোনো কথা বলতে হয়নি। সব একদম সাইলেন্ট। মানুষের চিন্তাটা এ রকম ছিল যে, এই যে এত দিনের এক আন্দোলন, এত সংগ্রাম হয়েছে, এটা তার ফসল। আজকে তিনি কী নির্দেশ দেন তা শুনে বাড়ি যাব। সবাই সেটা শুনতেই এসেছে। একটা কথাই মানুষ শুনতে এসেছে যে, বঙ্গবন্ধু কী বলেন। এ জন্যই সবাই চুপ করে বসে ছিল। বঙ্গবন্ধু আসলেন একদম বীরের মতো। মঞ্চে উঠলেন। আশেপাশে যারা ছিল, কারও সাথে কোনো কথা না বলে সরাসরি ডায়াসে এসে চশমা রেখে উনি ভাষণ শুরু করলেন। একটানা বলে গেলেন। কারও কোনো স্লিপও নিলেন না, কারও কোনো ইশারাও শুনলেন না। কী বলবেন, আগে থেকে কোনো কিছু ঠিকও করা ছিল না। থাকে না, মানুষের ভাষণ লেখা থাকে। এ রকম কিছুই ছিল না। উনি অনর্গল ওনার কথা বলে গেলেন। আর যা বললেন, তা তো রেকর্ডে আছেই, আপনারা শুনেছেন। তখন পাকিস্তান আমল। তার মধ্যেও তিনি বললেন স্বাধীনতার কথা।

রেকর্ড তো করলেন। তারপর এটা ডেভেলপ করলেন কীভাবে? কেউ সন্দেহ করেনি?

আমরা ভাষণ রেকর্ড করলাম। আমাদের অফিস ছিল সচিবালয়ের ২২ নম্বর শেডে। অর্ধেকটা আমাদের, আর বাকিটা অন্য ডিপার্টমেন্টের। এখন সমস্যা হলো এই যে, বঙ্গবন্ধুর নামে কীভাবে ফিল্মগুলো ডেভেলপ করে আনব। ক্যামেরাম্যানের দায়িত্ব হলো শ্যুট করে দেয়া। এখন ডেভেলপের দায়িত্ব তো আমাদের ওপরে। তখন ডেভেলপ করতে হতো এফডিসিতে। এফডিসিতে গেলাম। কিন্তু ফিল্মের উপরে লিখব কী? সে বছর একটা সাইক্লোন হয়েছিল। তো একটা ফিল্মের উপর লেখলাম, ‘সাইক্লোন’। অন্যগুলো কোনোটাতে ‘নির্বাচন’। এভাবে লিখে ‘এক’, ‘দুই’ দিয়ে আমরা ডেভেলপে দিতাম। তারপর সেগুলো রক্ষণও আমরাই করতাম। পরিচালকের একটা আলমারি ছিল। সেখানে সারিবদ্ধভাবে রাখা হতো। আমরা এভাবেই ফিল্ম প্রসেস করে নিয়ে আসলাম।

২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হলেন। দেশের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিল সেনাবাহিনী। তখন তো তারা অনেক নথি নষ্ট করে ফেলে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রক্ষা পেল কীভাবে?

২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে গেল পাকিস্তানিরা। এরপর আর্মিরা প্রায় সব অফিসের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিল। সচিবালয়ে আর্মির আনাগোনা বেড়ে গেল। একদিন আমাদের পরিচালক (আবুল খায়ের) ডেকে বললেন, ‘আমজাদ, তোমাকে একটা দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সেটা এই মুহূর্তে এবং আজই।’ আমি বললাম, ‘কী করতে হবে স্যার।’ তিনি আমাকে নানা কারণে অনেক বিশ্বাস করতেন। যা হোক, আমাকে বললেন, ‘তুমি এখনই সদরঘাট যাও।’ তখন সবকিছু কিনতে হলে সদরঘাট যেতে হতো। আমাকে তিনি বললেন, ‘সদরঘাট থেকে একটা ট্রাংক নিয়ে এসো।’ টাকা দিয়ে দিলেন, আমি ৪২ ইঞ্চির একটি বড় কালো ট্রাংক নিয়ে আসলাম। উনাকে দেয়ার পরে এটাতে ভরলেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, যেটা আমরা ৭ মার্চ রেকর্ড করেছিলাম, সেটা। এর সাথে কাজী নজরুল ইসলামের উপরে একটা ডকুমেন্টারি আমরা করেছিলাম গোপনে, সেটা। সাথে বঙ্গবন্ধুর আরও কিছু ছবি ট্রাংকে ভরলেন। এরপর আমাকে বললেন, ‘তোমাকে আজই বের হয় যেতে হবে।’ আমি বললাম, ‘কোথায় যাব?’ বললেন, ‘জয়পাড়া যাবা।’ কোথায় যেতে হবে ঠিকানা দিয়ে দিলেন। আমি বললাম, ‘স্যার আমার বাবার সাথে একটু দেখা করে আসি।’ উনি আমাকে পয়সা দিয়ে বললেন, ‘যাও।’ আমি বাবাকে বললাম, ‘বাবা, আমার আসতে দুই দিন দেরি হবে, চিন্তা করবেন না।’ ফিরে আসার পর আমাকে তিনি (আবুল খায়ের) রুমের ভেতর নিয়ে গেলেন। আমার হাতটা ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললেন, ‘আমজাদ! আল্লাহ হাফেজ!’ তার চোখগুলো এত বড়বড় হয়ে গেল। উনি জানতেন, এই ছেলে যদি বের হয়ে যায়, আর ধরা পড়ে, তাহলে এখনই শেষ হয়ে যাবে। আর ফিরে আসবে না।

সারা শহরে তখন আর্মির প্রহরা। এর মধ্যে বের হলেনই বা কীভাবে?

প্রথম যে সংকটটা হলো: সচিবালয় থেকে বের হব কীভাবে? সব জায়গায় তো পাঞ্জাবিরা আছে, বিহারিরা আছে। গেট পাস দিবে কে? যে গেট পাস দেবে, সেই তো পরে ধরা পড়বে। এখন তাহলে গেট পাস ছাড়াই আমাকে বের হতে হবে। কিন্তু কীভাবে? তখন ২ নম্বর গেটে একজন সার্জেন্ট ছিলেন ফরিদ, বাঙালি। তার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তাকে আমি বললাম, বের হতে চাই, এই হচ্ছে ব্যাপার। সে যেহেতু বাঙালি, আমাদের বিষয়ে সব সে জানত আর কী। তো আমাকে বলল, ‘ঠিক আছে অসুবিধা নাই, তুমি বেবি নিয়ে আসো, আমি তোমাকে বের করে দেব।’ দ্বিতীয় গেট দিয়ে তখন শুধু ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। ফরিদ করল কী, পল্টন থেকে যে গাড়িগুলো আসছিল ওগুলোকে আটকে দিয়ে আমাকেসহ বেবিটা বের করে দিল। আমার সাথে যারা চাকরি করত, অনেককেই বললাম, ‘আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আয়।’ কিন্তু কেউ আসল না। আমি একাই আল্লাহর নাম নিয়ে বের হয়ে গেলাম। বেবিওয়ালাও বুঝল, এটা মনে হয় বিশেষ ব্যবস্থা। সে-ও কোনো দিকে না তাকিয়ে দিল এক টান।

প্রেস ক্লাবের সামনে আর্মি একটা বড় ট্রাকের উপরে বসে আছে। তার নিচ দিয়েই বেবিটা চলে গেল। ওরা আমাকে ডাকলও না, আমিও তাকালাম না। ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ করতে করতে চলে গেলাম।

কার্জন হল, চানখাঁর পুলের সামনে দিয়ে গেলাম চকবাজার। চকবাজার গিয়ে একটু স্বস্তি পেলাম। কিছু লোকজন দেখা যায়। আর সব রাস্তা ফাঁকা। আর্মি টহল দিচ্ছে। এখান থেকে সোয়ারি ঘাটে যাওয়ার পর দুটো ছেলে এগিয়ে এলো ট্রাংক নিতে। আমি তাদের বললাম, ‘তোমরা পারবা না। বড় কাউকে ডাকো।’ পরে একজন এলো। ট্রাংক নিয়েই বলে উঠল, ‘ইসমে কেয়া হ্যায় ইতনা ওজন।’ আমি বললাম, ‘নিয়ে যা, কোনো কথা কইস না। আমাকে পার করে দে আগে।’ এখান থেকে এভাবে জিঞ্জিরা পর্যন্ত গেলাম। সেখানে দেখি, শয়ে শয়ে লোক জীবন নিয়ে পালাচ্ছে। বোঝেন না, জীবনের ভয়ে ওরা পালায়, আর আমি ছুটছি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাঁচাতে।

দেখলাম একটা বাস ছেড়ে দিচ্ছে। আমি সেটার পেছনে জোরে এক থাপ্পড় দিলাম। তখন তরুণ ছিলাম, চেহারার মধ্যে একটা অন্য রকম ইয়ে ছিল। ড্রাইভার তখন পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখল, কী বুঝল জানি না। বাস থামিয়ে দিল। আমাকে ইঙ্গিত দিল উপরে তুলে দেন। আমি বাসের ছাদে উঠে পড়লাম। তারপরেও কিন্তু শান্তি পেলাম না। ভয় হলো (আর্মি) যদি আমার পিছু নেয়, যদি দেখে ফেলে তাহলে কী হবে?

তখন এক বাঙালি অন্য বাঙালিকে খুব সহযোগিতা করত। জিঞ্জিরা থেকে গেলাম বক্সনগর নামে একটা জায়গা আছে, সেখানে। এই পর্যন্তই বাস যেত, তারপরে আর যেত না। রাস্তা ছিল দুই পাশে ইট বিছানো, সেটা দিয়েই বাস যেত। সেখানে নামার পরে ট্রাংক নামালাম। এখন যদি নৌকায় উঠি, তাহলে আমাকে যদি চেক করে, তাহলে তো দৌড়াতে পারব না। আমি করলাম কী, একটা ঘোড়াওয়ালা ঠিক করলাম। সেখান থেকে গেলাম জয়পাড়া মজিদ দারোগার বাড়ি, দোহার থানায়। সেখানে গিয়ে উঠি।

এদিকে (আবুল খায়ের) খায়ের সাহেব তো আমাকে বিদায়ের সাথে সাথে বের হয়ে আমাকে পায়নি। এত জলদি যে আমি বের হয়ে যাব, এটা উনি চিন্তা করেননি। আমাকে না পেয়ে আবার তিনি গেছেন পাগল হয়ে। তিনি মনে করেছেন, আমাকে মনে হয় ধরে নিয়ে গেছে, মেরে ফেলেছে। আমার যেই বাড়িতে যাওয়ার কথা তিনিও সেই বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। এদিকে আমিও পৌঁছেছি। আমি তো ওখানে গিয়ে বলিনি, বলেছি অফিসের কাগজপত্র। এটার মধ্যে কী আছে, এত কিছু বলিনি।

এটা কার বাড়ি ছিল?

এটা ছিল জয়পাড়া মজিদ দারোগার বাড়ি। আমি বলেছি, স্যার পাঠিয়েছেন, কিছু কাগজপত্র আছে। এদিকে খায়ের সাহেব চলে এসেছেন। আমাকে দেখে বলেন, ‘ও এসেছ তুমি?’ বললেন, বসো। আমরা ওখানে খাওয়াদাওয়া করলাম। পরের দিন সকালে সেখান থেকে চলে এলাম।

ট্রাংকটা কি তাহলে মজিদ দারোগার বাসাতেই ছিল শেষ পর্যন্ত?

কিছুদিন ছিল মজিদ দারোগার বাসায়। তারপর খায়ের সাহেবের ফ্যামিলির কেউ তো আর তখন ঢাকায় নেই। দোহারের চরকোশায়ই নামে একটা গ্রাম আছে, জয়পাড়ার পাশেই। আমাকে (তিনি) বললেন, ‘তুমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে আসো। চরকোশায়ই দানেশ খাঁর বাড়িতে চলে এসো।’

দানেশ খাঁর ভাই উমেদ খাঁ আমার পরিচিত ছিলেন। দানেশ খাঁ যে তারই ভাই, এটা তখনও আমি জানতাম না। একদিন পর তার ফ্যামিলি নিয়ে ফিরলাম। তিনি যে পরের দিনই কলকাতা চলে যাবেন, এই কথাটা আবার আমার থেকে গোপন করে গেছেন। আমাকে শুধু বলেছে, ‘যা ঘটবে, শুধু ছবি তুলে রাখবা।’ এই দায়িত্বটা দিয়ে গিয়েছিলেন।

আমাদের মধ্যে কিছু নন-বেঙ্গলি ছিল। তারা বলত যে, ‘আমজাদ, তুমি বঙ্গবন্ধুর ভাষণও সরালা, আবার পরিচালককেও সরায় দিলা।’

আমি ভয় পেলাম। যদি এসব প্রকাশ করে দেয়, আমি তো মরে যাব। তখন আমি আত্মগোপনে এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে গেলাম। পরে অবশ্য ফিরে আসি।

তাহলে ভাষণের ভিডিওটা কোথায় ছিল? চরকোশাই?

ভাষণটা তো চরকোশাই নিয়ে গেল। উমেদ খাঁর ধানের গোলায় চলে গেল ওটা। খায়ের সাহেব যখন কলকাতায় চলে গেলেন, সেখানে বাংলাদেশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করে মুক্তিবাহিনী পাঠিয়ে ওটাকে নিয়ে যান ভারতে। যুদ্ধ চলাকালে পুরো সময় ওটা ভারতেই ছিল। অনেকে জানে না কোথায়। দেশ যখন স্বাধীন হলো, তখন উনি ওটা নিয়ে দেশে ফিরলেন।

আরও পড়ুন:
ওআইসিভুক্ত ৫৭ দেশের শিল্পীদের নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ইয়ুথ আর্ট কম্পিটিশন’
‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির ৫২ বর্ষপূর্তিতে ডাকটিকিট অবমুক্ত
বঙ্গবন্ধুর ২১ ফেব্রুয়ারি ও বাংলা ভাষাপ্রীতি
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকা

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বিশেষ
Bangladesh has strengthened anti human trafficking action US TIP Report

বাংলাদেশ মানবপাচার-বিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করেছে : মার্কিন টিআইপি রিপোর্ট

বাংলাদেশ মানবপাচার-বিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করেছে : মার্কিন টিআইপি রিপোর্ট

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের মানবপাচার (টিআইপি) বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে। দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের চাপ সংশ্লিষ্ট চলমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মানবপাচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য এবং টেকসই অগ্রগতির স্বীকৃতি এটি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করলেও আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ মানবপাচার রোধে ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।

ভুক্তভোগী শনাক্তকরণ এবং সুরক্ষা পরিষেবা বৃদ্ধি, সম্মুখ সারির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সরকার ১ হাজার ৪৬২ জন পাচারের শিকারকে শনাক্ত করেছে। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১৪৪ জন যৌনকর্মী হিসেবে পাচারের শিকার হয়েছে এবং ২৮৫ জনকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৩৩ জন অন্যান্য ধরনের পাচারের শিকার হয়েছে। পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে একই সময়ে ১ হাজার ২১০ জন ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করার পর সরকার তাদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ, প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এসব ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা ও আশ্রয়ের সুযোগও প্রদান করা হচ্ছে।

সরকার সুশীল সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ভুক্তভোগীদের সেবার ব্যাপারে পুলিশ, অভিবাসন কর্মকর্তা ও শ্রম পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মানবপাচার-বিরোধী মানদণ্ডের সঙ্গে জাতীয় চর্চাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মূল পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।


আন্তর্জাতিক মানবপাচার নেটওয়ার্ক তদন্তে ইন্টারপোল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বৈশ্বিক অংশীজনদের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান সহযোগিতার কথাও স্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

পাচারবিরোধী পক্ষগুলোকে শক্তিশালী করার এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ় করার জন্য সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরা হয়েছে এতে।

সরকার জাতীয় মানবপাচার বিরোধী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শক্তভাবে পাচার প্রতিরোধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাচার প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য এ বছর ৬২১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। আগের বছরের তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের পাচার-বিরোধী কমিটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মুদ্রিত পত্রিকা, রেডিও এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।

এভাবে প্রচারের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন, শ্রম অধিকার এবং প্রতারণামূলক নিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ১০৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে এবং বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রস্থান-পূর্ব প্রশিক্ষণ সেশন চালু করেছে। এর মধ্যে নারী গৃহকর্মীদের জন্য ৩০ দিনের একটি বিশেষায়িত কোর্সও রয়েছে।

বিদেশে আমাদের দেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের শোষণের ঝুঁকি কমানোই এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য।

সরকার মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো প্রধান গন্তব্যস্থলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি জোরদার করেছে। এছাড়া, অভিবাসী শ্রমিকদের অতিরিক্ত ফি থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়োগকর্তা প্রদত্ত নিয়োগ মডেল প্রতিষ্ঠা করেছে।

অভিবাসীদের ভবিষ্যত বিবেচনায় জাতীয় একটি নীতিও চালু করা হয়েছে। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গৃহীত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা এটি। পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরাও এর অন্তর্ভুক্ত, যেন প্রত্যাবর্তনের পর তারা জীবিকার সুযোগ পায়।

ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যাবাসন এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা সহজ করার জন্য ২০১৫ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে পাচারবিরোধী সমন্বয় জোরদার করার জন্য ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছে।

প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের চলমান সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা সব ধরনের মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্তরে স্থান পাওয়ার বিষয়টি আইনের শাসন জোরদার, অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা এবং পাচারের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতি দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতিকে নির্দেশ করে। সরকার মানবপাচার রোধে কাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : বাসস

মন্তব্য

বিশেষ
Buddhas education can play an important role in establishing world peace chief adviser

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড, মুহাম্মদ ইউনূস । ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আগামীকাল ৫ অক্টোবর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তাঁর আদর্শ মানবিকতা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাঁর অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য মিশে আছে। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চলটি এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যার প্রমাণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার দেখা যায়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে। জাতি হিসেবে আমাদের সকল অর্জন ও প্রাপ্তিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবদান রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা আরো দৃঢ় ও অটুট হবে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ানুগ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনের অভিযাত্রা মসৃণ ও সাফল্যমন্ডিত হবে-এটাই আমার প্রত্যাশা।’

প্রধান উপদেষ্টা ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান’ উৎসবের সার্বিক সফলতা কামনা করেন। সূত্র : বাসস

মন্তব্য

বিশেষ
BNP has objected to main reforms Sargis Alam

মূল সংস্কারগুলোতে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি: সারজিস আলম

মূল সংস্কারগুলোতে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি: সারজিস আলম

জুলাই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও এনসিপি'র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মন্তব্য করেছেন অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার গুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত পোষণ) দিয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযুদ্ধ কসপ্লেক্স ভবনে এনসিপির সাংগঠনিক সমন্বয়ক সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উত্তরে সারজিস আলম বলেন, অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব ছিলো। তার মধ্যে এই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোতে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। মনে করেন ৫০ টি সংস্কারের চেয়ে ৫ টি সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।

তিনি বলেন, কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানে এমন না যে ঐক্যমত কমিশন সেগুলো বাদ দিয়ে দিবে। এখন পর্যন্ত আমরা ওগুলোকে পাচ্ছি, দেখছি। যেগুলো ঐক্যমত কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এগুলো তারা জুলাই সনদে দেখতে চায় এবং জুলাই সনদের ড্রাফট(খসড়া) তৈরি হয়েছে। আমরা মনে করি ওইগুলো যদি আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়।

নির্বাচনী প্রতীক শাপলার ব্যপারে সার্জিস আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন কোন একটি রাজনীতিক দলের চাপে পড়েছে। শাপলা প্রতীক হিসেবে দিতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। যদি আমাদের শাপলা না দেয়া হয় প্রয়োজনে রাজনীতিক ভাবে আমরা সেটি মোকাবিলা করবো।

জাতীয় পার্টি ইস্যুতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছে জাতীয় পার্টি। এখন জাতীয় পার্টি সাধু সাজলে বাংলাদেশের মানুষ সেটি মেনে নেবে না। দলটির রাজনীতিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে এনসিপির এ নেতা বলেন, আমরা মনে করি পিআর উচ্চকক্ষে প্রসঙ্গিক। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নিম্নকক্ষে পিআর হওয়ার মতো অবস্থা নেই।

এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মুর্তজা সেলিমসহ দলটির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বিশেষ
Must give selection in PR method by implementing the Certificate of July This is M Masum

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে পিআর পদ্ধতিতে  নির্বাচন দিতে হবে: এটি এম মাসুম

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে পিআর পদ্ধতিতে  নির্বাচন দিতে হবে: এটি এম মাসুম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মোহাম্মদ মাসুম বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর যেন কোনো ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার আসতে না পারে সেজন্য পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জুলাই সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, খুনি ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করলেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হবে। প্রয়োজনে পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে আসে নাকি বিপক্ষে আসে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা জামায়াতে ইসলামী মেনে নেব। গত শুক্রবার বিকালে কুমিল্লা নগরীর আইটি কনভেনশন হলে কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত

পি আর পদ্ধতি ও জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ ৫দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্য সেমিনারে একথা প্রধান অতিথি বক্তব্য তিনি বলেন।

কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ এর সভাপতিত্বে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মু.মাহবুবর রহমান এর পরিচালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুনসহ অন্যান্যরা।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অনেক শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে এবং চোখ হারিয়েছে একটি সুন্দর দেশ পাওয়ার জন্য। প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতি কালো টাকার দৌরাত্ম্য, পেশিশক্তি এবং ভোট জালিয়াতির সুযোগ করে দেয়, যা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার ও চাঁদাবাজির জন্ম দেয়। তাই এই নির্বাচন পদ্ধতি আর বাংলার জমিনে দেখতে চাই না।

সেমিনার এসময় উপস্থিত ছিলেন, মহানগরীর জামায়াতে সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মু. কামারুজ্জামান সোহেল,সাবেক কাউন্সিল মোশারফ হোসাইন, নাছির আহম্মেদ মোল্লা, দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, অর্থ সম্পাদক

আমির হোসাইন ফরায়েজী, মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য, অধ্যাপক মজিবুর রহমান, মোহাম্মদ হোসাইন, কাজী নজির আহম্মেদ প্রমুখ।

মন্তব্য

বিশেষ
Two people nominated the Gopalganj 4 constituency

গোপালগঞ্জ-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের মনোনয়ন নিলেন দুইজন

গোপালগঞ্জ-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের মনোনয়ন নিলেন দুইজন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে গণঅধিকার পরিষদ থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আবুল বসার ও কাজী রনি।

আবুল বসার গণঅধিকার পরিষদের কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার আহবায়ক ও কাজী রনি ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সম্পাদক।

আবুল বসার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কর্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। আবুল বসার কোটালীপাড়া উপজেলার মাঝবাড়ি গ্রামের মৃত ধলা দাড়িয়ার ছেলে ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

এর আগে কাজী রনি সংগ্রহ করেন মনোনয়ন ফরম। কাজী রনি কোটালীপাড়া উপজেলার কুরপালা গ্রামের মৃত. কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে। পেশায় একজন ব্যাংকার। ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত।

আবুল বসার বলেন, গণঅধিকার পরিষদ গণমানুষের দল। জনসাধারণের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গণঅধিকার পরিষদে কোন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই নাই। গোপালগঞ্জ-৩ একটি ভিআইপি আসন। এ আসনের মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্তমান কর্মকান্ড অনুযায়ী গণঅধিকার পরিষদকেই বেছে নিবে বলে আমি আশাবাদী। আমি মনোনয়ন চেয়েছি, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি আশাকরি দলের সম্মান বজায় রাখতে পারব।

বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এবং প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি বন্ধ করতে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে কোটালীপাড়া উপজেলায় লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকান্ড নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাকে যদি গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গীপাড়া) আসনে গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে এলাকাছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অনেকে রয়েছেন জেলে। এদিকে অন্তর্ন্তীকালীন সরকার আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সরব হয়ে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সম্ভাব্য প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

মন্তব্য

বিশেষ
Midnight drama

চট্টগ্রাম রেলের গণশৌচাগার নিয়ে মধ্যরাতের নাটক

দরপত্র খোলা ও যাচাই-বাছাই শেষে হঠাৎ স্থগিত ঘোষণা রেল কর্তৃপক্ষের
চট্টগ্রাম রেলের গণশৌচাগার নিয়ে মধ্যরাতের নাটক

চট্টগ্রামে দরপত্রের মাধ্যমে রেলস্টেশনের গণশৌচাগার ইজারা দেওয়ার সময় দরপত্র বাক্স খোলা ও যাচাই-বাছাইসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষের পর হঠাৎ মধ্যরাতে দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারেরা অভিযোগ করছেন- নিয়ম মেনে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ স্থগিতাদেশ দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তারা মনে করছেন, কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাব খাটিয়ে নির্দিষ্ট কোনো পক্ষকে সুবিধা দিতে এই দরপত্র হঠাৎ স্থগিত করেছে। এমন সিদ্ধান্ত রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ফসল। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশল-১ এর কার্যালয় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের গণশৌচাগার ইজারা দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। ইজারায়- নতুন রেলস্টেশনে থাকা ৬টি টয়লেট, বেসিন, ৩টি ওজুখানা ও ২টি প্রস্রাবখানা ইজারা দেওয়ার আহবান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্রের শিডিউল ক্রয়ের শেষদিন ও ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় দরপত্র শিডিউল জমা দেওয়ার শেষদিন উল্লেখ করা হয়। একইদিন সাড়ে ১২ টায় দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে দরপত্র বাক্স খোলার কথা বলা হয়।

রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দরপত্র কেনার শেষ দিন পর্যন্ত ৯টি সিডিউল বিক্রি হয়েছিল। নির্ধারিত তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় সকলের উপস্থিতিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী বিভাগীয় প্রকৌশলী ডিইএন-১ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহিমের কার্যালয়ে রাখা দরপত্র বাক্সটি খোলা হয়। ওই বাক্সে সাতটি দরপত্র জমা পড়ে।

দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারেরা জানান, বাক্সে থাকা সাতটি দরপত্র শিডিউল সকলের উপস্থিতিতে খোলা হয়। এ সময় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দরপত্রে অংশগ্রহণকারীরা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দেখানো হয় মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনালকে। পর্যায়ক্রমে সাবির মোটরস সর্বোচ্চ দর আড়াই লক্ষ টাকা ও ব্লু প্রিন্ট ছিল ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু রাত ১০টায় হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করে বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়। স্থগিতের নোটিশে স্বাক্ষর ছিল বিভাগীয় প্রকৌশলী-১- (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রহিম। চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতনদের কাছে পাঠানো হয়। তবে ওই চিঠিতে দরপত্র স্থগিতের বিষয়ে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. তানভীরুল ইসলাম বলেন, যিনি দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করেছেন ওনার কাছে বিষয়টি জেনে নেন। বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। এসময় প্রতিবেদককে অফিসে আসতে বলেন।

দরপত্রে অংশগ্রহণকারী মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের একজন নেতা এই গণশৌচারগারটি অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করে আসছে। নির্ধারিত সময়ে এটার টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

আমরা ধারণা করছি, এবারও গণশৌচাগারটি ওই ফ্যাসিস্টের দখলে দিতে দরপত্র নিয়ে এমন কারসাজি করেছে রেল কর্মকর্তারা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরপত্র খোলার পর বৈধ কারণ ছাড়া প্রক্রিয়া স্থগিত করা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুযায়ী স্বচ্ছতার পরিপন্থি।

রেলওয়ের ভেতরের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রেলওয়ের বিভিন্ন ইজারা ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এবারও একই কৌশলে দরপত্র স্থগিত করে সুবিধাভোগী পক্ষকে সুযোগ দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মন্তব্য

বিশেষ
Panchagarh farmers are risking the cultivation of Malta commercially

বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন পঞ্চগড়ের কৃষক

দেশি মালটা চাষ করে সফল কৃষক সাদেকুল
বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন পঞ্চগড়ের কৃষক

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে লেবু জাতীয় ফসল ‘মালটা’ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চা, পান এবং কমলার মতো বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকেরা। দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টার বাগানও রয়েছে এ জেলায়। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী এ জেলার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে চা চাষের জন্য তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। শুধু চা নয়, বাণিজ্যিকভাবে নানা রকম ফল ও ফসল চাষ হচ্ছে এ জেলায়। এদিকে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায়ও দেশি মালটা চাষেরও ব্যাপক সাফল্য দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চগড় বোদা উপজেলার ২ নং ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ভিমপুকুর এলাকার কৃষক সাদেকুল ইসলাম নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে প্রায় ২১৭টি মালটা গাছ রোপণ করেছে। দেশি প্রজাতির প্রতিটি মালটা গাছে ফলন হয় ৫০ থেকে ৮০ কেজি।

কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, মালটা গাছ রোপণ করার দুই বছরের মধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় দুই লক্ষ টাকা। চলতি বছরে তিনি ৪ লক্ষ টাকার মালটা বিক্রি করার আশা করছেন।

ভিমপুকুর এলাকার কৃষক সাদেকুল আরও জানান, গত ২০২২ সালে বোদা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রায় ২১৭টি দেশি মালটা গাছ ফ্রী পান। সেই সাথে মালটা বাগান করতে রাসায়নিক সারসহ পরিচর্যা করার বিষয় নিয়ে একটি ট্রেনিংও করান উপজেলা কৃষি অফিস।

এদিকে, উপজেলার ৩নং বনগ্রাম বেংহাড়ী ইউনিয়নের তেপুখুরিয়া টোকরা পাড়া এলাকার কৃষক শাহিনুর বলেন, ২১ একর জমিতে দেশি মালটার চাষ করি, এবং দেশি মালটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

কৃষক শাহিনুর আরো বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে ২৫০০ টাকা দরে মণ বিক্রি যাওয়ার কথা, প্রতি বছর এ মাসে ফলের দাম বেশি থাকে, তাই আমি নভেম্বর মাসে বিক্রি করবো।

কৃষি বোদা উপজেলা কৃষি অফিসার আহমেদ রাশেদ উন-নবী বলেন, মালটা চাষের জন্য এলাকার মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। তারা কৃষকদের মালটা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ফলের চাষে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। এতে কৃষকদের আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি স্থানীয় বাজারে দেশি ফলের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। এ বছর ৪৭ হেক্টর মালটা চাষ হচ্ছে বোদা উপজেলায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রচুর ফলন হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে পঞ্চগড়ে। মাল্টা চাষ আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা চাষিদের নানাভাবে সহযোগিতা করছি।

এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এই জেলায় রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান। পঞ্চগড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাল্টা বাগান। খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় পঞ্চগড়ের মাল্টার চাহিদাও বাড়ছে।

সৈয়দ মাহফুজার রহমান সেলিম নামের অপর আরেক কৃষক জানান, ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি ১৫ বছরের জন্য ৬০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বারি ১ মাল্টা চাষ শুরু করেন। এরপর ৯ হাজার গাছ লাগিয়েছেন তিনি।

প্রতিবছর প্রত্যেক গাছ থেকে ২০ কেজি মাল্টা পান। প্রতিবছর তিনি ১ লক্ষ ৮০ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন করতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, পঞ্চগড়ের স্থানীয় ফল ব্যবসায়িরা বাগান থেকে মাল্টা কিনছেন।

পঞ্চগড়ের আবহাওয়া এবং মাটির গুণাগুণ বিচার করে কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এই জেলায় মাল্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাল্টা চাষ। অনেকে চা বাগানে মাল্টা চাষ করছেন। অনেকে আবার মাল্টা বাগানে পেপে, কলাসহ অন্যান্য আবাদ করে বাড়তি আয়ও করছেন। প্রথমদিকে বাড়ির আঙ্গিনা বা খোলা যায়গায় নিতান্ত শখের বসেই মাল্টা চাষ করছিলেন এই জেলার অধিবাসিরা। পরে মাল্টা চাষ বাণিজ্যিক আকারে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

বোদা উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জানান, শখের বসেই ৪০টি মাল্টা গাছ লাগিয়ে শুরু করেছিলাম। ভালো ফল পেয়ে এখন প্রায় ১ একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছি।

ভিটামিন সি এবং ব্যাপক পুষ্টিগুণ থাকার কারণে বাজারে মাল্টার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। খুব অল্প সময়ে গাছে ফল ধরে। আর ব্যবসায়িরা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায় মাল্টা। পঞ্চগড়ের মাল্টা এখন রপ্তানি হচ্ছে সারাদেশে।

মন্তব্য

p
উপরে