বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আরও এক দিক থেকে ছিল অনন্য। এটি মুক্তিযুদ্ধের আগে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভিডিও রেকর্ডেড ভাষণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার সেই ভাষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সাত বাঙালি কর্মকর্তা। শুধু ভিডিওচিত্র ধারণই নয়, এটি ডেভেলপের পাশাপাশি সংরক্ষণও তারা করেছিলেন।
২৫ মার্চ কালরাতের পর অবরুদ্ধ ঢাকা শহরের সরকারি দপ্তর থেকে তারা সেই ভিডিওটেপ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করেছেন তারা। সে সময় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ক্যামেরা সহকারী ছিলেন আমজাদ আলী খন্দকার। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভিডিওটেপ সরিয়ে কীভাবে তারা দোহারের একটি বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন, সে গল্প তিনি বলেছেন নিউজবাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আশিক হোসেনের কাছে।
একাত্তরে তো আপনারা পাকিস্তান সরকারের কর্মচারী। তারপরও ৭ মার্চের ভাষণ ধারণ করলেন কীভাবে? আর কোনো বিভাগ কি আপনাদের সঙ্গে ছিল?
৭ মার্চ কিন্তু একদিনে আসেনি। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের পথেই ৭ মার্চ এসেছে। এই ভাষণ ধারণ করার জন্য আমাদের পরিচালকের নেতৃত্বে দুই দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমরা কে কী করব, সেগুলো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। আমরা তখন মূলত ছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ফিল্ম ডিভিশনের স্টাফ। আমরাই এটা করেছি। তখন পাকিস্তানের আরও কিছু সংস্থা, যেমন ডিএফপি ছিল। তারা কিন্তু এ কাজ করেনি। তারা কিন্তু মাঠের ধারেকাছেও আসেনি। আমরা ফিল্ম ডিভিশন এ কাজটা করেছি। আমাদের ফিল্ম ডিভিশনের পরিচালক ছিলেন আবুল খায়ের (খ্যাতিমান অভিনেতা) সাহেব। ক্যামেরাম্যান ছিলেন জি জেড এম এ মবিন, এম এ রউফ। অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম আমি, এস এম তৌহিদ আর সৈয়দ মইনুল আহসান। দুইজন ছিল লাইটবয়; জুনায়েদ আহমেদ আর একজন হাবিব। লাইটবয়রা আমাদের সহযোগিতা করত। আর আমাদের পরিচালক জানত, কে কী কাজ করতে পারে।
মঞ্চে মূল কাজটা কীভাবে করলেন? কার কী দায়িত্ব ছিল? প্রস্তুতিই বা শুরু করলেন কীভাবে?
মবিন সাহেব ছিলেন ফিল্মের ক্যামেরাম্যান মূলত। আর আমি ছিলাম এফডিসির রাইজিং ক্যামেরাম্যান। পরিচালক মনে করলেন, এই দুজনকে যদি মঞ্চে দিই তাহলে তারা ভালো রেকর্ড করতে পারবে। আমাদের দুজনকে মঞ্চে দিলেন। রউফ সাহেব আর তৌহিদকে দায়িত্ব দিলেন, তারা ঘুরে ঘুরে ছবি নেবে। আর মইনুলকে দিলেন এই যে টেপ রেকর্ডার বসবে, সেইটা চালুর দায়িত্ব।
তখন কলরেডি ছিল। তারা আগের দিন পুরো মাঠে শত শত মাইক বসিয়েছে। তারা হাইভোল্টেজ লাইন এনেছিল। আমরা ক্যামেরা চালাব কারেন্ট দিয়ে, ব্যাটারি দিয়ে যদি চালাই, তাহলে সে ক্যামেরায় অনেক আওয়াজ হবে, কখন ব্যাটারি বসে যাবে আমরা বুঝতে পারব না।
সিংক মোটর বলে একটি জিনিস আছে। সেটা দিয়ে আমরা ক্যামেরা চালালাম, যাতে করে কোনো শব্দ না পায়। সাউন্ডপ্রুফ ক্যামেরা নিয়ে গেলাম। কারণ, আমাদের ক্যামেরায় যদি আওয়াজ হয়, একটা লোকও মাঠে থাকবে না। এত আওয়াজ হবে, সব মানুষ চলে যাবে। এর জন্য আগের দিন বিকেলে একটা কয়েল তার নিয়ে গেলাম কলরেডির কাছে। তখন যারা কাজ করছিল, তারা আমাকে আর লাইন দেবে না। পরে কলরেডির মালিক আসার পরে আমরা লাইন পেলাম। তো তখনই ভিডিওধারণের জন্য লাইন টেনে রাখা হলো।
পরের দিন ৭ মার্চ, সকাল ৭টায় ক্যামেরা নিয়ে মাঠে চলে গেলাম।
৭ মার্চ সকালে যখন রেসকোর্স ময়দানে গেলেন, তখন কী দেখলেন? আপনাদের ভয় করেনি?
সকালে মাঠে গিয়ে দেখি, মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। একদিকে কালীমন্দির, এদিকে টিএসসি, একদিকে ঢাকা ক্লাব আর ওদিকে হাইকোর্ট। তখন তো কোনো গাছপালা ছিল না। পুরো মাঠ ছিল খালি। তো আমরা গিয়ে দেখলাম, পুরো মাঠ মানুষ দিয়ে ভরে গেছে। আমরা তখন ক্যামেরা-ট্যামেরা লাগিয়ে সব রেডি করে রেখেছি।
এর মধ্যে একটা গুজবও ছিল যে, বোমা মেরে সব উড়িয়ে দেবে। প্রস্তুতিও নাকি ছিল। আমরা তো তখন ভয় পেয়েছি। এই যে সাতজনের নাম বললাম, আমরাই প্রথম প্রকাশ্যে মাঠে এসেছি। আর কেউ কিন্তু আসেনি। তখন আমরা পাকিস্তান সরকারের কর্মচারী। গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরা উপস্থিত ছিল। তারা আমাদের দেখেছে যে আমরা কাজ করছি। ভয় ছিল, ধরে নিয়ে যাবে। তবে সাহস ছিল, বঙ্গবন্ধু আমাদের যেভাবেই হোক বের করে নিয়ে আসবে। আটকে রাখতে পারবে না। আর মরে গেলে তো মরেই গেলাম।
এভাবেই আমরা কাজ করলাম। ভয় আমাদের ছিল না। যখন একবার কাজের নেশায় চলে গিয়েছি, তখন আর ভয় নাই। তখন চিন্তা, কীভাবে ফোকাস থাকবে।
যারা ফিল্মের ক্যামেরাম্যান তারা বুঝবে কী কষ্ট করে আমরা এ কাজটা করেছি। ম্যাগাজিন, ফিল্ম চেঞ্জিং। ব্যাগ সব সাইডে রাখা আছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট দুজন সাইডে আছে। আমাদের ৫০০ ফিট লোড করলে মাত্র ৫ মিনিট শ্যুট করা যায়। এক ঘণ্টা শ্যুট করা যায় এ পরিমাণ ফিল্ম আমাদের কাছে ছিল।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সেই মুহূর্তের কথা আপনার মুখে শুনতে চাই।
বঙ্গবন্ধু আসলেন। এত মানুষ হয়েছে, কিন্তু কারও মুখে কোনো কথা নেই। এই যে মাইকে বলে ডানে আসেন বামে আসেন, বসেন, এসব কোনো কথা বলতে হয়নি। সব একদম সাইলেন্ট। মানুষের চিন্তাটা এ রকম ছিল যে, এই যে এত দিনের এক আন্দোলন, এত সংগ্রাম হয়েছে, এটা তার ফসল। আজকে তিনি কী নির্দেশ দেন তা শুনে বাড়ি যাব। সবাই সেটা শুনতেই এসেছে। একটা কথাই মানুষ শুনতে এসেছে যে, বঙ্গবন্ধু কী বলেন। এ জন্যই সবাই চুপ করে বসে ছিল। বঙ্গবন্ধু আসলেন একদম বীরের মতো। মঞ্চে উঠলেন। আশেপাশে যারা ছিল, কারও সাথে কোনো কথা না বলে সরাসরি ডায়াসে এসে চশমা রেখে উনি ভাষণ শুরু করলেন। একটানা বলে গেলেন। কারও কোনো স্লিপও নিলেন না, কারও কোনো ইশারাও শুনলেন না। কী বলবেন, আগে থেকে কোনো কিছু ঠিকও করা ছিল না। থাকে না, মানুষের ভাষণ লেখা থাকে। এ রকম কিছুই ছিল না। উনি অনর্গল ওনার কথা বলে গেলেন। আর যা বললেন, তা তো রেকর্ডে আছেই, আপনারা শুনেছেন। তখন পাকিস্তান আমল। তার মধ্যেও তিনি বললেন স্বাধীনতার কথা।
রেকর্ড তো করলেন। তারপর এটা ডেভেলপ করলেন কীভাবে? কেউ সন্দেহ করেনি?
আমরা ভাষণ রেকর্ড করলাম। আমাদের অফিস ছিল সচিবালয়ের ২২ নম্বর শেডে। অর্ধেকটা আমাদের, আর বাকিটা অন্য ডিপার্টমেন্টের। এখন সমস্যা হলো এই যে, বঙ্গবন্ধুর নামে কীভাবে ফিল্মগুলো ডেভেলপ করে আনব। ক্যামেরাম্যানের দায়িত্ব হলো শ্যুট করে দেয়া। এখন ডেভেলপের দায়িত্ব তো আমাদের ওপরে। তখন ডেভেলপ করতে হতো এফডিসিতে। এফডিসিতে গেলাম। কিন্তু ফিল্মের উপরে লিখব কী? সে বছর একটা সাইক্লোন হয়েছিল। তো একটা ফিল্মের উপর লেখলাম, ‘সাইক্লোন’। অন্যগুলো কোনোটাতে ‘নির্বাচন’। এভাবে লিখে ‘এক’, ‘দুই’ দিয়ে আমরা ডেভেলপে দিতাম। তারপর সেগুলো রক্ষণও আমরাই করতাম। পরিচালকের একটা আলমারি ছিল। সেখানে সারিবদ্ধভাবে রাখা হতো। আমরা এভাবেই ফিল্ম প্রসেস করে নিয়ে আসলাম।
২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হলেন। দেশের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিল সেনাবাহিনী। তখন তো তারা অনেক নথি নষ্ট করে ফেলে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রক্ষা পেল কীভাবে?
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে গেল পাকিস্তানিরা। এরপর আর্মিরা প্রায় সব অফিসের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিল। সচিবালয়ে আর্মির আনাগোনা বেড়ে গেল। একদিন আমাদের পরিচালক (আবুল খায়ের) ডেকে বললেন, ‘আমজাদ, তোমাকে একটা দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সেটা এই মুহূর্তে এবং আজই।’ আমি বললাম, ‘কী করতে হবে স্যার।’ তিনি আমাকে নানা কারণে অনেক বিশ্বাস করতেন। যা হোক, আমাকে বললেন, ‘তুমি এখনই সদরঘাট যাও।’ তখন সবকিছু কিনতে হলে সদরঘাট যেতে হতো। আমাকে তিনি বললেন, ‘সদরঘাট থেকে একটা ট্রাংক নিয়ে এসো।’ টাকা দিয়ে দিলেন, আমি ৪২ ইঞ্চির একটি বড় কালো ট্রাংক নিয়ে আসলাম। উনাকে দেয়ার পরে এটাতে ভরলেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, যেটা আমরা ৭ মার্চ রেকর্ড করেছিলাম, সেটা। এর সাথে কাজী নজরুল ইসলামের উপরে একটা ডকুমেন্টারি আমরা করেছিলাম গোপনে, সেটা। সাথে বঙ্গবন্ধুর আরও কিছু ছবি ট্রাংকে ভরলেন। এরপর আমাকে বললেন, ‘তোমাকে আজই বের হয় যেতে হবে।’ আমি বললাম, ‘কোথায় যাব?’ বললেন, ‘জয়পাড়া যাবা।’ কোথায় যেতে হবে ঠিকানা দিয়ে দিলেন। আমি বললাম, ‘স্যার আমার বাবার সাথে একটু দেখা করে আসি।’ উনি আমাকে পয়সা দিয়ে বললেন, ‘যাও।’ আমি বাবাকে বললাম, ‘বাবা, আমার আসতে দুই দিন দেরি হবে, চিন্তা করবেন না।’ ফিরে আসার পর আমাকে তিনি (আবুল খায়ের) রুমের ভেতর নিয়ে গেলেন। আমার হাতটা ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললেন, ‘আমজাদ! আল্লাহ হাফেজ!’ তার চোখগুলো এত বড়বড় হয়ে গেল। উনি জানতেন, এই ছেলে যদি বের হয়ে যায়, আর ধরা পড়ে, তাহলে এখনই শেষ হয়ে যাবে। আর ফিরে আসবে না।
সারা শহরে তখন আর্মির প্রহরা। এর মধ্যে বের হলেনই বা কীভাবে?
প্রথম যে সংকটটা হলো: সচিবালয় থেকে বের হব কীভাবে? সব জায়গায় তো পাঞ্জাবিরা আছে, বিহারিরা আছে। গেট পাস দিবে কে? যে গেট পাস দেবে, সেই তো পরে ধরা পড়বে। এখন তাহলে গেট পাস ছাড়াই আমাকে বের হতে হবে। কিন্তু কীভাবে? তখন ২ নম্বর গেটে একজন সার্জেন্ট ছিলেন ফরিদ, বাঙালি। তার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তাকে আমি বললাম, বের হতে চাই, এই হচ্ছে ব্যাপার। সে যেহেতু বাঙালি, আমাদের বিষয়ে সব সে জানত আর কী। তো আমাকে বলল, ‘ঠিক আছে অসুবিধা নাই, তুমি বেবি নিয়ে আসো, আমি তোমাকে বের করে দেব।’ দ্বিতীয় গেট দিয়ে তখন শুধু ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। ফরিদ করল কী, পল্টন থেকে যে গাড়িগুলো আসছিল ওগুলোকে আটকে দিয়ে আমাকেসহ বেবিটা বের করে দিল। আমার সাথে যারা চাকরি করত, অনেককেই বললাম, ‘আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আয়।’ কিন্তু কেউ আসল না। আমি একাই আল্লাহর নাম নিয়ে বের হয়ে গেলাম। বেবিওয়ালাও বুঝল, এটা মনে হয় বিশেষ ব্যবস্থা। সে-ও কোনো দিকে না তাকিয়ে দিল এক টান।
প্রেস ক্লাবের সামনে আর্মি একটা বড় ট্রাকের উপরে বসে আছে। তার নিচ দিয়েই বেবিটা চলে গেল। ওরা আমাকে ডাকলও না, আমিও তাকালাম না। ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ করতে করতে চলে গেলাম।
কার্জন হল, চানখাঁর পুলের সামনে দিয়ে গেলাম চকবাজার। চকবাজার গিয়ে একটু স্বস্তি পেলাম। কিছু লোকজন দেখা যায়। আর সব রাস্তা ফাঁকা। আর্মি টহল দিচ্ছে। এখান থেকে সোয়ারি ঘাটে যাওয়ার পর দুটো ছেলে এগিয়ে এলো ট্রাংক নিতে। আমি তাদের বললাম, ‘তোমরা পারবা না। বড় কাউকে ডাকো।’ পরে একজন এলো। ট্রাংক নিয়েই বলে উঠল, ‘ইসমে কেয়া হ্যায় ইতনা ওজন।’ আমি বললাম, ‘নিয়ে যা, কোনো কথা কইস না। আমাকে পার করে দে আগে।’ এখান থেকে এভাবে জিঞ্জিরা পর্যন্ত গেলাম। সেখানে দেখি, শয়ে শয়ে লোক জীবন নিয়ে পালাচ্ছে। বোঝেন না, জীবনের ভয়ে ওরা পালায়, আর আমি ছুটছি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাঁচাতে।
দেখলাম একটা বাস ছেড়ে দিচ্ছে। আমি সেটার পেছনে জোরে এক থাপ্পড় দিলাম। তখন তরুণ ছিলাম, চেহারার মধ্যে একটা অন্য রকম ইয়ে ছিল। ড্রাইভার তখন পেছনে তাকিয়ে আমাকে দেখল, কী বুঝল জানি না। বাস থামিয়ে দিল। আমাকে ইঙ্গিত দিল উপরে তুলে দেন। আমি বাসের ছাদে উঠে পড়লাম। তারপরেও কিন্তু শান্তি পেলাম না। ভয় হলো (আর্মি) যদি আমার পিছু নেয়, যদি দেখে ফেলে তাহলে কী হবে?
তখন এক বাঙালি অন্য বাঙালিকে খুব সহযোগিতা করত। জিঞ্জিরা থেকে গেলাম বক্সনগর নামে একটা জায়গা আছে, সেখানে। এই পর্যন্তই বাস যেত, তারপরে আর যেত না। রাস্তা ছিল দুই পাশে ইট বিছানো, সেটা দিয়েই বাস যেত। সেখানে নামার পরে ট্রাংক নামালাম। এখন যদি নৌকায় উঠি, তাহলে আমাকে যদি চেক করে, তাহলে তো দৌড়াতে পারব না। আমি করলাম কী, একটা ঘোড়াওয়ালা ঠিক করলাম। সেখান থেকে গেলাম জয়পাড়া মজিদ দারোগার বাড়ি, দোহার থানায়। সেখানে গিয়ে উঠি।
এদিকে (আবুল খায়ের) খায়ের সাহেব তো আমাকে বিদায়ের সাথে সাথে বের হয়ে আমাকে পায়নি। এত জলদি যে আমি বের হয়ে যাব, এটা উনি চিন্তা করেননি। আমাকে না পেয়ে আবার তিনি গেছেন পাগল হয়ে। তিনি মনে করেছেন, আমাকে মনে হয় ধরে নিয়ে গেছে, মেরে ফেলেছে। আমার যেই বাড়িতে যাওয়ার কথা তিনিও সেই বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। এদিকে আমিও পৌঁছেছি। আমি তো ওখানে গিয়ে বলিনি, বলেছি অফিসের কাগজপত্র। এটার মধ্যে কী আছে, এত কিছু বলিনি।
এটা কার বাড়ি ছিল?
এটা ছিল জয়পাড়া মজিদ দারোগার বাড়ি। আমি বলেছি, স্যার পাঠিয়েছেন, কিছু কাগজপত্র আছে। এদিকে খায়ের সাহেব চলে এসেছেন। আমাকে দেখে বলেন, ‘ও এসেছ তুমি?’ বললেন, বসো। আমরা ওখানে খাওয়াদাওয়া করলাম। পরের দিন সকালে সেখান থেকে চলে এলাম।
ট্রাংকটা কি তাহলে মজিদ দারোগার বাসাতেই ছিল শেষ পর্যন্ত?
কিছুদিন ছিল মজিদ দারোগার বাসায়। তারপর খায়ের সাহেবের ফ্যামিলির কেউ তো আর তখন ঢাকায় নেই। দোহারের চরকোশায়ই নামে একটা গ্রাম আছে, জয়পাড়ার পাশেই। আমাকে (তিনি) বললেন, ‘তুমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে আসো। চরকোশায়ই দানেশ খাঁর বাড়িতে চলে এসো।’
দানেশ খাঁর ভাই উমেদ খাঁ আমার পরিচিত ছিলেন। দানেশ খাঁ যে তারই ভাই, এটা তখনও আমি জানতাম না। একদিন পর তার ফ্যামিলি নিয়ে ফিরলাম। তিনি যে পরের দিনই কলকাতা চলে যাবেন, এই কথাটা আবার আমার থেকে গোপন করে গেছেন। আমাকে শুধু বলেছে, ‘যা ঘটবে, শুধু ছবি তুলে রাখবা।’ এই দায়িত্বটা দিয়ে গিয়েছিলেন।
আমাদের মধ্যে কিছু নন-বেঙ্গলি ছিল। তারা বলত যে, ‘আমজাদ, তুমি বঙ্গবন্ধুর ভাষণও সরালা, আবার পরিচালককেও সরায় দিলা।’
আমি ভয় পেলাম। যদি এসব প্রকাশ করে দেয়, আমি তো মরে যাব। তখন আমি আত্মগোপনে এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে গেলাম। পরে অবশ্য ফিরে আসি।
তাহলে ভাষণের ভিডিওটা কোথায় ছিল? চরকোশাই?
ভাষণটা তো চরকোশাই নিয়ে গেল। উমেদ খাঁর ধানের গোলায় চলে গেল ওটা। খায়ের সাহেব যখন কলকাতায় চলে গেলেন, সেখানে বাংলাদেশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করে মুক্তিবাহিনী পাঠিয়ে ওটাকে নিয়ে যান ভারতে। যুদ্ধ চলাকালে পুরো সময় ওটা ভারতেই ছিল। অনেকে জানে না কোথায়। দেশ যখন স্বাধীন হলো, তখন উনি ওটা নিয়ে দেশে ফিরলেন।
আরও পড়ুন:অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও তার স্ত্রী রেহেনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়। সংস্থাটির উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন।
দুদক জানায়, আসামি সাবের হোসেন চৌধুরী ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বৈধ আয়ের বাইরে ১২ কোটি ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৬৯ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নিজের নামে ২১টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১২৪ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার ২৫২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা, এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারার অধীনে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।
এছাড়া, তার স্ত্রী রেহানা হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ২৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক। তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে দুদক জানিয়েছে। এই মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীকেও সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের আওয়ামী লীগ সরকারের সবশেষ মন্ত্রিসভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ১৯৯৯ সালে তিনি প্রথমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। পরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। সাবের হোসেন ২০২৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পান। একাদশ সংসদে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
সরকার পতনের পর গত অক্টোবরে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে পাঠানোর পরদিনই ছয় মামলায় জামিন পেয়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তি পান সাবের হোসেন চৌধুরীর।
যাত্রীদের চলাচলের সুবিধায় আগামী রোববার থেকে রাজধানীর মতিঝিল এবং উত্তরা-উত্তর প্রান্ত থেকে মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন তরফদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএমটিসিএল-এর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্রমাগতভাবে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এবং সম্মানিত যাত্রীসাধারণের সুবিধার্থে আগামী রোববার হতে উত্তরা উত্তর মেট্রো রেল স্টেশন ও মতিঝিল মেট্রো রেল স্টেশন উভয় প্রান্ত থেকে এক ঘণ্টা বর্ধিত সময়ে মেট্রো ট্রেন চলাচল করবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল স্টেশন অভিমুখে প্রথম মেট্রোরেল ছেড়ে যাবে ৬টা ৩০ মিনিটে। যা আগে ছেড়ে যেত সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। এখন উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে সবশেষ মেট্রো রেল ছেড়ে আসে রাত ৯টায়। নতুন সূচিতে ছাড়বে রাত সাড়ে ৯টায়।
এছাড়া মতিঝিল থেকে উত্তরা-উত্তর অভিমুখে দিনের প্রথম মেট্রো রেল ছেড়ে যায় সকাল সাড়ে ৭টায়।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী উত্তরা অভিমুখে মেট্রো রেল চলবে সকাল সোয়া ৭টা থেকে। মতিঝিল থেকে উত্তরা অভিমুখে সর্বশেষ মেট্রোরেল ছেড়ে যেত রাত সাড়ে ৯টায়। এখন রাত ১০টা ১০ মিনিটে তা ছেড়ে যাবে।
এদিকে শুক্রবারে মেট্রো রেল চলাচলের সময়সূচি অপরিবর্তিত রয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল অভিমুখে প্রথম ট্রেন ছাড়ে বিকেল ৩টায়। সবশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়। মতিঝিল থেকে উত্তরা অভিমুখে প্রথম ট্রেন ছাড়ে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। সবশেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।
মা-ইলিশ রক্ষায় সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে ২৫ লাখ বর্গমিটার অবৈধ নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও ১১ জেলেকে আটক এবং ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মা নদীর কলাবাগান ও অন্তার মোড় এলাকায় নৌপুলিশ ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে উপজেলা মৎস্য বিভাগ, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ডের যৌথ অভিযানে
২৫ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল, ১১ জন জেলে আটক ও ৫ কেজি মা-ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে আটককৃত ১১ জন জেলেকে মৎস্য সুরক্ষা আইন ১৯৫০ খ্রি. সালের ৫ (২) (খ) ধারা মতে মিয়মিত মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কারেন্ট জালগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস ও মাছগুলো এতিমখানা ও স্থানীয় অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নৌপুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশনা মতে গত ৪ অক্টোবর থেকে অভিযান শুরু হয়েছে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে, মা-ইলিশ প্রজনন এই মৌসুমে সচেতনামূলক প্রোগ্রাম করা হয়েছে, যেন কোনো জেলেরা নদীতে মা-ইলিশ না ধরে, যেন মা-ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে, আমাদের নৌপুলিশের অভিযান নদীতে অব্যাহত রয়েছে। এখানে জেলা মৎস্য অফিসের সাথে আমাদের নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, ম্যাজিস্ট্রেট যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি থেকে চারটি মামলা রুজু হয়েছে, মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে, ৬০ জনের মতো আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে, ২ কোটি ১০ লাখ বর্গমিটারের উপরে অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, ২৬০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে গরিব ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযানে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম পাইলট, দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ত্রিনাথ সাহা, এসআই মেহেদী হাসান অপূর্বসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ফসল রক্ষায় বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি ইটভাটা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আঁকবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিবিসি (বিসমিল্লাহ ব্রিকস) ইটভাটার কারণে এলাকার অন্তত পাঁচশত একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, প্রাণিসম্পদ ও গ্রামীণ সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা ফসলি জমির ওপর বিবিসি ইটভাটি স্থাপন করেন। কৃষকরা অভিযোগ করেন, ইটভাটা নির্মাণের পর থেকে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে আগের মতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। ওই ইটভাটার ৩০০ গজের মধ্যে রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সেখানে ইটভাটা চালু রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় জাহাঙ্গির আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাশির উদ্দিন, কবির গাজী, শাহীন প্যাদা ও খোকন হাওলাদার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ইটভাটার কারণে জমিতে আগের মতো ফলন হচ্ছে না, গাছে ফল ধরছে না এবং শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। তারা বরগুনা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তিন দিক ঘেরা ধান খেতের মধ্যে বিবিসি ইটভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে।
রায়বালা গ্রামের কৃষক কবির গাজী বলেন, ‘ইটভাটার কারণে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো ফসল ফলছে না। পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যিনি ধানের শীষ প্রতীক পাবেন, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা তাকেই জিতিয়ে নেওয়ার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করব। এই নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসনে এবার ধানের শীষ প্রতীক হেরে গেলে আমরা শুধু হারবই না, চিরতরে হারিয়ে যাব। তাই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই ধানের শীষকে সর্বশক্তি দিয়ে বিজয়ী করে আনতে হবে।
গত বুধবার রাতে শহরের হাবেলি গোপালপুরে আফজাল হোসেন খান পলাশের বাসভবন প্রাঙ্গণে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত ও সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় রাজপথের অকুতোভয় দুঃসাহসী নেতা হিসেবে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশকে জেলা বিএনপির পরবর্তী সভাপতি দেখতে চান বলেও নেতা-কর্মীরা জোরালো বক্তব্য দেন। তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে আফজাল হোসেন খান পলাশের দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের করণীয় কী হবে, আমরা কী করব সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই সভার আয়োজন। যারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন, সকলের প্রতিই কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ফরিদপুরের রাজপথে কোনো আন্দোলন হয়েছে আর আমি আফজাল হোসেন খান পলাশ ছিলাম না তা কখনোই হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় জাতীয় পর্যায়ে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন চলছিল, তেমনি ফরিদপুরেও একটা চক্রান্ত হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে সকল চক্রান্ত প্রতিহত করে বিএনপির ধানের শীষকে বিজয়ী করব।
ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি শামীম হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকী মিতুল, যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুল আরেফিন সাগর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ সালাম লাল, ফরিদপুর সুগার মিলের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দীন বিশ্বাস, জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার জোয়ার্দার, জেলা যুবদলের সহসভাপতি কেএম জাফর, মোহসিনুল কবির রুবেল, টিটু খাঁন, শ্যামসুন্দরপুর নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুতাওয়াল্লী আলহাজ ফরিদ শেখ, বিএনপির প্রবীণ নেতা আলমগীর মাস্টার, মো. রেজাউল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার খান, শাহীন হক, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর কবির, আলতাফ হোসেন, হাফিজুর রহমান রাজা, জিন্না মেম্বার, হায়দার হোসেনসহ অনুষ্ঠানে ৪৫ জন বক্তা বক্তব্য রাখেন।
রংপুরে শতকরা ২৭ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। এছাড়া প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ থেকে ৮ হাজার নতুন থ্যালাসেমিয়া রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষাসহ থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করে এমন নারী-পুরুষদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ যোগ্য। বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে ‘থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা ও বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প’ উপলক্ষে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের উদ্যোগে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ডা. একরামুল হোসেন স্বপন। তথ্য-চিত্র উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাফরুহা আক্তার। রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, রংপুর গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আলম আল আমিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রংপুর গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন সরকার।
সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়ার রোগী এক নয়। বাহকের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না, তেমন কোনো চিকিৎসাও লাগে না। তবে একজন বাহক পরবর্তী প্রজন্মে রোগ বহন করতে সক্ষম। থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার বিষয়ে সবাই সচেতন হলে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশির ভাগ পরিবার এর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় সিট সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় সপ্তাহ ১০ দিন আগেই সব টিকিট বুকিং হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘুরতে আসা পর্যটকসহ স্থানীয় যাত্রীরা।
গত শুক্রবার ঢাকা থেকে পরিবারের লোকজন নিয়ে শ্রীমঙ্গল ঘুরতে আসেন পর্যটক আরোফিন আহমেদ। বাসে যাতায়াত করা তার জন্য অস্বস্তিকর হওয়ায় তিনি ট্রেনে ফিরতে চাইলেও গত রোববার বা সোমবারের কোনো টিকিট পাননি। শেষমেষ ভোগান্তি নিয়ে তাকে বাসে করেই ঢাকায় ফিরতে হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক হুমায়রা সুলতানা বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পরেও ট্রেনের কোনো টিকিট পাইনি। ছোট্ট শিশু সন্তান নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে যাত্রা করতে হয়েছে। এটি খুবই কষ্টদায়ক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা রেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।’
১৯১২ সালে চালু হওয়া শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন মৌলভীবাজার জেলার তিনটি উপজেলার যাত্রী ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল হওয়ায় এ স্টেশনের গুরুত্ব অনেক। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন; কিন্তু টিকিট সংকট তাদের জন্য সবচেয়ে বড় ভোগান্তি।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকাগামী শ্রীমঙ্গল থেকে বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা কালনী এক্সপ্রেসে ৮১টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ৭০টি, পারাবত এক্সপ্রেসে ১০৫টি, উপবন এক্সপ্রেসে ৬৫টি, পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে ৪৭টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসে ৩০টি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী লিটন অধিকারী বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই ঢাকায় যেতে হয়। শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে টিকিট বরাদ্দ কম থাকায় সিলেট থেকে ঢাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া দিয়ে সেখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করি।’
রাধানগর পর্যটন কল্যান পরিষদের যুগ্ম সভাপতি তাপস দাশ বলেন, ‘বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে প্রায় ১০০টি হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসলেও ট্রেনের টিকিটের সংখ্যা এত কম যে সেগুলো ১০ দিন আগেই বুকিং হয়ে যায়। ফলে পর্যটন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্প ও স্থানীয় জনগণের ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ট্রেন চালু ও সিট সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করেন স্থানীয়রা।
পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মা বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন ফিরতি টিকিট নিয়ে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য কোনো কোটা নেই। রাত ২টার পর ঢাকা যাওয়ার ট্রেন ধরতে স্টেশনে পর্যটকদের অপেক্ষা করতে হয়, অথচ স্টেশনের টয়লেট ব্যবস্থাও নাজুক এবং ভিআইপি রুম তালাবদ্ধ থাকে। তিনি পর্যটকদের সুবিধার্থে নতুন ট্রেন চালুর পাশাপাশি সময়সূচি আপডেটের দাবি জানান।
শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শুক্র ও শনিবারে হাজারও পর্যটক আসেন। কিন্তু যাত্রী সংখ্যার তুলনায় বরাদ্দ টিকিট অপ্রতুল। আমাদের কিছু করার নেই। অনলাইনে আগেই টিকিট কেটে নেয় যাত্রীরা। কালোবাজারির সুযোগ নেই, কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকিট কাটা যায় না। তবে আমরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সিট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছি।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘এই উপজেলার পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের সার্বিক সমস্যা সমাধান, ট্রেন ও টিকিট সংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।’
মন্তব্য